নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রওজায়ে আতহারের উপরের সবুজ গম্বুজের অনন্য একটি দৃশ্য, অন্তর্জাল থেকে।
ব্লগে ৭০০ তম পোস্টে সকলকে অভিনন্দন! রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিবেদিত কবিতা ও না'তসমগ্র: নজরুলের লেখনিতে অসামান্য রাসূল স্তুতি
ভাবনার অতলে হারিয়ে যাই আজওঃ
আজও ভেবে অবাক হই! আকুল অধীর হই, কী করে তিনি রচনা করেছেন এত বিশাল না'ত সম্ভার! সদা উচ্ছল তাঁর লেখনি রাসূল প্রেমের যে নমুনা আমাদের সামনে উপস্থাপন করে তাতেই পরিমাপ করা সম্ভব, কতটা গভীর নবীপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
জাতীয় কবি, দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, বিদ্রোহী কবি, প্রানের কবি কাজী নজরুল ইসলামের (১৮৯৯-১৯৭৬) হাতে প্রবর্তন হয় বাংলা আধুনিক ইসলামি সঙ্গীতের। কাজী নজরুল ইসলামের আগে আধুনিক সঙ্গীতমনস্ক মুসলমানের আত্ম-আকাঙ্ক্ষার উপযোগী কোনো ইসলামি সঙ্গীত বাংলায় তেমন ছিল না বললে অত্যুক্তি হবে না। কাজী নজরুল প্রথম বাংলায় আধুনিক সুর এবং উঁচু মার্গের বাণীর মাধ্যমে ইসলামি সঙ্গীতের সঙ্গে শ্রোতার পরিচয় ঘটান।
‘নজরুল ইসলামের শিল্পোত্তীর্ণ এবং কালোত্তীর্ন অসংখ্য ইসলামি গান ও গজলে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। এর পেছনে বিশেষ কারন হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, তাঁর হৃদয়জুড়ে ছিল অসাধারন রাসূল-প্রীতি, ইসলামের প্রতি নিরন্কুশ আনুগত্য আর আল্লাহ পাকের প্রতি শর্তহীন বিশ্বাস এবং আস্থাকে। আল্লাহ তাআলার নিকট শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিশেষ মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন থাকার কারনে অসংখ্য না'তে রাসূল রচনায় নজরুল আবেগতাড়িত হয়েছেন আরও বেশি। নজরুল তার কবিতা, হামদ, না'তসহ ইসলামী সঙ্গীতগুলোতে মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মানবিক রূপ, গুণ, দেহাবয়ব এবং পার্থিব ও পারলৌকিক যেসব চেতনার অসাধারন যে উন্মেষ ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন বলা বাহুল্য, তা অতীতের ইসলাম-মানস-চৈতন্যে উজ্জীবিত ও সমৃদ্ধ।’
নজরুল-মানসে ইসলাম, আল্লাহ এবং রাসূল বিভিন্ন মাতৃকতায়, বহুবিধ নান্দনিকতায় ধরা দিয়েছিল। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলামের বিশ্বাস-বোধ-চেতনা এবং প্রকাশ ছিল সত্য-সহজ-সুন্দর ও শিল্পীত। নজরুলের সঙ্গীত রচনার তৃতীয় পর্বে ইসলামি গানের সৃষ্টি। বর্তমান প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় নজরুলের রচিত ‘নাত-এ-রসূল’। হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বর্তমান ও অতীত বিশ্বে সবচেয়ে শ্রদ্ধেয়, স্মরণীয়, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব; তেমনি কাজী নজরুল ইসলামের কাছেও ছিল হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্যতা।
রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রূপ, গুণ, কর্মজীবন, শিষ্টাচার নজরুলের শেষ আশ্রয়স্থল এবং হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আদর্শের বাস্তবায়নসহ বহুবিধ বিষয়কে মূখ্য করে তিনি ‘নাত-এ-রসূল’ রচনা করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলাম প্রকৃতির সৌন্দর্য্যে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিবেদন করে লিখেছেন অসাধারণ কিছু সঙ্গীত। সঙ্গীতগুলোর প্রথম দুই লাইন করে উপস্থাপন করা হলো:
ক. মুহাম্মদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে
তাই কিরে তোর কণ্ঠেরি গান এমন মধুর লাগে
খ. ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়।
আয়রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়।।
গ. নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম আহাম্মদ বোল,
যে নাম নিয়ে চাঁদ-সেতারা আসমানে খায় দোল।
ঘ. হেরা হতে হেলে দুলে নূরানী তনু ও কে আসে হায়
সারা দুনিয়ার হেরেমের পর্দা খুলে খুলে যায়-
ঙ. মরু সাহারা আজি মাতোয়ারা হলেন নাজেল
তাহার দেশে খোদার রসূল।
যাহার নামে যাঁহার ধ্যানে সারা দুনিয়া দিওয়ানা
প্রেমে মশগুল।।
চ. সাহারাতে ফুটল রে ফুল রঙিন গুলে লালা
সেই ফুলেরি খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা।।
ছ. হে মদিনার বুলবুলি গো গাইলে তুমি কোন গজল
মরুর বুকে উঠল ফুটে প্রেমের রঙিন গোলাব দল।।
