নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি আমার দেশকে..আমার ভাষাকে

নাজমুল_হাসান_সোহাগ

আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।

নাজমুল_হাসান_সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদ্ভুতুরে

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১০

মুহিত একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। সারা বছরে একটি মাত্র লম্বা ছুটি। টানা অনেক দিন ক্লাস হওয়ার পর বড় সড় একটা ছুটি পেয়ে যে যার মত হল ছাড়তে শুরু করেছে। একটা কাজে আটকে যাওয়ায় কয়েকদিন ক্যাম্পাসে থেকে যেতে হবে মুহিতকে। এক রুমে মোট চারজন থাকে মুহিতরা। যার দুইজন আজকে বিকালেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। একজন রুমমেট যে মুহিতের সাথে ৩১৮ নম্বর রুমে আছে ওর নাম শাহিন।

আজকের রাত অন্য সকল রাত থেকে ভিন্ন মনে হচ্ছে মুহিতের কাছে। চারিদিকে শুনসান নীরবতা। হলে যেন এই পরিবেশটা একদমই মানায় না। অবশ্য এরকম একটা অনুভূতির আবিস্কার কখনোই হত না যদি না তাকে কাজটিতে আটকা পড়তে হত। হলে যে গুটি কয়েকজন আছে তারাও লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে। একজন গার্ড অর্ধমৃতের মত ঘুমুচ্ছে। আজ ছাত্রদের আসা যাওয়ার ঝামেলা তাকে সামলাতে হচ্ছে না। তাই ঘুমটা যেন ঘাড়ে ভর করেছে।

মুহিত বারান্দায় পায়চারি করছে। নীরবতার মাঝে হাহাকার জানান দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। আমাবস্যার অন্ধকারের চাঁদরে ঢেকে আছে চারপাশ। মাঝে মাঝে হলের সামনের হাইওয়েটা ধরে সাঁই সাঁই করে ছুটে চলেছে প্রাইভেট কার আর ঢাকাগামী বড় গাড়িগুলো। মোবাইলের ঘরিটার দিকে লক্ষ্য করে দেখল অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন একটা মুভি দেখে ঘুমুতে হবে। রুমে ঢুকে দেখতে পেল শাহিন ঘুমিয়ে পড়েছে।

মুহিত কখনোই ভূতে বিশ্বাস করে না। ভূতের ভয় পাওয়া তো দূরের কথা। আজ কেন যেন হরর মুভি দেখতে ইচ্ছা করছে তার। মজা পায় দেখে। এত ভয়ঙ্কর সব দৃশ্য একের পর এক দেখানো হচ্ছে তবুও মুহিত ভয় পাচ্ছে না। মুভি তখন মঝামাঝি পর্যায়ে। হেডফোন কানে থাকায় বাইরের শব্দ তেমন শোনা যাচ্ছে না। রুমের সামনে দিয়ে কারো হেঁটে যাওয়ার শব্দ পেল মুহিত। হরর মুভি দেখার কারণে এরকম হচ্ছে,এই ভেবে আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলো না ও। আর এত রাতে শব্দই বা আসবে কোথা থেকে। এই ফ্লোরে এক মাত্র ওরা দুইজনই আছে। কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ শুনতে পেলো মুহিত। হুম,পা ফেলারই শব্দ হবে। এবার আর ভুল হতে পারে না। নিজের অজান্তেই হৃদপিণ্ডটা কেঁপে উঠলো। যদি ভূত হয়!!! ভয় পাচ্ছে সে। নিজেকে বিশ্বাস করিয়ে চলেছে কোন ভাবেই সে ভয় পায়নি।

নিজেকে শান্ত করে রুমের বাইরে বের হওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে মুহিত। কে এত রাতে তার রুমের সামনে দিয়ে পায়চারি করবে। একবার দুইবার না কয়েকবার শুনেছে সে পায়ের শব্দ। রাগ,ভয় আর অজানা কিছুর আগ্রহ সব মিলিয়ে নিজেকে কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছিল না সে। দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে এল সে। সাথে সাথে পা ফেলার আওয়াজটা মিলিয়ে যেতে শুনল সিড়ি ঘরের দিকটায়। অন্য ফ্লোরের কেউ হবে এই কথা ভেবে রুমে ঢুকল সে। এবার একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটলো। রুমের দরজা পার হতেই আবার পা ফেলার শব্দ। আগের থেকে আরও জোরে। যেন কানের ভেতরে এসে আঘাত করছে। আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো মুহিত। পা ফেলার শব্দটা তার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে কিন্তু কোন কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে। কোন কিছু না ভেবেই শব্দটার পিছে ধাওয়া করলো মুহিত। সে যত দ্রুত দৌড়াচ্ছে শব্দটা তত দ্রুত তার থেকে সরে যাচ্ছে। দক্ষিন ব্লক থেকে উত্তর ব্লক পৌঁছে গেল এক দৌড়ে। তারপরেও শব্দটাকে ধরতে পারছে না সে।

