নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পবিত্র মাহে রমজান: ফজিলত ও আমল পর্ব-০২

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:০০



দৃষ্টি আকর্ষণঃ সম্ভবতঃ কেউ এই পোস্টটি অটো রিফ্রেশ/ রিলোড করছেন। এটা দুঃখজনক।

প্রথম পর্বের লিঙ্ক-

পবিত্র মাহে রমজান: ফজিলত ও আমল পর্ব-০১

পূর্ব প্রকাশিতের পরে-

সাত. কুরআন তিলাওয়াতের আমল বেশি বেশি করা:

পবিত্র রমজান কুরআনুল কারিম নাজিলের মাস। এই মাস মহাগ্রন্থ আল কুরআন পঠন, শিক্ষন এরও মাস। রমজান যেন আল কুরআনেরই মাস। এই মাসটি জুড়ে কুরআনে কারিমের যত বেশি সম্ভব তিলাওয়াত, আল কুরআনের মর্ম অনুধাবন এবং তার ফায়দা সমস্ত জগতের মানুষের জন্য উম্মুক্ত করার পথ রচনা করার চেষ্টা করা। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।’ -সুনান আত-তিরমিযী: ২৯১০, সহীহ

কুরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদত বা অভ্যাস ছিল, তিনি রমজান মাসের মত এত বেশি পরিমান তিলাওয়াত অন্য কোন মাসে করতেন না। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘রমজান ব্যতিত অন্য কোনো রাত্রিতে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করতে, কিংবা ভোর অবধি সালাতে কাটিয়ে দিতে অথবা পূর্ণ মাস রোযা পালন করে কাটিয়ে দিতে দেখি নি।’ -সহীহ মুসলিম : ১৭৭৩

আট. আল্লাহ পাকের দরবারে বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা:

পবিত্র মাহে রমজান মাস প্রাপ্ত হওয়া নি:সন্দেহে এক মহা সৌভাগ্যের বিষয়। এ কারণে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা উচিত। বেশি বেশি হামদ ও সানা পাঠ করে মহান মুনিবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। অবিরত-অনবরত এবং অব্যহতভাবে তাঁর পবিত্র নামের তাসবীহ ঠোটের কোনে লাগিয়ে রাখার চেষ্টা করা। সাথে সাথে আগামী রমজানপ্রাপ্তির জন্য বিনীতভাবে তাঁর নিকট তাওফিক প্রত্যাশা করা। এ বিষয়ক নির্দেশনা ঐশিগ্রন্থ আল কুরআনেও এসেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা ইরশাদ করেন:

وَلِتُكْمِلُواْ الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُواْ اللّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তিনি তোমাদেরকে যে হিদায়াত দিয়েছেন, তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’ -সূরা আল বাকারাহ : ১৮৫

আল্লাহ তাআ'লার নিআমতের শুকরিয়া আদায় করলে তিনি খুশি হন। অকৃতজ্ঞদের প্রতি তিনি নারাজ হন। ইরশাদ হয়েছে:

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لأَزِيدَنَّكُمْ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন- যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ -সূরা ইবরাহীম : ৭

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: 'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ামাতের শুকরিয়া আদায় করে বলতেন- আলহামদুলিল্লাহ, অর্থাৎ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআ'লার জন্য।' -সুনান আত-তিরমিযী : ২৭৩৮

নয়. কল্যাণকর প্রতিটি কাজে বেশি বেশি অংশগ্রহনের চেষ্টা করা:

পবিত্র মাহে রমজান সাওয়াব অর্জনের মাস। এ মাসে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজে অংশগ্রহনের চেষ্টা করতে হবে। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘এ মাসের প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে আহবান করতে থাকে যে, হে কল্যাণের অনুসন্ধানকারী তুমি আরো অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের পথিক, তোমরা অন্যায় পথে চলা বন্ধ কর। (তুমি কি জান?) এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তায়ালা কত লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন?’ -সুনান আত-তিরমিযী : ৬৮৪

