নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

www.facebook.com/glasnikmira13

মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিহাব

www.facebook.com/glasnikmira13

মো. মোস্তাফিজুর রহমান শিহাব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতি আজ গোলাম কীভাবে?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৯

মহান আল্লাহ যখন আদমকে (আ.) সৃষ্টি করলেন তখন তিনি মালায়েকদের আদেশ দিয়েছিলেন আদমকে (আ.) সেজদাহ করার জন্য। সবাই সেজদাহ করলেও ইবলিস সেজদাহ করে নি। এর ফলে ইবলিসের সাথে আল্লাহর চ্যালেঞ্জ হয় যে ইবলিস আদমকে (আ.) অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহর দেয়া সহজ সরল পথ থেকে বিচ্যুত করবে। আল্লাহর ইবলিসের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন ও তাকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করে পৃথিবীতে প্রেরণ করলেন। মানুষকে আল্লাহ জান্নাতে থাকার অধিকার দিলেন কিন্তু একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করলেন। কিন্তু ইবলিসের প্ররোচনায় আদম (আ.) ও মা হাওয়া জান্নাত থেকে বহিষ্কৃত হলেন এবং পৃথিবীতে চলে আসলেন। আল্লাহ তাঁদের পৃথিবীতে প্রেরণের পর শুরু হল ইবলিসের সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব। ইবলিস যে চ্যালেঞ্জ করে এসেছিল তাতে জয়ী হবার জন্য প্রস্তুত হল। আল্লাহ সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে তিনি যুগে যুগে নবী-রসুল প্রেরণের মাধ্যমে মানুষকে সহজ সরল পথের সন্ধান দিবেন। এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে কোর’আনের বিভিন্ন সুরায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ইবলিস তার কাজ করে চললো ও কাবিলের মাধ্যমে হাবিলকে হত্যা করে সর্বপ্রথম অনৈক্যের বীজ বপন করল। পরবর্তীতে মানবজাতি বৃদ্ধি পেয়েছে ও আল্লাহ যুগে যুগে তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাদী বা পথপ্রদর্শক প্রেরণ করেছেন। মানবজাতির মধ্যে অনেকেই এ নবী-রসুলকে গ্রহণ করে সহজ সরল পথে নিজেদের সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্রকে পরিচালনা করেছেন আবার অনেকেই তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আল্লাহ প্রতিবার সকল নবী রসুলকে একটি মূল মন্ত্র দিয়েই প্রেরণ করেছেন এবং সেটি হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- আল্লাহ ছাড়া আর কোন হুকুমদাতা মানি না। এর মাধ্যমে মানুষ আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে গ্রহণ করে সহজ সরল পথে নিজেদের জীবনকে পরিচালনা করেছে। কিছুদিন যেতেই তারা আবার ইবলিসের প্ররোচনায় ধর্মের শিক্ষাকে বিকৃত করে পথভ্রষ্ট হয়েছে, ফলে আবার আল্লাহ তাদেরকে পথপ্রদর্শনের জন্য নতুন নবী প্রেরণ করেছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় মানবজাতি যখন সমগ্র মানবজাতি জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল তখন আল্লাহ তাঁর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদকে (স.) প্রেরণ করলেন। তারা তাদের পূর্ববর্তী নবীদের শিক্ষাকে ভুলে গিয়ে, ত্যাগ করে, বিকৃত করে ব্যবহার করে সমাজ, পরিবার ও রাষ্ট্র থেকে আল্লাহর হুকুমকে প্রত্যাখ্যান করে নিজেরা সে আসনে বসেছিল। তারা নবীদের শিক্ষা ন্যায়, সাম্য, শান্তিকে বাদ দিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছিল নিজেদের ইচ্ছে মতো শাসন অর্থাৎ ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি। সে সময়ে আল্লাহর রসুল নবুয়্যত লাভ করলেন ও সর্বপ্রথম মানুষদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে হুকুমদাতা মানি না’ এ কথার উপর ঐক্যবদ্ধ করা শুরু করলেন। এর ফলে তখনকার আলেম সমাজ অর্থাৎ আবু জাহেল, উৎবা, শায়েবা আল্লাহর