নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অটোপাইলট জীবনের অজানা পথ: স্বপ্নহীনতার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া

২১ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১১



হয়তো আপনি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন কিন্তু আপনি আপনার আইডি (ID) কার্ড নিতে ভুলে গেছেন। হয়তো আপনি কোন চাকুরী পরীক্ষা দিতে গেছেন কিন্তু সাথে করে এডমিট কার্ড (Admit Card) নিতে ভুলে গেছেন। হয়তো চাকুরী করতে গেছেন কিন্তু সময় সময় দেরি হচ্ছে, কখনো কখনো কিছু ছোট ছোট জিনিস সাথে নিতে ভুলে যাচ্ছেন। হয়তো সম্পর্কে আছেন কিন্তু আপনি আপনার পার্টনারের জন্মদিন ভুলে গেছেন; যেটা হয়তো আপনার পার্টনারের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।

এছাড়াও সংসার জীবনে বাজার করতে গিয়ে অর্ধেক জিনিস নিয়ে বাসায় ফিরছেন। ব্যক্তিজীবনে খুব ছোট ছোট বিষয় ভুলে যাচ্ছেন। কাউকে মিস করা, কারো খবর রাখা, কারো সাথে বসে একটু সময় গল্প করা, একসাথে খাবার খাওয়া সবই অনেক তালগোল পেকে যাচ্ছে। মানুষ সামাজিক জীব হওয়া শর্তে আপনি মানুষের সাথে কথা বলায় খুব বেশি আগ্রহ পাচ্ছেন না; হোক উক্ত টপিক বহু জনপ্রিয় বা ইন্টারেস্টিং।

ব্যস্ত ও স্ট্রেসফুল জীবনে আপনি শুধু ভুলেই যাচ্ছেন। আপনি ব্যক্তি মানুষ হিসেবে মোটেই খারাপ নন কিন্তু আপনার অজান্তেই আপনি অন্যের সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। কারো প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে রয়ে সয়ে একটু ভেবে উত্তর দিচ্ছেন না। সোজা বাংলায় আপনি কিছুটা ‘শর্ট টেম্পারড’ হয়ে গেছেন মানে অল্পতেই ধৈর্য্যহীন হয়ে পড়ছেন এবং প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব প্রকাশ করছেন।

আপনি হয়তো খুব বন্ধুত্বসুলভ মানুষ কিন্তু এখন আপনার মধ্যে শুধু রাগ/অভিমান ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। আপনি হয়তো জীবনে অনেক ‘স্বপ্ন’ দেখেছিলেন নিজেকে নিয়ে কিন্তু এখন নিজের দিকে তাকানোর সময় হাতে নাই; স্বপ্ন দেখা তো বিলাসিতা। কিন্তু একসময় এই আপনি খুব করে চেয়েছিলেন আপনার দেখা এই স্বপ্নগুলো একদিন সত্য হবে। কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার বড় ভাই হয়তো খুব আবেগে আপনার পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, “দৌড়াতে থাক পাগলা, দেখা হবে সফলতায়!”

কত সময় চলে যাচ্ছে, জানেন না। কত কিছু ঘটে যাচ্ছে, জানেন না, ইচ্ছেও নাই। আজ কত তারিখ? জানেন না। আগামীকাল কি শুক্রবার? জানেন না। আরেহ্ পুরো ক্যালেন্ডার পাল্টাতে হবে! - মনে নাই। ট্রেন্ডিং সবকিছু ভালো তা তো নয় কিন্তু ট্রেন্ড বা স্রোত এখন কোনদিকে? জানেন না। আজ আপনার জন্মদিন? খেয়াল নাই। কতজনকে দেওয়া কত কথা; মনে নাই।

এই ধরণের জীবন কে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অটোপাইলট (Autopilot)’ জীবন বলা হয়। কারো কারো মতে বলা হয়, ‘জোনিং আউট (Zoning Out)’। কিছুটা লগ/সাইন আউট এর মতই। এ বিষয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞান খুব স্পষ্ট করে বলা আছে, “বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডোপামিন নিঃসরণের কোষগুলো ক্রমশ কম কার্যকর হয়ে উঠতে পারে বা মারাও যেতে পারে।” মানে শৈশবে আপনি যেসব বিষয়ে আনন্দ পেতেন বৃদ্ধ বয়সে সে বিষয়গুলো ‘এবজার্ড (অনর্থক)’ মনে হতে পারে। শুধু তাই নয়, ডোপামিন কম উৎপাদিত হওয়ায় যেসব সম্ভাব্য সমস্যা হতে পারে,

১. উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার অভাব
২. নিরানন্দ বোধ করা বা আনন্দ না পাওয়া
৩. মনোযোগের অভাব
৪. ঘুমের সমস্যা
৫. স্মৃতিশক্তির লোপ পাওয়া
৬. চলাফেরা বা আচরণ ঘটিত ‘Social Interaction’ এ সমস্যা বোধ করা
৭. মেজাজ বিগড়ে যাওয়া (যেমন: উদ্বিগ্ন হওয়া, বিষণ্ণতা বোধ করা ও বিরুক্তি আসা)
৮. আসক্তি (যেমন: মদ, জুয়া)
৯. খাওয়ার ব্যাধি: অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা এবং বুলিমিয়া নার্ভোসার মতো খাওয়ার ব্যাধির ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

এসব উপসর্গ ডোপামিন কমে যাওয়ায় ঘটে থাকে। কিন্তু ডোপামিন কমে যায় কেন? ডোপামিন কমে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে তারমধ্যে দুটো বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা যাক,

১. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা
২. দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ

এখানের খেলাটা কিছুটা অদ্ভুত কিন্তু স্পষ্ট। অনেক আগে আমার এক বান্ধবী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “বেঁচে থাকার একটি কারণ বলো?” উত্তরে আমি একটি শব্দ লিখেছিলাম আর সেটা হলো, ‘স্বপ্ন’। মানুষের জীবন ‘স্বপ্ন’ ছাড়া হতে পারে না, ‘স্বপ্ন’ ছাড়া একজন মানুষ বাঁচতে পারে না। ‘স্বপ্ন’ হলো মানুষের বেঁচে থাকার খোরাক। স্বপ্ন মানুষকে চ্যালেঞ্জ করে, স্বপ্ন মানুষকে হাসায় আবার কাঁদায়, স্বপ্ন মানুষকে নতুন নতুন দক্ষতা ও সৃজনশীল হতে শেখায়। স্বপ্ন পূরণ করার জন্য মানুষ নিয়মানুবর্তী হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী একারণেই মানুষের মধ্যে ডোপামিনের উৎপাদন বাড়তে থাকে। ঠিক যেমন কোন গেমের এক লেভেল পার করার পর আরেক লেভেলে যাওয়ার আনন্দ। বলিউডের বিখ্যাত অভিনেতা ঋত্বিক রোশান এক ইন্টারভিউ তে বলছিলেন, “আমি ভাবতাম সফলতা পেলে জীবনে সুখ আসবে কিন্তু সফলতা যখন পেলাম তখন আমি চারপাশে সুখ কোথায় সেটা খুঁজছিলাম। আসলে সুখ হলো প্রত্যেক দিন অনুশীলন করার মত বিষয় (বাংলায় ভাবার্থ)।” মানে খুব সম্ভবত উনি যে পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন সে পর্যন্ত অনেক আগেই অর্জন করে ফেলেছিলেন। ফলে আরো একটি সুপারহিট সিনেমার যে আনন্দ সেই আনন্দ কিন্তু প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের আনন্দের চেয়েও কম পাবেন।

কিন্তু যাদের স্বপ্ন নাই, জীবনের কোন বার্ণিং ডেজায়ার নাই তারা উপরোক্ত উদাহরণের মত আস্তেধীরে সবকিছুই কমবেশি ভুলে যেতে থাকবেন। ভুলে যেতে থাকবেন তিনি চাইলে জীবনে অনেক কিছুই করতে পারতেন। তিনি চাইলে বহু মানুষকে সাহায্য করতে পারতেন। তিনি চাইলে কর্মমুখর জীবন দিয়ে রাষ্ট্রকে আরো শক্তিশালী করতে পারতেন। তিনি চাইলে হয়তো দেশের সেরা কেউ হতে পারতেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় এই শ্রেণীর মানুষ (আমার দেখা মতে), আমাকে খুব হতাশ করেছে।

