নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিদায় হজ্জের ভাষণ

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৫৭

বিদায় হজ্জের ভাষণ ১০ম হিজরিতে অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে হজ্জ পালনকালে আরাফাতের ময়দানে ইসলাম ধর্মের শেষ রাসুল মুহাম্মাদ (স:) কর্তৃক প্রদত্ত খুৎবা বা ভাষণ। হজ্জের দ্বিতীয় দিনে আরাফাতের মাঠে অবস্থানকালে অনুচ্চ জাবাল-এ-রাহমাত টিলার শীর্ষে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সমবেত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তিনি এই ভাষণ দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (স:) জীবিতকালে এটা শেষ ভাষণ ছিলো, তাই সচরাচর এটিকে বিদায় খুৎবা বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইসলামের প্রকৃত মূল্যবোধ অনুযায়ী মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে এই ভাষণে চূড়ান্ত দিকনির্দেশনা ছিলো।

“হে মানব মন্ডলী!

তোমরা হৃদয়ের কর্ণে ও মনোযোগ সহকারে আমার বক্তব্য শ্রবণ কর। আমি জানিনা, আগামী বছর এ সময়ে, এ- স্থানে, এ-নগরীতে সম্ভবত তোমাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ আর হবে কি না। “হে মানব সকল! সাবধান! সকল প্রকার জাহেলিয়াতকে আমার দুপায়ের নিচে পিষ্ঠ করে যাচ্ছি। নিরাপরাধ মানুষের রক্তপাত চিরতরে হারাম ঘোষিত হল। প্রথমে আমি আমার বংশের পক্ষ থেকে রাবিয়া বিন হারেস বিন আবদুল মোত্তালিবের রক্তের দাবী প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। সে বনি লাইস গোত্রে দুধ পান করেছে, হুযাইল তাকে হত্যা করেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে ’সুদ’ কে চির দিনের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। আমি আজ আমার চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মোত্তালিবের যাবতীয় সুদের দাবি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। হে লোক সকল! বল আজ কোন দিন? সকলে বলল “আজ মহান আরাফার দিন, আজ হজ্জের বড় দিন” সাবধান! তোমাদের একের জন্য অপরের রক্ত তার মাল সম্পদ, তার ইজ্জত-সম্মান আজকের দিনের মত, এই হারাম মাসের মত, এ সম্মানিত নগরীর মত পবিত্র আমানত। সাবধান! মানুষের আমানত প্রকৃত মালিকের নিকট পৌঁছে দেবে।

হে মানব সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ একজন, তোমাদের সকলের পিতা হযরত আদম । আরবের ওপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সাদার উপর কালোর আর কালোর উপর সাদার কোন মর্যাদা নেই। ‘তাকওয়াই’ শুধু পার্থক্য নির্ণয় করবে। হে লোক সকল! পুরুষদেরকে নারী জাতীর ওপর নেতৃত্বের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে তোমরা আল্লাহ তা’য়ালাকে ভয় কর। নারীদের ওপর যেমন পুরুষদের অধিকার রয়েছে তেমনি পুরুষদের উপর রয়েছে নারীদের অধিকার। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে নারীরা স্বামীগৃহে ও তার সতীত্বের মধ্যে অন্য কাউকেও শরিক করবেনা, যদি কোন নারী এ ব্যপারে সীমা লঙ্ঘন করে, তবে স্বামীদেরকে এ ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে যে, তারা স্ত্রীদের থেকে বিছানা আলাদা করবে ও দৈহিক শাস্তি দেবে, তবে তাদের চেহারায় আঘাত করবে না। আর নারীগণ স্বামী থেকে উত্তম ভরণ পোষণের অধিকার লাভ করবে, তোমরা তাদেরকে উপদেশ দেবে ও তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করবে।

হে উপস্থিতি! মুমিনেরা পরষ্পর ভাই আর তারা সকলে মিলে এক অখণ্ড মুসলিম ভ্রাতৃসমাজ। এক ভাইয়ের ধন-সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে ভক্ষণ করবে না। তোমরা একে অপরের উপর জুলুম করবেনা। হে মানুষেরা! শয়তান আজ নিরাশ হয়ে পড়েছে। বড় বড় বিষয়ে সে তোমাদের পথ ভ্রষ্ট করতে সমর্থ হবে না, তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ে তোমরা সর্তক থাকবে ও তার অনুসারী হবে না। তোমরা আল্লাহর বন্দেগি করবে, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, যাকাত আদায় করবে ও তোমাদের নেতার আদেশ মেনে চলবে, তবেই তোমরা জান্নাত লাভ করবে। সাবধান! তোমাদের গোলাম ও অধীনস্থদের বিষয়ে আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তা খেতে দেবে। তোমরা যা পরবে তাদেরকেও সেভাবে পরতে দেবে।

