নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
সারা দিনমান আজ শুধু কেঁদে যাব।
কান্নারা আমার কন্ঠ রোধ করে দিচ্ছে।
আমাকে আজ কাঁদতে হবে।
অনেক কান্না।
জনম জনমের কান্না যেন আটকে আছে বুকের ভেতরে।
অন্তরজুড়ে আমি টের পাই কান্নার বুদবুদগুলো বাস্প হয়ে হাওয়ায় মিশে যেতে উসখুস করছে।
আমাকে কাঁদতে হবে।
কাঁদতে না পারলে আমি থামতে পারব না।
নিজেকে থামাতে পারব না।
থির-স্থির-থিতু হতে পারব না।
চোখের কান্না প্রয়োজন।
হৃদয়ের কান্না প্রয়োজন।
বুকের-মুখের-মগজের কান্না প্রয়োজন।
কান্নার ভেতরেও নিহিত রয়েছে সুখ।
সুপ্ত সে সুখ আমি অনুভব করতে চাই।
উপভোগ করতে চাই।
সে সুখের শ্রাবন প্লাবনে ধুয়ে মুছে দিয়ে যাক আমার সমস্ত বিরহ-যাতনা।
সকল গ্লানি-হতাশা।
কান্না আমার প্রিয়।
কান্নাকে আমি নিজের মনে করি।
আপনার আপন যদি কিছু থেকে থাকে আমার, সে আমার কান্না।
বুকভাঙ্গা-বাঁধভাঙ্গা অশ্রু বিগলিত কান্না।
কাঁদতে কাঁদতে আমি পাপের প্রায়শ্চিত্ব করি।
পূর্নতা লাভ করি পূন্যতা-পবিত্রতায়।
নিজেকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে বিশুদ্ধ আত্মার কাছে ফিরে যাই।
যেমনভাবে নিষ্কলুষ প্রথমবার আমাকে পাঠানো হয়েছিল মর্ত্যের অঙ্গনে।
আমি কাঁদি।
কান্না আমার অস্ত্র।
সাংঘাতিক লক্ষ্যভেদি প্রচন্ড শক্তিশালী মারাত্মক অস্ত্র।
এই অস্ত্র আমার আত্মরক্ষার।
আর আমার আত্মা অবিনশ্বর।
বিশাল থেকে বিশালাকায়।
গোটা পৃথিবীজুড়ে বিরাজমান বিচরনশীল প্রত্যেক প্রানীর ভেতরে আমি বর্তমান।
মূর্তমান।
তাদের হয়ে প্রত্যেকের তরে আমার কান্না।
আমি স্বজনের জন্য কাঁদি।
আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের জন্য কাঁদি।
নির্যাতিত বোনের জন্য অশ্রু ঝড়াই।
বসনিয়া হার্জেগোভিনার নির্যাতিত নারীকূলের জন্য আমার কান্না।
আমাকে কেঁদে যেতে হয় ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুদের জন্য।
অহর্নিশ।
আমি একটু বিশ্রাম নিতে পারি না।
আফগানিস্তানের বিধ্বস্ত পাহাড়গুলো আমাকে কাঁদায়।
নিষ্পেষিত মানুষগুলো আমার চোখ থেকে বারিধারা চেয়ে নেয়।
ইরাকের লাখো বনি আদমের দুর্দশা আমাকে কান্নার সাগর সলিল উপহার দিয়েছে।
আমি মনে হয় অনন্তকাল কেঁদে যেতে পারব।
আরাকানের নিগৃহীত মানবাত্মারা আমাকে ঘুমুতে দেয় না।
প্রত্যেকে আমার বুকের পাঁজরে বাসা বেধে আছে।
তারা আমার চোখে অশ্রু দেখে আনন্দিত হয়।
তাদের জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।
তাদের হয়ে কাঁদতে হয়।
ক্ষুধা-তৃষ্ণা কাতর ইয়েমেনের বঞ্চিত অসহায় শিশুদের মুখচ্ছবি আমার হৃদয়পটে সদা জাগরিত।
সিরিয়ার রক্তমাখা ফুলের মত ছোট্টমনিদের নিষ্পাপ চেহারা আমাকে অস্থির করে তোলে।
তারা আমাকে দু’দন্ড স্বস্তিতে থাকতে দেয় না।
কান্নার মত মধুর-প্রিয় তাদের কাছে আর কিছু নয়।
তাদের জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।
আমি শত্রুর জন্য কাঁদি।
মিত্রের জন্য কাঁদি।
আপন পর ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সকলের জন্য কাঁদি।
আশ্চর্য্য এক ব্যধিতে আক্রান্ত আমি।
অদ্ভূত এ ব্যধি আমাকে জেঁকে ধরে বসে আছে।
ভূ-মন্ডলের কোথাও কেউ যখনই কষ্ট পায়- আমি আঁতকে উঠি।
নভমন্ডলের ইথারজুড়ে আমার আত্মা বিদ্যমান।
নেপালের আকাশে যখন ডানা মেলে উড়তে থাকা কোন পাখির পালক ছিঁড়ে যায়-
আদম সন্তানের অনেকগুলো জীবনের আচনক ছন্দপতন ঘটে-
আমি আহত হই।
সাগর সলিলে মাঝিদের নৌকো ঝড়ো বাতাস দেখলে- আমি চিন্তিত হই।
আমার কান্নাগুলো জেগে ওঠে।
আমি কাঁদতে থাকি।
আমি আমার পিতা আদমের জন্য কাঁদি।
আদি পিতা তিনি।
মাতা হাওয়ার জন্য আমার এক জীবনের কান্না।
তিনি জগতের প্রথম মা।
