নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ক্ষুদ্র ব্লগার একজন আগাগোড়া স্বাধীনচেতা বাংলাদেশী। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনপ্রকার আপোষ করে না। ধন্যবাদ

নাহিদ ২০১৯

নিজের সম্পর্কে লিখতে লজ্জা পাই,কারন নিজেকে নিয়ে বিশেষভাবে যে কি লিখবো তাই খুঁজে পাই ন।তবে হ্যাঁ আমি একজন মানুষ, রোবট নই এটুকু বলতে পারি।

নাহিদ ২০১৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গনি মিয়া খাস লোক

২৭ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৪৫



বুঝলে গনি মিয়া জীবনে টিইকে থাকতে হলে তোমাকে মাঝে মাঝে নিষ্ঠুর হইতে হবে।
:- জ্বি চাচা সত্য বলছেন।
: কিছুই বুঝ নাই।খালি পারো হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলাইতে।
রাব্বানী পাঠান বোতল থেকে গ্লাসের অর্ধেক অব্দি মদ ঢেলে আবার শুরু করার জন্যে তৈরী হচ্ছেন।
: নিবা নাকি আরেকটু ?
:- না চাচা,আমি অত পাকা না।আপনে চালাইয়া যান।
: হ্যাঁ যেটা বলতেছিলাম,জীবনে মাঝে মাঝে নিজেরে কঠিন করতে হয়।নিজে কঠিন না হইলে আশেপাশের শিয়াল-কুত্তার খাবার হইয়া যাইবা।শফিকের কথা মনে আছে?
:- হ চাচা,আপনের এক নাম্বার খাস লোক।
: ছিল।এখন তুমি।তুমি লোক ভালা।তোমারে পছন্দ হইছে।
:- সবই আপনার দয়া চাচা।চাচা শফিকের সাথে আপনের ঝামেলাটা কি ছিল ?
নেশার ঘোরে একটু থমকে গিয়ে মনে করার চেষ্টা করে রাব্বানী পাঠান।
:আসলামের সাথে নাকি হাত মিলাইছিল।ব্যাটা বজ্জাত,আমার খাইয়া আমার বিরুদ্ধে লাগে।দিছি অস্ত্র মামলায় ফাঁসাইয়া।মর শালার পুত এইবার।

জমিলা বেগম পানের বাটা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো। রাব্বানী পাঠানের স্ত্রী জমিলা বেগম,এইবার ৩০ এ পা দিল কিন্তু দেখলে মনে হয় না এই মহিলা দুই সন্তানের জননী। সারাদিন পান খাওয়ার উপর থাকেন কেবল এটাই একটা বদ অভ্যাস।

: কি গনি মিয়া কখন আসলা ?আজকাল তো তোমারে দেখাই যায় না।
:- চাচী, নির্বাচন নিয়া খুবই ব্যস্ত।আসলাম শেখ এইবার কঠিন ফাইট দিতেছে চাচারে।
:অত রাজনীতি আমি বুঝি না।যত কিছুই করুক জিতবো তোমার চাচাই দেইখা নিও।
:- ইনশাআল্লাহ চাচী দোয়া রাইখেন।
রাব্বানী পাঠান এর মাঝে আরও কয়েক গ্লাস মদ পেটে চালান করে ঢুলু ঢুকু চোখে জমিলা বেগমের দিকে তাকায় "জমিলা আই লাভ ইউ,আই লাভ ইউ জমিলা"
গনি মিয়া মুখ চেপে হাসি থামিয়ে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
:- তুমি এইবার যাও তাহলে।তোমার চাচার মাতলামি বেড়ে গেছে।
: হ চাচী,আজকে একটু বেশি খাইয়া ফেলছে চাচায়।হা হা হা।
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট ধরায় গনি মিয়া।আজকে তারও একটু নেশা হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে নিজের শরীরের সব ওজন পায়ে চলে গেছে।মাথা একদম ওজন শূন্য।নিজেকে মাছ মনে হচ্ছে।মাছের সাথে এই মূহুর্তে তার একটাই পার্থক্য। মাছ সিগারেট খায় না,সে খায়।সাঁতারের ভংগিতে হাত ছুড়াছুড়ি করে নিজেকে মাছ প্রমাণের চেষ্টা করে কিছুক্ষণ।আজকে মাথার উপরে চাঁদ আলো দিচ্ছে না।ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে।এমন অন্ধকার গনি মিয়ার খুব ভালো লাগে।

