নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিবাদনের ইসলামি পরিভাষা - জিকর তাসবিহতে সিক্ত থাকুক জিহবা আমার

২৮ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:৫৬

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম এর আরবি ক্যালিগ্রাফিটি https://pixabay.com ওয়েব থেকে সংগৃহীত।

অভিবাদনের ইসলামি পরিভাষা - জিকর তাসবিহতে সিক্ত থাকুক জিহবা আমার

বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত একজন মানুষ সত্যিকারার্থে সৌভাগ্যবান। তার জীবনের প্রতিটি কাজে সে সাওয়াবলাভ করে। ঘুমে জাগরণে, আহারে বিহারে, দিনে রাতে, ঘরে বাইরে তার কোনো কাজই অনর্থক হয় না। সে তার প্রত্যেক কাজের বিনিময়ে আল্লাহ তাআ'লার নিকট থেকে উত্তম বদলা লাভ করে। সাওয়াব বা নেকি পায়। এমনকি, সে টয়লেটে যেতে আসতেও সাওয়াব লাভ করে। মোটকথা, তার ওঠাবসা, কাজকর্ম, কথাবার্তায় অনবরত সে পাঠ করে নির্ধারিত তাসবিহাতে মাসনূনাহ বা সুন্নাত তাসবিহসমূহ এবং এর ফলে সে পেতে থাকে অগণিত সাওয়াব। পরস্পর দেখা সাক্ষাতে সে সালাম বিনিময় করে। এতে সে সাওয়াব লাভ করে। আশ্চর্য্য কিছু দেখলে বা শুনলে তার মুখে উচ্চারিত হয় সুবহা-নাল্লা-হ। সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে গেলে কিংবা পাহাড়ে চড়তে তার মুখে থাকে আল্লাহু আকবার জিকর। আবার, নেমে আসার সময় সে জপতে থাকে সুবহা-নাল্লা-হ তাসবিহ। মোটকথা, আলহামদুলিল্লা-হ, ইনশা-আল্লা-হ, মা-শা-আল্লা-হ, সুবহা-নাল্লা-হ ইত্যাদি অনুপম সুন্দর তাসবিহগুলো মিশে থাকে তার জীবনের সাথে। অনবরতঃ সে আউড়ে যেতে থাকে অসাধারণ এসব তাসবিহাত। তার জবান সিক্ত করে রাখে অমূল্য এসব কালিমা দ্বারা। এসব কালিমার দ্বারা অধিকাংশ সময় আল্লাহর জিকর বা স্মরণে মগ্ন এবং নিমগ্ন থাকে সে। আর এর ফলে অসীম ও অপরিসীম সওয়াব পেতে থাকে সে। কারণ, এগুলোও আল্লাহর জিকরের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ

নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। -সূরা আলে ইমরান : ১৯০

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَـٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

‘(তারাই বুদ্ধিমান) যারা উঠতে, বসতে ও শয়নে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে (আপনা-আপনি বলে ওঠে), হে আমাদের রব! এসব আপনি অনর্থক ও উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করেননি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে আপনি পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আজাব থেকে আপনি আমাদের মুক্ত করুন। -সূরা আলে ইমরান : ১৯১

হে মানুষ, কিসে তোমাকে ভুলিয়ে রাখলো?

এত এত নেআমত আমাদের প্রতি আল্লাহ তাআ'লা অবারিত করে দেয়ার পরেও আমরা অবাধ্য হই, তাঁর হুকুমের পরোয়া করি না, এমনকি, ক্ষনস্থায়ী দু'দিনের এই দুনিয়ার সাময়িক চাকচিক্যময় মিছে প্রেমে ডুবে বিস্মৃত হয়ে যাই তাকেই! আমাদেরকে কিন্তু তিনি ভুলে যান না কখনোই! রাগ করে বন্ধ করে দেন আমাদের প্রতি দেয়া তাঁর অবারিত নেআমতের বারিধারা! আহ, তাঁর দয়ার কি কোনো শেষ আছে! সীমা পরিসীমা কিংবা প্রস্থ-পরিধি আছে! আল্লাহু আকবার! তিনি সত্যিই মহান! মহান বলেই তো আমাদের উদ্দেশ্য করে এমনই দরদমাখা ভঙ্গিতে তিনি ডাকতে পারেন! তিনি ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا الْإِنسَانُ مَا غَرَّكَ بِرَبِّكَ الْكَرِيمِ

