![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদিও আমি কখনো দুঃস্বপ্নে বিভোর ছিলামনা এবং আজও না ।তবে একটা জাগ্রত স্বপ্ন দেখতাম ; একদিন ভালোবাসব ,ঐ আকাশের বিশালতার মতো নয় কেবল আমার মনের গভীরতা থেকে ।
আমার দূরের কিন্তু অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু রওনক । চট্টগ্রামের একটা সাধারন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে ; বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তৃতীয় বর্ষ শেষের পথে । কল্পনাবিলাসী কিংবা স্বপ্ন বিলাসী কোনটাই নয় , বাস্তবতায় বিশ্বাস করে চলার চেষ্টা তার সবসময় । তবু যে আবেগ অনুভূতি বলে কিছু একটা আছে এই কথা সে ভুলে যেতে পারেনা । প্রেম-ভালবাসার মতো একটা নির্দিষ্ট সম্পর্কের সাথে জড়িয়ে জীবনকে গুটিয়ে চলার চিন্তা কখনো করেনি ; বন্ধুবান্ধব,হৈ-হুল্লোড়,উল্লাস এগুলো যেন তার রক্তের সাথে মিশে গেছে । এসব ছাড়া জীবনকে চিন্তা করার কথা কখনো ভাবেনি ।
বছর দুই আগে ফেবুতে পরিচয় হয় ইরার সাথে ; ইরা কেবল এইচ,এস,সি পাস করে ইউনিভার্সিটি কোচিং করছিল ঢাকাতে । খুব সাধারন সিমসাম সরলমনা একটা মেয়ে ইরা । পরিচয় , কথা এবং অবশেষে বন্ধুত্ব । চলছে কথা ; যাচ্ছে দিন , আসছে রাত । ইরার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে দিন দিন ; ফেবু আছে চ্যাট ও চলছে । নিয়ম করে প্রতিদিন কথা হয় ,দুজনের ভালোলাগা মন্দলাগা সবকিছু ভাগাভাগি চলছে বন্ধুত্বের খাতিরে ।সম্পর্কটা তখনো তুই এর মধ্যেই আছে ।
একটা পর্যায়ে ইরার দুর্বলতা বাড়তে থাকে রওনকের প্রতি; এদিকে রওনক তো আবেগ কে প্রশ্রয় দিতেই চায়না একদম । তবু ইরা খুব গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলে আর তা জানায় রওনককে । রওনক তা গ্রহন না করে ইরাকে বুঝায় ; ‘এ সম্ভব না ,এ হয়না’ ।রওনক কেবল তৃতীয় বর্ষ শুরু করেছে আর ইরার এরই মধ্যে বিয়ের প্রস্তাব আসছে ! অনার্স শেষ করতেই এখনো তিন বছর বাকি তার পর আরও অনেক পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হতে ইরার বাবা তাকে নিয়ে বসে থাকবেনা এটা অনেকটাই নিশ্চিত রওনক । তাই কোনভাবেই এই সম্পর্কে জড়ায়ে দুজনেই কষ্ট পাওয়ার রাস্তা খুজতে যায়নি রওনক । বন্ধুত্ব যাতে টিকে থাকে সে কথাই বুঝায় ইরাকে । সাময়িকভাবে ইরা বুঝলেও রওনকের প্রতি ইরার ভালোবাসা কমে যায়নি বরং দিন দিন বাড়ছেই ।
এভাবেই চলছে দুজনের গভীর বন্ধুত্ব । সম্পর্কের দু’বছরের মাথায় রওনক আসে ঢাকাতে ইরার সাথে দেখা করতে । প্রথমবার দেখা ; মনে অনেক আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়েই ঢাকা এসেছে রওনক তার চট্টগ্রামের বন্ধু অপুকে নিয়ে । দেখা হল ; শুরু হল নতুন বন্ধুর সাথে হৈ-হুল্লোড়,আড্ডা , ঘুরাঘুরি । ঢাকাতে আরও এক মেয়ে বন্ধু, চট্টগ্রামের বন্ধু অপু , ইরা আর রওনকের চলছে বিন্দাস দিন ! সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরাঘুরি আর দিন শেষে ভুরিভোজ । এগুলোই ইরার সাথে কাটানো প্রথমবার রওনকের সবচেয়ে আনন্দের দিন । তৃতীয় দিন চার বন্ধু মিলে বিন্দাস দিন কাটানোর পর চলে যাবার মুহূর্ত ! সবাই যে যার গন্তব্যে যাবার উদ্দেশ্যে একটা দুতলা বাসে উঠল ।
হঠাৎ-ই ইরা জিজ্ঞেস করলো ‘কালকের পর কি আমাদের আর দেখা হবেনা রওনক ’ ?
