নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বিশ্বাসী, কিন্তু মনের দরজা খুলে রাখাতে বিশ্বাস করি। জীবনে সবথেকে বড় অনুচিত কাজ হল মনের দরজা বন্ধ রাখা। আমি যা জানি সেটাই সত্য, বাকি সব মিথ্যা…এটাই অজ্ঞানতার জন্ম দেয়।

মুক্তমনা ব্লগার

“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”

মুক্তমনা ব্লগার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদৌ মুক্তমনার কোনো কিছু আমরা বুঝি??

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৫

ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা, ফেসবুক ব্লগের অসংখ্য নাস্তিক মুক্তমনাগণ এখন পর্যন্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপারটা ধরতে পারে নি। স্বাভাবিক বিষয় সেটা, কারণ রক্ষণশীল মুসলমান সমাজ থেকে উঠে আসা নাস্তিকগণ ধর্মের প্রশ্নে উদার হতে গিয়ে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নে রক্ষণশীল হয়ে ওঠেন, আবার জাতীয়তাবাদের বিষয়ে উদার হতে হতে নারীর প্রশ্নে রক্ষণশীলতা দেখান, সেটা নিয়েও কিছুটা উদার হতে থাকলে আরেক দিক দিয়ে গোঁড়ামি দেখিয়ে ফেলেন। দীর্ঘদিনের মতপ্রকাশ এবং গণতান্ত্রিক চর্চাটা আমাদের দেশে হয়ে ওঠে নি। বারবার সামরিক শাসক এবং কঠিন কঠিন নাগরিক অধিকার হরণের আইনগুলোর কারণে তারা অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই যখন কোন নাস্তিকই মত প্রকাশের বিরুদ্ধে কঠিন আইন চায়, অবাক হই না। তবে বিষয়গুলো আপত্তিকর তো বটেই, আমার নিজের জন্যেও বিব্রতকর। উদাহরণ দিয়ে বোঝাই।

১) এক বিশিষ্ট নাস্তিক একবার বললেন, বিহারীদের ঘাড় ধরে দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত! কারণ ওরা উর্দুতে কথা বলে, ওরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল, বাঙলাদেশের নাগরিক তারা নয়। আমি অবাক হলাম, এত বছর পরে তারা কী করেছিল তার জন্য তাদের বের করে দিতে হবে? তর্ক করেছিলাম। তারা কোন অপরাধ করে থাকলে, প্রচলিত আইনে তাদের অপরাধের বিচার হতে পারে। শুধুমাত্র যারা অপরাধ করেছে এবং সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু বিহারী, তাই তাদের বের করে দেয়া উচিত, এই কথা একজন মানবাধিকারের একদম প্রাথমিক সূত্র পড়া লোক কীভাবে বলে? একজন বিহারী নারী, একজন শিশু, তাদের কোন দোষে বের করে দেবো? তারা কোথায় যাবে? পাকিস্তান তাদের নেবে না। তাহলে আমরা কী তাদের বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেবো?

২) আরেক বাঙালি জাতীয়তাবাদের সমর্থক নাস্তিক একবার বললেন, আদিবাসী বলে কেউ নাই। বাঙালিই আদিবাসী। যারা চাকমা মারমা তাদের বাঙলাদেশে থাকতে হলে মাথা নত করেই থাকতে হবে। বাঙলাদেশের মূল ভিত্তি যেহেতু বাঙালি জাতীয়তাবাদ, তাই যারা তা স্বীকার করবে না তাদের কোন স্থান বাঙলাদেশে নাই। আমি রীতিমত হতবাক হলাম! এসব কোন যুগের কথা?

৩) আরেক নাস্তিক একবার বললেন, নারীবাদ একটা বাজে বিষয়। নারীকে অতিরিক্ত সুবিধা কেন দেবো? তার কথা নিতান্তই অজ্ঞতাসূলভ। যারা নারী পুরুষের সম্পর্ক এবং কর্তৃত্বের ইতিহাস পড়ে নি, অর্থনৈতিকভাবে নারীকে বঞ্চিত করার বই পড়ে নি, তাদের মাথা থেকেই এমন কথা বের হয়।

৪) আরেক নাস্তিক বললেন, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ সম্পর্কে ভিন্নমত পোষন করায় কিছু মানুষের শাস্তি দেয়া প্রয়োজন! কঠিন শাস্তি!

৫) আরেক নাস্তিক বললেন, পাকিস্তানীদের তিনি মনে প্রাণে ঘৃণা করেন। একজন পাকিস্তানী নারীকে ধর্ষণ করতে পারলে তার খুব সুখ হতো, ভাবতে পারতেন যে, প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে।

৬) রোহিঙ্গাদের পক্ষে লিখেছিলাম অনেক কিছু। রোহিঙ্গাদের যেন বাঙলাদেশে সাময়িকভাবে জায়গা দেয়া হয়, কষ্ট হলেও। মিয়ানমারে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই মানুষের প্রথম ধর্ম। গালাগালি শুনতে হয়েছিল প্রচুর। নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচিত লোকদের মুখেই!

