নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্ত জীবনের পথে শেষ যাত্রা

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৯:৪৪

ছবিঃ অন্তর্জাল।

অনন্ত জীবনের পথে শেষ যাত্রা

আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমার সন্তান, ভাই-বোন সবাই আমার বিছানার পাশে বসে আছেন। কিছু ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনও দাঁড়িয়ে আছেন এবং সকলেরই দৃষ্টি নিবদ্ধ আমার দিকে। আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছেন তারা। হঠাৎ করে আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিতে শুরু করি। ঘরে বসে থাকা লোকদের মধ্যে কেউ একজন পাঠ করছেন- 'লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লা-হ'। সাথে আরও কিছু পরিচিত বাক্য ও কালিমা। এই কালিমাগুলো আমি আজীবন পড়েছি। এগুলো আমার চিরচেনা। হাজার, লক্ষ বার কিংবা তারচেয়েও বেশি সংখ্যক বার আওড়ানো।

আমি দেখছি, আশেপাশের অন্যরাও অনুচ্চ স্বরে মুখ মেলাচ্ছে সেই আবৃত্তিকারের সাথে। তারাও পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে চির চেনা সুমধুর সেই শব্দ ও বাক্যগুলো। আমি বুঝতে পারছি, এই সময়ে আমার নিঃশ্বাস ওঠানামার সেই কষ্টটা একটু কমে এসেছে। আমার কাছে আরাম অনুভূত হতে শুরু করে। আমি চোখ খুলে সবকিছু দেখার চেষ্টা করছি। কত দিনের স্মৃতি বিজড়িত পরিচিত পরিবেশ প্রতিবেশ আর চেনা মুখগুলো দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করলাম আবার এবং আমি প্রথমবারের মত অবলোকন করলাম মৃত্যুর ফেরেশতাকে। তাকে আমি এক পলক দেখেই চিনে ফেললাম। হাদিসের বর্ণনা থেকে তাকে চিনে নিতে আমার একটুও বেগ পেতে হয়নি। তিনি আমার শিয়রের কাছে উপস্থিত। আমি বুঝে নিলাম, তিনি এসেছেন আমার রূহ কবজ করার জন্য। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পার্থিব জীবনের ক্ষনস্থায়িত্ব থেকে পারলৌকিক জীবনের চিরস্থায়ী জীবনে পৌঁছে দেয়ার জন্য। একটু পরেই হয়তো আমার দেহ থেকে আমার রূহ বা আত্মাকে তিনি বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন। অতঃপর আমার আত্মা বা রূহকে তিনি নিয়ে যাবেন। আমার রূহ বা আত্মা আমার দেহ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার পরে আমি আব্দুল্লাহ আর আব্দুল্লাহ থাকবো না। আমার অবয়বকে সকলে বলবে আব্দুল্লাহর লাশ। কি আশ্চর্য্য, এত দিন তাহলে আব্দুল্লাহ নামে আমাকে যে ডাকা হতো, আসলে সেই আব্দুল্লাহটা কে ছিল আমার ভিতরে? আমার রূহ বা আত্মা চলে যাওয়ার পরে আমি আর আব্দুল্লাহ নেই!

ভাবনায় ছেদ পরে আমার। সময়গুলো যেন খুবই হিসেব করা। মৃত্যুর ফেরেশতার মুহূর্তকাল তর সয় না। আমি লক্ষ্য করছি, খুব দ্রুততার সাথে প্রেক্ষাপটগুলো বদলে যেতে থাকে। খুবই দ্রুত। আমি তাকিয়ে থাকি। অবাক হই। ভাবনার গতিকেও হার মানায়। চোখের পলকে পাল্টে যায় সবকিছু। অনন্ত যাত্রার পথে আমার যেন দেরী হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড পানির পিপাসায় আমার গলা শুকিয়ে যায়। আমি একটু নড়তে চেয়েও পারিনি। কথা বলতে চেয়েও পারলাম না। শুধু সামান্য হা করি। সবাই হয়তো বুঝে ফেলেছেন যে, আমি পানি চাচ্ছি। কেউ একজন আমার মুখে কয়েক ফোটা পানি ঢেলে দিয়েছেন, এটা সম্ভবত 'জম জম' এর পানি যা আমি এমন কঠিন একটি মুহূর্তের জন্যই সংরক্ষণ করে রেখেছিলাম। হায় হায়! বাক শক্তি ছিল না বলে বলতে পারছিলাম না যে, এত সামান্য ফোটা ফোটা পরিমান পানি কেন দিচ্ছ আমাকে? আমি তো জীবনভর গ্লাস ভরে ভরে লিটারের পর লিটার পানি পান করতাম। তোমরা কি দেখনি? আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছিল এবং বলতে ইচ্ছে করছিল যে, সহায় সম্পদ যা কিছু অর্জন করেছি, সবই তো তোমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছি, যাওয়ার সময় আজ আমাকে একটু পানি দিতেও তোমাদের এত কার্পন্য?

