নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
অনেকেই আক্ষেপ করে বলে থাকেন যে, ইবাদতে স্বাদ পাই না, আগের মত মন বসে না, একাগ্রতা আসে না - এই সমস্যার সমাধান কি?
ইবাদতে স্বাদপ্রাপ্তির বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুতঃ ঈমানি দুর্বলতা থেকেই এই সমস্যার উদ্ভব। ধ্বংসাত্মক এই সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে যে আমলগুলোয় অভ্যস্ত হওয়া প্রয়োজন...
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নাম ও গুণাবলী সম্মন্ধে জানাঃ
তাওহিদ তথা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার একত্ববাদের প্রতি বিশ্বাসই হচ্ছে ঈমানের মূল। তাওহিদের এই বিশ্বাসকে যত গভীর, গাঢ় ও প্রগাঢ় করা সম্ভব হবে, ঈমানের শক্তিও তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ কারণে আল্লাহ তাআ'লার সমস্ত নাম ও গুণাবলীসহ আল্লাহ তাআ’লার পরিচয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআ’লা এবং তাঁর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যতই বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে তার ঈমানও তত বৃদ্ধি পাবে। এ জন্যই যে সমস্ত আলেম আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা এ সম্পর্কে জ্ঞানহীন আলেমদের চেয়ে ঈমানের দিক থেকে অধিক শক্তিশালী।
সৎসঙ্গ অবলম্বনঃ
দৈনন্দিন জীবনে আপনি কোন লোকদের সাথে ওঠাবসা করেন? ভালো লোকের সংস্পর্শ আপনার জীবনকে ভালো দিকে নিয়ে যাবে। পক্ষান্তরে মন্দ লোকের সাহচর্য্য পতনের দিকে ধাবিত করিয়ে দিবে। তাই এমন লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাঁদের সংস্পর্শে গেলে তাদের দেখাদখি ঈমান এবং আমল বৃদ্ধি পায়। যিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ গুজার, তার সাথে কিছুটা সময় বসুন। তার পাশে বসলে তিনি তো ভুল করে হলেও তার তাহাজ্জুদের গল্প আপনাকে শুনিয়ে দিবেন। এতে আপনার মনেও তাহাজ্জুদের ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি হবে। আপনার অনিচ্ছায়ও এটা তৈরি হবে। এমন লোকদের সাথে মিশতে চেষ্টা করুন, যাঁরা অন্যকে উত্তম আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ
‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ -সূরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯
## কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতে অধিক পরিমানে ব্যাপৃত হোনঃ
অধিক পরিমানে কুরআনে কারিমের তিলাওয়াতে ব্যাপৃত হওয়া ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম আমল। তাই বেশি পরিমাণে কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করুন বা তিলাওয়াত শ্রবণ করুন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে—
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয়
কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দিগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। -সূরা: আনফাল, আয়াত : ২
অধ্যয়ন করুন সিরাতে আমবিয়া ওয়াস সালেহীনঃ
আমবিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামের সিরাত অধ্যয়ন করুন। বিশেষ করে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনালেখ্য এবং সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ুন। কেননা, মহান আল্লাহ তাআ'লা মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর প্রশান্ত করার জন্য পবিত্র কুরআনে অন্যান্য নবীদের ঘটনাবলী বর্ণনা করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কেরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। -সূরা: বাকারা, আয়াত : ১৩
এ আয়াতের তাফসিরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা যেভাবে ঈমান এনেছে, তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো।’ -তাফসিরে তাবারি, সংশ্লিষ্ট আয়াত।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚ وَجَاءَكَ فِي هَـٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
“আর আমি রসূলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে বলছি, যদ্দ্বারা আপনার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে আপনার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য ওয়াজ ও স্মরণিকা এসেছে।” -সূরা হুদ, আয়াত: ১২০
অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির করুনঃ
অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য জিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর জিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর জিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।’ -সুরা : আর রাদ, আয়াত : ২৮