হে মানুষ, কিসে তোমাকে তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে বিভ্রান্ত করল? -সূরা আল ইনফিতার, আয়াত ০৬

الَّذِي خَلَقَكَ فَسَوَّاكَ فَعَدَلَكَ

যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন এবং সুষম করেছেন। -সূরা আল ইনফিতার, আয়াত ০৭

فِي أَيِّ صُورَةٍ مَّا شَاءَ رَكَّبَكَ

যিনি তোমাকে তাঁর ইচ্ছামত আকৃতিতে গঠন করেছেন। -সূরা আল ইনফিতার, আয়াত ০৮

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, দুনিয়াতে মানুষের উপরে আল্লাহ তাআ'লার সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে, তার জিহ্বাকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখা। আহ! কি আজিব কথাই না বলেছেন মহান এই মনিষী!

অভিবাদন নিয়ে কিছু কথাঃ

ইংরেজি ভাষার অনেক শব্দ আমরা এমনভাবে রপ্ত করে ফেলেছি যে, এগুলো ছাড়া একরকম বলতে গেলে আমাদের চলেই না। Thank You, Good Bye, Tata, Good Morning, Congratulation ধন্যবাদ, গুড বাই, টাটা, গুড মর্নিং, অভিনন্দন ইত্যাদি শব্দগুলো অহরহ আমরা বলে থাকি। এসব শব্দ আপাতঃ দৃষ্টিতে দূষনীয় কিছুও নয়। ব্যবহারেও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে, আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, ইসলামি সংস্কৃতি বা পরিভাষার অংশ এগুলো নয়। একজন মুসলিম তার জীবনের প্রতিটি কাজে সাওয়াব লাভ করতে পারেন যে মাসনূন তাসবিহ বা জিকর ব্যবহার করে সে জিকর তো নয়ই। বরং, আরও গভীরভাবে চিন্তা করলে এ কথা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, এগুলো মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনতেও পারে না। যদিও বর্তমানে আমাদের কিছু কিছু মুসলিম ভাই বোনও ইসলামের সুন্দর, সুশোভিত ও সুচিন্তিত জিকর এবং তাসবিহাতের গুরুত্ব উপলব্ধি না করে অন্যদের ব্যবহৃত এসব পরিভাষায় অভিবাদন জানিয়ে নিজেদের স্মার্ট ভাবতে পছন্দ করেন। বস্তুতঃ ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারের মধ্যেই যে মুসলমানদের প্রকৃত কল্যান ও সফলতা এই সত্যটি তারা হয়তো বাস্তবিকতার নিরিখে বুঝতে সক্ষম হননি। তাই আমাদের উচিত অন্যদের পরিভাষা পরিহার করে ইসলামি পরিভাষাগুলো গ্রহণ করা। এখানে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ইসলামি সংস্কৃতির কিছু পরিভাষা উল্লেখ করা হলো যা নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে চালু করতে পারলে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা প্রায়শই লক্ষ্য করে থাকি, কারও সঙ্গে দেখা হলে বা মোবাইল ফোন কিংবা মেসেঞ্জারে কথা বলার সময় Hi, Hello ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। কথার শুরুতে এগুলো না বলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলা যায়। যার অর্থ- 'আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক'। এটা একটি অসাধারণ দোআও বটে। আপনি যদি সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন তাহলে যার সাথে আপনার দেখা হল অথবা, মোবাইল ফোন কিংবা মেসেঞ্জারে যাকে ফোন দিয়েছেন তার জন্য আপনার প্রথম কথাতেই উচ্চারিত হল চমৎকার একটি দোআ। লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে, প্রত্যুত্তরে আপনাকেও সে ফিরিয়ে দিবে একইরকম হৃদ্যতাপূর্ণ দোআ। সেও আপনাকে উত্তরে বলবে ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। অর্থাৎ, 'আপনার প্রতিও আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ হতে বর্ষিত হোক শান্তি ও দয়া'। -সহিহ মুসলিম : ২০৫৫