রাস্তার পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে খুব জোরেশোরে। চোখে কালো সানগ্লাস পরে চেয়ারে বসে কাজ তদারকি করছেন রাব্বানী পাঠান।তার হাতে ডাব। প্রতিবারই কমিশনার নির্বাচনের আগে এমন দু-চারখানা লোক দেখানো কাজ করেন তিনি।
:- বুঝলা গনি মিয়া পাবলিক ভোটের আগের কাজই বেশি মনে রাখে।সারাবছর কাজ কইরা টাকা ফালানোর কোন মানে আছে ?
:একদম মানে নাই চাচা।সারাবছর কি সাহায্য করলেন সেইটা বড় কথা না, বড় কথা হইলো ভোটের আগে পকেটে টাকা দিছেন কি না।বাঙ্গালি বড়ই নাফরমান।
:-হুম।আসলামের খবর কি ?
:ঐ বাড়ি বাড়ি গিয়া ভোট ভিক্ষা করতেছে।তবে যদ্দুর জানি টাকা ছাড়েনাই এখনো।
:- পাখনা গজাইছে। নেতা হইবার চায়। ইলেকশনটা হইতে দাও খালি,দেইখা নিমু পরে।কালকে যে এলাকায় মিটিং আছে সেইটার খবর কি ?
: আয়োজন সব করে রাখছি চাচা।মেয়র সাব দুপুরের দিকে আপনের পক্ষে ভাষণ দিতে আইবো।পরে খানাপিনা।আপনে খালি একটু নরম হইয়া দুই চারটা উন্নয়নের কথা বইলা দিবেন।বেশি কথা কওয়ার দরকার নাই।
:- তুমি রাতের বেলা আসো বাসায়,আলাপ আছে। খাইবা আমার লগে।
"এই ফকিন্নির বাচ্চারা,এমনে ঝিমাইয়া ঝিমাইয়া কাম করলে হইবো!"-শ্রমিকদের উপর খেঁকিয়ে উঠে রাব্বানী পাঠান।তার চোখে মুখে বিরক্তি এবং রাগের ছাপ স্পষ্ট। এই রাগ এখন এদের উপর ঢালবেন তিনি।

রাব্বানী পাঠান খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে পান চিবুচ্ছেন,পাশে যথারীতি পানের বাটা সাজিয়ে বসে আছেন জমিলা বেগম।তার মুখও পানে টকটকে লাল।গনি মিয়া সামনে সোফায় বসে রাব্বানী পাঠানের ছোটছেলের সাথে খুনশুটিতে মত্ত।
"গনি মিয়া এইবার একটা বিয়াশাদি কর।চাচার পোলাপান নিয়া আর কত খেলবা"-জমিলা বেগম পান চিবুতে চিবুতে কথাটা তোললেন।
: চাচী আপনারাই তো আছেন।আপনারাই আমার সব
:- তোমার চাচা এইবার পাশ করুক।পরে তোমারও একটা গতি করা লাগব।জোয়ান ব্যাটা ছেলেদের বেশিদিন বিয়াশাদি না কইরা থাকতে নাই।স্বভাব খারাপ হইয়া যায়।
জমিলা বেগম সম্মতির দৃষ্টিতে তাকালেন স্বামীর দিকে।রাব্বানী পাঠান মৃদু মাথা ঝাঁকালেন।
গনি মিয়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে উঠে।
:চাচাও তো মেলা বয়সে আপনেরে বিয়া করছে চাচী।
:-তোমার চাচা জোয়ান বয়সে বিয়া করলে আমার সমান মাইয়াই থাকতো একটা।
সবাই একসাথে হেসে উঠে।
রাব্বানী পাঠানের দোতলা এই বাড়িটা সত্যিই একটা সুখের আবাসস্থল।এত বড় বাড়িতে লোক কেবলমাত্র চারজন। বড় মেয়ে ক্লাস সিক্সে পড়ে,ছোট ছেলেটা ক্লাস টু-তে। তার টাকা পয়সার অভাব নেই। টানা তিনবার নির্বাচিত কমিশনার।
:- গনি মিয়া,তোমারে আমি বিশ্বাস করি। এইবার নির্বাচনী টাকা বিলানোর দায়িত্ব কিন্তু তুমি নিবা।
: আপনের ইচ্ছা চাচা।এইবার মাঠ খুব একটা সুবিধার না চাচা।পাবলিকের পকেটে বেশি মালপানি দেয়া লাগব।
:- সাবধানে টাকা ছাড়বা।জায়গা বুঝে প্রয়োজনে ডাবল দিবা।উত্তর পাড়ার লোক আমারে দেখতে পারে না এমনিতেও।ঐ এলাকায় টাকা ছাড়ার দরকার নাই।
: জ্বি চাচা।

রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে গনি মিয়া বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। আজ ঝকঝকে পরিষ্কার চাঁদের আলো।এত আলো গনি মিয়ার পছন্দ না। হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট ধরায় একটা।তার পেছন পেছন আসছে একটা কুকুর।গনি মিয়া মনে মনে ভাবে এইটা জ্বীন-ভূত না তো আবার।সে দ্রুত পা বাড়ায়।

:গনি, একটা বড়সড় খানাপিনার আয়োজন করবো ভাবতেছি।তুই থাকতে পারবি না জানি।তবে চিন্তা করিস না, আমার যে উপকার করছিস আজীবন তুই আমার খাস আদমি হইয়াই থাকবি।
:- ভাই আমি আপনেরে কথা দিছিলাম,কথা রাখছি।গনি মিয়া জবান লড়চড় করে না।
: আয় একবার কোলাকুলি করি তোর সাথে।কলিজা ঠান্ডা করি।
নবনির্বাচিত কমিশনার আসলাম শেখকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে গনি মিয়া।
:- রাত তো অনেক হইলো, বাড়ি চলে যাবি ?
: নাহ, চাচা ফেইল করছে।স্বান্তনা তো একটু দেয়াই লাগবো চাচারে।যাই ঘুইরা আসি।
আসলাম শেখ,গনি মিয়া মদের গ্লাস হাতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।এ হাসি বড়ই রহস্যময়, পৈশাচিক

রাব্বানী পাঠান গ্লাসের পর গ্লাস মদ গিলে চলছেন।বাড়িতে থমথমে অবস্থা।"পাবলিক বড়ই নাফরমান,শালা হারামি কা বাচ্চা"-রাব্বানী পাঠান গর্জে উঠে।জমিলা বেগম মুখ গোমড়া করে বসে আছেন।আজ তিনি পান খাচ্ছেন না।এটা গনি মিয়ার কাছে বেশ আশ্চর্যজনক ঘটনা মনে হচ্ছে।
:চাচা যা হওয়ার হইয়া গেছে।আজকে আর খাইয়েন না।
রাব্বানী পাঠান কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে গনি মিয়ার দিকে মুখ তুলে তাকালেন।তার চোখে পানির রেখা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। ক্ষমতাবান মানুষকে সত্যিকার অর্থে কাঁদতে দেখলে অবাক হতে হয়।ক্ষমতা জিনিসটা খুবই খারাপ বিষয়।এইটা একবার পেয়ে বসলে ছাড়তে ইচ্ছা করে না।শুধু বাড়াতে ইচ্ছা হয়।
রাব্বানী পাঠান আবার খেঁকিয়ে উঠলেন "পাবলিক বড়ই নাফরমান,শালা হারামি কা বাচ্চা"

গনি মিয়া বাইরে এসে সিগারেট ধরায়।অনেক্ক্ষণ মন খারাপের অভিনয় করেছে সে।এই নির্বাচনে তার ভালো টাকা ইনকাম হল।রাব্বানী পাঠানের নির্বাচনী টাকা প্রায় পুরোটাই এখন তার ঘরে আলমারির ভিতর।আসলাম শেখের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা পাওয়া যাবে। এত টাকা দিয়ে কি কি করা যায় তা ঠান্ডা মাথায় ভাবা লাগবে।ঠিকাদারিতে নেমে পড়লে মন্দ হয় না।এই সেক্টরে কাঁচা টাকা।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সিগারেট নীচে ফেলে পা দিয়ে আগুন নেভায় তারপর দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।রাব্বানী পাঠান মদ খেয়ে চিৎ হয়ে মরার মত ঘুমোচ্ছে।এ ঘুম সকালের আগে ভাঙবার নয়।পাশের রুমে মৃদু পায়ে খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গনি মিয়া।জমিলা বেগম পানের বাটা নিয়ে খাটে বসে পান চিবুচ্ছেন।তার মুখে আমন্ত্রণের হাসি।
"দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে আসো,আমার আলোর মধ্যে এসব করতে ভালো লাগে না"

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: গনি আর রাব্বানী কি বাস্তব চরিত্র?

২৭ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৭

নাহিদ ২০১৯ বলেছেন: নাহ।কাল্পনিক চরিত্র

২| ২৭ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৪৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অল দা গণি মিয়া‘স ম্যান ;) =p~

গল্প ভালা হইছে।

২৭ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৯:০৭

নাহিদ ২০১৯ বলেছেন: অল দা গণি মিয়া‘স ম্যান ;)

যা বললেন ভাই। ধন্যবাদ

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: নাহ।কাল্পনিক চরিত্র

ধনবাদ। ভালো থাকুন।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:০৬

নাহিদ ২০১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.