নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
দিনকে দিন আমাদের সমাজের অবক্ষয় আর বিচ্যুতিগুলো বেড়ে চলেছে গাণিতিক হারে। হৃদয়বিদারক একেকটি ঘটনা মনকে নাড়া দিয়ে যায়। ব্যথা-বেদনায় আচ্ছন্ন হয় অন্তর। কিছু দিনের জন্য শোকে-দু:খে কাতর হই। কষ্টের করুণ কন্ঠ মাতম তোলে আমাদের। বেদনাহত হৃদয়ে দগ্ধিভূত হয়ে অশ্রু ঝড়াই আমরা। তারপরে কিছু দিন অতিবাহিত হলে ঠিক হয়ে যায় আবার সব। আবার আগের মত ফিরে যাই পেছনের জীবনে। জড়িয়ে পড়ি অনিয়মের বেড়াজালে। এর কারণ কি? কারণ হচ্ছে- সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলূকাত মানুষ হয়ে মানুষেরই ঘরে যদিও আমাদের জন্ম; কিন্তু আমাদের অধিকাংশের ভেতরেই সত্যিকারের মানুষ হওয়ার ন্যূনতম গুনাবলী নেই। আদব-কায়দা, ভদ্রতা-শিষ্টাচার, শালীনতা-সৌহার্দ্য- ইত্যাকার মানব জাতির সভ্য হয়ে ওঠার অনেক উপাদানশুন্য হয়ে আমরা ক্রমে যেন আরও দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ছি। বিপথগামিতার পথে এগিয়ে যাচ্ছি দ্রুত। খুবই দ্রুত। মানবীয় অপরিহার্য্য গুনাবলী যেন আমাদের অনেকের ধাঁতেই নেই। অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষীর ক্ষেত্রে স্বভাবের রুক্ষ্মতা অপরিহার্য্য অবধারিত বিষয় যেন। মেজাজ মর্জি কন্ট্রোলে ব্যর্থতায় আমরা যেন সর্বাগ্রে। সবার চেয়ে এগিয়ে। সব জাতির সেরা। আমাদের অধিকাংশ লোকজনই যেন অন্যান্য দেশ-জাতির তুলনায় অগ্রসর। উগ্রতা, রুক্ষ্মতা, বদমেজাজ, চরিত্রহীনতা- এগুলো কিসের আলামত? কোনো কারণে এক কথা দ্বিতীয়বার বলার প্রয়োজন দেখা দিলে, লক্ষ্য করা যায়, স্বভাবতই আমাদের গলার রগ ফুলে ওঠে। তা হোক বাবা-মায়ের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে, কিংবা শিক্ষাগুরু বা মুরব্বি শ্রেনির অন্য কারও সাথে কথাবার্তায়। আমরা ক্রমে অধ:পতনের দিকে ধাবিত একটি জাতিতে পরিনত হচ্ছি দিনকে দিন। চট করে আমরা রেগে যাই। কথায় কথায় রেগে যাই। পান থেকে চুন খসলেই রক্ত আমাদের মাথায় উঠে যায়। রেগে মেগে অস্থির হয়ে পড়ি। আচার-ব্যবহার, কথাবার্তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ভুলে যাই। আপনি থেকে তুই তুমিতে নামতে আমাদের মুহূর্ত সময় লাগে না। অনর্থক আমরা রেগে যাই। ঝগড়া-বিবাদ যেন আমাদের রক্তে মিশে আছে। গ্রাম-গঞ্জে পুরুষে পুরুষে মারামারির পাশাপাশি মহিলাদের ভেতরে পর্যন্ত চলে চুলোচুলি। মহল্লায় মহল্লায় বিভক্ত হয়ে মারামারি। রক্তারক্তি খুনোখুনি। তীর বল্লম লেজা বর্শাসহকারে এক পক্ষ প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় ঝাপিয়ে পড়া। এরকম যুদ্ধাবস্থাও আমাদের দেশের কোনো কোনো এলাকায় এখনও বিদ্যমান। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলসহ মুন্সিগঞ্জ, বি-বাড়িয়ার কোনো কোনো এলাকাসহ দেশের আরও কিছু এলাকায় ঢাল তলোয়ার নিয়ে প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী মারামারির এ ধরণের দৃশ্য দু:খজনকভাবে আজও কদাচিত চোখে পড়ে।
আমাদের রাগ বেশি। কারণে অকারণে আমরা রেগে যাই। যার তার সাথে আমরা রেগে যাই। যখন তখন রেগে অস্থির হই। অগ্নিশর্মা হই। রাগে আমরা গড়গড় করি। আমরা রাগ করি। নিজের ওপর রাগ করি। ভাগ্যের প্রতি নাখোশ হই। আত্মীয়-স্বজনের প্রতি ক্ষুব্ধ হই। তাদের দোষারোপ করি। নিজের ব্যর্থতার জন্য আশপাশের মানুষদের দায়ী করে অন্যের উপরে ক্ষেপে যাই।
কাউকে যখন রাগতে দেখি, অবচেতনে অমর সাধক আমাদের প্রিয় কবি আল্লামা রুমি রহমাতুল্লাহি আলাইহির কবিতার অসাধারণ এই লাইনগুলো বারবার মনে পড়ে যায়-
'আজ খোদা খাহিমে তাওফিকে অাদব,
বেআদব মাহরুমে গাশত আজ ফাদলে রব।'
