নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবি: সংগৃহীত।
করোনা থেকে বাঁচতে মাস্ক; কিন্তু ভুল মাস্কের বিপদের ভয়াবহতা ঠেকাবে কে?
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আজ আমরাও আক্রান্ত। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। কিন্তু উদ্বেগজনক সত্য হচ্ছে, দেশে বর্তমানে প্রচলিত মাস্কগুলোর বেশির ভাগই চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে মোট আমদানি করা ও উৎপাদিত মাস্কের সিংহভাগ হচ্ছে প্রচলিত নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক শপিং ব্যাগের কাপড় দিয়ে তৈরি। নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক কাপড় হচ্ছে বর্তমান বাজারের সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিক। এ–জাতীয় কাপড়কে বলা হয় পিপি-ফেব্রিক্স, অর্থাৎ প্রোপিলিনের পলিমার দিয়ে তৈরি এটি। পলিথিন যেমন ইথিলিনের পলিমার, পিপি-ফেব্রিক্স তেমন প্রোপিলিনের পলিমার দ্বারা তৈরি। ফলে নন-উভেন কাপড় তৈরিতে কোনো সুতা ব্যবহার করা হয় না; এটি সরাসরি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়।
এসব মাস্ক ব্যবহারে হতে পারে যে ধরণের রোগ:
এ–জাতীয় কাপড়ের তৈরি মাস্কে সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে কাপড়টির উভয় পাশে (ওপরে ও নিচে) প্রচুর পরিমাণ ফ্লটিং ফাইবার বা আলগা তন্তু (আঁশ-আঁশ) থাকে; এই আলগা তন্তুগুলোকে বলা হয় মাইক্রো-প্লাস্টিক। এ ধরনের কাপড়ে তৈরি একটি মাস্ক আপনি মাত্র কয়েক মিনিট নাকেমুখে রাখা মানে অসংখ্য মাইক্রো-প্লাস্টিক আপনার ফুসফুসে পুরে নেওয়া। অতিক্ষুদ্র এসব পার্টিক্যালের কিছু আপনার ফুসফুসের অত্যন্ত গভীরের টিস্যুতে আটকে যেতে পারে, যা দীর্ঘ মেয়াদে ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হতে পারে। সবচেয়ে ছোট কিছু উপাদান সরাসরি রক্তনালিতে চলে যেতে পারে, যা পরিণতিতে স্নায়ুরোগ, ক্যানসার, হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ অন্যান্য রোগের অতি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। মানবশরীরে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই, যার মাধ্যমে শরীর এসব উপাদান বের করে দিতে পারে অথবা নিঃশেষ করে দিতে পারে। ফলে এ জাতীয় মাস্ক পরিহার ও বর্জন করাই উত্তম।
এসব মাস্ক থেকে ছড়ায় নানাবিধ ভারী ধাতব:
মাস্ক যদি শপিং ব্যাগের কাপড়ের বদলে ভালো মানের নন-উভেন কাপড়েও বানানো হয়, তবুও তা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা অনুচিত। প্লাস্টিক নিজে মানবস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর আর প্লাস্টিক প্রসেসিংয়ে যুক্ত থাকা অন্যান্য রাসায়নিক, যেমন থ্যালেট, বিপিএ সমমাত্রায় ক্ষতিকর। সরাসরি নাকে সংযুক্ত থাকায় এ–জাতীয় কাপড়ে তৈরি মাস্ক থেকে উচ্চমাত্রায় থ্যালেট, লিড, মারকারি, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতব এবং বিপিএ উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করবে।
এসব রাসায়নিক জটিল রোগের কারণ:
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে এসব রাসায়নিক উপাদান মানবশরীরে ক্যানসার, জন্মগত ত্রুটি, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, লিভার ও চর্মরোগ, স্থূলতা, শ্বসনতন্ত্রের রোগ, হরমোনের তারতম্য, স্তন ক্যানসার, হাঁপানি, নারী-পুরুষের উর্বরতা হ্রাস, পুরুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা হ্রাস, শুক্রাণুর মান ও সংখ্যা হ্রাসসহ বহুবিধ রোগের সঙ্গে যুক্ত। উন্নত বিশ্বের সব দেশে এসব উপাদানের মাত্রা পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর তা বাজারজাত করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। দেশে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিধিবিধান বা রেগুলেশন আছে কি না, আমার জানা নেই। থাকলেও তার কতটুকু প্রয়োগ নিশ্চিত করা হয়, সেটি বিবেচ্য।