তাঁর জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।
এদের সন্তানদের প্রতি আমার নাড়ীর টান।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই দম্পতির সকল সন্তানের জন্য হৃদয়ের ভালবাসা।
এদের সকলের জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।
মনুষ্য প্রজাতির প্রত্যেকের কল্যান প্রার্থনায় আমার আজীবনের কান্না।
জীবজগতের সকলের শুভকামনায় আমার নিরবধি নিরন্তর কান্না।
বাংলামোটরে নির্যাতিত মেয়েটি আমাকে কাঁদায়।
ক্যান্টনমেন্টের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ভেতরে তনুরা হারিয়ে গেলে আমি ব্যথা পাই।
কেঁদে উঠি।
বইয়ের পরিবর্তে যার হাতে শোভা পায় টিফিনের বাটি-
জীবিকার সন্ধানে সকালবেলা ধাবমান কঁচি গার্মেন্টস কন্যা আমাকে কান্না উপহার দেয়।
ডানাভাঙ্গা পিঁপড়ের আর্তনাদ আমি শুনি।
গুবড়ে পোকার অসহায়ত্ব অামাকে কাবু করে দেয়।
কান্না জাগিয়ে দেয় বুকের অস্তাচলে।
রাস্তার পাশের অনাহারি কুকুর আমার বিবেককে নাড়া দেয়।
আমি না কেঁদে পারি না।
প্রানীকুলের প্রত্যেকেই আমার আপন।
পরম আপন।
আত্মার আত্মীয়।
জীবনের মত-প্রানের মত প্রিয়।
তারও চেয়ে বেশি।
সকলের সুখের জন্য-আত্মার পবিত্রতার জন্য-
অন্তরের পরিচ্ছন্নতার জন্য আমাকে কাঁদতে হয়।
কেঁদে যেতে হয়।
আমি অবিরাম কাঁদি।
জাগ্রত বিবেক আমার মুহূর্তকাল আমাকে বিশ্রাম দেয় না।
জেগে থেকে আমি কান্নায় ডুবে থাকি।
ঘুমের ভেতরে কান্নায় জেগে রই।
দিবসের প্রথম প্রহরে আমি কান্নার সাথে মিতালী করি।
দ্বিপ্রহর আমাকে কাঁদিয়ে যায়।
গোঁধুলিবেলায় আমাকে কাঁদতে হয়।
অবচেতন মনে রাতের শেষ প্রহরে আমার কান্নাগুলো আরও বেশি জাগ্রত হয়ে ওঠে।
ছান্দসিক কল্লোল-কোলাহল-কলরোল তোলে।
অনন্ত আকাশজুড়ে ভেসে বেড়ানো উর্মিমালা হয়ে-
সাত সাগরের বিক্ষুব্ধ তরঙ্গমালা হয়ে-
ঝর্না - স্রোতস্বিনীর কুলুকুলু রব হয়ে আমাকে জাগিয়ে দেয়।
আমার ভেতরের আমিকে চূর্ন-বিচূর্ন করে।
আমাকে জাগিয়ে দেয়।
আমাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে।
অস্তিত্ব অবিনাশী আত্মা তখন কান্নার পাটাতনে আশ্রয়ের চেষ্টায় মাথা কুটে মরে।
বুকের ভেতর ফুটন্ত জলসমেত ডেকচির মত বুদবুদ ওঠায়।
আমার এ কান্না চলতেই থাকবে। অবিরাম। অনন্তকাল।
১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭
নতুন নকিব বলেছেন:
সেটাই।
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন অনেক।
২| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অবিরাম কান্নার চেয়ে দীর্ঘ হয়ে গেছে কবিতা
সমপর্নের কান্নায় সূখ আছে কথা সত্য
++++
১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
আরও দীর্ঘ করতে চাই। কান্নার ভেতরে ডুবে থাকার স্বাদ উপভোগ করতে চাই।
সমপর্নের কান্নায় সূখ আছে কথা সত্য -ঠিক বলেছেন, প্রিয় কবি।
অনেক শুভকামনা। অনেক সুন্দর থাকুন।
৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪৫
সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: কান্না দিয়েই আল্লাহকে পাওয়া খুব সহজ। যদিও কবিতা বেশ দীর্ঘ হয়েছে তবুও ভাল লাগল।
১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০
নতুন নকিব বলেছেন:
কবিতা মনে করে লিখিনি। মনের কথাগুলো প্রকাশ করার চেষ্টা।
অনেক প্রীতি জানবেন। অনেক ভাল থাকুন।
৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: মানবতাবাদী কবিতা । অবনীর অনিয়ম জুলুম নির্যাতন বেড়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুক ।
১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
কবি ভাই, সঠিক বলেছেন। আল্লাহ পাকের কাছে বলা ব্যতিত আমাদের আর কোথায় যাওয়ার সুযোগ আছে?
