নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রবিন.হুড

রবিন.হুড › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিরক কি এবং শিরককারীর শাস্তি কি?

০৩ রা মে, ২০২৩ বিকাল ৩:১২

শির্ক কীঃ
শির্কের অর্থ হলো অংশীদার স্থাপন করা। অর্থাৎ কোনো বিযয়ে কারো সাথে অন্য কারো শরীক সাব্যস্ত করাই হলো শির্ক। শির্ক শব্দটি যখন আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত হয় তখন এর অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহর কোনো ইবাদত বা ক্ষমতার সাথে অন্য কাউকে শরিক বা অংশীদার করা।
অর্থাৎ আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত যেসব গুণাবলী রয়েছে, সেইসব গুণাবলী আল্লাহরও আছে সেইসাথে অন্য কারোরও আছে এমন ধারণা বা বিশ্বাস করাটাই হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক। প্রকৃতপক্ষে যারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে তারাই শির্ক করে। অর্থাৎ যারা ঈমান এনে বা না এনেও আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে। পাশাপাশি আল্লাহ্র সাথে অন্য কাউকে তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে তারাই হচ্ছে শির্ককারী মুশরিক।সোজা কথায় আল্লাহ্কে ইলাহ মেনে তাঁর সাথে তাঁর প্রিয় বান্দা, নবী, রাসুল, ফিরিশতা, দেবদেবী ইত্যাদিকেও আল্লাহ্র মতো ক্ষমতাশালী মনে করাই হচ্ছে শির্ক।
শির্কের প্রকারভেদঃ
তাওহীদের মতো শির্কেও তিন প্রকার। অর্থাৎ তাওহীদের তিনটি বিষয়ের সাথে শরিক স্থাপন করাই হলো শির্ক। এই তিনটি বিষয়ের সাথে কেউ শরিক স্থাপন করলে সে হয়ে যায় মুশরিক।
এই তিনটি ভাগ হলোঃ
১ .আল্লাহর রুবূবীয়্যাহর সাথে শির্ক
২. আল্লাহর উলুহিয়্যাহর সাথে শির্ক
৩. আল্লাহর আসমা ওয়াস সিফাতের সাথে শির্ক
আল্লাহর রুবূবীয়্যাহর সাথে শির্কঃ
তাওহীদুল রুবূবীয়্যাহ হলো, আল্লাহ্ ই আমাদের একমাত্র রব। অর্থাৎ সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনা এবং একমাত্র আইনপ্রণেতা আল্লাহকে এক, একক এবং অদ্বিতীয় হিসাবে বিশ্বাস করার নাম তাওহীদে রুবূবীয়্যাহ।
যারা আল্লাহর এই গুণ স্বীকারের পাশাপাশি অন্যান্য কোনো উপাস্যকে বা আল্লাহর কোনো বান্দাকে একই গুণের অধিকারী মনে তাহলে তা হবে আল্লাহর রুবূবীয়্যাহর সাথে শির্ক। এটি তিনটি ভাগে বিভক্ত।
ক) সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্বের সাথে শির্কঃ
আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আল্লাহ ছাড়া কোনো স্রষ্টা আছে কী? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মা‘বূদ নেই।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩]
অর্থাৎ জীবন্ত সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা শুধুমাত্র আল্লাহ্। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে উত্তম সৃষ্টিকর্তা।” [সূরা আল-মুমিনূন আয়াত: ১৪]
অর্থাৎ পৃথিবীর মানুষও কিছু না কিছু সৃষ্টি করেন। তবে তারা যা সৃষ্টি করে তার থেকে সর্বোত্তম সৃষ্টিকারী হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। সুতরাং আল্লাহ্ যা সৃষ্টি করেছেন তাঁর অনুরূপ সৃষ্টি কখনোই মানুষ বা অন্য কোনো কথিত বাতিল ইলাহ সৃষ্টি করতে পারে না।
অতএব, আল্লাহ্ যা যে রূপ সৃষ্টি করেছেন এবং করতে পারেন, ঠিক একইরকম অন্য কেউ সৃষ্টি করে পারে এমন ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে আল্লাহর সালে সৃষ্টিগত একত্বের সাথে শির্ক।
শির্কের বিরুদ্ধে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ,
"হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনও একটি মাছি সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধার করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন। "(সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ৭৩)
খ) আল্লাহর রাজত্বের একত্বের সাথে শির্কঃ
আল্লাহ্ হচ্ছেন সকল রাজত্বের মালিক। তাঁর হাতেই পুরো সৃষ্টি জগতের রাজত্ব। আল্লাহ্ বলেন,
“ ( আল্লাহ্) সেই মহান সত্বা অতীব বরকতময়, যার হাতে রয়েছে সকল রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আল-মুলক, আয়াত: ১]
অতএব পুরো সৃষ্টি জগতের রাজত্ব আল্লাহর। কেউ যদি আল্লাহর একছত্র রাজত্বে তাঁর সাথে কাউকে শরিক করে তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে শির্ক।
গ) পরিচালনায় আল্লাহর একত্বের সাথে শারিকঃ
আল্লাহ্ ব্যতীত সমগ্র জগতের আর কোনো দ্বিতীয় পরিচালক নেই। একমাত্র আল্লাহ্ই পরিচালনা করেন সমগ্র বিশ্ব জগত। তাঁর আদেশ নির্দেশ এবং আইনেই চলছে, চলবে এবং চলতে হবে পুরো বিশ্ব জাহান।
আল্লাহ্ বলেন,
" সাবধান! সৃষ্টি তাঁরই, এর উপর প্রভুত্ব চালাবার-একে শাসন করার অধিকারও একমাত্র তাঁরই। " [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
অর্থাৎ, সমগ্র বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ্। আর এই বিশ্ব চলবেও একমাত্র আল্লাহর বিধানে তথা আইনে।
এখন যদি ঈমানের দাবিদাররা দুনিয়ায় আল্লাহর আইনের সাথে বা পরিবর্তে অন্য কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অনুসরণে দেশ পরিচালনা করে তবে তা হবে আল্লাহর বিধি বিধানের বিরুদ্ধে শির্ক।
আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না। " (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১০৫)
অতএব, সৃষ্টি যার পরিচালনার আইন, বিচার, বিধি বিধান ও ক্ষমতাও তাঁর। এখন কেউ যদি আল্লাহর আইনের সাথে বা পরিবর্তে নিজেরাই আইন তৈরি করে বা অন্য কোনো উৎস থেকে আইন তালাশ করে তাহলে তা হবে সুস্পষ্ট শির্ক।


