নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হ্যাঁ, রিভিউ লিখতে যাচ্ছি সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তি পাওয়া ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নিয়ে। খুব ভালো হত যদি এই রিভিউ দুইভাগে বা দুইভাবে লেখা যেত। কারণ সালমান শাহ ফ্যানদের জন্য এই ওয়েব সিরিজটি ছিলো একটি স্পেশ্যাল ট্রিট। আর বাকিদের জন্য মাত্র একটি ওয়েব সিরিজি, অথবা স্রেফ একটি ফিকশন ছাড়া আর কিছুই নয়।
সালমান শাহ ও শাবনূর অভিনীত সিনেমা ‘বুকের ভিতর আগুন (১৯৯৭)’ সিনেমা এর নাম থেকে এই ওয়েব সিরিজটির নাম ধার করা হয়েছে বলে আমার ধারণা। প্রধান প্রধান চরিত্রে আছেন, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, ইয়াশ রোহান, আবু হোরায়রা তানভীর, তমা মির্জা, শাহনাজ সুমি, তানিয়া আহমেদ, তৌকীর আহমেদ, তারিক আনাম খান, গাজী রাকায়েত প্রমূখ।
গত ২ মার্চ অনেকটা নীরবেই প্রকাশ হলো শাহরিয়ার শাকিল প্রযোজিত এবং তানিম রহমান অংশু নির্মিত আট পর্বের এই সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। ওটিটি প্লাটফর্ম ‘হইচই বাংলাদেশ’।
মুক্তি
সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন? নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে? – এই দুই প্রশ্নের উত্তর আজও কোনো বাংলাদেশির কাছে নেই। তবে সিনেমাপ্রেমী সবার কাছেই সালমান শাহ কে হারানোর একটি হাইপোথিসিস আছে। সিরিজের মধ্যেও এমন মন্তব্য করা হয়, যা লেখার পরিপক্কতা প্রমাণ করে।
অন্যদিকে সালমান ভক্ত এবং স্বজনদের থেকে বাধা প্রাপ্ত হওয়ায় মুক্তি জটিলতায় ছিলো এই ওয়েব সিরিজটি। এমনকি মুক্তির পরেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চলছে নানাবিধ আইনী জটিলতা। যদিও অভিনেতা অপূর্ব পরিষ্কার করে বলেছেন, “এটা শুধুমাত্র একটি ফিকশন।”
আত্মহত্যা নাকি খুন?
একজন পরিচালকের কাজ নয় তদন্ত করা বা আইনী পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু এটাও তো সত্য যে, যদি শুধুমাত্র ‘আত্মহত্যা’ হত তাহলে এত বছর পরেও এর সুরাহা হলো না কেন? সে বিষয়ে নিশ্চয় একজন পরিচালক তদন্ত করে আইনী জটিলতা থেকে সত্য কে বের করে দেখাতে পারবেন না। বা, এটা তাঁর কাজও নয়। একজন লেখক, একজন পরিচালক এবং একজন অভিনেতার কাছ থেকে তাঁর কাজটুকু বুঝিয়ে পেলেই তো চলছে! পাশাপাশি এটা যে বাংলাদেশের প্রশাসনের ব্যর্থতা সেটা স্বীকার করবার মানসিকতা তেমন দেখা যায় না।
আমাদের ‘রানা প্লাজা’, ‘শনিবার বিকেল’ আটকে থাকবে ‘সেন্সরশিপ’ এর নাম করে। এতে ভেঙ্গে পড়া বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রি ‘পাঠান’ সিনেমা আমদানি করার জন্য মুখিয়ে থাকবে… কারণ, এই পরিমাণ সেন্সরশীপে কিছু হয় না, কিছুই হয় না। শিল্পের বৈশিষ্ট হচ্ছে, মুক্ত থাকবে। আধা আবৃত, আধা অনাবৃত বলে কিছু হয় না। শিল্প, স্রেফ এবং স্রেফ একটি শিল্প হয়। শিল্প নিষ্ঠুর হয়, এত কোমল সম্ভবত কখনোই হয় না, হতে পারেও না।
প্লট
গল্পটা খুব চেনা। সালমান শাহ কে ঘিরেই প্লটে কাজ করা হয়েছে এটা স্পষ্ট। একজন সালমান ভক্ত হিসেবে যতটুকু জানি ততটুকুই। কোথাও কলম খাটিয়ে বাড়াবাড়ি করবার বৃথা চেষ্টা করা হয় নাই। উল্টো প্রশংসার দাবী রাখেন স্ক্রিপ্ট রাইটার। বিশেষ করে সবগুলো চরিত্রের সাথে ন্যায় করাটা এত সহজ ছিলো বলে মনে হয় না। ফলে ন্যায়-অন্যায়ের মাঝের যে অংশটুকু আছে তার মাত্রা বেড়ে যায় তাই সময় সময় একঘেয়েমি এসেছে। কারণ গল্পটা শুধুমাত্র একজন সুপারস্টার কে নিয়ে নয়, আমাদের ভালোবাসার একজন মানুষকে নিয়ে।
গল্পে বিশাল ব্যর্থতা সালমান শাহ চরিত্র কে খুব বেশি সময় না দেওয়া। এই চরিত্র উন্নয়নে আরো সময় এবং আরো পরিষ্কার শব্দ লাগতো তুলে ধরতে। এখানে বাজেট কে দায় করা যেতে পারে। ইয়াশ রোহানের চেষ্টাটুকু চোখে পড়লেও তা খানিক সময় পরপর পিছলে যাচ্ছিলো। এত কম স্ক্রিন টাইমে ইয়াশ রোহান যেটুকু করেছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে।
