নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
তাকবিরে তাশরিক, অন্তর্জাল হতে সংগৃহিত।
তাকবিরে তাশরিক: একত্ববাদের দৃপ্ত উচ্চারণ আল্লাহু আকবার ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বিশ্বজুড়ে
থেকে থেকে, থেমে থেমে আজ তাকবিরের আওয়াজ উঠছে বিশ্বময়। কি জাপান, কি ইন্দোনেশিয়া, কি মালয়েশিয়া, কি আফ্রিকা, কি আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া আর ইউরোপ - সবখানে চলছে তাকবির ধ্বনি। তাইগ্রিস পাড়ের বাগদাদ, নীল নদের পাড়ের আলেকজান্দ্রিয়া আর কায়রো, হোয়াংহো তীরের বেইজিং, সুমিদা তীরের টোকিও, স্প্রীর স্নিগ্ধ জলের ধারা স্নাত বার্লিন, দানিয়ূব পাড়ের বুদাপেস্ট, লা প্লাটা নদী পাড়ের বুয়েন্স আয়ার্স, চাও ফ্রায়ার নদীর শান্ত জলধির পাশে গড়ে ওঠা শহর ব্যাংকক, টাইবারের স্রোতহীন জলরাশি স্নাত প্রাচীন শহর রোম, ডাংলিং পাড়ের সিডনি, ইয়াং সি কিয়াংয়ের স্বচ্ছ জলধারা বিধৌত হংকং, হুগলী পাড়ের কলকাতা, সিন্ধু অববাহিকার করাচি, যমুনা পাড়ের আগ্রা, সীন নদীর পাড়ের প্যারিস, মস্কোভা নদী তীরের প্রাচীন শহর মস্কো, টেমস এর শান্ত শীতল জলের ছোঁয়ায় সিক্ত লন্ডন আর হাডসন নদীর পলি বিধৌত সৌম্য শহর নিউইয়র্ক - কোথায়, কোন শহরে ধ্বনিত হচ্ছে না আজ তাওহিদের এই বুলন্দ তাকবির? সাদাদের দেশ ইউরোপ আমেরিকা কিংবা অস্ট্রেলিয়ায় তাকবিরের ধ্বনি উঠছে। একই ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কালো মানুষের দেশ নাইজেরিয়া কিংবা ইথিওপিয়া- সর্বত্রই। পবিত্র জিলহজ্জ মাস চলছে। এই মাসের ৯-১৩ তারিখ তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। আর এ কারণেই বিশ্বজুড়ে এই কয়েক দিন প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে পঠিত হতে থাকবে অযুত কন্ঠে তাকবিরে তাশরিকের সুমধুর উচ্চারণ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ
‘তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করো (আইয়ামে তাশরিকের) নির্দিষ্ট দিনগুলোতে...। ’ -সুরা : বাকারা, আয়াত : ২০৩
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ
'.......এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে।' -সূরা হজ্ব : ২৮
এই আয়াতে নির্দিষ্ট দিনগুলো দ্বারা প্রায় সকল ইসলামী স্কলারের মতে আশারায়ে যিলহজ্ব অর্থাৎ, যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের দশ দিন এবং তৎপরবর্তী আইয়ামে তাশরীকের তিনটি দিনসহ মোট এই তেরটি দিনই উদ্দেশ্য। বিশেষ করে এই দিনগুলোতে আল্লাহর যিকিরের প্রতি আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কারণ সম্পর্কে আল্লামা খাত্তাবী রাহ. বলেন, জাহেলী যুগের লোকেরা যুগ যুগ ধরে তাদের কথিত প্রভুদের নামে পশু-প্রাণী উৎসর্গ করত। এর প্রত্যুত্তরে মুমিনদের প্রতি আদেশ করা হয়েছে তারা যেন আল্লাহর যিকির ও তাকবীরের বুলন্দ আওয়াজের মাধ্যমে তাওহীদ তথা আল্লাহ তাআ'লার একত্ববাদ এবং একমাত্র তাঁর আনুগত্যের ঘোষণা দান করে এভাবে যে, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। তিনিই একমাত্র ইলাহ। তাঁর কোনো শরীক নেই। প্রশংসাপ্রাপ্তির একমাত্র অধিকার তাঁরই রয়েছে। সমস্ত প্রশংসা কেবলমাত্র তাঁরই। সুতরাং, তাঁর পবিত্র নাম ব্যতিত আর কারো নামে প্রাণী উৎসর্গ করা যাবে না। কারণ তা সুস্পষ্ট শিরক। -ফাতহুল বারী ২/৫৩৫
সাহাবায়ে কেরাম এই দিনগুলোতে সর্বদা আল্লাহু আকবারের ধ্বনি তুলতেন। হযরত ইবনে উমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু ও আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বাজারে গিয়ে তাকবীরের আওয়াজ তুলতেন। শুনে শুনে লোকেরাও তাদের সাথে তাকবীরের সুর তুলতেন। ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু পথে-ঘাটে, হাঁটা-বসায়, বাজারে-ঘরে এবং নামাযের পরে শুধুই তাকবীর বলতে থাকতেন। মিনার দিনগুলোয় তার তাকবীরের সাথে সমস্বরে মানুষের তাকবীর ধ্বনি মিনার পুরো অঙ্গন মুখরিত হয়ে উঠতো। মহিলারাও (নিচু স্বরে) তাকবীর বলতে থাকতেন। -বুখারী-ফাতহুল বারী ২/৫৩০-৫৩৬
জিলহজের ফজিলতপূর্ণ প্রথম দশকের অন্যতম একটি আমল হচ্ছে তাকবিরে তাশরিক। তাকবীরে তাশরিক হচ্ছে-
الله أكبر، الله أكبر، لاإله إلا الله، والله أكبر الله أكبر ولله الحمد
উচ্চারণঃ আল্লা-হু আক্বার, আল্লা-হু আক্বার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লা-হু, ওয়াল্লা-হু আকবার আল্লা-হু আক্বার ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ।
অনুবাদ : ‘আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান; আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নাই; আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।’
তাকবিরে তাশরিক কখন পাঠ করতে হবে?
