নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ছবিঃ অন্তর্জাল।
হৃদয় আমার দেয় জুড়িয়ে আযানেরই ধ্বনি
আযান। পৃথিবীর সুমধুর শব্দসমষ্টির অনন্য সমাহারে বিমুগ্ধতা সৃষ্টিকারী অসাধারণ এক সুরশৈলী। আযান নিয়ে যুগে যুগে কালে কালে পৃথিবীর নানান দেশের নানান ভাষার কত কত কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী রচনা করেছেন কাব্যকথা সঙ্গীত। আর মনের মাধুরি মিশিয়ে শব্দের বুননে তারা আযানের মিষ্টতার উপলব্ধিকে তুলে ধরেছেন নিজ নিজ ভাষায়। নিজেদের অভিব্যক্তিতে। শৈশবে মহাকবি কায়কোবাদের আযান কবিতা পড়ে মুগ্ধ হতাম। আজও অমর সে কবিতার অনবদ্য লাইনগুলো মনে মগজে ঘুরে ঘুরে ফিরে বারবার-
কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে ছোটবেলায় শুনতাম আযান নিয়ে প্রিয় কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের হৃদয়ের অনুভূতি। আযানকে তিনি কতই না ভালোবাসতেন, আহ! আযানের সাথে, মসজিদের সাথে, নামাজের সাথে, নামাজীদের সাথে সর্বোপরি নামাজ যার উদ্দেশ্যে নিবেদিত হয়, সেই মহান মালিক স্রষ্টা মহিয়ানের প্রতি প্রাণের অতলান্ত গভীরে যদি অনিঃশেষ প্রেম আর অন্তহীন মায়াভরা শ্রদ্ধার মিশ্রণে বিশ্বাসের বাতি প্রজ্জ্বলিত না হতো তাহলে তিনি কি গেয়ে উঠতে পারতেন,
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।
আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে।
গোর – আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।
কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।
কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লার নাম জপতে চাই) ।।
আযান : দিনরাতের চব্বিশ ঘন্টা বিশ্বময় বেজে চলা অনন্য এক সুরশৈলীঃ
এমন কত কবিতার ছন্দেই তো আযানের মিষ্টতাকে আটকাতে চেয়েছেন কবি সাহিত্যিকগণ। এই কবিতারা যেন পুরনো হয় না। মলিন, ম্লানতায় ঝাপসা হয়ে আসে না। এসব কবিতার আবেদন চির দিনের। চির কালের। চিরন্তন বলতে যা বুঝায়, এসব কবিতা সেই চলমানতা আর চিরন্তনতার ছোঁয়ায় বিমোহিত। সে কারণেই এসব কবিতার কিছু লাইন রয়েছে, আযানের সুমিষ্ট আহবান কানে এলে, যেগুলো হৃদয়ের তারে তারে প্রাণের শোনিতধারে গুঞ্জরিত হয়ে ওঠে আজও। শিরা উপশিরায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করে এখনও। এ যেন এক অতি প্রাকৃতিক আহ্বান ধ্বনি, যার মাঝে ‘যাতে এলাহী ও নূরে এলাহীর’ নূরের বিকিরণ প্রতিনিয়ত ঘটেই চলেছে। কেননা, ঘূর্ণায়মান পৃথিবীতে এমন কোনো মুহূর্তই অতিবাহিত হয় না, যে মুহূর্তটিতে কোথাও না কোথাও ইথারের তরঙ্গমালায় শব্দের অনুপম দ্যোতনা সৃষ্টি করে উচ্চারিত হচ্ছে না আযানের সুমধুর ধ্বনি।
আযান: মুমিনের অন্তর জাগিয়ে তোলা চিরন্তন আহবানঃ
মসজিদের মিনার হতে দিন-রাত মিলিয়ে প্রতিদিন পাঁচবার মুয়াজ্জিনের সুললিত কণ্ঠে ভেসে আসে আযানের সুমধুর আওয়াজ। মুগ্ধকর সেই সুরলহরি মুমিনের চিত্তকে নির্মোহ আনন্দে ভরে দেয়। মুয়াজ্জিনের এই সুমধুর আওয়াজ আমাদের প্রতিদিনই বার্তা দিয়ে যায় মহান প্রভুর স্মরণে মনোনিবেশ করার। তাঁর সামনে মাথানত করার জন্য মসজিদের পানে ছুটে যাওয়ার, তাঁর সামনে সিজদায় অবনত হওয়ার জন্য বিনয় ও নম্রতার সাথে, উত্তম সাজে সজ্জিত হয়ে নামাজের জামাআতে শরিক হওয়ার। প্রতি ওয়াক্ত নামাজের সময় আযান দেয়া হয়। বস্ততঃ বারবার আযানের শব্দগুলো উচ্চারণ করার দ্বারা মুমিনের অন্তরকে আল্লাহ তাআ'লার স্মরণে জাগিয়ে তোলা হয়। আযানের বিমুগ্ধ আহবান শুনে মুমিনের অন্তকরণ বিগলিত হয়। চোখ অশ্রুসজল হয়। হৃদয় মন আপ্লুত, তৃপ্ত-পরিতৃপ্ত হয়। হজরত মুআবিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সুদীর্ঘ গ্রীবার অধিকারী হবেন মুয়াজ্জিনরা।’ -সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৭