অভিনয়
‘বড় ছেলে’ নাটক খ্যাত জিয়াউল ফারুক অপূর্ব সাম্প্রতিক সময়ে যে ভিন্ন ধারার কাজ শুরু করেছেন এবং নিজেকে ভেঙ্গে সাজাতে শুরু করেছেন তা আরো পরিষ্কার হওয়া যায় ‘ট্রল’ ও ‘গেম-ওভার’ এই কাজগুলো দেখলে। বাংলা নাটকে বরাবর তিনি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এবার বাজিমাত ওয়েব সিরিজেও। নিজ চরিত্রকে সময় দেওয়া, সেটাকে আপন করে নিয়ে অভিনয়ে ফুটে তুলেছেন যথাযথভাবে। ফলাফল, ওপেনিং বড় আকারে হয়েছে কোনো বিশেষ মার্কেটিং ছাড়াই (সূত্র: হইচই বাংলাদেশ)।
ইয়াশ রোহান – আমাদের একটি ডায়ালগ নির্ভর সালমান শাহ কে উপহার দিয়েছেন। হাতে সিগারেট এবং সালমান শাহের বলার ভঙ্গি বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। সিরিজের মধ্যে একটি সিনেমার দৃশ্য ছিলো তাও খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে ব্যর্থ ইয়াশ রোহান এবং টিম ‘বুকের মধ্যে আগুন’। মনে হয়েছে, কোন দেশের নয়; নির্দিষ্ট কোন এক এলাকার সুপারস্টার। সালমান শাহ’র সেট আর সেখানে কিছু মানুষের ভিড় দেখাতে সক্ষম হলেও প্রযোজকের পকেট ফাঁকা থাকায় আর বেশি দেখানো সম্ভব হয় নি।
এছাড়া সালমান শাহের স্ত্রীর চরিত্রে আছেন তমা মির্জা। নায়কের মা নীলা চৌধুরীর মতো হাজির হয়েছেন তানিয়া আহমেদ। আছে সালমান শাহের নায়িকা শাবনূরের মতো চরিত্রও, শাহনাজ সুমি হাজির হয়েছেন নায়িকার আদলে। তৌকীর আহমেদ, তারিক আনাম খান, গাজী রাকায়েতসহ আরও অনেককে দেখা যায় এই সিরিজে।
আলাদা করে শুধু প্রশংসা করা যায় শাহনাজ সুমি কে ‘শবনম/শাবনূর’ চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করবার জন্য। বাকিদের অভিনয় ম্লান লেগেছে, অথবা ‘ঠিকঠাক’ বলা যেতে পারে।
চিত্রনাট্য
একাধিক সাব-প্লট থাকায় মূল প্লট প্রাণ পেয়েছে। কোথাও ধাক্কা খেয়েছে বলে আমার চোখে অন্তত ধরা পড়েনি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় আরো দ্রুত গতির স্ক্রিনপ্লে হলে আমাদের মত দর্শকদের জন্য একটু সুবিধে হত। অন্যদিকে কিছু বিষয় খুব দ্রুত পরিষ্কার করা গেলেও কিছু বিষয় ঝাপসা থেকেই গেছে। তবে চেনা গল্প তাই এই গল্পটা ধরতে আমার জন্য খুব বেশি একটা বেগ পেতে হয় নি।
এছাড়া প্রযোজক যে সাহস করেছেন এটাই তো অনেক! কিন্তু বাজেট সত্যিই খুব কম ছিলো। এই বাজেটে সালমান শাহ কে পাওয়া যায় না। হোক সেটা ‘নকল’!
মতামত
অনেকদিন পর বাংলা সিনে-ইন্ডাস্ট্রির এমন সাহসী পদক্ষেপ সত্যিই খুব ভালো লেগেছে। সালমান শাহ কে পুনরায় আমাদের কাছে ফিরে আনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এভাবে বারেবারে তিনি যেন আমার মত সকল সালমান ভক্তদের কাছে ফিরে আসেন। ‘সালমান’ শুধু একটি নাম নয়, আমাদের আবেগ এবং ভালোবাসা।
আর এই সিরিজটিকে ১০ এ ৭ দিচ্ছি। ৩ কাটলাম ইয়াশ রোহানের আরো প্রস্তুতির দরকার ছিলো এছাড়া বাজেট এবং লেখার মধ্যে ‘Self-Censorship’ নেবার জন্য। শুভকামনা ‘টিম – বুকের মধ্যে আগুন’।
১০ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪৮
মি. বিকেল বলেছেন: সময় বা বাজেট এর সমস্যা ছিলো - সহমত।
২| ১০ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৩৭
দারাশিকো বলেছেন: এই প্রথম এত ভালো রেটিং দিতে দেখলাম। এই রেটিং কি সালমান শাহ'র প্রতি ভালোবাসা থেকে?
১০ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪৯
মি. বিকেল বলেছেন: সালমান শাহ্ বৈ আর কিছুই না।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৪২
শিশির খান ১৪ বলেছেন: এতো সুন্দর স্ক্রিপ্ট এতো ভালো স্টোরিতে আরো ভালো ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করা যেতো। যাক হয়তো সময় বা বাজেট এর সমস্যা ছিলো। আপনি ১০ এ ৭ দিয়েছেন আমার কাছে ৪ এর বেশি দিতে কষ্ট হচ্ছে।