নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিভাবে এআই আমাদের কাজের ধরণ পাল্টে দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য নতুন চালেঞ্জ তৈরি করছে?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪৫



বর্তমান সময়ে ‘সৃজনশীল’ ফিল্ডে প্রাসঙ্গিক থাকাটা খুবই চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। এআই (Artificial Intelligence) এর সাথে পরিচয়ের পূর্বে ও পরে কাজের ধরণ কিন্তু খুবই নাটকীয় ভাবে পাল্টে যাচ্ছে। এআই আমাদের সার্বক্ষণিক সাপোর্টে ২৪/৭ হিসেবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এআই আমাদের বই থেকে ব্লগ সব লিখে দিচ্ছে, এআই ফটোগ্রাফারদের মত দৃশ্য বর্ণনার উপর ভিত্তি করে ছবি তৈরি করে দিচ্ছে, এআই একজন ইউটিউবার এর কাজও সংকীর্ণ করে দিয়েছে এবং ভিডিও নির্মাণেও এআই কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র চিন্তক হিসেবে আমাদের সামনে এসেছে।

‘ভয়েস-ওভার’ আর্টিস্ট সম্পর্কে নিশ্চয় শুনেছেন। এই মিষ্টভাষীদের কাজ সম্পর্কে আমরা অবহিত হই কিছু কিছু কাজ থেকে। এরমধ্যে পড়ে এফএম রেডিও, কাস্টমার কেয়ার থেকে শুরু করে নানান ধরণের বড় বড় রেস্টুরেন্টে রিসেপশনিস্ট। কিন্তু এখন মিষ্টভাষী হবার জন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেবার খুব বেশি প্রয়োজন নাই। শুধুমাত্র লিখিত তথ্য থেকে এআই সেটাকে একজন পুরুষ/মহিলার ভয়েস-ওভারে রুপান্তর করে দিতে সক্ষম।

শুধু তাই নয়, এই তথ্যগুলো বা লেখা থেকে কি ধরণের বা রকমের কন্ঠ চাইছেন সেটাও প্রিসেট করা যায়। সাথে সাথে এই সমস্ত চাকুরীতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা কতটা থাকবে সেটাও ভাবতে হবে।

সামগ্রিক ভাবে এআই এর বিস্তার এখন পর্যন্ত বহু কাজকে পুনর্বাসন করার দিকে এবং ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে তা সম্পর্কে খোদ এআই নির্মাতারও পরিষ্কার নন। তবে, এআই আমার কাছে কতটা ভয়ানক সেটা আন্দাজ করতে পারি। আমি ইউভাল নোয়াহ হারারি’র একটি ইন্টারভিউ থেকে কিছু অংশ নিচ্ছি। তিনি উক্ত ইন্টারভিউ তে বলার চেষ্টা করেছেন, “এআই পারমাণবিক বোমার চেয়েও বেশি ভয়ানক।”

তিনি তার এই কথার ভিত্তিতে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, পারমাণবিক বোমা এই পর্যন্ত মানুষের সবচেয়ে নজিরবিহীন ও ধ্বংসাত্মক আবিষ্কার হলেও এই পারমানবিক বোমা কোথায় ফেলা হবে বা কোন শহর বা কোন দেশ ধ্বংস করা হবে সেটা কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষের হাতেই রয়েছে। মানে হলো, পারমানবিক বোমায় কোথাও ধ্বংসাত্মক কিছু ঘটানো হলে তার দায় সরাসরি মানুষকে নিতে হবে। কারণ বোমা টি পরিচালনার দায়িত্ব কোন না কোন মানুষের হাতেই তো আছে বা যাবে।

এবার এআই প্রসঙ্গে তিনি অতি সাধারণ একটি যুক্তি দেখান কিন্তু এই যুক্তিও যথেষ্ট শক্তিশালী। তিনি বলার চেষ্টা করছেন যে, একটি কফি মেশিনের সাথে যুক্ত সামান্য এআই কি করতে পারে সেটা নিয়ে। সাধারণ একটি কফি মেশিন (এসপ্রেসো মেশিন) এ চাপ দিলেই এক কাপ এসপ্রেসো মিলে যায়।

মানুষের এই আবিষ্কার এই পর্যন্ত একটি সুন্দর আবিষ্কার হিসেবে নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও মানুষকে সামান্যতম শক্তি খরচ করতে হয় এবং তিনি জানেন তিনি উক্ত মেশিন থেকে কি ধরণের কফি পেতে যাচ্ছেন। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, তিনি একটি এসপ্রেসো মেশিনে চাপ দিলে ৩০-৬০ মিলিলিটার এক কাপ এসপ্রেসো কফি পাবেন, তাই তো? এবং, সর্বোচ্চ ঐ এসপ্রেসো ব্লেন্ডিং এ কি কি উপাদান যুক্ত থাকবে সেটাও একটি নির্দেশিকায় যুক্ত থাকে।

এখন তিনি (ইউভাল নোয়াহ হারারি) চিন্তা করছেন, যদি এসপ্রেসো মেশিনের সাথে এআই যুক্ত করা হয় তাহলে কি ঘটতে পারে? প্রথমত, উক্ত মেশিন এখন স্বতন্ত্র চিন্তার দ্বারা চালিত। সে শুধু চিন্তা-ই করে না, ঐ চিন্তাগুলো থেকে সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নেয়। অডিও-ভিডিও এবং ভিজ্যুয়াল শক্তি প্রদান করলে তার চিন্তা আরো বর্ধিত হতে বাধ্য।

দ্বিতীয়ত, আপনি নির্দিষ্ট একটি এসপ্রেসো মেশিন কে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে জিজ্ঞেস করেন, “এক কাপ এসপ্রেসো দাও?” এবং যেহেতু সে শুনতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেহেতু আপনাকে সামান্যতম বলও আর প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়বে না এক কাপ এসপ্রেসো নিতে।

