নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য ও মিথ্যার মধ্যে একটি পাতলা লাইন বিদ্যমান। আবার সত্য দিয়েও সত্যের অপলাপ করা যায়। ডার্ক সাইকোলজির ১১তম কিস্তিতে আমার আলোচনার বিষয় হচ্ছে ‘Paltering (সত্যের অপলাপ করা)’। সতর্কতা হচ্ছে, ডার্ক সাইকোলজিক্যাল কৌশল জানুন এবং নিজেকে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে বিরত রাখুন। একই সাথে, এই ধরণের কৌশল কারো উপর প্রয়োগ করবেন না।
কাউকে যদি খুবই একনিষ্ঠ মনে হয়, পারফেক্ট মনে হয় বিশেষ করে তার কথাবার্তায় তাহলে আপনাকে একটু সাবধান হওয়া জরুরী। এমনও হতে পারে তিনি আংশিক সত্য বলছেন। পুরো সত্য জানলে হয়তো তার বিষয়ে বা নির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আপনার চিন্তা ১৮০° ডিগ্রি ঘুরে যেতে পারে। আপনি জীবনে একবার হলেও আপনার বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনের থেকে শুনেছেন, “আমি কি তোমাকে কখনো মিথ্যা কথা বলেছি?” - এই ধরণ বা রকমের প্রশ্ন। আপনি তখন অতীতে চলে গেছেন এবং চিন্তায় মগ্ন হয়ে দেখছেন যে লোকটিকে বিশ্বাস করা যায়।
কিন্তু খোদ এই প্রশ্ন, “আমি কি তোমাকে কখনো মিথ্যা কথা বলেছি?” হলো এক ধরণের সত্যের অপলাপ। ছলনা বৈ আর কিছুই নয়। আমরা এখানে একটি সম্পর্কের কথা চিন্তা করি। ধরুন, আপনার পার্টনার আপনাকে বলেছেন, “আমি কি কখনো তোমাকে মিথ্যা কথা বলেছি?” – হতে পারে তিনি সত্যিই আপনাকে কোনো মিথ্যা কথা বলেন নাই। কিন্তু এই স্টেটমেন্ট তাকে আরো বেশি সৎ ও আপনাদের সম্পর্কের প্রতি অধিক স্বচ্ছ হিসেবে দেখাবে। কারণ তিনি এই সত্য জাহির করার মাধ্যমে হতে পারে আরো অনেক মিথ্যা আপনার থেকে লুকিয়ে রাখতে সুবিধে পাবেন।
এই ধরণের প্রশ্নে পাল্টা এমন চারটে প্রশ্ন নিশ্চয় করবেন,
১. তুমি কি কখনোই আমার কাছে থেকে কোনো তথ্য লুকিয়ে রাখো নাই?
২. কখনো কি তোমার মনে হয়েছে যে কিছু কথা আমাকে তোমার বলা উচিত ছিলো কিন্তু বলো নাই?
৩. তোমার কি এরকম অনুভব হয়েছে যে, আমাকে মিথ্যে বললেও চলবে?
৪. হঠাৎ এমন প্রশ্ন! একটু ব্যাখ্যা করবে?
দেখুন, একটি সত্য দিয়ে একজন মানুষ হাজারটা মিথ্যা মুছিয়ে বা মিশে ফেলার চেষ্টা করছেন। রীতিমতো ফেরেশতা হবার চেষ্টা করছেন। জরুরী নয় সব সম্পর্কেই এমন কিছু আছে কিন্তু উপরোক্ত প্রশ্নগুলো তাকে অধিক সাধু বা অধিক ভালো মানুষ হিসেবে জাহির করা থেকে দূরে রাখবে। কারণ মানুষ মানে আমরা প্রায় মিথ্যা কথা বলে থাকি। আর সেই মিথ্যা কথাকে ঢেকে রাখার জন্য একটি ঠিকঠাক সত্যের লেজ ধরতে পারলেই হলো।
ডার্ক সাইকোলজির এই টপিকগুলো খুবই ডার্ক থিমের সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে রোমান্টিক সম্পর্কের উদাহরণ টানছি যাতে করে প্রবন্ধটি আপনাকে মজা দেয়। আমরা আরো একটি সম্পর্ক কল্পনা করি। এই সম্পর্কের পার্টনার আরো চতুর। তিনি (ছেলে/মেয়ে) তার পার্টনারকে বলছেন, “আমি তো আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকতে চাই। তুমি জেনে অবাক হবে আমি তো আমার আগের বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড কে আমার ফেসবুক পাসওয়ার্ড পর্যন্ত দিয়ে রেখেছিলাম।” আপনার এই কথা শুনে মধুর মত মনে হতে পারে। কিন্তু এক সেকেন্ড! ওদের সম্পর্ক-ই ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে গেছিলো বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে। আর এজন্যই একসময় একে অন্যের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে বাধ্য হয় এবং প্রকৃত সত্য জানার পর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তিনি সত্য বলেছেন কিন্তু আংশিক সত্য বলেছেন। এই একটি সত্য বলার মাধ্যমে তিনি স্ট্যান্ড-আউট করতে পারছেন এবং বাকি সকল সত্য তথ্যগুলোকে খারিজ করে দিয়েছেন। এটাকে বলা হয় ‘নির্বাচিত সত্য (Selective Truth)’।
