![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি রুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি(১০'সিরিজ) ডিপার্টমেণ্টে পড়ালেখা করছি। সুযোগ পেলেই লেখালেখিতে বসে যাই। আমার লেখালেখির সব থেকে পছন্দের বিষয় হল ছোটগল্প ।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। আরও ভালো লাগে নতুন বন্ধু তৈরি করতে।
বিনয় মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম যাযাবর। তার লেখা দৃষ্টিপাতের প্রকাশকাল ১৯৪৭।
বইটিতে নির্দিষ্ট কোন গল্প নেই। লেখক ইচ্ছাকৃতই হয়তো কাজটি করেছেন। গল্প না থাকার আড়ালে অনেক গল্প বলে গিয়েছেন। দিল্লীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে খুঁজে বের করেছেন বিস্ময়ে চক্ষু বিস্ফোরিত হওয়ার মতন সব তথ্য, গল্প। বর্ণনার চমৎকারিত্বে, গভীর রসবোধে পুরো বই একেবারে ঠাসা।
বইটির মুখবন্ধে লেখক বলেন, ক্রিপস মিশন সম্পর্কে লেখার জন্য বিলেত ফেরত এক বাঙালী যুবক বিদেশী পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা হিসেবে দিল্লীতে যায়। সেখান থেকে তার বান্ধবীকে যে চিঠিগুলি সে লেখে - রচনাগুলি সেখান থেকেই সংকলিত।
এক কথায় বইটিকে দিল্লির ডায়েরি বললেও ভুল হবেনা। দিল্লীর রাস্তায় অলিতে গলিতে যেখানে কিছুর দেখা পেয়েছেন সেটারই যেন পূর্ণ ইতিহাস তার মুখস্ত। মোঘল ইতিহাসের রোমাঞ্চকর ঘটনা গল্পের মধ্যদিয়ে পাঠককে বলেছেন। এমন কখনোই মনে হয়নি যে তথ্যের ভারে বইটি কারো পড়তে অনীহা জাগতে পারে।
কথাগুলো যেন অতীব সত্য। গল্পের মাঝে মাঝে এমন কিছু লাইন আছে যা পাঠকের মন কাড়বে।
"দূরকে নিকট এবং দুর্গমক্র সহজাধিগম্য করেছে যে বিজ্ঞান, তার জয় হোক। এতে উত্তেজনা আছে কিন্তু উপভোগ নেই"।
"বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ"।
যাযাবরের মতন ঘুরতে ঘুরতে লেখক ফিরে আসেন ভারতবর্ষের মোঘল, কখনো বা রাজা বাদশাহদের গল্পে। সেখান থেকে ইংরেজ। আবার সেই ইংরেজদের সাথে মিল খুঁজে পেলেন ইসরায়েলের। গল্প পড়লে যে কেউ চমকিত হবে। এত ভালো উপমা আর তার সাথে বাস্তব তথ্যের সমাহার!
সাংঘাতিকভাবে দগ্ধ হলেন জাহানারা। বিচলিত সাহাজাহান এত্তালা দিলেন এক সাহেব চিকিৎসককে। গ্যাব্রিয়েল বাউটন। সুরাটে ইংরেজ কুঠির ডাক্তার। বাউটন বললেন ওষুধ দেয়ার আগে রোগিণীকে দেখা চাই। তাই শেষ পর্যন্ত পিতৃস্নেহের কাছে হার মানলো সামাজিক প্রথা। সাহজাহান সম্মত হলেন বাউটনের প্রস্তাবে। আরোগ্য লাভ করলেন জাহানারা। সম্রাট বাউটনকে বললেন যা সে চায় তাইই সে দিতে রাজি।
আভূমিনত কুর্ণিশ করে বাউটন বললেন, নিজের জন্য কিছু চাইনে। কলকাতার একশ চল্লিশ আমিল দক্ষিণে বালাশোরে ইংরেজের কুঠি নির্মাণের জন্য প্রার্থনা করি এক টুকরো ভূমিখণ্ড। ইংরেজকে দান করুন এদেশে বিনা শুল্কে বাণিজ্যের অধিকার। বাউটনের প্রার্থনা মঞ্জুর হল। স্বজাতিহিতৈষণার এতবড় দৃষ্টান্ত আর একটিমাত্র আছে আধুনিককালে। সেটি ইহুদী অধ্যাপক ডক্টর ভাইজমানের।
উনিশ শ ষোল সালে প্রথম মহাযুদ্ধের সংকটজন কাল, ইংল্যান্ডে বিস্ফোরক উৎপাদনের অপরিহার্য উপাদান অ্যাসিটোনের অভাব, তখন কৃত্রিম অ্যাসিটোন উৎপাদনের ভার নিলেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক। প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ বললেন, প্রফেসর, সমগ্র ব্রিটেনের ভাগ্য নির্ভর করছে তোমার সফলতার উপর। আমি চাই তাড়াতাড়ি কাজ, তাড়াতাড়ি জয়লাভ।
অধ্যাপক বললেন তথাস্ত।
দিবারাত্রি পরিশ্রম করে আবিষ্কার করলেন কৃত্রিম অ্যাসিটোন। পরাজয়ের হাত থেকে ব্রিটেনকে রক্ষা করলেন বিজ্ঞানী অধ্যাপক ভাইজমান।