সবাই আবার পড়তে শুরু করে 'লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লা-হ'। এই সময়টাতে আমি অনুভব করি যে, আমি আমার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলছি। আমি আমার বাকশক্তি আরও কিছুক্ষন আগেই হারিয়ে ফেলেছি, এমনকি আমার অনুভূতি বলে, আমি আমার সংবেদনশীলতা, চেতনা এবং অনুভূতিও হারিয়ে ফেলতে থাকি ক্রমশঃ। তবে আমি বুঝতে পারছি, আমার শ্রবনশক্তি এখনও অটুট। আমি দিব্যি শুনতে পাচ্ছি। সবার কথা আমার কানে স্পষ্ট বাজছে। আমার ঠোট আড়ষ্ট! আমি বলতে পারছি না। আমার সর্বাঙ্গ অবশ, আমি নড়াচড়া করতে পারছি না! আমার অনুভূতি বিকল, আমি কারও ডাকে সারা দিতে পারছি না। আমার চিন্তা ভাবনা করার ক্ষমতা থেমে গেছে, আমি কোনকিছু ভাবতে পারছি না। আমি শুধু শুনছি। শুনতে পাচ্ছি আমার প্রিয়জনেরা কাঁদছে। আমাকে হারানোর ব্যথা এবং দুঃখে কাঁদতে শুরু করেছেন তারা। আমি এখনও মৃত নই কিন্তু আমি প্রায় প্রাণহীন। আমি এবার লক্ষ্য করলাম, মৃত্যুর ফেরেশতা তার চূড়ান্ত কাজটি করতে এগিয়ে এলেন এবং আমার আত্মাকে একটি তীব্র ঝাঁকুনি দিয়ে বের করে নিলেন। এবার আর আমি এই পৃথিবীর কেউ নই। আমি বুঝতে পারি, আমি চলে গেছি মায়াময় এই পৃথিবী ছেড়ে। তাহলে আমি'টা কে? সত্যিকারার্থে কে এই আমি?

আমার সমস্ত সম্পদ, বাড়ি, গাড়ি, স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি, ব্যাংক ব্যালেন্স, পরিচিতি এবং সংযোগ, বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক, আত্মীয়তা এবং হৃদ্যতা- এগুলোর কোনোকিছুই এখন আর কোনো কাজে আসছে না। আমি এখন আর আব্দুল্লাহ নেই। পরিচিত হয়ে গেছি আব্দুল্লাহর লাশ হিসেবে। এই পরিচয় বলেই আমাকে সবাই সম্বোধন করছে এবং আমার নির্মিত চাকচিক্যময় বাড়ি, ঘর আর ভবনের পরিবর্তে আমার ঠিকানা হিসেবে কবর খননের কথা বলা হচ্ছে এবং সর্বোপরি আমাকে 'মৃতদেহ' বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। আমার কাছের লোকেরা আমার কবর প্রস্তুত করছেন এবং তারা মনে করছেন যে, মৃতদেহটি খুব বেশিক্ষন বাড়ির মধ্যে রাখা উচিত নয়। যে ঘরটি অতি যত্নের সাথে, অনেক কষ্টে, অনেক স্বপ্ন নিয়ে বসবাসের জন্য আমি নিজে তৈরি করেছিলাম এবং বসবাসও করে আসছিলাম সে ঘরটি আমার জন্য আজ খুবই সংকুচিত হয়ে আসছে। সবার থাকার স্থান হলেও আমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়া হল কিছুক্ষনের মধ্যেই। ঘরের সামনে একটি খাটিয়ায় অচেনা আগন্তুকের মত সাদা কাপড়ে ঢেকে রেখে দেয়া হয়েছে আমাকে। আমাকে আজ শেষ বারের মত গোসল করানো হবে। আমার গোসলের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বড়ই পাতা গরম পানিতে সিদ্ধ করা হচ্ছে। সেই পানিতে করানো হবে আমার সর্বশেষ গোসল। আমাকে গোসলের চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার মনে পড়ে গেল, আহ! কত দামি টাইলস আর উন্নত মানের সামগ্রীতে আমি সাজিয়েছিলাম আমার বাথরুমটি! কি নেই সেখানে! রয়েছে গরম পানি এবং ঠান্ডা পানির ঝর্ণা। মূল্যবান আসবাব পত্র। অতি মনোরম বাথটাব। সুগন্ধিতে ভরা সেই বাথরুমের বিলাসী গোসলের দামি সেই জিনিসপত্র আজ আর আমার নয়। সেই বাথরুমও আমার নয়। সেই বাথরুমে গোসল করার অধিকারও আমার নেই।