জ. মরুর ধূলি উঠল রেঙে রঙিন গোলাব রাগে
বুলবুলিরা উঠল গেয়ে মক্কার গুলবাগে।।
ঝ. উঠুক তুফান পাপ-দরিয়ায় ও ভাই আমি কি তায় ভয় করি
পাক্কা ঈমান তক্তা দিয়ে গড়া যে আমার তরী।।
ঞ. আসিছেন হাবিয়া খোদা আরশ পাকে তাই উঠেছে শোর
চাঁদ পিয়াসে ছুটে আসে আকাশ পানে যেমন চকোর
ট. সাহারাতে ডেকেছে আজ বান দেখে যা
মরুভূমি হল গুলিস্তান, দেখে যা।।
ঠ. ওরে ও চাঁদ উদয় হলি কোন জোছনা দিতে
দেয় অনেক বেশি আলো আমার নবীর পেশানীতে।।
নানাভাবে নানান আঙিকে নবিজীঃ
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিচিত্র, মহাপরিব্যাপ্ত জীবনালোককে প্রকাশে কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় নানাভাবে এসেছে প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ। কখনো ঝরনা, কখনো পাখি, কখনো আসমান, কখনো বাতাস; চাঁদ, তারা, জ্যোৎস্না, নদী, সাগর, পাহাড়, মরুভূমি, ফুল, ফল কী না এসেছে তাঁর লেখনিতে। আবার আরেকটু গভীরে তাকালে দেখা যায়, পাখির বর্ণনায় সুরের পাখির প্রাধান্য। যেমন কোকিল, বুলবুলি, দোয়েল, চকোর এসব পাখি তাদের সুমিষ্ট কণ্ঠের মায়াবি সুরে বর্ণনা করেছে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর গুণগান। সৌন্দর্য আর অনুপম সুবাসের কারণে বারবার উঠে এসেছে গোলাপ ফুলের অনুষঙ্গ। নজরুলের লেখনিতে রাসূল স্তুতির বর্ননায় খোরমা, খেজুর, বাদাম, জাফরান ফল অর্থাৎ আরব দেশের প্রচলিত ফল নবীর উপস্থিতির জানান দিয়ে অন্যরকম অনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছে।
রাসূল প্রেমিক নজরুলঃ
নজরুল ছিলেন সত্যিকারের রাসূল প্রেমিক। নজরুলের মন ও মননে, চেতনা ও দ্যোতনায় সাহারা মরুভূমিতে গুলিস্তানের আবাদ হয়েছে নবীজীর শুভ আবির্ভাবে। সাহারার ধূলিপথের ওপর দিয়ে যখন সে মহাপুরুষের পদচারণা হতো সে খবর বুলবুলি তাঁর সুরে সুরে পৌঁছে দিত- 'সাহারাতে ফুটলো রে ফুল রঙিন গুলে লালা’। যে ফুলের খুশবুতে সূর্য, আকাশ, বাতাস, সাগর, নদী, তারকাসহ সমগ্র প্রকৃতি আচ্ছন্ন, কাজী নজরুল ইসলামের মায়াবী বর্ণনায় রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর আবির্ভাব ও তাঁর পবিত্র উপস্থিতি প্রকৃতির রূপকল্পে উঠে এসেছে অভিনব শৈল্পিক সৌন্দর্য্যে- যা নিঃসন্দেহে বিচিত্র, বর্ণিল, প্রাণময় এবং অপরিমেয় আন্তরিক সৌন্দর্য্য-সৌকর্য্যে আকীর্ন। স্বীকার না করে উপায় নেই, নজরুল রচিত ‘না'ত-এ-রসূল’গুলো তার অধ্যাত্মচিন্তা প্রকাশের পাশাপাশি উঁচুমানের সাহিত্যেরও অনাবিল প্রকাশ। হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজরুলের মনে যতভাবে আন্দোলন ঘটিয়েছেন তার প্রায় সব রকম প্রকাশ তার না'তগুলোর রূপবৈচিত্র্য ও শোভামাধুর্যে লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে।
কাজী নজরুল ইসলাম হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সচক্ষে দেখেননি। চর্মচক্ষে দর্শন না করেও, তাঁর সময়ের, তাঁর যুগের-কালের না হয়েও, নবীজীর যে রূপচিত্র না'তে রাসূলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন তা অতুলনীয়, অভাবনীয় এবং অসম্ভব সৌন্দর্যের জ্যোতি বিকিরনের অমোঘ কথামালা হিসেবে মূর্তমান। নানা রূপে, নানা ছন্দে, বর্নিল রঙে, মোহনীয় চিত্রকল্পে, আকর্ষনীয় উপমায় নবীকান্তি উপস্থাপিত হয়েছে নজরুলের ক্ষুরধার লেখনিতে :
ক. সাহারাতে ফুটলোরে ফুল রঙিন গুলে লা লা,
সেই ফুলেরই খুশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ারা।।
খ. তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমারি সেথা চাঁদ দোলে
যেন ঊষার কোলে রাঙা রবি দোলে।।
গ. ওকি ঈদের চাঁদ গো চলে মদিনারই পথে গো।
যেন হাসিন য়ুসোফ ফিরে এলো ফিরদৌস হতে গো।।
ঘ. ওরে ও চাঁদ উদয় হ’লি কোন জোছনা দিতে
দেয় অনেক বেশি আলো আমার নবীর পেশানীতে।।
ঙ. রসূল নামের ফুল এনেছি রে (আয়. গাঁথবি মালা কে
এই মালা নিয়ে রাখবি বেঁধে আল্লা তালাকে।।
চ. মদিনার শাহানশাহ কোহ-ই-তুরবিহারী
মোহাম্মদ মোস্তফা নবুয়তধারী।।
ছ. নূরের দরিয়ায় সিনান করিয়া কে এলো মক্কায় আমিনার কোলে
ফাগুন পূর্ণিমা নিশীথে যেমন আসমানের কোলে রাঙা চাঁদ দোলে
জ. মদিনাতে এসেছে সই নবীন সওদাগর
সে হীরা জহরতের চেয়ে অধিক মনোহর।।
