নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ। যা চাইনি তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন প্রিয়তম রব। যা পাইনি তার জন্য আফসোস নেই। সিজদাবনত শুকরিয়া। প্রত্যাশার একটি ঘর এখনও ফাঁকা কি না জানা নেই, তাঁর কাছে নি:শর্ত ক্ষমা আশা করেছিলাম। তিনি দয়া করে যদি দিতেন, শুন্য সেই ঘরটিও পূর্নতা পেত!

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামঃ নিছক কোনো ধর্ম নয়; বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান

১৬ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:৫৯

ছবিঃ অন্তর্জাল হতে সংগৃহীত

ইসলামঃ নিছক কোনো ধর্ম নয়; বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান

অবতরণিকাঃ

ইসলামকে ধর্ম হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে অনেক সময় মনে হতে পারে যে, এটাও পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্যান্য ধর্মের মতো শুধুই একটি ধর্ম মাত্র। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মুসলিমও মনে করে থাকেন যে, প্রচলিত অন্যান্য ধর্মের মত ইসলামও শুধুই একটি ধর্ম। বস্তুতঃ ইসলাম ধর্ম ও ইসলামী জীবন বিধানের ব্যাপারে এই ধরণের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মানুষ ধরে নেয় যে, ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্ম; যেখানে প্রচলিত অন্যবিধ ধর্মসমূহের ব্যাপ্তি সীমিত। তাছাড়া, অনেক মুসলিম একথাও মনে করে থাকেন যে, পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল ধর্মই গ্রহনযোগ্য এবং অন্যান্য ধর্ম ও মতাবম্বীগণের ইসলাম গ্রহণ না করা সেইসব লোকদের জন্য ক্ষতিকর কিংবা ভুল কোনো সিদ্ধান্তও নয়। কিন্তু পবিত্র কুরআনুল হাকিমের নিম্নোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে এই ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তাআ'লার নিকট গ্রহনযোগ্য দ্বীন হিসেবে একমাত্র ইসলামকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللّهِ الإِسْلاَمُ

নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম।১ -সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

ইসলাম ছাড়া কেউ অন্য কোন ধর্ম অনুসরণ করলে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।২ -সূরা আলে ইমরান, আয়াত- ৮৫

তাছাড়া, ইসলামকে শুধুই একটি ধর্ম বলা ভুল। বাস্তবিকপক্ষে এটি একটি ‘দ্বীন’, যার অর্থ- 'পরিপূর্ণ জীবন বিধান'। ধর্ম মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়; পক্ষান্তরে ‘দ্বীন’ এর ব্যাপ্তি ব্যক্তি ও সমষ্টিগত জীবনের সকল ক্ষেত্রে। অন্যভাবে বলা যায়, দ্বীন মানব জীবনের সমস্ত বিষয়সমূহকে তার বেষ্টনীর মধ্যে আয়ত্ত্বাধীন করে নেয় যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ। দ্বীন মানুষের জীবনের বৈষয়িক এবং আধ্যাত্মিক দিক নিয়ে আলোকপাত করে এবং আমাদের চিন্তা ও কর্ম যেন মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার নির্দেশনার আলোকে সম্পাদিত হয়, তাঁর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত হয় - সেসব বিষয়ের উপরেও একইভাবে গুরুত্বারোপ করে। এ কারণে কুরআনুল হাকিমের আলোকে ইসলাম সম্পর্কে বিশ্লেষণধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করা অত্যাধিক প্রয়োজন যার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় যে, ইসলাম পূর্ণাঙ্গ একটি জীবন বিধান এবং শুধুই নিছক কোনো ধর্মের নাম নয়।

ইসলামের সংজ্ঞা কি?

'ইসলাম' মানে আল্লাহ তাআ'লার ইচ্ছার প্রতি পরিপূর্ণ বশ্যতা স্বীকার করা। তাঁর সামনে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করা। এর মানে, 'ঈমান বিল্লাহ' অর্থাৎ, (i) আল্লাহ তাআ'লার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন (ii), 'আমালে সালেহ' অর্থাৎ, উত্তম কাজ সম্পাদন করা, এই 'আমালে সালেহ' বা 'উত্তম কাজ' এর ব্যাপ্তি হচ্ছে, 'অন্যের চোখে ভালো কাজের জন্য অনুকরণীয় হওয়া' এবং 'প্রতিটি ভালো কাজের ফলাফল নিঃশেষ হবার নয়, বরং তা অনন্তকালীন জীবনের পাথেয়' - এই বিশ্বাস অন্তরের গভীরে প্রথিত করে এটা দেখা ও বুঝার ক্ষমতা অর্জন করা এবং (iii), পাশাপাশি 'অন্যায় বর্জন করা', অর্থাৎ, 'অন্যের চোখে অন্যায় বর্জনের জন্য অনুকরণীয় হওয়া' এবং 'অন্যায় ও অবিচার পরাজিত এবং দূরিভূত হওয়ারই যোগ্য' - এই বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে পোষন করে এটা দেখা ও বুঝার ক্ষমতা অর্জন করা। অতএব, ইসলাম ধর্ম শুধুই ধর্মীয় প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য নয় বরং সমগ্র মানব জাতির ইহজাগতিক ও পারলৌকিক মুক্তির লক্ষ্যে মানবিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক পূর্ণতালাভের সামষ্টিক প্রয়োজনেই ইসলাম। ৩

ইসলামের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নঃ

প্রকৃত ও বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার নির্যাস হচ্ছে, শুধু ব্যক্তি জীবনে ইসলাম চর্চাই যথেষ্ট নয় বরং কুরআনুল কারিম ও নববী সুন্নাহর শিক্ষা পরিপূর্ণভাবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিকসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। অর্থাৎ, এ কথা দ্বারা বুঝায় যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার শ্রেষ্ঠত্ব ধর্মীয় ও বৈষয়িক ক্ষেত্রসমূহে একইভাবে সমগুরুত্বের সাথে প্রতিষ্ঠিত করা। অথবা, অন্যভাবে বলা যায় যে, একদিকে সমষ্টিগত জীবন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং অন্যদিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা প্রদত্ত দিকনির্দেশনা - এই দু'টির মধ্যে যে বৈপরীত্য রয়েছে তা দূর করা।

এই প্রসঙ্গে অন্তর্নিহিত ও পরিব্যাপক মত বা বিশ্বাস হচ্ছে, (যে মত/ বিশ্বাসও ইসলামী বৈপ্লবিক চিন্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ), প্রশ্ন এবং শর্তহীনভাবে কুরআন সুন্নাহর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা মুসলিম উম্মাহর সকল সদস্যের জন্য অপরিহার্য। এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য হল, প্রকৃত জীবন বিধানের (দ্বীনুল হক্ক -এর) ৪ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা, যেন ইসলামের সামাজিক ন্যায়বিচার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার এই পৃথিবীতে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়, যাতে রয়েছে মানুষের স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ সমন্বয় এবং যে বিধানের মধ্যে রয়েছে দানশীলতা, দূরদর্শিতা এবং সুবিচারের ঐশী বৈশিষ্ট্যসমূহ।

ইসলাম বিদ্বেষের কারণঃ

উপরে সংজ্ঞায়িত 'ইসলামী বৈপ্লবিক চিন্তা'কে প্রায়ই পশ্চিমা মিডিয়াতে বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম ঘৃণিত মন্দ কাজ হিসাবে নিন্দা ও কালিমা লেপনের অপপ্রয়াস লক্ষ্য করা যায়, যাকে সাধারণতঃ তারা কুখ্যাতি দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন 'ইসলামিক মৌলবাদ’ বলে। তাদের এই চরম বিদ্বেষের কারণ হল, একমাত্র ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের বৈপ্লবিক ও প্রগতিশীল ব্যাখ্যা ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য একটি প্রকৃত হুমকি – যে ধর্মনিরপেক্ষ সমষ্টিগত ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল ইউরোপে; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলা চলে যে, তা এখন সমগ্র বিশ্বের উপর কর্তৃত্ব করে বেড়াচ্ছে।