দক্ষিন ব্লকে এসে কিছুক্ষনের জন্য স্থির হয়ে দাঁড়ালো সে। আসলে শব্দটা কোন দিকে যাচ্ছে। সিড়ি ঘরের দিকে পা ফেলার শব্দটা এগিয়ে যাচ্ছে। এবার আস্তে আস্তে পা টিপে হাঁটা শুরু সিড়ি ঘরটার দিকে। সিড়ি ঘর পেরিয়ে শব্দটা তখন ফার্স্ট ফ্লোরে। মুহিত এগিয়ে যাচ্ছে পিছে পিছে। এক সময় ফার্স্ট ফ্লোরের দক্ষিন-পূর্বের ওয়াশ রুমটাতে ঢুকে পড়লো শব্দটা। মুহিতের এখন ভয় করছে। আসলেই সে ভয় পাচ্ছে। এতক্ষন পর বুঝতে পারলো সে। তবুও পা টিপে টিপে এগিয়ে চলল ওয়াশ রুমটার দিকে। বাইরে থেকে ট্যাঁপের পানি ছাড়ার শব্দ শুনতে পেলো। পা টিপে টিপে এগিয়ে দরজার পাশ দিয়ে উঁকি দিতেই বুঝতে পারলো ভেতরে কেউ নেই। পানি পড়ার সেই শব্দটাও মিলিয়ে গেলো সাথে সাথে।

পা ফেলার শব্দটা আবার শুনতে পেলো পেছন দিকে। তার থেকে সরে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। উত্তর ব্লকের ঐ দিকটায়। মুহিত আবারও ছুটে চলল পায়ের শব্দটাকে অনুকরণ করে। উত্তর ব্লকের ওয়াশ রুমটার ভেতর ঢুকে পড়লো আগের মতই। মুহিত তখন ওয়াশ রুমের সামনে। তবে এবার পানি পড়ার কোন শব্দ নয়। ভেতর থেকে একটা তীব্র উটকো গন্ধ আসছে আর গোঙরানির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যেন আস্তে আস্তে আরও তীব্র হচ্ছে শব্দটা। গোঙরানির শব্দটা এতটাই ভয়ংকর আর প্রকট যেন পুরো শরীর ভয়ে জমে যাচ্ছে। শরীরের রক্ত বেয়ে ঠাণ্ডা কিছু নেমে যাচ্ছে। পা কাঁপা শুরু করলো মুহিতের। হৃদপিণ্ডের গতি খুব দ্রুত বেড়ে চলেছে। যেন নিজের হার্ট বিটের শব্দ নিজেই শুনতে পাচ্ছে। তবুও ওয়াশ রুমের কাছে এগিয়ে গেল সে। এবারও উঁকি দিয়ে কিছু দেখতে পেল না। গোঙরানির শব্দটা তখনও আসছে ভেতরের কোন সেল থেকে। তীব্র গন্ধ প্রকট থেকে প্রকটতর। গোঙরানির শব্দ আরও জোরে। পায়ের শব্দটা এবার কমেনি বরং আগের থেকে বেড়েছে। যেন বিশালাকায় কোন মানুষ হেঁটে চলেছে। এবার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারলো না মুহিত। পা ফেলার শব্দটা তার দিকেই এগিয়ে আসছে। যে শব্দটাকে সে এতক্ষণ ধাওয়া করছিলো। ভয় এবার পুরো জেঁকে বসেলো। নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছিলো ওর। কেন যেন মনে হচ্ছিলো কাজটা খুব ভুল হয়েছে একা আসা ঠিক হয়নি। কোন কিছু না ভেবে দৌড়াতে শুরু করলো থার্ড ফ্লোরের দিকে। পা ফেলার শব্দটা তার পিছে আরও গতিতে এগিয়ে আসছে। দৌড়াতে পারছে না সে,যেন পেছন থেকে তাকে কেউ টেনে ধরেছে। গা তখন থর থর করে কাঁপছে। চোখে কিছু দেখতে পেলো না সিড়ি পার হয়ে আছড়ে পড়ে গেল বারান্দায়।

যখন জ্ঞান ফেরে তখন মুহিত নিজেকে বিছানায় দেখতে পেলো। পাশে শাহিন বসা। ল্যাপটপের স্ক্রিনে তখনো হরর মুভিটায় পজ দেয়া অংশ দেখতে পাচ্ছে। শাহিন জানতে চাইলো রাতে কি হয়েছিলো। তোকে বারান্দায় অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলাম। শাহিন ঘটনাটা শুনতে আগ্রহ সহকারে মুহিতের দিকে তাকালো। মুহিত নিজেও জানে ব্যাপারটা ব্যাখ্যাতীত। ওকে কেউ বিশ্বাস করবে না। উল্টো হাসির পাত্র হবে সবার কাছে। এড়িয়ে যাওয়ার ছলে বলল আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম কাল। তাই হয়তো। কি বুঝলো না বুঝলো কে জানে। শাহিন মুহিতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওষুধ কিনতে বাইরে বেরিয়ে গেলো। মুহিত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো বাইরের আলো ছায়ার খেলা দেখতে। বিশ্বাস আর অবিশ্বাস নিয়ে মাথা ঘামাতে ভালো লাগছে না ওর। ঠাণ্ডা একটা বাতাস ঘরময় ছড়িয়ে পড়লো। অজান্তেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেল সে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.