রওনক বলল ‘হয়তো না’ !
ঠিক ঐ মুহূর্তে রওনক অনুভব করতে পারলো ও ইরাকে ভালবেসে ফেলেছে । বাস চলছে আর রওনকের বুকের ভেতর কষ্টের পাহাড় গড়তে শুরু করেছে ।
চলে যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে আর রওনকের মনে ইরাকে ভালোবাসার গভীরতা বাড়ছে । চতুর্থ দিন ; রওনকের চট্টগ্রাম ফিরে যাবার দিন ; আধাবেলা রওনক আর ইরা একসাথে ঘুরলো তারপর আবার সেই চারজনের আড্ডা ! আশ্চর্যান্বিত ভাবে রওনকের জন্মদিনের তিন আগেই জন্মদিন পালনের আয়োজন করলো ইরা ! উদযাপন শেষে আবার ঘুরাফেরা তারপর বিদায়ের পালা । রওনকের ভেতরটা পুড়তে শুরু করলো ; ক্লান্তিভরা দিনের শেষেও তার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ নেই বরং ইরাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে বিষাদে ভরা মনটা কেবল ডুকরে কেঁদে উঠছে । তার হৃদয়ে এ কীসের আঘাত শুরু হলো ! কিছু ভাবতে পারেনা রওনক !
রাত এগারটায় ট্রেন ছাড়ার সময় । যথারীতি দু’বন্ধু ট্রেনে চড়ে বসলো । ট্রেন যাত্রা শুরু করলো আর রওনক গত চারদিনের প্রত্যেকটা মুহূর্তের স্মৃতিচারন করতে লাগলো ।আজ আর ভাবতেই পারছেনা রওনক ; এতো হাসি-আনন্দ আর তার ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে তাকে । হয়তো এটাই ইরার সাথে প্রথম এবং শেষ দেখা । এ কথা ভাবতেই রওনকের বুক ফেটে কান্না আসছে ; আবেগ আর ধরে রাখতে পারেনি রওনক । রওনক কাঁদে চুপিসারে পাছে অপু যেন দেখতে না পায় । ট্রেনের গতি বাড়ার সাথে সাথে রওনকেরও কান্না বাড়তে থাকে । রওনক কাঁদে ; অঝোরে কেঁদে যায় পুরোটা পথ । ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো পথটাই কেঁদে কেঁদে পার করলো রওনক ।
চট্টগ্রাম ফিরে যাবার দু’দিন পর রওনকের জন্মদিন ।
যথারীতি ইরা তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফোন দেয় এবং শেষে একটা কথা বলে ‘তোকে ভালোবাসি’ ।
রওনক আনমনে ঐ কথার প্রতি উত্তরে বলে ‘আমি তোর থেকেও বেশী বাসি’।
ইরা বলে ‘আগে তো কখনো বলিসনি’
‘আগে কখনো অনুভব করিনি কিন্তু এখন যে করছি’ রওনক উত্তরে বলে ।
তারপর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে ঐদিন পুরোটা সময় অপুদের প্রাইভেট কারে ঘুরে বেড়ানো আর আনন্দ উল্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ইরার সাথে ফোনে কথা বলা । সেই উল্লাসিত সময়ে ইরার পছন্দের গানগুলো বাজানো আর ওকে শুনানো । রওনক-ইরার প্রেমের প্রথম দিন ; যেন হাজার বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় ছিল ইরা ।