ধর্মনিরপেক্ষতা বনাম ইসলামঃ

ধর্মনিরপেক্ষতার মানে কি? উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞানুযায়ী- ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (ইংরেজি: Secularism) শব্দটির বিস্তৃত অর্থ রয়েছে। তবে ধর্মনিরপেক্ষবাদ বলতে সাধারণতঃ রাষ্ট্র আর ধর্মকে পৃথকরূপে প্রকাশ করাকেই বোঝায়। সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর পক্ষ হতে বিভিন্ন সময় নিজেদের স্বার্থরক্ষার মানসে 'ধর্মনিরপেক্ষ' কথাটির বিভিন্ন প্রকারের ব্যাখ্যা এবং সংজ্ঞা দেয়ার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হলেও এই টার্মটির সঠিক, যুতসই এবং প্রকৃত অন্তর্ণিহিত যে অর্থটি উঠে আসে তা হচ্ছে, রাষ্ট্রকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করা। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো, তথ্য এবং প্রমাণের উপর নির্ভর করবে, কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের উপরে নয়।

'ধর্মনিরপেক্ষতা' এমন একটি বিশ্বাসের নাম, যে বিশ্বাস অনুযায়ী রাষ্ট্র, নৈতিকতা, শিক্ষা ইত্যাদি হতে হবে ধর্ম থেকে মুক্ত।৫ এক্ষেত্রে যে কোন সংখ্যক ধর্মকে এই ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার অধীনে আনার সুযোগ থাকে; শুধু শর্ত হল, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকসহ রাষ্ট্রীয় কোনো নীতি, আদর্শ কিংবা আইন কানুনকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে কোনও ধর্মীয় মানদণ্ড প্রয়োগের দাবি উত্থাপন করা যাবে না। সমষ্টিগত কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং তার পদ্ধতি অবলম্বনের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোনও ধর্মীয় শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত হওয়া যাবে না; বরং মানুষের প্রায়োগিক চিন্তা এবং সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে এই ধরণের নীতিগত সিদ্ধান্তসমুহ নেয়া হবে। ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম পদাবনতিপ্রাপ্ত হয়ে ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে স্থান পায়। ফলে, যে কোন মানুষ তার আধ্যাত্মিক বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার এবং সামাজিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতাপ্রাপ্ত হয়ে যান; রাষ্ট্র এইসব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় একই সাথে ধর্ম অবশ্যই রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুপ্রবেশ বা হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বলতে দ্বিধা নেই যে, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এই ধরণের ধারণা অবশ্যই ইসলামের মূল শিক্ষা, আদর্শ এবং বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। ইসলামের সাথে ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শের নূন্যতম সম্পর্ক থাকার সুযোগ নেই।

ইসলাম - নিছক একটি ধর্ম নয়, একটি জীবন বিধানঃ

পবিত্র কুরআনে ইসলামকে একটি প্রকৃত/ সত্যিকারের জীবন বিধান (দ্বীনুল হক্ক) বলা হয়েছে। ধর্মের বিপরীতে দ্বীন শব্দটির সংজ্ঞা কিংবা ব্যাখ্যা হল- ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। কারণ, ধর্ম শব্দটা সাধারণত সীমিত অর্থে ব্যবহৃত হয়। এর কারণ হচ্ছে, এটার আওতা কিছু ধর্মীয় আচার, অনুশাসন এবং সর্বোপরি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি পালনের সামাজিক প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ৬

পক্ষান্তরে, ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের সকল প্রয়োজন ও সমস্যায় যেখানে পাওয়া যায় সঠিক সমাধান সেটাকে বলা যায় 'দ্বীন' বা 'জীবন বিধান'। ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান, জীবনের সামগ্রিক প্রয়োজন ও চাহিদাসমূহের সার্বিক সমাধান যে ইসলাম ধর্মে অন্তর্ভূক্ত করে দেয়া হয়েছে - অমোঘ এই ঘোষনাটি প্রদান করেছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। ইরশাদ হচ্ছে-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপরে আমার নিআমতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। -সুরা মায়িদাহ, আয়াত ৩ এর অংশ

দ্বীন কি? দ্বীনের পূর্ণতা বলতে পবিত্র কুরআনের ভাষ্যের মর্মার্থ কি?

বিখ্যাত তাফসীরের কিতাব তাফসীরে জালালাইনে সূরা আল মায়িদার ৩ নং আয়াতের উল্লেখিত الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا অংশের আলোচনায় তাফসীরে রুহুল মা'আনীর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে- দ্বীনের পূর্ণতার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে রয়িছুল মুফাসসিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু প্রমুখ বলেন, আজ সত্য দ্বীনের যাবতীয় ফরজ-সীমা, বিধি-বিধান ও রীতি-নীতি পূর্ণ করে দেয়া হল, এখন এতে কোনোরূপ পরিবর্ধনের আবশ্যকতা এবং হ্রাস করার সম্ভাবনা বাকি নেই।

এ কারণেই এ আয়াত নাযিলের পরে নতুন করে কোনো বিধান আর নাযিল হয়নি। যে কয়েকখানি আয়াত এরপরে অবতীর্ণ হয়েছে, তা হয় উৎসাহ প্রদান ও ভীতি প্রদর্শনের বিষয়বস্তু সম্বলিত, অন্যথায় পূর্ববর্ণিত বিধি-বিধানের তাকিদ বা গুরুত্বারোপ সম্বলিত।

তবে ইজতিহাদের মূলনীতি অনুসরণ করে মুজতাহিদ ইমামগণ যদি নতুন ঘটনা ও অবস্থা সম্পর্কে বিধি-বিধান প্রকাশ করেন, তবে তা উপরোক্ত বর্ণনার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। কেননা, কুরআনুল কারিম যেমন বিধি-বিধানের সীমা, হালাল-হারাম, ফরজ ইত্যাদি বর্ণনা করেছে, তেমনি ইজতিহাদের ভিত্তিতে কিয়ামত পর্যন্ত যেসব বিধি-বিধান প্রকাশ করা হবে, তা একদিক দিয়ে কুরআনেরই বর্ণিত বিধি-বিধান। কেননা, এগুলো কুরআনুল কারিম বর্ণিত মূলনীতিরই অধীন।

সারকথা, দ্বীনের পূর্ণতার অর্থ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুর তাফসীর অনুযায়ী এই যে, ধর্মের যাবতীয় বিধি-বিধানকে পূর্ণাঙ্গ করে দেয়া হয়েছে। এখন এতে কোনোরূপ পরিবর্ধনের আবশ্যকতা নেই এবং রহিত হয়ে কম হওয়ারও আশঙ্কা নেই। কেননা, এর পরেই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ওফাতের সাথে সাথে ওহীর আগমন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর ওহী ছাড়া কুরআনের কোনো নির্দেশ রহিত হতে পারে না। তবে ইজতিহাদের মূলনীতির অধীনে মুজতাহিদ ইমামদের পক্ষ থেকে যে বাহ্যিক পরিবর্ধন হয়ে থাকে, তা প্রকৃতপক্ষে পরিবর্ধন নয়; বরং কুরআনী বিধি-বিধানের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা মাত্র।

নিয়ামত সম্পূর্ণ করার অর্থ- মুসলমানদের প্রাধান্য ও উত্থান এবং বিরুদ্ধবাদীদের পরাভূতকরণ ও তাদের উপরে বিজয়লাভ করা। মক্কা বিজয়, মূর্খতা যুগের যাবতীয় কু-প্রথার অবলুপ্তি এবং সে বছর হজে কোনো মুশরিকের যোগদান না করার মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রকাশ লাভ করে। এখানে কুরআনুল করিমের ভাষায় এ বিষয়টিও লক্ষণীয় যে, আয়াতে 'দ্বীন' এর 'ইকমাল' শব্দটি এবং 'নিয়ামত' এর সাথে 'ইতমাম' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ 'ইকমাল' এবং 'ইতমাম' উভয় শব্দকেই বাহ্যত সমার্থবোধক মনে করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উভয়ের অর্থের মধ্যে সূক্ষ্ণ একটি পার্থক্য রয়েছে, যা 'মুফরাদাতুল কুরআন' গ্রন্থে ইমাম রাগেব ইস্পাহানি এভাবে বর্ণনা করেছেন, কোনো বস্তুর উ্দ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূর্ণ হয়ে গেলে তাকে বলা হয় 'ইকমাল' ও 'তাকমিল' এবং এক বস্তুর উপরে অন্য বস্তুর আবশ্যকতা ফুরিয়ে গেলে তাকে বলা হয় 'ইতমাম'। সুতরাং, 'দ্বীন ইকমাল' -এর সারমর্ম এই যে, এ জগতে আল্লাহ তাআ'লার আইন ও ধর্মের বিধি-বিধান প্রেরণের যে উদ্দেশ্য ছিল, তা আজ পূর্ণ করে দেয়া হলো এবং 'ইতমামে নিয়ামত' -এর অর্থ এই যে, এখন মুসলমানরা কারো মুখাপেক্ষী নয়। স্বয়ং আল্লাহ তাআ'লা তাদের প্রাধান্য, শক্তি ও ক্ষমতা দান করেছেন, যা দ্বারা তারা সত্য ধর্মের বিধি-বিধান কার্যকরভাবে জারি ও প্রয়োগ করতে পারে।