আমাকে সাদা সুতির কাফনে মোড়ানো হচ্ছে। আমার লাশ কবর পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কাঠের বাক্সে রাখা হয়েছে আমাকে। আমার দামি গাড়ি কিংবা নক্সা করা খাট এসবের কিছুই এখন আমার ব্যবহারের জন্য নয়।

আমার বারংবার নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছিল যে, কিসের জন্য আমি সারা জীবন ধরে অনেক মূল্যবান জিনিস সংগ্রহ করলাম? নিজের সেই জীবনের প্রতি ধিক্কার আসছিল যখন আমি অপ্রয়োজনীয় অঢেল সম্পদ উপার্জনের জন্য অবাদে মিথ্যা বলতাম, অন্যদের ঠকাতাম, ভেজালের আশ্রয় নিতে কুন্ঠিত হতাম না! আজ আমি অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছি যে, এগুলো, আমার অর্জনকৃত সেইসব সম্পদ আজকের এই বিদায়লগ্নে আমার সামান্য পরিমান কাজে আসছে না। আমার নিজের জীবনের প্রতি আফসোস হচ্ছে। আমার জন্য শত ধিক! কারণ, আমি আমার জীবনকে উত্তম কর্ম দ্বারা সুসজ্জিত করিনি। অন্যায় এবং অপরাধের পথে সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করেছি। লোভের বশিভূত হয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই সকল পথে চলে ফায়দা লাভের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছি। হায়! আমি গোটা জীবনটাই বৃথা নষ্ট করেছি। আমি ভুলে গেছি যে আমার শেষ যাত্রা কাছাকাছি এবং নিশ্চিত। আমি কেন এত পাপ করলাম? উহু! আমি আমার আসল অনন্তকালের জীবন ধ্বংস করেছি!

প্রিয় বন্ধু, আসুন না, এই কল্পনাটা নিজের জীবনের সাথে একবার মিলিয়ে নিই! এমন করুণ এবং হৃদয়বিদারক একটি দিন তো আমার জীবনেও আসবে। আসবেই। অবশ্যম্ভাবী। সমাগত। হয়তো খুবই নিকটবর্তী। তাই চলুন, নিজেকে প্রস্তুত করি। ভালো কাজ আমাদের অনন্তকালের যাত্রা এবং পরকালের জীবনকে করে তুলবে আনন্দময়। মৃত্যুর কথা আমরা ভুলে না যাই। মৃত্যু সুনিশ্চিত। মৃত্যু অতি নিকটে। একটিবারও ভেবে দেখেছি কি, এই পৃথিবী শুধু একটি ছোট স্বপ্নের মত! সুতরাং, আজই আমার জেগে ওঠার সময়। গাফলতের ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠি আজই, এখনই। উত্তম চরিত্রে, উত্তম কর্মে নিয়োজিত করি নিজেকে।

মৃত্যুকালীন সময়ের বর্ণনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিসঃ

একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَادِمِ اللَّذَّاتِ يَعْنِي الْمَوْتَ فَإِنَّهُ مَا ذَكَرُهُ أَحَدٌ فِي ضِيقٍ إِلَّا وَسَّعَهُ اللهُ وَلَا ذَكَرُهُ فِي سَعَةٍ إِلَّا ضَيَّقَهَا عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর। কারণ, যে ব্যক্তি কোন সঙ্কটে তা স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য সে সঙ্কট সহজ হয়ে যাবে এবং যে ব্যক্তি তা কোন সুখের সময়ে স্মরণ করবে, সে ব্যক্তির জন্য সুখ তিক্ত হয়ে উঠবে। -বাইহাক্বী, শুআবুল ঈমান ১০৫৬০, ইবনে হিব্বান ২৯৯৩, সহীহুল জামে’ ১২১০-১২১১

