নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
" অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি,
জন্মেই দেখি ক্ষুদ্ধ স্বদেশ ভূমি।"
সুকান্তের সেই "হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের হঠাৎ বাংলাদেশ" এতটাই ক্ষুদ্ধ যে সে আজ আর জ্ঞান, পানি কিংবা ভালবাসার পিপাসায় কাতর নয়। এখন সে অবুঝ শিশুর পুত পবিত্র জীবানুমুক্ত রক্তের পিপাসায় কাতর। গ্রেফতারকৃত মায়ের কী নির্মম স্বীকারোক্তি!!!এটা কী নিছক গ্রেফতার আর স্বীকারোক্তির খেলা? নাকি পচেঁ যাওয়া সমাজের সমূলে পতনের প্রতিধ্বনি?আবারও সুকান্তের ভাষায় বলতে হয়,
" ইতিহাস নেই অমরত্বের লোভ,
আজকে রেখে যাই আজকের বিক্ষোভ।"
ছোটবেলায় যখন বিটিভিতে,
" আমরা নতুন, আমরা কুঁড়ি"। গানটি শুনতাম তখন শিহরিত হতাম আর এখন গলাকাটা শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর দেখে শিহরিত হই।কি নীরবে অপসংস্কৃতিতে নিমজ্জিত হয়ে আমরা মূল্যবোধগুলো হারিয়ে ফেললাম????কিছু কিছু ঘটনা মানুষকে উন্মাদ করে দেয়। তখন খুব জানতে ইচ্ছে করে হানি সিং কী লালনের পূনর্জন্ম? জীবনানন্দের "বনলতা" কী এখন সানি লিওন? কিংবা শরৎচন্দ্রের "বিলাসী" কী এখন পাওলি দাম???? ডিজিটাল যুগের "বিশ্বকোষ" শেষ করে আমরা যেন জীবনবোধের "আদর্শলিপি" টাই হারিয়ে ফেলেছি।দৈত্য,দানব আর রক্তপিপাসুরা কবে থামবে?
" রাত পোহাবার কত দেরী? পান্জেরী?
শরৎবাবুর অমর চরিত্র " দেবদাস" কলকাতায় গিয়ে, " বিদ্যা,বুদ্ধি ও ধন অর্জন করল, কিন্তু হারিয়ে ফেলল তার ভালবাসার " পার্বতীকে"। ঠিক তেমনি ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ইশ্বর কোন এক অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে স্বর্গ হতে তার সর্বোচ্চ ত্যাগের ফল স্বাধীন বাংলাদেশ পরিদর্শনে পাঠালে তার প্রতিক্রিয়া যদি হয়," এই স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কিংবা গণতন্ত্র সবই পেলাম শুধু "দেশপ্রেমটা" হারিয়ে ফেললাম।" তাহলে কি জবাব দেবে জীবন্মৃত বাঙ্গালির ভবিষ্যৎ কর্ণধাররা?????
১৯৪৭, ১৯৫২, ১৯৭১ কিংবা ১৯৯০ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে রংধনুর ন্যায় যেন হঠাৎ আলোর ঝলকানি!!!তথাকথিত গণতন্ত্রের খোলসে স্বৈরতন্ত্র হাঁটি হাঁটি পা করে আজ বিশাল বিষবৃক্ষে পরিণত।তার শাখা - প্রশাখার ঘেরাটোপে বন্দী অসাধারণ সব সাধারণ মানুষেরা ক্ষুধা তৃষ্ণায় জর্জরিত এক এক জন যেন পদ্মানদীর কুবের মাঝি।ভদ্রপল্লীতে ঘুমন্ত ইশ্বরের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য রেনেঁসা বা পূনর্জাগনের বিকল্প নেই।যেখানে জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্লোগান হবে,
" বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা।"
"অর্থই সকল অনর্থের মূল" এর চেয়ে নিরর্থক মূল্যহীন ভয়ানক বাল্যশিক্ষা আর হতে পারে না।"অর্থ জীবনকে দেয় পূর্ণতা,মৃত্যকে দেয় অমরত্ব,নারীকে দেয় ভালবাসা,পুরুষকে দেয় পৌরষ,সাগরচোরকে দেয় দায়মুক্তি আর সিধেঁল চোরকে দেয় শাস্তি।" কবিগুরুর ভাষায়,
" বাবু কহেন হেসে,
ব্যাটা সাধুবেশে,
পাকাচোর অতিশয়।
আমি শুনে হাসি
আখিঁ জলে ভাসি,
এই ছিল মোর ঘটে।
তুমি মহারাজ
সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে।"