এখানে এ বিষয়টিও প্রণিধানযোগ্য যে, আয়াতে 'দ্বীন'কে মুসলমানদের দিকে সম্মন্ধ করে 'দ্বীনাকুম' বলা হয়েছে এবং 'নিয়ামত'কে আল্লাহ তাআ'লার দিকে সম্মন্ধযুক্ত করে 'নিয়ামাতী' বলা হয়েছে। এর কারণ এই যে, 'দ্বীন' বা ধর্ম মুসলমানদের ক্রিয়াকর্মের মাধ্যমে বিকাশ লাভ করে এবং নিয়ামত সরাসরি আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে পূর্ণত্ব লাভ করে। -তাফসীরে আল কাইয়্যিম: ইবনে কাইয়্যিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি

উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এ কথাও স্পষ্ট হয়েছে যে, অদ্য দ্বীনের পূর্ণতা লাভের অর্থ এই নয় যে, পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণের ধর্ম অপূর্ণ ছিল। বাহরে মুহীত গ্রন্থে কাফফাল মারওয়াযীর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রত্যেক নবী ও রাসূলের ধর্মই তাঁর যমানা হিসেবে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। অর্থাৎ, যে যুগে যে পয়গাম্বরের প্রতি কোনো শরিয়ত বা ধর্ম আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে, ঐ যুগ ও জাতি হিসেবে সে ধর্মই ছিল পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পর্ণ। কিন্তু আল্লাহ তাআ'লার জ্ঞানে পূর্ব থেকেই এ কথা ছিল যে, এ জাতি ও এ যুগের জন্য যে ধর্ম পূর্ণাঙ্গ, পরবর্তী যুগ ও ভবিষ্যৎ জাতিসমূহের জন্য সে ধর্ম পূর্ণাঙ্গ হবে না; বরং এ ধর্মকে রহিত করে অন্য ধর্ম ও শরিয়ত প্রয়োগ করা হবে। কিন্তু ইসলামী শরিয়ত এর ব্যতিক্রম। এ শরিয়ত সর্বশেষ যুগে নাযিল হওয়ার কারণে সবদিক দিয়েই পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোনো বিশেষ যুগ, বিশেষ ভূখন্ড অথবা বিশেষ জাতির সাথে এর সম্পর্ক নেই; বরং কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক যুগ, প্রত্যেক ভূখন্ড ও প্রত্যেক জাতির জন্য এটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ।

উল্লিখিত আয়াতাংশে বর্ণিত তৃতীয় বিষয় এই যে, এ উম্মতের জন্য আল্লাহ তাআ'লা সৃষ্টিগত নির্বাচনের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মকে মনোনীত করেছেন, যা সব দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং যাতে পারলৌকিক মুক্তি অবধারিত।

মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রদত্ত ইসলাম ধর্ম আল্লাহ তাআ'লার পক্ষ হতে শ্রেষ্ঠতম দান এবং এ ধর্মটিই সব দিক দিয়ে পূর্ণাঙ্গ। এরপর নতুন কোনো ধর্মের আগমন ঘটবে না এবং সর্বশেষ নাযিলকৃত এই ধর্মেও কোনোরূপ সংযোজন-বিয়োজন করা হবে না।

এ কারণেই আয়াতটি নাযিলের সময় সাধারণ মুসলমানদের মধে আনন্দ উল্লাস পরিলক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে, এই আয়াত নাযিলের সময় হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এ আয়াতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আপনি এ নশ্বর পৃথিবীতে আর বেশি দিন অবস্থান করবেন না। কেননা, দ্বীন পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাসূলের প্রয়োজনও মিটে যায়। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর এ বক্তব্যের সত্যতা সমর্থন করেন। -তাফসীরে ইবনে কাসির, বাহরে মুহীত

সে মতে পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে যে, এর তিন মাসের কিছু কম সময় অর্থাৎ, মাত্র একাশি দিন পরে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহজগত থেকে চির বিদায় গ্রহণ করেন। -তাফসীরে মাআ'রিফুল কুরআন

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থাঃ

ইসলাম যে বাস্তবিকপক্ষেই পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা সে কথার স্পষ্ট প্রমান হচ্ছে, কুরআনে হাকিমের বহু আয়াত। নিম্নোক্ত আয়াতদ্বয়ের আলোচনা এখানে প্রণিধানযোগ্য। প্রথমেই আয়াতদ্বয়ের অর্থ দেখে নিই। এরপরে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাব ইনশাআল্লাহ-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ ادْخُلُواْ فِي السِّلْمِ كَآفَّةً وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ

হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিতরূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-২০৮

فَإِن زَلَلْتُمْ مِّن بَعْدِ مَا جَاءتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

অতঃপর তোমাদের মাঝে পরিস্কার নির্দেশ এসে গেছে বলে জানার পরেও যদি তোমরা পদস্খলিত হও, তাহলে নিশ্চিত জেনে রেখো, আল্লাহ, পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-২০৯

অত্র আয়াতদ্বয়ের শানে নুযূল এবং ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে-

শানে নুযূলঃ

হযরত ইবনে জারীর রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত ইকরামা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম এবং তাঁর সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে এ ব্যাপারে অনুমতি দান করুন যে, আমরা শনিবারকে সম্মান করবো এবং উটের গোশত বর্জন করবো। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। ইহুদিদের নিকট শনিবার দিনটি সম্মানিত ছিল এবং উটের গোশত হারাম ছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তাদের এ ধারণা হলো যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালাম -এর শরিয়তে শনিবার ছিল মর্যাদাপূর্ণ দিবস। মুহাম্মদী শরিয়তে তার অমর্যাদা জরুরি নয়। অনুরূপভাবে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম -এর শরিয়তে উটের গোশত হারাম; কিন্তু মুহাম্মদী শরিয়তে তা ভক্ষন করা ফরজ নয়, তবে জায়েজ। অতএব আমরা যদি পূর্বের ন্যায় শনিবার দিবসটির সম্মান করি এবং উটের গোশত হালাল হওয়ার আকিদা রাখা সত্বেও তা ভক্ষন না করি, তাহলে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম -এর শরিয়তেরও সম্মান প্রকাশ পাবে। অপরদিকে মুহাম্মদী শরিয়তেরও বিরোধিতা হবে না। ফলশ্রুতিতে এই আয়াত নাযিল হয়, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ'লা তাদের এ ধারণাকে সংশোধন করে দিয়েছেন। -জামালাইন, শরহে তাফসীরে জালালাইন

ব্যাখ্যা; ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শনঃ

এ আয়াত থেকে যে শিক্ষাটি বড় করে ধরা দেয়, তা হলো ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। শুধু কতগুলো আকিদা-মতাদর্শ, অথবা, শুধু বিশেষ নিয়ম ও পদ্ধতির আলোকে কিছু ইবাদত বা শুধু কিছু আইন-কানূনের নাম ইসলাম নয়; বরং ইসলাম হচ্ছে একটি স্বকীয় ও পরিব্যাপ্ত জীবনপদ্ধতি, একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র ও তার শাখা-প্রশাখায় যা পরিব্যাপ্ত। এর প্রতিটি অঙ্গ তাঁর পূর্ণ কাঠামোর সঙ্গে এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ও সংযুক্ত। এখানে কোনো প্রকার কাটছাটের অবকাশ নেই। এমন হতে পারে না যে, কেউ ইসলামের তাওহীদ তথা, একত্ববাদের দর্শন তো মেনে নিল, কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্রে সে মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-মঠকে একাকার করে ফেললো। কিংবা কেউ রিসালাতের প্রতি ঈমান স্থাপন করে অর্থনীতির জন্য কার্লমার্কস ও চরিত্রনীতির জন্য গৌতম বুদ্ধের দুয়ারে ধর্ণা দিল। পরকাল, ইহকাল সমাজ বিজ্ঞান, নীতিবিজ্ঞান ও অর্থ ব্যবস্থা -এর সবই ইসলামের নিজস্ব, যা অন্য কোনো তন্ত্র, দর্শন, অন্য কোনো ধর্ম মতবাদের সঙ্গে জোড়াতালি দিতে প্রস্তুত নয়। এমনটি করা হলে তা হবে নি:সন্দেহে ইসলামের মূল বিশ্বাস ও আদর্শ থেকে বিচ্যুতিরই অন্যতম কারণ। -তাফসীরে মাজেদী

