নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক বছর হলো ; তবুও নিঃসঙ্গ বৃক্ষের মতো নির্জন নিস্তব্ধ মৌন পাহাড়ের মতোই একা পড়ে আছি আজও। একাই আছি এই দীর্ঘশ্বাসের মতো! তোমারও কি শুধু দীর্ঘশ্বাস,গ্রীলে বিষন্ন গোধূলী?

অবনি মণি

যদিও আমি কখনো দুঃস্বপ্নে বিভোর ছিলামনা এবং আজও না ।তবে একটা জাগ্রত স্বপ্ন দেখতাম ; একদিন ভালোবাসব ,ঐ আকাশের বিশালতার মতো নয় কেবল আমার মনের গভীরতা থেকে ।

অবনি মণি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুর কাছে পরাজিত প্রিয়ন্তি

০১ লা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:২৩

প্রিয়ন্তির সাথে পরিচয় আমার ২০০৯ সালে। এস,এস,সির পরের শুরুটা আমার টাঙ্গাইলে হয় সেই সুবাদে ভর্তি হতে যেয়েই প্রিয়ন্তির সাথে কথা হয় । জানতে পারলাম তার বাড়িও সিলেটে ; খুশি হয়ে গেলাম মুহূর্তেই ! বাড়ি যাওয়া আসা করা যাবে একসাথে । প্রায় ১২ ঘণ্টার বাস ভ্রমণ একা একা করা অনেক বিরক্তিকর । বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে নিজের জেলার একজন খুজে পাওয়াটাও অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার ! যাই হোক ; কিছুদিনেই একটা ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠলো ওর সাথে । বন্ধুত্বের সুবাদে শেয়ারিং ,কেয়ারিং টা অনেক বেশী ছিল দুজনের মধ্যে ।

টাঙ্গাইল জীবনের প্রায় দুবছর পর টাঙ্গাইল থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল প্রিয়ন্তি ; শরীরটা বেশ খারাপ তাই বাড়ি যাবে কিছুদিন বিশ্রাম নিতে । ওর আব্বু অপেক্ষা করছে মহাখালী টাঙ্গাইল বাস টার্মিনালে । নিরালা বাসে তার পূর্ব নির্ধারিত সীটে বসল প্রিয়ন্তি । অসুস্থ থাকার কারণে বসেই গা টা হেলিয়ে দিল পেছনে । বাস ছাড়ার অপেক্ষায় চেহারায় বিরক্তির ছোঁয়া নিয়ে চোখ টা বন্ধ করেই ছিল ।

এক দু করে মিনিট গুনছিল কখন বাসটা ছাড়বে !

এমনি একটা মুহূর্তে এক ভদ্রলোক এসে জিজ্ঞেস করলেন “এক্সকিউজ মি ,এটা কি ডি ২ ?”

চোখটা বন্ধ অবস্থায়ই বলল “হ্যাঁ অবশ্যই ।”

ধন্যবাদ দিয়ে লোকটি বসে পড়ল তার নির্ধারিত সীটে অর্থাৎ প্রিয়ন্তির পাশের সীটটাতেই । যথারীতি বাস ছাড়ল । প্রিয়ন্তি কোনভাবেই আরাম বোধ করছেনা তাই চোখটা বন্ধ করেই আছে । আচমকা পাশের সীটের ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করে উঠলেন “আপনি কি অসুস্থ বোধ করছেন ? কোন ভাবে সাহায্য করতে পারি?”
ধন্যবাদ দেয়ার মতোও ততোটা শক্তি নেই শরীরে তবু প্রিয়ন্তি বলল “না , আমি ঠিক আছি।”