চুটিয়ে প্রেম চলছে দু’জনের । ইরার প্রতিটা মুহূর্তের ভাবনায় ছিল শুধু রওনক আর আজ রওনকেরও শুধু-ই ইরা ।ইরা আদর করে রওনককে ডাকতো ‘বাচ্চা’ বলে আর রওনক ডাকতো ‘টিয়া পাখি’ বলে ।কখনো কখনো রওনকের মুখে টিয়া পাখি না শুনতে পেলে বড্ড অভিমান করতো ইরা ! রওনক কোনদিনও ভাবেনি সব বাস্তবতা ভুলে ও এরকম একটা আবেগি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়বে অথচ আজকাল রওনকের সকালের ভাবনায় ইরা ,বিকেলের ভাবনায় ইরা ; রাতের ঘুমকে হারিয়ে যে স্বপ্ন প্রতিদিন জাগিয়ে রাখে সেইখানেও ইরা । ওর সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে শুধু ইরা ; ওর হাসির মাঝে ইরা , কান্নার মাঝে ইরা ; সারাদিনের ক্লান্তিশেষে সামান্য বিশ্রামের মুহূর্তেও চোখের সামনে ভেসে উঠে একটি মুখ সে শুধু-ই ইরা । মাঝে মাঝে ইরাকে বেস্বরা গলায় গান শুনাতো রওনক । এ কেমন অনুভূতি ! ভালোবাসার অনুভূতিগুলো যে এমন হয় তা কখনো জানতোনা রওনক । অথচ আজ ওর সমস্ত সত্ত্বা জুড়ে শুধু ইরাই বিরাজ করছে !
এরকম এক মাস পার হল । অমনি একটা সময় ইরার বিয়ের প্রস্তাব আসে তার বাবার কাছে । ছেলে ডাক্তার । আজকাল ডাক্তার পাত্র যেন মহামূল্যবান কিছু ! খুজে মেলানো যেখানে অসম্ভব সেখানে পাত্র নিজেই এসে ধরা দিচ্ছে অতএব এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাটা হবে বোকামি ইরার বাবার জন্যে । যে চিন্তাটা আগেই রওনকের ছিল সেইটাই ঘটলো । এদিকে রওনক কেবল থার্ড ইয়ারের শেষের দিকে পড়ছে ।
ইরা জিজ্ঞেস করে ‘বিয়ে করতে আর কত বছর লাগবে তোমার’?
‘কমপক্ষে তিন বছর’ বলে রওনক ।
এতগুলো বছর ইরা বাবাকে কি বুঝিয়ে পার করবে ও জানেনা । বাবা তো নিয়ম করে প্রতিদিনই ঐ পাত্রের কথা ইরার কানে দিচ্ছে কিন্তু এদিকে একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে এমন অবস্থায় ইরাকে বিয়ে করার চিন্তাও খুবই দুষ্কর রওনকের পক্ষে ! পরিবার কে কি দিয়ে বুঝাবে যেখানে সে এখনো গ্রাজুয়েশন ই শেষ করেনি ।
রওনকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে ! এটাই প্রথম বিয়ের প্রস্তাব আসেনি ইরার ; এর আগেও অনেক এসেছে কিন্তু ইরা নানাভাবে সেগুলো প্রত্যাখ্যান করলেও এখন আর তার পক্ষে সম্ভব হবেনা ! বার বার কি অজুহাত দেখাবে ইরা ! রওনক সব দিক বিবেচনা করে আবারো ইরাকে বুঝাতে শুরু করে । ঐ ডাক্তার পাত্রকেই বিয়ে করতে বলে রওনক ! ইরা কোনভাবেই রওনকের কথা বলতে পারবেনা তার বাবাকে কারণ রওনকের যে প্রতিষ্ঠিত হতে এখনো অনেক দেরি ; কি বলবে সে বাবাকে ।
নানা প্রতিকুলতার কথা চিন্তা করে ইরা দেখল রওনক ঠিকই বলেছে । বাবা-মা কে কষ্ট দিয়ে সে পারবেনা রওনকের কাছে চলে যেতে যেহেতু রওনকও এখনো প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক দেরি তাই রওনকের পরিবারও কষ্ট পেতে পারে এরকম একলা একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্যে । ইরাও চায়নি রওনক কোন ভাবে কষ্ট পাক তার জন্যে । আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে শুরু করে দু’জনে । রওনক জানে যতই যোগাযোগ হবে ততই কষ্টের পরিমাণ বাড়তে থাকবে । যোগাযোগ কমে গেলেও ভালোবাসার কোন কমতি ছিলোনা তাদের মধ্যে ! রওনক কিভাবে এতো গভীর ভালোবাসায় ডুব দিয়েছে আজও ভাবতে পারেনা ।