এ আয়াতে ঐ সকল লোকদের জন্য বিশেষ সতর্কবাণী রয়েছে, যারা ইসলামকে শুধু মসজিদ ও ইবাদতের মাঝে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন এবং লেনদেন ও সামাজিক বিধানকে ধর্মের কোনো অংশ বলেই ভাবেন না। দুঃখজনকভাবে বর্তমানে আধুনিক শিক্ষিতগণ যারা নিজেদেরকে মডার্ণ জ্ঞান করে থাকেন, তাদের মধ্যে ইসলামের প্রয়োগিক ক্ষেত্রগুলোতে এই ধরণের বিচ্ছিন্ন ও খন্ডিত চিন্তাভাবনা অধিকতর পরিলক্ষিত হয়। -জামালাইন, শরহে তাফসীরে জালালাইন

ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন- পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থাঃ

ইসলাম এর সংবাদ ও ঘটনাবলিতে পূর্ণ সত্যতা বর্ণনার পরিপূর্ণ প্রভাব এবং এর বিধানে পুরোপুরি ভারসাম্যতা বিদ্যমান। যেসব বিষয় পূর্ববর্তী কিতাব ও অন্যান্য আসমানি ধর্মে সীমিত ও অপূর্ণ ছিল, এ সরল ও সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন দ্বারা তার পূর্ণতা বিধান করে দেয়া হয়েছে। কুরঅন ও হাদিস তার সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা বা কারণের ভিত্তিতে (কিয়াস দ্বারা) যে সমস্ত বিধান দিয়েছে তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষন তো সর্বদাই চলতে থাকবে। কিন্তু রদ-বদলের কোনোরূপ সুযোগ তাতে রাখা হয়নি। -তাফসীরে উসমানী; টীকা-১৯

ধর্মের বিচরণ শুধু মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে, যা নীচে বর্ণনা করা হলোঃ



অতএব, দ্বীন হল একটা জীবন বিধান যার মাধ্যমে মানুষ সচেতনভাবে সর্বশক্তিমানের শ্রেষ্ঠত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং সেই সর্বশক্তিমানের জীবন ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ অনুগত থেকে জীবন যাপন করে, যেন সে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরস্কার পেতে পারে এবং শাস্তি থেকে বাঁচতে পারে। যদি একজন রাজা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন এবং সবাই তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করে তখন এই ব্যবস্থাকে বলে রাজার প্রণীত ব্যবস্থা বা দ্বীনুল মালিক। যেমনটি বলা হয়েছে পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতে-

…… مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ ……

…… বাদশাহর আইনে সে তার ভাইকে রেখে দিতে পারত না …… (সুরা ইউসুফ, আয়াত ৭৬ এর অংশ)৮

যখন ইসলামের ক্ষেত্রে দ্বীন শব্দটি ব্যবহৃত হয় তখন এটার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে একটা ব্যবস্থাকে বোঝানো হয়। যে ব্যবস্থায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা হয় এবং তাঁকে মান্য করা হয়, যে ব্যবস্থা শুধু ধর্মের সঙ্কীর্ণ অর্থে নয় বরং জীবনের সকল ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا

এবং আপনি দেখেন যে, মানুষ দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে (ইসলাম) প্রবেশ করছে। -সুরা আন- নাসর, আয়াত ২

সম্পূর্ণ জীবন দ্বীনের আওতাভুক্ত, যা নীচের রেখাচিত্রে বর্ণনা করা হয়েছেঃ



ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতাঃ

আসুন, ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে ইসলামী ব্যবস্থার তুলনা করি এবার। ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় ব্যক্তি পর্যায়ের জন্য কোন দিকনির্দেশনা নেই।পক্ষান্তরে, ইসলাম ব্যক্তি এবং সমষ্টিগত উভয় পর্যায়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা দেয়। পবিত্র কুরআনে ঘোষনা দেয়া হয়েছে-

الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নিআমত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম ইসলামকে। -সুরা মাইদাহ, আয়াত ৩ এর অংশ

কতগুলো সুসমন্বিত বিশ্বাসের উপর ইসলামের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত ও শিকড় প্রোথিত, যে বিশ্বাসগুলো পরম সত্যের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ এবং যেগুলো মানব জীবনের মর্ম এবং চূড়ান্ত নিয়তির বর্ণনা দেয়। অত্যাবশ্যকীয় এই বিশ্বাসগুলি ছাড়াও ইবাদতের বিভিন্ন পদ্ধতি (যেমন, সালাত, জাকাত, সিয়াম এবং হজ্জ) এবং বিবিধ সামাজিক রীতিও অবর্জনীয় এবং ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা জীবনের সমষ্টিগত পরিমণ্ডলের রাজনৈতিক পর্যায়ে লোকায়ত সার্বভৌমত্ব দিয়ে থাকে। জনগণ সার্বভৌম এবং আল্লাহর আইনের পরিপন্থি হওয়া সত্ত্বেও তারা যে কোন আইন তৈরি করতে পারে। তাদের সমষ্টিগত জীবনের কর্মকাণ্ডে আল্লাহ তাআ'লার কোন ভুমিকা নেই। মানবজাতির ইতিহাসে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি গ্রহনের মাধ্যমেই মানুষ সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআ'লাকে তাদের সমষ্টিগত জীবন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য হল, সুদ ভিত্তিক অর্থনীতি, যেখানে ব্যক্তি সব কিছুর মালিক। একজন ব্যক্তি যেভাবে খুশি আয়/ ব্যয় করার স্বাধীনতা ভোগ করে। সুদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অপরিহার্যভাবে সম্পদশালী ও সম্পদহীন এমন দু'টি শ্রেণী সৃষ্টি করে। এ ব্যবস্থায় ধনী সর্বদা ধনী থাকবে এবং গরীব সর্বদা গরীব থাকবে। বরং, ধনী ক্রমান্বয়ে আরও ধনবান হতে থাকবে এবং গরীব কালক্রমে নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হতে থাকবে। সুদের আরেকটা জমজ বোন আছে, যার নাম 'বীমা' এবং যার সাহায্যে ভান করা হয় যে, এর দ্বারা আল্লাহ তাআ'লা কর্তৃক মানুষকে গরীব বানানোকে প্রতিহত করা হয় কিংবা বিশেষ বিশেষ বিপদাপদের মুহূর্তে তাদের অথবা, তাদের পরিবার পরিজনদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো হয়। বস্তুতঃ জনগনের অর্থ শোষনের এটি আরেকটি চটকদার ফাঁদ। এই ফটকা ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ চলে আসে গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে। এর দ্বারা যখন খুশি তারা সাধারণ জনগণের রক্ত চুষতে পারে। এর বাইরে, সামাজিক পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতার বাঁধাধরা বুলি হল, ‘স্বাধীনতা’। আর তথাকথিত এই পূর্ণ স্বাধীনতার পরিণতি হল, অবিবাহিত মায়েদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়া, সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ নামের তামাশার ব্যাপক প্রচলন, একক পিতা বা মাতা এবং সমাজে তালাকের উচ্চহারের অবাধ উর্ধ্বগতিপ্রাপ্তি।

পক্ষান্তরে ধর্মীয় দিকনির্দেশনার পাশাপাশি ইসলাম আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অস্তিত্ব সংক্রান্ত (সাধারনভাবে যাকে জীবনের পার্থিব বা বৈষয়িক দিক হিসাবে গণ্য করা হয়) প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেয় যা যথার্থই ইসলামকে অন্য ধর্ম- যেমন, খ্রিস্ট ও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে আলাদা করে।

এই কারণে ডঃ মাইকেল এইচ হার্টের মত একজন নিরপেক্ষ সমালোচক স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে,

"My choice of Muhammad to lead the list of the world's most influential persons may surprise some readers and may be questioned by others, but he was the only man in history who was supremely successful on both the religious and secular level."