আরও কয়েক মিনিট পর আবারো ভদ্রলোক বলে উঠলেন “এক্সকিউজ মি,আপনি কি এখন কিছুটা আরাম বোধ করছেন? একটা কথা কি জিজ্ঞেস করতে পারি ?”
প্রিয়ন্তি অনেকটা বুঝেই গেলো ,লোকটার গায়ে পড়ে কথা বলার অভ্যেস এই প্রথম না ; আরও আছে । তাই বলল আপনার যা জিজ্ঞেস করার করতে পারেন আমি উত্তর দেয়ার মতো সুস্থ আছি । শুরু করলো ভদ্র লোক নাম থেকে শেষ করলো মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত । মোবাইল নাম্বার চাওয়ার মধ্যে একটু ভিন্নতা ছিল ; “আপনার আব্বুর নাম্বারটা কি দেয়া যাবে? আপনার শরীরটা তো অনেক খারাপ একটু খোঁজ নিলাম আপনি নিরাপদে পৌঁছেছেন কিনা !” জীবনে এই প্রথম প্রিয়ন্তি কোন অপরিচিত মানুষের কাছে নিজের সত্য তথ্য প্রদান করলো । নিতান্তই অসুস্থ ছিল বলে নইলে এর আগে হাজার মানুষের পাশে বসতে হয়েছে ভ্রমণের সুবাদে ; কিন্তু কখনো কারো কথার উত্তরে হ্যাঁ অথবা না ছাড়া আর কিছুই বলেনি । এমন রগ চটা মেয়ে আমি কখনো দেখিনি । একদিন প্রিয়ন্তি আর আমি একটা বাস কাউন্টারে বসে আছি ; এক আধা বয়সী ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন “আপু আপনারা কোথায় যাবেন?’’ প্রিয়ন্তি তো তেলে বেগুনে জলে উঠলো ! “আমাদের দেখে কি আপনার আপুর মতো মনে হল? কেন ?মেয়ের মতো মনে হলনা কেন?মেয়েদের দেখলেই কি আপু ডাকতে ইচ্ছে করে?” অনেক কষ্টে সামলে নিলাম ওকে । আসল কথায় ফেরা যাক ; নির্দ্বিধায় প্রিয়ন্তি সেই ভদ্রলোক কে তার বাবার নাম্বারটা দিয়ে দিল । সময়মত বাস পৌঁছালো মহাখালী বাস টার্মিনালে ; প্রিয়ন্তি তার ট্রাভেল ব্যাগটা হাতে নিবে ঠিক তখনই ভদ্রলোক তার ব্যগটা আঁচড়ে ধরলেন । “আরে করেন কি ! আমি থাকতে আপনি অসুস্থ মানুষ হয়ে ব্যাগটা নিয়ে নামবেন তা হতে দিতে পারিনা ; কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে এইটুকু সহযোগিতাই না হয় করলাম ।’’ পুরো তিন ঘণ্টার জার্নি শেষে এই প্রথম চোখ পড়ল ভদ্রলোকের দিকে । হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ! প্রিয়ন্তি বরাবরই সুন্দরের পূজারি তাই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে অবাক না হয়ে পারলনা ! আল্লাহর কি সৃষ্টি! যাই হোক অবশেষে ভদ্রলোকই ওর ব্যগটা হাতে করে নিয়ে নামলেন এবং ওর বাবার হাতে ধরিয়ে দিলেন ! প্রিয়ন্তি ওর বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল ভদ্রলোককে যে, ইনি আমার পাশের সীটে বসেছিলেন আব্বু ।

ততটুকু জার্নি ভালই ছিল প্রিয়ন্তির কিন্তু বাকি রাস্তাটুকু যেতে প্রিয়ন্তির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলো । অসুস্থ শরীরে জার্নি করা যে কতো কষ্টকর সেটা বুঝতে আর বাকি রইলোনা । বাড়ি পৌঁছার ঘণ্টা খানেক পরই প্রিয়ন্তির বাবার সেলফোনে ভদ্রলোক ফোন করে জেনে নেন ওরা পৌঁছেছে কিনা ; প্রিয়ন্তিকে চেয়ে আর কথা বাড়ায়নি ।