হজের মাস জিলহজের ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করতে হয় বলে এই দিনগুলোকে বলা হয় 'আইয়ামে তাশরিক'। ৯-১৩ তারিখ পর্যন্ত এই ৫ দিন প্রতি ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পরে (মোট ২৩ ওয়াক্ত) তাকবিরে তাশরিক ১ বার পাঠ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক আমল।
২০২২ এর তাকবিরে তাশরিক পাঠের সময়কালঃ
এ বছর ২০২২ ইং সাল অর্থাৎ, ১৪৪৩ হিজরির তাকবিরে তাশরিক ০৯/০৭/২০২২ ইং তারিখ রোজ শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী বুধবার আসরের নামাজের পরে পাঠ করার পরে ৫ দিন পূর্ণ হবে। জামাআতে নামাজ আদায় করা হোক বা একাকী, পুরুষ বা নারী, মুকিম বা মুসাফির নির্বিশেষে সবার ওপর এই তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষগণ শব্দ করে উঁচু আওয়াজে তাকবির পাঠ করবেন। পক্ষান্তরে মহিলাগন নিচু আওয়াজে এটি পাঠ করবেন।
তাকবির ঠিক কোন সময়টিতে এবং কিভাবে পড়া উচিত?
শুধুমাত্র প্রত্যেক ফরজ নামাজের সালাম ফেরানোর পরপরই কোনো কথাবার্তা না বলে তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। সুন্নত, বিতর কিংবা অন্য কোন নামাজ শেষে এই তাকবির পাঠের নিয়ম নেই। বলা বাহুল্য, এই তাকবিরে তাশরিক পুরুষদের জন্য জোরে সশব্দে পাঠ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক এবং পুরুষদের জন্য নিম্নস্বরে এটি পাঠ করা সুন্নত পরিপন্থী। যদিও আমাদের অধিকাংশ মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায় শেষে এবং অন্যান্য নামাজী ব্যক্তিদের একাকি নামাজের পরে তাকবিরে তাশরিক নিচু আওয়াজেই পাঠ করতে দেখা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যেন তাকবিরের এই শব্দমালা উচ্চারণ করতে আমরা ব্যাপকাকারে লজ্জা পাই। লজ্জায় আড়ষ্ট কন্ঠে তাকবিরের ধ্বনি পরিষ্কারভাবে ফুটে ওঠে না আমাদের। হায় হায়! আমাদের কী হলো! যিনি এমন সুন্দর জ্বিহবা, ঠোট এবং মুখ দিলেন, কথা বলার ক্ষমতা দিলেন, সেই মহান আল্লাহ তাআ'লার বড়ত্বের বুলন্দ আওয়াজ তাকবিরে তাশরিককে একটু উঁচু আওয়াজে পাঠ করলে কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়! তাঁর বড়ত্ব ও মহত্বের অমোঘ ঘোষনাকে আকাশে বাতাসে, ইথারে - এককথায় দিক দিগন্তে ছড়িয়ে দিতেও এমন কার্পন্য কেন! হায় হায়! এই মুখ নিয়ে কাল কেয়ামতের কঠিন দিনে কিভাবে দাঁড়াবো মহান মালিকের সামনে!
মাআরিফুল কুরআনের লেখক মুফতি শফি (রহ.) লিখেছেন, তাকবিরে তাশরিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সালাম ফিরানোর পর এমন উচ্চেঃস্বরে পড়বে, যেন ইসলামের মহত্ত্ব প্রকাশ পায়। এই দোয়া নারীদের ওপরও পড়া ওয়াজিব। তাকবিরে তাশরিক নারীদেরও পড়তে হবে—এটাই ইসলামের বিধান। এই ব্যাপারে অনেক উদাসীনতা দেখা যায়। নারীরা নামাজের সালাম ফিরানোর পর এই দোয়া পড়তে ভুলে যায়। পুরুষরা মসজিদে জামাত শেষে সবাই একসঙ্গে পড়ে ফেলে এ কারণে সহজেই স্মরণ হয়ে যায়। নারীরা সাধারণত ঘরে একা একা নামাজ পড়ে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বেশির ভাগ সময় তাদের তাকবিরে তাশরিক পড়তে স্মরণ থাকে না, পড়াও হয় না। বিশ্বখ্যাত আলেম মুফতি তাকি উসমানি স্মরণ রাখার সুন্দর একটি পদ্ধতি বলে দিয়েছেন। নারীরা যে স্থানে নামাজ পড়ে, ওখানে একটা কাগজে দোয়াটি লিখে রাখলে নামাজ শেষে স্মরণও থাকবে পড়াও হবে। এই দোয়া আমরা নিজেরাও পড়ব, পরিবারের সবাইকে পড়তে উৎসাহিত করব।
তাকবিরে তাশরিকের সূচনা
হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন শিশুপুত্র ইসমাইলকে কুরবানির নির্দেশ পালনে জবেহ করার জন্য মাটিতে শোয়ালেন, তখন আল্লাহ তাআলা হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে জান্নাত থেকে দুম্বা নিয়ে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর ছুরির নিচে দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
নির্দেশ মত হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম জান্নাতের সুসজ্জিত একটি দুম্বা নিয়ে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কুরবানিগাহের দিকে আসছিলেন। তিনি দ্রুত আসছিলেন। কত দ্রুত তা ব্যাখ্যাতীত। ফেরেশতাগণ নূরের তৈরি। নূর মানে, আলো। আলোর গতি আমাদের জানা। সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল। কিন্তু ফেরেশতাগণ নূর বা আলোর তৈরি বলে তাদের চলার গতিকে আলোর গতির সমান মনে করা মূর্খতা। কারণ, আল্লাহ প্রদত্ত তাদের অপরিমেয় গতি পরিমাপের আসলে কোন সুযোগ আদৌ নেই। কুরআন হাদিসে এই বিষয়ক বিভিন্ন ইঙ্গিত থাকলেও একেবারে সঠিক সংখ্যায় এটি পরিমাপ করা দুরূহ বৈকি। আল্লাহ তাআ'লার বিশেষ সৃষ্টি তারা। তাঁর হুকুমের অধীনে থেকেই তারা সবকিছু করেন। মুহূর্তের জন্য সীমালঙ্ঘন বা অবাধ্যচারণ করেন না।
হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম জান্নাতের দুম্বা নিয়ে যখন ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কুরবানিগাহের দিকে আসছিলেন তখন তার মনে সন্দেহ হচ্ছিল যে, তিনি এসে পৌঁছার পূর্বেই ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ছুরি চালিয়ে দেন কি না। তাই তিনি খুব দ্রুত পথ অতিক্রম করছিলেন। একপর্যায়ে হযরত ইসমাইলকে জবাই করার আগে তিনি যাতে দুম্বা নিয়ে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ছুরির নিচে সেটিকে পৌঁছে দিতে পারেন সে জন্য তাকবিরের আওয়াজ দেন। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের প্রত্যাশা ছিল, এই তাকবির ধ্বনি শ্রবণের কারণে যাতে করে হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম স্বীয় পুত্রকে জবেহ করতে কিছুটা বিলম্ব করেন। এই লক্ষ্যে তিনি আকাশে থাকতেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন- اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, অর্থাৎ, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।