অর্থাৎ, 'আমি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকার শীর্ষে হযরত মুহাম্মাদকে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রেখেছি, যে কারণে অনেকে বিস্মিত হবেন এবং প্রশ্ন করবেন; কিন্তু ইতিহাসে হযরত মুহাম্মাদকে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি যিনি বৈষয়িক ও ধর্মীয় উভয় পর্যায়ে সাফল্যের শীর্ষে ছিলেন।' ১১

ইসলামের সমষ্টিগত ব্যবস্থার একটি রূপরেখাঃ

ইসলামের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা নিচে দেয়া হল-

সর্বময় কর্তৃত্ব শুধু আল্লাহ তায়ালার এবং মানুষের জন্য নির্ধারিত হল খিলাফাঃ

সর্বময় কর্তৃত্ব শুধু আল্লাহ তায়ালার এবং মানুষের জন্য নির্ধারিত হল খিলাফা। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে পবিত্র কুরআনুল হাকিমে-

مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ أَسْمَاء سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَآؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ

তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে নিছক কতগুলো নামের এবাদত কর, সেগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। আল্লাহ এদের কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। -সূরা ইউসুফ, আয়াত-৪০

অন্যত্র ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-

وَقُلِ الْحَمْدُ لِلّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَم يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلَّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا

বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি না কোন সন্তান রাখেন, না তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর কোন সাহয্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি স-সম্ভ্রমে তাঁর মাহাত্নø বর্ণনা করতে থাকুন। -সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-১১১

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-

قُلِ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثُوا لَهُ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَبْصِرْ بِهِ وَأَسْمِعْ مَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا يُشْرِكُ فِي حُكْمِهِ أَحَدًا

বলুনঃ তারা কতকাল অবস্থান করেছে, তা আল্লাহই ভাল জানেন। নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলের অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে। তিনি কত চমৎকার দেখেন ও শোনেন। তিনি ব্যতীত তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। তিনি কাউকে নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না। -সূরা আল কাহাফ, আয়াত-২৬

আইন প্রণয়নে কুরআন যা বলে:

কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন তৈরি করা যাবে না বলে কুরআনের রয়েছে স্পষ্ট নির্দেশ। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ أَطِيعُواْ اللّهَ وَأَطِيعُواْ الرَّسُولَ وَأُوْلِي الأَمْرِ مِنكُمْ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। -সূরা আন নিসা, আয়াত-৫৯

অন্যত্র ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও রসূলের সামনে অগ্রণী হয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। -সূরা আল হুজুরত, আয়াত-০১

কোন স্বৈরতন্ত্র থাকবে নাঃ

কোন স্বৈরতন্ত্র থাকবে না। এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَى بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

যারা তাদের পালনকর্তার আদেশ মান্য করে, নামায কায়েম করে; পারস্পরিক পরামর্শক্রমে কাজ করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। -সূরা আশ শূরা, আয়াত-৩৮

মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে পরিষ্কার প্রভেদ থাকেঃ

মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে পরিষ্কার প্রভেদ থাকে। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

قَاتِلُواْ الَّذِينَ لاَ يُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَلاَ بِالْيَوْمِ الآخِرِ وَلاَ يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللّهُ وَرَسُولُهُ وَلاَ يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُواْ الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ

তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। -সূরা আত তাওবাহ, আয়াত-২৯

কোন পুরোহিততন্ত্র থাকবে নাঃ

ইসলামে কোন পুরোহিততন্ত্র নেই। সুতরাং, সমাজেও এটি থাকার সুযোগ নেই। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُواْ إِلاَّ لِيَعْبُدُواْ إِلَـهًا وَاحِدًا لاَّ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র। -সূরা আত তাওবাহ, আয়াত-৩১

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন শোষণ থাকবে নাঃ

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন শোষণ থাকবে না। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে-

وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاللّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৮০

অন্যত্র ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-

هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَى مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنفَضُّوا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ

তারাই বলেঃ আল্লাহর রাসূলের সাহচর্যে যারা আছে তাদের জন্যে ব্যয় করো না। পরিণামে তারা আপনা-আপনি সরে যাবে। ভূ ও নভোমন্ডলের ধন-ভান্ডার আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বোঝে না। -সূরা আল মুনাফিকূন, আয়াত-০৭

সবকিছুর মালিক আল্লাহ এবং মানুষ শুধু তার জিম্মাদার

সবকিছুর মালিক আল্লাহ এবং মানুষ শুধু তার জিম্মাদার। ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-

هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَى مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنفَضُّوا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ

তারাই বলেঃ আল্লাহর রাসূলের সাহচর্যে যারা আছে তাদের জন্যে ব্যয় করো না। পরিণামে তারা আপনা-আপনি সরে যাবে। ভূ ও নভোমন্ডলের ধন-ভান্ডার আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বোঝে না। -সূরা আল মুনাফিকূন, আয়াত-০৭

অন্যত্র ইরশাদ বর্ণিত হয়েছে-

آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَأَنفِقُوا مِمَّا جَعَلَكُم مُّسْتَخْلَفِينَ فِيهِ فَالَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَأَنفَقُوا لَهُمْ أَجْرٌ كَبِيرٌ

তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন, তা থেকে ব্যয় কর। অতএব, তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাপুরস্কার। -সূরা আল হাদিদ, আয়াত-০৭

নিয়ন্ত্রিত ধনতন্ত্র যেখানে সুদ, জুয়া ও বৈষম্যের স্থান নেইঃ

ইসলামের রয়েছে নিয়ন্ত্রিত ধনতন্ত্র, যেখানে সুদ, জুয়া ও বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। সামাজিক পর্যায়ে কোন বৈষম্য থাকবে না। আল্লাহ তাআ'লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত! অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-২৭৫

অন্য আয়াতে তিনি ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-২৭৮

একই সূরার পরবর্তী আয়াতে তিনি ইরশাদ করেছেন-

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُواْ فَأْذَنُواْ بِحَرْبٍ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُؤُوسُ أَمْوَالِكُمْ لاَ تَظْلِمُونَ وَلاَ تُظْلَمُونَ

অতঃপর যদি তোমরা পরিত্যাগ না কর, তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হয়ে যাও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা নিজের মূলধন পেয়ে যাবে। তোমরা কারও প্রতি অত্যাচার করো না এবং কেউ তোমাদের প্রতি অত্যাচার করবে না। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-২৭৯

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেছেন-

إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاء فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللّهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? -সূরা আল মা-য়িদাহ, আয়াত-৯১

সৃষ্টিকর্তা মাত্র একজনইঃ

আল্লাহ তাআ'লাকেই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা (আল খালিক) সাব্যস্ত করে। বস্তুতঃ বহু সৃষ্টিকর্তা থাকলে সুশৃঙ্খল নিয়ম প্রয়োগ করে বিশ্ব জগতের সকল কিছুর পরিচালন ও নিয়ন্ত্রণ কোনোক্রমেই সম্ভব হতো না। একাধিক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব যদি সত্যিই থেকে থাকতো তাহলে প্রত্যেক সৃষ্টিকর্তা তার অভিমত ও ক্ষমতার প্রয়োগ করতে সচেষ্ট হতেন। ফলে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যেত না; যার নিশ্চিত পরিণতি হতে পারতো, সমগ্র সৃষ্টিকুলের ধ্বংস হয়ে যাওয়া। সকল কিছুর সুষ্ঠু পরিচালনা, সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এবং সুনিয়ন্ত্রিত কার্যপরিকল্পনা প্রমান করে- সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই একজন। তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি এক ও একক এবং নিরঙ্কুশভাবে সর্বময় ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী। আল্লাহ তাআ'লা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْراً فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের উদ্ভাবক। যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিন্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। -সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-১১৭

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেছেন-

وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। -সূরা আল জাছিয়াহ, আয়াত-২২

فَاطِرُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَمِنَ الْأَنْعَامِ أَزْوَاجًا يَذْرَؤُكُمْ فِيهِ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের স্রষ্টা। তিনি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন এবং চতুস্পদ জন্তুদের মধ্য থেকে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। এভাবে তিনি তোমাদের বংশ বিস্তার করেন। কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন। -সূরা আশ শূরা, আয়াত-১১