হাদিসে জিকিরকে অন্তরের মরিচা দূর করার পদ্ধতি বলা হয়েছে। তাই অধিক পরিমানে আল্লাহর জিকির ঈমান বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখুন ইসলামের সৌন্দর্য্যগুলোঃ
ইসলামের সৌন্দর্য্য সম্পর্কে জানুন। কেননা, ইসলামের সৌন্দর্য্য ও বৈশিষ্ট্য যুগে যুগে মানুষকে মুগ্ধ করেছে এবং ঈমানের প্রতি ধাবিত করেছে। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই সৎপথ অবলম্বনকারী। -সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭
আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুনঃ
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুন। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা আযাবের ভয়ে মলিন হয়ে যেত। কেননা, সামুদ জাতি আযাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফুর্তিতে মেতেছিল। -মুসলিম, হাদিস : ৮৯৯
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয়ই আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্যে। -সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০
সবকিছুর উপরে প্রাধান্য দিন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকেঃ
সব কিছুর চেয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে প্রাধান্য দিন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে;
১. যে কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে; ২. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ তাকে কুফর থেকে পরিত্রাণ করার পর পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার কাছে পছন্দনীয় হবে।’ -বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৭
আখিরাতের বিশালতার তুলনায় দুনিয়ার অতি সামান্যতার কথা ভাবুনঃ
আখিরাতের বিশালতার তুলনায় দুনিয়ার অতি সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاء أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاء فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالأَنْعَامُ حَتَّىَ إِذَا أَخَذَتِ الأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَآ أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلاً أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالأَمْسِ كَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমনি, যেমনি আমি আসমান থেকে পানি বর্ষন করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে জমীনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এল যা মানুষ ও জীব-জন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি জমীন যখন সৌন্দর্য্য সুষমায় ভরে উঠলো আর জমীনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল, এগুলো আমাদের হাতে আসবে, হঠাৎ করে তার উপর আমার নির্দেশ এল রাত্রে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তুপাকার করে দিল যেন কালও এখানে কোন আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি নিদর্শণসমূহ সে সমস্ত লোকদের জন্য যারা লক্ষ্য করে। -সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪
বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই হবে আল্লাহর জন্যঃ
বন্ধুত্ব ও শত্রুতা উভয়টিই হতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টি ও রাজি খুশির জন্য। হাদিসের নির্দেশনা এমনই। সুতরাং, মুমিনদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব রাখুন। আর অবিশ্বাসীদের সঙ্গে সম্পর্কছেদ করুন। কেননা, দ্বীনের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
‘নিঃসন্দেহে তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল এবং ঈমানদাররা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত আদায় করে এবং তারা বিনম্র।’ -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৫
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَمَن يَتَوَلَّ اللّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ فَإِنَّ حِزْبَ اللّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৬
আরেক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الَّذِينَ اتَّخَذُواْ دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে মুমিনগণ, আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা ঈমানদার হও। -সূরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৭
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে, আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে, আল্লাহর জন্য প্রদান করে এবং আল্লাহর জন্য প্রদান থেকে বিরত থাকে, সে ঈমান পরিপূর্ণ করেছে।’ -আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮১
বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ উপাদানঃ
ঈমানি দুর্বলতার চিকিৎসায় বিনয় ও লজ্জাশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ, এটি আল্লাহভীতির সূচক। লজ্জা ঈমানের অঙ্গ। আবু মাসউদ বদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ আগের নবীদের বাণী থেকে এ কথা জেনেছে যে, যখন তোমার লজ্জা নেই তখন তুমি যা ইচ্ছা তা-ই করো।’ -সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৯
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, এই হাদিসের ব্যাখ্যা দুইভাবে করা যায়—
এক. কাজ ও তার নির্ধারিত ফলাফল বিষয়ক। অর্থাৎ, যার লজ্জা নেই সে যা ইচ্ছা করতে পারে।
দুই. তা সীমা ও অনুমোদন সংক্রান্ত আদেশ। অর্থাৎ, যে কাজ তুমি করতে ইচ্ছা পোষণ করছ, সেদিকে খেয়াল করো, যদি তা লজ্জাজনক না হয় তবে তা করো। তবে মতটি সঠিক এবং বেশির ভাগের মত।
তবে জ্ঞানার্জনে লজ্জা নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জ্ঞানান্বেষণে লজ্জা না করায় আনসারি নারীদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আনসারি নারীরা কতই না উত্তম! লজ্জা কখনো তাদের ধর্মের বিষয়ে জ্ঞানান্বেষণে বিরত রাখতে পারে না।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৭২
অনুরূপ সত্য কথা বলা বা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে লজ্জা নেই। পবিত্র কুরআনে এসেছে,
وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ
‘...কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে লজ্জাবোধ করেন না...।’ -সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩
বেশি বেশি সৎ কাজ সম্পাদন করতে সচেষ্ট হোনঃ
অধিক পরিমানে সৎ কাজ সম্পাদন করতে সচেষ্ট হোন। সৎ আমল যতই বৃদ্ধি পাবে, ঈমান ততই বৃদ্ধি পাবে। এই সৎ আমল মুখের কথার মাধ্যমে হোক, কিংবা কাজের মাধ্যমে হোক। যেমন- যিক্র আযকার, নামায, রোযা এবং হজ্জ ইত্যাদি। এইসকল কিছুই ঈমান বৃদ্ধির মাধ্যম। পবিত্র কুরআনে সৎ কাজের প্রতি অধিক তাগিদ দেয়া হয়েছে।
ঈমান সুদৃঢ় রাখতে চমৎকার কিছু দুআঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এই দুআটি দ্বারা প্রার্থনা করতেন,
اللهُمَّ زِدْنَا إِيْمَاناً وَيَقِيْناً وَفِقْهاً.
আল্লাহুম্মা যিদনা ঈমানান ওয়া ইয়াকীনান ওয়া ফিক’হা। -মুসনাদ আহমদ, খন্ড-০১, হাদিস নং 48
অর্থাৎ, হে আল্লাহ, আমাদের বিশ্বাস, আমাদের নিশ্চয়তা এবং আমাদের বিবেচনা শক্তি বাড়িয়ে দিন।
এখানে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন আমাদের বিশ্বাস অর্থাৎ, ঈমানকে বৃদ্ধি করে দেন, বিশ্বাসের ঐকান্তিকতা বা স্থিরতাকে বৃদ্ধি করেন এবং আল্লাহ তাআলাকে চেনার, জানার ও বোঝার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে দেন। চমৎকার অর্থবোধক এই ছোট্ট দুআটি আসুন, আজই শিখে নিই। কয়েকবার পড়লেই যে কারও মুখস্ত হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আরেকটি সুন্দর দুআ, যে দুআটি নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সহচর মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাঃ) কে ইয়েমেনে পাঠানোর প্রাক্কালে শিখিয়েছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমতা দান করুন আপনাকে স্মরণ করার, আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর, এবং আপনার ইবাদত করার। -হাকিম, খন্ড-০১, পৃষ্ঠা ৪৯৯
এই সংক্ষিপ্ত দুআটিও পাঠ করা যায়-
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
হে সকল হৃদয় নিয়ন্ত্রনকারী (আল্লাহ তাআলা), আমার হৃদয়কে আপনার দ্বীনের উপর (স্থির ও অটলভাবে) স্থাপিত করুন। -সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৩৪৪৪
নেক আমলে মনোনিবেশ এবং পাপের কাজ বর্জন করাই হোক প্রত্যয়ঃ
সর্বোপরি বেশি বেশি নেক আমল করা এবং যাবতীয় গুনাহ বা পাপের কাজ বর্জন করাই হোক আমাদের হৃদয়ের প্রত্যয়। কেননা, যে কোনো নেক আমল ঈমানকে বৃদ্ধি করে। এ জন্য কুরআন মজিদে যত জায়গায় ঈমানের আলোচনা এসেছে তত জায়গায় পাশাপাশি নেক আমল করার নির্দেশনাও বর্ণিত হয়েছে। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নিকট কায়মনোবাক্যে দুআ করতে হবে যে,
اَللَّهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الإِِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِي قُلُوبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ، اَللَّهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ غَيْرَ خَزَايَا وَلاَ مَفْتُونِينَ.