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ مُعَاذٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَنْ كَانَ آخِرَ كَلامِهِ لاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الجَنَّةَ رواه أَبُو داود والحاكم وَقَالَ صحيح الإسناد

মুআয (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -আহমাদ ২২০৩৪, ২২১২৭, আবূ দাঊদ ৩১১৮, হাকেম ১২৯৯, সহীহুল জামে’ ৬৪৭৯

আরেক হাদিসে এসেছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ : أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ - صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ : مَثَلُ ابْن آدَمَ وَمَاله وَأَهْله وَعَمَلِه كَرَجُلٍ لَهُ ثَلاَثَةُ إِخْوَة أَوْ ثَلاَثَةُ أَصْحَابٍ فَقَالَ أَحَدُهُمْ : أَنَا مَعَكَ حَيَاتكَ فَإِذَا مِتَّ فَلَسْتُ مِنكَ وَلَسْتَ مِنِّي وَقَالَ الآخَرُ : أَنَا مَعَكَ فَإِذَا بَلَغْتَ تَلْكَ الشَّجَرَة فَلَسْتُ مِنْكَ وَلَسْتَ مِنِّي وَقَالَ الآخَر : أَنَا مَعَكَ حَيًّا وَمِيِّتاً

আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম সন্তানের মাল, তার পরিবার এবং তার আমলের দৃষ্টান্ত হল এমন ব্যক্তির মত, যার তিনজন ভাই অথবা তিনজন সাথী থাকে। তাদের একজন বলে, আমি তোমার সাথে আছি, যত দিন তুমি জীবিত আছ। যখন তুমি মারা যাবে, তখন না তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে, আর না আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক থাকবে। দ্বিতীয়জন বলে, আমি তোমার সাথে আছি, যতক্ষণ না তুমি ঐ গাছটার কাছে পৌঁছে গেছো। যখন ঐ গাছটার কাছে পৌঁছে যাবে, তখন না তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে, আর না আমার সাথে তোমার কোন সম্পর্ক থাকবে। আর তৃতীয়জন বলে, আমি তোমার জীবদ্দশায়ও তোমার সাথে আছি এবং তোমার মরণের পরও তোমার সাথে আছি। -বাযযার ৮৩৫৬, সহীহ তারগীব ৩২৩২

