নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি আমার দেশকে..আমার ভাষাকে

নাজমুল_হাসান_সোহাগ

আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।

নাজমুল_হাসান_সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিলেকোঠার সেপাই-আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (বুক রিভিউ)

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:৫০

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম ১৯৪৩ সালে, গাইবান্ধা জেলায়। পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলা। তিনি ১৯৫৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় অনার্স মাস্টার্স।

আখতারুজ্জামান ভিন্ন ধারায় হেঁটেছেন। তার লেখার ধরন থেকেই তা স্পষ্ট হয়। কল্পনার ইন্দ্রজাল আর ক্ষুরধার, মেদহীন লেখা তাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। মাত্র দুইটা উপন্যাস, ২৮ টি ছোটগল্প আর একটি প্রবন্ধ লিখেছেন সারাজীবনে। আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল শ্রদ্ধেয় এই লেখক থেকে। তবে হ্যা যা লিখেছেন তার তুলনা খুঁজে পাওয়া আসলেই দুষ্কর।

আমার মনে হয় অন্যান্য যে কোন উপন্যাস থেকে রাজনৈতিক উপন্যাস লেখা অনেক কঠিন। রাজনৈতিক গল্প যদি বাস্তবতার সাথে মিল না থাকে তাহলে যেমন সমালোচনার খোরাক যোগায় তেমনি কাল্পনিক হলে তা হারায় পাঠাকের আগ্রহ। আখতারুজ্জামান তার লেখাতে বিপ্লব স্যুট-টাই পড়া রুমে বসে তত্ত্ব দেয়া বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে করান নি। বস্তির শ্রমিক আর গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষেরাই তার বিপ্লবের নায়ক।

সমরেশের কালবেলা পড়ে রাজনৈতিক উপন্যাসের হাতে খড়ি। হুমায়ূন আহমেদের দেয়াল আর তারপর শুরু করলাম আখতারুজ্জানের চিলেকোঠার সেপাই। আমি তুলনা করছিনা কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তবে হ্যাঁ এটা আমারই দুর্ভাগ্য যে চিলেকোঠার উপন্যাসটা অনেক দেরীতে পড়লাম।

এবার বই সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাকঃ

ষাট সালের দিকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও আন্দোলন সাক্ষী চিলেকোঠার সেপাই। প্লট মূলত উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান। গল্পের প্রধান চরিত্র রঞ্জু ওরফে ওসমান, ওসমানের বন্ধু আনোয়ার আর আলতাফ। আছে রিকশা শ্রমিক বস্তি বাসিন্দা খিজির। আনোয়ার বামপন্থী আর আলতাফ ডানপন্থী। আনোয়ার আর আলতাফের কথোপকথনের মাধ্যমে লেখক অনেক জটিল রাজনৈতিক জটিলতাকে মুক্তি দিতে চেয়েছেন। গল্পের ফোকাস কখনো ছিল হাড্ডি খিজিরের উপর, কখনো বা আনোয়ারের উপর। তবে পুরো গল্পে অস্তিত্ব ছিল ওসমানের।

ঢাকার এক ঘিন্জি গলির মধ্যে বাস ওসমানের। সে এক অফিসের জুনিয়র কর্মকর্তা। তার বন্ধু আলতাফ, আনোয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে কিন্তু ওসমান কোনকিছুতেই নেই। সে যেন চিলেকোঠাতে বন্দী। লেখক ওসমান চরিত্রটিকে রহস্যময় করে তৈরি করেছেন।

ওসমান যে বাসায় ভাড়া থাকে সেটা আবার আইয়ুবপ্রেমী মহাজন রহমতউল্লাহর। খিজির ছোটবেলা থেকে রহমতউল্লাহ্‌র খেয়ে দেয়ে মানুষ। শ্রমিক হিসেবে থাকে তার গ্যারাজে। কিন্তু এই খিজিরই একসময় হয়ে ওঠে বিপ্লবী। বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের সাথে সাথে খিজির তার মহাজন রহমতউল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। সৈনিকের গুলিতে মৃত্যু হয় খিজিরের।

আনোয়ার কলেজের শিক্ষক। ঢাকার উত্তাল আন্দোলন ছেড়ে সে চলে যায় গ্রামে। শ্রেণী বৈষম্য ভাঙতে সে বদ্ধ পরিকর। আফসার গাজী, খয়বার গাজী, হোসেন আলী নামক শোষক মহাজনদের হাতে জিম্মি খেঁটে খাওয়া যমুনা পাড়ের সাধারণ মানুষদেরকে মুক্তি দেয়া তার প্রধান উদ্দেশ্য। খয়বার গাজী, আফসার গাজী লতায় পাতায় আনোয়ারের আত্মীয় হলেও সে তাদেরকে ক্ষমা করতে রাজি নয়। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনা। শহরের রাজনৈতিক হাওয়া গ্রামে লাগলে উল্টে যায় সবকিছু। যেই মাহজনদেরকে গ্রামের মানুষ শাস্তি দিতে চেয়েছিলো, আলী বক্স আর আনোয়ারদের দাপটে মাহজনের অবস্থা যখন নড়বড় তখন সেই মহাজনেরাই নতুন রাজনৈতিক হাওয়ায় ফিরে আসে আগের অবস্থানে। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না।