'হে আল্লাহ! আপনি ঈমানকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন এবং ঈমানকে আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও আপনার অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপছন্দনীয় ও ঘৃণিত করে দিন এবং আমাদেরকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যুদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে বাঁচিয়ে রাখুন। লাঞ্ছিত, অপদস্ত ও বিপর্যস্ত না করে আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের সাথে সম্পৃক্ত করুন।' -মুসনাদ আহমদ : হাদিস নং ১৪৯৪৫, হাদিস বিডি ডট কম
اْللّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ، وَقُدْرَتَكَ عَلَى اْلَخلْقِ، أَحْيِنِي إِذَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْراً لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَشْيَتَكَ فِي الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، وَأَسْأَلُكَ كَلِمَةَ الْحَقِّ فِي الْغَضَبِ وَالرِّضَا. وَأَسْأَلُكَ الْقَصْدَ فِي الْفَقْرِ وَالْغِنَى. وَأَسْأَلُكَ نَعِيمًا لاَ يَنْفَدُ، وَأَسْأَلُكَ قُرَّةَ عَيْنٍ لاَ تَنْقَطِعُ. وَأَسْأَلُكَ الرِّضَا بَعْدَ الْقَضَاءِ، وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ. وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ، وَالشَّوْقَ إِلَى لِقَائِكَ، مِنْ غَيْرِ ضَرَّاءَ مُضِرَّةٍ، وَلاَ فِتْنَةٍ مُضِلَّةٍ، اَللَّهُمَّ زَيِّنَّا بِزِينَةِ الإِيمَانِ، وَاجْعَلْنَا هُدَاةً مُهْتَدِين.
হে আল্লাহ! দৃষ্টির অন্তরালবর্তী ও দৃষ্টিগ্রাহ্য সকল বিষয়ে যেন আপনাকে ভয় করতে পারি। হে আল্লাহ! যদি জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে জীবিত রাখুন, আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে আমাকে মৃত্যু দান করুন। হে আল্লাহ! সাক্ষাতে এবং অনুপস্থিতি উভয়াবস্থায় আপনাকে ভয় করে চলার তাওফিক প্রার্থনা করি। খুশি ও ক্রোধ (সুখ-দুঃখ) উভয়াবস্থাতেই আমি আপনার নিকট সত্য কথা বলার তাওফিক প্রার্থনা করি। সচ্ছল-অসচ্ছল সকলাবস্থায় আমি আপনার নিকট মিতব্যয়িতা প্রার্থনা করি। প্রার্থনা করি এমন নেয়ামত যা শেষ হবার নয়। প্রার্থনা করি অনিঃশেষ ও অফুরন্ত এমন নেয়ামত যা চক্ষু জুড়িয়ে দেয়। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি জ্ঞাপনের তাওফিক প্রার্থনা করি। প্রার্থনা করি মৃত্যুর পরে সুখময় প্রশান্তির জীবন। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আপনাকে দেখার তৃপ্তি কামনা করি, কামনা করি আপনার সাথে সাক্ষাৎ লাভের আগ্রহ-ব্যাকুলতা যা লাভ করলে আমাকে স্পর্শ করবে না কোনও ধরণের অনিষ্ট, আর আমাকে সম্মুখীন হতে হবে না এমন কোন ফিতনার যা আমাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঈমানের অলংকারে বিভূষিত করুন আর আমাদেরকে কবুল করুন পথ প্রদর্শক ও হেদায়েতের পথিক হিসেবে। -সুনানে নাসায়ি, ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫৪, হাদিস বিডি ডট কম