মৃত্যুকালীন সময়ে ফেরেশতার আগমনঃ

বারা ইবন ‘আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে,

خَرَجْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فِي جِنَازَةِ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَبْرِ، وَلَمَّا يُلْحَدْ، فَجَلَسَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ، كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِنَا الطَّيْرَ، وَفِي يَدِهِ عُودٌ يَنْكُتُ فِي الْأَرْضِ، فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ: «اسْتَعِيذُوا بِاللهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا، "، ثُمَّ قَالَ: " إِنَّ الْعَبْدَ الْمُؤْمِنَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مَلَائِكَةٌ مِنَ السَّمَاءِ بِيضُ الْوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ الشَّمْسُ، مَعَهُمْ كَفَنٌ مِنْ أَكْفَانِ الْجَنَّةِ، وَحَنُوطٌ مِنْ حَنُوطِ الْجَنَّةِ، حَتَّى يَجْلِسُوا مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الطَّيِّبَةُ، اخْرُجِي إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنَ اللهِ وَرِضْوَانٍ ". قَالَ: "فَتَخْرُجُ تَسِيلُ كَمَا تَسِيلُ الْقَطْرَةُ مِنْ فِي السِّقَاءِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَأْخُذُوهَا، فَيَجْعَلُوهَا فِي ذَلِكَ الْكَفَنِ، وَفِي ذَلِكَ الْحَنُوطِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَطْيَبِ نَفْحَةِ مِسْكٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ " قَالَ: " فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ، يَعْنِي بِهَا، عَلَى مَلَإٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الطَّيِّبُ؟ فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ، بِأَحْسَنِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانُوا يُسَمُّونَهُ بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يَنْتَهُوا بِهَا إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَسْتَفْتِحُونَ لَهُ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ فَيُشَيِّعُهُ مِنْ كُلِّ سَمَاءٍ مُقَرَّبُوهَا إِلَى السَّمَاءِ الَّتِي تَلِيهَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ، فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: اكْتُبُوا كِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ، وَأَعِيدُوهُ إِلَى الْأَرْضِ، فَإِنِّي مِنْهَا خَلَقْتُهُمْ، وَفِيهَا أُعِيدُهُمْ، وَمِنْهَا أُخْرِجُهُمْ تَارَةً أُخْرَى ". قَالَ: " فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، فَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: رَبِّيَ اللهُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: دِينِيَ الْإِسْلَامُ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولَانِ لَهُ: وَمَا عِلْمُكَ؟ فَيَقُولُ: قَرَأْتُ كِتَابَ اللهِ، فَآمَنْتُ بِهِ وَصَدَّقْتُ، فَيُنَادِي مُنَادٍ فِي السَّمَاءِ: أَنْ صَدَقَ عَبْدِي، فَأَفْرِشُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَأَلْبِسُوهُ مِنَ الْجَنَّةِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى الْجَنَّةِ ". قَالَ: " فَيَأْتِيهِ مِنْ رَوْحِهَا، وَطِيبِهَا، وَيُفْسَحُ لَهُ فِي قَبْرِهِ مَدَّ بَصَرِهِ ". قَالَ: " وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ حَسَنُ الْوَجْهِ، حَسَنُ الثِّيَابِ، طَيِّبُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُرُّكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ لَهُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالْخَيْرِ، فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الصَّالِحُ، فَيَقُولُ: رَبِّ أَقِمِ السَّاعَةَ حَتَّى أَرْجِعَ إِلَى أَهْلِي، وَمَالِي». قَالَ: «وَإِنَّ الْعَبْدَ الْكَافِرَ إِذَا كَانَ فِي انْقِطَاعٍ مِنَ الدُّنْيَا وَإِقْبَالٍ مِنَ الْآخِرَةِ، نَزَلَ إِلَيْهِ مِنَ السَّمَاءِ مَلَائِكَةٌ سُودُ الْوُجُوهِ، مَعَهُمُ الْمُسُوحُ، فَيَجْلِسُونَ مِنْهُ مَدَّ الْبَصَرِ، ثُمَّ يَجِيءُ مَلَكُ الْمَوْتِ، حَتَّى يَجْلِسَ عِنْدَ رَأْسِهِ، فَيَقُولُ: أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْخَبِيثَةُ، اخْرُجِي إِلَى سَخَطٍ مِنَ اللهِ وَغَضَب. قَالَ: فَتُفَرَّقُ فِي جَسَدِهِ، فَيَنْتَزِعُهَا كَمَا يُنْتَزَعُ السَّفُّودُ مِنَ الصُّوفِ الْمَبْلُولِ، فَيَأْخُذُهَا، فَإِذَا أَخَذَهَا لَمْ يَدَعُوهَا فِي يَدِهِ طَرْفَةَ عَيْنٍ حَتَّى يَجْعَلُوهَا فِي تِلْكَ الْمُسُوحِ، وَيَخْرُجُ مِنْهَا كَأَنْتَنِ رِيحِ جِيفَةٍ وُجِدَتْ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ، فَيَصْعَدُونَ بِهَا، فَلَا يَمُرُّونَ بِهَا عَلَى مَلَأٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ، إِلَّا قَالُوا: مَا هَذَا الرُّوحُ الْخَبِيثُ؟ فَيَقُولُونَ: فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ بِأَقْبَحِ أَسْمَائِهِ الَّتِي كَانَ يُسَمَّى بِهَا فِي الدُّنْيَا، حَتَّى يُنْتَهَى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيُسْتَفْتَحُ لَهُ، فَلَا يُفْتَحُ لَهُ "، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠] فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: " اكْتُبُوا كِتَابَهُ فِي سِجِّينٍ فِي الْأَرْضِ السُّفْلَى، فَتُطْرَحُ رُوحُهُ طَرْحًا ". ثُمَّ قَرَأَ: ﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [الحج : ٣١] "فَتُعَادُ رُوحُهُ فِي جَسَدِهِ، وَيَأْتِيهِ مَلَكَانِ، فَيُجْلِسَانِهِ، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَنْ رَبُّكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا دِينُكَ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيَقُولَانِ لَهُ: مَا هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي بُعِثَ فِيكُمْ؟ فَيَقُولُ: هَاهْ هَاهْ لَا أَدْرِي، فَيُنَادِي مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ أَنْ كَذَبَ، فَافْرِشُوا لَهُ مِنَ النَّارِ، وَافْتَحُوا لَهُ بَابًا إِلَى النَّارِ، فَيَأْتِيهِ مِنْ حَرِّهَا، وَسَمُومِهَا، وَيُضَيَّقُ عَلَيْهِ قَبْرُهُ حَتَّى تَخْتَلِفَ فِيهِ أَضْلَاعُهُ، وَيَأْتِيهِ رَجُلٌ قَبِيحُ الْوَجْهِ، قَبِيحُ الثِّيَابِ، مُنْتِنُ الرِّيحِ، فَيَقُولُ: أَبْشِرْ بِالَّذِي يَسُوءُكَ، هَذَا يَوْمُكَ الَّذِي كُنْتَ تُوعَدُ، فَيَقُولُ: مَنْ أَنْتَ؟ فَوَجْهُكَ الْوَجْهُ يَجِيءُ بِالشَّرِّ، فَيَقُولُ: أَنَا عَمَلُكَ الْخَبِيثُ، فَيَقُولُ: رَبِّ لَا تُقِمِ السَّاعَةَ».

“আমরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একজন আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হই, এমনকি তার কবরের কাছে যাই, যা তখনও খোড়া হয় নি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে তাঁর চারদিকে (শান্তভাবে) বসে পড়ি, যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসা। এ সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে একখণ্ড কাঠ ছিল, যা দিয়ে তিনি জমিনের উপর আঘাত করছিলেন। এরপর তিনি মাথা উঁচু করে দুই বা তিনবার বললেন, “তোমরা কবরের ‘আযাব থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। অতঃপর তিনি বললেন, “মুমিন বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হয় তখন আসমান থেকে সাদা চেহারার একদল ফিরিশতা জমিনে নেমে আসেন, যেনো সূর্যের মতো উজ্জ্বল তাদের চেহারা, তাদের কাছে থাকে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি। তারা চক্ষুসীমার মধ্যে বসে পড়ে। অতঃপর মালাকুল মাউত (মৃত্যুর ফিরিশতা) আগমন করেন। তিনি তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর তিনি তাকে বলেন, হে পবিত্র আত্মা! আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সন্তুষ্টির দিকে বেরিয়ে আসো। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে আত্মাটি এমনভাবে প্রবাহিত হয়ে বেরিয়ে আসে যেমনিভাবে পানপাত্রের মুখ থেকে পানির ফোটা গড়িয়ে পড়ে। অতঃপর ফিরিশতারা আত্মাকে তাদের কাছে নিয়ে যায়। চোখের পলকের মধ্যেই তা কাফনের কাপড়ে ও জান্নাতী সুগন্ধিতে ভরে আসমানে নিয়ে যায়। তা থেকে তখন পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম মিসকের চেয়েও অধিক সুগন্ধ বের হতে থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ফিরিশতারা সেটি নিয়ে আসমানে উঠতে থাকেন। তারা যখনই আত্মাটি নিয়ে ঊর্ধ্ব আসমানে উঠতে থাকেন তখন সেখানকার ফিরিশতারা জিজ্ঞেস করেন, এ পবিত্র আত্মা কার? তখন তারা বলেন, অমুকের ছেলে অমুক, দুনিয়াতে তারা পরস্পর যেসব সুন্দর নামে ডাকত সেসব সুন্দর নাম তাদেরকে বলবেন। ফিরিশতারা যখন দুনিয়ার আসমানের শেষপ্রান্তে পৌঁছবে তখন তারা তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলবেন। তখন তাদের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেওয়া হবে। প্রত্যেক আসমানের লোকেরা তাদের পরবর্তী আসমান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে তাদেরকে বিদায় জানাতে তাদের পিছনে পিছনে চলবে। এভাবে সপ্তম আসমানে পৌঁছবে। মহান আল্লাহ তা‘আলা তখন বলেছেন, “আমার বান্দার আমলনামা ‘ইল্লিয়ীনে লিপিবদ্ধ করো এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। কেননা আমি তা থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করেছি, জমিনে তাদেরকে ফিরিয়ে নিবো এবং জমিন থেকেই তাদেরকে পুনরুত্থিত করবো।” বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তার রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। অতঃপর তার কাছে দুজন ফিরিশতা আসেন, তারা তাকে বসান এবং তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, আমার রব আল্লাহ। তখন তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তোমার দীন কী? সে বলবে, আমার দীন ইসলাম। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, ইনি হলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন ফিরিশতারা আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কীরূপে এগুলো জানলে? তখন সে বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, এর ওপর ঈমান এনেছি এবং একে সত্য বলে মনে করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী এরূপ ঘোষণা দিতে থাকবে, আমার বান্দা সত্য বলেছে, তার কবরে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের দিকে একটা দরজা খুলে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তার কবরে জান্নাতের মৃদুমন্দ বাতাস ও সুগন্ধ আসতে থাকে এবং সে ব্যক্তির কবরকে দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত করে দেওয়া হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে তার কাছে সুন্দর কাপড় পরিহিত, সুগন্ধি ব্যবহৃত একজন সুন্দর চেহারার লোক আসবে, অতঃপর তাকে বলবে, তোমাকে আনন্দিত করবে এমন সুসংবাদে আনন্দিত হও, এটি সে দিন যে দিনের ব্যাপারে তোমাকে ওয়াদা দেওয়া হয়েছে। তখন লোকটিকে বলা হবে, আপনি কে? তখন সে সুন্দর চেহারা ধারণ করে বলবে, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মৃত ব্যক্তি বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করুন, যাতে আমি আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।

