![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইন স্টুডেন্ট। পাশাপাশি টুকটাক লেখালেখির চেষ্টা করি। রাজধানী ঢাকাতে আমার আপাতত বসবাস।
এক ঘন্টা হয়ে গেল, সে তো এখনো আসছে না। এরকম তো আগে কখনো করেনি। ফোনও বন্ধ আর সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করবো নাকি চলে যাবো।
চিন্তার রেশ কাটল পুলিশের গাড়ির সাইরেনের শব্দে। পাশ দিয়ে হুস করে চলে গেল। অদ্ভুত রকমের দ্রুত গতিতে। ঠিক পিছেই একটা এ্যাম্বুলেন্স। একই গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে পুলিশের গাড়ির পিছে পিছে। এবার প্রকট আকার ধারণ করল আমার দুশ্চিন্তা। এদিক দিয়েই তো ওর আসার কথা ছিল। তাহলে?
আমি পাগলের মত আবার ডায়াল করতে লাগলাম ওর নাম্বারে। বন্ধ! না, এখানে আর দাঁড়িয়ে থাকা যাবেনা। সামনে আগাতে হবে আমার। মাত্র ট্যাক্সি ডাকতে যাব এমন সময় একটা হলুদ রঙের ট্যাক্সি হার্ড ব্রেক করে দাঁড়ালো আমার সামনে। অবাক হলাম আমার মনের ভাষা বুঝতে পারল কিভাবে! কিন্তু হাতে সময় নেই একেবারে তাই এক লাফে উঠে গেলাম ট্যাক্সিতে এবং যা ঘটল তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না একেবারেই!
- রাফসান! তু-তুমি?!
ভয়ংকর রকমের ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে উঠে বললাম আমি। কালো রঙের একটা শার্ট পড়ে আছে ও।
কোনো উত্তর এলোনা। এক দৃষ্টিতে রাফসান সামনে চেয়ে আছে। শূন্য সেই দৃষ্টি। না এ আমার রাফসান হতে পারেনা। কত মায়াবী আর আবেগি মুখ তার। কিন্তু এই চেহারায় তো আবেগ আর মায়ার কোনো লেশ মাত্র নেই। ভয়ে সিটকে এক কোনায় গিয়ে কুজো হয়ে থাকলাম আমি। মনের ভিতরে কে যেন বার বার চিৎকার দিয়ে বলছে, নামতে হবে তোমাকে এখান থেকে। পালাতে হবে!
- ড্রাইভার! গাড়ি থামাও!
চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম আমি। কিন্তু আমার চিৎকারে কোনো ভাবান্তর হলনা ড্রাইভারের।
ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসল। কি হচ্ছে এসব! আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি! আমার ভুল ভাঙিয়ে এটা বাস্তব প্রমাণ করতেই মনে হয় এই প্রথম রাফসান কথা বলে উঠল,
- আসিফ! মনে আছে তোমার আসিফকে?
চমকে উঠে আমি রাফসানের দিকে তাকালাম। আগের মতই দৃষ্টি।
- কিক-কি হয়েছে রাফসান তোমার? আসিফ কোথা থেকে আসল এখানে। তুমি এমন করছো কেন।
ভয়ে আমার কন্ঠ মিহি হয়ে আসল।
- আসিফ এখানে আসেনি। এসেছিল গত পরশু রাতে। তোমার বাসায়। যখন তোমার পরিবারের সবাই তোমাকে একা বাসায় রেখে বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিল। মনে পড়ছে?
- না রাফসান এমন কিছুই হয়নি। তুমি ভুল শুনেছ। এমন কিছুই আমি করিনি না আসিফ করেছে। আমি একাই ছিলাম।
আমার কান্না চলে আসতে লাগল। সব কিছু কেমন জানি অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে।
- আসিফ তোমার বাসায় সারারাত ছিল। সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছ তোমরা এক সাথে।
- নাআআআআআ! রাফসান প্লিজ থামো।
আমি এবার আর ধরে রাখতে পারলাম না নিজেকে। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম।
হঠাত করে গাড়ি ব্রেক করল। আমি চোখ তুলে তাকালাম।
- রাইদা! প্রতি বছরের এই দিনে আমি তোমার সামনে আসব। তোমাকে ঠিক এই জায়গায় এসে ছেড়ে যাব। যেখানে তুমি স্বপ্ন আর বাস্তবের ঠিক মাঝামাঝিতে থাকবে আর নিজের মৃত্যুকে নিজে দেখবে!
এই প্রথম রাফসান আমার উপর দৃষ্টি ফেলল। অন্যরকম সেই দৃষ্টি। ঠাণ্ডা আর গম্ভীর!