বিনয়, নম্রতা ও একাগ্রতার সাথে প্রার্থনার হাত বাড়িয়ে আল্লাহ তাআ'লার নিকট হৃদয়ের আকুলতা জানাতে থাকুন যে, হে আল্লাহ! হে মহান মালিক! আপনি আমাদের ঈমানকে মজবুত ও সুদৃঢ় করে দিন। গাফলতের অলস নিদ্রা থেকে জেগে ওঠার তাওফিক আমাদেরকে প্রদান করুন। দ্বীনের প্রতিটি কাজকে আমাদের জন্য সহজ করে দিন। দ্বীন পরিপালন আমাদের কাছে প্রিয় থেকে প্রিয়তর করে দিন। আল্লাহুম্মা আমিন।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৪
নতুন নকিব বলেছেন:
সঠিক বলেছেন। শুকরিয়া।
শুভকামনা জানবেন।
২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৮
কামাল১৮ বলেছেন: মানুষ একটা সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করছে তাই একটু মানসিক দিক থেকে অস্থির।কোন বিষয়েই মন বসাতে পারছেনা।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:০৭
নতুন নকিব বলেছেন:
মানুষ একটা সামাজিক পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে সময় অতিবাহিত করছে
-হয়তোবা।
তাই একটু মানসিক দিক থেকে অস্থির।কোন বিষয়েই মন বসাতে পারছেনা।
-আপনার এই ধারণাটা অন্য অনেকের বেলায় সঠিক হলেও অন্ততঃ সত্যিকারের প্রাকটিসিং মুসলিমদের বিষয়টা একটু ভিন্ন। কারণ, ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তাআ'লার নির্দেশনা মেনে পরকালের কল্যান বিবেচনায় নিয়েই চলতে হয়। যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, একজন নামাজী ব্যক্তি কখনোই তার নামাজ ছেড়ে দিতে পারেন না। ইচ্ছে করলে আপনি নিজে এটা পরিক্ষা করেও দেখতে পারেন। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায়কারী কোনো একজন ব্যক্তিকে যে কোনো ধরণের প্রলোভন দিয়ে কিংবা যে কোনো কিছুর বিনিময়ে এক ওয়াক্ত নামাজ ছেড়ে দিতে রাজী করাতে পারেন কি না, টেস্ট করে দেখতে পারেন। আমার মনে হয়, আপনি এই টেস্টে বিজয়ী হতে পারবেন না।
যা-ই হোক, টেস্টটা যদি আপনি করতে রাজী হন এবং সত্যি সত্যি কখনো করতে সক্ষম হন, রেজাল্ট আমাদেরকে জানানোর অনুরোধ থাকলো।
শুভকামনা।
৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৪০
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
খুবই মুল্যবান দোয়ার কথা বলেছেন ।
হে আল্লাহ দ্বীনের প্রতিটি কাজকে
আমাদের জন্য সহজ করে দিন ।
শুভেচ্ছা রইল
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৭
নতুন নকিব বলেছেন:
মূল্যবান মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রিয় আলী ভাই।
আপনার সাক্ষাৎপ্রাপ্তি সবসময়ই আনন্দের।
শুভকামনা আপনার জন্যও।
৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৪
রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মকর্মে আমার মন নেই।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৫
নতুন নকিব বলেছেন:
কারণটা জানতে পারি?
শুভকামনা জানবেন।
৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৩
নূর আলম হিরণ বলেছেন: শয়তানের জন্য ধর্মকর্মে মানুষ স্বাদ পায়না।
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৫
নতুন নকিব বলেছেন:
তাই! আপনার মন্তব্য মূল্যবান।
শুভকামনা।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৩
*আলবার্ট আইনস্টাইন* বলেছেন: বিনয় ও নম্রতা মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি করে।