অতঃপর ঠিকঠিকই হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম উর্ধ্ব গগনব্যাপী ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হওয়া তাকবিরের এই বুলন্দ আওয়াজ শুনে কাপড় দ্বারা আবৃত নিজের চোখ খুলে তাকালেন। তাকবির ধ্বনির উৎস অনুসন্ধান করে দেখলেন যে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের কন্ঠেই দেয়া হয়েছে এই তাকবির। চোখ খুলে তিনি এ-ও দেখলেন যে, হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের আনিত জান্নাতের দুম্বা হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে ইতোমধ্যেই কুরবানি হয়ে গেছে। হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে নিজের পাশেই উপবিষ্ট পেলেন সশরীরে সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায়। আল্লাহ তাআ'লার বিশেষ অনুগ্রহে জান্নাতের দুম্বা কুরবানি হয়ে গেছে, প্রাণাধিক প্রিয় আপন পুত্রের জীবন রক্ষা পেয়েছে - এর চেয়ে খুশি এবং আনন্দের বিষয় আর কী থাকতে পারে! তখন খুশিতে আত্মহারা হয়ে তিনিও বুলন্দ আওয়াজে হৃদয়ের অনুপম অনুভূতি ও ভালোবাসা নিয়ে তাওহিদের কালিমা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলে উঠলেন- لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ اَللهُ اَكْبَر বাংলা উচ্চারণ: লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার, অর্থাৎ, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আপনিই শ্রেষ্ঠ।
আপন পিতা হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তাওহিদের কালিমা ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে দেখে শিশুপুত্র হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসা করে বলে ওঠেন- اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ, অর্থাৎ, আল্লাহ মহান, সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।
হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের তাকবির, তাওহিদের কালিমার প্রশংসা আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় হয়ে যায়, একজন সম্মানিত ফেরেশতা, একজন বিশিষ্ট নবী যিনি খলীল উপাধীতে ভূষিত এবং আরেকজন শিশু বয়সের যিনিও সম্মানিত ভাবী নবী, অর্থাৎ বয়োপ্রাপ্ত হয়ে তিনিও নবী হয়েছিলেন - এই তিনজনের মুখ নিঃসৃত অমিয় বাণী মহান রবের কাছে এমনভাবে এবং এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় যে, তিনি কেয়ামত পর্যন্ত এই শব্দমালাকে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের মুখে মুখে আওড়ে যাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রতি বছর জিলহজ মাসের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে এই কালিমাসমূহ পাঠ করাকে তিনি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। হজ পালনকারী, কুরবানি দাতাসহ মুসলিম উম্মাহর নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য জিলহজ মাসের ৯-১৩ পর্যন্ত এ ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক পড়াকে মহান রব্বুল আলামীন আবশ্যক করে দিয়েছেন।
যে মহান শিক্ষা লুকিয়ে রয়েছে তাকবিরে তাশরিকের মাঝেঃ
বলাবাহুল্য, এই তাকবিরে তাশরিকের পেছনে রয়েছে আল্লাহ তাআ'লার মুহাব্বত ও ভালোবাসার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অনন্য সাধারণ ও অচিন্ত্যনীয় এক আলোকিত প্রেক্ষাপট। প্রাণাধিক প্রিয় শিশু সন্তানের প্রতি পিতার অপরিমেয় ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে মহান মালিক রব্বুল আলামীন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার ভালোবাসা ও মুহাব্বতকে সকল কিছুর উর্ধ্বে তুলে ধরে প্রত্যেক বিষয়ে তাঁর আদেশ, নির্দেশ ও সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত এবং একমাত্র পালনীয় জ্ঞান করার এই শিক্ষাই লুকিয়ে রয়েছে তাকবিরে তাশরিকের পেছনে। কুরবানির আসল শিক্ষাও এটাই। তাকবিরে তাশরিকের ভাব, মর্মার্থ ও শিক্ষা নিজেদের মধ্যে লালন করতে পারলেই কুরবানি তথা আত্মত্যাগ স্বার্থক ও সফল হবে বলে ধরে নেয় যায়।
শেষের প্রার্থনাঃ
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাকবিরে তাশরিকের সঠিক ইতিহাস জেনে নিয়ে উল্লিখিত দিনগুলোতে শুকরিয়া হিসেবে এ ওয়াজিব কাজটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করার তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহর প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী এবং জামায়াতে কিংবা একাকি নামাজ আদায়কারী প্রত্যেককেই দান করুন। হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের তাকবির, তাওহিদের কালিমার প্রশংসা আল্লাহর কাছে যেমনভাবে পছন্দনীয় হয়েছিল আমাদের থেকেও তিনি একইভাবে তা কবুল করে এর মাধ্যমে তাঁর একান্ত নৈকট্য অর্জনের খোশ কিসমত নসিব করুন। তাওহিদ, আল্লাহর বড়ত্ব ও প্রশংসার কথামালার এই বাক্য পাঠে উচ্চকিত করে তোলার তাওফিক দান করুন পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ। অনুপম এ জিকির গুঞ্জরিত হোক, প্রতিটি মসজিদে, প্রতিটি মুসলিমের ঘরে; প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের মুখে। আমিন।