আমি কোনো কথা না বলে নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। একটু সামনেই সেই এ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়িটা। চারপাশের মানুষ গুলো অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে চেয়ে আছে। পুলিশ কাউকে কাছে ঘেঁসতে দিচ্ছেনা। আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম সামনে। এলোমেলো ভাবে চারটি লাশ পড়ে আছে সেখানে। থেঁতলে আছে প্রতিটি লাশ। কালো রঙের শার্ট পড়া একটি লাশ। রাফসান যেটা একটু আগে পড়েছিল ঠিক সেটাই। দৌড়ে গেলাম আমি ওর কাছে। বসে পড়লাম লাশের পাশে। একি দেখলাম আমি। পুরো শরীর হালকা হয়ে উঠল আমার। এটা তোহ রাফসান। রাফসানের লাশ। আমি এক লাফে ছিটকে সরে এলাম। একটু পাশেই আরো ৩টা লাশ। দুটি ছেলে আর একটি মেয়ের লাশ!
আরেহ! মেয়েটির কামিজ তো আমার গায়ের কামিজের মতই। একই রকম। কাছে গিয়ে মুখের দিকে তাকালাম ওর।
ধাক্কা খেলাম আমি প্রচণ্ড রকমের। কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝামাঝি কোনো এক জায়গায় আছি মনে হল একবার। লাশটি আর অন্য কোনো মেয়ের নয়, আমার! তাহলে আমি কে?
বোবা হয়ে গেলাম আমি। শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বাকি লাশ দুটোর দিকে তাকালাম। ওই যে আসিফের লাশ, আর বাকিটা সেই ট্যাক্সি ড্রাইভারের।
প্রছন্ড একটা বোবা কষ্ট আর ভয় আমার বুকে ধাক্কা মারল। দৌড়ে রাস্তার অন্যপাশে চলে আসলাম। পা কেঁপে উঠল আমার। সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম। পড়ে যাওয়ার আগে শুধু এটুকু দেখলাম আমি, বড় একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমাকে পিষে ফেলার জন্য!
................
এক বছর তিনদিন আগে,
রাত্রি ১০টা,
- হ্যালো। রাইদা বাবু। কি কর!
রাফসান দুষ্টামি মাখা মুখে ফোনে জিজ্ঞেস করল তার জীবনের সব কিছু রাইদাকে।
- কিছুইনা বাবু। একা একা আর কি করব। বোর হচ্ছি অনেক।
- তোমাকে তো বললামই সবার সাথে বিয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তুমিই তো গেলানা। নাকি আমি চলে আসব তোমাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য?
রাফসানের দুষ্টামি থামেনা।
- অরেহ ফাজিল তলে তলে এত কিছুর প্ল্যান। না? একা একটা মেয়েকে একা বাসায় পেলে কি করবা আমি বুঝিনা? যাও ফোন রাখো হিহি।
- কেন কেন। ফোন রাখব কেন?
- বাবুটা আমার অনেক ক্লান্ত লাগছে। ঘুমিয়ে পড়ব। আর বাসায় তো কেউ নেই। জেগে থেকে থেকে বোর হব। কালকে কথা বলি।
২ দিন পর,
- হ্যালো, রাফসান?
- হ্যা কে বলছেন?
- আমি আসিফ। আসিফ মাহমুদ। রাইদার খুব কাছের মানুষ।
ছেলেটার টিটকারি বুঝতে পারল রাফসান। কোনো কালেই নিতে পারতনা এই ছেলেটাকে রাইদার পাশে। কিন্তু রাইদার প্রতি তার অঢেল বিশ্বাসই সব কিছু মেনে নিতে বাধ্য করেছে ওকে।
- হ্যা আসিফ। কিছু বলার থাকলে বলে ফেল। আমার কাজ আছে।
- আরেহ ভায়া এত তাড়া কিসের। এখনোই রেখে দিতে চাচ্ছ? তাহলে গত পরশু রাতের বেলায় রাইদার সাথে আমার মধুর মিলনের ঘটনা গুলো শুনবে কখন আর আমার করা ভিডিও গুলোই বা দেখবে কখন শুনি?
- মানেহ! কি বলতে চাচ্ছ আসিফ?!
- ফোনে আর কিছুই বলতে চাচ্ছিনা আমি। কালকে সন্ধ্যার ঠিক আগে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং। দেখা হবে তোমার সাথে সেখানে।
কিছুক্ষণ পরে,
- হ্যালো, রাইদা?
