![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের দেশে অনেক দল রয়েছে যারা জাতীয় জীবনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান। একদল হচ্ছে যারা গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের ভোটে জয়যুক্ত হয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান। এই পদ্ধতিকে রাজনৈতিক ইসলাম বলে। আরেকদল চরমপন্থী, যারা মূলত জঙ্গি (Terrorist) নামে পরিচিত। তারা শক্তি প্রয়োগ করে অস্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান। এই দুটি পদ্ধতিই বর্তমান দুনিয়ার সর্বত্র প্রচলিত।
যারা রাজনৈতিক ধারায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চান অর্থাৎ জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলামের বিধান অনুযায়ী শাসন পরিচালনা করবেন বলে আশা করেন, তাদের কর্মসূচী কী? আমরা দেখি তারা মিটিং করেন, মিছিল করেন, হরতাল করেন, নির্বাচনে অংশ নেন, ভোট দেন ইত্যাদি। তারা কখনও নির্বাচনে জয় লাভ করেন কখনও বা পরাজিত হন। আল্লাহর রসুল আরবের অনৈক্য জাতিকে একটি কথার উপর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন হুকুমদাতা মানি না, ঐক্যবদ্ধ করলেন। অন্যায়, অবিচার দুর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। এক জাতি হওয়ার ফলে তাদের হুকুমদাতা ছিলেন একজন এবং তাদের কর্মসূচীও ছিল একটি। তারা পরিণত হয়েছিলেন তৎকালীন শিক্ষকের জাতিতে, শ্রেষ্ঠ জাতিতে। কিন্তু সেই জাতি যখন আকিদা বিচ্যুতির ফলে প্রকৃত আদর্শ ত্যাগ করে নিজেরা নিজেরা ফেরকা-মাজহাব, দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে হানাহানি শুরু করল তখন তারা ইউরোপীয়ান খ্রীষ্টানদের গোলামে পরিণত হল।ইতিহাস সাক্ষী ইউরোপিয়ানরা প্রথম ১০০ বছর এ জাতির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। এরপর সেই ইউরোপীয়ানদের আদলে তারা দল তৈরি করল। সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার আদলে তারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইল।
বর্তমানে সারা বিশ্বে যে কয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ রয়েছে তাদের একেক দেশের একেক রাষ্ট্রনীতি। কোথাও গণতন্ত্র চর্চা করা হচ্ছে, কোথাও সমাজতন্ত্র, কোথাও সামরিক এবং কোথাও আবার রাজতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে। আমাদের প্রশ্ন থাকবে আপনাদের কাছে, আল্লাহর রসুল কী এই প্রক্রিয়াগুলো দিয়ে গিয়েছিলেন? সমাজতন্ত্র হচ্ছে বিশেষ একদলের হাতে সব ক্ষমতা, রাজতন্ত্রে মূল হচ্ছে রাজা বা রাণী, গণতন্ত্রের মূল হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত। এ ব্যবস্থাগুলো ইউরোপিয়নারা তৈরি করেছে। আমরা পরবর্তীতে তাদের আদলে নিজেদের তৈরি করার চেষ্টা করছি। আমরা তাদের মতই বিচার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করে সেই অনুযায়ী নিজেদের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। যারা রাজনৈতিক ইসলামে বিশ্বাসী তারা তাদের তৈরি করা এ পথ দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। তারা মনে করেন কোন একভাবে নয়-ছয় করে ক্ষমতায় যেতে পারলেই হল, ব্যস ক্ষমতায় বসে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। কিন্তু তাদের এ ধারণা ভুল। তারা যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনুসরণ করছে তা ধাপ্পাবাজির রাজনীতি। এ রাজনীতি ইসলাম সমর্থন করে না এবং আল্লাহর রসুলও এ ধাপ্পাবাজির শিক্ষা দেন নি।
অনেকেই বলেন আল্লাহর রসুল তো রাজনীতি করেছেন। হ্যাঁ অবশ্যই আল্লাহর রসুল রাজনীতি করেছেন কিন্তু তিনি কখনই এ ধরনের ধাপ্পাবাজির রাজনীতি করেন নি। যারা রাজনৈতিক ইসলাম সমর্থন করেন তারা আর যাই করুন না কেন রসুলের নামে এ ধরনের মিথ্যচার করবেন না যে তিনি এ ধরনের ধাপ্পাবাজির রাজনীতি করেছেন। আল্লাহর রসুল প্রকাশ্যে তওহীদের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁকে তৎকালীন আরবের বাদশাহী দেয়ার লোভ দেখানো হয়, সুন্দরী নারী দ্বারা প্ররোচিত করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু তিনি সেই সকল প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করলেন এবং দৃঢ় ভাবে জবাব দিলেন যদি তাঁর একা হাতে চন্দ্র ও অপর হাতে সূর্য এনে দেয়া হয় তবুও তিনি এ সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম থেকে পিছপা হবেন না। হয় আল্লাহর বিজয় হবে নয়তো তাঁর মৃত্যু। এখানে আল্লাহর বিজয় অর্থাৎ সত্যদীন প্রতিষ্ঠা, মানবতার মুক্তি।
