নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনার প্রিয় ব্লগটিও কি বন্ধ হয়ে যাবে?

০২ রা আগস্ট, ২০২৫ রাত ১১:২৭



Internet is dying… চমকে দেবার মত কিছু নয়। সত্য ঘটনা। আমাদের চিরচেনা ইন্টারনেটের মৃত্যু ঘটছে তাও খুব দ্রুততম সময়ে। জনাব রহিমের গল্পের মধ্যে দিয়ে বিষয়টি বুঝা যাক। জনাব রহিম ২০১০ সালে ইন্টারনেটে একটি ব্লগ তৈরি করেছিলেন। ধরা যাক, তার ব্লগের ঠিকানা হচ্ছে: http://www.example.com। উন্মুক্ত একটি ব্লগ।

শুরু শুরুতে মানুষ আগ্রহের সাথে ফ্রি-তেই নিজের লেখা সেখানে সাবমিট করত। এতে করে ব্লগ তৈরির প্রথম ৫ বছরের মধ্যে প্রায় লক্ষাধিক আর্টিকেল অন্তত ১০ রকমের ক্যাটেগরিতে যুক্ত হলো। এত এত তথ্যবহুল লেখাগুলো পড়তে দেশ-বিদেশে থেকে অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ব্লগে প্রতিদিন এসে থাকে।

জনাব রহিম সাধারণ মানুষ। তিনি এই সাফল্য দেখে আনন্দে আত্মহারা। তিনি তার ব্লগে আরো বিস্তৃত ব্যান্ডউইথ যুক্ত করলেন। একসাথে এখন লক্ষাধিক পাঠক ব্লগে প্রবেশ করলেও ব্লগ সাইট ডাউন হচ্ছে না। ক্লাইডফ্লেয়ারের অতিরিক্ত সেবাও গ্রহণ করলেন। এতে করে সাইটের গতিও বাড়লো এবং গুগল সার্চ ইঞ্জিন পৌঁছে দিলো আরো নতুন নতুন পাঠকের কাছে।

পাঁচ বছর পর হঠাৎ একদিন জনাব রহিম চিন্তা করলেন যে, আমি গত পাঁচ বছর ধরে এই ব্লগ সাইটে শুধু খরচ করেই যাচ্ছি, ব্যয় হচ্ছে অনেক কিন্তু আয় মোটেই হচ্ছে না। এমনকি এখন লেখক বা কন্টেন্ট রাইটার ফ্রি-তে লেখা দিতে চাইছেন না। বিনিময়ে তারা অন্তত ২৫০-৫০০ টাকা দাবী করছেন প্রতি আর্টিকেলে।

এই কন্টেন্ট রাইটারদের খরচ সামান্য হলেও ব্লগের মেইনটেন্যান্স সংক্রান্ত খরচ অনেক বেশি। যেমন: ডোমেইন, হোস্টিং, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং, ক্লাউডফ্লেয়ার, ডেভেলপার ও কন্টেন্ট রাইটার ইত্যাদি সবমিলিয়ে বার্ষিক অন্তত এক লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। গত পাঁচ বছরে অন্তত ৫ লাখ টাকা জনাব রহিমের শুধু ব্যয় হয়েছে।

অনেক চিন্তার পর জনাব রহিম এই ব্লগ সাইটে উপার্জনের কথা ভাবলেন। গুগল এডসেন্স থেকে শুরু করে একাধিক কোম্পানির অফার করা বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করলেন। এখন অবশ্য বছরে ১ লাখ টাকা খরচ হলেও অন্তত ২ লাখ টাকা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন থেকে জনাব রহিম উপার্জন করে থাকেন। আরো ৫ বছরে তিনি তার ক্ষতিপূরণ সহ লাভ পর্যন্ত হাতে পেলেন। প্যাশন এখন প্রফেশন।

২০২০ সাল, ১০ বছর পর, তিনি দেখলেন যে, এখন সার্বক্ষণিকভাবে ব্লগে নজর রাখতে হবে। সিকিউরিটি বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। এবং নিজের ব্লগের তথ্য আপ-টু-ডেট রাখতেই হবে। আর একজন ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার দিয়ে পুরো ব্লগ সাইটের সাজগোছ ও ব্যবহার সহজ করে দিতে হবে।

তিনি নতুন নতুন কন্টেন্ট রাইটারদের নিয়োগ দিলেন। কারণ গুগলের পরামর্শ হচ্ছে, নতুন নতুন আর্টিকেল লিখলেই ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনে বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকবে। এছাড়াও উপার্জন বাড়বে। দেশের বড়বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা পর্যন্ত জনাব রহিমের সাথে এখন সরাসরি যোগাযোগ রাখেন তাদের বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য। জীবনের এ পর্যায়ে এসে জনাব রহিম নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করলেন।

২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর, সকালে ঘুম থেকে উঠতেই জনাব রহিম ফেসবুকে একটি অ্যাপ্লিকেশনের নাম শুনলেন, ‘ChatGPT’। এই চ্যাটবট কে প্রশ্ন করলেই মুহুর্তেই তার উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু উত্তরগুলো সবসময় সঠিক হচ্ছে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দিচ্ছে। এই চ্যাটবট দেখে জনাব রহিম কিছুটা ভয় পেলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন না। এতে করে তার ব্লগে ভিজিটর বা পাঠক সংখ্যাও কমলো না। এমনকি তার পুরো ব্লগ এনভায়রনমেন্ট স্বাভাবিকভাবেই কাজ করে যেতে থাকলো।