হে লোক সকল! আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহ তা’আলার পয়গাম পৌছে দিয়েছি? লোকেরা বলল, “হ্যা” তিনি বললেন “আমার বিষয়ে তোমাদের জিঞ্জাসা করা হবে, সে দিন তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে, সকলে এক বাক্যে বললেন, “আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি আমাদের নিকট রিসালাতের পয়গাম পৌঁছে দিয়েছেন, উম্মতকে সকল বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন, সমস্ত গোমরাহির আবরণ ছিন্ন করে দিয়েছেন এবং ওহির আমানত পরিপূর্ণ ভাবে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন” অত:পর রাসূলুল্লাহ (স:) নিজ শাহাদাত অঙ্গুলি আকাশপানে তুলে তিনবার বললেন, “হে আল্লাহ তা’আলা আপনি সাক্ষী থাকুন, আপনি স্বাক্ষী থাকুন, আপনি সাক্ষী থাকুন”। হে মানুষেরা! আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সম্পদের মিরাস নির্দিষ্টভাবে বণ্টন করে দিয়েছেন। তার থেকে কম বেশি করবেনা। সাবধান! সম্পদের তিন ভাগের এক অংশের চেয়ে অতিরিক্ত কোন অসিয়ত বৈধ নয়। সন্তান যার বিছনায় জন্ম গ্রহণ করবে, সে তারই হবে। ব্যভিচারের শাস্তি হচ্ছে প্রস্তরাঘাত। (অর্থাৎ সন্তানের জন্য শর্ত হলো তা বিবাহিত দম্পতির হতে হবে। ব্যভিচারীর সন্তানের অধিকার নেই)। যে সন্তান আপন পিতা ব্যতীত অন্যকে পিতা এবং যে দাস নিজের মালিক ব্যতীত অন্য কাউকে মালিক বলে স্বীকার করে, তাদের উপর আল্লাহ তা’আলা, ফেরেশতাকুল এবং সমগ্র মানব জাতির অভিশাপ এবং তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল হবে না।

হে কুরাইশ সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা দুনিয়ার মানুষের বোঝা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে যেন কিয়ামতে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ না কর। কেননা আমি আল্লাহর আযাবের মোকাবিলায় তোমাদের কোন উপকার করতে পারবো না। তোমাদের দেখেই লোকেরা আমল করে থাকবে। মনে রেখ! সকলকে একদিন আল্লাহ তা’আলার নিকট হাজির হতে হবে। সে দিন তিনি প্রতিটি কর্মের হিসাব গ্রহণ করবেন। তোমরা আমার পরে গোমরাহিতে লিপ্ত হবে না, পরস্পর হানাহানিতে মেতে উঠবনা। আমি সর্বশেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবে না। আমার সাথে ওহির পরিসমাপ্তি হতে যাচ্ছে।

হে মানুষেরা! আমি নিঃসন্দেহে একজন মানুষ। আমাকেও আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হবে। আমি তোমাদের জন্য দুটি বস্তু রেখে যাচ্ছি যতদিন তোমরা এই দুটি বস্তু আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা নিঃসন্দেহে পথভ্রষ্ট হবে না। একটি আল্লাহর কিতাব ও অপরটি রাসূলের সুন্নাহ।

হে মানব মন্ডলী! তোমরা আমির বা নেতার আনুগত্য করো এবং তার কথা শ্রবণ করো যদিও তিনি হন হাবশি ক্রীতদাস। যতদিন পর্যন্ত তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালিত করেন, ততদিন অবশ্যই তাঁর কথা শুনবে, তাঁর নির্দেশ মানবে ও তাঁর প্রতি আনুগত্য করবে। আর যখন তিনি আল্লাহর কিতাবের বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করবে, তখন থেকে তাঁর কথাও শুনবেনা এবং তাঁর আনুগত্যও করা যাবে না। সাবধান! তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ এই বাড়াবড়ির কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। (এ নির্দেশনাটি হচ্ছে অমুসলিমদের ক্ষেত্রে) অর্থাৎ কোন বিধর্মীকে বাড়াবাড়ি বা জোরজবস্তি করে ইসলামে দীক্ষা দেয়া যাবে না। তবে একজন মুসলমানকে অবশ্যই পরিপূর্ণ ইসলামী জীন্দেগী অবলম্বন করে জীবন যাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে সুবিধাবাদের কোন সুযোগ নেই)। আবার বললেন, আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি? সকলে বললেন, “নিশ্চয়ই”।

