নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি আমার দেশকে..আমার ভাষাকে

নাজমুল_হাসান_সোহাগ

আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।

নাজমুল_হাসান_সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন বৃষ্টিতে (ছোটগল্প)

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৭

টানা সাতদিন ক্লাসে যাওয়া হয়নি। আজ ক্লাস টেস্টে এটেণ্ড না করলে পরীক্ষায় পাস নিয়ে টানাটানি। হুড়মুড় করে ঘুম থেকে উঠলো রুপম। দ্রুত রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। বাইরে বের হতেই বৃষ্টি দেবতা মেঘ দিয়ে ঘেরাও করলো তাকে। দ্রুত রেডি হওয়ার সময় ওর মাথায়ই ছিলনা যে এখন বর্ষাকাল। এত ফিটফাট হয়ে বের হওয়া মোটেও ঠিক হয়নি। আর একটা কারণে নিজের উপর রাগ হচ্ছিলো তার। ছাতা নেই সাথে।



হরটন স্ট্রীটে হাঁটু পানি। নির্দ্বিধায় নৌকা চালানো যাবে এই বিটুমিন বেডের এই নদীতে। দুই একটা কুমীর-ডলফিন দেখলেও বিস্ময়য়ের কিছু নাই। এমনিতে সময় নেই তারপর গাড়ির সঙ্কট। অবশ্য গাড়ির সঙ্কট হওয়ারই কথা। হরটন স্ট্রীটের এই অবস্থা তাহলে সূর্যসেন স্ট্রীট,সল্টলেক স্ট্রীট’এর কি অবস্থা!! গাড়ি আসবেই বা কিভাবে।



রিকশা নিয়ে কোনরকম ইউনিভার্সিটি গেট পর্যন্ত যাওয়া গেল। তারপর রিকশাওয়ালা যেতে রাজি নয়। রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে সামনে এগোতেই বৃষ্টি দেবতা তার কর্ম সাধনে নেমে পড়লেন। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে চারিদিক ঝাপসা হয়ে এলো। কোন কূল কিনারা না পেয়ে ভার্সিটি গেটের বাস স্টপেজে আশ্রয় এর উদ্দেশ্যে ভোঁ দৌড় শুরু করলো রুপম। নিজেকে ব্যাল্যান্স না করতে পেরে ধাক্কা দিয়ে বসলো স্টপেজের ভেতর পেছন ফিরে দাঁড়ানো একটি শরীরকে। শরীরটা যে একটা মেয়ের তা ফিরে তাকাতেই বুঝতে পারা গেল। ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি মেয়েটি। তাকে সরি বলে কোনরকম বোঝাতে চেষ্টা করলো রুপম।



স্টপেজের এক কোণায় দাড়িয়ে রেদওয়ান। রুপম উচ্চস্বর নাম ধরে ডাকতেই পেছেনে পিছে ফিরে তাকালো রেদওয়ান। কাছে এসে হাত মিলিয়ে জিগ্যেস করলো ‘তো রুপু বাবাজী কোথা থেকে উদয় হলেন এই এতদিন পর???’

-এতদিন আর কই। মাত্র তো সাতদিন।

-হুম সাতদিনই হল। তো কোথায় ছিলেন এই সাতদিন?

-বাড়িতে গিয়েছিলাম একটা জরুরী কাজে। ক্লাস মিস দিতেই হল উপায় ছিলনা।

-এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন। ক্লাস টেস্ট দিবিনা?? এখনই তো ঘণ্টা পড়বে।

আমি এতক্ষণ ক্লাসেই ছিলাম। স্যারকে ফোন দিয়েছিলাম। আজকে নাকি স্যার আসতে পারবেন না। ক্লাস টেস্ট পরশু নিবেন বললেন। কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে দৌড় দিলো রেদওয়ান। তুই থাক,আমি যাই। আমার বাস আসছে।

যাক বাঁচা গেল। পরশু ক্লাস টেস্ট হলে অন্তত একটু পড়াশুনা করে অ্যাটেণ্ড করা যাবে। নিজেকে চাপ মুক্ত মনে হল।



