নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মিনিমালিজম (Minimalism) শব্দটির সাথে পরিচয় থাকলেও আমি আমার চিন্তা-ধারার মধ্যে এনেছি বা প্রভাবিত হয়েছে বন্ধু বি.এম খালিদ হাসান এর দ্বারা। তো, বন্ধুর জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করে বারবার মনে হয়েছে এই বিষয় সম্পর্কে নিজেও একটু জানবার। আর যদি সম্ভব হয় তো কিছুটা ভাগাভাগি করবার। কারণ আমি লক্ষ্য করেছি এই বিষয়টি আমি সহ অনেকের কাছেই অস্পষ্ট। এর কাজ কি? কীভাবে এই ধরণের দর্শন জীবনে প্রয়োগ করা যায়? এর উদ্দেশ্য কি? ইত্যাদি। তাই আমার আজকের আলোচ্য বিষয় এই মিনিমালিজম (Minimalism) –কে নিয়েই। আমরা ছায়ার মধ্যে না থেকে স্পস্ট ধারণা নেবার চেষ্টা করতে পারি।
মিনিমালিজম (Minimalism) কি?
মিনিমালিজম (Minimalism) হচ্ছে এক ধরণের লাইফস্টাইল। যেখানে আপনি নির্ধারণ করেন যে, আপনার জীবনে কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর আস্তে আস্তে যেসব বিষয়গুলো আপনার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ নয় সেসব আপনি হটাতে থাকবেন। এতে করে জীবনের যেসব বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেসব বিষয়ে বেশি সময়, বেশি জায়গা, বেশি টাকা সঞ্চয় থাকে। শুনতে নিশ্চয় ভালো লাগছে। কিন্তু এটা শুরু করা যাবে কীভাবে? যদি আপনি আপনার জীবনকে মিনিমাইজ করতে চান তাহলে আমার কাছে পাঁচটি ফর্মূলা আছে। চাইলে আপনিও আপনার জীবনেও এসব প্রয়োগ করতে পারেন।
১. কেন আপনি আপনার জীবন মিনিমাইজ করতে চান?
প্রথমে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে হবে, আপনি কেন এই দর্শন আপনার জীবনে প্রয়োগ করতে চান? কোনোকিছু জীবনে প্রয়োগ করার পূর্বে আমাদের অবশ্যই সেটার উদ্দেশ্য আমাদের জানা উচিত।
(ক) আপনি কি আপনার সময় বাঁচাতে চান?
(খ) টাকা বাঁচাতে চান?
(গ) জীবনকে সহজ করতে চান?
(ঘ) নাকি আপনার নতুন বাড়ির দরকার? এতে করে বাড়তি জায়গা মিলে যাবে অথবা, (ঙ) স্রেফ এমনিই আপনি আপনার জীবনকে মিনিমাইজ করতে চান।
এসবের মধ্যে আপনি যে কোন একটি চয়েস করতে পারেন আর সামনে এগোতে পারেন। কারণ যখন আপনি আপনার “কারণ” পেয়ে যাবেন তখন থেকেই আপনি ধীরে ধীরে মিনিমালিজম (Minimalism) –এর দিকে খুব সহজেই এগোতে পারবেন। চাইলে আপনি নির্দিষ্ট লক্ষ্য সেট করতে পারেন। উল্লেখ্য, মিনিমালিজম (Minimalism) অনুসরণ করার জন্য কঠিন কোন নিয়ম নেই বলা যায়। ব্যস! একবার যদি আপনি আপনার “কারণ” খুঁজে পান তাহলে সেখান থেকেই যাত্রা শুরু করা সম্ভব।
২. মিনিমালিজম (Minimalism) অনুসরণে ছোট ছোট পদক্ষেপ
কোন দর্শন আপনি আপনার জীবনে কেন প্রয়োগ করবেন? যদি সেখান থেকে আপনার শান্তি না মেলে? সেখান থেকে আপনার জীবন সুন্দর না হয়? তাহলে? তাই আমরা ছোট ছোট কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি যাতে করে আমাদের জীবনে যেসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তার জন্য আরো বেশি সময় পাওয়া যায়। সত্যি বলতে এখানে কোন ফিক্সড নিয়ম নেই যে, এটা আপনাকে মানতেই হবে। তাই শুরু যে কোন জায়গা থেকে করা যায়। তবে কিছু বিষয় আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