রাসূল প্রেমে আকন্ঠ নিমজ্জিত কবিঃ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রূপে বিভোর সমগ্র সৃষ্টিজগত। আল্লাহ পাকের নামের পাশাপাশি তাঁর প্রিয় রাসূলের নামও উচ্চারিত হয় দুনিয়াজুড়ে। 'অরাফা'না লাকা জিকরাক' মহান প্রতিপালকের এই ঘোষনা আজ পরিপূর্নতা পেয়েছে। আর সে রূপকে রূপায়িত করার সার্থক কারিগর নজরুল। হাজারো রূপে হাজারো রঙে কবিকণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে নবীর রূপ বর্ণনা। যাঁকে স্বপ্নে দেখে ধন্য হয় মানুষ তাঁকে না'তের মধ্যে নতুন করে আবিষ্কার করা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম কবি হিসেবে ছিলেন অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। আর তার সঙ্গীতপ্রতিভা ছিল বিস্ময়কর। কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামি চেতনা ছিল প্রাগ্রসর। আধুনিক ইসলামি চিন্তাচেতনাবোধকে আশ্রয় করে প্রকৃত ইসলামকে তুলে ধরার যথার্থ প্রতিভা পরিপূর্নভাবেই নজরুলের ছিল। তাই তার হৃদকলমের টানে রূপায়িত হয়েছে রসূলের সৌন্দর্যে আকীর্ণ রূপাশ্বৈর্য। মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রূপে পৃথিবী যেমনভাবে আমোদিত, রোমাঞ্চিত এবং উদ্বেলিত; নজরুল তারই স্বার্থক প্রকাশ ঘটিয়েছেন যথার্থ শব্দ, ধ্বনি, ছন্দ আর অলঙ্কারে। এত বিরাট রূপকে বর্ণনা করতে যে প্রতিভার প্রয়োজন নজরুল ইসলাম তার গানে প্রমাণ করেছেন যে, সে প্রতিভা তার রয়েছে। বিমুগ্ধ সৌন্দর্য্যে নজরুল ছন্দ এঁকেছেন-
এ কোন মধুর শারাব দিলে আর আরাবি সাকী,
নেশায় হলেম দিওয়ানা যে রঙিন হল আঁখি।।
তৌহিদেরি শিরাজি নিয়ে
ডাকলে সবায় যারে পিয়ে,
নিখিল জগৎ ছুটে এলো রইল না কেউ বাকি।।
বসল তোমার মহফিল দূর মক্কা-মদিনাতে,
আল-কোরানের গাইলে গজল শবে কদর রাতে।।
নরনারী বাদশা ফকির
তোমার রূপে হয়ে অধীর
যা ছিল নজরানা দিল রাঙা পায়ে রাখী।।
ক. তৌহিদের মুর্শিদ আমার মোহাম্মাদের নাম।
ঐ নাম জপলেই বুঝতে পারে খোদায়ী কালাম-
মুর্শিদ মোহাম্মদের নাম।।
খ. মরু সাহারা আজি মাতোয়ার- হলেন নাজেল
তাহার দেশে খোদার রসুল।
যাঁহার নামে যাঁহার ধ্যানে সারা দুনিয়া
দিওয়ানা, প্রেমে মশগুল।।
গ. মদিনার শাহান শাহ কোহ-ই-তুরবিহারী
মোহাম্মদ মোস্তফা নবুয়ত ধারী।।
ঘ. আজি আল কোরায়েশী প্রিয় নবী এলেন ধরাধাম
তাঁর কদম মোবারকে লাখো হাজারো সালাম।
ঙ. উম্মত আমি গুনাহগার তবু ভয় নেই রে আমার
আহমদ আমার নবী যিনি খোদ হাবিব খোদার।
চ. খোদার রহম চাহ যদি নবীজীরে ধর
নবীজীরে মুর্শিদ কর নবীর কলমা পড়।।
ছ. লহ সালাম লহ দ্বীনের বাদশাহ জয় আখেরি নবী
পীড়িত জনগণে মুক্তি দিতে এলে হে নবীকুলের রবি।।
জ. ওগো আমিনা তোমার দুলালে আনিয়া আমি ভয়ে ভয়ে মরি
এ নহে মানুষ বুঝি ফেরেশতা আসিয়াছে রূপ ধরি।।
ঝ. মোহাম্মদ নাম যত জপি, তত মধুর লাগে
নামে এত মধু থাকে, কে জানিত আগে।।
ঞ. হে মদিনার বুলবুলি গো গাইলে তুমি কোন গজল।
মরুর বুকে উঠল ফুটে প্রেমের রঙিন গোলাব দল।।
ট. নবীর মাঝে রবির সম আমার মোহাম্মদ রসূল
খোদার হাবিব দ্বীনের নকিব বিশ্বে নাই যাঁর সমতুল।।
ঠ. তোমার নামে একি নেশা হে প্রিয় হজরত
যত চাহি তত কাঁদি আমার মেটে না হসরত।।
ড. এ কোন মধুর শারাব দিলে আল-আরাবি সাকী,
নেশায় হলাম দিওয়ানা যে রঙিন হল আঁখি।।
ঢ. আমার মোহাম্মদের ধেয়ান হৃদয়ে যার রয়
ওগো হৃদয়ে যার রয়।
খোদার সাথে রয়েছে তার গোপন পরিচয়।
নবীজীর রূপের তৃষ্ণায় মাতোয়ারা কবিঃ
নবীজীর রূপের তৃষ্ণায় মাতোয়ারা কবি তার প্রতি অঙ্গে অনুভব করেছেন মহানবীর উপস্থিতি। মন ও মননে, চেতনা ও চৈতন্যে মিশে থাকা মহামানবের স্পর্শ যেন সর্বান্তরজুড়ে:
ক. মোহাম্মদ মোর নয়নমণি মোহাম্মদ নাম জপমালা।
ঐ নামে মিটাই পিয়াসা ও নাম কওসারের পিয়ালা।।
খ. হে প্রিয় নবী রসূল আমার
পরেছি আভরণ নামেরি তোমার।।
গ. নামাজ রোজা হজ জাকাতের পসারিণী আমি
নবীর কলমা হেঁকে ফিরি পথে দিবস যামী।।
ঘ. নাই হল বসনভূষণ এই ঈদে আমার
আল্লা আমার মাথার মুকুট রসূল গলার হার।।
ঙ. আমি যদি আরব হ’তাম মদিনারই পথ।
সেই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হজরত।।
চ. আল্লাহ থাকেন দূর আরশে নবীজী রয় প্রাণের কাছে
প্রাণের কাছে রয় যে প্রিয়, সেই নবীরে পরান যাচে।।
ছ. আমার ধ্যানের ছবি আমার হজরত।
ও নাম প্রাণে মিটায় পিয়াসা,
আমার তামান্না আমার আশা,
আমার গৌরব আমার ভরসা,
এ দীন গুনাহগার তাঁহারি উম্মত।।
জ. লহ সালাম লহ, দ্বীনের বাদশাহ, জয় আখেরি নবী।
পীড়িত জনগণে মুক্তি দিতে এলে হে নবীকুলের রবি।।
ঝ. মোহাম্মদ মোস্তফা সাল্লে আলা
তুমি বাদশারও বাদশাহ কমলীওয়ালা।।
ঞ. যে রসূল বলতে নয়ন ঝরে সেই রসূলের প্রেমিক আমি।