মহান আল্লাহ যে দীন প্রতিষ্ঠা করেছেন সে দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সঠিক রাস্তাও তিনি অবশ্যই প্রেরণ করবেন। তিনি তাঁর রসুলকে এ দীন প্রতিষ্ঠার যথাযথ কর্মসূচী দান করেছেন। কিন্তু বর্তমানে যে সকল রাজনৈতিক দলগুলি ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে তাদের কারো কর্মসূচীই আল্লাহ প্রদত্ত কর্মসূচী নয়। তারা যতই চেষ্টা করুক আল্লাহ প্রদত্ত কর্মসূচী ছাড়া মানবরচিত কর্মসূচী দিয়ে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। বিগত একশ বছর ধরে তারা চেষ্টা করছে কিন্তু তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় নি।
আমরা হেযবুত তওহীদ আন্দোলনও চাই আল্লাহর সত্যদীন প্রতিষ্ঠিত হোক। প্রচলিত ধারায় আমরা কাজ করি না বিধায় আপনাদের অনেকের মনে এ ধরনের ধারণা তৈরি হয় যে আমদের সুস্পষ্ট কোন কর্মসূচী নেই। এ ধারণা ঠিক নয় অন্যান্য সকল সংগঠনের মত আমাদেরও একটি কর্মসূচী রয়েছে।। আমাদের একটি কর্মসূচী রয়েছে এবং সেই কর্মসূচী হচ্ছে আল্লাহর রসুলের দেয়া পাঁচ দফা কর্মসূচী। সেই পাঁচ দফা কর্মসূচী হচ্ছে, ১) ঐক্য ২) শৃঙ্খলা ৩) আনুগত্য ৪) হেযরত ৫) জেহাদ ((হাদীস- তিরমিযী, মুসনাদে আহমেদ, বাব-উল-ইমারাত, মেশকাত)। সর্বপ্রথম ধাপ হচ্ছে তওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হওয়া। একটি মালাকে যেমন একটি সুতো বেধে রাখে তেমনি একটি ঐক্যবদ্ধ জাতির একজন নেতা থাকা আবশ্যক। দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে সেই নেতার প্রতিটি আদেশ শুনা। তৃতীয় হচ্ছে নেতার সেই আদেশ যথাযথভাবে পালন করা (এতায়াহ)। চতুর্থ ধাপ হচ্ছে হেযরত করা। এর অর্থ হল সমস্ত অন্যায় অবিচার থেকে হেযরত করে ন্যায়ের পথে আসা। পঞ্চম এবং সর্বশেষ হচ্ছে জেহাদ। অনেকেই জেহাদকে সন্ত্রাসের সাথে মিলিয়ে ফেলেন কিন্তু জেহাদ আর সন্ত্রাস এক বিষয় নয়। জেহাদ হচ্ছে সর্বাত্মক সংগ্রাম। এ সংগ্রাম হতে পারে লেখনী দিয়ে, মানুষকে বুঝিয়ে, বক্তব্য দিয়ে। আল্লাহর রসুল স্পষ্ট বলেছেন যারা এ কর্মসূচী থেকে আধা হাত সরে যাবে তাদের গলা থেকে ইসলামের রশি খুলে যাবে। আর যারা এর বদলে অন্য কোন কর্মসূচী গ্রহণ করবে তারা নামাজ পড়লেও, রোজা রাখলেও জাহান্নামের জ্বালানী পাথরে পরিণত হবে। আমরা হেযবুত তওহীদ এই কর্মসূচী মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি।
আমরা সর্বপ্রথম নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আমরা বলছি, আপনারা যে যেই ফেরকার হন, যে যেই মাজারের হন না কেন আপনারা সবাই এক আল্লাহ, এক কেতাব কে বিশ্বাস করেন। তাহলে আপানারা আমরা অর্থাৎ আমরা সবাই একটি কথার উপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর হুকুম ছাড়া আমরা আর কারো হুকুম মানবো না। বর্তমানে আমরা যে অশান্তির মধ্যে রয়েছি তার প্রধান কারন হচ্ছে আল্লাহর হুকুম প্রত্যখ্যান। আমরা সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করছি। আমরা সকলকে মো’মেন হওয়ার আহ্নবান করছি। আমরা পত্র-পত্রিকা, বই, সভা-সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে আমাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে চলেছি। আমরা হেযবুত তওহীদের প্রতিটি সদস্য মাননীয় এমামের প্রতিটি কথা শুনছি এবং প্রতিটি কথার শর্তহীন, দ্বিধাহীন আনুগত্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ধর্মব্যবসা অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায় থেকে হেযরত করেছি এবং এরপর নিজেদের সর্বাত্মক দিয়ে জেহাদ করছি, সঠিক আদর্শ প্রচার করছি। এ সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার হয়েছে, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, আমাদের বাড়ি-ঘর আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু আমরা এ সকল কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি।
আল্লাহর রসুল যে প্রক্রিয়ায় সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমরাও সেই একই প্রক্রিয়ায় সত্যদীন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি। আমরা রাজনৈতিক ইসলামদের মত মানুষের তৈরি তন্ত্রকে কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করি নি। জঙ্গিবাদী তাণ্ডব সৃষ্টি করে যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষে তাদের কর্মসূচীও গ্রহণ করি নি। আমরা রসুলের দেখানো পথ অনুসারে এই কাজ করছি। আমাদের এখন একটাই কর্তব্য। সকলকে তওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করা। তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আপনারা আমাদের সম্পর্কে জানুন। আমাদের এই সংগ্রাম আপনাদের মুক্তির জন্য, শান্তির জন্য। তাই আমাদের সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা আপনাদের প্রত্যেকের থাকা অত্যাবশ্যক।
©somewhere in net ltd.