তখনো প্রিয়ন্তি সিলেটেই আছে হঠাৎ একদিন ফোন করলেন ভদ্রলোক প্রিয়ন্তির বাবার মোবাইলে আর এবার সরাসরি প্রিয়ন্তিকেই চাইলেন । প্রিয়ন্তি ফোনের স্বর শুনে না চিনতেই সাথে সাথে উত্তর এলো “আমি সায়ন ,সেদিন যে বাসে পরিচয় হয়েছিল ; পরে অবশ্য ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বলে আপনাকে আর বিরক্ত করিনি।” এই প্রথম প্রিয়ন্তি জানল ভদ্রলোকের নাম ।
যাইহোক ; কুশল বিনিময়ের পর সায়ন প্রিয়ন্তির সেলফোন নাম্বার চাইল । প্রিয়ন্তি অতি সহজে নাম্বার প্রদান করলো কেননা আগেই বলেছি অন্য অনেকের মতো প্রিয়ন্তিও সুন্দরের পূজারি ! ঐদিনই সায়ন জানাল আসলে আমি সিলেটে এসেছিলাম তাই ভাবছিলাম আপনার সাথে একটু দেখা করে যাই কেমন আছেন না আছেন ! প্রিয়ন্তি শুনে কিছুটা ইতস্তত হল ; পরে বলল আপনি যদি চান বাসায় আসতে পারেন তাহলে আব্বুর সাথেও কথা হয়ে যাবে । সায়ন না সূচক কোন কথা বলার চিন্তাই করেনি ।

এই সন্ধ্যায়ই বাসায় হাজির সায়ন । প্রিয়ন্তি তার বাবা মা ভাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সায়ন কে তাছাড়া তার বাবা তো চিনেনই ; কিছুটা মনে করতে পেরেছেন । প্রিয়ন্তির বাবা সায়নকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছেন সেখান থেকেই জানতে পারলো সায়ন ঢাকাতে একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান শেষ বর্ষে পড়ছে , বাড়ি সিরাজগঞ্জে । পড়াশুনার পাশাপাশি একটা এম,এল,এম কোম্পানিতে কাজ করছে ।সেই কাজের সুবাদে সে টাঙ্গাইলে গিয়েছিল । একই কাজে গতকাল সিলেটেও আসা তার । ঘণ্টা খানেক বসে শেষে বিদায় নিল সায়ন ; ঐদিনই ফিরল ঢাকাতে ।

বেশ কিছুদিন সিলেটে সময় কাটিয়ে কিছুটা সুস্থতা বোধ করলে প্রিয়ন্তি আবার ফিরে আসে তার গন্তব্য টাঙ্গাইলে । এসেই এই গল্প গুলি করলো আমার সাথে । আমিতো অবাক না হয়ে পারলাম না কারণ প্রিয়ন্তি অনেকদূর পৌঁছে গেছে ইতোমধ্যে ।

টাঙ্গাইলে ফেরার আরও কিছুদিন পর সায়ন আবার এলো টাঙ্গাইলে । এসে ফোন কল করলো প্রিয়ন্তিকে ; দেখা করতে চাইল । প্রিয়ন্তি আমাকে সাথে যাবার অনুরোধ করলে আমি অন্য একজনকে ব্যবস্থা করে দিলাম । কেন যেন এইসব বিষয়াদির সাথে নিজেকে জড়ানো আমার পছন্দ না । প্রিয়ন্তির সাথে যেই বন্ধুটা গেলো সে ফিরে এসে সায়নের এমন বর্ণনা দেয়া শুরু করলো যেন এমন ছেলে সে তার জীবনে দেখেনি । যখনই কারো বাহিরের সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনি তখন আমি একটু ভয়ই পাই (আমার জীবনে ঘটে যাওয়া কোন দুর্ঘটনার কারণে) । সেক্ষেত্রে আমার কখনো ইতিবাচক মন্তব্য থাকেনা । আমার না মন্তব্যে প্রিয়ন্তি মোটেও খুশি হতে পারেনা যদিও প্রিয়ন্তি জানে যে আমি কখনো কিছু বলবনা । প্রিয়ন্তিকে ভীষণ ভালোবাসি তাই চাইনি প্রিয়ন্তি কোনোভাবে আমার জন্য কষ্ট পাক !

