নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ব্লগটি আমার ডাইরির পাতা বলা যেতে পারে। অবসর সময়ে টুকটাক অনেক কিছুই লিখে ফেলি। মাথায় যা আসে তাই। আর সেগুলোই এই ব্লগের পাতায় প্রকাশ করা।

মাহদী সাব্বির

আমি একজন ফ্যাশন ডিজাইন স্টুডেন্ট। পাশাপাশি টুকটাক লেখালেখির চেষ্টা করি। রাজধানী ঢাকাতে আমার আপাতত বসবাস।

মাহদী সাব্বির › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা টার্নিং - (ড্রামা, সুপারন্যাচারাল, হরর, ফ্যান্টাসি)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:০২

সিজনঃ ১
এপিসডঃ ১


মাঝ রাত! কোনো টু শব্দ নেই। যেন মৃত্যু গ্রাস করে রেখেছে চারপাশ। অদ্ভুত শুন্যতা ভেসে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক।
হঠাৎ পিলে চমকানো ডাক দিয়ে উঠল কিছু একটা! কুকুর! রক্তের গন্ধ পেয়েছে দুর থেকে। তাজা রক্ত! পাশে পড়ে থাকা অর্ধ উলঙ্গ লাশটার দিকে না চাইতেও দৃষ্টি পড়ল। পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে। এক চোখ উপ্রে পড়ে আছে। বুলেট সোজা গিয়ে বাম চোখে আঘাত হানে। আর এতেই শরীর থেকে প্রাণ পাখি পালিয়ে যায়। বেচারীর জন্য দুঃখ হল। বয়স একুশের কাছাকাছি হবে হয়ত। উপরওয়ালা অঢেল সৌন্দর্য দিয়েই পাঠিয়েছিলেন। কি দরকার ছিল এখানে এসে নিজের এই হাল করার। না আছে প্রাণ আর না থাকবে শরীর। অহংকার করার মত কিছুই নেই আর সাথে! শরীরটা এখন শুন্যে মিলিয়ে যেতে পারলেই যেন বাঁচে।
রাইফেলটা নামিয়ে নিচে রাখল গ্রেবার। একটু দুরে গিয়ে প্যাণ্টের পকেট হাঁতরে একটা ছোট প্যাকেট বের করল। সিগারেট রাখা আছে ওতে। কাঠি জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে সিগারেট ধরাতে যাবে তখন আবারো পিলে চমকানো আঁওয়াজ! নাহ কুকুর নয়। অনেক গুলো রাইফেলের গর্জন...এক সাথে!
----
১ আগষ্ট, ১৯৪৩। আমস্টারডাম শহর