(ক) স্ট্রেস নেবেন না একদম। স্রেফ ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।
(খ) প্রতিদিন একটি কাজের প্রতি ধ্যান দিন। আগে একটি কাজের সমাধা করুন।
(গ) হতে পারে আমার মত আপনার ঘরটাও অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা। এদের প্রতি নির্দিষ্ট কোন জায়গা থেকে প্রতিদিন অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিন।
(ঘ) ব্যাপারটিকে সহজ করে তুলুন। মানে, একদম প্যারা নেবেন না। যে কাজটা সহজ সেটা আগে করুন। সময় নিয়েই করুন। কোন সমস্যা নেই।
৩. শপিং করার বিষয়টিকে পরিবর্তন করুন
কারণ আপনি পূর্বে যেভাবে বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনতেন এখনও যদি ঐ একই প্যাটার্নে সবকিছু চলে তবে আখেরে ভালো ফল মিলবে না। তাই আপনার শপিং করা বন্ধ না করে, শপিং করার প্যাটার্ন পরিবর্তন করুন। এখন সেটা অনলাইন বা অফলাইন অথবা যে কোন ধরণের শপিং যা পূর্বে যেভাবে করতেন। প্রয়োজনে আপনি একটি ব্যাজেট তৈরি করতে পারেন পাশপাশি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, আপনি শুধু শুক্রবারে বা বৃহস্পতিবারে শপিং করবেন। মানে হচ্ছে, এতে করে আপনি দুটো জিনিস করতে পারবেন, (এক) টাকার পরিমাণ – একটি নির্দিষ্ট লিমিট অনুযায়ী খরচ করতে পারবেন এবং (দুই) শপিং করার সময়ও কম ব্যয় হবে।
বাজারে গেলেই অনেক ধরণের আকর্ষণীয় বস্তু দেখে নিজেকে সামলানো অনেকক্ষেত্রে মুশকিল হয়। তো এক্ষেত্রে আপনি নিজেই নিজেকে আগে থেকেই বলে রাখুন যে, আমি শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছাড়া কোনকিছু ক্রয় করবো না। কিছু কিছু মাস এমন সেট করুন যাতে করে বছরের সেই মাসে আপনি কোনকিছুই ক্রয় করবেন না। তারমানে এই নয় উক্ত মাসে আপনি না খেয়ে থাকবেন। ব্যস নতুন কিছুই আর কিনবেন না উক্ত মাসে।
আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শপিং করায় বেশ মজা পেয়ে থাকি। নতুন শার্ট কিনলে কিন্তু এক ধরণের আনন্দও পাওয়া যায়। হতে পারে বাসায় ডজন খানেক শার্ট বা কাপড় পড়ে আছে তবুও আপনার নতুন ডিজাইনের কোন শার্ট দেখে নিজেকে আটকাতে পারছেন না। এখানে বলার যে, এই উত্তেজনা বা মজাটা ডাইভার্ট করে অন্যকিছুতে সেটা খুঁজে বের করুন। যেমন, বন্ধুদের সময় দেওয়া, পরিবারের সাথে গেম খেলা, বই পড়া ইত্যাদি। দেখবেন একসময় এসব থেকে অনেক বেশি মজা পাচ্ছেন।
ইনস্ট্রাগ্রামে হয়তো কিছু বিজ্ঞাপন বা মডেলদের ফটো দেখে আপনারও ইচ্ছে করবে ওমন পোশাকে সাজার। খেয়াল করুন এই বিজ্ঞাপন আপনাকে ট্রিগার করে দেওয়া মানে আপনার পছন্দ অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। ঠিক এমন করেই ট্রিগার পয়েন্টগুলো যাচাই করুন এবং “না” করে দিন। হয়তো কোন কিছু দেখে আপনার মনে হলো এই জিনিস তো আমার চাই-ই চাই। এই ধরণের ক্ষেত্রে নিজেকে একটু সময় দিন। এক সপ্তাহ বা এক মাস পর পুনরায় খেয়াল করুন যে, আচ্ছা যে জিনিসটার খুব প্রয়োজন অনুভব করেছিলাম একসময়, সেটার প্রয়োজন কি এখনো আছে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখবেন আসলে ঐ জিনিসটি ছাড়াই আপনি চলতে পারছেন।