৭) যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ভিন্ন মত পোষন করেছেন একজন সাংবাদিক। উনার মতে বিচার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে। উনি উনার মতামত প্রকাশ করেছেন। এই নিয়ে তুলকালাম, তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি এবং হুমকি! পঞ্চাশজন বুদ্ধিজীবী তার মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে বলায় তারাও হয়ে গেলেন রাজাকার। আমি স্পষ্ট করেই বলি। আমি এদের সকলের মত প্রকাশের পক্ষে। তারা যেন নিজেদের মতামত সঠিকভাবে বলতে পারে। তাদের মত প্রকাশের অধিকার না থাকলে আমাদেরও নেই।

উপরে যারা যেসব কথা বলেছে, তাদের কথাকে আমি কোন অবস্থাতেই দমন করতে চাই না। কারণ মুক্তচিন্তা- মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাপারগুলো আপনার পক্ষের না বিপক্ষের, তাতে কিছু যায় আসে না। আপনি আপনার মতের বিরুদ্ধে যারা আছেন তাদের সমালোচনা করুন। কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আপনি তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করতে পারেন না।

সমস্যা হচ্ছে, আমরা পীর ভক্ত জাতি। আমাদের মধ্যে যেকোন ভাবেই মিশে আছে ভক্তিবাদ। আমরা কাউকে পীরে পরিণত করি, এবং সে যা বলে মুরিদের মত আমরা মগজ না খাটিয়েই মেনে নিই। মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আমরা পীরে পরিণত করেছি। মাজার বানিয়ে এখন সকাল বিকেল পুজো দেয়া বাকি। কিন্তু ভুলে গেছি, তিনি একবার সাদাসিদে কথার নামে অত্যন্ত আপত্তিকর এবং হাস্যকর একটা লেখা ছাপিয়েছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, সত্য বলার অধিকার থাকা যাবে, মিথ্যা বলার অধিকার থাকা যাবে না! তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সত্য মিথ্যের কর্তৃপক্ষ হয়ে উঠেছেন!

আপনাকে আবারো বলছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা মানে মিথ্যে বলারও অধিকার। আপনি সেটা না বুঝে থাকলে আপনি নির্বোধ। যতক্ষণ পর্যন্ত না কেউ আপনাকে খুন ধর্ষণ বা শারীরিক ক্ষতির হুমকি দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই মতামত তার অধিকার। আপনি তার বিরুদ্ধে লিখতে পারেন, তাকে বাতিল করতে পারেন, তার কথা না শুনতে পারেন। কিন্তু তার মতামত দেয়ার অধিকার হরণ করতে পারেন না। বা সেটা রাষ্ট্র বা ধর্ম দ্বারা হরণ হলে উল্লাস করতে পারেন না।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল অশ্লীল খেতাব দিয়ে একটি প্রকাশনী বন্ধের পক্ষে অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিন আমেরিকায় থেকেও তিনি মুক্তচিন্তা, বাক স্বাধীনতার কোন কিছুই আয়ত্ব করতে পারেন নি, বা বুঝতেই পারেন নি। দিনশেষে উনিও সেই আম মুসলমান! উনি পক্ষ বিপক্ষ তৈরি করে তরুণদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির দিবাস্বপ্ন দেখছেন। পক্ষ বিপক্ষ অবশ্যই থাকবে, কেন থাকবে না? কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমারো যেমন অধিকার, একজন মাদ্রাসা ছাত্র বা হেফাজত কর্মী বা শিবির সদস্যেরও অধিকার। সে মিথ্যে বলবে, এই অধিকারের অপপ্রয়োগ করবে, তা তো আমিও করতে পারে। নাস্তিকরাও পারে। মুক্তচিন্তার কথা বলেও তো মিথ্যে বলা যায়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রতিটি কথা সত্য, এমন কোন ওহী তো নাজিল হয় নি। তাহলে সত্য মিথ্যার নির্ণায়ক কী? কে ঠিক করে দেবে কোনটা সত্য? কে সেই কর্তৃপক্ষ?

সেই কর্তৃপক্ষের দায়িত্বটা রাষ্ট্রকে দেয়া যাবে না। ধর্ম বা মোল্লাদের দেয়া যাবে না। জাতীয়তাবাদী চেতনাকে দেয়া যাবে না। সেটা জনগণের হাতেই রাখতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.