চাহে আমার হৃদয়-লায়লী সে মজনুরে দিবস-যামী।
ট. হে মোহাম্মদ এসো এসো আমার প্রাণে আমার মনে।
এসো সুখে এসো দুখে আমার বুকে মোর নয়নে।।
রাসূল প্রেমে মাতোয়ারা কবিঃ
কাজী নজরুল ইসলামের গানে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপুলভাবে আভাসিত। কত মাতৃকতায় চিত্রিত। কত মহিমায় রঙিনভাবে বর্ণিত। কতটা সাহিত্যিক মাত্রায় উত্তীর্ণ। কত না ভাবে ভঙ্গিমায় রূপকে নিবেদিত আর কত না ভাষার অলঙ্কারে সুসজ্জিত তা এসব নাত-এ-রসূল বিশ্লেষণ না করলে বোঝা যায় না।
‘উস্ওয়াতুন হাসানাহ’ বা ‘মানবচরিত্রের সর্বোত্তম আদর্শ’ হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বিচিত্র, বর্ণিল, উন্নত, মহান, আদর্শিক গুণের যে চিত্তাকর্ষক, কারুকার্যময়, ঐশ্বর্য্যশালী, হৃদ্-উদ্বেল বর্ণনা কাজী নজরুল ইসলাম তার উপর্যুক্ত না'তগুলোতে দিয়েছেন তা বাংলা ভাষায় এর আগে কারও লেখায় লক্ষনীয় হয়ে ওঠেনি। কাজী নজরুল ইসলাম মহানবীকে ধারণ করতে চেয়েছেন প্রতি অঙ্গের রুধির ধারায়, মননে, বিশ্বাসে, প্রজ্ঞায়। তার হৃদয়কে আলোকিত করে মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নামের আলো। এমন মহান, পুরুষোত্তম পুরুষকে কবি নিজের প্রতি অঙ্গে অনুভব করেছেন শিল্পিত উপস্থাপনে। ‘মুহাম্মদ মোর নয়নমণি’ ‘মুহাম্মদ নাম শিরে ধরি’ অথবা ‘মুহাম্মদ নাম গলায় পরি’। অর্থাৎ প্রতি অঙ্গের পরতে পরতে নবীজীকে অনুভব করে তিনি রচনা করেছেন অসাধারণ কিছু না’ত। যে না’তগুলো সময়োত্তীর্ণ, কালোত্তীর্ন। আজও সমান জনপ্রিয় এবং শিল্পোত্তীর্ণ।
কাজী নজরুল ইসলাম এমন একজন ইসলামি পুনর্জাগরণের কবি হওয়া সত্ত্বেও তিনি হজরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর রওজা মোবারক দেখতে পারেননি। মনে ছিল তার নিদারুণ আকাঙ্ক্ষা তিনি নবীর মদিনায় যাবেন এবং নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখে মনে শান্তি পাবেন। যেমন :
ক. ওরে ও দরিয়ার মাঝি মোরে নিয়ে যারে মদিনা
তুমি মুর্শিদ হয়ে পথ দেখাও ভাই আমি যে পথ চিনি না।।
খ. চলরে কাবার জিয়ারতে, চল নবীজীর দেশ।
দুনিয়াদারীর লেবাস খুলে পর রে হাজির বেশ।।
গ. দূর আরবের স্বপ্ন দেখি বাংলাদেশের কুটির হতে
বেহুঁশ হয়ে চলেছি যেন কেঁদে কেঁদে কাবার পথে।।
ঘ. আয় মরু পারের হাওয়া নিয়ে যা রে মদিনায়-
জাত-পাক মুস্তাফার রওজা মুবারক যেথায়।।
ঙ. কাবার জিয়ারতে তুমি কে যাও মদিনায়।
আমার সালাম পৌঁছে দিও নবীজীর রওজায়।।
চ. আন্ গোলাব পানি, আন্ আতরদানি গুলবাগে।
সহেলিগো কিছু নাহি ভালো লাগে
বেদুঈন ছেলের বাঁশী কারে ডাকে।
কেঁদে কেঁদে অনুরাগে।।
ছ. সুদূর মক্কা মদিনার পথে আমি রাহী মুসাফির
বিরাজে রওজা মুবারক যথা মোর প্রিয় নবীজীর।।
তৃষিত কবি হৃদয়ের প্রত্যাশাঃ
আহ! নজরুল প্রিয় নবীজীর রওজায়ে আতহারে যেতে পারেননি জীবদ্দশায়। মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পবিত্র রওজা জিয়ারতের অদম্য তৃষ্ণা তাকে উদ্বেল করেছে। তিনি কখনো ‘দরিয়ার মাঝি’কে : ‘মরু পারের হাওয়া’কে বলেছেন তাকে মদিনায় নিয়ে যেতে। কখনো দূর আরবের স্বপ্ন দেখেছেন বাংলাদেশের কুটিরে বসে আবার কখনো নিজেকে সুদূর মক্কা মদিনার রাহী মুসাফির হিসেবে দেখেছেন। কোটি কোটি বাংলা ভাষার হৃদয়ে মদিনায় যাওয়ার যে আকাক্সক্ষা তাই প্রকাশিত হয়েছে, কাজী নজরুর ইসলামের কলম থেকে।
তাঁর গুণ, কর্ম, আচরণ নজরুলকে প্রবলভাবে নাড়া দেয় এর ফলে তিনি রচনা করেন অসাধারণ সুন্দর, পরিশীলিত, শিল্পোতীর্ণ নাত-ই-রাসূল।
ক. ত্রাণ কর মওলা মদিনার, উম্মত তোমার গুনাহগার কাঁদে।
তব প্রিয় মুসলিম দুনিয়ায় পড়েছে আবার গুনাহের ফাঁদে।।
খ. যেয়ো না যেয়ো না মদিনা দুলাল হয়নি যাবার বেলা
সংসার পাথারে আজো দোলে পাপের ভেলা।
গ. পাঠাও বেহেশত হতে হজরত পুনঃ সাম্যের বাণী,
(আর. দেখিতে পারি না মানুষে মানুষে এই হীন হানাহানি।।
ঘ. আমিনা দুলাল এসো মদিনায় ফিরিয়া আবার, ডাকে ভুবনবাসী
হে মদিনার চাঁদ : জ্যোতিতে তোমার, আঁধার ধরার মুখে ফোটাও হাসি
একজন সত্যিকারের মুসলমানের কর্তব্যও ফুটে উঠেছে নজরুলের রাসূল স্তুতিতেঃ