পোস্টে যুক্ত তাকবিরে তাশরিক বিষয়ক তথ্যসমূহ আরও বিস্তারিত জানার জন্য যেসব সূত্র দেখে নেয়া যেতে পারে: রদ্দুল মুহতার ২/১৭৭-১৮১; ফাতওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২; আল বাহরুর রায়েক ২/১৬৪-১৬৫, ইলাউস সুনান ৮/১৪৮-১৬২; বাদায়েউস সানায়ে’ ১/৪৫৮-৪৬৫।
১১ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৫২
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয়,
ছিলাম আপনাদের আশেপাশেই। ইচ্ছে করেই কিছু দিনের জন্য লেখালেখি থেকে একটু দূরে রেখেছিলাম নিজেকে। আসলে লেখালেখি করার মত সেরকম কোন যোগ্যতার অধিকারীই আমি নই। মূলতঃ এই ক'দিনে ব্লগে কোন পোস্ট না লিখলেও বেশ কিছু পোস্ট পড়ার সুযোগ হয়েছে।
শুভকামনা জানবেন। ঈদ মোবারক।
২| ১১ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে অনুমান করা হচ্ছে যে এখন থেকে ৬০ বছর পরে সারা বিশ্বে জনসংখ্যার দিকে থেকে ইসলাম খৃস্টান ধর্মকে অতিক্রম করে প্রথম স্থান দখল করবে।
১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:০২
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয় ভাই,
মুসলিমদের সংখ্যা গরিষ্ঠতার পরিসংখ্যানের অনুমান ভিত্তিক এই সংবাদটা নিশ্চয়ই ভালো। তবে জ্ঞান বিজ্ঞানে আজকের পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের শুধু সংখ্যায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন মূলতঃ কোন শ্রেষ্ঠত্বই নয়; বরং অন্যান্য জাতির সাথে পারস্পারিক ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনে এবং সর্বোপরি যুগের চাহিদা পূরণের উপযুক্ততা অর্জনের লক্ষ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক পৃথিবীর চিন্তা চেতনাকে ধারণ করতে হবে। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় তাদেরকে অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণের ভার অন্যদের উপরে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের আরাম আয়েশের কুম্ভনিদ্রা থেকে তাদের জেগে ওঠার বিকল্প নেই। নিত্য নতুন আবিষ্কার উদ্ভাবনে তাদের অনগ্রসরতার এই নেতিবাচকতায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। সংখ্যা গরিষ্ঠতা তখনই স্বার্থকতা লাভ করতে পারবে।
ঈদ মোবারক। শুভকামনা জানবেন।
৩| ১১ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:১৮
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এতদিন কোথায় ছিলেন?
১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:০৪
নতুন নকিব বলেছেন:
প্রিয় ভাই,
আপনার এলাকায় গিয়েছিলাম ঈদের দিন। কিছু সময় ছিলাম ওখানে গতকাল।
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার এবং আপনার পরিবারবর্গের জন্য। ঈদ মোবারক।
৪| ১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমাদের রসূল (সা) তাঁর উম্মতের সংখ্যা নিয়ে গর্ব করবেন। এই উম্মত হতে পারে অশিক্ষিত মানুষ আবার হতে পারে উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। সংখ্যার একটা মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব আছে। সংখ্যায় বাড়লে জ্ঞানী মুসলমানও বাড়বে।
১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৪৭
নতুন নকিব বলেছেন:
পুনরায় আপনার মূল্যবান মতামত রেখে যাওয়ায় আন্তরিক মোবারকবাদ।
জ্বি, সংখ্যার বিচারে আমরা অধিক হবো বিধায় রাসূলে কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরকালে আমাদের নিয়ে গর্ব করবেন, সে কথা সঠিক। কিন্তু আমি বলেছি পার্থিব দিক থেকেও পিছিয়ে পড়া মুসলিম উম্মাহকে জেগে উঠারও প্রয়োজন রয়েছে। নিজেদের স্বকীয়তা ও শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে এবং বিশ্ব সভায় নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে হলে এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বর্তমান ও নিকট এবং দূর অতীতের রুঢ় বাস্তবতার নিরিখে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেও এর প্রয়োজন রয়েছে।
তবে, সংখ্যার মনস্তাত্ত্বিক গুরুত্ব থাকলেও তা সবক্ষেত্রে এবং সবসময় সুফল বয়ে আনতে পারে বলে আমার কাছে মনে হয় না। বর্তমান আরাকান কিংবা চীনের জিনজিয়াং এই কথার বাস্তব উদাহরণ। জনপদ দু'টিতে সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিশাল (লক্ষ লক্ষ) সংখ্যক মানুষকে শিক্ষা দীক্ষাসহ নানাবিধ রাষ্ট্রীয় সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখে এমন একটি জনগোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে, যারা মূলতঃ সময়ের সাথে চলার মত পর্যায়ে বাস্তবিকভাবে আর নেই, যার বাস্তবতা আমরা সচক্ষে দেখছি। পড়াশোনার আলো থেকে দূরে সরিয়ে রাখা আরাকানের এই লক্ষ লক্ষ মানুষ আধুনিক এই যুগের একরকম জনবোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ, তাদেরকে সুযোগ বঞ্চিত না করে, মিয়ানমারের অন্য ধর্মের নাগরিকদের মত পড়াশোনার অধিকারসহ একইরকম অন্যান্য নাগরিক সুবিধা প্রদান করা হলে তারা জনসম্পদে পরিণত হতে পারতো।
অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন।
৫| ১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:২০
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার বিপক্ষে যে "কপিপেষ্টের" অভিযোগ এসেছিলো, উহা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি?
১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
উহা সম্পর্কে আমার বক্তব্য যাহা, তাহা আগেই দেয়া হয়েছে। নতুন করে কিছু বলার নেই।
আপনার দিনকাল কেমন কাটছে? সুপার শপ ইত্যাদিতে গিয়ে ঝগড়া বিবাদে জড়ানোর কথা বলেন না ইদানিং। কারণ কি?