আযান শব্দের অর্থঃ
আরবি আযান শব্দের অর্থ হলো ‘আল-ই’লান’ অর্থাৎ, জানিয়ে দেয়া, শুনিয়ে দেয়া, ঘোষণা জারি করা। আযান উচ্চারণের মাধ্যমে নামাজে উপস্থিত হওয়ার ঘোষণাই নিকট ও দূরের মুমিন-মুসলমানদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাপিডিয়ায় আযানের সংজ্ঞায় লেখা হয়েছে-
আযান আরবি শব্দ, এর অর্থ আহবান করা বা ঘোষণা করা। শুক্রবারের জুমু‘আর নামায ও দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে যোগদানের জন্য আহবানসূচক কয়েকটি নির্দিষ্ট বাক্যসমষ্টির পারিভাষিক নাম ‘আযান’।
আল্ কোরআনে আযান শব্দের ব্যবহারঃ
আল্ কোরআনে আযান শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্যনীয়। আমরা এ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ-
এক. আযান শব্দটি সরাসরি আল কোরআনের নয় নং সূরা তাওবাহ -এর ০৩ নং আয়াতে সন্নিবেশিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে :
وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরিকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। -সূরা আত তাওবাহ, আয়াত ০৩
এই আয়াতে কারীমার ‘ইয়াওমাল হাজ্জিল আকবারি’ অর্থাৎ, 'মহান হজ্জের দিনে' বাক্যাংশের অর্থ ও মর্ম নিয়ে তাফসীরকারদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, হযরত উমর ফারুক রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু, হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু এবং হযরত আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম বলেন: ‘ইয়াওমাল হাজ্জিল আকবারি’ বাক্যাংশের অর্থ হচ্ছে- 'আরাফাতের দিন'। কারণ, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল হাজ্জু আরাফাতুন’ অর্থাৎ, হজ্জ হল আরাফাতের দিন। -সুনানে আবু দাউদ
আবার কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ কোরবানির দিন বা দশই যিলহজ্জ। হযরত সুফিয়ান সাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং কতিপয় ইমাম উল্লেখিত উক্তিগুলোর সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে বলেছেন, হজ্জের প্রথম পাঁচ দিন হলো হজ্জে আকবারের দিন। এতে আরাফাত ও কোরবানির দিনগুলোও শামিল। তাছাড়া, উমরার অপর নাম 'হজ্জে আসগর' বা 'ছোট হজ্জ'। এর থেকে হজ্জকে পৃথক করার জন্য বলা হয়েছে, হজ্জে আকবার।
দুই. আযান শব্দের মূলধাতু ‘ইজনুন’ হতে উৎপন্ন ‘আযযানা’ ও ‘মুয়াজ্জিনুন’ শব্দের ব্যবহারও আল কোরআনে লক্ষ্য করা যায়।
কোরআনুল কারীমের সাত নং সূরা আল আ’রাফের ৪৪ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের সাথে আমাদের প্রতিপালক যে ওয়াদা করেছিলেন, তা আমরা সত্য পেয়েছি? অতএব, তোমরাও কি তোমাদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছ? তারা বলবেঃ হ্যাঁ। অতঃপর একজন ঘোষক উভয়ের মাঝখানে ঘোষণা করবেঃ আল্লাহর অভিসম্পাত জালেমদের উপর। -সূরা আল আ’রাফ, আয়াত ৪৪
এই আয়াতে কারীমায় আযান শব্দের মৌলিক অর্থের ব্যবহার মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। বস্তুত: নামাজের সময় হলে মুসল্লীদেরকে নামাজের জন্য প্রস্তুত হওয়ার ও জামাআতে হাজির হওয়ার জন্য আহ্বান জানানোকেই ইসলামী পরিভাষায় আযান বলা হয়। আযান নামাজের উদ্দেশ্যে মুসল্লীদেরকে ডাকার জন্য ইসলামের স্থায়ী বিধান। এ বিধানে নড়চর হওয়ার কোনো জো নেই।