বেলা গড়িয়ে একটু পর সন্ধ্যে হতে চলেছে। কিন্তু চারপাশটা একেবারে নিরিবিলি। কোথাও কোনো টু শব্দ নেই। এক সময় ইহুদীদের বসত ছিল এখানে। জমজমাট ছিল পুরো শহর জুড়ে। আড্ডা, গান, হাসি, কান্না সব মিলিয়ে ভালই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু হিটলারের নাৎসি বাহিনী এসেই সব কিছু চুরমার করে দিল। ইহুদী দমনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি হল্যান্ডের এই শহরটিও।
- আনা!
চমকে উঠে ধ্যান ভাঙল আনার, আনা ফ্রাঙ্ক। এক সময় জার্মানির বাসিন্দা ছিল ওরা, ধর্মে ইহুদী। হিটলার যখন পুরো জার্মানে ইহুদীদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছিল তখন অন্যান্য ইহুদী পরিবারের মত আনার পরিবারও জার্মানির পাট চুকিয়ে চলে এসেছিল হল্যান্ডে, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে। ১৯৩৩ সালের কথা সেটা, তখন আনার বয়স ছিল মাত্র ৭ বছর। কিন্তু কে জানত হিটলার এক সময় হল্যান্ডেও হানা দেবে।
- আনা! অ্যাই!... তোমাকে কত বার নিষেধ করা হয়েছে যখন তখন বাইরে চলে আসবেনা?
এক প্রকার চিৎকার করেই বলে উঠলেন এডিথ ফ্রাঙ্ক, আনার মা।
- অহ মা গত এক বছর ধরেই তোহ ওই অফিস-বাড়িটার পিছনে পড়ে আছি আমরা। আমার ভাল লাগেনা আর ওখানে সারাক্ষণ পড়ে থাকতে। দম বন্ধ হয়ে আসে। কখন না মরে যাই!
- আনা, মা! হিটলারের বাহিনীর হাতে পড়ে মরার থেকে এখানে দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়াই হবে আমাদের সবার জন্যে উত্তম। তুমি ভিতরে আসো এক্ষণই।
এক দৌড়ে ভিতরে ঢুকে গেল আনা। তাদের এক সময়কার অফিস-বাড়ির পিছনে ছোট্ট একটি কুটোরি। কুটোরির পিছনে গহীন জঙ্গল। অনেক দুর্নাম আছে এই জঙ্গলকে ঘিরে। নিজেদের লুকাবার জন্যে এর থেকে ভাল কিছু পাবার আশা নেই। ওরা অবশ্য একা থাকেনা। সাথে আরো একটি পরিবার থাকে এখানে। দুই পরিবার মিলে গত এক বছর ধরেই এখানে সময় পার করছে আর অপেক্ষা করছে হিটলারের পতনের।
রাত ৯ টায় দুই পরিবার এক সাথে বসল রাতের খাবার খাওয়ার জন্যে। আনার পাশে আনার বড় ভাই মারগট। আনার থেকে ৪ বছরের বড়। সব সময় কেমন জানি গম্ভীর হয়ে থাকে। কারো সাথে তেমন কথা বলেনা বললেই চলে। ২ বছর আগে পাড়ার এক সমবয়সী মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। ওই মেয়েই তাকে দিয়েছিল প্রথম যৌবনের স্বাদ। হিটলার বাহিনীর কবলে পড়ে অকালেই জীবন হারায় মেয়েটি। আর তার আগে কয়বার ধর্ষিত হতে হয়েছে তা আর জানা নেই মারগটের। এই সব ব্যাপার গুলো সহজেই মাথা থেকে বের করতে পারছেনা ও।
- আনা! খাচ্ছনা কেন তুমি?
ব্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল আনার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক।
- আমার খেতে ভাল্লাগছেনা।
বলেই উঠে ভিতরের রুমে চলে গেল আনা। সবাই এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল ১৭ বছর বয়সী মেয়েটির গমনের দিকে।