৬| ১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৪৭
সোনাগাজী বলেছেন:
আমার ধারণা, কপিপেষ্ট নিয়ে সমস্যা থাকলে, উহা ব্লগটিমের হ্যান্ডলিং করা উচিত ছিলো; ব্লগার অপু ও ব্লগার আর, ইউ উহাকে সঠিকভাবে হ্যান্ডিলং না'করাতে কয়েকজন একটিভ ব্লগার চুপ হয়ে গেছে।
আমাকে ব্লগের বাহিরে রাখার চেষ্টা করে একটা গ্রুপ মোটামুটিভাবে আপাতত পুরোপুরি সফল হতে পারেনি; কিন্তু ওরা আশা ছাড়েনি; আমি নিজেই কিছুটা উৎসাহ হারিয়েছি; আমার হিউমার ইত্যাদি প্রকাশ করতে ভালো লাগছে না আজকাল।
১১ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
ব্লগের মাননীয় মডারেটর মহোদয় যেহেতু বিষয়টি দেখার জন্য এক বা একাধিক ব্লগারকে নিজেই তখন দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছি, তাই এই বিষয়ে ব্লগ এডমিনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমার বলার কিছু নেই। আর ব্লগ এডমিন নিশ্চয়ই বুঝেশুনেই দায়িত্বটা তাদের দিয়েছেন বলে আমি মনে করি। তবে আপনার কথার সাথে দ্বিমত পোষন করছি না। ব্লগ এডমিন স্বয়ং এইসব বিষয় হ্যান্ডলিং করলে পরিস্থিতি তিনি হয়তো অবশ্যই আরও ভালোভাবে ট্যাকল করতে পারতেন। যাক, এই বিষয়ে অনেক কিছু বলার থাকলেও সঙ্গত মনে করিনি বলেই নিরব থাকাকেই উত্তম মনে করেছি।
তবে আপনার সাহসের প্রশংসা করতে হয়। আপনি যা বলার, রাখঢাক না করে সাধারণত বলেই ফেলেন। আপনাকে ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
৭| ১১ ই জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৪
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ব্লগের ইসলামিক পোষ্ট সমূহ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে কপিই। কোরান হাদিসের তফসির গুলোর বিশ্লেষণ করে লেখা হয় বিধায় এক লেখা অন্যের সাথে কোন কোন ক্ষেত্রে অবিকল কোন কোন ক্ষেত্রে আংশিক মিলবেই। একটি আয়াত বা হাদিসকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা মাত্র। ভুল বললাম ভাই?
১২ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:১৬
নতুন নকিব বলেছেন:
ভাই,
মোবারকবাদ। মূল্যবান মতামত প্রদান করায় অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনার এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষন করার সুযোগ আমার মোটেই নেই। এই কথাটা আমিও তখন বলেছিলাম। কিন্তু যে কোন বিষয়েই একপক্ষের যুক্তির বিপরীতে ভিন্নপক্ষেরও যুক্তি থাকতে পারে। আমার আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া সে সময়কার বক্তব্যের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা অনুভূত হয়েছে এবং অনাকাঙ্খিত নানান ব্যাখ্যা বিশ্লেষনসহ বিদ্রুপাত্মক ও অপমানজনক পরিস্থিতি লক্ষ্য করে শেষ পর্যন্ত নিরবতা পালনের সিদ্ধান্ত নিতেই বাধ্য হয়েছিলাম। তবে আমার ধারণা, কপি পেস্টের বিরুদ্ধে সত্যিকারার্থেই যদি সোচ্চার হওয়ার ইচ্ছে থাকে এবং সামু ব্লগ যদি বাস্তবিকভাবেই ব্লগে কপি পেস্ট ব্লগারের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপন করতে চেষ্টা করে তাহলে সে সংখ্যাটা শত কিংবা হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
উদাহরণতঃ সূরা ফাতিহার অর্থ কিংবা তাফসির যে যত নিজের মত করেই করুন না কেন, পূর্ববর্তী অর্থ এবং তাফসিরের সাথে মিলিয়ে দেখলে আকাশ পাতাল পার্থক্য তাতে কখনোই থাকবে না। থাকার সুযোগ নেই। থাকলেও খুবই সামান্য এদিক সেদিক থাকা সম্ভব। এর ফলে শেষোক্ত অর্থ ও তাফসিরকারীকে কপি পেস্টের তকমা দেয়া কতটুকু যৌক্তিক, ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করি।
যা হোক, আমি মনে করি আমাদেরও আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষতঃ আমার নিজের প্রতি নিজের দায়বদ্ধতা আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। কপি পেস্ট ব্লগে বন্ধ হোক, আমরাও তা চাই।
শুভকামনা সবসময়।
৮| ১১ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:৪৩
ভুয়া মফিজ বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার পোষ্ট দেখে ভালো লাগলো। অবশ্য আমি নিজেও ব্লগে এখন অনেকটাই অনিয়মিত।
সংখ্যা একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলেও মুসলমানদের কোয়ান্টিটি না, কোয়ালিটির দিকে নজর দেয়া উচিত। উদাহরন হিসাবে ইহুদিদেরকেই দেখেন। সংখ্যায় কতো কম, কিন্তু সারা বিশ্বকে তারা নাড়িয়ে দিচ্ছে।
ব্লগে কপি/পেষ্ট নিয়ে অনেক পোষ্ট এসেছে। মডারেটরসহ অনেকেই পোষ্টে-মন্তব্যে বিষদভাবে এটা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। এর পরেও যাদের কাছে বিষয়টা পরিস্কার না, তাদের বুদ্ধির পরিপক্কতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
যাই হোক, গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তবে, মসজিদে তাকবিরে তাশরিক নিম্নস্বরে পড়াই আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। কারন, উচ্চস্বরে পড়লে অন্যান্য মুসল্লী যারা নামায, কোরআন শরীফ পড়া বা অন্য কোন এবাদতে মশগুল তাদের মনোযোগ নষ্ট হবে।
১২ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৩০
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার আগমনে কৃতার্থ। মোবারকবাদ জানবেন। বিবিদ বিষয়সহ বিস্তারিত মন্তব্য ভালো লাগলো।
সংখ্যা একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলেও মুসলমানদের কোয়ান্টিটি না, কোয়ালিটির দিকে নজর দেয়া উচিত। উদাহরন হিসাবে ইহুদিদেরকেই দেখেন। সংখ্যায় কতো কম, কিন্তু সারা বিশ্বকে তারা নাড়িয়ে দিচ্ছে।
-সহমত। আমিও সাড়ে চুয়াত্তুর ভাইকে এই কথাটাই বুঝাতে চেয়েছিলাম।
ব্লগে কপি/পেষ্ট নিয়ে অনেক পোষ্ট এসেছে। মডারেটরসহ অনেকেই পোষ্টে-মন্তব্যে বিষদভাবে এটা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। এর পরেও যাদের কাছে বিষয়টা পরিস্কার না, তাদের বুদ্ধির পরিপক্কতা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
-উহা, মানে কপি পেস্টের বিষয়ে এখনও যাহারা পরিষ্কার নহেন, তাহাদেরকে আমারও ইহাই মনে হয়।
যাই হোক, গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। তবে, মসজিদে তাকবিরে তাশরিক নিম্নস্বরে পড়াই আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। কারন, উচ্চস্বরে পড়লে অন্যান্য মুসল্লী যারা নামায, কোরআন শরীফ পড়া বা অন্য কোন এবাদতে মশগুল তাদের মনোযোগ নষ্ট হবে।
-জ্বি, অন্যদের প্রতি লক্ষ্য রেখেই তাকবিরের আওয়াজ অতি উঁচু বা একেবারে নিচু না করে স্বাভাবিকভাবে আমরা যেভাবে পাশাপাশি বসে পরস্পর একের সাথে অপরে কথাবার্তা বলি সেরকম রাখা যেতে পারে। কিন্তু আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, অধিকাংশ মুসল্লিই এই শব্দগুলো মুখ দিয়ে সঠিকভাবে উচ্চারণই করেন না। শুধু ঠোট নেড়ে ইমামের সাথে পাঠে শরিক হন। কিংবা মনে মনে পাঠ করেন। এটা মূলতঃ তাকবিরে তাশরিক পাঠের নিয়ম নয়। সুতরাং, এইভাবে যারা পাঠ করেন তাদের উচিত বিষয়টা অনুধাবন করে যথাযথভাবে এটি পাঠে মনযোগ দেয়া।
শুভকামনা এবং কৃতজ্ঞতা অনিঃশেষ।
৯| ১১ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০৬
কামাল৮০ বলেছেন: সারা বিশ্বের মানুষ ইসলাম গ্রহন করলে তারা ৭৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে।যেটার ঈঙ্গিত শেষ নবী দিয়ে গেছেন।সেটা কি মানব প্রজন্মের জন্য ভাল হবে?