বৃষ্টির সেই জো নেই। বাস স্টপেজ ভীড় কমেছে। দূরে মেয়েটাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কাছে এগিয়ে গেল রুপম। শুধু সরি বলে পার পেয়ে যাওয়া মোটেই ঠিক হচ্ছেনা।



আপনার লাগেনিতো। আমি আসলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। স্টপেজের সামনের জায়গাটা অনেক পিচ্ছিলতো তাই। অন্যদিকে তাকিয়ে থাকলেও কথাগুলো শুনলো মেয়েটি। এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো রুপমের দিকে। সাজানো গোছানো একটা চেহারা মেয়েটার। কাঁধে ব্যাগ। চুলগুলো সযত্নে বাঁধা। চোখে কাজল। বৃষ্টির দিনে কেউ কাজল পরেনা। কিন্তু কেউ পরেনা দেখে এতদিন একটা সৌন্দর্য অদেখা ছিলো। সব কিছু একপাশে রেখে চোখদুটো মনে রাখার মতন। অন্যরকম।



ইটস ওকে। প্রথমে আপনার উপর অনেক রাগ হচ্ছিলো এখন অবশ্য ঠিক ঠাক। কথাগুলো বলে রাস্তার দিকে ফিরে তাকালো মেয়েটি।



আচ্ছা আপনার নামটাই তো জানা হলনা। জিগ্যেস করে বসলো রুপম। মেয়েটা আবার ফিরে তাকালো। বিরক্ত হচ্ছেনা আবার স্বাভাবিক ভাবেও নিচ্ছেনা,চোখে মুখে এক অন্যরকম অভিব্যক্তি।

-আমার নাম লতা। আপনার নামটা??

-অনিমেষের লতা নাকি। আগে পিছে কিছু নেই?? আমি রুপম।

-নাহ। আমি মাধবীলতা নই। শুধুই লতা।

উত্তর শুনে রুপম হাসলো। লতা নামের মেয়েটিও স্মিত হাসলো।

‘আপনি নিশ্চয় আমাদের ক্যাম্পাসের। কোন ডিপার্টমেন্ট। মানে আগে দেখিনিতো তাই।’ রুপম জিগ্যেস করলো।

-হুম। ঠিকই ধরেছেন। আমি দর্শনে। সেকেন্ড ইয়ার। আপনি??

-আমি কম্পিউটার সায়েন্সে। থার্ড ইয়ার।

-বাহ পড়ছেন ইঞ্জিনিয়ারিং সমরেশ কেও দেখছি ছাড়েননি।

সব জিনিস কি আর ছাড়তে আছে। আমি বই পড়তে ভালোবাসি। যাহোক,আপনি এখানে দাড়িয়ে কেন। আপনার বাস আসার কথা আছে নাকি? জানার আগ্রহ দেখালো রুপম।

বাস তো অনেক আগেই আসার কথা ছিলো। কিন্তু কোন রিকশাও পাচ্ছিনা। কিভাবে যে বাড়িতে যাই। লতা গুছিয়ে কথাগুলো বললো।



যেহেতু বাস এখনো আসেনি হেঁটে যাওয়াই উত্তম। রিকশা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই এখানে। হরটন স্ট্রীট প্লাবিত। রিকশা এদিকে ঢুকছেই না। যাহোক আপনি কোনদিকে যাবেন? আমি শাঁখারি বাজার থাকি। হরটন স্ট্রীট পেরিয়ে ইকবাল রোড দিয়ে কিছুদূর এগিয়ে দুটো মোড় পেরোলেই আমাদের বাসা। লতা রুপমের কথাগুলো শুনছিলো।



এমনভাবে ঠিকানা বলছেন যেন আমাকে আপনার বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছেন!!! কথাটা বলে রুপমের দিকে তাকালো লতা। রুপম কথা না বাড়িয়ে বললো,আপনার সাথে ছাতা আছে?? আছে বলে ব্যাগ খুলে ছাতা বের করলো লতা।

তাহলে চলুন হণ্টনে নেমে পড়ি। দাড়িয়ে থেকে কি লাভ।

-আপনার বাসা কোথায় তা তো জানা হলনা।

-আমার বাসা ইসলামপুরে।

ইসলামপুর। যাক ভালোই হল। রানী বাজার থেকে কাছেই ইসালামপুর। রানী বাজার দিয়ে একটা রাস্তা শাঁখারি বাজার গিয়ে পড়েছে। একটু ঘুর হলেও আমি ঐ রাস্তা দিয়ে যেতে পারবো। আর হরটন স্ট্রীটের যে অবস্থা তাতে অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।