সুদীর্ঘকাল ধরে বাংলাভাষী মুসলমানের মনে যে অভাব ও তৃষ্ণা ছিল কাজী নজরুল ইসলাম তার সোনার কলমের ছোঁয়ায় স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন একজন সত্যিকারের মুসলমানের কর্তব্য কী, আদর্শ কী? সদিচ্ছা কী? সফলতা কিসে। কাজী নজরুল ইসলামের রচিত এসব নাত-ই-রাসূল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইসলামের বার্তাবাহকের ছবি, কর্ম, জীবনাদর্শ পৌঁছে দেবে। ভবিষ্যতের মানুষ তাদের চরম বিপর্যয়ের দিনে পাবে আশ্রয়ের স্থল। স্থির করতে পারবে তাদের কর্তব্য। মুখে মুখে, ঠোঁটে ঠোঁটে ফিরবে ‘মোহাম্মদের নাম’। সুবহান আল্লাহ, এ প্রত্যাশাকে মনে ধরে তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য নাত-ই-রাসূল। এর থেকে একটি অংশের প্রথম দুলাইন উপরে উল্লেখ করেছি। আরো বিরাট অংশের প্রথম লাইন নিচের তালিকায় তুলে দেয়া হলো।
১. আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি নাহি ভয় – জুলফিকার-১
২. দেখে যারে দুলা সাজে এসেছেন মোদের নবী -ঐ
৩. যাবি কে মদিনায় আয় ত্বরা করি -ঐ
৪. বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ -ঐ
৫. আহমদের ঐ মিমের পর্দা উঠিয়ে দেখ মন -ঐ
৬. সৈয়দে মক্কী মদনী আমার নবী মোহাম্মদ -ঐ
৭. রাখিসনে ধরিয়া মোরে ডেকেছে মদিনা -ঐ
৮. ওকে সোনার চাঁদ কাঁদেরে হেরা গিরির পরে – জুলফিকার-২
৯. আল্লা রসূল জপের গুণে কী হলো দেখ চেয়ে -ঐ
১০. ফেরি করে ফিরি আমি আল্লাহ নবীর নাম -ঐ
১১. তৌহিদেরই বান ডেকেছে সাহারা-মরুর দেশে -ঐ
১২. আমিনার কোলে নাচে হেলে দুলে শিশু নবী -ঐ
১৩. তোরা যারে এখনই হালিমার কাছে লয়ে ক্ষীর ননী -ঐ
১৪. তোমায় যেমন করে ডেকেছিল আরব মরুভূমি -ঐ
১৫. মদিনায় যাবি কে আয় আয় উড়িল নিশান -ঐ
১৬. হে মদিনার নাইয়া ভব নদীর তুফান ভারী -ঐ
১৭. ওগো মুর্শিদ পীর বলো বলো রসূল কোথায় থাকে -অগ্রন্থিত
১৮. আল্লাহ নামের নায়ে চড়ে যাব মদিনায় -ঐ
১৯. আমি বাণিজ্যেতে যাব এবার মদিনা শহর -ঐ
২০. ঐ হেরে রসূলে খোদা এল ঐ গেলেন মদিনায় যবে -ঐ
২১. আমি যেতে নারি মদিনায় আমি নারী হে প্রিয় নবী -ঐ
২২. পূবাল হাওয়া পশ্চিমে যাও কাবার পথে বইয়া -ঐ
২৩. মেষ চারণে যায় নবী কিশোর রাখাল বেশে -ঐ
২৪. কলমা শাহাদাতে আছে খোদার জ্যোতি -ঐ
২৫. ভেসে যায় হৃদয় আমার মদিনা পানে -ঐ
২৬. দুখের সাহারা পার হয়ে আমি চলেছি কাবার পানে -ঐ
২৭. হে মদিনাবাসী প্রেমিক ধরো হাত মম -ঐ
২৮. আমার প্রিয় হজরত নবী কমলীওয়ালা -ঐ
২৯. আমি গরবিনী মুসলিম বালা সংসার সাহারাতে -ঐ
৩০. ইয়া রাসূলাল্লাহ মোরে রাহা দেখাও সেই কাবার -ঐ
৩১. ওরে কে বলে আরবে নদী নাই যেথা রহমতের ঢল -ঐ
৩২. আল্লাহকে যে পাইতে চায় হজরতকে ভালবেশে -ঐ
৩৩. ইয়া মোহাম্মদ বেহেশত হতে খোদায় পাওয়ার -ঐ
৩৪. ওরে ও মদিনা বলতে পারিস কোন সে পথে তোর -ঐ
৩৫. জরিন হরফে লেখা রূপালি হরফে লেখা আসমানের -ঐ
৩৬. হেরেমের বন্দিনী কাঁদিয়া ডাকে তুমি শুনিতে -ঐ
৩৭. প্রিয় মুহরে নবুয়তধারী হে হজরত তরিতে উম্মতে -ঐ
৩৮. কেন তুমি কাঁদাও মোরে হে মদিনাওয়ালা -ঐ
৩৯. ওগো আমার নবী প্রিয় আল আরাবি -ঐ
৪০. ভালবাসা পায় না যে জন রসূল তারে ভালবাসে -ঐ
৪১. আল্লাহ নামের দরখতে ফুটেছে এক ফুল -ঐ
৪২. আল্লাহ রসূল বলরে মন আল্লাহ রসূল বল -ঐ
৪৩. মুরশিদ পীর বলো বলো ওগো রসূল কোথায় থাকে -ঐ
৪৪. ফিরি পথে পথে মজনু দিওয়ানা হয়ে -গুলবাগিচা
৪৫. খোদার হাবিব হলেন নাজিল খোদার ঘর ঐ কাবার -ঐ
৪৬. মারহাবা সৈয়দে মক্কী মদনি আল আরবী বাদশারও -ঐ
৪৭. বক্ষে আমার কাবার ছবি চক্ষে মোহাম্মদ -চন্দ্রবিন্দু
৪৮. দ্বীনের নবীজী শোনায় একাকী কোরানের মধু বাণী -ঐ
৪৯. কুল মখলুক পাহে হজরত বালাগাল উলা বেকামালিহি -ঐ
৫০. কে যাবি পারে আয় ত্বরা করি -বুলবুল (৪র্থ খণ্ড)
শেষ হয়েও হয় না শেষঃ
আহ! মক্কা মদিনা আর আরব মরু ভূমির লূ হাওয়ার সীমা ছাড়িয়ে কোথাকার কোন্ সুদূরের পল্লীর তরুছায়া পরিবেষ্টিত নদ-নদী-ঝর্ণা-সাগর স্নাত বঙ্গোপসাগরের উপলোপল তীর ঘেঁসে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের প্রান্তসীমায় বসবাসকারী এক কবি ছিলেন নজরুল ইসলাম। দূরপ্রাচ্যে থেকেও তাঁর মন ও মননজুড়ে ছিল রাসূলের প্রেম-ভালোবাসা-মুহাব্বতের প্রগাঢ় প্রলেপণ। হৃদয়ের অর্গল খুলে ভালবেসেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরসালিন রহমাতুল্লিল আলামীন প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। আর সে কারণেই তাঁর প্রেমে ব্যাকুল হয়ে সুদূরের এই শ্যামলিমাঘেরা মায়াময় বাংলা ভূমি থেকে হৃদয় মন উজাড় করে লিখতে পেরেছেন অজস্র রাসূল স্তুতি। গেয়েছেন না'তে রাসূল, না'তে নবী। আহ! কি অপূর্ব নবীপ্রেমের স্নিগ্ধ ঘ্রানে সুবাসিত প্রতিটি না'ত! কি অসাধারণ ভালোবাসার অনিন্দ্য প্রকাশ! কি মধুরতায় জড়ানো কি নিঃসীম অনুভব অনুভূতির