রুমে ঢুকেই মধ্যখানে গিয়ে দাঁড়ালো আনা। শরীরটা খুব ভারি হয়ে আছে ওর। গত ৪-৫ দিন ধরেই এই অদ্ভুত ব্যাপারটা হচ্ছে ওর সাথে। রুমের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল ও। তারপর আস্তে আস্তে জানালার দিকে আগাতে লাগল। জানালার সামনে গিয়ে পর্দাটা একটু সরিয়ে বাইরে জঙ্গলের দিকে উকি মারল। সাথে সাথে পুরো শরীর দিয়ে হিম শীতল একটা কাঁপুনি বেয়ে গেল আনার। জানালা থেকে ঠিক ১০ ফুট দূরে অর্ধ উলঙ্গ এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একেবারে আনার দিকে চোখ করে। পুরো শরীর সাদা ফ্যাকাশে আর রক্তে মাখামাখি হয়ে আছে ওর। বাম চোখ উপ্রে আছে। আর সেখান থেকেই তর তর করে বেয়ে নামছে রক্ত। মেয়েটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আনার দিকে আগাতে লাগল। আনা জানালার পাশ থেকে সরতে পারছেনা। ওর পা যেন কিছু একটা আটকে ধরে রেখেছে। আনার দম বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের উঠা-নামা কয়েক গুণ বেড়ে গেল। সব কিছু যেন অবাস্তব আর স্বপ্ন লাগছে ওর কাছে। মেয়েটি একেবারে আনার সামনে এসে দাঁড়ালো, জানালার ঠিক উল্টো পাশে। আনার দিকে হাত বাড়াল। বিচ্ছিরী সাদা এক হাত, তার মাঝে রক্তে মাখা! আনা আর দাড়িয়ে থাকতে পারলনা। দুপ করে নিচে পড়ে সাথে সাথে জ্ঞান হারাল! বাড়ির কেউ কিছুই টের পেলনা!
---
টিক টিক টিক ... ঘড়ির কাঁটা বেজে চলেছে এক নাগারে। শূন্য থেকে আবার শূন্য। যেমন শূন্য পরিবেশটা। অস্ফুট একটা গোঙ্গানির আওয়াজ বের হল আনার মুখ থেকে। নীচে ফ্লোরের উপর পড়ে আছে ও। আস্তে করে চোখ খুলে ঝাপসা চাহনি দিয়ে তাকালো চারপাশে। ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল। রাত ৩:৫৩। উঠতে গিয়ে পুরো শরীরে রাজ্যের ব্যাথা অনুভব করল আনা। পুরো ঘটনাটা মনে করার চেষ্টা করল একবার। নাহ কিছুই মনে আসছেনা। কেমন যেন অদ্ভুত লাগল সব কিছু। কিছু যেন ঠিক নেই! আরে তাই তোহ! রুমে কেউ নেই কেন! এত রাত। কিন্তু রুমে কেবল ও একা, তাও আবার ফ্লোরের উপর পড়ে থাকা অবস্থায়! দেয়াল ধরে ধরে আনা এক পা এক পা করে সামনে আগাতে লাগল। রুমের দরজা খুলে করিডর ধরে সামনে যেতে লাগল আনা। হঠাত কেমন যেন একটা চিকন সুর কানে আসল বলে মনে হল আনার। কান খাঁড়া করে করিডরে দাঁড়িয়ে গেল। হ্যাঁ তাই তোহ! মেয়েলী চিকন সুর। মায়াকান্না! অদ্ভুত রকমের মায়াকান্না, কখনো এর আগে শুনেনি ও। ডাইনিং থেকেই কি আসছে? হ্যাঁ ডাইনিং থেকেই। আস্তে আস্তে করে আগাতে লাগল ডাইনিং এর দিকে আনা। অদ্ভুত! একটুও ভয় লাগছেনা ওর।
ডাইনিং এর দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে ভিতরে উঁকি মারল আনা। চমকে উঠল ও! বাড়ির সবাই বৃত্তাকার ভাবে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুমের মাঝে আর তার ঠিক মাঝখান থেকেই সেই মায়াকান্নার আওয়াজটা আসছে। আস্তে আস্তে বৃত্তটার দিকে এগিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো আনা। কারো কোনো নড়াচড়া নেই। একেকজন মরা লাশের মত দাঁড়িয়ে আছে। নিষ্ফলক চাহনি। বৃত্তের ভিতরে উঁকি মারল ও। অবাক বিস্ময়ে দেখল ভিতরে ঠিক মাঝে ২০-২১ বছরের এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে মাঝারি আকারের একটি মাটির পেয়ালা নিয়ে, চোখ বন্ধ করে। অদ্ভুত সুন্দর এক মেয়ে। পুরো শরীর থেকে সাদা আলোর আভা ঠিকরে বের হচ্ছে মেয়েটির। আর তার মুখ থেকেই সেই মায়াকান্নার আওয়াজ বের হচ্ছে।