তিন. আযান ও উহার বাক্যসমূহ রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং আল্লাহ পাকের নিকট হতে ওহীর মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আযান দেওয়ার রীতি নামাজ ফরয হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ পাকের নিকট হতে অবতীর্ণ হয়েছে’। এ কথার অকাট্য প্রমাণ আল কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয় হতেও লাভ করা যায়। যথা :
ক. আল কোরআনের সূরা আল মায়েদাহ -এর আটান্ন নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُونَ
আর যখন তোমরা নামাযের জন্যে আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা বলে মনে করে। কারণ, তারা নিবোর্ধ। -সূরা আল মায়েদাহ, আয়াত ৫৮
এই আয়াতে নামাজের জন্য ঘোষণা দাও অর্থ হলো, মুয়াজ্জিন যখন নামাজের জন্য আযান দেয়।
খ. আল কোরআনের বাষট্টি নং সূরা, সূরা জুমুআর ৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। -সূরা জুমুআহ, আয়াত ০৯
উপরোক্ত দু’টি আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ। আর আযান দেওয়ার রেওয়াজ যে মদীনা শরীফেই চালু হয়েছে, তা হাদীস হতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুতরাং, আযান নিছক স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত বিষয় নয়। বরং, ইহা নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট হতে ওহী যোগেও অবতীর্ণ।
আযানের প্রবর্তন (بدء الأذان)ঃ
মদিনায় হিজরতের পরে মসজিদে নববী নির্মিত হওয়ার পর মুছল্লীদের পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে আহবানের জন্য পরামর্শসভা বসে। সাহাবীগণ বিভিন্ন পরামর্শ দেন। কিন্তু কোনরূপ সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক স্থগিত হয়ে যায়। পরদিন আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ বিন ‘আব্দে রবিবহী রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রথমে এসে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বর্তমান আযানের শব্দ সমূহ সহ স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনালে তিনি তার সত্যায়ন করেন। অতঃপর উচ্চকণ্ঠের অধিকারী বেলাল রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুকে আযান দেওয়ার নির্দেশ দেন। আযানের ধ্বনি শুনে কাপড় ঘেঁষতে ঘেঁষতে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু দৌঁড়ে এসে বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! যিনি আপনাকে সত্য সহ প্রেরণ করেছেন, সেই আল্লাহর কসম করে বলছি, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি’। রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ফালিল্লা-হিল হামদ’ অর্থাৎ, ‘আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা’। -আবু দাঊদ হা/৪৯৯, সনদ হাসান ছহীহ; মিশকাত হা/৬৫০
একটি বর্ণনা মতে ঐ রাতে ১১ জন ছাহাবী একই আযানের স্বপ্ন দেখেন’। -মিরক্বাত শরহ মিশকাত ‘আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১৪৯ পৃঃ
উল্লেখ্য যে, ওমর ফারূক (রাঃ) ২০ দিন পূর্বে উক্ত স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু আগেই বলেছে দেখে লজ্জায় তিনি নিজের কথা প্রকাশ করেননি। -আবু দাঊদ (আওনুল মা‘বূদ সহ) হা/৪৯৪ ‘আযানের সূচনা’ অনুচ্ছেদ
