নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃদুল: আগামীকাল ফ্রি আছিস?
মায়া: কেন?
মৃদুল: আমি আগামীকাল ঢাকায় যাবো। ট্রেন আসতে একটু দেরি করে। তুই যদি ফ্রি থাকিস তাহলে কিছু সময় কফিশপে বসতে পারতাম।
মায়া: ঢাকায় কেন যাবি?
মৃদুল: একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ আছে। তাছাড়া তোর সাথেও কিছু কথা ছিলো।
মায়া: ঠিকাছে, তুই তো আমার মা কে চিনিস, তাই না? আমি দেখা করার চেষ্টা করবো, স্টেশনে পৌঁছে ফোন করিস।
এরপর ফোনকল বিপ শব্দে কেটে গেল। মৃদুল ভাবছে, মায়া কে সে কি বলবে? দীর্ঘদিন পর ওদের দেখা হতে যাচ্ছে। মৃদুলের মতে, মেয়েটা বেশ সাধারণ এবং যা বলার তা মুখেই বলে দেয়। কোন রাখঢাকা পছন্দ নয় ওর। সম্পর্কে মৃদুল এবং মায়া খালাতো ভাই-বোন।
স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশন
এই রেলওয়ে স্টেশন মৃদুলের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার অন্যদিকে মায়ার বাড়ি থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্টেশনে পৌঁছে মৃদুল মায়া কে টেক্সট করলো, “মায়া, আমি এখন স্টেশনে আছি।”
আধাঘন্টা চলে যাচ্ছে কিন্তু মৃদুল কোন প্রত্যুত্তর পেল না। তাহলে কি মায়া আজ আসবে না? ওদের প্রায় গত তিন বছর ধরে কোন যোগাযোগ নাই। আজ দেখা করার কথা ছিলো, একে অন্যের সম্পর্কে জানার অনেক কিছুই ছিলো। মৃদুলের সময়টা একেবারে একঘেয়েমিতে যাচ্ছে। শেষমেশ বাধ্য হয়ে মৃদুল মায়া কে ফোন করলো, “হ্যালো, মায়া?”
মায়া: হ্যাঁ, তুই কই?
মৃদুল: আমি গত ৪৫ মিনিট ধরে স্টেশনেই তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
মায়া: একবার ফোন দিলে পারতি?
মৃদুল: ভেবেছিলাম আজকের দেখা করার ব্যাপারটা তোর মনে থাকবে...
মায়া: হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু মা কে বলার জন্য বিশেষ কোন অজুহাত পাচ্ছি না। আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দে, আমি তোকে জানাচ্ছি।
এর খানিকবাদে মায়া মৃদুলকে স্টেশনের একপাশে কফিশপে এসে দাঁড়াতে বললো। তারপর ওদের দেখা হতেই একে অন্যের দিকে চেয়ে একটু লজ্জা পেল। আবার আজ শুক্রবার। সব দোকানই প্রায় বন্ধ। এই ছোট্ট শহরে শুধু এক কফিশপ খোলা আছে, সময় বিকেল সাড়ে চারটা।
কফিশপে বসার আগেই মায়া দুটো ব্ল্যাক কফি অর্ডার করলো। দেখে মনে হলো এখানের সবাই মায়ার পরিচিত। সুতরাং মৃদুল কে একটু সাবধানে কথাবার্তা বলতে হবে এবং আচরণে এমন ভাব রাখা যাবে না যাতে প্রকাশ পায় ওরা অলিখিত ডেট করছে। একটুপর মায়া বললো, “তুই আগের চেয়ে একটু মোটা হয়েছিস!”
মৃদুল: কই না তো! আমি তো ঠিকই আছি।
মায়া: তাহলে এই বস্তা মত কোট কেন পরেছিস? শীতের কাপড় পরবি!
মৃদুল: শীতের কাপড় পরতে বিরুক্ত লাগে। তোর কথা বল, কেমন আছিস? কেমন চলছে?
মায়া: আমার আর কি চলবে? পড়াশোনা করবার ইচ্ছে হচ্ছে না তবুও মাস্টার্স টা সম্পন্ন করতে হবে।
মৃদুল: আর?
মায়া: আর কি? একটা নিজের অনলাইন শপিং খুলেছি। আজ কিছু পাঞ্জাবীর অর্ডার আছে। ওসব কুরিয়ার করতে হবে। তুই কি করছিস?
মৃদুল: বাহ্, বেশ তো! আমি চাকুরীর চেষ্টা করছি।
মায়া: বিসিএস! তাই না?
মৃদুল: হ্যাঁ, আর একটা পরীক্ষায় জীবনে ভালো করতে হবে।
মায়া: তোর কোন ক্যাডার পছন্দ?
মৃদুল: এডমিন... এসব বাদ দে, বিয়ে-শাদি নিয়ে কিছু ভেবেছিস?
মায়া: তুই আমাকে বিয়ে করবি? এর আগে তো একবার ‘না’ করলি।
মৃদুল: এমন নয়... দেখ, আমরা দুজন একে অন্যকে কাছে থেকে চিনি না। না আমাদের মধ্যে প্রেম ছিলো, না আমরা খুব একটা যোগাযোগ রাখি।
মায়া: তোকে বিয়ে করার ইচ্ছে আছে, প্রেম নয়...