সূরা ইখলাসে তিনি ইরশাদ করেছেন-

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,

اللَّهُ الصَّمَدُ

আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। -সূরা ইখলাস, আয়াত-০১ - ০৪

জন্মগতভাবে সকল মানুষ সমানঃ

জন্মগতভাবে সব মানুষ সমান। মর্যাদার প্রশ্নে সকলেই সমান। বর্ণ বা বংশ কারও মর্যাদা ও সম্মান নির্ধারণের পরিচায়ক নয়। মানবজাতির উৎপত্তি আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালাম থেকে, ফলে সাদা, কালো, আরব, অনারব ইত্যাদির মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সকলের মাঝেই পূর্ণ সমতা থাকবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُواْ رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالاً كَثِيرًا وَنِسَاء وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِي تَسَاءلُونَ بِهِ وَالأَرْحَامَ إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। -সূরা আল নিসা, আয়াত-০১

অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেছেন-

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। -সূরা হুজুরাত, আয়াত-১৩

নারী ও পুরুষের মধ্যে পৃথকীকরণঃ

নারী এবং পুরুষের মাঝে আল্লাহ তাআ'লা সৃষ্টিগতভাবে উভয়কে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকের অধিকারের বিষয়গুলোকেও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। ইসলাম এই পরম সত্যকে পাশ কাটিয়ে যায়নি। ছল-ছলনার আশ্রয় নিয়ে অন্য অনেক মতবাদের মত নারী পুরুষের সমান অধিকারের তথাকথিত মুখরোচক বুলি আওড়ে অন্তরালে অন্য মতলব লুকিয়ে রেখে কারও অধিকারকে খাটো করার কৌশল গ্রহণ করেনি। বরং, স্পষ্টভাবে যার যার সম্মান তাকে প্রদান করেছে এবং তা যথার্থভাবে তুলে ধরেছে। ইরশাদ হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاء حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا

হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ। -সূরা হুজুরাত, আয়াত-৫৩

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاء الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। -সূরা হুজুরাত, আয়াত-৫৯

শ্রমজীবি মানুষের অধিকার:

বিশ্বের ইতিহাসে রহমাতুল্লিল আলামীন রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম মানবিক শ্রমনীতির প্রবর্তন করেন। তাঁর পূর্বে কোন দেশ বা জাতি তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণের চিন্তা করেনি। এমনকি ইসলামের আবির্ভাবের পরেও কোন দেশ বা মতবাদ সমতুল্য কোন শ্রমিকনীতি উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই নি:সঙ্কোচে বলা চলে যে, আজ হতে চৌদ্দশত পূর্বে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত শ্রমনীতি আজও বিশ্বের অদ্বিতীয় এবং শ্রেষ্ঠ শ্রমনীতি। পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় অনুসৃত শ্রমনীতি মানবিক নয়, ইনসাফভিত্তিক তো নয়ই। শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক, শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যবহার, তাদের বেতন ও মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ইত্যাদি প্রসঙ্গে আল কুরআনের নীতি, আদর্শ ও পথ যা রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে প্রদর্শন করে গেছেন, হাদিসের বাণীসমূহ থেকেই ইসলামের সেই বৈপ্লবিক ও মানবিক শ্রমনীতির সম্যক পরিচয় লাভ করা সম্ভব। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থাৎ, তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি তুমি সদয় হও। -সূরা শুআরা ২১৫

তিনি অন্য জায়গায় বলেন,

إنَّ اللهَ يَأمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। -সূরা নাহল ৯০

শ্রমিক মজুরের অধিকারের বিষয়ে রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্ব্যার্থহীন ঘোষনা-

শ্রমিকদের এমন কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না, যা তাদরকে অক্ষম ও অকর্মন্য বানিয়ে দিবে। -তিরমিজি

শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে দুনিয়াতে তার হক নষ্ট হলেও কিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। কিয়ামতের দিন যালিমের পূণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা পরিমাণ পূন্য প্রদান করা হবে। যদি তার পূণ্য নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে মাযলুমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏ أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ ‏"‏ ‏.‏ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ ‏.‏ فَقَالَ ‏"‏ إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِي يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَةٍ وَصِيَامٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْضَى مَا عَلَيْهِ أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ

আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ‘আমল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ‘আমল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। -ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৩৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৬৩৯৩

أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ

শ্রমিকের মজুরি তার গায়ের ঘাম শুকোনোর পূর্বে পরিশোধ করো। -ইবন মাজাহ; বাইহাকি, মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৭

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ»

“কিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে কিছু দেওয়ার কথা বলে তারপর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে। ৩. যে ব্যক্তি কোনো মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না”। -সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৪

এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ : الإمَامُ رَاعٍ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ متفقٌ عَلَيْهِ

ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল। সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। অতএব সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল। সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। -বুখারী ৮৯৩, ২৪০৯, ৫১৮৮ প্রভৃতি, মুসলিম ৪৮২৮

উপসংহারঃ

(ক) বর্তমান যুগের সকল প্রচলিত ব্যবস্থাতেই মানুষের জীবনের সমষ্টিগত কর্মকাণ্ড ধর্মনিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত এবং আল্লাহ প্রদত্ত দিকনির্দেশনাকে অপ্রাসঙ্গিক হিসাবে বাতিল গণ্য করা হয়েছে। এগুলি শিরক এবং কুরআনের ভাষায় এই ব্যবস্থাকে বলা হয়েছে তাগুত অর্থাৎ, শয়তানের রাস্তা। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ

………তারা খোদাদ্রোহী জালেম শাসক, মূর্তি বা শয়তানের কাছে বিচার প্রার্থী হয়; যদিও এদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।২২ -আল কুরআন, সুরা নং ৪, আয়াত - ৬০ এর অংশ

অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ

(জেনে রেখ!) যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে অনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের।২৩ -আল কোরআন, সুরা নং ৫, আয়াত নং ৪৪

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম।২৪ -আল কুরআন, সুরা নং ৫, আয়াত নং ৪৫

আরেক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

….. যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী।২৫ -আল কুরআন, সুরা নং ৫, আয়াত নং ৪৭

পবিত্র কুরআনুল হাকিমের এসব আদেশ অনুযায়ী সমষ্টিগত পর্যায়ে বর্তমানে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অবস্থা চিন্তা করার মত। বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দের উপর চিন্তার ভার ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ তাআ'লা ক্ষমা করুন, কাউকে কাফির, ফাসিক কিংবা মুশরিক অথবা, জালিম সাব্যস্ত করা আমাদের কাজ নয়। আমরা মনে প্রাণে দুআ করি, পৃথিবীবাসী সকল মানুষকে সত্যিকারের মুসলিম হওয়ার তাওফিক দান করুন মহান প্রতিপালক।

(খ) ‘দিনুল হক্ক’ তথা, সত্যিকার জীবন বিধান বলতে ধর্মনিরপেক্ষতার আওতায় শুধুমাত্র একটি ধর্ম হিসেবে কোন রকমে নত মস্তকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাকে বুঝায় না; বরং পবিত্র কুরআন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে যে, ইসলাম জীবনের সকল ক্ষেত্র এবং মানব রচিত সকল ব্যবস্থা ও দর্শনের উপর কর্তৃত্ব করবে। এ কারণে একটা কঠিন দায়িত্ব আমাদের ঘাড়ের উপর চলে আসে। কুরআনের নির্দেশাবলীর প্রতিপক্ষ মানব সমাজ, সংস্কৃতি, আইন, অর্থনীতি, রাজনীতি এবং আমাদের বিদ্যমান পৃথিবীর সমাজ ব্যবস্থায় কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠা করতে দেয়া হচ্ছে না এই কারণে, যেন আমরা এদের গুণকীর্তন ও প্রশংসা করি কিন্তু এদেরকে অনুসরণ করা, সমর্থন যুগিয়ে যাওয়া বা বাস্তবায়ন করার কথা কখনোই কুরআন সমর্থিত নয়।