প্রিয়ন্তির দিন চলে যাচ্ছে সায়নের সাথে প্রেমালাপ করে । এদিকে পড়াশুনা চাঙ্গায় উঠেছে তার । ফোন আছে তো প্রিয়ন্তির কানে আছে । খাওয়া , টয়লেট , গোসলের ও সময় পায়না সে । আমার সাথে অনেকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় ; কষ্টে আমার বুক ভাসলেও কখনো ওর সামনে প্রকাশ করিনি । যদিনা প্রিয়ন্তি আমায় ভুল বুঝে । যদিও ভুল বুঝার রাস্তাটা আমি বন্ধ করেই রেখেছি ; বার বার সায়ন টাঙ্গাইল গেলেও আমার সাথে দেখা হয়নি কারণ আমি চাইনি । প্রিয়ন্তি সেইজন্য আমার উপর অনেক রেগে ছিল তবে আমি ওকে কথা দিয়েছি যে একদিন দেখা করবোই তোর সেই মহাপুরুষের সাথে ।

প্রিয়ন্তির প্রেমের প্রায় এক বছর পর আমি আর ও একসাথে সিলেট যাবো ; অনেক দিন পর প্রিয়ন্তির সাথে আমার সিলেট যাওয়া । সায়নের সাথে প্রেমের পর প্রিয়ন্তি আর আমার সাথে কখনো সিলেট যায়নি কারণ যাবার পথে সায়নের সাথে ওর দেখা হত । আর আমি চাইনি সায়নের সাথে দেখা করতে । তাই এবার মিথ্যা বলে প্রিয়ন্তি তার সাথে আমাকে যেতে বলল ; আমিও রাজি হয়ে গেলাম ।
যথারীতি আমরা মহাখালীতে বাস থেকে নামলাম । নামার সাথে সাথে প্রিয়ন্তি যার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তাকে দেখে যথারীতি আমি আঁতকে উঠি । আমি নির্বাক ,বাকরুদ্ধ ! একটি কথাও আমার মুখ দিয়ে বেরুলনা । আমি পারিনি ; কিচ্ছু বলতে পারিনি । সায়ন আমাকে চিনতে পারেনি ; না পারার ই কথা । আমার গেটাপে অনেক পরিবর্তন ছিল চেহারাও অনেক বদলে গিয়েছে । তাছাড়া সায়ন অনেক লাজুক ধরনের ছেলে কোন মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেনি হয়তো !

প্রিয়ন্তি যাকে জান দিয়ে ভালবাসে তার কথা আমি কি করে বলবো সেই ছিল আমার বাল্যকালের স্বপ্নের নায়ক । অনেক খুঁজেছি আমি ওকে কিন্তু পাইনি । কোথায় পাব ওকে ; সায়ন তার পরিবারের সাথে সিলেট ছাড়ার পর তাদের ফোন নাম্বার ও পরিবর্তন হয়ে যায় । কোন সেলফোন নাম্বার ছিলোনা আমার কাছে ।

