![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট থেকে গমগম কর বরে হয়ে গেল স্নেহা! তার হাটার মাঝে প্রচন্ড রাগের বহিঃপ্রকাশ স্পষ্ট হয়ে ছিল। আর আপন বউ এর চলে যাওয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, আফনান!
আফনান এবং স্নেহা বিয়ে করেছে মাত্র তিন মাস আগে! এরই মাঝে তাদের প্রেমটাও বেশ জমে উঠেছে! রাগ,অভিমান,ভালোবাসা মাখানো ঝগড়া,খুনসুটি কি নেই তাতে! আজ স্নেহার ২১ তম জন্মদিন। আফনান কথা দিয়েছিল তাকে চাইনিজ খাওয়াবে। কথামত স্নেহা আগেই রেষ্টুরেন্টে গিয়ে বসে আছে! কিন্তু আফনানের কোন খোঁজ নেই! স্নেহা ভাবছে, আজ আর কল দিবো না! দেখি সে কতক্ষণে আসে!
আফনান এবং স্নেহা দু’জনেই জার্নালিজম এ অনার্স করছে! আফনান ফাইনাল ইয়ারে আর স্নেহা ফাষ্ট ইয়ারে। তাদের পরিচয়টা ঘটে একটা ওয়ার্কশপে। দেশের একটি নামকরা পত্রিকা এই ওয়ার্কশপটির আয়োজন করে। এই ওয়ার্কশপে আফনান এবং স্নেহা একই গ্রুপে পড়ে। আফনান ছিল তাদের গ্রুপ লিডার। সেখান থেকেই আফনান এবং স্নেহার পরিচয় ঘটে। তারপর থেকে ভার্সিটিতে তাদের প্রায়ই দেখা হতে থাকে। সেই পরিচয়ের পর্ব ধরে স্নেহা প্রায়ই আফনানের নোট চাইতে আসে।
এই পরিচয় পর্বের পরপরই স্নেহা আফনানের আরও একটি পরিচয় খুঁজে পায়! আফনান ছদ্মনামে দেশের বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কলাম লিখে থাকে! নিজের পড়াশুনার খাতিরেই স্নেহাকে অনেক কলাম সংগ্রহে রাখতে হয়। স্নেহার সেই সংগ্রহশালার মধ্যে আফনানের ছদ্মনামে লেখা কলামগুলোও রয়েছে। আফনানের এই পরিচয়টা ঘটনাক্রমে প্রকাশ পেয়ে যায়!
অন্যান্য অনেক দিনের মত,স্নেহা আফনানকে নোটের জন্য কল দেয়। আফনান তাকে সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে দেখা করতে বলে। বিকাল বেলা স্নেহা সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখে, আফনান এক কোনায় আপন মনে কি যেন লিখে যাচ্ছে! স্নেহা নিঃশব্দে আফনানের পিছনে গিয়ে দাড়ায়! উপরে শিরোনাম দেখতে পায়, ‘লাঞ্চিত মানবতা,লজ্জিত স্বাধীনতা’। এরপর সে প্রথম প্যারাটাও পড়ে নেয়। এর মাঝে আফনান তার উপস্থিতি অনুভব করে। আফনান তাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে, কখন এলে? এই নাও তোমার নোট! আজ তোমাকে সময় দিতে পারছি না! একটু ব্যস্ত আছি। পরের দিন স্নেহা ঐ একই শিরোনামে দেশের একটি নাম করা পত্রিকায় কলাম দেখতে পায়। আফনানের ঐ লেখায় প্রথম প্যারাতে যা পড়েছিল, তার হুবহু এই কলামের প্রথম প্যারায় দেখতে পেল। কলামের লেখকের জায়গায় যথারীতি ছদ্মনামে রয়েছে,জহুরীর শিষ্য।
পরের দিন স্নেহা আফনানের সঙ্গে জরুরী ভিত্তিতে দেখা করে। স্নেহা বলে, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব,সত্যটা বলবেন কি? আফনান জবাবে বলে,আমার জানার মধ্যে থাকলে সত্যটাই বলব। স্নেহা বলে, জহুরীর শিষ্য এই ছদ্মনামের কলাম লেখকটা আপনি! তাই না? আফনান কিছুটা ভড়কে যায়! আফনান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, হুম আমিই! কি করে বুঝলে? এরপর স্নেহা,সব ঘটনা খুলে বলে!
এভাবেই আফনান এবং স্নেহার ঘনিষ্ঠ্যতা বাড়তে থাকে! আফনান বুঝতে পারে সে দিন দিন স্নেহার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে! আর এই কারণে আফনান ভীষণ অস্বত্বিতে ভুগতে থাকে! সে সিদ্ধান্ত নেয়, স্নেহাকে সব খুলে বলেবে! এবং তার কাছেই সমাধান চাইবে!