এই পরিস্থিতি দ্বীন ও মানুষের ক্ষমতার মধ্যকার বিশাল ব্যবধান দূর করাকে অপরিহার্য করে তোলে, যার জন্য স্পষ্টতই কুরআনের হুকুম আহকাম জারি করার জন্য যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন, যেন এই নেতৃত্ব ইসলাম বহির্ভূত কোন মতাদর্শ বাস্তবায়নের পরিবর্তে পৃথিবীতে আল্লাহর রাজ (২৬) কায়েম করার ক্ষেত্রে প্রয়াসী হয়। ঐক্যবদ্ধ সাংগঠনিক ক্ষমতার অনুপস্থিতিতে ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুধু তাত্ত্বিক পর্যায়ে আবদ্ধ থাকে এবং ফলশ্রুতিতে সব ধরণের দুর্নীতি, অবিচার, অসমতা এবং অনৈতিকতা পৃথিবীতে বাধাহীনভাবে বিরাজ করতে থাকে। ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা কোন একক ব্যক্তির কাজ নয়। এই কারণে প্রয়োজন একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং কুরআনে এই প্রচেষ্টাকে বলা হয়েছে, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এবং কুরআনের এই আয়াতে বলা হয়েছে যে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ ছাড়া এই কষ্টদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তির কোন উপায় নেই-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে? -আল কুরআন, সুরা আস সফ, আয়াত - ১০

تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।২৭ -আল কুরআন, সুরা আস সফ, আয়াত - ১১

(গ) এমন নয় যে ইসলাম রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছাড়া নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে না, প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ক্রমান্বয়ে আরও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যায় যদি ইহাকে কোরআন এবং রসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিধানের অধিনস্ত করা না হয়।

(ঘ) ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আমাদের মৌলিক দায়িত্বসমূহের একটি, যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তা ভুলে গেছি। এই দায়িত্বের গুরুত্বের উপর জোর দেয়া হয়েছে হাদিসের এই বর্ণনার দ্বারা যেখানে রসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যদি একজন মুসলিম আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অংশগ্রহণ বা অংশগ্রহণের মনোবাসনা ব্যতিরেকে মৃত্যুবরণ করে তবে সে এক ধরণের ‘নিফাক’ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো (অর্থাৎ, কপটতায় আচ্ছন্ন, প্রকৃত ঈমান ছাড়া)।'২৮

একজন মুসলিম, যার জীবনে ইসলামের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের স্বপ্ন নেই, ইসলামী খিলাফাতের জন্য অন্তরে ফিকির নেই, চিন্তা নেই, আফসোস নেই, প্রচেষ্টা নেই, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ই্চ্ছে-আকাঙ্খা আর অদম্য অভিলাষ নেই, জিহাদে অংশগ্রহণের এবং জিহাদে জীবন উৎসর্গ করার জন্য ঐকান্তিক কামনা এবং বাসনা নেই - সে শরিয়া অনুযায়ী একজন মুসলিম বটে কিন্তু আল্লাহ তাআ'লার দৃষ্টিতে সে প্রকৃত মুমিন নয়। তার কারণ, প্রকৃত ঈমান, যা বাস্তবিকপক্ষে গোপন ও লুকায়িত, তা প্রকাশ পায় আল্লাহ তাআ'লার রাস্তায় জিহাদ বা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার মাধ্যমে। কুরআন অনুযায়ী এটাই একজন প্রকৃত ইমানদারের পরিচয়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

মুমিন কেবল তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, তারপর সন্দেহ পোষণ করেনি। আর নিজদের সম্পদ ও নিজদের জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করেছে। এরাই সত্যনিষ্ঠ। -সুরা- আল হুজুরাত, আয়াত নং ১৫)২৯

হীনমন্যতার অন্ধকারে আর নয়ঃ

নিতান্ত পরিতাপের সাথে বলতে হয়, আমাদের কিছু ভাইয়েরা রয়েছেন যারা অনাকাঙ্খিত জড়তা সড়তায় কাবু এবং ন্যুজ হয়ে থাকতে পছন্দ করেন। অজানা এক ভয় তাদের অন্তরে বাসা বেঁধে থাকে। তারা যে কুরআনেরই অনুসারী তাতে হয়তো তাদের সন্দেহ নেই ঠিকই, কিন্তু কুরআনের কোনো কোনো কথা বলতে এবং বাস্তব জীবনে সেসব আয়াতে বর্ণিত হুকুম আহকামের অনুশীলন করতে তারা কেঁপে ওঠেন, ভয় পান, ভীত হন, সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠেন এবং ফলশ্রুতিতে কুরআনের অনেক অনেক নির্দেশনার বিষয়ে তারা নিরবতা পালন করেন, অথবা এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া কিংবা পাশ কাটিয়ে চলার নীতি অবলম্বন করেন। মহান আল্লাহ তাআ'লাকে সৃষ্টিকর্তা এবং সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক বলে তারা মনে প্রাণে বিশ্বাসের কথা বলেন, এটা যেমন ঠিক তেমনি পরক্ষণেই তারা আবার আল্লাহ তাআ'লার প্রেরিত বাণী মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বিশেষ বিশেষ আয়াতের বাস্তব প্রয়োগের ক্ষেত্রে, অনুসরণের ক্ষেত্রে নিরবতা পালন করতে ভালোবাসেন। না দেখার ভান করে এগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। অথচ, আল কুরআনের স্পষ্ট ভাষ্য হচ্ছে, দ্বীন হিসেবে একমাত্র ইসলামই আল্লাহর কাছে মনোনীত এবং দ্বীন আল ইসলামে দাখিল হতে হবে পূর্ণাঙ্গভাবে। তো, আল্লাহ তাআ'লার এই বাণীর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনে তাদের কার্পণ্য কেন? পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করতে এবং মেনে নিতে দুর্বলতা কেন? ইসলামকে পরিপূর্ণতা দিয়েছেন তো স্বয়ং এর প্রেরক মহান প্রতিপালক নিজেই। তো, ইসলাম বাদ দিয়ে জীবনের ক্ষেত্র বিশেষে অন্য পথে চলার প্রবনতা কেন?

বলা বাহুল্য, পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বাসীদেরকে পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের ভেতরে দাখিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআ'লা। পরিপূর্ণভাবে দ্বীনের ভেতরে দাখিল হওয়ার অর্থ- ইসলামের প্রতিটি আদেশ নিষেধ, হুকুম আহকাম জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণ করে চলা। এই নির্দেশ আমরা কতটুকু পালন করছি, আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে কতটুকু বাস্তবায়িত করছি, বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা গ্রহন করছি- একটিবার ভেবে দেখেছি কি, প্রিয় বন্ধু? এটা ভেবে দেখার সময় কি এখনও আসেনি? আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেকের এই অনুভব-অনুভূতিকে সজাগ, সচেতন এবং সচল করে দিন। আত্মসমালোচনা আর আত্মশুদ্ধির স্বচ্ছ প্রস্রবনের অথৈ সরোবরে নিজেদের মগ্ন-নিমগ্ন হবার তাওফিক দিন। জীবনের শেষ মুহূর্ত অবদি চলার সৌভাগ্য নসিব করুন একমাত্র তাঁরই পথে, সিরাতুল মুস্তাকিমে এবং পরকালে আমাদের শেষ পরিণতি যেন হয় তাঁর সন্তুষ্টিলাভ ও দিদারপ্রাপ্তির সুমহান নেআমত অর্জন এবং অনিঃশেষ ও অফুরন্ত নাজ নেআমত সুশোভিত তাঁর জান্নাতে দাখিল হওয়ার খোশ কিসমত।

তথ্যসূত্র ও অন্যান্য:

০১. সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত ১৯
০২. সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত ৮৫
০৩. Abdullah Yousaf Ali, the Holy Qur’an, Text, Translation & Commentary, Page, 173, Note: 434
০৪. সূরাহ আত তাওবাহ, আয়াত ৩৩, সূরাহ আছছফ, আয়াত ০৯, সূরাহ আল ফাতাহ, আয়াত ২৫
০৫. E M Kirkpatrick,Chambers 20th Century, Dictionary,1983,Page1172.
০৬. Longman Dictionary of Contemporary English, (New Edition), PAF Book Club, 1991
০৭. সূরাহ আল ফাতিহা, আয়াত ০৩
০৮. সূরাহ ইউসুফ, আয়াত ৭৬
০৯. সূরাহ আন নাছর, আয়াত ০২
১০. সূরাহ আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৩০
১১. Dr Michael Hart, the 100: a ranking of the most influential persons in the history, 1978, P. 33.
১২. সূরাহ ইউসুফ, আয়াত ৪০, সূরাহ বনি ইসরাইল, আয়াত ১১১, সূরাহ আল কাহফ, আয়াত ২৬
১৩. সূরাহ আন নিসা, আয়াত ৫৯, সূরাহ আল হুযুরাত, আয়াত ০১
১৪. সূরাহ আশ শূরা, আয়াত ৩৮
১৫. সূরাহ আত তাওবাহ, আয়াত ২৯
১৬. সূরাহ আত তাওবাহ, আয়াত ৩১
১৭. সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত ১৮০, সূরাহ আল মুনাফিকূন, আয়াত ০৭
১৮. সূরাহ আল হাদিদ, আয়াত ০৭
১৯. সূরাহ আল বাকারাহ, আয়াত ২৭৫, ২৭৯, সূরাহ আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৯১
২০. সূরাহ আন নিসা, আয়াত ০১, সূরাহ আল হুযুরাত, আয়াত ১৩
২১. সূরাহ আন নূর, আয়াত ৩১, সূরাহ আল আহযাব, আয়াত ৫৩, ৫৯
২২. সূরাহ আন নিসা, আয়াত ৬০
২৩. সূরাহ আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৪৪
২৪. সূরাহ আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৪৫
২৫. সূরাহ আল মা-য়িদাহ, আয়াত ৪৭
২৬. Gospel (Old & New Testament),Mathew: 6 : 9-14
২৭. সূরাহ আছছফ, আয়াত ১০-১১
২৮. Muslim Bin Hajjaj, KitabulImarah, Hadith No 1910
২৯. সূরাহ হুযুরাত, আয়াত ১৫
৩০. পেশোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিয়াত বিভাগের পিএইচডি গবেষক জমির আখতার খান প্রণিত 'Islam: A Deen Not Mere Religion' নিবন্ধ অবলম্বনে

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ অত্র নিবন্ধটি প্রণয়নের একটি পর্যায়ে ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তুর ভাইয়ের স্মরণাপন্ন হলে তিনি সদয় হয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে আমাকে কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন। তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কল্যানের দোআ। আল্লাহ তাআ'লা তাকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:২০

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সুন্দর লেখা তবে পুরো পড়তে পারিনি অনেক বড়; কয়েক পর্বে দিতে পারতেন।

১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



কিছুটা পড়ছেন বলে শুকরিয়া। সময় নিয়ে পরবর্তীতে বাকিটুকুও পাঠ করার একান্ত অনুরোধ থকালো।

মোবারকবাদ জানবেন।

২| ১৬ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হা হা হা,
১২ হাত কাকড়ের ১৩ হাত বিচি!!
প্রায় লেখার সমপরিমান সূত্র!
আমি মূল লেখার রেখে সূত্র পড়লাম আগে!
আপনার গায়েও কপি পেষ্টের গন্ধ আছে দাদা।
"গরু ঘাষ খায়" এটারও সুত্র লাগবে।
এমন লেখার পাঠক এখানে পাবেন?
এসবের বিপক্ষে লেখেন হিট হবেন।

১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:০০

নতুন নকিব বলেছেন:



প্রিয় নূরু ভাই,
কপিপেস্ট বুঝতেও অতি সামান্য মগজের দরকার হয়, যা আমাদের অনেকেরই হয়তো নেই। এইখানটাতেই দুঃখ। এই লেখাকে কোনভাবেই কপিপেস্ট বলার সুযোগ নেই। কারণ, এটি কপি করা কোন লেখা আদৌ নয়। আপনি জেনে হয়তো আশ্চর্য্য হবেন, তবু বলছি, বহু কষ্ট করে, মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করে, বিভিন্ন সোর্স থেকে সংগৃহিত তথ্য উপাত্তের আলোকে বহু দিনের (কম করে হলেও বছর কয়েকের) খাটুনির ফসল আজকের এই নিবন্ধ। উপহাসোচ্ছলে অন্যের কীর্তি ও কাজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে দাঁত কেলিয়ে হেসে দেয়া সত্যিই সহজ, কিন্তু এমন একটি নিবন্ধ তৈরি করার পেছনে যিনি বা যারা কখনও শ্রম দেননি, তাদের বুঝানো হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না যে, এগুলো কতটা কঠিন।

ভাই, সত্যি বলছি, হিট হওয়ার আশায় লেখালেখি করি না। কারও বাহবা পেতেও নয়। এই লেখা যদি একজন পাঠকেরও উপকারে আসে তাহলেই শ্রম স্বার্থক মনে করবো। আর সর্বোপরি, লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআ'লার বানীকে ছড়িয়ে দেয়া। তাঁর সন্তুষ্টি আর নৈকট্য অর্জনই একমাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য।

যাক, শুভকামনা জানবেন। অনেক অনেক কল্যানের দোআ।

৩| ১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
দাদা রাগ করবেন না।
আমি এখন এসিব লেখা ছেড়েই
দিয়েছি। উলোবনে মুক্তা ছড়াতে
আপনাকেও অনুরোধ করবো।
সম্ভব হলে এখানে পণ্ডশ্রম না করে
বই আকারে প্রকাশ করুন, তা হলে
উপহাসের পাত্র হবেন না, বরং উত্তম
বিনিমর প্রত্যশা করতে পারবেন পরকালে।
উপযাযক হয়ে উপদেশ দেবার জন্য ক্ষমা চাই।

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:৪৬

নতুন নকিব বলেছেন:



না, রাগ করিনি। উপযাচক হয়ে উপদেশ দেয়ায় অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

৪| ১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: রাষ্ট্রই এই জীবন ব্যবস্থা মানে না। তাই সাধারন মানুষ বিশ্বাস করলেও নিয়ম কানুন মেনে চলে না।

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:৫০

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার এই কথা মেনে নিলে, তবু সাধারণ মানুষ অন্তত বিশ্বাস করে। খারাপ কি?

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, বিশ্বাস করার সাথে সাথে মানুষ ইসলাম ধর্মকে মেনেও চলে। দূরে থেকে দেখে হয়তো তা অনুভব করা যায় না। আর বিদ্বেষপ্রসূত মন নিয়ে সত্যকে কখনোই উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

ধন্যবাদ।

৫| ১৬ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

তানভির জুমার বলেছেন: ইসলাম ধর্মকে অনেক আধুনিক মুসলমান নিজেদের মত করে পরিবর্তন করতে চায়।

১৮ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:৫২

নতুন নকিব বলেছেন:



জ্বি, ঠিকই বলেছেন। নিবন্ধেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। ধারণা করা অমূলক নয় যে, অনেকেই ইসলাম ধর্মের সত্যিকারের মর্ম উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েই এসব করে থাকেন।

ধন্যবাদ।

৬| ২৪ শে মে, ২০২২ রাত ১:২৫

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: ভালো লাগলো। ভালো থাকুন। শুভ কামনা।

২৭ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:১৮

নতুন নকিব বলেছেন:



পোস্টটি ভালো লেগেছে জেনে আনন্দিত। আপনিও অনেক অনেক ভালো থাকবেন। শুভকামনা আপনার জন্য।

৭| ২৭ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১২:০৪

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: বেশ বড় এবং তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট, কিন্তু ধর্মীয় বিষয় আমার মাথায় খু্ব একটা ধরে না বা বুঝতে পারি না তাই পোস্টের বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত জানাতে পারছি না বলে দুঃখিত।

হ্যাঁপি ব্লগিং

২৭ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:০৭

নতুন নকিব বলেছেন:



এটা আমার ব্লগে সম্ভবতঃ আপনার প্রথম মন্তব্য। সম্ভবতঃ এই জন্য বলছি, কারণ, আমি জানি না এবং আপনার নিকট থেকেও একথা জানতে পারিনি যে, আপনার অন্য কোন নিক এই সামহোয়্যার ইন ব্লগে এ ইতোপূর্বে ছিল কি না। এই ব্লগে এর আগে আপনি যদি লেখালেখি না করেও থাকেন, তাতেও সমস্যা নেই, আপনাকে বেশ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্লগার বলে কেউ কেউ ভুল করতেই পারেন। আপনার গোছানো মন্তব্য কিংবা প্রতিমন্তব্য অন্ততঃ সেই ভাবনাকেই শক্তিশালী করে।

সময় যখন হাতে থাকে, একটু বড় হলেও পোস্টটি মনযোগ দিয়ে একবার অন্ততঃ পাঠের অনুরোধ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে লেখাটিতে।

যা হোক, প্রথম মন্তব্যে আসার জন্য অভিনন্দন আপনাকে। আর অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা আপনার জন্য। সামনের দিনগুলো অনেক সুন্দর হবে, এই প্রত্যাশায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.