এবারের " দ্যা গ্রেটেষ্ট শো অন আর্থ" রিও অলিম্পিকের দুনিয়াজোড়া আলোচিত বিষয় হল শরনার্থী ৮-১০ জন জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব করছেন।মানুষের স্বাধীনসত্ত্বার সাথে এর চেয়ে নির্মম রসিকতা আর হতে পারে না।নিধিরাম জাতিসংঘের দূর্বল পদক্ষেপ যেখানে হানাহানি সংঘাতে জর্জরিত মানুষকে শরণার্থী বানায় সেখানে অংশগ্রহনটাই বড় কথা।আগামীতে এ সংখ্যা বৃদ্বি পাবে কারণ যুদ্ধ অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার উর্বর কাঁচামাল তৃতীয় বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষগুলোর শরনার্থী পরিচয় এ ক্রীড়াযজ্ঞের জৌলুসকে আরো বাড়িয়ে দেবে।পরিষেশে বলতে হয়,
" হে দরিদ্রতা তুৃিম মোরে করেছ মহান,
তুমি মোরে দানিয়াছ শরণার্থীর সম্মান। "
সদ্যপ্রয়াত বিখ্যাত লেখিকা মহাশ্বেতা দেবীর একটি কথা ছিল," দুটি প্রিন্টেড লাইনের মধ্যে যে ফাঁকা অংশটা থাকে সেখানে প্রকৃত ইতিহাসটা লুকিয়ে থাকে।" ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার চার দশক পরও কি আমাদের ইতিহাসবোধ, আমাদের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা কিংবা আমাদের সামাজিক দৃঢ়তা দুটি প্রিন্টেড লাইনের মধ্যে আটকে আছে না?????? রবীন্দ্রনাথ, তলস্তয় কিংবা শেক্সপিয়ারের কলমের গর্জন নাকি ওয়াটারলুর যুদ্ধের কামানের গর্জনের চেয়েও বহুগুন শক্তিশালী ছিল।গুনগত পরিবর্তনের জন্য নির্জলা সত্যের কলম বিল্পব দরকার।
পেশীশক্তি যখন চিন্তাশক্তিকে গ্রাস করে ফেলে ঠিক তখনই প্রতিবন্ধী প্রজন্মের জন্ম হয়।সংঘাত,রক্তপাত ও,জঙ্গীবাদের ভাইরাসে সয়লাব হয় সমকালীন সমাজ।ধর্ম, বিবেকানন্দ কিংবা নজরূলকে তখন পাশের বাড়ির পাগলের প্রলাপ মনে হয়।চারদিকে পুঁজিবাদের বিষাক্ত নাগিনীর অশুভ তৎপরতায় ক্রমশই মনে হতে থাকে," এ মৃত্যু উপত্যকা, এ বিচারহীন ভূখন্ড কিংবা এ লুটপাটের স্বর্গরাজ্য আর যাই হোক আমার দেশ হতে পারে না।"
সুন্দরবনের সেই অনিবার্য আবেদন হয়ত নেই...... আছে মনুষ্য সৃষ্ট ষড়যন্ত্রের দাবানলে পুড়ে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত হৃদয়।" রামপাল" নতুন মাত্রা যোগ করেছে।রাম আসবে ফলে রাবনও আসবে সুন্দরবন হবে অযোধ্যার "কুরুক্ষেত্র" আমরা ফিরে যাব বাল্মীকি রচিত "রামায়নের" যুগে।সুন্দরবনের সুন্দরী,গেওয়া,গরান কিংবা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পাল একসাথে গেয়ে উঠবে জেমসের সেই অবিনাশী গান,
" নিরবে নিভৃতে
তিলে তিলে করেছ আমায় শেষ,
কেন বলো পৃথিবীতে কেউ কারো নয়,
ভালবাসা হয়ে গেছে নিঃশেষ।"
জগত সংসারের যাবতীয় অন্যায় অবিচার রোধে আমরা হয়ত অগুনিত আইন কানুন প্রচলন করেছি। কিন্তু সহনশীলতা,পারস্পরিক শ্রদ্বাবোধ কিংবা বিবকবোধ উৎপাদনের যে আদিম অথচ শ্বাশত চিন্তাশক্তির সাবলীল মাধ্যম ছিল সেগুলোর ধ্বংস কি ঠেকাতে পেরেছি? কাজলা দিদির অসীম স্নেহময়তা,শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কিংবা জীবনে দুঃসাহসিক রানার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর
" থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে" আজ কেবলমাত্র স্মৃতির রূপকথায় বন্দী।নিরাশার এই আক্ষেপের অনলে না পুড়ে কবিগুরুর ভাষায় বলতে হয়,
" যেখানে নষ্ট হইল সেখানে প্রসস্থ করিয়া গড়িয়া তুলিতে হইবে,গুরুর আদেশ ধ্বংসের জন্য নহে সৃষ্টির জন্য, ইহার উদ্দেশ্য ত্যাগ করা নহে স্বার্থক করা।"
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১১
এস্ এম্ হাসান বলেছেন: অসাধারন! মানবিকতা আর নীতির বিসর্জন সেই সাথে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জন- আমাদের "নাহি ফেরে চৈতন্য"।