মুহূর্তের মধ্যে নিজেকে নেশাগ্রস্থ লাগল আনার। সম্মোহিত হয়ে পড়েছে ও। ঠিক বাকি সবার মত। এক পা এক পা করে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো বাকি সবার সাথে। যেন কঠিন কোনো আদেশ ছিল। যা না করার সামর্থ্য ওর নেই।
---
কতক্ষণ হল এভাবে জানা নেই। মনে হচ্ছিল শত বছরের এক অভিযান। সেই অভিযানে খুব একা নিঃসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। যার কোনো শেষ নেই।
চোখ খুলল মেয়েটি। হাতের পেয়ালাটি বাড়িয়ে দিল মারগটের দিকে।
- খাও!
খুব কোমল কন্ঠ মেয়েটির।
কিছুক্ষণের জন্যে মারগটের মনে হল ওর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হল বুঝি মেয়েটির কথা শোনা! কঠিন এক সম্মোহন!
এক চুমুক দিতেই মেয়েটির আবারো সেই কোমল কন্ঠ,
-তোমার পাশে বাড়িয়ে দাও, মারগট।
মারগট পেয়ালাটি পাশে থাকা তার বাবা অটো ফ্রাঙ্কের কাছে বাড়িয়ে দিল। অটো ফ্রাঙ্কে কিছু বলা লাগেনি। হাতে আসার সাথে সাথেই এক চুমুক খেয়ে পাশে থাকা এডিথ ফ্রাঙ্কের কাছে বাড়িয়ে দিলেন। আর খাওয়া শেষ হল আনার মাধ্যমে।
- রক্ত রাখা ছিল ওতে। আমার শরিরের রক্ত!
মেয়েটির কন্ঠ।
সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকালো ওর দিকে। কত কিছু বলতে চাইছে যেন কিন্তু পারছেনা। মনে হচ্ছে কোনো এক শক্তি ওদের সবার কন্ঠ বধ করে রেখেছে। শুধু দেখবে, শুনবে, আর পালন করে যাবে।
- এই রক্ত তোমাদের বানাবে অমরণশীল, অজেয়, রক্তখেকো। মানুষকে বানাতে পারবে তোমাদের দাস। তাদেরকে কম্পেল (বাধ্য) করতে পারবে যে কোনো কিছুতে। তারা তোমাদের বলা প্রতিটি অক্ষর পালন করে যাবে। তোমাদের কখনো কেউ মারতে পারবেনা। তোমরা হবে অজস্র শক্তির অধিকারী।
সবাই সম্মোহিত হয়ে শুনে যাচ্ছে।
চারটি ছুরি হাতে নিল মেয়েটি। এক এক করে বাড়িয়ে দিল সবার হাতে।
- বিশ্বাস রেখে নিজেদের বুকে ঢুকিয়ে দাও ছুরি গুলো। আর অর্জন কর সেই অমরণশীল, অজেয়, অজস্র শক্তির এক নতুন রূপ!
অদ্ভুত ভাবে এক এক করে সবার বুকে মুহূর্তের মাঝে বিঁধে গেল ছুরি গুলো। নিজেদের হাতে ধরেই। এক পলকে চারটি লাশের জায়গা হল নিচে ফ্লোরের উপরে। ঘুমিয়ে থাকা ৩ সদস্যের পার্কার পরিবারটির কেউই টের পেলনা কিছু।
------------------------------------------------------------------
- চলবে...

"দ্যা টার্নিং" - একটি বাংলাদেশি সুপারন্যাচারাল সিরিজ। কয়েকটি সিজন মিলে পরিপূর্ণ হবে এই সিরিজটি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমস্টারডাম নাম টা শুনলেই বুকের মধ্যে যেন কেমন করে।
আমস্টারডাম যাওয়ার জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি।

২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ঐতিহাসিক একটা চরিত্র নিয়ে এভাবে লেখাটা কি ঠিক?

লেখাটা হয়েছে খুব সাদামাটা। ভয় তো দূরে থাক, চমকাইও নাই সামান্য৷ আরও ভাল করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.