![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“Ask yourself often, why do I have to think like other people think?”
হাজার বছর পূর্বে পাল আমলে এই বাংলায় অসাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত। তবে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূত্রপাতের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় ১৯৪৭-এর কথা, দেশভাগ। তার পিছনে ছিল লাহোর প্রস্তাব, ১৯৪০। এর পিছে মুসলিম লীগের জন্ম, ১৯০৬। মুসলিম লীগের জন্ম হয়েছিল বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষিতে, ১৯০৫। সেখান থেকেই আসলে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমির সূচনা। একারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের প্রথম খণ্ডের প্রথম পৃষ্ঠায় আছে ঐতিহাসিক বঙ্গভঙ্গের দলিলঃ
ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিভাগের সাথে আসাম মিলে একটি আলাদা প্রদেশ গঠনের খবর প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতা প্রেসে, ১৯০৫ সালের ৬ জুলাই এবং পরের দিন সিমলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়। সেখানে একটি লেফটেন্যান্ট-গভর্নর পোস্ট তৈরি হবার কথা। দার্জিলিং বাংলার সাথেই থাকবে। রাজধানী হবে ঢাকা এবং ইহার সহায়ক সদর দফতর হবে চট্টগ্রাম। ইহার এরিয়া এরাউন্ড ১ লক্ষ বর্গ মাইল এবং এর অধিবাসী প্রায় ৩ কোটি। যার মধ্যে ১.৮০ কোটি মুসলিম এবং ১.২০ কোটি হিন্দু। অপর প্রদেশে থাকবে ৪.২ কোটি হিন্দু এবং ০.৯ কোটি মুসলিম। অনেকেই সুগার কোটেড করে বঙ্গভঙ্গকে প্রশাসনিক বিভাজন বলতে চান। কিন্তু আদতে তা নয়। কারণ সরকারি গেজেটেই স্পষ্টভাবে হিন্দু ও মুসলিম সংখ্যার কথা বলা ছিল। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের দলিলেই দু’টি প্রস্তাবিত প্রদেশের ধর্মীয় চেহারাটাকে ফোকাস করা হয়েছিল।
এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ‘ভারত স্বাধীন হলো’ শীর্ষক গ্রন্থে। সেখানে উনি উল্লেখ করেন,
“ভারতের বড়লাট তখন লর্ড কার্জন। তাঁর সাম্রাজ্যবাদী ধরণধারণ আর প্রশাসনিক বিধি ব্যবস্থা ভারতের রাজনৈতিক অসন্তোষের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে। সবচেয়ে বেশি অশান্তি মাথাচারা দিলো বাংলায়, কেননা এই প্রদেশের উপর লর্ড কার্জন বিশেষ নজর দিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দিক থেকে এটি ছিল ভারতের সবচেয়ে অগ্রসর অঞ্চল। বাংলার হিন্দুরা ভারতের রাজনৈতিক জাগৃতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছিল। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন এই প্রদেশকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, এর ফলে হিন্দুরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং এতে বাংলার হিন্দু আর মুসলমানের মধ্যে স্থায়ী বিচ্ছেদ সৃষ্টি হবে। বাংলা এ ব্যবস্থা মুখ বুজে মেনে নেয় নি বরং এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক আর বিপ্লবী উদ্দীপনায় ফেটে পড়েছে।“
বঙ্গভঙ্গের পরবর্তী সময়টাকে (১৯০৫-১১) বর্ণনাকালে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন,
“সে সময় বিপ্লবী দলগুলোতে শুধু হিন্দু-মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকদেরকেই নেয়া হতো। সত্যি বলতে কী, বিপ্লবী দলগুলো তখন ছিল কায়মনোবাক্যে মুসলিম বিরোধী। তাঁরা দেখতে পেত যে, ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজনৈতিক সংগ্রামের বিরুদ্ধে মুসলিমদের কাজে লাগাচ্ছে এবং তাঁরা সরকারের হাতের পুতুল হয়ে খেলছে। পূর্ববঙ্গ ততদিনে ভিন্ন প্রদেশ; সে সময়ের জঙ্গীলাট ব্যামফিল্ড ফুলার প্রকাশ্যেই বললেন যে, ব্রিটিশদের চোখে মুসলিম সম্প্রদায় হলো তাঁর সুয়োরাণি। বিপ্লবীরা মনে করতো, ভারতের মুক্তি সাধনায় মুসলিমরা হলো পথের কাঁটা; বাঁধাস্বরূপ বলেই সেই পথের কাঁটা সরাতে হবে।