অনন্য উপস্থাপনা! সংখ্যায়ও কি গণনা করা যায়! রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে নজরুল রচিত না'ত আর কাব্যস্তুতির সংখ্যা ভাবলেও কি বিস্মিত না হয়ে পারা যায়! মানুষের কল্পনা এমনও হতে পারে! একজন ব্যক্তিকে, একজন মহামানবকে, শ্রেষ্ঠতম রাসূলকে এমন সুন্দর করে, বিমুগ্ধ নয়নে এত বিচিত্রভাবে দেখা যায়! এতরূপে, এত দৃষ্টিতে, এতটাই গভীরে গিয়ে কল্পনা করা যায়! এমনভাবে সুরে ছন্দে বাঁধা যায় কোনো মহামানবকে! এ অসাধ্য সাধন তো কেবল একজনই করেছেন! ঠিক যেন এ কালের আরেক হাসসান বিন সাবিত! তিনি নজরুল! কাজী নজরুল ইসলাম! কালোত্তীর্ন, শিল্পোত্তীর্ন, সাহিত্যের সকল নিয়ম-কানূনের সামনে মানোত্তীর্ন বিশ্বশ্রেষ্ঠ এমন হাজারো কবিতা আর অমর না'ত সৃষ্টির মাধ্যমে জগতের শ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত, প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করে নজরুল শুধু নিজেকেই সম্মানিত করেননি, বাংলাভাষাকেও সম্মানিত করেছেন বিশ্ব দরবারে।
শেষের প্রার্থনাঃ
এই পৃথিবীতে প্রিয় নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের মাহেন্দ্র মাস রবিউল আউয়ালের প্রাক্কালে প্রাণের কবি, জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মাগফিরাত কামনা করে তাঁর জন্য জান্নাতের উঁচু মাকাম প্রার্থনা করছি মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে।
৭০০ তম পোস্টে অভিনন্দন সকলকেঃ
এই লেখাটি পোস্ট করার পরেই লক্ষ্য করলুম যে, ব্লগে এটি আমার ৭০০ তম পোস্ট। বাহ! চমৎকার! আনন্দিত হওয়ার মত বিষয়! যদিও এখানে হাজার হাজার পোস্ট লিখেছেন এমন ব্লগারও অনেকেই রয়েছেন। তাদের তুলনায় এই সংখ্যাটি যদিও তেমন উল্লেখ করার মত কিছু নয় তবু একটি একটি করে পোস্ট গণনা করে ৭০০ এর সংখ্যায় পৌঁছে যাওয়া অতি সহজ কোনও বিষয় নয় নিশ্চয়ই। নিজের গুণ প্রকাশ করে বাহবাপ্রাপ্তির উদ্দেশ্যে নয়, বরং শুধু অবস্থাটা বুঝানোর জন্য বিনীতভাবে জানাচ্ছি যে, অভ্যাসবশতঃ আমি প্রতিনিয়ত গোটা পৃথিবীর সকল প্রাণবান সত্ত্বার জন্য, প্রতিটি সৃষ্টির জন্য কল্যান কামনা করে থাকি। আলহামদুলিল্লাহ, এটা আল্লাহ পাক প্রদত্ত তাওফিকের কারনেই সম্ভব হচ্ছে। আমার ক্ষুদ্র বৃহৎ যে কোনও আনন্দে প্রত্যেকের জন্য সেই শুভকামনা এবং কল্যানকামিতার মানসিকতা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। আজকের এই আনন্দময় মুহূর্তটিও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই ৭০০ তম পোস্টের এই শুভক্ষনে শ্রদ্ধাপূর্ণ শুভকামনা জানাচ্ছি প্রিয় এই প্রাঙ্গনের সন্মানিত প্রতিষ্ঠাতাদম্পতিসহ মাননীয় মডারেটর এবং সকল সহব্লগারদের। সকলকে আল্লাহ তাআ'লা সুস্বাস্থ্যে সুখে শান্তিতে রাখুন এবং পার্থিব ও পারলৌকিক সমৃদ্ধি দান করুন। আমিন।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৩২
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয়তম রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে লিখতে পারলে অন্তরে প্রশান্তির পরশ উপলব্ধি করি। আত্মার অদেখা বন্ধনে তাঁর পবিত্র স্মৃতিগুলো গেঁথে আছে অন্তরে। তাঁর মত করে এই পৃথিবীবাসীকে আর কেউ মুক্তির পথে ডাকবে না, তাঁর মত করে আর কেউ মানুষের দেয়া হাজারও অত্যাচার নিপীড়ন নিরবে সয়ে যাবে না, তাঁর মত করে আর কেউ শত্রু মিত্র আপন পর নির্বিশেষে সকলকে বুকে টেনে আপন করে নিবে না, তাঁর মত করে অসহায় মানুষের পাশে আর কেউ দাঁড়াবে না, তাঁর মত করে আর কেউ শান্তির পয়গাম শুনিয়ে বিশ্বমানবতার সাম্য মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্বের জয়গানে পৃথিবীকে সুশোভিত করে তুলবে না - এই অনুভব-অনুভূতিকেই প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নানান আঙ্গিকে, নানান ঢংয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ কথামালায় তুলে ধরেছেন কবিতা আর না'তের অনবদ্য ছন্দিত স্তবকে।
লাইকসহ প্রথম মন্তব্যে আপনাকে অভিনন্দন। উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যে প্রেরণা রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতা।
শুভকামনা সবসময়।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪১
জুল ভার্ন বলেছেন: পাঁচ বছরেরও কম সময়ে ৭০০ পোস্ট বিরাট ব্যাপার!
শুভ কামনা।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪৯
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনাদের মত বরেণ্যদের কাছে আমরা যারা কিছুটা পরে এসে ব্লগে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, আমাদের অনেক ঋণ। ব্লগের শুরুর দিকের কন্টকাকীর্ণ যাত্রাপথে আপনারা ঝুঁকি নিয়ে দু'হাত খুলে লিখেছেন। ব্লগ মানেই খারাপ কিছু - এই অপধারণার অবসানে আপনাদের অবদান অনেক।
৭০০ তম পোস্টে আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য কৃতজ্ঞতা অনিঃশেষ।
শুভকামনা জানবেন।
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৫৮
*কালজয়ী* বলেছেন: নবী মুহাম্মদ (সঃ) নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কবিতা-সুর-সঙ্গীতের উপর রীতিমত গবেষণা সমৃদ্ধ লেখা। শুভকামনা।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৫৬
নতুন নকিব বলেছেন:
অভিনন্দন চমকপ্রদ মন্তব্যের জন্য।
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্যও।
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:২৩
শায়মা বলেছেন: শুভকামনা ভাইয়া।
নজরুলের নাত রচনা যেন মনের গহীন কোন থেকে তুলে আনা।
অনেক ভালো লাগলো।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:০১
নতুন নকিব বলেছেন:
ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত। তুমি তো আবার সুর, সঙ্গীত এবং কবিতা প্রিয় অনেক গুণের অধিকারী অনন্য এক ব্যক্তিত্ব। এই পোস্টে আসার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন।
অনেক অনেক শুভকামনা বোন।
৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬
শেরজা তপন বলেছেন: অভিনন্দন আপনাকে ভ্রাতা
সাথে থাকুন- এভাবে নিয়মিত ব্লগিং করুন।
বেশ খাটাখাটুনির পোস্ট
২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৮:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার উদার আন্তরিকতা ও হৃদ্যতাপূর্ণ ভালোবাসায় সবসময়ই মুগ্ধ হই। ব্লগ এবং ব্লগারদের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণযোগ্য।
প্রেরণা রেখে যাওয়ায় কৃতজ্ঞতাসহ অভিনন্দন।
৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:১৭
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: নজরুল ছিল পৃথীবির স্রেষ্ট নবী প্রেমী।বেঁচে থাকলে হয়তো তাকেও জাহান্নাতের সুখবর দিয়ে যেতেন।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:২৩
নতুন নকিব বলেছেন:
দুঃখিত! বর্তমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখা এবং সেটাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা উচিত বলে মনে করি এবং কারণে অকারণে অহেতুক বিতর্কে না জড়ানোই উত্তম মনে করি। বিশেষ করে অন্যসকল ধর্ম বাদ দিয়ে শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে অনাকাঙ্খিত খোচাখুচি একেবারেই অপছন্দের।
কথা হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম যাদের পছন্দ তারা এটিকে পালন করুন, আর যাদের কাছে অপছন্দনীয় তারা পালন করা থেকে বিরত থাকলেই পারেন, কিন্তু অনর্থক গন্ডগোল পাকানোর ইচ্ছে কেন রে ভাই! গন্ডগোল পাকিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাদের স্বভাব, তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করাকেই শ্রেয় মনে করি।
আপনার জন্য শুভকামনা।
৭| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:০৫
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: সাতশত পোস্টের দীর্ঘ মাইলফলক অতিক্রম করার জন্য নকিব ভাই আপনাকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা রইলো।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৩৩
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার উপস্থিতি সবসময় প্রেরণার। আপনি সততঃই ইতিবাচক। হৃদ্যতার ছোঁয়ায় সকলকে আপন করে নেয়ার চমৎকার একটি গুণ আপনার রয়েছে। এই ব্লগের আলোকিত মানুষদের মধ্যে নিঃসন্দেহে আপনিও একজন।
৭০০ তম পোস্টটিতে আপনাকে পেয়ে আনন্দিত এবং কৃত্জ্ঞ।
অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা আপনার জন্যও।
৮| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:১৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: নতুন নকিব ,
অল্পসময়ে ৭০০টি পোস্ট দিতে আপনি যে সময় আর ধৈর্য্য ব্যয় করছেন এবং ব্লগের সাথে যে একাত্মতা দেখিয়েছেন সেজন্যে ধন্যবাদ আর অভিনন্দন।
সন্দেহ নেই না'ত রচনায় নজরুলই শ্রেষ্ঠতম!
