নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আয়েশ করে, আলসেমিতে...

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া!

মুনির হাসান

অলস লোক। নানা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার খায়েশ কিন্তু করতে পারি না!

মুনির হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসী-আয় বিনিয়োগে লাগুক

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫০

১৮ ডিসেম্বর বিশ্ব অভিবাসী দিবস বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে। এ বছর বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের ছয় লাখ আট হাজারের বিপরীতে এ বছর নভেম্বর মাস পর্যন্ত আমাদের বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা মাত্র তিন লাখ ৭১ হাজার। রেমিট্যান্স প্রবাহও ঋণাত্মক। ২০১২ সালে ৮০ লক্ষাধিক প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪১৬ কোটি ডলার। নভেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরে এর পরিমাণ হলো এক হাজার ১৬৫ কোটি ডলার। (সূত্র http://www.bmet.gov.bd)। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারীদের একটি অংশকে প্রভাবিত করতে শুরু করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী জনগোষ্ঠীকে আমরা কোন চোখে দেখি, সেটি যেকোনো দিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গেলেই টের পাওয়া যায়। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার ঝাড়ি, কাস্টমসের হয়রানি আর ট্যাক্সিচালকদের আচরণ দেখে বোঝা যায়, যাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য অবদান রাখছেন, তাঁদের প্রতি আমরা কতটা আন্তরিক।

২০১১ সালে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল দেশের মোট বিদেশি সাহায্য ও মোট প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের অঙ্কের থেকে যথাক্রমে সাড়ে ছয় গুণ ও ১৩ গুণ বেশি। আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানান ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি। অনেক বিনিয়োগকারী তিন লাখ ডলার বিনিয়োগ করবেন বলে বিনিয়োগ বোর্ডে রেজিস্ট্রেশন করেন এবং মাত্র পাঁচ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে এয়ারপোর্টে ভিভিআইপির মর্যাদা পান। অন্যদিকে আমাদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ যিনি সচল রাখেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল যিনি নতুন মাত্রায় উন্নীত করেন, তাঁকে নানানভাবে হয়রানি করতে দ্বিধাবোধ করি না।

কয়েকটি বন্ড এবং জমির দাম বাড়ানোতে বিনিয়োগের বুদ্ধি দেওয়া ছাড়া আমরা আমাদের রেমিট্যান্সের সেই অর্থে কোনো ব্যবহারই করি না। অথচ দেশের তরুণ ও উদ্ভাবনী জনগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশ বিনিয়োগকারীর অভাবে তাদের চমৎ কার সব ধারণা নিয়ে বসে আছে। এই সমাজ গ্রামের একজন উদ্যমী তরুণকে তাঁর মজাপুকুরটিকে লাভজনক মৎ স্য খামারে পরিণত করার জন্য ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করে না, কিন্তু তিন লাখ টাকা ঋণ করে প্রবাসে পাড়ি দিতে উদার হস্তে সহায়তা করে। এই উদ্যমী তরুণদের সঙ্গে আমাদের প্রবাসী কর্মীদের কি কোনো যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া যায় না?

১৯৭৩ সাল থেকে প্রবাসী কর্মীরা দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আজও আমাদের তরুণদের বিনিয়োগ সহায়তায় পরিণত হতে পারেনি। কারণ, বলার মতো কোনো প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আমাদের নেই। পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের দেশে ভেঞ্চার মূলধন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কোনো আইনি কাঠামো নেই। তরুণদের বাণিজ্যিক উদ্যোগগুলোকে মূল্যায়ন করে তার বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দেবে এমন কোনো সংস্থাও নেই। প্রবাসীদের সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তাদের যোগাযোগের কোনো প্ল্যাটফর্মও আমরা এই লম্বা সময়ে গড়ে তুলতে পারিনি।

সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকভিত্তিক তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি প্ল্যাটফর্ম, চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব গ্রুপে প্রতিদিনই অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগের অভাবে নিজেদের হতাশা তুলে ধরছেন। অভিজ্ঞতা আর জামানতের জমি নেই বলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের পাশে দাঁড়ায় না। কিন্তু একটা সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারলে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে পারতেন প্রবাসী কর্মীরা। এই মেলবন্ধনের ফলে যৌবনে সংসার এবং পরিবার থেকে দূরে থাকা প্রবাসী কর্মীকে একদিকে যেমন সুন্দর অবসরের নিশ্চয়তা দেবে, তেমনি তা দেশের লাখ লাখ উদ্যমী তরুণকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করবে।

অভিবাসীর বিষয়টি আরও জোরদারভাবে আমাদের ভাবা দরকার নানান কারণে। একটি হলো কর্মসংস্থান। প্রতিবছর দেশের কর্মবাজারে যে ২১ লাখ তরুণ-তরুণী যুক্ত হন, তাঁদের ছয় থেকে আট লাখই প্রতিবছর বিদেশে চলে যেতেন। কিন্তু এই বছর তা চার লাখের নিচে নেমে এসেছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বিশ্ব কর্মীবাজার আরও বড় হয়েছে। সাধারণভাবে বোঝা যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতিতে মন্দার কারণে অনেকেই বিদেশে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি এই সমস্যার একটি বড় অংশের সমাধান করা সম্ভব ছিল। তবে, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের যে ঋণসুবিধা রয়েছে, তার তহবিল খুবই অপ্রতুল। মাত্র কয়েক শ কোটি টাকার বরাদ্দ এই খাতে একটি গুণগত পরিবর্তন সূচিত করতে পারে।

বিশ্ব অভিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি অভিবাসীকে জানাই আমাদের অভিবাদন। পরভূমে, কষ্টে, আক্ষেপে এবং কখনো কখনো মানবেতর জীবনযাপন করে আপনি আপনার এই ছোট্ট দেশটির প্রতি ভালোবাসা, দরদ প্রকাশ করে যাচ্ছেন। সহায়তা নেই, স্বীকৃতি নেই, সম্মান কিংবা সুযোগও নেই; তার পরও আপনি এই দেশকে ভালোবাসেন। দেশের টানে, নাড়ির টানে আপনার উপার্জিত টাকা দেশে পাঠান। সেটি টাকায় নয়, ডলারে। আপনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমি জানি, এবারও এয়ারপোর্টে আপনাকে হয়রানি করা হয়েছে, আপনার কাছ থেকে ডলার নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তার পরও আপনি আবার দেশে আসবেন, এই ছোট্ট সুন্দর দেশটাকে ভালোবাসবেন। কারণ, আপনি জানেন, নিজের কাজটা সর্বোত্তমভাবে করাটাই প্রকৃত দেশপ্রেম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.