ওসমান কোন আন্দোলনে তেমন নেই কিন্তু সে দিন-রাত্রি স্বাধীনতা আর মুক্তি নিয়ে ভাবে। আন্দোলনে রাস্তায় বের হওয়া মানুষ দেখলে সে যেন ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। যেমন......

ওসমান ভাবতে থাকে......
বাংলা বাজার , তাঁতি বাজারের মানুষ লুপ্ত-খালের হিম হৃদপিণ্ড থেকে উঠে এসেছে?? ঐ তো ইব্রাহীম খাঁর আমলে শাহজাদা খসরুর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত পাগড়ি পড়া সেপাইরা। শায়েস্তা খাঁর টাকায় আট মণ চালের আমলে না খেয়ে মরা মানুষ দেখে ওসমান আঁতকে ওঠে। ৩০০ বছর ধরে তাদের খাওয়া নাই, - কেউ চুলের তরঙ্গ উরিয়ে তারা এগিয়ে চলে পায়ে পায়ে।
মোগলের হাতে মার খাওয়া, মগের হাতে মার খাওয়া, কোম্পানির বেনেদের হাতে মার খাওয়া- সব মানুষ না এলে মিছিল কি এত বড় হয়??


উনসত্তর যে স্বাধীনতা আন্দোলনকে চূড়ান্ত রুপ দেয় আর এই উনসত্তরই যে হাজার বছরের বাংলার শোষণ থেকে মুক্তির সুরহা দিয়েছে লেখক ওসমানের চিন্তার মাধ্যমে তা দেখিয়েছেন।

ওসমানের বাবার বাড়ি ইন্ডিয়া। কিন্তু ওসমান কোন মতেই এদেশ ছেড়ে যেতে রাজি নয়। সে একা থাকে এখানে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থেকেই সে বলে ফেলে...

যতই ইন্ডিয়া নিয়ে যাক, ঐ খাটো-ধুতি খালি গা, খালি পা হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সাধ্য কি ওদের দুই ভাইবোনকে এই পাড়া থেকে শেকড় শুদ্ধ উপড়ে ফেলে?? ওসমান ঐ তো দেখতে পাচ্ছে, অপরিবর্তিত শাঁখারি পট্টির কলের ধারে ধারে কলসি, বালতি ও হাঁড়ির সারি।

একসময় শিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত হয় ওসমান। স্বাধীনতার নেশা’ই হয়তো তাকে পাগল করে ফেলে।

পরিশেষে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অনেক আধুনিক একজন মানুষ ছিলেন। বাংলার গণঅভ্যুত্থানকে যারা গল্পের মাধ্যমে জানতে চান তারা পড়ে দেখতে পারেন চিলেকোঠার সেপাই। লেখক হয়তো স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানকে গুরুত্বের সাথে দেখেছেন।



সমাপ্ত।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:০২

প্রামানিক বলেছেন: আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের জন্ম ১৯৪৩ সালে, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার গটিয়া গ্রামে নানার বাড়িতে।
পোষ্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩২

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: হ্যাঁ। মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৯

কোলড বলেছেন: This is my most fave novel from Bangladesh. Kalbela was too long..Deal is just dialogue without any strong structure but this classic from Ilias makes you think.

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩৯

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: The Feeling is Same Here. When I Was Reading This Book, I Was Just Amazed With His Writting. It Will be My Favourite Book Forever. Thnak You For Your Comment.

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০

বোকামানুষ বলেছেন: পড়া হয়নি এখনো তবে পড়ার লিস্টে আছে

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০৬

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: পড়ে দেখবেন। আশা করি ভালো লাগবে। অনেক ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:০৩

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০৭

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: ধন্যবাদ #সেলিম আনোয়ার ভাই।

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:২২

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: দারুন রিভিউ। আমার অন্যতম প্রিয় উপন্যাস। কলেজে থাকতে পড়েছিলাম।

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৭

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। বইটি আমারও প্রিয়তে।

৬| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:২৪

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: দুইটা উপন্যাস হয়তো ২টা কিন্তু এই দুটি অনেক উপন্যাস অনেক ঔপন্যাসিকের ৫/৭ টা উপন্যাসের সমান

১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৯

নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: নিঃসন্দেহে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.