মৃদুল: কেন?
মায়া: আমি এসব প্রেম-ট্রেমে বিশ্বাস করি না।
তারপর দু’কাপ কফি একজন ওয়েটার টেবিলে রাখলেন। মৃদুল ও মায়া কফি দুটো হাতে নিয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে। মৃদুল ভাবছে, “কি বলবো এই পাগলীকে?” মায়া মৃদুলকে পেয়ে একটু খুশীই হয়েছে। অন্তত ত্রিশ মিনিটের আলাপের জন্য হলেও।
মৃদুল: মায়া, দেখ আমি এখনো ঢঙ্গের কিছুই করি না। তুই তাও কিছু কামাচ্ছিস।
মায়া: তো? চাকুরী একদিন হবেই... সেজন্য ভয় পাচ্ছিস?
মৃদুল: ভয়! না, আমার ডিকশিনারিতে ঐ শব্দটাই নাই। আমি আপাতত কিছু আউটসোর্সিং করার চেষ্টা করছি। টাকার দরকার।
মায়া: ওহ্, তুই পারবি।
মৃদুল: আজ মনে হচ্ছে, আমার চেয়ে আমার প্রতি তোর আত্মবিশ্বাস বেশি।
মায়া: তুই ছোট থেকেই অনেক ভালো একটা ছেলে।
মৃদুল: তাহলে এত সময় কেন নিচ্ছিস? প্রেমও করবি না?
মায়া: না, বিয়ে, একবারে বিয়ে করতে চাই। নতুবা নিজেদের মধ্যে শুধু শুধু কেলেঙ্কারি হবে।
আসলে মৃদলের জন্য সময়টা ভালো যাচ্ছে না। কলেজ শেষে এই বেকার জীবন এমনিতেই ভারি লাগছে। আর বেঁচে থাকার জন্য হাতে শুধু আছে এই বিয়ে পাগলী এক মেয়ে যার বাস্তব জীবনের কোনো ধারণাই নাই।
মৃদুল: একটা প্রশ্ন করি?
মায়া: বল?
মৃদুল: তোর মাসে কত আসে রে?
মায়া: ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার মত।
মৃদুল: কি বলিস! সত্যিই এসব অনলাইন শপ থেকে এত আয় হয়?
মায়া: হ্যাঁ, এই দেখ, আমার গ্যালারীতে অনেকগুলো পাঞ্জাবী আছে। তোর কোনটা পছন্দ?
মৃদুল: এখানে তো সব চোখ ধাঁধানো সব কালেকশন! আমি কালার ব্লাইন্ড, ভাই!
মায়া: তোর জন্য একটা পাঞ্জাবী রেখেছি, তোকে খুব মানাবে।
মৃদুল: এই, না... না... এসব তোর বিজনেস!
মায়া: ধূর পাগল, তোর জন্যই মা কে বলে এই পাঞ্জাবীটা এনেছি। প্লিজ!
মৃদুল: উঁহু, আচ্ছা দে... ধন্যবাদ!
এরমধ্যেই ট্রেনের ঘন্টা বাজলো। মৃদুল মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়ার চোখে হালকা জল। মৃদুল বললো, “আসি রে, ভালো থাকিস!” মায়া শুধু বললো, “আর আমাদের বিয়ের ব্যাপারে কিছু তো বল?”
মৃদুল মুচকি মুচকি হাসছে, ট্রেনে উঠার আগে শুধু মায়া কে কানে কানে বললো, “আচ্ছা, আমাদের বিয়ের দিনে এই পাঞ্জাবী পরলে আমাকে কেমন লাগবে?” এবার মায়ার চোখে জল স্পষ্ট দেখা গেল... মায়া একটু জোরে বললো, “তোর ইন্টারভিউ এর জন্য বেস্ট অব লাক!”
ট্রেন তার সময় ধরে সামনের রাস্তা ধরলো...
ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)
Also Read It On: কফি, কথোপকথন এবং কালার ব্লাইন্ড প্রেম
১১ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১০
মি. বিকেল বলেছেন: অনুপ্রেরণা দেবার জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০
করুণাধারা বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে।
মৃদুল আর মায়াকে দেখে চাইনিজ মনে হচ্ছে। পাঞ্জাবি পরলে মৃদুলকে তেমন ভালো দেখাবে না।
১১ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১১
মি. বিকেল বলেছেন: ছবিটি AI জেনারেটেড, আপনি কল্পনার জগতে কোন আদর্শিক ছবি এঁকে নেবেন। ধন্যবাদ
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৪৪
মিরোরডডল বলেছেন:
এই প্রথম মনে হয় বিকেলের লেখা গল্প পড়লাম, তাও একদিনে দুটো গল্প।
ভালো লেগেছে।
১১ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১২
মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ, আমি মূলত একজন গল্পকার।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৪১
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ভালো হয়েছে।
চালিয়ে যান।