![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখার সাথে একটু পরিচয় আছে। আর সেই পরিচয় থেকেই লেখার প্রতি ভালোলাগা অতঃপর ভালোবাসা! তাই কলম হাতে নিয়ছি!
#একটি_ডিভোর্সের_গল্প-২
.
একটা দুপুর এবং বিকেলের অনেকটা সময় ধরে ডিভোর্স পেপার হাতে নিয়ে বসে আছে রূপা। উল্টেপাল্টে দেখছে আবার রেখে দিচ্ছে। তার কথা মতই কাগজগুলো তিন মাস আগে জসিম তাকে দিয়েছিলো! জসিম এখনো সই করেনি। সে বলে গেছে, তুমি সই করে কাগজগুলো আমার কাছে পাঠিয়ে দিও আমি সই করে কোর্টে জমা করে দিবো! কিন্তু রূপাও কাগজে সই না করে তুলে রেখেছিলো আলমারিতে। অনেকবারইই ভবেছিলো সই করবে, কিন্তু যখনই কাগজ-কলম হাতে নেয়, পূরোনো দিনের স্মৃতিকথা ভেসে ওঠে মনের মাঝে। আর মাথা ব্যথা শুরু হয়! কী যেন ভাবে, আবার রেখে দেয়!
তিনমাসে জসিম তাকে অনেকবার ফোন করেছিলো কিন্তু সে ফোন রিসিভ করেনি! প্রথমপ্রথম কয়েকবার তাদের বাসায় এসেছিলো কিন্তু রূপা তা পছন্দ করেনি বলে এখন আর সে আসে না!
হঠাৎ রূপার মাথা চিনচিন করে উঠলো। কাগজ হাতে নিয়েই বিছানার উপর শুয়ে পড়লো।
.
রূপা ছোটোবেলা থেকেই মানসিক রোগে ভুগছে। কিন্তু, কথাটা তার বাব-মা এবং ডাক্তার ছাড়া কেউ জানে না। ছোট বেলায় কিছুদিন পরপর রূপার খুব জ্বর হতো এবং তার আচরণ খুবই উদ্ভট হয়ে যেতো। তখন রূপার বাবা ডাক্তারের সাথে কথা বলেন এবং কিছু চেক আপ করতে গিয়ে ব্যাপারটি ধরা পরে। সে যখন ক্লাস এইট পাশ করে, তখন তাকে ভ্রমণের কথা বলে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এবং তাতে সে বেশ সুস্থ হয়ে ওঠে! তারা বিষয়টা কাউকে জানতে দেয়নি। লোকে পাগল বলবে তাই! জসিমও এবিষয়ে কিছু জানেনা! এমনকি রূপা নিজেও জানে না!
.
.
রূপার ঘরে ঢুকে তার মা তাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ভয় পেলেন। তারপর তার বাবাকে ডেকে তার হাত পা মর্দন করে দেখতে লাগলেন। কিন্তু কোনো সাড়া নেই! দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হলো।
ডাক্তার রূপাকে বিদেশে নিয়ে যেতে বললেন এবং তার বাবা তাই করলেনে।
.
.
চিকিৎসারত অবস্থায় কেটো গেলো আরো দু'মাস।
.
.
অফিস থেকে বাসায় ফিরে বই নিয়ে বসলো জসিম। আজকাল বই পরে নিজেকে ব্যস্ততায় ডুবিয়ে রাখতে চায় সে! কিছুটা হলেও কাজ হয় তাতে! গত বেশ কয়েকদিন রূপার কোনো খোঁজ পায়নি। সর্বশেষ জানতে পেরেছিলো, তারা সবাই ফ্যামিলি-টুরে দেশের বাহিরে গেছে!
বই পাঠে গভীর মনযোগী হওয়ার চেষ্টা করলো জসিম। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই মুখ তুললো। নাম্বারটা খুব পরিচিত এবং উপরে বাংলাতেই লিখা আছে "রূপা" ! সে অবাক দৃষ্টিতে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে রইলো! ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রূপার কন্ঠ ভেসে এলো
-দরজাটা খুলো কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি! বলেই ফোন কেঁটে দিলো রূপা।
জসিম রীতিমত অবাক হয়ে গেলো! তাড়াহুড়ো করে চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে হাত থেকে বই পরে গেলো ফ্লোরে। দু'মাস ধরে কলিং বেল নষ্ট হয়ে আছে। কিন্তু, প্রয়োজন হয়না বলেই ঠিক করানো হয় নি!
দরজা খুলে কিছুটা চমকে গেলো জসিম! রূপা দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রূপার বাবা। সে তাঁকে সালাম করলো এবং ভেতরে নিয়ে এলো।
রূপার বাবা জসিমকে সব খুলে বললেন। এবং গত দু'মাস সে বিদেশে চিকিৎসাধিন ছিলো তাও জানালেন। এখন রূপা প্রায় সুস্থ।
ঘরে ঢুকেই রূপা সোজা চলে গেলো তাদের থাকার ঘরে। তার বাবা সামনের ঘরে জসিমের সাথে কথা শেষ করে সেখান থেকেই চলে গেলেন। জসিম উঠে রুমের দিকে পা বাড়ালো। উঁকি দিয়ে দেখলো, রূপা মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। জসিম আস্তে আস্তে কাছে গেলো। সামনাসামনি হতে জসিম কিছু বুঝে ওঠার আগেই রূপা তার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো এবং তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো!
পাথরের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো জসিম। তার চোখেও অশ্রু প্রবহমান! হয়তো আনন্দধারা বইছে! তারপর আস্তে আস্তে রূপা মাথা তুললো
-আমাকে ক্ষমা করবে তো?! কাঁদোকাঁদো সুরে বললো রূপা!
-আর কোনোদিন আমাকে ছেড়ে যেও না! আকুতি নিয়ে বললো জসিম!
-আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! বলে আবার জসিমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো রূপা!
সত্যিই, "ভালোবাসি" শব্দটি এতই মধুর, যা সব অভিযোগ,অনুযোগ আর অভিমানকে তুচ্ছার্থে পরিণত করে!
©somewhere in net ltd.