সুতরাং, পারস্পারিক অভিবাদনে এরচেয়ে সুন্দর, চিত্তাকর্ষক এবং হৃদ্যতাপূর্ণ বাক্য আর কি হতে পারে?

কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ

একইরকমভাবে, কেউ আপনার কাছে ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলে 'Fine কিংবা Nice, ভালো আছি, ভালো নেই, অসুস্থ, আছি মোটামুটি, আছি কোনোরকম' - এই জাতীয় অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ এবং হতাশাজনক উত্তর না দিয়ে প্রথমেই বলতে পারেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’। অর্থাৎ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআ'লার। প্রশ্ন আসতে পারে যে, তাহলে বিপদগ্রস্তাবস্থায় কিংবা অসুস্থাবস্থায় থাকলেও কি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হবে? এর উত্তর হচ্ছে, এই যে আমাদের বেঁচে থাকা এটাও তো বিশাল বড় এক নেআমত। কিছু বিপদ মুসিবত না হয় আছে, তবু তো বেঁচে আছি। এখনও যে বেঁচে আছি সে জন্যও তো আল্লাহ তাআ'লার কাছে শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। তাই নয় কি? তিনিই তো আমাদের জীবনদাতা এবং এর নিয়ন্ত্রণও তো একমাত্র তিনিই করেন। প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস তো তাঁর ইশারাতেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। তাছাড়া, আমার চেয়ে অধিক সমস্যা কিংবা বিপদেও তো অনেকে আছেন। তাদের চেয়ে আমাকে যে আল্লাহ তাআ'লা ভালো রেখেছেন, সে জন্য শুকরিয়া আদায় করা উচিত না? হ্যাঁ, সমস্যা যদি থেকেই থাকে, প্রথম কথাতেই সেটা 'আছি কোনও রকম' টাইপের অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ উত্তরে প্রকাশ না করে, এরপরে আস্তে ধীরে তা বলতে পারেন। তেমনি কোনো ভালো সংবাদ বা হালাল কিছু অর্জনের ক্ষেত্রেও 'Good News', 'ইউরেকা', 'সুখবর', 'শুভ সংবাদ' ইত্যাদি না বলেও ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে পারেন। হাদিসের নির্দেশনা এমনই। -ইবনে মাজাহ : ৩৮০৩-৩৮০৫

আল্লাহবিশ্বাসী প্রতিটি ঈমানদার ব্যক্তিই মনে করে, ভালো-মন্দ সচ্ছলতা-অসচ্ছলতা সুখ-দুঃখ সবকিছুর তিনিই মালিক। তাঁর ইচ্ছাতেই পথের ফকির কখনো বড় অট্টালিকার মালিক হয়ে যায়, আর কাড়ি কাড়ি সম্পদের মালিকও সবকিছু হারিয়ে পথে নেমে আসে। মুমিনমাত্রই এ বিশ্বাস দৃঢ়তা ও আস্থার সঙ্গে হৃদয়ে লালন করে। এ বিশ্বাসে ভর করেই বিপদাক্রান্ত মুমিন ‘আল্লাহর ইচ্ছা’ বলে সান্ত্বনা পায়। আবার কোনো নিআমত পেলে এ বিশ্বাসেই সে উচ্চারণ করে- শোকর আলহামদু লিল্লাহ কিংবা এসবই আল্লাহর দান।

হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, তোমার পরবর্তীতে আমি এক উম্মত পাঠাব, কাঙ্খিত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয় তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি অনাকাঙ্খিত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১২৮৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪১৬৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৬৭০৪

উম্মতে মুহাম্মদীর এই চরিত্র এভাবেই আল্লাহ তাআলা প্রকাশ করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট। অন্য এক হাদিসে বিষয়টি আরও পরিষ্কার প্রতিভাত হয়েছে। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.