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৫৮
নতুন নকিব বলেছেন:
অল্পসময়ে ৭০০টি পোস্ট দিতে আপনি যে সময় আর ধৈর্য্য ব্যয় করছেন এবং ব্লগের সাথে যে একাত্মতা দেখিয়েছেন সেজন্যে ধন্যবাদ আর অভিনন্দন।
-আল্লাহ তাআ'লার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, ব্লগের এই পথচলা তাঁর অপরিসীম দয়া এবং তাওফিক প্রদানের কারণেই সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞ, অভিজ্ঞ এবং মহতপ্রাণ যে ক'জন ব্লগারকে এখানে লেখালেখির শুরু থেকেই পাশে পেয়েছি আপনি তাদের অন্যতম। কৃতজ্ঞতা অনিঃশেষ।
পরিশীলিত মন ও মনন, সুচিন্তিত বোধ ও অনুভূতির নিক্তিতে যারা আলোকিত- অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে আপনি তাদের পথিকৃৎ।
সন্দেহ নেই না'ত রচনায় নজরুলই শ্রেষ্ঠতম!
-সঠিক বলেছেন। আরবি, উর্দু, ফার্সীসহ নানান ভাষার শব্দ চয়নের অসামান্য কারুকাজ, অনিন্দ্য সুন্দর ছন্দের গাঁথুনি, সর্বোপরি রাসূল প্রেমে হৃদয়ের আকুলতা ঝড়ে পড়া এমন কথামালা আর কার কলমে কবে কোন কালে ফুটে উঠেছে? সত্যিই তিনি শ্রেষ্ঠ। তাঁর প্রতি আমাদের হৃদয়ের বিনম্র শ্রদ্ধা। মহান আল্লাহ তাআ'লার কাছে তাঁর জন্য জান্নাতপ্রাপ্তির একান্ত প্রার্থনা।
অনেক অনেক শুভকামনা জানবেন।
৯| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: অভিনন্দন।
পোষ্ট পড়ি নি।
ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
২৬ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:০১
নতুন নকিব বলেছেন:
পোস্ট পড়লে আরও খুশি হব।
মন্তব্যে আসার জন্য অভিনন্দন।
আপনিও কল্যানে থাকুন। শুভকামনা।
১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:৪৮
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ৭০০তম পোস্ট দারুন ব্যাপার। অভিন্দন। আরও এগিয়ে যায় ব্লগিংয়ে।++++++
০১ লা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:২৯
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনি সবসময়ই কল্যানের পথের পথিক। এই পোস্টে মন্তব্যে আসায় একরাশ মুগ্ধতা।
শুকরান। জাজাকুমুল্লাহ, ভাই।
১১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৪০
নতুন বলেছেন: ৭০০ তম পোস্ট অস্বাধারন। অভিনন্দন রইলো। ভালো থাকুন। সুস্হ থাকুন।
০১ লা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৩
নতুন নকিব বলেছেন:
৭০০ তম পোস্ট অস্বাধারন।
আপনাদের আন্তরিক ভালোবাসাতেই এটা সম্ভব হয়েছে, নতুন ভাই। যদিও অনেক বিষয়ে আপনার সাথে মতভিন্নতা, তবু স্বীকার করতে হয়, আপনার মতামতের পক্ষের যুক্তিগুলোতে অধিকাংশ সময় চিন্তার খোড়াক থাকে, সচরাচর যে সবের অনুপস্থিতির কারণে অনেকের সমালোচনা প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখা যায়। সেই বিচারে আপনি দারুন কৌশলী একজন লোক।
মহান স্রষ্টার একত্ববাদের বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত সত্য এবং সুন্দরের চির চেনা ঠিকানায় আপনার পুনঃপ্রত্যাবর্তনের প্রত্যাশার জোনাই আলো ধিকি ধিকি আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে এখনও অবদি। আমাদের অন্তরে। মন ও মননে। গভীর মগ্নতায়।
আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন। পরিবারের সকলের জন্য শুভকামনা।
১২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১১:৩৫
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ৭০০ তম পোষ্টের জন্য অভিনন্দন প্রিয় কবি।
০১ লা নভেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৪৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ প্রিয় কবি ভাই।
অনেক অনেক শুভকামনা এবং কল্যানের দোআ আপনাদের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:১৯
জ্যাকেল বলেছেন: নবীজী নিয়ে তথ্যপূর্ণ পোস্ট। আশা করি হাজারতম পোস্টও দেখতে পারব।