বলা বাহুল্য, এই আযান কেবল ধ্বনি মাত্র ছিল না। বরং এ ছিল শিরকের অমানিশা ভেদকারী আপোষহীন তাওহীদের এক দ্ব্যর্থহীন আহবান। যা কেবল সে যুগে মদীনার মুশরিক ও ইহূদী-নাছারাদের হৃদয়কে ভীত-কম্পিত করেনি, বরং যুগে যুগে প্রতিষ্ঠিত শিরকী সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এ ছিল তাওহীদ ভিত্তিক সমাজ বিপ্লবের উদাত্ত ঘোষণা। এ আযান যুগে যুগে প্রত্যেক আল্লাহপ্রেমীর হৃদয়ে এনে দেয় এক অনন্য প্রেমের অনবদ্য মূর্ছনা। যার আহবানে সাড়া দিয়ে মুমিন পাগলপারা হয়ে ছুটে চলে মসজিদের পানে। লুটিয়ে পড়ে সিজদায় স্বীয় প্রভুর সকাশে। তনুমন ঢেলে দিয়ে প্রার্থনা নিবেদন করে আল্লাহর দরবারে।
আযানের সুমধুর আওয়াজ তুলনাহীনঃ
ইহূদীদের বাঁশি, নাছারাদের ঘণ্টাধ্বনি ও পৌত্তলিকদের বাদ্য-বাজনার বিপরীতে মুসলমানদের আযান ধ্বনির মধ্যেকার পার্থক্য আসমান ও যমীনের পার্থক্যের ন্যায়। আযানের মধ্যে রয়েছে ধ্বনির সাথে বাণী, রয়েছে হৃদয়ের প্রতিধ্বনি, রয়েছে তাওহীদের বিচ্ছুরণ এবং রয়েছে আত্মনিবেদন ও আত্মকল্যাণের এক হৃদয়ভেদী অনুরণন। এমন বহুমুখী অর্থবহ মর্মস্পর্শী ও সুউচ্চ আহবানধ্বনি পৃথিবীর কোন ধর্মে বা কোন জাতির মধ্যে নেই। ১ম হিজরী সনে আযান চালু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি তা প্রতি মুহূর্তে ধ্বনিত হচ্ছে পৃথিবীর দিকে দিকে অবিরামভাবে অপ্রতিহত গতিতে। আহ্নিক গতির কারণে ঘূর্ণায়মান পৃথিবীর প্রতি স্থানে সর্বদা ছালাতের সময়ের পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে আযানের সময়ের। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র সর্বদা প্রতিটি মিনিটে ও সেকেন্ডে আযান উচ্চারিত হচ্ছে। আর সেই সাথে ধ্বনিত হচ্ছে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্যবাণী এবং উচ্চকিত হচ্ছে সর্বত্র আল্লাহর মহত্ত্ব ও বড়ত্বের অনন্য ধ্বনি। যার সাক্ষী হচ্ছে প্রতিটি সজীব ও নির্জীব বস্ত্ত ও প্রাণী। এমনকি পানির মধ্যে বিচরণকারী মৎস্যকুল। মানুষ যদি কখনো এ আহবানের মর্ম বুঝে এগিয়ে আসে, তবে পৃথিবী থেকে দূর হয়ে যাবে সকল প্রকার শিরকী জাহেলিয়াতের গাঢ় অমানিশা। টুটে যাবে মানুষের প্রতি মানুষের দাসত্ব নিগড়। প্রতিষ্ঠিত হবে আল্লাহর গোলামীর অধীনে সকল মানুষের প্রকৃত স্বাধীনতা। শৃংখলমুক্ত হবে সত্য, ন্যায় ও মানবতা। আযান তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নিরংকুশ উলূহিয়াতের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা। বিশ্বমানবতার একক চেতনা ও কল্যাণের হৃদয়স্রাবী দ্যোতনা।
পৃথিবীজুড়ে যেভাবে অবিরাম উচ্চারিত হতে থাকে আযানের সুমধুর ধ্বনিঃ
পৃথীবিতে দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টায় এমন কোনো একটি মুহূর্ত অতিবাহিত হয় না যখন আযানের সুর ধ্বনিত হয় না। আমরা জানি, আহ্নিক গতির প্রভাবে পৃথিবীতে দিন রাতের আবর্তন হয়। পৃথিবী গোলাকার বিধায় সূর্য এবং পৃথিবী যখন নিজ নিজ কক্ষপথ অতিক্রম করে তখন পৃথিবীর এক প্রান্তে দিন হলে অপর প্রান্তে নেমে আসে রাতের অন্ধকার। এমনি করে ঘুরতে থাকে সারাক্ষণ। এদিকে সূর্যের উদয়-অস্তের সাথে নামাজের সময় নির্ধারিত। এভাবে সূর্যের পরিভ্রমণের সাথে সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় আবর্তিত হয় গোটা পৃথিবীতে। সে হিসেবে দেখা যায়, দিনের ২৪ টি ঘণ্টার প্রতিটি মুহূর্তেই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে কোনো না কোনো ওয়াক্তের নামাজের আযান হচ্ছে। এছাড়া, মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নবজাততের জন্মের পরপরই তার কানে আযান দেয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অধিকাংশ মুসলিম এই রীতি অনুসরণ করে তাদের নবজাতকদের কানে আযান দিয়ে থাকেন।
