![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার।
শতবার প্রেমে পড়া মানুষও নাকি -
- মাঝ রাতে কাঁদে শুধুই প্রথম প্রেমের জন্য, শুধু প্রেমের জন্য নয়।
আজকের জীবিত সব মানুষ, কেউই থাকবে না কোন একদিন। সেদিন সেলফোন হয়তো ছোট হয়ে কানের লতিতে রিং হয়ে ঝুলবে। কম্পিউটারের ভরাট গলায় অসাধারন আবেগময় প্রেমের কবিতা, কোন অস্থির মানুষের চোখে ঘুম নিয়ে আসবে। কিন্তু কিছুই প্রেয়সীর মুখে - "তুমি কেমন আছ?" কথাটির মত বুকের ভেতর উথাল পাথাল ভালবাসা আনবে না। সুরঞ্জনার একশ আটটি নীল পদ্মের রং কম্পিউটারে কখনই আসবে না। প্রচন্ড ব্যাথায় মস্তিস্কের ভিতরের একটি একটি করে স্নায়ুর তার যন্ত্রনায় ছিঁড়তে থাকবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের নতুন প্যারাসিটামল প্লাসে কোন কাজ হবে না। তখন প্রিয়তমার লকলকে পাঁচটে আঙ্গুল চুলে এলোমেলো চলে, সব যন্ত্রনার অবসান ঘটাবে। অংক বিজ্ঞান না জানা ঐ আঙ্গুল পাঁচটি - নেগেটিভ, পজিটিভ, সিরিয়াল পোর্ট, সব মিলিয়ে একে একে ছেঁড়া তার জুড়িয়ে দিবে সবই। রোবট তাকিয়ে দেখবে - কি করে সম্ভব?
- প্রযুক্তি ইতিহাসের পাতায় থাকবে অক্ষর হয়ে। প্রেম রয়ে যাবে মানুষের মনের পাতায়, যতদিন মানুষের পৃথিবীতে মানুষ থাকবে।
এসির বাতাস আর সময়মত খেতে না পারলে রাগে আগুন হয়ে যাওয়া ছেলেটি, সেদিনও প্রখর রৌদ্রে হাসি মুখে না খেয়ে অপেক্ষা করবে প্রিয়তমার জন্য। মেয়েটি আসবে, হয়তো আসবে না। হয়তোবা এসে তার রৌদ্রে ঘর্মাক্ত মুখটি হাতের আঙ্গুলের স্পর্শে মুছে দিবে। তার ঐ হাতের এক মুহুর্তের স্পর্শের জন্য যুগে যুগে ছেলেরা সূর্যের তেজকে পকেটে পুরে ঘুরবে। মেয়েরা কারো ঘর্মাক্ত মুখ মুছতে গিয়ে নিজের চোখের জল মুছবে।
কখনও হয়তো মেয়েটি আসবে না। হয়তো কখনও একটু বিলক্ষনে ছেলেটির প্রস্থান ঘটবে ভুল করে। এরপর আর দেখা হবে না, কথা হবে না হয়তো। কিন্তু ভুলে কি যেতে পারবে? মনের ভুলে ভুল করা যায়, কিন্তু সেই মনকে ভুলে ভোলা যায় না রে পাগল।
প্রচন্ড ঝড়ের রাতে বাতাসের শোঁ শোঁ আওয়াজে ঠিকই মনে করিয়ে দেবে।
পুরনো কাগজ ঘাটতে কোন কাগজের পেছনের হিজিবিজি পেন্সিলের দাগে মনে পড়বে।
কোন এক বিষন্ন দুপুরে এক কিশোরীর আইসক্রিমে কামড় দিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে মনে করিয়ে দেবে।
গাছের ছায়ায় দাড়িয়ে থাকা উদাসী কিশোরকে দেখে মনে হবে, সেদিন কি পরে প্রেয়সী এসেছিল? হলুদ নাকি লাল রং ছিল শাড়ির? বাজিটি অমিমাংসিত রয়ে গেল। মনটা হুহু করে উঠবে বাজির ফল জানতে নয়, প্রেয়সীকে দেখতে।
রক্ষা নেই রে! এ যে প্রথম প্রেম। শার্টের বোতাম ছিঁড়ে মনে করিয়ে দিবে।
মনে পড়বে পায়ের একটি মোজা খুঁজে না পেয়ে।
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে বেসিনে টপ টপ করে পড়া পানির শব্দে মনে হবে।
পানি খেতে গিয়ে বিষম খেয়ে মনে হবে।
প্লেটে তরকারি নিতে গিয়ে কাপড়ে ঝোল ফেলে মনে হবে।
চলতি পথে রিক্সার চেইন পড়ে গিয়ে মনে হবে।
মনে হবেই। মনে পড়তেই থাকবে প্রতিনিয়ত জীবনের প্রথম প্রেম।
বাসস্টপেজে হকারের ডাকে, কারও মোবাইলে আসা রিংটোনে মনে হবে, চলতি পথে স্যান্ডেল ছিঁড়ে মনে হবে।
নেতিয়ে পড়া গাছে মাথা উচু করে দাড়ানোর চেষ্টা করা ফুল দেখে মনে হবে।
বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যাবেলার একাকীত্বে, বৃষ্টির ফোঁটা অকারণে চোখে জলের ফোঁটা হয়ে মনে করিয়ে দেবে।
ভোর বেলার অলসতা মনে করিয়ে দেবে। আচ্ছা, ও কি এখনও সকালে উঠতে অলসতা করে? মনটা সব ছেড়ে ছুটে যাবে তার কাছে। অভিমানে চোখের জলকে প্রিয়তমার ভালবাসা মনে হবে।
ভুলবার উপায় নেই। ভুলতে পারবি নারে পাগল! ভোলার চেষ্টা করলে বেশী করেই যে মনে করবি। রাতে ভুলবি, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবি - চোখের নোনা জলে বালিশ ভিজে আছে। বালিশের সেই নোনা জলের দাগটি -
- বালিশটির ক্যানভাসে কেমন করে জানি প্রিয়তমার মুখ তৈরী করেছে। এই যে, ঠিক এই জায়গাতেই তো গালের তিলটা ছিল! হ্যাঁ, এই তিল নিয়েই তো একদিন....
নেই! কোন লাভ নেই - বাঁচতে পারবি না রে পাগল।
যেদিন ধীরে ধীরে চোখটা ঝাপসা দেখতে দেখতে অন্ধকার হতে থাকবে, প্রিয়জনের মুখগুলো শেষবারের মত ভেসে উঠবে, সেইদিনও দেখবি পাগল - হাতে গোনা কয়েকটি প্রিয়জনের মুখের সাথে ভেসে আসবে সেই প্রথম প্রেমের মুখটি -
- হয়তো যুগ যুগ মনে না এসেও।
"প্রথম প্রেম ভুলতে জীবনে আসে না রে পাগল, সারাটি জীবন শুধুই মনে করিয়ে দিতেই আসে।"
©somewhere in net ltd.