১২ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫০
নতুন নকিব বলেছেন:
কামাল ভাই,
পোস্টে আপনার আগমনে আনন্দিত। আপনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছেন। আসলে একটি হাদিস দেখলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে, চলুন, দেখে নিই সেই হাদিসে কী বলেছেন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদিসের আরবি ইবারত নিম্মরূপ-
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أُمَّتِيْ مَا أَتَىْ عَلَى بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ حَذْوَ النَّعْلِ بِالنَّعْلِ حَتَّى إِنَّ كَانَ مِنْهُمْ مَنْ أَتَى أُمَّهُ عَلاَنِيَةً لَكَانَ فِيْ أُمَّتِيْ مَنْ يَصْنَعُ ذَلِكَ وَإِنَّ بَنِي إِسْرَائِيْلَ تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِيْنَ مِلَّةً وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِيْ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً كُلُّهُمْ فِيْ النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً قَالُوْا وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِيْ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ- وَفِيْ رِوَايَةِ أَحْمَدَ وَأَبِيْ دَاوُدَ عَنْ مُعَاوِيَةَ: «ثِنْتَانِ وَسَبْعُوْنَ فِيْ النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِيْ الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ فِيْ أُمَّتِيْ أَقْوَامٌ تَتَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الْأَهْوَاءُ كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لاَ يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلاَ مَفْصِلٌ إِلاَّ دَخَلَهُ-
অনুবাদ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, নিশ্চয়ই আমার উম্মতের উপরে তেমন অবস্থা আসবে, যেমন এসেছিল বনু ইসরাঈলের উপরে এক জোড়া জুতার পরস্পরের সমান হওয়ার ন্যায়। এমনকি তাদের মধ্যে যদি এমন কেউ থাকে, যে তার মায়ের সাথে প্রকাশ্যে যেনা করেছে, তাহ’লে আমার উম্মতের মধ্যে তেমন লোকও পাওয়া যাবে যে এমন কাজ করবে। আর বনু ইসরাঈল ৭২ ফিরকা বা দলে বিভক্ত হয়েছিল, আমার উম্মত ৭৩ ফিরকা বা দলে বিভক্ত হবে। সবাই জাহান্নামে যাবে, একটি দল ব্যতীত। তারা বললেন, সেটি কোন দল হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, যারা আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, তার উপরে টিকে থাকবে’। -তিরমিযী হা/২৬৪১, ইবনু মাজাহ হা/৩৯৯২; আবুদাঊদ হা/৪৫৯৬-৯৭; আহমাদ হা/১৬৯৭৯; মিশকাত হা/১৭১-১৭২; ছহীহাহ হা/১৩৪৮
ইমাম আহমাদ ও আবু দাঊদ হযরত মু‘আবিয়া রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু হ’তে এই হাদিস সামান্য পরিবর্তিত শব্দে বর্ণনা করেন যে, ৭২ দল জাহান্নামী হবে ও একটি দল জান্নাতী হবে। আর তারা হ’ল- আল-জামা‘আত। আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি পরায়ণতা এমনভাবে প্রবহমাণ হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারা দেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না।
এ তিয়াত্তর ফিরকা বা দলের মধ্যে কেবল একটিই হকের ওপর রয়েছে, বাকীরা সবাই বাতিল পথে রয়েছে। কোনো কোনো আলিম এ জাহান্নামী ৭২ ফিরকার পরিচয় নির্ধারণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। প্রথমত: বিদ‘আতীদেরকে পাঁচভাগে ভাগ করেছেন এবং প্রত্যেক ভাগ থেকে শাখা-প্রশাখা বের করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ঘোষিত ৭২ টি ফিরকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিছু কিছু আলিম ফিরকাগুলো নির্ধারণ না করাই উত্তম মনে করেছেন। কারণ, যারা গণনা করেছেন তাদের গণনাকৃত ফিরকার বাইরেও বহু ফিরকা রয়েছে যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হওয়া লোকদের থেকেও বেশি পথভ্রষ্ট হয়েছেন। আর এ বাহাত্তর ফিরকা গণনার পরেও অনেক ফিরকার উৎপত্তি হয়েছে। তারা আরও বলেন, এ সংখ্যা শেষ হবার নয়।
বরং শেষ যামানায় কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে এর সর্বশেষ সংখ্যা সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। সুতরাং উত্তম হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন, তা সংক্ষিপ্তভাবেই রাখা। আমরা এভাবে বলব যে, এ উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। ৭২ দল জাহান্নামে যাবে এবং মাত্র একদল জান্নাতে যাবে। অতঃপর বলব, যে দলটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবীদের সুন্নাহর বিরোধিতা করবে, সে এ ৭২ দলের অন্তর্ভুক্ত হবে। হয়ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতদসংক্রান্ত এমন কিছু মূলনীতির দিকে ইঙ্গিত করেছেন তন্মধ্যে আমরা কেবল দশটিই জানি। আবার হতে পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন কিছু মূলনীতির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যার সাথে বহু শাখা-প্রশাখা জড়িত; যা কারও কারও মত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
শুভকামনা জানবেন।
১০| ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ২:১১
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: তাকবীর আল্লাহু আকবর।
১২ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
মোবারকবাদ। ঈদ মোবারক। শুভকামনা জানবেন।
১১| ১২ ই জুলাই, ২০২২ রাত ২:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: যারা ধার্মিক তাদের কি কোরআন হাদীসের বাইরে কোনো কথা নাই?