এখন এর পরের ধাপ হলো, ঐ এআই আপনাকে প্রায়ই দেখছে, আপনার ব্যবহার ও কন্ঠের দিকে নজর রাখছে, আপনার ব্যক্তিত্ব কে পাঠ করছে, আপনার ক্লান্তি ও আরাম দুটো পরিস্থিতিকেই সে কিন্তু আস্তে আস্তে জানছে বা শিখছে।

এছাড়াও আপনি কোন দেশে আছেন, সেখানের তাপমাত্রা কেমন, কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, সেখানে কেমন ধরণের এসপ্রেসো পান করা প্রয়োজন ইত্যাদি। শুরুর দিকে এআই শুধু এসব দেখছে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই তথ্যগুলো নিয়ে সে নিজে স্বতন্ত্রভাবে চিন্তা করছে। ঠিক যেমন, শুরুর দিকে বাংলা ভাষাতে এআই খুবই ভুলভাল উত্তর দিত। এখনও কিছু কিছু দেয় কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তার কমতি বা ঘাটতিকে ব্যাপকভাবে সামলে নিয়েছে।

স্কুইড গেম সিজন ২ তে একটি হাস্যরসে ভরা ডায়ালগ ছিলো, “তুই সব জানিস। তুই কি এআই?”

মুশকিল হচ্ছে, স্বতন্ত্র চিন্তা করা কখনোই সমস্যার কারণ নয়। বরং স্বতন্ত্র চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভয়ানক; আর এআই যদি এই কাজ শুরু করে দেয় তাহলে আরো ভয়ানক ও বিপজ্জনকও হতে পারে। সুতরাং আপনাকে পুরো স্টাডি করার পর এআই আপনার জন্য ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছালো। এখন আপনি যখন ওর কাছে গিয়ে বলছেন, “আমাকে এক কাপ এসপ্রেসো দাও তো?”

এবার এআই উত্তর দিচ্ছে, “স্যার/জনাব ক, আমি গত কয়েকমাস আপনাকে পর্যবেক্ষণ করেছি, আপনাকে বুঝেছি, এবং আমি নতুন একটি কফির ধরণ আবিষ্কার করেছি। আমার বিশ্বাস এই কফি পান করলে আপনি মন দিয়ে কাজে করতে পারবেন, আপনার আরো ভালো লাগবে। আমি এই কফির নাম দিয়েছি ‘বেস্টপ্রেসো’।”

হাতের তৈরি চা/কফি আমরা ভুলে যাচ্ছি, এই নিয়ে আমাদের আর্তনাদের অবশ্য শেষ নাই। কিন্তু যেদিকে আমরা যাচ্ছি, আমরা হয়তো এরকম ‘বেস্টপ্রেসো’ সম্পর্কে ধারণাও রাখতাম না। এরকম ‘বেস্টপ্রেসো’ বলতেও যে কিছু হয় বা অস্তিত্ব আছে তাও কিন্তু জানতাম না!

Also Read It On: এআই এর যুগে সৃজনশীলতার চ্যালেঞ্জ: কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৬

নতুন বলেছেন: এআই আমাদের কাজের সময় বাচাবে এবং অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দেবে।

যেমন আগে সমাজে টাইপরাইটার দিয়ে কাজ চলতো এখন কম্পিউটার এসে অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু এআই এ তার চেয়েও হাজার গুন বড় পরিবর্তন আনবে সমাজে।

বাড়তি জনসংখ্যাওয়ালা দেশ গুলি সামনের দিন ঝামেলায় পড়তে যাবে বলে আমার মনে হয়।

বাচ্চাদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে জোর বাড়াতে হবে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪১

মি. বিকেল বলেছেন: আপনি একদম সঠিক বলেছেন যে, এআই আমাদের কাজের সময় বাঁচাবে এবং সমাজে বড় পরিবর্তন আনবে। টাইপরাইটার থেকে কম্পিউটারে পরিবর্তন যেমন একটি বিপ্লব ছিল, তেমনি এআই এর প্রভাবও হবে আরও বৃহৎ।

বাড়তি জনসংখ্যাওয়ালা দেশগুলোর জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে, কারণ এআই অনেক কাজকে স্বয়ংক্রিয় করে দেবে, যা কর্মসংস্থানের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই, আমাদের বাচ্চাদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে জোর দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীলতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এমন কিছু দক্ষতা যা এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০১

শায়মা বলেছেন: এআই এর কারণে নিউ জেনারেশন তো ফাঁকিবাজ অলস হয়ে যাবে।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:৪৩

মি. বিকেল বলেছেন: এআই এর প্রভাব নিয়ে আপনার উদ্বেগ একদম যৌক্তিক। তবে, এআই এর কারণে নিউ জেনারেশন ফাঁকিবাজ বা অলস হয়ে যাবে এমনটা সবসময় সত্য নাও হতে পারে। বরং, এআই আমাদের কাজের ধরণ পাল্টে দিচ্ছে এবং নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করছে।

এআই এর সাহায্যে আমরা আরও সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী কাজ করতে পারি, যা আমাদের মানসিক ও সৃজনশীল দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে। উদাহরণস্বরূপ, এআই আমাদের রুটিন কাজগুলো সহজ করে দিচ্ছে, ফলে আমরা আরও জটিল এবং সৃজনশীল কাজে মনোনিবেশ করতে পারছি।

৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: এআইয়ের কিছু খারাপ দিক আছে। যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:২৫

মি. বিকেল বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন, এআইয়ের কিছু খারাপ দিকও রয়েছে যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, এআই প্রযুক্তি যদি ভুল হাতে পড়ে বা অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, বায়াসড সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং চাকরির বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.