হে উপস্থিতগণ! অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের উপর তোমাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে আমল করবে। “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক” বিদায়।

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনি কি লিখিত বক্তব্য রেখেছিলেন, নাকি পরে কেহ এই বক্তব্য লিপিবব্ধ করেছে?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৩

রবিন.হুড বলেছেন: ভাষণটি পূর্ণাঙ্গরূপে সংরক্ষিত হয়নি। বিভিন্ন হাদিস, তাফসির, ইতিহাস ও জীবনীগ্রন্থে আংশিক এবং খণ্ড খণ্ড আকারে তা সংকলিত হয়েছে। সকল হাদিসে বিদায় খুৎবার উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত আছে। বুখারী শরীফের ১৬২৩, ১৬২৬ এবং ৬৩৬১ নম্বর হাদিসে ভাষণের বিভিন্ন অংশ উধৃত করা হয়েছে। সহিহ মুসলিম শরীফে ৯৮ নম্বর হাদিসে বিদায় খুৎবা বর্ণিত হয়েছে। তিরমিজি শরীফের ১৬২৮, ২০৪৬ এবং ২০৮৫ সংখ্যক হাদিসে বিদায় খুৎবার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বিদায় খুৎবার দীর্ঘতম উদ্ধৃতি দিয়েছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল। তাঁর সংকলিত হাদিসগ্রন্থ ‘মুসনাদ’-এর ১৯৭৭৮ সংখ্যক হাদিসে এই বর্ণনা পাওয়া যাবে

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



এই বক্তব্য আপনি কপিপেষ্ট করেছেন, নাকি নিজেও কিছু যোগ-বিয়োগ করেছেন?

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১৬

রবিন.হুড বলেছেন: উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত সহিহ মুসলিমের বর্ণনাটি হুবহু তুলে ধরা হয়েছে। এখানে আমার কোন কিছু যোগ বিয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে এই ভাষন সবার জানা উচিৎ তাই শেয়ার করেছি মাত্র।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



নবী (স: ) লিখতে ও পড়তে জানতেন না; ফলে, এমনভাবে সাজিয়ে বলার কথা নয়; এই বক্তব্যে অন্যদের বক্তব্য আছে।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৬

রবিন.হুড বলেছেন: লেখা পড়া শুধু স্কুল কলেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে । হযরত মুহাম্মদ (স:) মহামানব হিসেবে তিনি প্রকৃতি ও পরিবেশ থেকে যথেষ্ট শিক্ষা গ্রহন করেছেন যা তাঁর মানবীয় গুনাবলীর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। তাছাড়া আল্লাহ তাওয়ালা তাঁকে যে বিশেষ শিক্ষা দিয়েছেন তা দিয়ে বিদায় হজ্জের ভাষনসহ আরও অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলার মাধ্যমে সকলের মন জয় করেছেন তা নিয়ে সন্দেহ করা উচিৎ নয়।

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৪

চাঁদগাজী বলেছেন:



আল্লাহ কাউকে শিক্ষিত করেন না, শিক্ষকেরা মানুষকে শিক্ষা দেন; আল্লাহ মানুষকে শিক্ষিত করলে, ঢাকার রাস্তায় ৩ লাখ কিশোরী "টোকাই" থাকতো না।

৫| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৪

এম ডি মুসা বলেছেন: নির্দিষ্ট পর্ব ১ ২ করে উল্লেখ করলে ভালো হত, সবচেয়ে বড় হাদিস হলো
বিদায় হজের ভাষণ, এটাকে মানে না অনেক মৌলবি।
এটাতে বলেছেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না,
এক মুসলমান অপর মুসলমান ভাই ভাই। এসব ছেড়ে এখন কে আগে যাই
কে আগে পাই খাই খাই , পাই পাই পরকে বুঝাই নিজের বুঝের খবর নাই

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৮

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: ইতিহাস থেকে জানা যায় হজ্বের অনেকগুলো আনুষ্ঠনিকতা আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। নবী কিছু পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করেছেন।এখন যেমন ভাষণ দেয়া হয় আসলে এমন কোন ভাষন দেন নাই।হজ্বের ঐ কয়দিন বিভিন্ন সময় যে সকল কথা বার্তা বলেছেন তাই বিদায় হজ্বের ভাষণ নামে অবিহিত করাহয়।

৭| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: এটাই যে নবিজির ভাষন তার প্রমান আছে? দলিল আছে? ভিডিও আছে? ও তখন তো ক্যামেরা ছিলো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.