নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোম্পানির মাল দরিয়ায় ঢাল, মাল টা যখন সরকারী, রক্ষা করা দরকারী।

০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:০৪

ব্রিটিশ আমল থেকেই একটা কথা প্রচলিত আছে যে, কোম্পানীর মাল দরিয়ায় ঢাল। এই কথার মর্ম কথা বুঝতে জানতে হবে ব্রিটিশ চালিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সম্পর্কে।
সাধারনত গ্রেট ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের অধিবাসীদের বলা হয় ব্রিটিশ। গ্রেট ব্রিটেন বা ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্য বলতে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ড এর সমন্বয়ে গঠিত ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের একটি রাজ্যকে বুঝায়। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় শহর লন্ডন হচ্ছে ব্রিটেন তথা যুক্তরাজ্যের রাজধানী।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার জন্য ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত একটি জয়েন্ট‌-স্টক কোম্পানি।এর সরকারি নাম "ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি"। ১৬০০ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাণী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেন। এ সনদ কোম্পানিটিকে ২১ বছর পর্যন্ত পূর্ব ভারতে একচেটিয়া বাণিজ্য করার প্রাধিকার অর্পণ করেছিল। তবে পরবর্তীকালে এ কোম্পানি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পরাজিত করে ভারত উপমহাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে এবং ১৮৫৮ সালে বিলুপ্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করে। অত:পর ব্রিটিশ সরকার সরাসরি ভারত শাসন শুরু করে।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করত তখন উপমহাদেশের জনগণের কোন সম্পদের মালিকানা ছিল না তারা ছিল নিজদেশে পরবাসী তারা এখানের আদিবাসী বা স্থায়ী বাসিন্দা আর সকল সম্পত্তির মালিক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী তথা ব্রিটিশ সরকার।তাই তখনকার জনগনের মধ্যে একটা ক্ষোভ বিরাজ করতো। সুযোগ পেলে কোম্পানির ক্ষতি করার চেষ্টা করতো। কোম্পানির দূঃশাসন থেকে দেশ মাতাকে মুক্ত করতে ক্ষুদিরাম যেমন চেষ্টা করেছেন তেমনি তিতুমীর, হাজী শরিয়ত উল্লাহ ও সিপাহীরা বিদ্রোহ করেছেন। এর পাশাপাশি সাধারন জনগন কোম্পানির মালামালের বিভিন্ন রকম ক্ষতি সাধনের অংশ হিসেবে দরিয়া বা নদী বা সাগরে ফেলে দিত অথবা কোম্পানির অস্থাবর সম্পত্তির ক্ষতি সাধনকে দরিয়ায় (বড় নদী/সাগর/সমুদ্র) ফেলে দেওয়ার সাথে তুলনা করে দেশপ্রেমিক জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে গোপন শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতো, “ কোম্পানির মাল, দরিয়ায় ঢাল”। এতে করে কোম্পানির ক্ষতি হলেও জনগণের কোন ক্ষতি নাই বিবেচনা করা হতো।

ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে ভারত ও পাকিস্থান নামক দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হলো ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের ত্যাগের বিনিময়ে পাকিস্থানের হায়েনাদের তাড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক ভূ-খন্ড পেলেও বাঙ্গালী পায়নি তার মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতা। ব্রিটিশ উপনিবেশিকতার প্রভাব থেকে এখনো মুক্ত হতে পারে নি। ভুলেনি সেই শ্লোগান , কোম্পানির মাল দরিয়ায় ঢাল, বরং আধুনিক করে বলে সরকারী মাল দরিয়ায় ঢাল।আমাদের সোনার বাংলাদেশ ও দেশের সকল সম্পদের মালিকানা ব্রিটিশ কোম্পানির হাত থেকে দেশের জনগণের সরকারের হাতে হস্তান্তর হয়েছে সেই দিকে হুজুগে মাতাল বাঙ্গালী বা অবুঝ বাঙ্গালীর কোন ভাবান্তর নেই। তাইতো সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করতে জনগন কখনো চিন্তা করে না যে এই সরকার যে বাঙ্গালী জনগণের সরকার বা সরকারী সম্পত্তি যে জনগনের সম্পত্তি। এই সম্পদের ক্ষতি মানে জনগনের নিজেদের সম্পদের ক্ষতি সেই বিবেচনাবোধ জাগ্রত হয় নাই। সরকারী রাস্তা ভাঙ্গলে জনগনের কষ্ট হবে বা জনগনের করের টাকায় মেরামত করতে হবে সে হিসাব করলে তো কোন জনগনের সরকারের সম্পদের ক্ষতি করার কথা নয় বরং অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আগলে রাখবে নিজের মতো করে।
ব্রিটিশ সরকারের দুটি অবদান স্বীকার না করে উপায় নাই তা হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর রেল লাইন যার উপর ভর করে আজও আমরা চলছি ধুকে ধুকে। তাদের স্বার্থকতা যে তাদের তৈরী শিক্ষা ব্যবস্থা আজও আমরা অন্ধভাবে অনুকরণ করছি । আমাদের জন্য ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল বাঙ্গালীদের কেরানী তৈরী করা যাতে করে তাদের আদেশ-নিষেধ-ভাষা বোঝা বা মানা বা ফুট-ফরমায়েস খাটা বা অফিসের পিওন-মেসেঞ্জার হওয়ার জন্য যোগ্য হয়। আমরা তাদের নির্দেশিত পথে হেটে নিজস্ব মেধাও মননের সঠিক প্রয়োগ না করে হয়েছি মাছি মারা কেরানী। ব্রিটিশরা বাঙ্গালীদের মেধাকে তাদের তুলনায় অর্ধেক মনে করে বাঙ্গালীদের একাডেমিক পরীক্ষায় পাশের নম্বর নির্ধারণ করেছিল তাদের নম্বরের অর্ধেক অর্থাৎ ৩৩। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাঙালি জাতি সম্পর্কে গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এর বিখ্যাত উক্তি,বাঙালি আজ যা ভাবে, ভারত ভাবে আগামীকাল।(What Bengal thinks today, India thinks tomorrow.) বাঙ্গালী আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানে ব্রিটিশদের হারালেও তাদের দাসত্বকে সমীহ করে একাডেমিক পাশের নম্বর ৩৩ বজায় রেখেছে বর্তমানের শিক্ষা ব্যবস্থায়। ইংল্যান্ডে যে ব্রিটিশ ল চলে না সেই দুইশ বছরের পুরাতন আইন দিয়ে চলে আমাদের সোনার বাংলা। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন আইন তৈরী না করে পুরাতন আইন চাপিয়ে দেওয়া হয় জনগনের উপর। আবার সংসদে নতুন আইন করার সময় ধরে নেওয়া হয় দেশের জনগন পুরাতন সকল আইন জানে এবং মানে। এভাবেই আমাদের দেশে তৈরী হয়েছে আইন না জানা এবং না মানার সংস্কৃতি।
আসুন আমরা সবাই দেশের আইন-কানুন জানি এবং মানি। দেশটা আমাদের দেশটা গড়ার দায়িত্বও আমাদের।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:৩৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




এভাবেই আমাদের দেশে তৈরী হয়েছে আইন না জানা এবং না মানার সংস্কৃতি। আসুন আমরা সবাই দেশের আইন-কানুন জানি এবং মানি। দেশটা আমাদের দেশটা গড়ার দায়িত্বও আমাদের।

২| ০৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:১৬

জটিল ভাই বলেছেন: সত্যই সেকুলাস...... বড্ড আজব সকল নিয়ম-নীতি.......

৩| ০৬ ই মে, ২০২১ বিকাল ৪:৪৩

মা.হাসান বলেছেন: ইংল্যান্ড +ওয়েলশ= ব্রিটেন
ইংল্যান্ড +ওয়েল+স্কটল্যান্ড=গ্রেট ব্রিটেন
ইংল্যান্ড +ওয়েল+স্কটল্যান্+উত্তর আয়ারল্যান্ড= ইউনাইটেড কিংডম।

আইনতো সবাই মানতেছে। মানতেছে এমন লোক আর কয়জন। তবে এখন দিন একটু পাল্টাইছে। আগে আইন ছিল সবার জন্য এক। এখন বিভিন্ন ক্লাসের জন্য আইন আলাদা।

৪| ০৬ ই মে, ২০২১ রাত ৯:৪৪

স্বর্ণবন্ধন বলেছেন: একটা প্রবাদ বাক্য থেকে সুদীর্ঘ ইতিহাস জানলাম। সাথে জাতির মনোস্তত্ত্ব ও। অনেক শুভেচ্ছা।

৫| ০৭ ই মে, ২০২১ রাত ১২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আইন মানতে বাঁধ করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.