দশ. নিয়মিত সালাতুত তাহাজ্জুদের পাবন্দি করা:

সালাতুত তাহাজ্জুদের রয়েছে বিশেষ ফজিলত। এ নামাজ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নির্জনে একাকি মহান প্রতিপালকের সামনে সিজদায় অবনত হয়ে তাঁর নৈকট্যলাভের অন্যতম মাধ্যম। রমজান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের বিশেষ ফজিলতের কারণে এ মাসে এই নামাজের জন্য রয়েছে আরো বেশি সাওয়াব ও ফায়দা। আমাদের প্রত্যেক রোজাদারকেই যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয়, আমরা ভোর রাতে উঠি, সে কারণে রমজান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার একটি বিশেষ সুযোগ থেকে যায়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাঅা'লা আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘ফরয সালাতের পর সর্বোত্তম সালাত হল রাতের সালাত অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সালাত।’ -সহীহ মুসলিম : ২৮১২

এগারো. অধিক পরিমানে দান-সদাকাহ করা:

পবিত্র মাহে রমজানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দান সাদাকাহর পরিমান অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়ে যেত। তিনি স্বয়ং এই মাসের বিশেষ সাওয়াব অর্জনের জন্য যেখানে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করেছেন, আমাদেরও সেই চেষ্টাই করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা এ মাসের অন্যতম আমল হওয়া উচিত। যাকাত যাদের ফরজ তারা অবশ্যই যাকাত আদায় করে থাকেন। বছরের যে কোনো মাসেই সম্পদের হিসাব করে নির্ধারিত পরিমান যাকাত আদায় করা যায়। তবে এক্ষেত্রেও অন্য মাসের তুলনায় প্রতি বছর এ মাসে যাকাত আদায় করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরো বেড়ে যেত।’ -সহীহ আল-বুখারী : ১৯০২

বারো. উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা:

রমজান মাস চরিত্র গঠনের মাস। আত্মশুদ্ধি, আত্মোপলব্ধি এবং আত্মোন্নয়নের মাস। এ মাসে চারিত্রিক উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। এমনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে, যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো পরিচালিত হয় সুন্দরভাবে। ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা, আমানতদারিতা, সত্যবাদিতা, পরোপকারিতার মত উন্নত অন্যান্য গুনাবলী নিজের ভেতরে ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার, গিবত, অন্যায়-অশ্লীলতাসহ যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার ট্রেইনিং নিতে হবে। আমাদের প্রতি দিনের অনুশীলন হবে- সুন্দর এবং আদর্শ চরিত্র গঠন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযা রাখে, সে যেন তখন অশ্লীল কাজ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। রোযা রাখা অবস্থায় কেউ যদি তার সাথে গালাগালি ও মারামারি করতে আসে, সে যেন বলে, আমি রোযাদার।’ -সহীহ মুসলিম : ১১৫১

তেরো. মাহে রমজানের অন্যতম আমল হোক ই‘তিকাফ:

মাহে রমজানের অন্যতম আমল ই‘তিকাফ। 'ই‘তিকাফ' অর্থ অবস্থান করা, অর্থাৎ মানুষজনের কোলাহল থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: ‘প্রত্যেক রমজানেই তিনি শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন। দশ দিন ই‘তিকাফ করা সুন্নাত।' -সহীহ বুখারী : ২০৪৪

চৌদ্দ. দাওয়াতে দ্বীনের কাজে অংশগ্রহন করা:

মাহে রমজান উত্তম আমলের মাস। আর দ্বীনের দাওয়াত এমনিতেই উত্তম একটি আমল। দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহ তাআ'লার দিকে ডাকা হয়। আত্মভোলা বিপথগামী বান্দাহকে মহান স্রষ্টার দিকে ডেকে আনা। মহান সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তাকে ভুলে যাওয়া পার্থিব মোহে আত্মবিভোর মানুষকে রবের সাথে নতুন করে সম্পর্ক গড়ে দেয়ার মত পূন্যময় কাজ আর কি হতে পারে? এটি নি:সন্দেহে সর্বোত্তম একটি কাজ। আর এ কাজটি যদি করা হয় পবিত্র মাহে রমজানে, এর সাওয়াব অবশ্যই আরও অনেক অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে। এজন্য এ বরকতময় মাসটিতে বেশি বেশি মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, সামর্থ্যানুযায়ী সম্ভব হলে দ্বীনি তারগীব তাবলীগের লক্ষ্যে কুরআন হাদিসের আলোকে লিখিত নির্ভরযোগ্য আলেম উলামাদের বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আল কুরআনের ঘোষণা :

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

‘ঐ ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহ তাআ'লার দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো, আমি একজন মুসলিম।’ -সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘ভাল কাজের পথ প্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে।’ -সুনান আত-তিরমীযি : ২৬৭০

পনেরো. সামর্থ্যবানগনের জন্য উমরাহ পালন করা:

মাহে রমজানে একটি উমরাহ করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘রমজান মাসে উমরাহ করা আমার সাথে হাজ্জ আদায় করার সমতুল্য।’ -সহীহ বুখারী : ১৮৬৩

ষোল. শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোয় লাইলাতুল কদর তালাশ করা:

পবিত্র মাহে রমজানে এমন বরকতময় একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আল-কুরআনের ঘোষণা:

لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ

‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ -সূরা কদর : ৪

হাদিসে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদাত করবে তাকে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ -সহীহ বুখারী : ৩৫

মহিমান্বিত এ রজনী পাওয়া বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। এক হাদিসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: ‘রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিনে অধিক হারে পরিশ্রম করতেন।’ -সহীহ মুসলিম : ১১৭৫

লাইলাতুল কদরে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত বিশেষ দুআ:

লাইলাতুল কদরে যে কোনো দুআ পাঠ করা যায়। যে কোনো বৈধ বাসনা পূরণের জন্য কুরআন হাদিসে বর্ণিত দুআ মুনাজাত করা যায়। তদুপরি, এই রজনীতে পাঠ করার জন্য হাদিসে বর্ণিত বিশেষ একটি দুআ রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি লাইলাতুল কদর পেয়ে যাই তবে কি বলব? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলবেঃ

‘اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي‘

'আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।'

‘হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ -সুনান আত-তিরমিযী : ৩৫১৩

সতেরো. বেশি বেশি দুআয় নিমগ্ন থাকা এবং কান্নাকাটি করে আল্লাহ তাআ'লার রহমত প্রার্থনা করা:

হাদিসে বলা হয়েছে- 'আদ্দুআউ মুখখুল ইবাদাহ', অর্থাত, দুআ ইবাদাতের মগজ। দুআ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দুআ করা ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করে কায়োমনোবাক্যে প্রার্থনা করা। হাদিসে এসেছে: ‘ইফতারের মুহূর্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে।’ -আল জামিউস সাগীর : ৩৯৩৩

অন্য হাদিসে এসেছে: ‘রমজানের প্রতি দিবসে ও রাতে আল্লাহ তা‘আলা অনেককে মুক্ত করে দেন। প্রতি রাতে ও দিবসে প্রতি মুসলিমের দুআ কবূল করা হয়।’ -সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব : ১০০২

আঠারো. ইফতার করার ভেতরে রয়েছে বরকত:

মাহে রমজানে ইফতারির সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপন না করা। কারণ হাদিসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ -সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭, সহীহ

রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন: 'পিপাসা নিবারিত হল, শিরা উপশিরা সিক্ত হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হল।' -সুনান আবূ-দাউদ: ২৩৫৯, সহীহ

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে যে- 'হে আল্লাহ! আপনার জন্য রোযা রেখেছি, আর আপনারই রিযিক দ্বারা ইফতার করছি।' -কোনো কোনো মুহাদ্দিসের নিকট এই হাদিসটির সনদ দুর্বল। আল্লাহ পাক আমাদের সহিহ হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। -সুনান আবু দাউদ :২৩৫৮