আল্লাহর উলুহিয়্যাহর সাথে শির্কঃ
আল্লাহ্ তাঁর বান্দা থেকে ইবাদত পাওয়ার একক এবং একমাত্র মালিক। মানুষ আল্লাহর জন্য যে ইবাদত করে সেই একই ইবাদত যদি অন্য কারো জন্য করা যাবে না। যদি কেউ আল্লাহর ইবাদত আল্লাহর ভয় বা আশা নিয়ে না করে অন্য কারো ভয়ে (ক্ষতির আশঙ্কায়) বা লৌকিক ভাবে অন্য কাউকে দেখানোর জন্য করা হয় তাহলে তা হবে শির্ক। অথবা আল্লাহকে বিশ্বাস করে আল্লাহর জন্য ইবাদত না করে অন্য কারো মন জয়ের জন্য ইবাদত তথা সালাত, তাওয়াফ, মান্নত, কুরবানি, দান সদকা ইত্যাদি করা হলে তা হবে সুস্পষ্ট শির্ক।
আরবের মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ্ কে স্বীকার করতো এবং মানতো। কিন্তু তাঁরা আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য দেব দেবী এবং আল্লাহর পূর্ববর্তী যুগের অলি আউলিয়ার মূর্তিরও ইবাদত করতো। শুধুমাত্র শির্কের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণেই মক্কার মুশরিকরা রাসুল সাঃকে মেনে নিতে পারেনি এবং ঈমান আনেনি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৭২]
যুগে নবী রাসুলগণ এই তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর দাওআতই সাধারণ মানুষকে দিয়ে এসেছিলেন। যারা আল্লাহ্ কে স্বীকারের পাশাপাশি অন্যান্য উপাস্যও তৈরি করেছিল। সুতরাং আল্লাহর জন্য নির্ধারিত অনির্ধারিত যেকোনো ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক করা যাবে না। শরিক করার সাথে সাথে তা শির্কে পরিনত হবে।
উদাহরণঃ
সালাত, সিয়াম, হজ্জ্ব, যাকাত, কুরবানি ইত্যাদি আনুষ্ঠানিক ইবাদত সমূহ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্য। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় (জাহান্নাম) এবং আশা (জান্নাত) সহকারে তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এইসব ইবাদত করা।
কোনো ঈমানদার এইসব ইবাদত লোক দেখানোর জন্য অর্থাৎ সালাত, সিয়াম আদায় করছি লোকে পরহেজগার বলবে, হজ্জ্ব করছি লোকে হাজী বলবে, যাকাত, কুরবানি দিচ্ছি লোকে বড় দানবীর বলবে এই উদ্দেশ্যে করে ; তাহলে তা হবে ছোট শির্ক।
সেইসাথে কোনো ঈমানদার যদি আল্লাহর কোনো বান্দাকে (জীবিত বা মৃত) খুশি বা সন্তুষ্ট করার জন্য দান, সদকা, কুরবানি ইত্যাদি করবে তবে তা হবে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর বিরোধী তথা বড় শির্ক।
আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল) আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। "(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৬২)
আল্লাহর আসমা ওয়াস সিফাতের সাথে শির্কঃ
সিফাত হলো গুণ। আসমা হলো নাম। আসমা ওয়াস সিফাত হলো, আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত নাম। আসমা ওয়াস সিফাতের অর্থ হলো, আল্লাহ নিজেকে যেসব গুণাবলী সম্বলিত নামে নামকরণ করেছেন সেইসব নামে এবং গুণে তিনি একক এবং অদ্বিতীয় কতৃত্ববাদী। অর্থাৎ তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই এবং হতে পারে না।