শুরু হল রওনক-ইরার বিষাদে ভরা দিন ।সুখের দিনগুলো আসতে না আসতেই শুরু হল বিচ্ছেদের মেলা ।এ কেমন ভালোবাসা যে ভালবাসার জন্যে আজ তাদের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ব্যর্থতার তিলক অঙ্কিত ! না পারে দুজন দুজনকে ভুলে যেতে আবার না পারে এ সম্পর্কটা চালিয়ে নিজেদের ব্যর্থতার স্বীয় স্বরূপ প্রকাশ করতে । এ গ্লানিবহ জীবন কেবল নীরবে কাঁদায় তাদের ।
রওনক পারেনি ইরার বুকের গভীরে আজন্ম লালিত ভালবাসাকে সময়ের দাবিতে সংস্করণের মাধ্যমে সুস্থ করে তুলতে !পারেনি এই সজীব প্রাণবন্ত লাবণ্যময় কোমল একটি মানবিক চেতনার মূল্যায়ন করতে ! পারেনি পল্লবিত ভালোবাসার শিশির জলে সিক্ত ভালোবাসার মালা গেঁথে ভালোবাসার মানুষের গলায় পরিয়ে দিতে কিংবা ভালবাসার পরম আলিঙ্গন ডোরে আবদ্ধ হয়ে জীবনের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত করতে ! পারেনি ভালোবাসায় ভালোবাসায় দু’টি জীবন পরিপূর্ণ করে ভরিয়ে তুলতে । এ দেহের প্রতিটি রক্ত কনিকা জুড়ে যার অস্তিত্ব পারেনি তার কিশোরী বেলার সুপ্ত উচ্ছ্বাসটুকুর এই জ্বালাময়ী পরশ আজ এ যথাযথ শুভলগ্নে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বৃন্তবীথিতে গ্রোথিত করে সার্থক করে তুলতে !
রওনক আজ নির্বাসিত ! তবে তার নির্বাসন ইচ্ছাকৃত হলেও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রেক্ষাপটে সময়ের প্রয়োজনে পরিস্থিতির দাবিতে একান্তই বাধ্যবাধকতা কর্তৃক আরোপিত । আজ রওনকের জীবন বৃত্তের পরিসীমায় দিগন্ত বিস্তৃত অসীম শূন্যতা । অস্তগামী নক্ষত্রের ন্যায় ধূসর এ জীবনের প্রতিটি বালুচর । রিক্ত নিঃস্ব এ জীবনে কেবল সীমাহীন হাহাকার ! না পাওয়ার ভারাক্রান্ত এ হৃদয় নিরবচ্ছিন্ন অন্ধকারে হাতরে ফেরে জীবনধারণের জন্যে কিঞ্চিত অবলম্বন !
রওনক আবার ফিরে পেয়েছে সেই দিনগুলি ; বন্ধু-বন্ধব , আড্ডা ,মাস্তি সব মিলে একেকটা সুখের দিন কেটে যাচ্ছে । সব কিছুর ভিড়ে আজ রওনক কিছুটা সুখ লাভ করে যখন দেখে ইরা ভালো আছে , সুখে আছে । ইরা যদি এ ব্যথা ভুলে যেয়ে সুখে থাকে তবে সেটাই হবে রওনকের পরম পাওয়া ।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫২
অবনি মণি বলেছেন: সত্য গল্প
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১
নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: স্বাদ বিস্বাদের পার্থক্য তেমনটা বুঝিনা।
বুঝি শুধু না পাওয়ার যন্ত্রনা.........যা শুধু জ্বালা ময়।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৬
খেলাঘর বলেছেন:
ওকে
৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৪৭
আরজু পনি বলেছেন:
এমনই হয় !
৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৫
অবনি মণি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ! আসলেই এমনি হয় ! আরজুপানি
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৭
খেলাঘর বলেছেন:
গল্প?