সায়ন একসময় সিলেটে আমাদের বাসার পাশেই একটা সরকারি কোয়ার্টার এ থাকতো । বয়সে আমার থেকে তিন-চার বছরের বড় হবে । আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি । বাসার পাশেই একটা বড় খেলার মাঠ ছিল সেখানে সায়ন তার বন্ধুদের সাথে খেলত । আমি আমাদের বারান্দায় বসে প্রতিদিন খেলা দেখতাম আর সায়নকে আপন দৃষ্টিতে অবলোকন করতাম । যতই দেখি ততই ভালো লাগে । ওরা নিচতলায় থাকত তাই ওর দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড গুলোও আমি দেখতে পেতাম । একদিন সকাল বেলা সূর্যের আলো আয়নাতে ফেলে ওর মুখের দিকে ফেলে দাঁড়িয়ে রই ; সায়ন দেখল আমিই করছি কাজটা । তবু আমি আয়না সরাইনি ; ও একটা মিষ্টি হাসি দিল। হৃদয় জড়ানো হাসি । আজও সায়নের সেই হাসি চোখে ভাসে । তারপর একদিন স্কুলে যাবার পথে ওকে দেখলাম ; সেও স্কুলে যাচ্ছিলো । রিক্সা পায়নি তাই হাঁটছে । তার একেবারে কাছাকাছি পোঁছাতেই আমি আমার রিক্সা থামালাম এবং আমার রিক্সায় উঠার প্রস্তাব দিলাম । প্রথমে উঠতে না চাইলেও পরে আর মানা করলনা ।আমার স্কুলে যাবার পথেই ওর স্কুলে নামিয়ে দিলাম । তারপর থেকে প্রতিদিনই আমি আর সায়ন একসাথে স্কুলে যেতাম । মাঝে মাঝে পায়ে হেটে যেতাম যাতে করে বেশী সময় দুজনে গল্প করে যেতে পারি ।

সায়ন এর স্কুল জীবন শেষ । কলেজে ভর্তি হল সেটাও আমার স্কুলের পাশেই । ওর ক্লাস শেষ হয়ে যেত অনেক আগেই পরে সে আমাদের স্কুলের পাশের একটা লাইব্রেরিতে বসে থাকতো আমার ছুটির পর আমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে তাই । সায়ন কখনো বুঝেনি আমি ওকে কতটা ভালোবাসতাম ; কখনো বলিনি । প্রকাশ করতে চাইনি। আমি জানতাম সায়ন একসময় চলে যাবে সিলেট ছেড়ে তাই আমি ওকে কখনো বলিনি ; মাথার মধ্যে অনেক ধরনের বাজে চিন্তা কাজ করছিল তখন । আমার ভালোবাসার কথা বললে যদি সায়ন তার জীবনের লক্ষ্যের কথা ভুলে যায় , তার বাবা মায়ের অবাধ্য হয়ে কিছু করে বসে সেইসব ভয় কাজ করছিল । আর সায়নও বন্ধু হিসেবেই দেখত আমাকে সেই ভয়টাও ছিল যদিনা নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধুত্বটাও হারাতে হয় ।

প্রিয়ন্তি সব জানতো সায়নের ব্যপারে । আমি গল্প করেছিলাম ওর সাথে ; তাই সায়ন নাম শুনার পর থেকেই আমার মনের গাম্ভীর্যটা লক্ষ্য করলো প্রিয়ন্তি । প্রিয়ন্তি বুঝতে পেরেছিল আমি কেন সায়নের সাথে দেখা করতে চাইনি ; আমার এই ভয়টাই ছিল যদি এই সায়ন সেই সায়নই হয় তবে চিরদিনের জন্য প্রিয়ন্তির সাথে আমার সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে ।

সায়ন কে দেখার পর আমার অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করলো প্রিয়ন্তি ; প্রিয়ন্তির আর বুঝতে বাকি রইলনা যে এই সায়ন সেই সায়ন । ঐবার আমাদের সিলেট থেকে একসাথে আবার টাঙ্গাইল ফেরার কথা ছিল কিন্তু প্রিয়ন্তি আর যোগাযোগ করলনা । পরে শুনলাম প্রিয়ন্তি চলে গেছে ; শুনে যে কতটা কষ্ট পেয়েছি তা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা । আমিও টাঙ্গাইল চলে গেলাম ; প্রিয়ন্তির সাথে দেখা । ও আমার সাথে কথা বলছেনা । আমি কিছু বুঝে উঠতে পারলাম না প্রিয়ন্তি কেন আমার সাথে এমন করছে ; আমি সায়নের ব্যাপারে কিছুই বলিনি ওকে । আমি বলিনি যে এই সেই সায়ন যাকে অনেক বছর ধরে খুঁজছি আমি । আমি জানতাম এই কথা বললে প্রিয়ন্তি কতটা কষ্ট পাবে !