মোবারকবাদ। অনেক সুখে থাকুন।
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:০৬
ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: সময়উপোযী কবিতা।
১৩ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনাকে মোবারকবাদ। কবিতা ভাল লাগায় কৃতজ্ঞতা।
অনেক ভাল থাকুন।
৬| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
২য় টি ছবিটি দেখে ভয় লাগল।
১৪ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৮:২৯
নতুন নকিব বলেছেন:
কিছু ভয় থাকা খারাপ নয়। আমরা বোধ হয়, ভয় করতেও ভুলে গিয়েছি। ক্ষুদ্র পার্থিব জীবনকে নিয়ে মেতে থাকা জ্ঞানীর লক্ষন নয়।
ভাল থাকুন।
৭| ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫
মুফীদ হাসান বলেছেন: প্রশান্ত মনের অধিকারী একজন মুমিন এভাবেই কাঁদে। নকিব ভাই! আপনি একজন প্রকৃত মুমিন। আল্লাহ্ আপনাকে নেক হায়াত দান করুক এবং সকল মুমিন মুসলমানদের আপনার মতো কাঁদার তৌফিক দান করুক। আফসোস! আমি এখনও এমন হতে পারিনি :-(
১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
আফসোস! আমি এখনও এমন হতে পারিনি :-(
-এই একটি বাক্যই আপনাকে তুলে ধরার জন্য যথেষ্ট। আপনার মনের পরিচ্ছন্নতা পরিমাপের জন্য কম্পাসের প্রয়োজন নেই। আলহামদুলিল্লাহ, আপনি যদি নাও কেঁদে থাকেন, আপনার এই একটি শব্দ, 'আফসোস' হৃদয়ের গহীন থেকে উচ্চারিত জখমী অন্তরের যে পরিচয় প্রকাশ করেছে, মালিক মহিয়ান এরকম ভাঙ্গা অন্তরই চেয়ে থাকেন। এরকম বিদীর্ন বুকেই তাঁর বসবাস। 'আনা ইনদা মুনকাসিরাতু ক্কুলূবিকুম', 'তোমাদের বিচূর্ন হৃদয়ে আমার অবস্থান।' (হাদিসে কুদসী)। সুবহানাল্লাহ। আপনি সৌভাগ্যবান, নিসন্দেহে। আপনার প্রচেষ্টা স্বার্থক হোক।
আল্লাহ পাক আপনাকে উত্তম আখলাকে ভূষিত করুন। এই অধম সম্পর্কে আপনার সুধারনার প্রকাশ দেখে আপ্লুত! আপনার ধারনা অনুযায়ী, বরং তারচে'ও অনেক অনেকগুন বেশি আল্লাহ পাকের প্রিয় আমলগুলো করার, তাঁর প্রিয়পাত্র হবার তাওফিক আমাকে, আপনাকেসহ সকল বিশ্বাসীকে প্রিয়তম প্রতিপালক দান করুন।
আসলে, সত্যি বলতে কি, প্রকৃত মুমিন হওয়া ছাড়া তো উপায় নেই। আমৃত্যু আমাদের এই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
কান্না বিশ্বাসীর অস্ত্র। মালিকের সাথে যোগাযোগের অত্যুন্নত মাধ্যম। এই অস্ত্র যার নেই তিনি শক্তিহীন। তার বিশ্বাস দুর্বল। মালিক মহিয়ানের সাথে তার সম্পর্কও নাজুক। সুতরাং, মালিকের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যম বিবেচনা করতে হবে কান্নাকে। কাঁদতে পারলেই আপনি সফল। কেঁদে দিলেই আপনার আত্মা পবিত্র। কান্নার ভান করলেই আপনি বেঁচে গেলেন। আহ! মালিকের দয়ার কি কোন সীমা-পরিসীমা আছে?
অনেক ভাল থাকুন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৩৮
অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: এ কান্না চলতেই থাকবে। অবিরাম। অনন্তকাল।