![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।
সকাল থেকেই আজকের আবহাওয়াটা অন্যরকম। অন্য সকল দিন থেকে আলাদা। মেঘ ঘিরে রেখছে চারপাশ। এখনি বৃষ্টি নামবে। কারো অনুমতির অপেক্ষায় যেন থমকে আছে।
ব্যস্ত একটা সড়ক দিয়ে দ্রুত হেটে চলেছি। অফিস টাইম,গাড়িগুলো রস্তার উপর যেন অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ আবার অনবরত হর্ন বাজিয়ে চলেছে। কোন লাভ নেই জেনেও। ছোট্ট ছেলে-মেয়ে উষ্কখুষ্ক চুলে,ছেড়া জামা প্যান্ট পড়া; হাতে গোলাপ,বেলী ফুলের মালা নিয়ে বেচা-কেনায় ব্যস্ত। কেউ কিনছে,কেউ কিনছে না আবার কেউ তাড়িয়ে দিচ্ছে।
-আমি ছোট্ট একটা ছেলেকে ডেকে বললাম,এই বেলী ফুলের মালাটার কত দাম রে?
-চল্লিশ টেকা। কয়ডা নিবেন?
-একটা দিলেই হবে।
-আইচ্ছা আপনার জইন্য একটা ভালো মালা বাইছা দেই।
সবগুলো মালা দেখতে একই রকম তারপরেও ছেলেটা ভালো মালা খুঁজে চলেছে। শেষে একটা মালা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,এইডা সব থেইকা ভালো। তারপর,টাকা নিয়ে এক দৌড়ে চকচকে একটা গাড়ির পাশে গিয়ে থামলো।
রাস্তাটি ধরে পাঁচ মিনিট মত হাটার পর বিশাল একটা প্রাইভেট হসপিটাল। হসপিটালের পাশ দিয়ে নেমে যেতেই একটা অল্প বিস্তৃত রাস্তায় এসে পড়লাম। রাস্তার পাশে পুরু লেন্সের চশমা পড়া একজন বৃদ্ধ লোক বসে আছেন। তিনি অপেক্ষায় আছেন। এই ভেবে যে,কারো স্যান্ডেল ছিঁড়লেই আমার কাছে আসতে হবে। সুপার শপগুলো এখনো ততটা ব্যস্ত হয়ে পারেনি। কিছুক্ষণ হেঁটে,সামনের মোড়টা পেরোলেই একটা পার্ক। আজ ঐখানেই অনামিকার সাথে দেখা করবো।
আজ সকালে হঠাৎ করেই অনামিকা ফোন করলো, “তোমার সাথে এখনই দেখা করতে চাই”।
আমি বললাম,ফোনে বলো। ‘ফোনে বলা যাবে না বলেই’ লাইনটা কেটে দিল। অনামিকার সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় দুই বছর। আমি যখন ইউনিভার্সিটিতে নতুন ভর্তি হয়েছি। অনামিকা নামের মেয়েটি সাথে আমার তখন থেকে পরিচয়। মেয়েটাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি,নিজের অজান্তেই। গত কয়েকদিন ধরে ওকে ফোন দিলে রিসিভ করে না। তাই সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়লাম দেখা করার জন্য।
পার্কের বেঞ্চিটাতে হেলান দিয়ে বসে আছি। কিন্তু মাথায় টেনশন কাজ করছে। টেনশন কাজ করলে হেলান দিয়ে বসা যায় না। আমি অনামিকাকে বারবার কল দিয়ে চলেছি। যদিও প্রত্যেকবারই ইউজার বিজি দেখাচ্ছে। এদিকে আকাশের অবস্থা আস্তে আস্তে আরও খারাপ হয়ে আসছে। বৃষ্টি নামলে তো ও রাস্তাতেই ভিজে যাবে। বৃষ্টি নিয়ে প্রত্যেক কবিরই কবিতা আছে। কিন্তু এখন কোনটাই মনে করতে পারছি না।
কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা এসে থামল। পার্কের গেটটিতে। দূর থেকেই বুঝলাম অনামিকা আসছে। কোন এক অস্বাভাবিক কারণে ওকে হাসলেও সুন্দর লাগে আবার রেগে থাকলেও সুন্দর লাগে। তবে আজ অনামিকাকে অন্যরকম লাগছে। বিষন্ন দেখাচ্ছে ওকে। চোখগুলো লাল হয়ে আছে। আর সব থেকে বড় কথা আজ একটুও সেজে আসেনি।
আমি অনামিকার দিকে এগিয়ে চললাম। দেখলাম ও আমার দিকে সোজাসুজি তাকাতে পারছে না। ওর সামনে গিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে তোমার। বলল, “তেমন কিছু না। তোমার সাথে আমার কথা আছে। চল ঐ বেঞ্চিটাতে গিয়ে বসি।”