বর্ণনাকারী বলেন, এরপরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফির ব্যক্তির মৃত্যুর অবস্থা বর্ণনা করে। তিনি বলেন, কাফির বান্দার যখন দুনিয়া ছেড়ে আখিরাতে যাওয়ার সময় হবে তখন তার কাছে আসমান থেকে বীভৎস কালো চেহারার একদল ফিরিশতা অবতরণ করবে। তাদের সাথে থাকবে মোটা গরম পশমী কাপড়। তারা তার সামনে চোখের সীমানা জোড়া হয়ে বসবে। অতঃপর মালকুল মাউত এসে তার মাথার সামনে বসবে। অতঃপর সে বলবে, হে খবিশ আত্মা! আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে বের হও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রূহকে তার শরীর থেকে এমনভাবে বের করা হবে যেভাবে শিক কাঁচা চামড়া থেকে বের করা হয়। অতঃপর নিমিষেই তা উক্ত গরম পশমী কাপড়ে রাখবে, এর থেকে পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মৃত পঁচা দুর্গন্ধের চেয়েও মারাত্মক দুর্গন্ধ বের হতে থাকবে। অতঃপর তারা রূহটি নিয়ে উপরে উঠতে থাকবে। যখনই তারা ফিরিশতাদের দলের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে তারা জিজ্ঞেস করবে, এ খবিশ রূহ কার? তারা বলবে, অমুকের ছেলে অমুকের, দুনিয়াতে তাকে সবচেয়ে খারাপ যে নামে ডাকা হতো সে নাম উল্লেখ করবে। এভাবে তারা প্রথম আসমানের দরজায় পৌঁছলে দরজা খুলতে আবেদন করবে; কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত তিলাওয়াত করেন,

﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِ٤٠﴾ [الاعراف: ٤٠]

“তাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৪০][1] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তার নাম জমিনের সর্বনিম্ন স্তরে সিজ্জীনে লিপিবদ্ধ করো। ফলে তার রূহ সেখান থেকে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াত পাঠ করলেন,

﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ٣١﴾ [الحج : ٣١]

“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোনো জায়গায় নিক্ষেপ করল।” [সূরা আল-হাজ্জ, আয়াত: ৩১]

অতঃপর তার শরীরে রূহ প্রবেশ করানো হবে। তখন দুজন ফিরিশতা এসে তাকে বসাবেন এবং প্রশ্ন করবেন, তোমার রব কে? তখন সে বলবে, হা-হা-লা-আদরী অর্থাৎ হায় আফসোস! আমি তো জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার দীন কী? সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। এরপর তারা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, এ ব্যক্তি কে, যাকে দুনিয়াতে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল? তখন সে বলবে, হায় আফসোস! আমি জানি না। তখন আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী এরূপ বলতে থাকবেন, সে মিথ্যা বলেছে। তার কবরে আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে আগুনের পোশাক পরিয়ে দাও এবং তার কবর থেকে জাহান্নামের দিকে একটা দরজা খুলে দাও; যাতে তার কবরে জাহান্নামের আগুনের প্রচণ্ড তাপ ও ভাঁপ আসতে থাকে। এরপর কবর তার জন্য এতই সংকুচিত হয়ে যায় যে, তার পাঁজরের একপাশ অপরপাশে চলে যায়। এরপরে নোংরা কাপড় পরিহিত, দুর্গন্ধযুক্ত একজন কুৎসিত চেহারার লোক তার কাছে আসবে। সে বলবে, তোমাকে যে সংবাদ কষ্ট দিবে (তোমার জন্য বিপর্যয় বয়ে আনবে) সে সংবাদ শুনে খুশি হও! এটি সে দিন যে দিনের ওয়াদা তোমাকে দেওয়া হয়েছিল। তখন মৃত ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করবে, তুমি কে? তোমার মতো কুৎসিত চেহারায় খারাপ কিছু আসে। তখন সে বলবে, আমি তোমার খারাপ আমল। তখন সে বলবে, হে আমার রব, কিয়ামত সংঘটিত করবেন না।”[2]