১২ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:৫৪
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার প্রশ্নের ধরণ দেখে মনে হয়, আপনি কোরআন হাদিসের উপরে এবং যারা এই গ্রন্থগুলোর ধারক বাহক তাদের সকলের উপরেই ক্ষেপে আছেন। কারণটা কি জানতে পারি?
১২| ১২ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৫:৪৯
কালো যাদুকর বলেছেন: বিস্তারিত পরে পরব এসে।
আকবরী হজের ব্যাপারে একটুব্যাখ্যা করুন দয়া করে।
১৪ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:১১
নতুন নকিব বলেছেন:
'আকবরি হজ' কাকে বলে? শুক্রবারে হজ অনুষ্ঠিত হলে তাকে কি 'আকবরি হজ' বলতে হবে?
প্রসঙ্গত হজ সর্বমোট তিন প্রকার। ইফরাদ, কিরান এবং তামাত্তু। এই ৩ প্রকার হজের বাইরে 'আকবরি হজ' তথা বড় হজ কিংবা 'আসগরি হজ' বা 'ছোট হজ' এই জাতীয় অন্য কোন নামের হজের অস্তিত্ব আদৌ কোথাও পাওয়া যায় না।
বস্তুতঃ হজ হচ্ছে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন করার নাম। তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পবিত্র বাইতুল্লাহর চারপাশে এবং মক্কার নির্ধারিত অপর কয়েকটি স্থানে সম্মিলিত কতগুলো ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে হজ আদায় করতে হয়। এরই অংশ হিসেবে মক্কা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী সুবিশাল আরাফার ময়দানে অবস্থান করে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত ও প্রকম্পিত করে বিশ্বের লাখ লাখ মুমিন বান্দা প্রতি বছর পবিত্র হজব্রত পালন করে থাকেন। এ বছর ২০২২ ইং সালের হজ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৮ জুলাই, শুক্রবার। এদিন ভাষা, বর্ণ ও লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে বিশ্বের ১০ লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান আরাফার ময়দানে অবস্থান করেছেন। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হজ।’ -সুনানে তিরমিজি
আশ্চর্য্যজনক বিষয় হচ্ছে, এবারের হজ শুক্রবারের দিন অনুষ্ঠিত হওয়ায় বেশ কিছু বিষয় মানুষের মুখে মুখে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম একটি হলো, ‘দীর্ঘ ২৮০ বছর পর এবার হজ শুক্রবারে পড়েছে, যা হজে আকবর।’
বলাবাহুল্য, মানুষের মুখে মুখে বহুল চর্চিত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া এই বক্তব্যের পুরোটাই অসত্য। কারণ, সর্বশেষ মাত্র ৮ বছর পূর্বেকার ২০১৪ সালের (৩ অক্টোবর) হজ শুক্রবারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ ছাড়া কাছাকাছি বছরগুলোতে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০০৯ ইং সালের ২৭ নভেম্বর এবং ২০০২ ইং সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হজও ছিল শুক্রবারে।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এবারের হজের ফজিলত বিষয়ে আরও বলা হচ্ছে,
‘ইয়াওমে আরাফা অর্থাৎ হজ যদি শুক্রবার হয়, তাহলে ওই হজ সত্তর বা বাহাত্তর হজের চেয়েও বেশি ফজিলত রাখে।’
কোনো কোনো মানুষকে উপরোক্ত কথা হাদিস হিসেবে বলতে শোনা যায়, কিন্তু সত্যিকারার্থে এটি হাদিস নয়। কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে তা পাওয়া যায় না। ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘এটি একটি বাতিল কথা, এর কোনো ভিত্তি নেই। হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা-তাবেয়িন কারও থেকেই এ ধরনের কথা প্রমাণিত নয়।’ -ফয়জুল কাদির : ২/২৮
তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, হাদিসে "হজ্জে আকবর" বা ''বড় হজ'' কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে এবং হাদিসে এই শব্দদ্বয় দ্বারা মূলতঃ আরাফার পরের দিনটিকে বুঝানো হয়েছে যেই দিন মিনায় হাজীগন কুরবানি করে থাকেন। হাদিছে এসেছে,
'' কুরবানির দিন হজ্জে আকবর দিন"। -তিরমিযি, সাহিহুল জামে ৮১৯১
মানে, হজের দিনগুলোর মধ্যে কুরবানির দিনটিই বড় দিন। এটা ফযিলতের দিক থেকেও এবং হজ্জের কার্যাবলীর দিক থেকেও। যেমন, সুনানে আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহর নিকট সর্বাধিক মহিমান্বিত দিন হল নহর তথা কুরবানীর দিন। অতঃপর কুরবানীর পরের দিন (অর্থাৎ, যিলহজ্জের এগারতম দিন যে দিনটিতে হাজীগণ কুরবানী করার পর মিনায় অবস্থান করে থাকেন)।
তাছাড়া, এই দিনে অর্থাৎ, জিলহজের ১০ তারিখে হাজীদের সবচাইতে বেশী কাজ থাকে। ৯ তারিখে তাঁরা আরাফাহ থেকে সন্ধ্যার পর ফিরে এসে মুযদালিফায় রাত্রি যাপন করেন এবং ফজরের পরপর সূর্য উদয়ের সাথেসাথেই তাঁরা আবার মিনায় জামারাহ'তে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, সূর্য মধ্য আকাশে ঢলে পড়ার পর পাথর মেরে আবার কুরবানি করে, মাথা মুণ্ডন করে আবার মাক্কাতে চলে যান তাওয়াফে ইফাদা বা হজ্জের তাওয়াফের জন্য এবং সাফা মারাওয়াতে সাঁয়ী করার জন্য। এই দিনেই হাজীদের সবচাইতে বেশী এবং কষ্টদায়ক কাজগুলো করতে হয়। তাই হজ্জের কার্যাবলীর দিক থেকেও এই দিনকে ''হজ্জে আকবর'' বলা হয়ে থাকে।
এর বাইরে শুক্রবারে হজ অনুষ্ঠিত হলে কোনো কোনো মানুষ যে এটিকে ‘আকবরি হজ’ বলে থাকে- এটি মূলতঃ ভিত্তিহীন একটি কথা। তবে এটা ঠিক যে, জুমুআর দিনে হজ হলে সেখানে একদিকে আরাফার দিনের ফজিলত ও অন্যদিকে জুমুআর দিনের ফজিলত একত্রিত হয় এবং এ জন্য এর একটি বিশেষ গুরুত্ব অবশ্যই থাকে, তবে এর সঙ্গে উপরোক্ত বর্ণনা ও বক্তব্যের কোনো সম্পর্ক নেই, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ। অর্থাৎ, জুমুআর দিনে হজ অনুষ্ঠিত হলেই সেটি 'আকবরি হজ' হবে আর অন্য দিনগুলোর হজ 'আকবরি হজ' হবে না, এমন কথার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।
সউদি আরবের প্রখ্যাত স্কলার শাইখ উসাইমিন (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, জুমুআর দিন হজ হওয়ার ফজিলতের ব্যাপারে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু বর্ণিত আছে কি-না?