'আয় আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আদব তথা শিষ্টাচারের দাওলাত চাই, বেআদব আল্লাহ পাকের রহমত থেকে চির বঞ্চিত।'
আজ জলে স্থলে বিপর্যয়। গোটা সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে পাপাচারের কলুষ কালিমা। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি-শান্তির ভরসা নেই। পথে হাটতে গেলে বেপরোয়া গাড়ির চাপায় কখন যে ভবের লীলা সাঙ্গ হবে বলা মুশকিল। সন্তানকে শিক্ষালয়ে পাঠিয়ে কোনো মা-বাবাই আজ আর তার ঘরে ফিরে আসার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেন না। মেয়ে, সে যত ছোটই হোক, দুধের শিশু হোক, দুই-চার বছরের অবুঝ বাচ্চা হোক, কিংবা ষাট সত্তুর বছরের অতি বৃদ্ধা হোন কেউই আজ আর নিরাপদ নন। দ্বিপায়ী জানোয়ারের হাতে এদের কারও সম্ভ্রম-জীবনের নিরাপত্তা নেই। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে একটু অসতর্কতা আপনার প্রিয় কন্যা, বোন অথবা মায়ের জীবন-সম্ভ্রম এদের হাতে নি:শেষ হতে পারে।
অন্যদের, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের কি বলবো, আজ আলেম নামের এক শ্রেণির সার্টিফিকেটধারী লেবাসওয়ালা অমানুষও নীতিহীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে নেমে গেছে। ধর্ষন, শিশুদের বলাতকারের মত নিকৃষ্টতম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। তাদের একের পর এক অঘটনে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। সাধারণ মানুষ পর্যন্ত আজ তাদের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ। আফসোসের আর্তি তাদের চোখে মুখে। সবারই প্রশ্ন, হচ্ছেটা কি? এসব কিসের আলামত? মানুষের অন্তরে আলেম সমাজের প্রতি যে গভীর শ্রদ্ধাবোধ ছিল, আস্তে আস্তে তা শুন্যের কোটায় নেমে যাচ্ছে। একজন আলেম কিভাবে কন্যাতুল্য ছাত্রীর দিকে কুনজরে তাকায়? একজন শিক্ষক হয়ে কিভাবে কচি শিক্ষার্থীকে হত্যা করতে পারে? হত্যার পরিকল্পনা করতে পারে? কারও গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চিন্তা- হায় হায়! আলেম তো দূরের কথা, এও কি কোনো মানুষের কাজ হতে পারে? এওকি ভাবা যায়? এসব কি চিন্তায়ও আসতে পারে কোনো মানুষের?
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান বলে, আজকের এই যে জলে স্থলে এত বিপর্যয়, এই যে অশান্তির দাবানল হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এর পেছনে কারণ, আমাদের নৈতিকতার শিক্ষার অভাব। আদবের শিক্ষার অভাব। শিষ্টাচারের সত্যিকারের গুনাবলী আমরা অধিকাংশ লোকই অর্জন করতে পারিনি। আমাদের কথাবার্তা অসৌজন্যমূলক। আমাদের আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ। আমাদের ব্যবহার রুক্ষতায় পরিপূর্ণ। আমাদের মুখের ভাষা শালীনতাবোধহীন। আমাদের চলাফেরা লাগামহীন। আমাদের রুচিবোধ নিম্নপর্যায়ের। আর ফলশ্রুতিতে আমরা শিষ্টাচারহীন আদব লেহাজ ভদ্রতাবিহীন একটি জাতিতে পরিনত হচ্ছি দিনকে দিন। এ অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, বেআদবের কোথাও শান্তি নেই। আদব-শিষ্টাচারের অমূল্য সম্পদে যার অংশ নেই, হোক সে কোটিপতি, হোক সে সামাজিক স্ট্যাটাসে রথি মহারথি- প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাআ'লার নিকট এমন ব্যক্তির কোনো মূল্য নেই। কোনো দাম নেই। কোনো মর্যাদা নেই।
মানুষের নিকট যে ব্যক্তি তার আচরণের কারণে ঘৃনিত, আল্লাহ পাকের রহমত থেকেও সে বঞ্চিত। তা বাড়ি-গাড়ির মালিক সে যতই হোক না কেন।
ছবি কৃতজ্ঞতা: গুগল।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই মে, ২০১৯ রাত ১১:৪২
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আপনার প্রতিটি চরনে অজস্র ভালো লাগা রেখে গেলাম।