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ও অন্যান্য সকলেই এ হাদীসের সাব্যস্ত বিষয়গুলোর কথা বলে থাকেন ও বিশ্বাস করেন।

[1] এ দ্বারা তাদের জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব বুঝানো হয়েছে।

[2] মুসনাদ আহমাদ, ৩০/৪৯৯, হাদীস নং ১৮৫৩৪, মুসনাদের মুহাক্কিক শু‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ, সনদের বর্ণনাকারীগণ সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী; আবু দাউদ, হাদীস নং ৩২১২ (সংক্ষেপে), হাদীস নং ৪৭৫৩ (বিস্তারিত); নাসাঈ, হাদীস নং ২০৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৪২৬৯; আবু ‘আওয়ানা আল-ইসফারায়ীনী তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



প্রানীরা মরে গেলে, অনন্ত জীবন সেখানেই শেষ। পৃথিবী ও সুর্যের জীবনটাও অনন্ত নয়। মানুষের সাথে তাদের ধর্মেরও মৃত্যু হয়।

২৪ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:১৬

নতুন নকিব বলেছেন:



'অনন্ত জীবন' -এর মানে বুঝতে আপনার আরও কিছুটা সময় বাকি আছে হয়তো এখনও।

আসল কথা হচ্ছে, যেটা বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে আমাদের বুঝার প্রয়োজন, প্রাণীরা মরে গেলেই সব কিছু শেষ হয়ে যায় না। আমাদের চিন্তা করা উচিত, আমি পৃথিবীতে আসার আগে কোথায় ছিলাম, আবার মৃত্যুর পরে আমার গন্তব্য কোথায়? যিনি আমার রূহ বা আত্মা সৃষ্টি করে মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায় আমার ছোট্ট কচি দেহে তা প্রবেশ করিয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষের আকৃতি দান করলেন, তিনি কে? আবার আমার মৃত্যু কেন হচ্ছে, এটাও ভাবার দরকার। নিশ্চয়ই এইসবের পেছনে অদৃশ্য একজন কারিগর রয়েছেন। তিনি কে? কি তাঁর পরিচয়? এসব প্রশ্ন একবারও জাগে না মনে? যদি না জাগে, যদি এসব কোনো কিছুই ভাবতে না চান, তাহলে পারলে মৃত্যুকে ঠেকিয়ে দেন না, দেখি পারেন কি না।

অবশ্য, পরকালে যাদের বিশ্বাস নেই তাদের কাছে এই পৃথিবীই সব। তাদের ভাবনা সীমিত। বড় কিছু, অদৃশ্য কিছু, পেছনের এবং সামনের অনেক কিছু ভাবতে তারা অক্ষম।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১:১৩

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর সাজানো গোছানো লেখা।

২৬ শে আগস্ট, ২০২১ সকাল ৮:৫৩

নতুন নকিব বলেছেন:



অনন্তকালীন যাত্রার এই পোস্টে লোকজন ভয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছেন কি না, কে জানে! যেতে আসলে কেউই রাজী না, বুঝাই যায়। মৃত্যুর কথা স্মরণ করতেও আমরা আগ্রহী না। তা ভয়ে হোক অথবা অন্য যে কারণেই হোক।

যাক, মন্তব্যে তেমন কাউকে পাওয়া না গেলেও আপনাদের দু'জনকেই পেলাম। বুঝা যায়, আপনারা তবু কিঞ্চিত সাহসী। যদিও একই পোস্টে দুইজনের দুই রকম মন্তব্য ভাবনার বিষয়। অবশ্য আপনি এবং চাঁদগাজী ভাই আমার অধিকাংশ পোস্টেই মন্তব্য করে থাকেন। এটা আপনাদের দু'জনেরই আন্তরিকতার পরিচয়। সর্বোপরি ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.