লয়েড ডেকে তাকে দিতে চাইলেন সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কার।
অধ্যাপক ভাইজমান সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন তা। তিনি চাইলেন, একটি মাত্র আজ্ঞা আছে আমার। আমার স্বজাতির জন্য চাই একটি নির্দিষ্ট দেশ, ইহুদীদের ন্যাশনাল হোম।
বাংলা যে ভারতবর্ষে কখনোই অন্যায় শাসন মেনে নেয়নি তার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে লেখকের লেখার পরতে পরতে। মাস্টার দা সূর্য সেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তো বাঙ্গালীই। সিপাই বিদ্রোহের শুরু এই বাংলাতেই। ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ, পুরো ভারতবর্ষ খুঁজে পাওয়া যাবেনা এমন নজির। তাইতো বাঙালিরাই ছিল ইংরেজদের হাতে সব থেকে নির্যাতিত।
একমাত্র বাংলা ছাড়া ভারতবর্ষের কোথায় স্কুলের ছেলে বরণ করেছে ফাঁসি, মেয়েরা ছুঁড়েছে পিস্তল, পলিতকেশ অন্তঃপুরিকা বুক এগিয়ে নিয়েছে গুলীর আঘাত??
ভারতীয় সেনা বিভাগে বাঙ্গালীরাই সব থেকে বেশি অবাঞ্চিত। আর্মির মনুসংহিতায় তারা হরিজন। আশ্চর্য নয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথমাংশ থেকে করে তারাই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতিবাদ করেছে অবিরত, সংগ্রাম করে আসছে অমিত তেজে। ভারতের আধুনিক জাতীয় জাগরণের উন্মেষ ঘটেছে এইখানে। এদের প্রভাব ক্ষুণ্ণ করতে কার্জন করেছে বঙ্গ-ভঙ্গ, হার্ডিঞ্জ স্থানান্তরিত করেছে রাজধানী, ম্যাকডোনাল্ড কায়েম করেছেন কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড। সর্বনাশ এদের সেনাদলে নিলে রক্ষা আছে?? এইখানে স্মরণ করা অপ্রাসঙ্গিক নয় যে, সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম লক্ষণও প্রকাশ পেয়েছিলো বাংলাদেশেরই ছাউনিতে। ব্যারাকপুরে।
দৃষ্টিপাতের বিভিন্ন কাহিনীর মধ্যে যেটি মধ্যে যেটি মনে সবচেয়ে দাগ কাটে সেটি হল একটি মারাঠি যুবক আধারকারের সঙ্গে এক বিবাহিতা বাঙালিনী সুনন্দার প্রেমকাহিনী। সুনন্দাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে আধারকার বাঙলা শিখলেন, রবীন্দ্রনাথ পড়লেন। সুনন্দাও অকুণ্ঠ চিত্তে আধারকারকে দিলেন তাঁর হৃদয়। কিন্তু তার শেষ রক্ষা হয় না।
সমাপ্ত
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৭
নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
বইটির ডাউনলোড লিঙ্কঃ Click This Link
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১১
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হাতের কাছেই আছে বইটা| একটা বই পড়ছি, ওয়ালিউল্লাহর চাঁদের অমাবস্যা| এটা পড়েই দৃষ্টিপাত শুরু করবো| শুভকামনা
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৩
নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: পড়বেন নিশ্চয়। ভালো লাগবে।
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৪
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: কত সামান্যতেই কত কিছু হতে পারে| ইসরায়েল হয়ে গেল পৃথিবীর ফোঁড়া আর ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসন শোষণ করল ২০০ বছর!
৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
অসাধারণ রিভিউ।
কিন্তু বইটি পড়া হয়নি।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৪
নাজমুল_হাসান_সোহাগ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। পড়তে পারেন। আমার কাছে অসাধারণ লেগেছে বইটি।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৪
এই আমি সেই আমি বলেছেন: ভাই বইটির অন লাইনে পড়ার কোন লিংক দিতে পারবেন ।