মাস্ক ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি :
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অনেকেই ফেস-মাস্ক ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকেই মাস্ক পরছেন ভুল পদ্ধতিতে। আবার অনেকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে কত সময় পর্যন্ত তাও নিশ্চিত নন।
ডিসপোজেবল মাস্ক, যাকে সার্জিক্যাল ফেস মাস্কও বলা হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের আশপাশে থাকা চিকিৎসক এবং হাসপাতালের নানান কর্মীরাও এটি ব্যবহার করেন। এটি চিকিৎসক এবং রোগী উভয়কেই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তবে এটি বাতাসের ছোট ছোট কণা আটকাতে পারে না। এই মাস্কগুলো মাত্র ৩ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি পরা উচিত নয়, এটি ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে না।
সার্জিক্যাল মাস্ক:
সার্জিক্যাল মাস্কের দুটি অংশ থাকে। একটি অংশ হালকা নীল রঙের বা অন্যান্য রং যেমন-গোলাপিও হতে পারে এবং আরেকটি অংশ সাদা রঙের। নীল অংশটি হচ্ছে ওয়াটারপ্রুফ আর সাদা অংশটি ফিল্টার, যা ভেদ করে জীবাণু ঢুকতে পারে না। আপনি যদি সুস্থ ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং বাইরের ধুলাবালি ও রোগ জীবাণুর আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চান, তাহলে সাদা অংশটি বাইরে এবং নীল অংশটি ভিতরে দিকে দিয়ে পরিধান করুন। কেননা সাদা অংশ দিয়ে ফিল্টার করেই বাতাস ভেতরে ফুসফসে ঢুকবে। আর আপনি যদি ঠাণ্ডা, জ্বর, হাঁচি, কাশি বা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত থাকেন, তখন নীল অংশটি বাইরে রেখে সাদা অংশটি ভেতরে ব্যবহার করবেন। এতে আপনার মুখ থেকে ক্ষতিকর কিছু বাইরে যেতে বাঁধা পাবে এবং অন্য কেউ সহজে আক্রান্ত হবে না।
সার্জিক্যাল মাস্ক কতবার ব্যবহার যোগ্য:
বেশির ভাগ মানুষই সাদা অংশটি মুখের ভেতরে রাখে এবং একই মাস্ক দিনের পর দিন ব্যবহার করতে থাকে। সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো, তবে তা ওয়ানটাইম ব্যবহার করতে হয়। বাজারে এক লেয়ারের মাস্কও পাওয়া যায়, যা ধুলা-ময়লা থেকে আমাদের বাঁচাতে পারলেও রোগ প্রতিরোধে কোন কাজই করে না। কাজেই সেগুলো ব্যবহার করা ঠিক নয়।
একটি মাস্ক কত সময় ব্যবহার করা যাবে
মনে রাখবেন, একটি মাস্ক একবারের বেশি ব্যবহার করবেন না। নিয়ম অনুযায়ী একটি মাস্ক ২ ঘণ্টার চেয়ে বেশি পড়ে রাখা যায় না। কোন কোন ভাল মানের মাস্ক একটানা ৮ ঘন্টার বেশি পড়া ঠিক না। কিন্তু আমাদের পক্ষে তো আর বার বার এই মাস্ক পরিবর্তন করা সম্ভব না। কাজেই সর্বোচ্চ এক দিন ব্যবহার করবেন এবং ব্যবহার শেষে যেখানে সেখানে না ফেলে রোগ জীবাণু যেন না ছড়ায় সেভাবে কাগজের প্যাকেটে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিন।
মাস্ক কোথায় ব্যবহার করা উচিৎ :
গণপরিবহন কিংবা জনাকীর্ণ স্থানে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মূলত মানুষের স্পর্শেই এটি বেশি ছড়িয়ে থাকে। তাই গাড়ি চালানোর সময় কিংবা জনশূন্য এলাকায় মাস্ক ব্যবহার না করলেও সমস্যা নেই। মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস ঠেকাতে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
সার্জিক্যাল কিংবা টেক্সটাইল মাস্কই অধিকতর নিরাপদ:
নিতান্ত প্রয়োজনে উচ্চ ঝুঁকিসম্পন্ন স্থানে পিপি মাস্ক অল্প সময়ের জন্য পরিধান করা যেতে পারে। তিন স্তরের সার্জিক্যাল মাস্ক ভালো বিকল্প হতে পারে। আন্তর্জাতিক মানসম্মত ল্যাবে (টেক্সটাইল এবং মাইক্রোবায়োলজিক্যাল) পরীক্ষিত কয়েক স্তরের টেক্সটাইল মাস্ক সর্বোত্তম সমাধান হতে পারে।
অধিকাংশ মাস্ক ফিল্টারবিহীন :
এসব মাস্ক এর আরেকটি দিক হচ্ছে, থার্মোপ্লাস্টিক এসব অধিকাংশ মাস্কে প্রতারক কিছু মাস্ক ব্যবসায়ী কোনো এয়ার ফিল্টার বা বায়ু ছাঁকনি ব্যবহার না করেও শুধু একটি প্লাস্টিক চাকতি দিয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে। কিছু অতিচালাক ব্যবসায়ী ফিল্টার চাকতির নিচে বসিয়ে দিয়েছে লাল, নীল নমনীয় প্লাস্টিক, যাতে সাধারণ কেউ তাদের এই প্রতারণা ধরতে না পারে। এ ক্ষেত্রে হয় প্লাস্টিক চাকতিটি শুধু দুপাশ থেকে চাপ দিয়ে লাগিয়ে দেওয়া (মাঝখানে কোনো ফিল্টার উপাদান নেই), নাহয় মাস্কটির নির্দিষ্ট জায়গাটি কেটে তাতে ফিল্টার কাপড় বা উপাদান না বসিয়ে মাঝখানে একটি নমনীয় প্লাস্টিক বসিয়ে দুই পাশ থেকে আটকে দিয়েছে। সত্যিকারের ফিল্টার না থাকার কারণে শ্বাস নেওয়ার সময় ফুসফুসের নেগেটিভ প্রেশারে তুলনামূলক অতিমাত্রায় মাইক্রো-প্লাস্টিক ব্যবহারকারীদের ফুসফুসে ঢুকে পড়ছে।
পিপি মাস্ক কখনোই ধোয়ার যোগ্য নয়:
সাধারণ অর্থে পিপি কাপড় ধোয়ার যোগ্য নয়, অজ্ঞতাবশত অনেকে এটি ধুয়ে আবার ব্যবহার করছেন; ধোয়ার ফলে আরও উচ্চমাত্রায় আলগা সুতা, থ্যালেট ও বিপিএ উপাদান মানবশরীরে প্রবেশ করছে। করোনার ঝুঁকি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে জাতিগতভাবে আমরা ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে চলে যাচ্ছি।
সর্বোচ্চ সতর্কতা সময়ের দাবি :
গণস্বাস্থ্য রক্ষায় মাস্ক ব্যবহার বিষয়ে নাগরিক, সব সংবাদমাধ্যম, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, মান নিয়ন্ত্রণ কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। সকলের সর্বোচ্চ সচেতনতাই ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারে আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীকে। সকলের সার্বিক সতর্কতা ও সচেতনতা একান্তভাবে কাম্য।
২| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০২
আকাশ০৭ বলেছেন: উপকারী পোষ্ট
৩| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: সবাইকে সঠিক তথ্যটা জানতে হবে। বুঝতে হবে। মানতে হবে।
৪| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:১৩
নতুন বলেছেন: বাঙ্গালী পুরাই কিউট জাতী।
সবাই মাস্ক পরে বসে আছে কিন্তু ধারনা নেই কি ধরনের মাস্ক করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কায`কর।
https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/when-and-how-to-use-masks
If you are healthy, you only need to wear a mask if you are taking care of a person with suspected 2019-nCoV infection.
Wear a mask if you are coughing or sneezing.
Masks are effective only when used in combination with frequent hand-cleaning with alcohol-based hand rub or soap and water.
If you wear a mask, then you must know how to use it and dispose of it properly.
৫| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৩২
নেওয়াজ আলি বলেছেন: উপভোগ্য পড়া। আল্লাহ সবাইকে সহী সালামতে রাখো।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৭
ফয়সাল রকি বলেছেন: উপকারী পোষ্ট। কিন্তু ভালো কোয়ালিটির মাস্ক তো পাওয়া যাচ্ছে না। করবো টা কী?