যদি কেউ আল্লাহর এইসব গুণাবলী গুলো অন্য কারো কাছে আছে বলে মনে করে তবে তা হবে শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহর কোনো গুণে কাউকে ধারণা করা যাবে না। যেমনঃ সন্তান দেওয়ার মালিক (আশ শুরা :৪৯-৫০) রিজিক দেওয়ার মালিক (তালাক :২-৩,সাবা: ৩৯), বিপদে উদ্ধারকারী (আন আম :৬৩), কারো ভালো করার মালিক (তাওবা : ৫০- ৫১) ইত্যাদি সবই হচ্ছে আল্লাহর একমাত্র একক গুণ।
এখন কেউ যদি এইসব গুণ আল্লাহর কোনো বান্দার আছে বলে বিশ্বাস বা ধারণা করলে তা আল্লাহর তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাতের বিরোধী হবে। এবং কেউ এমন করলে তা সরাসরি শির্ক হবে।
উদাহরণঃ
সুফিবাদীদের আকিদা হচ্ছে তাদের পীর অলি আউলিয়ারা যেকোনো মানুষের ভালো মন্দ হায়াৎ রিজিক ইত্যাদি পরিবর্তন করার ক্ষমতা রয়েছে। অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে আল্লাহর পাশাপাশি তাদের পীর আউলিয়াদেরও বিভিন্ন ক্ষমতা আছে। যা দ্বারা তারা জীবিত কিংবা মৃত যেকোনো অবস্থায় তাদের ভক্ত মুরিদদের ভালো মন্দ ইত্যাদি করতে পারে।
তাই সুফিবাদী সুফি সুন্নি দাবিদারেরা দাবি করে এবং বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর নিজস্ব বিভিন্ন যেসব ক্ষমতা রয়েছে তা তিনি তাঁর বিভিন্ন অলি আউলিয়াদের ভাগ করে দিয়েছেন। আর তারাও সময়ে অসময়ে তাদের ভক্ত মুরিদের সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের উদ্ধার করেন।
এই যে বিশ্বাস সুফি সুন্নিরা ধারণ করে আছে, তা ই হচ্ছে শির্ক। যেখানে তারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করছে। এবং পাশাপাশি তাঁর বান্দাদেরও ক্ষমতার মালিক সাব্যস্ত করে তাদের থেকে সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছে।
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, কিয়ামতের ময়দানে শির্ককারী মুশরিককে আল্লাহ্ কখনোই ক্ষমা করবেন না। শির্ক ছাড়া যেকোনো পাপ তিনি চাইলেই কিয়ামতে যেকোনো কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম কী কী ভাবে এবং কী কী কারণে আল্লাহর সাথে শির্ক হয়। সুতরাং আমাদের ঈমানী দায়িত্ব হলো জীবনের সর্বাবস্থায় শির্ক থেকে বেঁচে থাকা। যাতেকরে দুনিয়া থেকে ঈমান আকিদা নিয়ে কবরে যেতে পারি।

সূত্রঃ সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী এর ব্লগ








মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৫

কামাল১৮ বলেছেন: ইসলামের আকিদা মতে,আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করবে কিন্তু শিরক কারিকে ছাড়বেন না।

২| ০৪ ঠা মে, ২০২৩ দুপুর ১:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: তা এইসব শাস্তি কি মৃত্যুর পর হবে? না জীবিত থাকাকালীন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.