আমি এগিয়ে চললাম বেঞ্চিটার দিকে। অনামিকা এখনো আমার দিকে তাকাচ্ছে না। নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। বেঞ্চিটাতে আমি আগে বসলাম তারপর ওকে বসতে বললাম। আজ আমার থেকে একটু দূরে সরে বসলো। আমি আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম। ওর হাতটা ধরে বললাম তোমার কি হয়েছে, আমার কাছে বল। এবার ওর দু-চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে বলল, “আমার সাথে তোমার আর কোন সম্পর্ক নেই। কাল আমার বিয়ে।”
যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। কিছুই বলতে পারছিলাম না যেন গলায় কিছু একটা আটকে গেছে। থমকে চেয়ে আছি অনামিকার নির্লিপ্ত মুখটার দিকে। অনামিকা এরকম কিছু বলবে আশা করা তো দূরের কথা সপ্নেও ভাবিনি কোনোদিন।
এবার অনামিকা বলতে শুরু করলো। অনর্গল বলতে লাগলো। আমি শুধু শুনছিলাম কথাগুলো যেন কাঁটার মত কানে বিঁধছিলো।
-তোমাকে আমি এখনো ভালোবাসি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা এখন অসম্ভব। যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে ইউ এস এ’তে থাকে। বাবা মার পছন্দে বিয়ে করছি। তোমাকে বিয়ে করা হয়তো হল না। আর সব থেকে বড় কথা তোমাকে বিয়ে করে আমি কি পাবো। হাতে লেখা কয়েকটা কবিতার কাগজ?? আর ছাপা না হওয়ায় দরুন ঘরের এক কোনে জমা হওয়া কাগজের স্তূপ। খিধেতে পেটের ভিতর খাঁ খাঁ করবে। আর তুমি পাঞ্জাবী পড়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে। আর আমি কল্পনার জগতে বসে শুধু স্বপ্ন বুনবো। পারবো না আমি,থাকতে পারবো না তোমার সাথে। তুমি আমার সাথে আর কোনদিনও যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। কোনদিনও না।
আমি কিছুই বলতে পারছি না। আজ অনামিকা আমার কথা শুনবে না,আমি জানি। আজ ও কিছু শুনতে আসেনি বলতে এসেছে।
আমার হাতটা ছাড়িয়ে অনামিকা হাঁটতে শুরু করলো। একবারও আমার দিকে ফিরে তাকালো না। আজ ওর হাটাটাও যেন আমাকে পরিহাস করছে। পার্কের গেট না পেড়োতেই বৃষ্টি শুরু হল। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি আসলো। অনামিকা একটা রিকশায় উঠলো। বৃষ্টির ঝাপসা রঙের সাথে এক সময় মিলিয়ে গেলো।
বেলী ফুলের মালা তখনও আমার পাঞ্জাবির পকেটে। আমি মালাটা পকেট থেকে বের করে মাটিতে ফেলে দিলাম। ফুলের শুভ্র পাতাগুলো বৃষ্টি পড়ার ছাঁটে ছিঁড়ে যেতে লাগলো। আলুথালু হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলো। বাম পকেটে অনামিকাকে নিয়ে লেখা কবিতাটা ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। যেন সেই উষ্ণতা আর নেই। কবিতাটা আমি ফেলবো না। এটা শুধুই আমার আর কারো নয়। অনামিকারও নয়।
বৃষ্টির পানি মাথা গড়িয়ে মুখে পড়ছে। পানির নোনতা স্বাদ অনুভব করলাম ঠোঁটে।
পার্কের মাঝে আমি এখনো দাঁড়িয়ে। বৃষ্টি আরও জোরে পড়ছে। মনে হচ্ছে যেন শুধু আমি দাঁড়িয়ে আছি,আমার আশে পাশে আর কিচ্ছু নেই। বৃষ্টির দিকে আমি আমার মুখটা বাড়িয়ে দিলাম। সব দুঃখ কষ্ট ধুয়ে যাক,সব।
-সমাপ্ত-
০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:০০
নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: হুম। অবশ্যই। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। আপনাকেও ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৩
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: গল্পটাতে আপতত চোখ বুলিয়ে গেলাম। প্রচ্ছদ আর শিরোনামটা বেশ ভালো লেগেছে। একটু ফ্রি হয়ে এসে আবারও পূর্নাঙ্গ মন্তব্য করব।

ভালো থাকবেন, শুভেচ্ছা রইল।