এবার যদি আমরা ছোট্ট একটি পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই তাহলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হতে পারে। প্রতি মিনিটে পৃথিবীতে ২৫০ টি মানবশিশুর জন্মগ্রহণ হয়। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই প্রকাশিত জাতিসংঘের 'বিশ্ব জনসংখ্যা সমীক্ষা-২০১৫' -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের তখনকার জনসংখ্যা ছিল ৭৩০ কোটি। ছয় বছরের ব্যবধানে বর্তমানে এই সংখ্যা নিশ্চয়ই আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। হয়তো ধরে নেয়া যায় যে, সে সংখ্যাটা এখন ৮০০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। অন্য দিকে, উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মুসলমান। ৮০০ কোটি না ধরে ছয় বছর পূর্বের ৭৩০ কোটি জনসংখ্যা ধরেও যদি হিসাব করি তবুও বর্তমান বিশ্বে ১৮২.৫ কোটি মুসলমান। সুতরাং, সহজেই বুঝা যাচ্ছে, প্রতি মিনিটে জন্ম নেওয়া ২৫০ শিশুর চার ভাগের একভাগ অর্থাৎ, ৬২.৫ জনের কানে আযান দেওয়া হচ্ছে প্রতি মিনিটে। সেটা ঘটে চলেছে দিন-রাতের যে কেনো সময়ে। প্রতি মিনিটে ৬২.৫ জন নবাগতের কানে আযানের ধ্বনি শুনিয়ে দেয়ার অর্থ দাঁড়ায় প্রতি ঘন্টায় ৬২.৫ x ৬০=৩৭৫০ জন নবজন্মলাভ করা শিশুর কানে ৩৭৫০ বার আযানের ধ্বনি উচ্চারণ করা, অর্থাৎ, তার মানে, প্রতি দিন ৩৭৫০ x ২৪=৯০,০০০ জন নতুন জন্মগ্রহনকারী শিশুর কানে দিন রাতের চব্বিশ ঘন্টায় ৯০,০০০ বার আযানের ধ্বনির উচ্চারণ।
উপরোক্ত দু'টি পরিসংখ্যান থেকে এ কথা অত্যন্ত সহজভাবে বুঝে নেয়া সম্ভব যে, আযানের ধ্বনিবিহীন একটি মুহূর্ত পৃথিবী অতিবাহিত করে না। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রতি মুহূর্তে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আযানের হৃদয়বিগলিত সুরের মুর্চ্ছনা।
পরিশেষেঃ
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক হাদিসে বলেছেন যে, নামাজকে আমার চোখ শীতলকারী বানিয়ে দেয়া হয়েছে। নামাজের আহবানের জন্যই প্রবর্তন করা হয়েছে আযানের মত এমন অসাধারণ এক আহবান পদ্ধতি। নামাজে যাদের চক্ষু জুড়ায় আযানের মধুর ধ্বনিও তাদের প্রাণে সঞ্জীবনী শক্তি আনে। তাদের ঈমানের নূরের ব্চ্ছিুরণ ঘটে আযানের ভেতরে থাকা তাওহিদের বুলন্দ আওয়াজে। তৃপ্তি পরিতৃপ্তিতে তারা দৌঁড়ে যান রবের দিকে। মহান মালিক স্রষ্টা রব্বুল আলামীনের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়ার মাধ্যমে আযানের বাস্তবভিত্তিক জবাব প্রদান করেন শ্রদ্ধায় ভালোভাসায় বিশ্বাসের অতলান্ত গভীরতায় ডুবে।
০২ রা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:১১
নতুন নকিব বলেছেন:
আযান আসলেই সুন্দর। বিশেষ করে ভোরবেলা আযান শুনলে অন্যরকম অনুভূতি হয়।
-চমৎকার বলেছেন। কৃতজ্ঞতাসহ।
অবশ্য আমাদের দেশের, বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকার মত এতটা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় শান্তিতে আযান শোনার ব্যবস্থা থাকার চিন্তা করাটাই অর্থহীন। অনতিদূরে একটু পরপরই মসজিদ থাকার কারণে একইসাথে একাধিক মসজিদের আযানের শব্দ কানে আসতেই পারে। কারণ, এতগুলো মসজিদে আযানের সময় আলাদাভাবে নির্ধারণ করে নেয়া এক কথায় অসম্ভব।
আপনি অবশ্য শান্তিতে আযান শুনতে মক্কাতুল মুকাররমা কিংবা মদিনাতুল মুনাওয়ারাহতে ঘুরে আসতে পারেন একবার। হৃদয় জুড়ানো সেই আযান শুধু শুনতেই ইচ্ছে হবে। আযান শুরু হলে মনে হতে থাকবে, এই আযান যদি শেষ না হত! শেষ হয়ে গেলে মনে আফসোস জাগবে, আযান যদি আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকতো!