মুমিনের বিষয়াদি বড়ই আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯

কৃতজ্ঞতা আদায় যে কেবলই এক কাক্সিক্ষত বিষয় এমন নয়, বরং এর ব্যতিক্রম ঘটলে পবিত্র কুরআনে উচ্চারিত হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারিও-

لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذابِيْ لَشَدِيْدٌ.

তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭

বুখারী শরীফে বর্ণিত প্রাসঙ্গিক চমৎকার একটি ঘটনাঃ

এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে বর্ণিত একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি, তাদের একজন ছিল শ্বেতরোগী, একজনের মাথায় ছিল টাক, আরেকজন ছিল অন্ধ। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তাদের নিকট এক ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতরোগীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘(শরীরের) সুন্দর বর্ণ আর সুন্দর চামড়া। মানুষ যে আমাকে অপছন্দ করে!’ ফেরেশতা তখন তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার রোগ দূর হয়ে গেল এবং তার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর হয়ে গেল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, উট। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী উটনী দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। এরপর ফেরেশতা চলে গেলেন টেকো ব্যক্তির কাছে। তাকেও জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘সুন্দর চুল। মানুষ যে আমাকে এ টাকের জন্যে অপছন্দ করে!’ ফেরেশতা তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার টাক দূর হয়ে গেল এবং তার মাথা সুন্দর সুন্দর চুলে ছেয়ে গেল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, গরু। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। সবশেষে ফেরেশতা গেলেন অন্ধব্যক্তির কাছে। তার কাছেও একই প্রশ্ন; তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘আল্লাহ যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতেন, আমি তাহলে মানুষদের দেখতে পারতাম।’ ফেরেশতা তখন হাত বুলিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ কোনটি? সে বলল, ছাগল। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী ছাগল দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। এরপর তাদের উট গরু আর ছাগলে আল্লাহ যথেষ্ট বরকত দিলেন। কারও মাঠভর্তি উট, কারও মাঠভর্তি গরু আর কারও মাঠভর্তি ছাগল। ফেরেশতা আবার এলেন। প্রথমেই উটের মালিকের কাছে গিয়ে বললেন, আমি মিসকিন, সফরে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। তিনি তো তোমাকে সুন্দর গায়ের রং, সুন্দর চামড়া আর এ ধনসম্পদ দান করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটি উট দাও, তাহলে আমি আমার সফর শেষ করে ফিরে যেতে পারব। সে বলল, আমার তো কত মানুষকে দিতে হয়! (তোমাকে দিতে পারছি না।) ফেরেশতা এরপর বলল, আমি তো মনে হচ্ছে তোমাকে চিনতে পারছি। তোমার কি শ্বেতরোগ ছিল না, যে কারণে মানুষ তোমাকে অপছন্দ করত? এরপর আল্লাহ তোমাকে এসব দান করলেন। সে বলল : এগুলো তো আমার বাপ-দাদার সম্পদ! ফেরেশতা বললেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থাতেই ফিরিয়ে দেন। এরপর ফেরেশতা গেলেন গরুর মালিকের কাছে। তার কাছেও একই ভাষায় সাহায্যের আবদার করলেন। সেও একই ভাষায় ফিরিয়ে দিল। ফেরেশতাও তার জন্যে একই বদদুআ করলেন; যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থাতেই ফিরিয়ে দেন। এবার ফেরেশতা ছাগলের মালিকের কাছে গিয়ে বললেন, আমি মিসকিন মুসাফির, সফরে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। তিনি তো তোমার চোখ ভালো করে দিয়েছেন আর এ ধনসম্পদ দান করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটি ছাগল দাও, যেন আমি আমার সফর শেষ করে ফিরে যেতে পারি। সে বলল, আমি তো অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার চোখ ভালো করে দিয়েছেন; আমি দরিদ্র ছিলাম, তিনি আমাকে ধনসম্পদ দান করেছেন। তুমি যা ইচ্ছা নিয়ে নিতে পার। তুমি যাই কিছু নেবে আমি তোমাকে কিছু বলব না। ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তোমার কাছেই থাক; তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে, আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার দুই সঙ্গীর ওপর তিনি অসন্তুষ্ট। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৬৪