- হ্যা বাবু বল।
- কালকে বিকেলে দেখা হচ্ছে আমাদের। অপেক্ষা করবে তুমি আমার জন্য।
- আমি তো তোমার জন্য সারাজীবনই অপেক্ষা করতে রাজি আছি বাবু।
লাইন কেটে দিল রাফসান।
১ দিন পর,
রাফসানের পুরো শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওর হাতে আসিফের স্মার্ট ফোনটি ধরা। আর ভিডিওতে চলছে ওই রাতে তার প্রাণ প্রিয় রাইদা আর আসিফের কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য।
- ছেড়ে দাও।
আসিফের গম্ভীর কন্ঠে সামলে উঠল রাফসান।
- ছেড়ে দাও রাফসান। যা বুঝার তোহ বুঝেই নিলে। অনেক তোহ করলে তুমি, এবার আমিও একটু করে নেই। তারপরে সুযোগ বুঝে আমিও লাত্থি মেরে ভাগিয়ে দিব ওকে। হাহাহাহ।
নিজেকে ধরে রাখতে পারলনা রাফসান। চারপাশে উম্মাদের মত তাকাতে লাগল। পাশেই বড় একটা রড চোখে পড়ল। এক লাফে সেটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে মারল আসিফের মাথায়। একেবারেই প্রস্তুত ছিলনা আসিফ। কিন্তু ভাগ্য ভাল রাফসানের মত আনকোরা হাতে সড়াসরি ওর মাথায় লাগলনা। মাথায় হালকা লেগে পাশ কেটে চলে যায়। রাফসান আর দাঁড়িয়ে থাকলনা সেখানে।
এক দৌড়ে ভাড়ায় নিয়ে আসা ট্যাক্সিটায় ঊঠে যায়। ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে। কিন্তু এর আগেই আসিফ এক ছুটে চলে আসে আর দরজা খুলে দড়াম করে ঢুকে পড়ে গাড়ির ভিতর। শুরু হয় চলন্ত গাড়ির ভিতর ওদের হাতাহাতি। ড্রাইভার কিছু না বুঝে গাড়ি চালাতে চালাতে সেক্টরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিল আর বার বার পিছে ফিরে ওদের থামতে বলতে লাগল। এত কিছুর ভিতরে ৩ জনের কেউই টের পেলনা গাড়ি কখন রেল লাইনের উপর উঠে গেল আর ট্রেইনটাও এসে ধাক্কা মারল সজোরে!
ঠিক একই সময়ে,
নাহ। রাফসান তো কখনো এত দেড়ি করেনা। আজকে এমন করছে কেন। ওর নাম্বারটাও যে বন্ধ। কিছু হলনা তো আবার ওর!
রাইদা পায়চারী করতে লাগল। একটু পরেই সন্ধ্যা হয়ে যাবে। খুব চিন্তা হচ্ছে ওর। চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিতেই যেন পুলিশের গাড়ি আর এ্যাম্বুলেন্স একই সাথে খুব দ্রুত গতিতে পাশ কেটে গেল ঠিক যেদিক থেকে রাফসানের আসার কথা ছিল।
অন্য একটা ট্যাক্সি নিয়ে রাইদাও পিছে পিছে ছুটল।
একি! রেল লাইনের এদিকে এই অবস্থা কেন। একটা ট্যাক্সি ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে আছে। আর পাশেই একটু সামনেই সেই এ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়িটা। চারপাশের মানুষ গুলো অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে চেয়ে আছে। পুলিশ কাউকে কাছে ঘেঁসতে দিচ্ছেনা। এলোমেলো ভাবে তিনটি লাশ পড়ে আছে সেখানে। থেঁতলে আছে প্রতিটি লাশ। রাইদার চিনতে একেবারেই কষ্ট হলনা রাফসান আর আসিফ দুজনে সামনে লাশ হয়ে শুয়ে আছে। প্রছন্ড একটা বোবা কষ্ট আর ভয় রাইদার বুকে ধাক্কা মারল। দৌড়ে রাস্তার অন্যপাশে চলে আসল ও। পা কেঁপে উঠল রাইদার। সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেল। পড়ে যাওয়ার আগে শুধু এটুকু দেখল রাইদা, বড় একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে রাইদার দিকে। রাইদাকে পিষে ফেলার জন্য!
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৬
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: রাইদা যদি আসিফের সাথে রিলেশান করে তাহলে রাইদাকে খারাপ হিসেবে আমরা দেখবো। অথচ রাইদার মুখে পুরো গল্প। গল্পের প্রধান চরিত্রকে খারাপ দেখতে মন চায় না। আবার অন্যভাবে যদি দেখি তাহলে সবাই মারা গিয়েছে তাদের কর্মফল হিসেবে - হরর থিম হিসেবে ঠিক আছে...