২| ০২ রা অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:০৩
এভো বলেছেন: একটা কথা শুনলাম যে ভারতে মৌলবাদী হিন্দু দল গুলো নাকি আইণগত ভাবে প্রকাশ্যে মাইকের মধ্যমে আজান বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিবে । কারন হিসাবে তারা বোলছে ---
আজানের বাক্যে -- তাদের বিশ্বাষকে আঘাত করা হয়েছে , তাদের দেবদেবিকে অপমান করা হয়েছে ।
এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি ?
০২ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:২০
নতুন নকিব বলেছেন:
বিষয়টা যেহেতু আপনিই আমাদের জানালেন, তাই এই ব্যাপারে আপনার অভিমতটাও গুরুত্বপূর্ণ। যদি জানাতেন।
আমাদের অভিমত তারপরে না হয় জানাতাম।
ধন্যবাদ।
৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:০৩
এভো বলেছেন: ভাই এখানে আমার নিজের কোন অভিমত নেই , তবে তাদের আপত্তির বিষয় গুলো সংক্ষেপে বলতে পারি । কয়েক দিন আগে এটা নিয়ে কয়েকটা অন লাইনের আলোচনা শুনেছিলাম । আপনি কি তাদের আপত্তি গুলো কি জানতে চান ?
০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৫
নতুন নকিব বলেছেন:
একটা কথা শুনলাম যে ভারতে মৌলবাদী হিন্দু দল গুলো নাকি আইণগত ভাবে প্রকাশ্যে মাইকের মধ্যমে আজান বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিবে । কারন হিসাবে তারা বোলছে ---
আজানের বাক্যে -- তাদের বিশ্বাষকে আঘাত করা হয়েছে , তাদের দেবদেবিকে অপমান করা হয়েছে ।
এই ব্যাপারে আপনার অভিমত কি ?
-মহান(!) মোদী-অমিত শাহদের এই সময়ে এসে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারক বাহক ভারতের মাটিতে কত কিছুই তো আমাদের দেখতে হল! বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পরে চলমান মামলার ঘটনাটিকে উদাহরণ হিসেবে এই ক্ষেত্রে আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। এই মোদী-অমিত শাহগণের কূটচালে সেখানে আদালতের রায় হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ এই মামলাটির রায়ের পূর্বেই তারা পুরোপুরি বুঝতে সক্ষম হয়েছিল যে, অন্যায় রায় মানুষ কোনভাবেই মেনে নিবে না। মানুষ হয়তো রাস্তায় নেমে আসবে। হয়তো এই অন্যায় রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখাবে। এসব চিন্তা করে তারা রায় ঘোষনার আগে আগেই ভারতের বিভিন্ন এলাকায় কার্ফিউ জারি করেছিল। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তারা বিভিন্ন ধরণের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল তখন। গোটা বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে তাদের ন্যাক্কারজনক এই বৈষম্যমূলক রায় প্রত্যক্ষ করেছে।
তো, যে দেশের রথী মহারথীদের ইন্ধনে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা তাদের আদালত প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত বছরের পুরনো ঐতিহাসিক একটি মসজিদে হামলা করে সেটিকে গুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় হামলাকারীদের আদৌ কোন দোষ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন, বিচারের নামে পৃথিবীতে পক্ষপাতিত্বের অবাক করা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে হামলাকারীদেরকে নির্দোষ আখ্যায়িত করে খালাস দিতে পারেন এবং এমনকি, মসজিদের সেই জমিকেই কি না হামলাকারীদের অনুকূলে মন্দিরের জন্য বরাদ্দ দিতে সামান্যতম কুন্ঠাবোধ করেন না- তাদের বিষয়ে আমাদের মতামত থাকা না থাকায় কিইবা যায় আসে! তারা যা করেন বা করবেন- সেটাই তো সেখানে সঠিক! তাদের উপরে কথা বলার পৃথিবীতে কে আছে?