ডুবে আছি মহান স্রষ্টার অফুরন্ত নেআমতেঃ

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষ আল্লাহ তাআলার কী পরিমাণ নিআমত ভোগ করে তা কি কল্পনা করা যায়! সুস্থ দেহ, সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, সুস্থ মন, সুস্থ পরিবেশ- সবকিছুই তো তাঁর নিআমত। সামান্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হলেই বুঝে আসে এ নিআমতের মর্ম। সুস্থ মাথা নিয়ে দিব্যি ছুটে বেড়াচ্ছে যে, মাথাব্যথার মতো দেখা যায় না এমন একটি রোগেও সে কাবু হয়ে পড়ে। উঠতে-বসতে, নিদ্রা-জাগরণে, ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আমরা তাঁর নিআমতের সাগরে ডুবে আছি সর্বক্ষণ। এ নিআমত গণনার সাধ্য নেই কারও। আল্লাহ পাক তো বলেই দিয়েছেন-

وَإِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللهِ لا َتُحْصُوْهَا

তোমরা যদি আল্লাহর নিআমত গুনতে চাও তাহলে তা গুনে শেষ করতে পারবে না। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৩৪

প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত দুআ পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলিঃ

প্রতিদিনকার প্রতিটি পদক্ষেপে তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন এ নিআমতের কৃতজ্ঞতাসম্বলিত বিভিন্ন দুআ।' সেই দুআগুলোই পাঠ করা উচিত আমাদের। কিছু দুআ এবং জিকর এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে যেগুলোর কিছু কিছুর পরিবর্তে আমরা অন্য ভাষার কিছু শব্দকে আপন করে নেয়ার চেষ্টা করছি দিনকে দিন। চলুন, দেখে নিই এবং জেনে নিই হাদিসে বর্ণিত সঠিক শব্দগুলো-

ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা অবলীলায় All Right, I will try ইত্যাদি বলে থাকি। বস্তুতঃ ইসলাম আমাদের এগুলো না বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ, 'যদি আল্লাহ চান' কথাটি বলতে শেখায়। -সূরা কাহাফ : ২৩-২৪

কোনো বিপদের কথা শুনলে Very Sad না বলে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলা বিধেয়। কেননা, হাদিসে তো আমাদের এটাই শিখিয়েছেন প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থ- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য। -সহিহ মুসলিম : ২১২৬

কারও প্রশংসা করার সময় Well done না বলে ‘মা-শাআল্লাহ’ বলা নির্দেশিত। প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষা থেকে আমরা এটাই পেয়ে থাকি। ‘মা-শাআল্লাহ’ অর্থ- আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। -সহিহ মুসলিম : ৩৫০৮

ব্যতিক্রম ও আশ্চর্যবোধক কোনো কিছু দেখলে বা শুনলে Oh my God না বলে হাদিসের নির্দেশনা অনুসরণ করে আমাদের বলা উচিত ‘সুবহানাল্লাহ’। ‘সুবহানাল্লাহ’ অর্থ- আল্লাহ পবিত্র ও মহান। -সহিহ বুখারি : ৬২১৮

তেমনি আল্লাহর মহত্ব কিংবা বড়ত্ব, অথবা, কারও দুঃসাহসিক কোনো কাজ দেখলে Wow! না বলে, ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে পারি আমরা। ‘আল্লাহু আকবার’ অর্থাৎ- আল্লাহ মহান। -সহিহ বুখারি : ৬২১৮

কারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে Thank you না বলে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলার মধ্যে অনেক ফায়দা। এর অর্থ- আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিদান দিন। তিনিও একই শব্দ বললে তার প্রতি উত্তরে হাইয়্যাকাল্লাহ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। -সহিহ বুখারি : ৩৩৬

সম্মানিত কারও আগমনে Welcome না বলে ‘আহলান সাহলান’ বলতে পারি। এর অর্থ- আপনার প্রিয়জনদের কাছে মনোরম পরিবেশে এসেছেন।

কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় আমরা ভদ্রতার খাতিরে বলি Good Bye অথবা Tata। প্রিয় পাঠক, ভদ্রতার খাতিরে যদি সত্যিই আমরা এই শব্দগুলো বলে থাকি, দ্বীনের খাতিরে, সুন্নতের খাতিরে আজ থেকে না হয় চলুন না, এর পরিবর্তে আসল কথাটা বলা শুরু করি ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলার দ্বারা। ‘আল্লাহ হাফেজ’ বললে তো ‘আল্লাহকে হেফাজতকারী সাব্যস্ত ও নিযুক্ত করে দেয়া হয়'। এরচেয়ে অধিক উত্তম বিদায়ী সম্ভাষন প্রকাশক শব্দ আর কি হতে পারে? আমার বুঝে আসে না, আচ্ছা, Good Bye শব্দের না হয় একটা অর্থ রয়েছে। Good Bye মানে, শুভ বিদায় কিন্তু কথা হচ্ছে, Tata শব্দের মানেটা কি? আগডুম বাগডুম এর মত এসব অর্থহীন শব্দ আমরা কেন ব্যবহার করছি? কেন আমরা আমাদের বাচ্চাদের চোখ বন্ধ করে শিখিয়ে যাচ্ছি অর্থহীন এসব শব্দ ও বাক্য?

সকালে Good Morning, মধ্যাহ্নের পরে Good Afternoon, বিকেলে Good Evening এবং রাতে Good Night না বলে সবগুলো ক্ষেত্রে ‘ফি আমানিল্লাহ’ বলতে পারেন। এর অর্থ- আপনি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকুন বা আপনাকে আল্লাহর নিরাপত্তায় অর্পন করলাম। আপনাকে আল্লাহর নিরাপত্তায় অর্পন করলাম। বাহ! কত চমৎকার কথা! মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআ'লার নিরাপত্তায় অর্পন করার চেয়ে উত্তম, কল্যানকর এবং নিশ্চিন্ততার আর কি হতে পারে?

একইরকমভাবে এই সময়গুলোতে যে কারও সাথে সালাম বিনিময়ও করা যায়। কেউ দোয়া চাইলেও ‘ফি আমানিল্লাহ’ এবং ‘বা-রাকাল্লাহ’ বলার অভ্যাস গড়ে তোলা। ‘বা-রাকাল্লাহ’ -এর অর্থ- আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুন। -সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি : ১০১৩৫

এ ছাড়া, যে কোনো হালাল কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করলাম। -বুখারি : ৫৩৭৬

হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআ'লার। -তিরমিজি : ২৭৪১

হাঁচিদাতার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। -বুখারি : ৬২২৪

কোনো ভুল বা গুনাহর কথা বলে ফেললে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। -সূরা মুহাম্মদ : ১৯

ওপরে ওঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন। -বুখারি : ২৯৯৩

কোনো বাজে কথা কিংবা আল্লাহর আজাব-গজবের কথা শুনলে বা মনে পড়লে ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমরা আল্লাহর কাছে মুক্তি চাই। -বুখারি : ৬৩৬২