উত্তরে তিনি বলেন, জুমুআর দিন হজ হওয়ার ফজিলত সম্পর্কে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কিছু বর্ণিত নেই। তবে আলেমরা বলেন, জুমুআর দিনে হজ হওয়াটা উত্তম। এর কিছু কারণ হলো-
এক. এই হজ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হজের সঙ্গে মিলে যায়। কারণ নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরাফায় অবস্থান জুমুআর দিনে ছিল।
দুই. জুমুআর দিনে এমন একটি সময় থাকে, যে সময় কোনো মুসলিম বান্দা যদি দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে; তবে সেটা কবুল হওয়ার অধিক উপযুক্ত।
তিন. আরাফার দিন ঈদ ও জুমুআর দিনও ঈদ। সুতরাং দুই ঈদের একত্রিত হওয়াটা কল্যাণকর।
চার. পৃথিবীর সবপ্রান্তের মুসলমান খুতবা শোনার জন্য ও জুমুআর নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়া। একই সময়ে হজপালনকারীদের আরাফার ময়দানে একত্রিত হওয়া। এভাবে সব মুসলমান নিজ নিজ মসজিদে একত্রিত হওয়া ও আরাফাবাসীর দোয়ার জন্য একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে এমন কিছু অর্জিত হয় যা অন্য মাধ্যমে অর্জিত হয় না।
পাঁচ. এদিন মুমিন বান্দাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া শরিয়ত পরিপূর্ণ করা ও নেয়ামত পূর্ণ করার দিন। সহিহ বোখারিতে তারেক বিন শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইহুদি হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) -এর কাছে এসে বলল, হে আমিরুল মুমিনিন, আপনারা আপনাদের ধর্মগ্রন্থে এমন একটি আয়াত পড়েন- যদি আয়াতটি আমাদের ইহুদিদের ওপর নাজিল হতো, আর আমরা জানতাম কোন দিন এ আয়াত নাজিল হয়েছে তাহলে আমরা দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তিনি বললেন, কোন আয়াত? ইহুদি বলল, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ -সুরা মায়েদা : ৩
তখন হজরত উমর (রা.) বলেন, নিশ্চয় আমি জানি যেদিন ও যে স্থানে এ আয়াতটি নাজিল হয়েছে। এটি আরাফার ময়দানে শুক্রবারে হযরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিল হয়েছে। তখন আমরা তার সঙ্গে আরাফার ময়দানে অবস্থান করছিলাম।
ছয়. এটি কেয়ামতের দিনের সঙ্গে মিলযুক্ত। কারণ কেয়ামত শুক্রবারে সংঘটিত হবে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বোত্তম দিন হচ্ছে- জুমুআর দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে, এই দিনে তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যদি কোনো মুসলিম বান্দা সে সময়ে আল্লাহর কাছে ভালো কিছু চাইতে পারে আল্লাহ তাকে তা দান করেন।’
সাত. জুমুআর দিনে ও রাতে মুসলমানদের আমল অন্য দিনের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে। এমনকি পাপীরাও জুমুআর দিন ও রাতকে সম্মান করে এবং মনে করে এদিনে যে ব্যক্তি গোনাহ করার স্পর্ধা দেখায়; আল্লাহ তাকে অবিলম্বে শাস্তি দেন; দেরি করেন না। এ দিনের মর্যাদা, সম্মান ও আল্লাহর কাছে মনোনীত দিন হওয়ার কারণেই সাধারণ মুসলমানের মনে এ বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই এ দিনে আরাফায় অবস্থান নিতে পারার মর্যাদা অনেক বেশি।
আট. আরাফার দিন বিকেল বেলা আল্লাহ তায়ালা আরাফাবাসীর নিকটবর্তী হন এবং ফেরেশতাদের কাছে তাদের নিয়ে গর্ব করেন...।
এখানে মাত্র কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো। বস্তুতঃ উল্লেখিত কারণগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারণ হয়তো রয়েছে যেগুলো জুমুআর দিনে আরাফায় অবস্থানকে বিশেষত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ করার পক্ষে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা যায়। কিন্তু মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া 'জুমুআর দিনের হজ হজে আকবর এবং তা ৭২ হজের সমান' এসব ভুল কথা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অথবা কোনো সাহাবি কিংবা কোনো তাবেয়ি থেকে এ ধরনের কোনো বর্ণনার ভিত্তি নেই। কুরআন হাদিসে নেই, সাহাবায়ে কেরাম বলেননি কিংবা সালফে সালেহিনগণের কথা দ্বারাও প্রমানিত নয় এমন ভিত্তিহীন কথাকে এড়িয়ে চলাই আমাদের কাজ।
জাজাকুমুল্লাহ।
১৩| ০১ লা আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:২১
কালো যাদুকর বলেছেন: আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্য। একটি ভুল ধারনা ভেঙ্গে দেয়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:২৯
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
এতদিন কোথায় ছিলেন?