তাই বলার অপেক্ষা রাখে না, আযান নিয়ে তারা যা ভাববেন, সেটাই তো চূড়ান্ত!
তবে, একটা কথা, এই ভারতের ক্ষমতায় একসময় মুসলিম শাসকগণও ছিলেন। প্রচন্ড শৌর্যবির্যের অধিকারী মুসলিম শাসকদের রয়েছে প্রায় ৮০০ বছরের ভারত শাসনের গৌরবময় ইতিহাস। মুসলিম শাসনামলের সেই সময়ে তারা যদি মোদী-শাহদের মত এমন সাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণ করতেন, তাহলে ভারতের অবস্থাটা কেমন হতো, সেটাই মাঝে মাঝে ভাবি আর বিস্মিত হই। সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে থেকে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি উদারপ্রাণ সেইসব মুসলিম শাসকদের জন্য প্রাণ খুলে দোআ করি, আল্লাহ তাআ'লা তাদের উপযুক্ত প্রতিদান দিন।
মোদী-শাহগণ পুরনো সেইসব শাসকদের ইতিহাস মাঝেমধ্যে খুলে দেখতে পারেন। একটু আধটু পড়তেও পারেন। এতে তারা নিজেদের জন্য শিক্ষনীয় কিছু উপাদান পেলেও পেতে পারেন। তাদের জন্য শুভকামনা।
ধন্যবাদ।
৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৪৩
মুফীদ হাসান বলেছেন: واعظ قوم کی وہ پختہ خیالی نہ رہی
برق طبعی نہ رہی شعلہ مقالی نہ رہی
رہ گئی رسم اذاں روح بلالی نہ رہی
فلسفہ رہ گیا تلقین غزالی نہ رہی
مسجدیں مرثیہ خواں ہیں کہ نمازی نہ رہے
یعنی وہ صاحب اوصاف حجازی نہ رہے
০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আল্লামা ইকবালের কবিতা পড়লেই মনটা ভরে ওঠে। কয়েকটি লাইন পড়ার সুযোগ করে দিলেন বলে কৃতজ্ঞতা।
রাহগেয়ী রছমে আজাঁ, রূ-হে বেলালী না রাহী,
ফালসাফা রাহগায়া, তালকিনে গাজালী না রাহী
“Reh Gyi Rasm-e-Azan, Rooh-e-Bilali Na Rahi
Falsafa Reh Gya, Talqeen-e-Ghazali Na Rahi
Azan yet sounds, but never now Like Bilal’s, soulfully;
Philosophy, conviction-less, Now mourns its Ghazzali”
― Allama Mohammad Iqbal
তার কবিতার কথামালার বিশালতা এবং গভীরতা কত! কতই না চমৎকার বলেছেন কবি!
“আরব হ্যায় হামারা, চীন হিন্দুস্তা হামারা
মুসলিম হ্যায় হাম, ওয়াতান সারে জাহা হামারা।”
অর্থাৎ,
আরব আমার ভারত আমার চীনও আমার নহে গো পর
বিশ্বজোড়া মুসলিম আমি, সারাটি জাহানে বেঁধেছি ঘর।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: আযান আসলেই সুন্দর। বিশেষ করে ভোরবেলা আযান শুনলে অন্যরকম অনুভূতি হয়।
আমি আমার এলাকায় শান্তিতে আযান শুনতে পারি না। আমাদের এলাকায় মোট ৬ টা মসজিদ। সব গুলো মসজিদে একইস সাথে আযান শুরু হয়। কোনো মসজিদের আযানই স্পষ্ট শুনতে পাই না। তখন বিরক্ত লাগে।