.
পরের দিন বিকাল বেলা আফনান এবং স্নেহা দেখা করে! আফনান তাকে বলে, কিভাবে শুরু করব ঠিক বুঝতে পারছি না! রাখঢাক না করে বলেই ফেলি! সত্য বলতে আমি দিনদিন তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি! আর এভাবে চলতে থাকলে আমি আরও দুর্বল হয়ে পড়ব। আর এটা অন্যায়। জেনে বুঝে অন্যায় করা সম্ভব নয়। এবার স্নেহা মুখ খুলল, সত্যি কথা বলতে আমিও আপনার উপর দুর্বল হয়ে পড়েছি! আর আমি এটা নিয়ে আব্বু আম্মুর সঙ্গেও কথা বলেছি! আব্বু বলেছে, উনি খুব শ্রীগ্রই আপনাকে বাড়িতে দাওয়াত করে সব বন্দোবস্ত করবেন।
এরপর দু’পক্ষ আলোচনা করে তাদের বিয়ের সকল বন্দোবস্ত করে ফেলে! আফনানের মাষ্টার্স অবধি স্নেহা তার বাবার বাড়িতেই থাকবে! আর আফনান যথারীতি ভার্সিটির হলে।
দু’ঘন্টা লেট করে অবশেষে আফনান চাইনিজ হোটলে উপস্থিত হল! কিন্তু ততোক্ষনে স্নেহার রাগের সীমা ভিসুবিয়াসের উত্তাপকেও ছাড়িয়ে গেছে! আফনান বলল, যোহরের নামায পড়ে ভাবলাম,বিকাল হতে এখনও বাকি! তাই কলাম লেখাটা শেষ করি! কিন্তু কখন যে সময় গড়িয়ে গেল,বুঝতেই পারিনি! স্নেহা চোখ লাল করে বলে,থাকো তোমার কলাম নিয়ে! আমি চললাম!
বউ এর এমন অগ্নিরূপ দেখে খুব অনুতপ্ত বোধ করতে লাগল আফনান! তারপর বউ এর অভিমান ভাঙ্গাতে পিঁছু পিঁছু ছুটতে শুরু করল। কিন্তু ওর কাছাকাছি পৌছানোর আগেই রিক্সা নিয়ে নিজ বাসার দিকে চলে গেল,স্নেহা। একবার ইচ্ছে হল,রিক্সা নিয়ে ওর পিঁছু পিঁছু যাই। কিন্তু কাজ হবে না। বড় জেদি মেয়ে। স্নেহার পরবর্তি পদক্ষেপ গুলো আফনানের মুখস্ত। কারণ গত তিন মাসে তাদের অর্ধশতবার মান অভিমান পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। আর মান অভিমান এর শুরুতেই রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মোবাইলটা ঘন্টা দুই তিনেক এর জন্য বন্ধ করে রাখে। এই সময়টা সে কারোর সঙ্গে কথা বলতে চায় না।
স্নেট্রাল মসজিদে এশার নামায পড়ে হলের দিকে হেটে যাচ্ছে আফনান। তখন মনে হল, দেখি একবার কল দিয়ে। স্নেহা মোবাইলটা ওপেন করল কিনা! ওর নাম্বারে ডায়াল করল এবং মোবাইলটাও খোলা পেলো। দু’বার রিং হবার পরই স্নেহা কলটা রিসিভ করল। বলল, কল দিছো কেন? তুমি থাকো তোমার কলাম নিয়ে! পারলে কলামকেই বিয়ে করে সংসার শুরু করো! এরকম নানা কথার মাধ্যমে ১০ মিনিট ধরে রাগ ঝাড়ল স্নেহা! আর এদিকে চুপচাপ বউ এর বকা শুনে গেল আফনান। আফনান বলল, তোমার বকা দেওয়া শেষ হয়েছে? এবার একটা গান শোনাই! স্নেহা বলে না,তুমি কোন গান বলবা না! আফনান জোর করে বলে আহা! শুনেই দেখো না! গলাটা নিঁচু করে আফনান গান ধরল,
তোমার চোখের আঙ্গিনায়
এখনও তেমনি করে
জ্যোস্না ছড়ায় আলো?
এখনও কি তারার পানে
চেয়ে থাকো আনমনে?
তুমি কি আমায়
আগের মত বাসো- ভালো........................এটুকু বলেই থামলো আফনান। তখন স্নেহা ওপাশ থেকে বলল, আগের থেকেও অনেক বেশিই ভালোবাসি।
২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:১৪
নাকিব১ বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:০৮
মহা সমন্বয় বলেছেন: আহা, কি দারুণ।
৩| ২৫ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:২৯
আপনার আপন বলেছেন: beautiful
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৩
মিজভী বাপ্পা বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে ভাই