রসুলের বিরোধিতা শুরু করলো। আল্লাহর রসুলের প্রচেষ্টায় আরব উপদ্বীপ ইসলামের সুশীতল ছায়ার অধীনে আসলো। আল্লাহর রসুলের ওফাতের পর এই উম্মাহ সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য বের হয়ে পড়লেন। তাঁরা সর্বাত্মক সংগ্রামের মাধ্যমে আল্লাহ-রসুলের আদর্শকে অর্ধ দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হলেন। সেই অর্ধ দুনিয়ায় নেমে এল অর্থনৈতিক প্রাচুর্য্য, ন্যায়-সাম্য- এক কথায় অকল্পনীয় শান্তি। মুসলিমরা সমগ্র দুনিয়ায় শিক্ষকের জাতিতে পরিণত হলো। তাঁরা জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে বিশ্বের অন্যান্য জাতি থেকে অনেকগুণ এগিয়ে গেল।
কিন্তু আকিদা ভুলে যাওয়ার কারণে সত্যদীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ত্যাগ করায় আল্লাহ এ জাতিকে লানত, অভিশাপ দিলেন। এ সময় তাদের সুলতানরা অন্যান্য জাতির রাজা-বাদশাহদের মতো ভোগ-বিলাসে নিমত্ত হল। অন্যদিকে আলেম সমাজ দীনের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করলেন। আল্লাহ তাঁর রসুলের মাধ্যমে দীনের মধ্যে পূর্ববর্তী ধর্মগুলোর মতো আলাদা পুরোহিত শ্রেণী যাতে না গঠিত হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। দীন নিয়ে যেন চুলচেরা বিশ্লেষণ করা না হয় এজন্য তিনি দীন নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারংবার নিষেধ করে গেছেন। একজন সাহাবা তাঁকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করায় তিনি উষ্মাভরে বলেছিলেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী অনেক জাতি তাদের নবীদের এমন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করতো, তারপর এ উত্তরগুলো নিয়ে নানা গবেষণা করে মতভেদ সৃষ্টি করতো এবং এর ফলে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমি তোমাদের যতটকু বলেছি তোমরা ততটুকই কর এর বেশি আমাকে প্রশ্ন করো না।” আল্লাহর রসুলের এ হাদীস থেকে তিনটি জিনিস স্পষ্ট, একটি হল দীনের সূক্ষ্মবিচার বিশ্লেষণ করা যাবে না। দ্বিতীয়টি হল, ঐ কাজের পরিণতি জাতির বিভক্তি ও ধ্বংস ও সর্বশেষ হল রসুল যে কাজের আদেশ দিয়েছেন তার থেকে বেশি করা নিষিদ্ধ হয়ে গেল এবং আল্লাহর রসুল যে কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা অবশ্যই বর্জনীয় ও হারাম।
কিন্তু আল্লাহর রসুলের এ জাতি তাঁর ওফাতের ৬০-৭০ বছর পর এই কাজটিই শুরু করল। যখন শাসকরা খলিফা থেকে রাজা-বাদশাহতে পরিণত হল তখন দীনে আলাদা পুরোহিত শ্রেণীর উদ্ভব হল। তারা দীনের সকল বিষয়ের চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু করলেন। তাদের এ অতি বিশ্লেষণের ফলে জাতির মধ্যে শুরু হলো বিভক্তি, বাদানুবাদ, তর্কাতর্কি সৃষ্টি করে জাতিকে ঐক্যহীন করে ফেলল। সহজ সরল দীনকে জটিলতার, দুর্বোধ্যতার চরমে নিয়ে সাধারণ মানুষের বোঝার বাইরে নিয়ে গেল। ভারসাম্যপূর্ণ দীনকে ভারসাম্যহীন সুফীবাদ আমদানী করে উম্মাহর বিস্ফোরণমুখী (Explosive), বহিমুর্খী (Extrovert) চরিত্রকে উল্টিয়ে একেবারে অনঢ় (Static) ও অন্তর্মুখী (Introvert) চরিত্রে পরিবর্তন করে দিয়েছে। এ কাজের ফলেই পৃথিবী সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি সর্ব নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়ে গেল। এর ফলে মোঙ্গলীয় থেকে হালাকু খান এসে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র বাগদাদকে ধ্বংস করে দিলো। খলিফাকে স্ববংশে নির্মূল করে দিল। পরবর্তীতে মুসলিম সাম্রাজ্যের উপর ইউরোপীয় খ্রিষ্টান জাতিগুলো আক্রমণ চালালো এবং মুসলিম শাসিত সকল অঞ্চলকে নিজেদের করায়ত্ব করে নিল। জাতি সম্পূর্ণভাবে তাদের কাছে পরাজিত হলো এবং পরিণত হলো অন্যান্য জাতির ঘৃণিত ক্রীতদাসে। এখনও তারা দাস হয়েই জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.