মা-ছেলের সম্পর্কে একটি মজার উদাহরণ আছে এ বিষয়ে। মা বলছেন, “তুমি কি আগামীকালের হোমওয়ার্ক করেছো?” ছেলে প্রত্যুত্তরে বলছে, “মা, আমি তো পুরো ইংরেজি রচনা আজ লিখেছি।” বেচারি মা-ও খুশি, চতুর ছেলেও খুশি। কিন্তু হোমওয়ার্ক কি সম্পন্ন হয়েছে? উত্তর হলো, না। এছাড়া ইন্টারভিউ নিয়ে একটি মজার উদাহরণ আছে। সিভি দেখে ইন্টারভিউয়ার প্রশ্ন করলেন, “আমাদের এই কোম্পানিতে আপনাকে আমরা কেন নিয়োগ দেবো?” ক্যান্ডিডেট বলছেন, “আমার একাধিক অভিজ্ঞতা আছে একাধিক সফল প্রজেক্টে, অনুগ্রহ করে আমার সিভি তে দেখুন!” ক্যান্ডিডেট হয়তো চাকুরীও পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যে সত্যের আশ্রয় নিয়েছেন সেটার ধরণ হলো ‘Misleading Impression (বিভ্রান্তিকর ছাপ)’। খুব সম্ভবত তিনি সরাসরি সকল সফল প্রজেক্টে তো নয়-ই কোনো প্রজেক্ট পরিচালনা পর্যন্ত করেন নাই। তিনি ছিলেন ঐ সব প্রজেক্টের একজন সাধারণ কর্মী মাত্র, সমর্থক মাত্র, পরিচালক নয়।
সর্বশেষ যে কৌশল অবলম্বন করা হয় সেটা হলো, ‘Maintaining Plausible Deniability (বিশ্বাসযোগ্য অস্বীকৃতি বজায় রাখা)’। ধরুন, আপনি কাউকে টাকা ধার দিয়েছেন। যখন আপনি ঐ টাকাটা তার নিকট থেকে চাইছেন তখন তিনি বলছেন, “খুব শীঘ্রই আমি আপনার টাকাটা দিয়ে দেবো।” খেয়াল করুন, তিনি তার কথার মধ্যে নির্দিষ্ট সময় বা তারিখ উল্লেখ না করে এক প্রকার ‘দ্ব্যর্থতা (Ambiguity)’ ইচ্ছে করে রেখে দিচ্ছেন। একইভাবে বন্ধুত্বে বা কাছের সম্পর্ক গুলোতেও দেখবেন, “বন্ধু, একদিন তোমার সাথে দেখা হবে।” দুঃখজনক বিষয় হলো, এই ধরণের বন্ধুর ঐ ‘একদিন’ সাধারণত আর কখনোই আসে না।
সম্পর্কে বেঞ্চিং এ থাকা ছেলে/মেয়ে শুনে থাকে, “আমার সত্যিকারের একটি প্রেমের সম্পর্ক চাই। আর যদি ভালো ছেলে/মেয়ের কথা বলো তবে তোমার তুলনা নাই!” এখানেও খেয়াল করুন, ব্যাপক দ্ব্যর্থতা খুঁজে পাবেন। প্রেম করবেন ঠিক আছে, আপনি ভালো সেটাও ঠিকাছে, সবই সত্য। কিন্তু তিনি কি আপনার সাথেই প্রেম করবেন? আপনাকে কি এতে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হলো? আপনি হয়তো বসে বসে ভাবছেন ‘একদিন’ আপনাদের সুন্দর সম্পর্ক হবে, সুন্দর সংসার হবে। আহা! ঐ অস্পষ্টতা আর ঐ ‘একদিন’ নিয়ে আসতে পারে না। উল্টো নিজেকে ব্যবহৃত হয়েছেন বলে মনে হতেও শুরু করতে পারে।
দেখছি... কোন একদিন.. শীগ্রই... সময় সময়... কখনো কখনো... মনে হয়... এই শব্দগুলো দ্বারা দ্ব্যর্থতা বুঝায়। এই ধরণের মানুষ থেকে সবসময় সাবধান। বিশেষ করে আপনার কাছে বিষয়টি যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়। সম্ভব হলে এদের থেকে পরিষ্কার হয়ে নিন, নিশ্চিত হয়ে নিন, স্পষ্ট হোন! নতুবা একজীবনে আপনাকে আরো অনেক কিছু দেখতে হতে পারে। এরা নিজের জীবনের পাশাপাশি আপনার জীবন নিয়েও তামাশা শুরু করে দিতে পারে। ইমতিয়াজ আলীর চেয়েও বড় তামাশা।
Also Read It On: সত্যের অপলাপ: ডার্ক সাইকোলজির গোপন কৌশল
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৯
নতুন বলেছেন: কিছু মানুষ আছে যারা এমনটা করে থাকে।
কিছু কিছু স্টাফের সাথে কথা বলতে হলে প্রতিটা শব্দ বুঝে বলতে হয়। নতুবা তারা ঐ একটা শব্দই আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩১
প্রামানিক বলেছেন: লেখা অনেক ভালো লাগল
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪০
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: এই ধরণের বন্ধুর ঐ ‘একদিন’ সাধারণত আর কখনোই আসে না।
সঠিক এবং সেই একদিনটা ধুমকেতুর মত আসে!
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: এসব কি চাণক্য নীতির মধ্যে পড়ে?