বিপ্লবীরা যে মুসলিমদের দেখতে পারতো না, তাঁর আরও একটা কারণ ছিল। সরকার এটা মনে মনে জানতো যে, বাংলার হিন্দুদের মধ্যে রাজনৈতিক জাগরণ এত বেশি যে বিপ্লবী আন্দোলনকে টিট করার ব্যাপারে কোন হিন্দু কর্মচারিএই ষোল আনা বিশ্বাস করা যায় না। সরকার তাই পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগের লোকবল বাড়ানোর জন্য উত্তর প্রদেশ থেকে বিস্তর মুসলিম অফিসার আমদানি করেছিল। এর ফলে বাংলার হিন্দুরা মনে করতে আরম্ভ করলো যে, যেই মুসলিম সেই বুঝি রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের শত্রু।“
এ ব্যাপারে নিজের কর্মযজ্ঞ নিয়ে মাওলানা বলেন,
“...বিপ্লবী হিন্দুদের যুক্তি দিয়ে আমি বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে, সম্প্রদায়গতভাবে মুসলিমদের শত্রুজ্ঞান করাতা তাঁদের ভুল। বাংলায় গুটিকয়েক মুসলিম অফিসারের কীর্তিকলাপ দেখে তা থেকে তাঁদের সার্বিক সিদ্ধান্তে পৌছানো ঠিক নয়। গণতন্ত্র আর স্বাধীনতার জন্য মিশর, ইরান আর তুরস্কের মুসলমানেরা বৈপ্লবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি ভারতের মুসলমানদের মধ্যে কাজ করি, আমাদের বন্ধু হিসেবে তাঁদের টানবার চেষ্টা করি, তাহলে তাঁরাও রাজনৈতিক সংগ্রামে যোগ দেবে। আমি এও তাঁদের স্পষ্ট করে বলি যে, মুসলিমরা যদি সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করে অথবা এমনকি যদি তাঁরা মুখ ফিরিয়ে রাখে, তাহলে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লড়াই ঢের বেশি কঠিন হবে। কাজেই আমাদের সর্বতোভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে ঐ সম্প্রদায়ের সমর্থন আর বন্ধুত্ব অর্জন করা যায়।“
বিপ্লবীদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে তিনি আরো বলেন,
“যখন আমি বিপ্লবীদের দলে প্রথম যোগ দিই, তখন দেখতে পাই, তাঁদের যা কিছু কাজকর্ম সবই বাংলা আর বিহারে আবদ্ধ। বিহার তখন বাঙ্গলা প্রদেশেরই একটি অংশ। আমি আমার বন্ধুদের বলি, ভারতের অন্যান্য অংশে আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়া দরকার। গোঁড়ায় তাঁরা গাইগুই করেন। বলেন যে, তাঁদের আন্দোলন হলো গোপন ধরণের। যোগসাজশ বাড়ালে ধরা পড়ার ভয় বাড়বে। গোপনীয়তা বজায় না রাখলে এই কাজে সফল হওয়া যায় না। অন্যান্য প্রদেশে শাখা বিস্তার করলে গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়তো শক্ত হবে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত আমি তাঁদের বুঝিয়ে রাজি করাই।“
-অর্থাৎ ব্রিটিশরা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে এই উপমহাদেশে যেই সাম্প্রদায়িকতার বিজ বপন করে গিয়েছিল, সেই বীজ থেকে ভারত বিভক্ত হয় ১৯৪৭ সালে। তারপর হাজারো পথ পরিক্রমায় ১৭৯১, আমাদের স্বাধীনতা।
ব্রিটিশরা কেন হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বাড়াতে চেয়েছিল, তা সম্পর্কে আরেকজনের লেখা থেকে কোট করিঃ
“ মুসলিমরা যেখানেই গিয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেখানেই স্থায়ী হয়েছে এবং উপনিবেশ হিসেবে গণ্য না করে সে স্থানকেই তারা আপন করে নিয়েছে। দ্বিতীয়ত, স্পেনে ফার্ডিনান্দ ও ইসাবেলার নেতৃত্বে যখন মুসলিম শাসকদের পরাজয় হয় তখন মুসলিমদের চিহ্নও রাখা হয়নি। মুসলিমদের পর ইহুদীরাও বিতাড়িত হয়েছে। ভারতে শাসকদের উত্থান-পতন হয়েছে কিন্তু ধর্মীয় জনগোষ্ঠী আক্রোশের স্বীকার হয়নি। কোনো মুসলিম শাসকের পতনের পর হিন্দুরাও মুসলিমদের উৎখাত করার কথা ভাবেনি। বৃটিশদের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের জনগোষ্ঠীর এই সাম্প্রদায়িক সহিষ্ণুতাই সম্ভবত বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। সুতরাং ইতিহাসকে তারা তাদের মত করে বিনির্মাণের চেষ্টা করেছে। তাদের ইতিহাসবিদরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির।"
যুদ্ধের দিনগুলোতেও কিন্তু সুকৌশলে পাকিস্তানিরা এই কার্ড খেলেছে। হিন্দু-মুসলিম কার্ড। ডিভাইড এন্ড রুল কার্ড। বলেছে মুক্তিযুদ্ধ ছিল ইসলামের বিপরীতে।
আসলে কি তাই?
আপনার বিবেক কী বলে?
প্রশ্ন রেখে গেলাম মাননীয় স্পিকার...
©somewhere in net ltd.