আমার খুব কাছের এক বন্ধু বলেছিলো, “পঁচিশ বছর বয়সের পর কেউ পরিবর্তন হয় না, শুধু পরিবর্তিত হয়েছি এই ভান ধরে থাকে। সুতরাং প্রিয় বন্ধু, কাউকে পরিবর্তন করার তোমার এই ব্যর্থ চেষ্টা বাদ দিতে হবে।” আমি যদিওবা আমার বন্ধুদের মেধা কে অশ্রদ্ধা বা ছোট করে দেখি না, কারণ আমি নিজেই একজন গর্দভ। তবে এবারের জন্য চেয়েছিলাম, মানুষ অন্তত চেষ্টা করুক। চাই সফলতা আসুক বা ব্যর্থতা আসুক। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে আমার বন্ধুর কথাটাই আস্তেধীরে সত্য হতে যাচ্ছে।

তবুও, আমি বলবো, পরিবর্তন সম্ভব। এখনো আমাদের যে স্বপ্নগুলো খুব রঙীন ছিলো তা বাস্তবে রুপান্তর সম্ভব। এখনো কিছু কন্ঠ, কিছু কথা, কিছু মানুষ অন্যের জীবনে বহু পরিবর্তন এনেছে। সুতরাং যারা সফল ও কর্মমুখর জীবন-যাপন করছেন তাদের সাথে কিছু সময় দিন। তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করুন। ফেলে আসা সব স্বপ্ন ডায়েরীতে বা নোটপ্যাডে বা ফেসবুকেই লিখুন। তারপর সে লক্ষ্যে আপনার পুরো প্রাণশক্তি লাগিয়ে দিন। ঘুমের মধ্যে কোন একদিন স্বপ্নে হতেও পারে আপনার ঐ কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই আপনার পিঠ চাপড়ে বলছেন, “আরেহ্! শেষমেশ দেখা হয়েই গেলো!”

ছবি: Bing Enterprise (Copilot Ai)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০

নাহল তরকারি বলেছেন: ১,২,৩,৫,৭,৮ নং এর লক্ষন এর সাথে আমার সমস্যার মিল আছে। দীর্ঘস্থায়ী টেনসান এর জন্য অস্বাস্থ্যকর জীবন এসে গেছে। আমিও কি অটো পাইলট এ এসেছি।

২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৩৮

মি. বিকেল বলেছেন: নাহল তরকারির মন্তব্যের উত্তরে বলছি, আপনি যে লক্ষণগুলোর কথা বলেছেন, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদী চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার সাধারণ লক্ষণ হতে পারে। অটো পাইলট মোড বলতে আমরা বুঝি এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে মানুষ নিজের সচেতন সিদ্ধান্ত না নিয়ে অভ্যাস বা রুটিন অনুযায়ী চলতে থাকে। এটি অত্যধিক মানসিক চাপ এবং ক্লান্তির ফলে ঘটতে পারে। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি এই অবস্থায় আছেন, তাহলে সচেতন প্রচেষ্টা এবং পেশাদার সাহায্য নিয়ে এই চক্র ভাঙার চেষ্টা করা উচিত। মনে রাখবেন, আপনি একা নন এবং সাহায্য পাওয়া সম্ভব।

২| ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৭

করুণাধারা বলেছেন: আপনার লেখাগুলো ভালো, আলোচনা হতে পারে বিষয়ের উপর। কিন্তু এত পরপর লেখা দিচ্ছেন যে আগেরটা নিয়ে ভাবনা শেষ হচ্ছে না।

আর কিছু না বলে লাইক দিয়ে গেলাম।

২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৩৬

মি. বিকেল বলেছেন: আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করব আমার লেখাগুলো এমনভাবে সাজাতে যাতে প্রতিটি বিষয়ে যথেষ্ট ভাবনা-চিন্তা করার সময় পান। আপনার লাইক ও উৎসাহ আমাকে আরও ভালো করে লেখার প্রেরণা যোগায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.