অভিবাদন প্রকাশের এমন আরও ইসলামি পরিভাষা রয়েছে। বর্ণিত আরবি পরিভাষাগুলো নিছক প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা, সুখ-দুঃখ প্রকাশের ভাষাই নয়, এগুলোর প্রায় সবই দোয়া ও সুন্নাত-জিকির। এগুলোর মাধ্যমে একে অপরের জন্য দোয়া করা হয়। যার জন্য দোয়া করা হয় তিনি তো উপকৃত হনই, যিনি দোয়া করেন তিনিও উপকৃত হন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা উভয় পক্ষকেই সাওয়াব দান করেন এবং নিরাপদে রাখেন। তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বরকত নাজিল হতে থাকে।

যিকিরের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু আয়াতঃ

কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলতা অর্জন কর।-সূরা আনফাল : ৪৫

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্বরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়, জেনে রাখ আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।-সূরা রা’দ : ২৮

আরো বলা হয়েছে, (তরজমা) যারা ঈমানদার তারা এমন যে যখন তাদের সামনে আল্লাহর নাম নেওয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে।-সূরা আনফাল : ২

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, যাদের হৃদয় ভয়ে কম্পিত হয় আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে।-সূরা হজ্ব : ৩৫

অন্য আয়াতে বলেন, (তরজমা) আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।-সূরা আনকাবুত : ৪৫

আরো বলেছেন, (তরজমা) স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়।-সূরা আরাফ : ২০৫

মুমিনদের সর্ম্পকে বলেছেন, যারা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও শায়িত অবস্থায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে আসমান যমিন সৃষ্টির বিষয়ে। হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি।-সূরা আলে ইমরান : ১৯৯

মুনাফিকদের বিষয়ে বলেছেন, যখন তারা নামাযে দাঁড়ায় তখন তারা শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য দাঁড়ায় এবং তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।-সূরা নিসা : ১৪২

যিকিরের ফযীলত সম্পর্কিত কিছু হাদিসঃ

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করতেন।-সহীহ মুসলিম ১/২৮২; সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা ৪

হযরত আবূ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিসের কথা বলব না, যা তোমাদের সমস্ত আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ; তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সবচেয়ে পবিত্র; তোমাদের মর্যাদাকে আরো বুলন্দকারী; আল্লাহর রাস্তায় সোনা-রুপা খরচ করা থেকে এবং জিহাদের ময়দানে শত্রুর প্রাণ নেওয়া ও শত্রুর হাতে প্রাণ দেওয়া থেকেও উওম? সাহাবারা বললেন, অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, তা হল আল্লাহর যিকির।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৩৭৭; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯০

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার পথে জুমদান পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে চলছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা চলতে থাক এই যে জুমদান পাহাড়। মুফাররিদরা অগ্রগামী হয়েছে। সাহাবীরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুফাররিদরা কারা? তিনি বললেন, ঐসব নারী ও পুরুষ, যারা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৬৭৬

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। ... ঐ ব্যক্তি, যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করেছে এবং তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছে।-বুখারী, হাদীস : ৬৪৭৯

হযরত মুআয রা. থেকে বর্ণিত। এক সাহাবী বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার কাছে ইসলামের বিধান অনেক মনে হয়। তাই আমাকে এমন একটি বিষয় বলে দিন যার উপর আমি সর্বদা আমল করতে পারি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার জিহবাকে আল্লাহর যিকিরে তরতাজা রাখ।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৩৭৫; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আমার বান্দা! তুমি যখন নির্জনে আমাকে স্মরণ কর তখন আমিও তোমাকে নির্জনে স্মরণ করি। আর যখন তুমি আমাকে কোনো মজলিসে স্মরণ কর তখন আমি তার চেয়ে উওম মজলিসে তোমার আলোচনা করি।-শুআবুল ঈমান, হা. ৫৫১

হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, এক হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা যতক্ষণ আমাকে স্মরণ করতে থাকে এবং আমার যিকিরের কারণে তার ঠোঁট নড়তে থাকে, ততক্ষণ আমি তার সাথে থাকি। (অর্থাৎ আল্লাহর রহমত তার সাথে থাকে)।-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১০৯৬৮; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৩৭৯২