ঝিরি-ঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। একই ছাতার নিচে দু’জন। প্যান্ট জামা যে ভিজে একাকার খেয়ালই নেই রুপমের। হাতের রোলেক্সটা তার অনেক পছন্দের। মামা বাইরে থেকে পাঠিয়েছে। ঘড়িটা খুলে রাখার জায়গা না পেয়ে লতার দিকে এগিয়ে দিলো রুপম। ‘ভিজে যাচ্ছে। আপনার ব্যাগটাতে একটু রাখবেন প্লিজ।’ ঘড়িটা ব্যাগের ভেতর রেখে হেঁটে চললো দুজনে।



বিশ্ববিদ্যালয় রোডের শেষ মাথায় আর রাস্তা দেখা যাচ্ছেনা। পানিতে টুইটুম্বর অবস্থা। কোন রকম হরটন স্ট্রীটটা পার হলেই রিকশা পাওয়া যাবে।

রাস্তার এপাড়ে রিকশা পাওয়া যাচ্ছেনা। একজন রিকশাওয়ালাকে অনেক অনুরোধের পর তিনি রাজি হলেন। তবুও বেশিদূর যাবেন না। রাস্তার ওপাশে নামিয়ে দিয়ে তিনি বিদায় নিবেন। বাধ্য হয়ে রিকশায় উঠলো লতা। রুপম বললো,আপনি রাস্তা পার হয়ে গেলে আমি পরের বার যাবো। আরে ভয় পাচ্ছেন কেন। আমিও বাঘ ভাল্লুক নই। বলে লতা রিকশাতে উঠতে বললো রুপমকে।



ভাড়া মিটিয়ে লতার দিকে তাকালো রুপম। আপনি রিকশা নিয়ে যেতে পারেন এখান থেকেই। লতা বললো,রানী বাজার এখান থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। চলুন না হেঁটে যায়। রুপম সম্মতি জানিয়ে বললো,চলুন তাহলে।



দেখতে দেখতে পাঁচ মিনিট হাওয়া। রানী বাজারে গিয়ে ইসলামপুরের রিকশা পেতে মোটেই বেগ পেতে হলনা। লতা রিকশায় উঠে বিদায় জানালো রুপমকে। বললো, দেখা হবে আবার। রুপমও রিকশা পেয়ে গেল। রিকশায় দুইজন দুই দিকে চলতে শুরু করলো। কেমন জানি একটা অপূর্ণতা ভর করলো রুপমের উপর। ইস,রানীবাজারটা আরেকটু দূরে হলেই পারতো।



রিকশা তখন ইসলামপুর। লতার বাসার সামনে। ব্যাগ খুলে ভাড়াটা দিতে রুপমের হাতঘড়িটা চোখে পড়লো লতার। ধুর,ঘড়িটা দিতে ভুলে গেলাম!!! প্রথমে খারাপ লাগছিলো তার। পরক্ষনেই মনে হল...থাক। হয়তো যা হওয়ার ভালোর জন্যই হয়...

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫৮

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: চমৎকার একটি বৃষ্টি দিনের গল্প।


ঘড়িটা খুলে রাখার জায়গা না পেয়ে লতার দিকে এগিয়ে দিলো রেদওয়ান।

এই জায়গায় ঘড়িটা রুপমের হবার কথা ছিল আপনি ভুলে রেদওয়ান লিখে ফেলেছেন। এডিট করে নিবেন দয়াকরে।

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৯

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। এখনই এডিট করে নিচ্ছি।

শুভ কামনা রইলো।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:০০

নীল-দর্পণ বলেছেন: বাহ! ভাল লাগল অনেক :)

১৬ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৫

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। শুভ কামনা রইলো।

অনেকদিন পর আপনার দেখা পেলাম :) :)
ভালো আছেন নিশ্চয়!!

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:০২

নীল-দর্পণ বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি :)
আপনিও ভাল আছেন নিশ্চই :)

২১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: আমি ভালো আছি। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.