৪. ধার করুন বা ভাড়া নিন
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় আমাদের কোন জিনিস মাত্র একবার দরকার পড়ছে তাও হয়তো কিছু সময়ের জন্য। যেমন ধরুন, কোন বন্ধুর বিয়েতে কোর্ট-টাই বা লেটেস্ট স্যু! আর ঐ স্যু আমরা শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করতে পারবো।
আবার ধরুন, কোন খাবার তৈরি করতে বিশেষ রান্নার যন্ত্রপাতি দরকার হয়ে পড়ে। জরুরী নয়, এজন্য আমরা এসব জিনিস কিনে আমাদের ঘর ভর্তি করে ফেলি। কারণ এই ধরণের জিনিস আমরা সাধারণত বছরে হয়তো একদিন ব্যবহার করে থাকি। তাই আপনি চাইলে টাকা নষ্ট না করে ধার নিতে পারেন কারো কাছে থেকে। বা ভাড়া নিতে পারেন কোন পরিচিত কারো কাছে থেকে। এতেও দুইটি ফায়দা, (এক) আমাদের টাকা ব্যয় হলো না এবং (দুই) আমাদের ঘর আরো জিনিসপত্রে ভর্তিও হলো না।
৫. নিজেকে অপূর্ণ ভাববেন না
মিনিমালিজম (Minimalism) –এর সর্বশেষ স্টেজে এসে এটা বলা উচিত, একজন মানুষ আপনি, যেমনই হোন না কেন, অন্যরা আপনার সম্পর্কে যেটাই বলুক না কেন, আপনি পূর্ণ একজন মানুষ এটা ভুলে যাবেন না। আপনাকে পূর্ণ করবার জন্য বাইরের জিনিসের কি এমন দরকার!
হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, আমরা যে দুনিয়ায় আছি এখানে আমাদের পরিপূর্ণ হতে গেলে নাকি বাইরের জিনিসপত্র লাগবেই লাগবে। কিন্তু মানব জীবনের অতীত তো সেটা বলে না। কত বিজ্ঞাপন দেখা হয়ে গেল! আপনার কাছে যদি এই বাইক থাকে তাহলে আপনাকে সাকিব-আল-হাসানের মত লাগবে। আর ফেয়ার এন্ড ল্যাভলী নিয়মিত স্ক্রিনে মাখলে তো কারিনা কাপুর। কিন্তু সত্যিই কি তাই! সত্যিই কি আমরা ওসব জিনিস নিলেই স্টার বনে যাবো?
এমনকি আপনি বাইরের জিনিসপত্র নিলে পরেই আপনি নাকি সুখী থাকবেন! মানে বিজ্ঞাপন তো তাই বলে। কিন্তু প্রতিদিন আমরা এমন অসংখ্য জিনিসপত্র কিনে আমরা আমাদের আইডেন্টিটি হারাচ্ছি, নিজেকে হারিয়ে ফেলছি। কোর্ট-টাই আর স্যু’র মধ্যে আমি আমার বাচ্চা হৃদয় কে হারিয়ে ফেলছি।
সো, মিনিমাইজ ইওর লাইফ, ধন্যবাদ
এছাড়া চাইলে আপনি আমার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন: https://backspace-journal.com
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৭
মি. বিকেল বলেছেন: বোধহয়, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা বেশ কঠিন। ধন্যবাদ
২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৫৫
তোমার দখিনা হাওয়া বলেছেন: আসলে বাস্তবতা অনেক কঠিন
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৭
মি. বিকেল বলেছেন: নিশ্চয়, কঠিন।
৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
মানুষের গড় বাঁচার সময়টাকে মিনিমাইজ করার দরকার আছে?
১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৮
মি. বিকেল বলেছেন: কঠিন প্রশ্ন।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১২:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: এসব কথা পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু বাস্তব জীবন অনেক কঠিন।