হযরত আবু হুরায়রা রা. ও হযরত আবু সায়ীদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহকে স্মরণ করে তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখেন,আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঢেকে নেয়,এবং তাদের উপর ছাকিনা নাযিল হয়, আর আল্লাহ তাআলা তার নিকটতম ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা উল্লেখ করেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৭০০; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩০

হযরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ আল্লাহর যিকিরের জন্য একত্রিত হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টিই একমাত্র উদ্দেশ্য হয় তখন আসমান হতে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া হয়েছে এবং তোমাদের গোনাহসমূহ নেকীতে পরিণত হয়েছে।- মুসনাদে আহমদ ৩/১৪২, হাদীস : ১২৪৫৩; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫৩৪

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে প্রবেশ করার পর জান্নাতবাসীরা দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস করবে না, শুধু ঐসময়ের জন্য আফসোস করবে, যা দুনিয়াতে আল্লাহর যিকির ছাড়া অতিবাহিত করেছে।-শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫১২; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস : ১৬৭৪৬

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যখন জান্নাতের বাগানসমূহের নিকট দিয়ে যাও তখন সেখানে খুব বিচরণ কর। সাহাবারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, যিকিরের হালকাসমূহ।-তিরমিযী, হাদীস : ৩৫১০; শুআবুল ঈমান, হাদীস : ৫২৯

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর যিকির এত বেশী করতে থাক যে, লোকেরা পাগল বলে।-মুসনাদে আহমদ ৩/৬৮, ৭১, হাদীস : ১১৬৫৩; ইবনে হিববান, হাদীস : ৮১৪

হযরত আবু হুরায়রা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল বস্ত্ত অভিশপ্ত তবে আল্লাহর যিকির ও তার সাথে সং©র্শস্নষ্ট বিষয় এবং আলেম ও তালেবে ইলম ছাড়া।-তিরমিযী, হাদীস : ২৩২২; ইবনে মাজাহ, হাদীস : ৪১১২

শেষের কথাঃ

পরিশেষে, এসব শব্দ সাওয়াব অর্জনের কারণ ছাড়াও এগুলো ইসলাম ধর্মের শেআর বা প্রতীক কিংবা বলা যায় নিদর্শন। এগুলো আমাদের নিজস্বতা, স্বকীয়তা এবং স্বাতন্ত্রের ধারক ও বাহক। নিজস্বতা এবং স্বকীয়তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অন্যান্যরা এগিয়ে থাকলেও পরানুকরণপ্রিয় আমাদের দীনতা কেন যেন মনে হয় ক্ষমাহীনতার পর্যায়ে চলে যাচ্ছে দিনকে দিন। আমরা ক্রমেই বিসর্জন দিচ্ছি সবকিছু। 'কিছুই হবে না' মনে করে, অথবা, অন্যরা আধুনিক ভাববে, ইত্যাদি চিন্তা করে নিজস্বতার সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে দিয়ে অন্ধানুকরণে গা ভাসিয়ে নিশ্চিন্তে নির্বিকার থাকছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের ক্ষমা করুন। দ্বীন ইসলামকে সত্যিকারার্থে আকড়ে থেকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা সঠিক পালন করার তাওফিক আমাদের দান করুন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০২১ রাত ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্ম নিয়ে লেখা এবং পড়া- মানে সময়ের অপচয়।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

নতুন নকিব বলেছেন:



এটা একান্তই আপনার অভিব্যক্তি। আপনার ধারণা হয়তো মোটেই সঠিক নয়। কারণ, ধর্ম নিয়ে মানুষ লিখছেন এবং পড়ছেন। প্রচুর সংখ্যক মানুষ এই কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এই সংখ্যাটা শুধু কোটি কোটি নয়, বরং শত শত কোটি মানুষ ধর্ম নিয়ে পৃথিবীতে পড়াশোনা করছেন।

শুভকামনা জানবেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.