প্যারিসে তুষার ? পুলক ( দুই এবং শেষ অংশ )

০২ রা মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯

প্যারিসে তুষার ? এ এক কাল্পনীক ব্যাপার, তাই এতো বড় হয়ে-ও প্যারিস তথা বাড়ি বা তার আশপাশে তুষার দেখা যেন পুলকের একটা হবি । প্যারিসের এক মফস্বল শহরে গত এক সপ্তাহ যাবৎ বড় আপু এক মাসের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করেছে । সেখানকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো না, তাই প্রতিদিন সকালে তাকে দিয়ে আসতে হয়, অফিস আওয়ার শেষে আবার নিয়ে আসতে হয়, সকালে যাওয়ার সময় আপু গাড়ি চালিয়ে যান, মা চালিয়ে আসানে, বিকালে মা গাড়ি চালিয়ে যান, আপু চালিয়ে আসেন, বাবার করে দেয়া এটাই নিয়ম, অন্যথায় বড় আপু গাড়ি চালাতে অলসতা করেন ।
প্রথম দুই সপ্তাহ বেশ ভালোই চলছিলো, শীত ছিলো, কিন্তু তুষার ছিলোনা, তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম দিন থেকেই তাপমাত্রা মাইনাসে যাওয়া শুরু করলো, বরাবরের মতো আজও যাওয়ার সময় আপু গাড়ি চালিয়ে গেলো, মা চালিয়ে আসালেন এবং অফিস আওয়ার শেষে মা গাড়ি চালিয়ে গেলেন, ফিরার পথে তুষার পরা অবস্থায় ঝুকি এড়াতে মা আপুকে গাড়ি চালাতে না দিয়ে মা নিজে চালিয়ে আসলেন, মাঝেমধ্যে গাড়ি গ্লীসে করলেও বাড়ি পৌছতে তেমন কোন জটিলতা ছিলোনা । কিন্তু তুষার পরা অবস্থায় গাড়ি চালাতে একটা সমস্যা হয়, মনে হয় সাদা কবুতরের পালকগুলো চোখে এসে পরে, তাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে হাতের ভারসাম্য রক্ষা করা মুশকিল হয়ে উঠে ।
দিনের বেলায় যখন প্রবল বেগে তুষার পরতে থাকে তখন আকাশ এতোই ঘন হয়ে উঠে, তখন আকাশ দিনের আকাশ মনে হয় না, মনে হয় একটি চাঁদনী রাতের আকাশ এবং সে আকাশে আকাশ পরীরা মনের আনন্দে ব্রহ্মচারী করছে, আবার কখনও মনে হয় আকাশ দখল করে নিতে হাজার হাজার সাদা কবুতরের পালকগুলো জীবিত হয়ে কে কার আগে আকাশ দখল করে নিবে সে যুদ্ধে নেমেছে অথবা আকাশ পরীরা একে অপরের সাথে অদ্ভুত সম্পর্ক স্থাপনে ব্যস্ত, যেখানে সহিংসতা নাই আছে শুধু নম্রতা, যেখানে দুঃখ নাই আছে শুধু সুখ, যেখানে মৃত্য নাই আছে অন্তহীন প্রান, যেখানে উচ্চ বাক্য নাই আছে শুধু নীরবতা ।
কেন জানি গত সন্ধ্যার সংবাদ ও আবহাওয়া বার্তা দেখা হয়েছিলো না, ফিরার পথে এমন ঘন তুষার পরা দেখে মা সন্ধ্যার সংবাদের সময় টিভি অন করলেন, খবরের হেড লাইন হয়ে আসলো আবহাওয়া বার্তা এবং তুষার পরার খবর । শত শত কিঃ মিঃ রাস্তায় গাড়ি বন্ধী হয়ে আছে, অতিরিক্ত তুষারের কারনে গাড়ি অগ্রসর হতে পারছিলো না এবং ঝুকি এড়াতে জেলা প্রসাশক রাস্তায় গাড়ি চলাচল দন্ধ করে দেয়ার ঘোষনা করে দিলেন, রাস্তায় বন্ধী শত শত লোক অতিরিক্ত শীতের কারণে গাড়ি ত্যাগ করে আশ্রয় নিতে থাকলো নিরাপদ স্থানে, জিমনাজ বা কোন পরিত্যাক্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানে, যেখানে জরুরী ভিত্তিতে গরম পানি ব্যাবস্থা সহ থাকার মিনিমাম ব্যাবস্থা করা হয়েছে । খবরে এ সব দেখার পর পুলকের মনে তার সেই "মিরনের" তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা মনে হলো, চোখে পানি থলথল করতে থাকলো, ময়ূরের পেখমের মত মুহুর্তের মধ্যে তুষার দেখার সখ মিটে গেল পুলকের । মাকে বলে দিলো " যত জরুরী-ই হোক, কাল তোমরা গাড়ি নিয়ে বের হবে না ।
একদিকে পুলকের অনুরোধ, অপর দিকে ঘন তুষার পরার কারনে পরদিন আর গাড়ি নেয়ার প্রশ্নই আসলোনা, যোগাযোগ ব্যাবস্থা জটিল হলেও পাবলিক সার্ভিসের উপর ভরসা করে মা আপুকে নিয়ে বের হলেন, তাতেও পুলকের আপত্তি ছিলো । ট্রান্সপোর্ট সময় মত আসছিলোনা, তবুও প্রশিক্ষণের ফলাফলের উপর যেন কোন খারাপ নোট না আসে তার জন্য মা কষ্ট করে হলেও আপুকে প্রশিক্ষণালয়ে নিয়ে গেলেন, গিয়ে দেখলেন প্রতিষ্ঠান বন্ধ, শুধু অফিসার ছারা অফিসে আর কেউ নেই অফিসে । অফিসার মা এবং মেয়েকে বাড়ি ফিরে যেতে বললেন । মা মেয়ে বাড়ি ফিরে আসলেন, তখন প্রায় দুপুর হয়ে আসছিলো, ফিরার পথে মা রেষ্ট্ররেন্ট থেকে গ্রীল করা মুরগী নিয়ে আসলেন, বাসায় এসে সকলে মিলে জানালা দিয়ে সাদা কবুতরের পালকগুলো দেখতে থাকলেন আর গরম গ্রীল করা মুরগী, বাগেট ( ফ্রান্সের বিশেষ রুটি, চিকন বাশের মত লম্বা, আয়তনে ৫৫ সেঃ মিঃ মত লম্বা ) দিয়ে মজা করে খেতে থাকলেন । বিঃ দ্রঃ- ৭ এবং ৮ই ফেব্রুয়ারু ২০১৮"র প্যারিসের বাস্তব ঘটনা নিয়ে লেখা ।

০ টি +০/-০