উনিশ. রোজাদারদের ইফতার করানোতে রয়েছে অশেষ সাওয়াব:

রোজাদারদের ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজন রোজাদারকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার। এই মর্মে হাদিসে এসেছে: ‘যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সাওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ -সুনান ইবন মাজাহ : ১৭৪৬, সহীহ

বিশ. অধিক পরিমানে তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা:

'তাওবাহ' শব্দের আভিধানিক অর্থ- 'ফিরে আসা', পারিভাষিক অর্থে- 'আল্লাহ তাআ'লার নিকট নিজ গুনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে বিনীতভাবে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় উক্ত গুনাহের কাজ আর কখনো না করার সিদ্ধান্ত নেয়া'। পবিত্র রমজান মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। তাওবাহকারীকে আল্লাহ পাক ভালোবাসেন। তাওবাহ করলে আল্লাহ তাআ'লা খুশি হন। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে:

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَّصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ يَوْمَ لَا يُخْزِي اللَّهُ النَّبِيَّ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ نُورُهُمْ يَسْعَى بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَبِأَيْمَانِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُورَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাটি তাওবা; আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাবেন যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত। সেদিন আল্লাহ নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। তাদের নূর তাদের সামনে ও ডানদিকে ছুটোছুটি করবে। তারা বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের নূরকে পূর্ণ করে দিন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছুর উপর সর্ব শক্তিমান।’ -সূরা আত-তাহরীম : ৮

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ এবং ক্ষমা প্রার্থনা কর, আর আমি দিনে তাঁর নিকট একশত বারের বেশি তাওবাহ করে থাকি।’ -সহীহ মুসলিম : ৭০৩৪

তবে তাওবাহ ও ইস্তেগফারের জন্য উত্তম হচ্ছে, মন থেকে সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার (সর্বশ্রেষ্ঠ ইসতিগফার) পড়া, আর তা হচ্ছে:

اللهم انت ربى لا اله الا انت خلقتنى وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت اعوذبك من شرما صنعت ابوء لك بنعمتك على وابوء لك بذنبى فاغفرلى فانه لا يغفر الذنوب الا انت -

বাংলা উচ্চারণ: 'আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী- লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা খলাকতানী-, ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা- আহদিকা মাসতাতা'তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা- ছনা'তু, আবু-উ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়া, ওয়া আবু-উ লাকা বিজানবী-, ফাগফিরলী-, ফাইন্নাহু লা- ইয়াগফিরুজজুনূ-বা ইল্লা- আনতা।'

বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক, আপনি ছাড়া প্রকৃত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর আমি আপনার গোলাম আর আমি সাধ্যমত আপনার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর অবিচল রয়েছি। আমার কৃত-কর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমাকে যত নেয়ামত দিয়েছেন সেগুলোর স্বীকৃতি প্রদান করছি। যত অপরাধ করেছি সেগুলোও স্বীকার করছি। অত:এব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই।’

সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠের ফযিলাত:

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু‘আটি (সাইয়েদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ার আগে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকিনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে।’ -সহীহ বুখারী : ৬৩০৬

আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে রমজানের পরিপূর্ণ হক আদায় করে যথাযথভাবে সবগুলো রোজা পালনের তাওফিক দান করুন। এই রমজানকে আমাদের গুনাহ মাফির কারণ হিসেবে কবুল করুন। রমজানের রহমত, বরকত এবং নাজাতপ্রাপ্তি আমাদের নসিব করুন।

পবিত্র রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে পুরনো গুরুত্বপূর্ণ এই পোস্টটিও দেখা যেতে পারে -

মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ধারাবাহিক এই পোস্টটি তৈরিতে কৃতজ্ঞতা: কুরআনের আলোডটকম, https://www.priyo.com, আহলে হক মিডিয়া।