আমাদের টাঙ্গাইলের পড়াশুনা শেষে অবশেষে সিলেট ফিরে এলাম । প্রিয়ন্তির সাথে খুব কমই যোগাযোগ হত ! এরই মধ্যে সায়ন স্কলারশিপ পেয়ে কানাডা চলে যায় ।প্রিয়ন্তি এই খবর টাও আমাকে দেয়নি ; যেকোনোভাবে আমি জেনেছি । জানতাম না প্রিয়ন্তি কেন আমাকে এতো ভয় পাচ্ছে ! সায়ন কানাডা চলে যাবার প্রায় ছ’মাস পর একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় ; খবরটা শুনার পর আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো । আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না । রওয়ানা দিলাম প্রিয়ন্তির বাড়ির দিকে । গিয়ে শুনলাম প্রিয়ন্তি একটা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি । আবার দৌড় দিলাম হাসপাতালের দিকে । প্রিয়ন্তিকে দেখে আমার চোখের জল আর ধরে রাখতে পারলাম না । মাথার ছোট ছোট চুল গুলো উস্কখুস্ক করা ! ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর খিলখিলিয়ে হাসছে । আমি একটা কথাও বলতে পারলাম না প্রিয়ন্তির সাথে ।

হ্যাঁ , আমি সায়ন্তনি । সায়ন নামটা আমারই দেয়া ; আমার নামের সাথে মিলিয়ে ঐ নামটা দেই । তারপর থেকে এই নামটাই সে তার ডাকনাম হিসেবে ব্যাবহার করেছে । পরে প্রিয়ন্তির ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম সায়ন আমাকে চিনতে পেরেছিল ঠিকই কিন্তু প্রিয়ন্তির সামনে না চেনার ভান করেছিল । কারণ প্রিয়ন্তি সায়নকে পাগলের মতো ভালোবাসে । প্রিয়ন্তি অনেক আবেগি একটা মেয়ে । ভালোবাসার ক্ষেত্রে ওর আবেগটা অনেক বেশী । প্রিয়ন্তির ছোট ভাই আরও যা বলল সায়নের আগে প্রিয়ন্তি রাহাত নামে একটা ছেলেকে ভালোবাসত ।রাহাত আমেরিকায় থাকতো । তখন জারা ছিল প্রিয়ন্তির সব থেকে কাছের বন্ধু । জারাও আমেরিকায় চলে যায় । তখন প্রিয়ন্তি রাহাতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় জারাকে । জারা প্রিয়ন্তির বুকে সেল বিদ্ধ করে রাহাতের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে ; খবর পায় প্রিয়ন্তি । জারা আর রাহাত বিয়েও করে ফেলে । তারপর প্রিয়ন্তি মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে পড়ে ।শুধু তাই না । দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর ও সুস্থ হয়ে উঠে । সেই থেকে প্রিয়ন্তির দূরের বন্ধু থেকে সব থেকে কাছের বন্ধুটিকেই এতো ভয় পেত ! এটা সায়ন ও জানতো । তাই সায়ন আর আমার ব্যাপারে কিছু শেয়ার করেনি প্রিয়ন্তির সাথে যদিনা তাতে আবার আমাকে সন্দেহ করে বসে প্রিয়ন্তি ।

দীর্ঘ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে একমাস হল প্রিয়ন্তি চলে গেছে সায়নের কাছে । সায়নের স্মৃতিকে পুঞ্জি করে বাঁচতে পারলনা সে । সায়নের কাছে পরাজিত হবার পর এবার মৃত্যুও পরাজিত করে দিল প্রিয়ন্তিকে ! শেষ দেখা হয়নি প্রিয়ন্তির সাথে আমার । যেতে পারিনি । অবরধো-হরতালে আমি ভিত সন্ত্রস্থ তাই রওয়ানা হইনি ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৪০

সুপ্ত আহমেদ বলেছেন: B:-) B:-) B:-) :( গল্পের রেশ টা যেন থেকেই গেলো !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.