কিন্তু বছর ঘুরতেই মার্কেটে একের পর এক চ্যাটবট আসতে শুরু করলো। এই চ্যাটবটগুলো আরো উন্নত। ২০২২ সালে প্রকাশ পাওয়া ‘ChatGPT’ ২০২৫ সালে এসে অডিও, ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করতে সক্ষম। আর্টিকেল লিখে দেওয়া এখন মামুলি বিষয়। গুগলের নিজস্ব এআই বট ‘Google Gemini’ বাজারে এলো। ইলন মাস্ক মুক্তি দিলেন ‘Grok-04’। গুগলের Veo 3 দিয়ে প্রায় রিয়ালিস্টিক ভিডিও তৈরি করা যাচ্ছে। Anthropic বাজারো আনলো Claude 3.7 Sonnet চ্যাটবট। মাইক্রোসফট ‘Copilot’ তার প্রোডাক্টে বিল্ট-ইন এআই চ্যাটবট হিসেবে যুক্ত করলো। চায়নীজরা নিয়ে এলো ‘DeepSeek’ ও ‘KIMI K2’ এর মত ওপেন সোর্স মডেল। আর ‘Perplexity’ যেন শুধু একটি এআই প্রোডাক্ট নয়, ভবিষ্যতের সার্চ ইঞ্জিনের ধারণাও।

জনাব রহিম যখন নিজের কন্টেন্ট রাইটারদের লেখা দেখেন তখন তার মনে হতে লাগলো, “আচ্ছা, এরচেয়েও ভালো করে ও তথবহুল করে একটি এআই চ্যাটবট লিখে দিতে সক্ষম!” শুরু শুরুতে কন্টেন্ট রাইটারদের উপর চাপ পড়লো। এখন কন্টেন্ট রাইটার’রা ব্যাপক পরিশ্রম করে একটি আর্টিকেল লিখে দেন একই পারিশ্রমিক নিয়ে। চাপ পড়লো ডেভেলপারের উপরও। এরচেয়ে ভালো UI/UX এখন এআই চ্যাটবট বানিয়ে দিচ্ছে।

জনাব রহিমের পক্ষে যেখানে যেটুকু পরিবর্তন করা সম্ভব সেখানে ঠিক ততটুকুই পরিবর্তন করলেন। সর্বশেষ তিনি লক্ষ্য করলেন, যে কোনো এআই চ্যাটবট কে নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্যের জন্য প্রশ্ন করলে উক্ত চ্যাটবট তার ব্লগের তথ্য সরাসরি ব্যবহার করছে। কিন্তু চ্যাটবট ব্লগে প্রবেশ করলেও সেটাকে গুগল এডসেন্স বা বিজ্ঞাপন সংস্থা মৌলিক ভিজিটর বা পাঠক হিসেবে গণনায় নিচ্ছে না। ফলে উপার্জনে ব্যাপক আঘাত আসলো। কারণ একটি চ্যাটবট তথ্য পেয়ে গেলে সে বারবার ওয়েবসাইটে যাচ্ছে না। আর গেলেও তার কোনো লাভই হচ্ছে না।

২০২৬ সাল, একদিন সকালে উঠে দেখলেন তার ব্যয় পুনরায় অনেক বেড়ে গেছে। বার্ষিক খরচ ১ লাখ হলেও বার্ষিক আয় ১০ হাজারের বেশি মোটেই হচ্ছে না। কোন মানুষ আর ব্লগ ভিজিট করছে না। সবাই চ্যাটবট নিয়ে ব্যস্ত। যার যে তথ্য দরকার তা চ্যাটবটের মাধ্যমেই মিলে যাচ্ছে। আলাদাভাবে ব্লগ ভিজিটের প্রয়োজনই পড়ছে না।

আর যেহেতু কেউ তার ব্লগ ভিজিট-ই করছে না সেহেতু বিজ্ঞাপন-ও কেউ দেখছে না। তার রেফারেল লিংক ধরে ‘Amazon’ থেকে কেউ কোনো পণ্যও ক্রয় করছে না। সুতরাং আয় বা উপার্জন হবে কীভাবে?

জনাব রহিমের হাতে এখন দুটো অপশন। (এক) এই পর্যন্ত যা উপার্জন হয়েছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা এবং ব্লগিং জগতকে বিদায় জানানো অথবা, (দুই) আরো টাকা ব্যয় করে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকা কিন্তু অদৌ এই জগত থেকে আর উপার্জন হবে কিনা তার নিশ্চয়তা নাই। জনাব রহিম সাধারণ মানুষ। অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে তিনি প্রথম অপশনই বেছে নিলেন। এবং চিরতরের জন্য নিজের ব্লগ সাইট বন্ধ করে দিলেন।

আমাদের মনে হতে পারে এই গল্পে শুধু জনাব রহিম বেকার হলেন, তা কিন্তু নয়। জনাব রহিমের সাথে বেকার হলেন এক ডজন কন্টেন্ট রাইটার। দুইজন ফুল-স্ট্যাক ডেভেলপার। ব্লগ সাইটের সাথে যুক্ত ডিজিটাল মার্কেটিং ও এসইও-তে যুক্ত মানুষগুলোও।

আর সবচেয়ে বড় বেকার কি হলো জানেন? সেটা হলো, “জনাব রহিমের স্বপ্ন!”

ছবি: VidIQ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.