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

ইনশাআল্লাহ চলবে-

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:১৭

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ভাইয়া ১৫ নং একটু বিস্তারিত আলোচনা করেন।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩০

নতুন নকিব বলেছেন:



অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। প্রথম মন্তব্যে কৃতজ্ঞতা। আপনি যদি উমরাহ করার ইচ্ছে করে থাকেন, দুআ থাকলো, আল্লাহ পাক যেন কবুল করে নেন।

মাহে রমজানে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়া হয়। যেমন- হাদিসে এসেছে, রমজানে উমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজানে উমরাহ করা আল্লাহর রাসুলের সঙ্গে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সব ইবাদত-বন্দেগিসহ সব সৎ কাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

এ মাসে আমলের মাধ্যমে অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারি মহিলাকে বললেন, তুমি কেন আমাদের সঙ্গে হজ করতে যাওনি? তিনি বললেন, আমাদের পানি বহনকারী দুটি মাত্র উট রয়েছে। একটিতে আমার ছেলের বাবা (স্বামী) ও তার ছেলে হজ করতে গিয়েছেন, অন্যটি পানি বহনের জন্য আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তিনি বলেন, রমজান এলে তুমি উমরাহ করবে। কেননা, এ মাসের উমরাহ একটি হজের তুল্য।

সহিহ মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, রমজানে উমরাহ একটি হজের তুল্য। (সহিহ বুখারি : ১৭৮২, মুসলিম : ১২৫৬, মুসনাদে আহমাদ : ২০২৫)।

অন্য বর্ণনায় রয়েছে, উম্মে মাকিল রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো হজ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আমার উটটি দুর্বল। তিনি বললেন, তুমি রমজানে উমরাহ করো। কেননা রমজানে উমরাহ (সওয়াব হিসেবে) হজের তুল্য। (মুসনাদে আহমাদ : ২৭২৮৫)।

হে আল্লাহ তাআ'লা, পবিত্র মাহে রমজানে আমাদের উমরাহ আদায় করার তাওফিক দান করুন।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ি আর সব গুলো রোজা রাখার ব্যাপারে উৎসাহ পাই।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২১

নতুন নকিব বলেছেন:



আলহামদুলিল্লাহ। আপনার মন্তব্য বরাবরই প্রেরণামূলক। সবগুলো রোজা রাখার তাওফিক আল্লাহ পাক আমরা যারা রোজা রাখতে ইচ্ছুক, আমাদের সকলকে দান করুন।

৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় নকিবভাই,

সম্ভবত গতবার রোজার সময় এরকম পোস্ট পড়েছিলাম। আজ অবশ্য প্রথম দিকেই পড়ে সেরকম মনে হলো। সময় পেলে আবার আসবো। সুন্দর পরিশ্রমই পোস্টে মুগ্ধতা++

শ্রদ্ধা ও শুভকামনা প্রিয় নকিব ভাইকে।

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২৬

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার আগমনে কৃতজ্ঞতা অশেষ। অনেক আন্তরিকতা নিয়ে আপনি মন্তব্যে আসেন। অনেক দায়িত্ব নিয়ে আপনি সকলকে কাছে টানেন।

জ্বি, গত বছরও রমজান বিষয়ক একাধিক পোস্ট ছিল। আলহামদুলিল্লাহ, এ বছর কিছুটা আগে ভাগেই পোস্ট দেয়া শুরু করেছি, যাতে কিছুটা সময় প্রিপারশনের জন্য নেয়া যায়। আল্লাহ পাক আমাদের নেক আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন।

আপনার মত বরেন্য, আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব আবারও এই পোস্টে এলে অনেক ভালো লাগবে।

শুভকামনা সবসময়।

৪| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:১৯

বলেছেন: মাশাল্লাহ,,


অসাধারণ শিক্ষামূলক পোস্ট +++

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৮:২৭

নতুন নকিব বলেছেন:



শুকরিয়া। আগমনে কৃতজ্ঞতা।

নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য। অনেক অনেক ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.