নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব জীবনই সবকিছু নয়, পরকালের অন্তহীন জীবনের সফলতাই হোক আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য
ছবিঃ অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।
জীবন ক্ষণস্থায়ী। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান একদিন শেষ হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের পর কী আছে? ইসলাম, বিজ্ঞান, এবং ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি গভীর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পবিত্র কুরআন এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর হাদিসের আলোকে আমরা বুঝতে পারি, এই দুনিয়ার জীবন শুধু একটি পরীক্ষা, আর প্রকৃত সফলতা হচ্ছে পরকালের অনন্ত জীবনে শান্তি লাভ করা।
পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিকোণ
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“তোমরা জানো যে পার্থিব জীবন শুধু খেলা, আমোদ-প্রমোদ, শোভা-সৌন্দর্য, পরস্পরের মধ্যে গর্ব এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিযোগিতা। এটি বৃষ্টির মতো, যার ফলে ফসল উৎপন্ন হয় এবং কৃষকদের তা আনন্দিত করে। পরে তা শুকিয়ে যায় এবং তুমি তা হলুদ হয়ে যেতে দেখ। পরে তা খড়কুটোতে পরিণত হয়। পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।” -সূরা হাদীদ: ২০
এই আয়াতটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, পৃথিবীর জীবনের চাকচিক্য এবং সাময়িক আনন্দ আসলে অতি ক্ষণস্থায়ী। মূলত, আমরা এখানে পরীক্ষার জন্য এসেছি এবং পরকালে আমাদের প্রকৃত পুরস্কার বা শাস্তি নির্ধারিত হবে।
হাদিসের দৃষ্টিতে দুনিয়ার মূল্য
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন:
“দুনিয়া অভিশপ্ত, এবং যা কিছু এতে রয়েছে তা-ও অভিশপ্ত। তবে যারা আল্লাহর স্মরণ করে, যারা জ্ঞানী এবং যারা জ্ঞান অর্জন করে, তাদের কাজ ব্যতীত।” -তিরমিজি, হাদিস: ২৩২২
এই হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে দুনিয়ার মোহে জড়িয়ে পড়া অর্থহীন, যদি তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না হয়। আমাদের জীবন হবে এমন যাতে আমরা আমাদের প্রতিটি কর্মকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত করি।
বিজ্ঞানের আলোকে পার্থিব জীবনের সীমাবদ্ধতা
আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের শিখিয়েছে, পৃথিবী একটি ক্ষুদ্র গ্রহ যা মহাবিশ্বের বিশালতায় এক বিন্দুমাত্র। মহাবিশ্বের সময়সীমার তুলনায় মানুষের জীবন এক মুহূর্তের মতোই ক্ষুদ্র। এই বিষয়টি উপলব্ধি করলে সহজেই বুঝা যায়, আমাদের বর্তমান জীবন কতটা অস্থায়ী। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছেন:
“যদি তুমি মহাবিশ্বের বিশালতা সম্পর্কে ভাবো, তাহলে এই পৃথিবীর জীবনের সীমাবদ্ধতা এবং অস্থায়িত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ হবে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশিত পথে চলা।”
বিজ্ঞান আমাদের দেখিয়েছে, মহাবিশ্ব একটি সূচনা থেকে সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। এই পরিবর্তন প্রমাণ করে, পৃথিবী এবং এতে থাকা সবকিছুই অস্থায়ী। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, তাহলে জীবনের প্রকৃত অর্থ কী? এই প্রশ্নের উত্তর কুরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে।
পার্থিব জীবন: একটি পরীক্ষা
ইসলামে পৃথিবীর জীবনকে একটি পরীক্ষার স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু এবং জীবন, যেন তিনি পরীক্ষা করতে পারেন, তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম কাজ করে। আর তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।” -সূরা মুলক: ২
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, পৃথিবীর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জন্য একটি পরীক্ষা। আমাদের কাজের ফলাফলই নির্ধারণ করবে আমরা পরকালে কী প্রাপ্য হব।
সফলতার প্রকৃত মানদণ্ড
আমরা প্রায়ই সফলতাকে সম্পদ, খ্যাতি বা পদমর্যাদার সঙ্গে যুক্ত করি। কিন্তু ইসলাম এই ধারণাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে। প্রকৃত সফলতা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং জান্নাতে প্রবেশ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“আর যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করবে, তারাই সেই দল যারা জান্নাতবাসী হবে।” -সূরা নিসা: ৬৯
এই আয়াত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমাদের কাজ এবং উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।
পরকালীন জীবনের গুরুত্ব
পরকালীন জীবন হলো চিরন্তন। সেখানে কোনো মৃত্যু নেই, ক্লান্তি নেই, এবং দুঃখ নেই। পবিত্র কুরআনে জান্নাতের জীবনকে বর্ণনা করা হয়েছে:
“তাদের জন্য সেখানে থাকবে যা তাদের অন্তর চায়, এবং যা তাদের চক্ষু আনন্দিত করে। আর তোমরা সেখানে চিরকাল থাকবে।” -সূরা যুখরুফ: ৭১
অন্যদিকে, যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হবে তাদের জন্য শাস্তির বর্ণনাও রয়েছে:
“আর যারা আমার আয়াত অস্বীকার করেছে, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন রয়েছে।” -সূরা আল-কাহফ: ১০৬
আমাদের করণীয়
পরকালের সফলতা অর্জন করতে হলে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনে চলতে হবে:
১. ইবাদতে মনোযোগী হওয়া: নিয়মিত নামাজ আদায়, রোজা রাখা, এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য করা।
২. অন্যের প্রতি সদয় হওয়া: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, “তোমরা একে অপরের প্রতি সদয় হও, তাহলে আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।”
৩. পাপ থেকে দূরে থাকা: আল্লাহর নিষেধকৃত কাজ থেকে বিরত থাকা এবং তাওবার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
৪. জ্ঞান অর্জন করা: দুনিয়া এবং আখিরাতের জ্ঞান অর্জন করে নিজের জীবন আলোকিত করা।
উপসংহার
ক্ষণস্থায়ী এই পার্থিব জীবনই সবকিছু নয়। এটি শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরকালের জীবনের অবস্থান নির্ধারণ করি। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হওয়া উচিত পরকালের অন্তহীন জীবনের সফলতা অর্জন করা। পবিত্র কুরআন, হাদিস, বিজ্ঞান এবং ইতিহাসের মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের এই সত্যটি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি দিয়ে পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৌফিক দিন। আমিন।
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৪২
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার উপস্থিতি সবসময় আনন্দদায়ক। জাজাকুমু্ল্লাহু খাইরান।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
আরোগ্য বলেছেন: সুরা তাকাসুর যোগ করা যেত। আরবি আয়াত সহ দিলে ভালো হয়, অনুবাদ আয়াতের সাথে আদল করতে পারে না।
চারপাশের পরিস্থিতি দেখে কষ্ট হয়, বিশেষ করে যারা দ্বীনি শিক্ষায় জ্ঞান অর্জন করেও ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার মোহে আকৃষ্ট থাকে এবং এই বিষয়টা জাস্টিফাই করার যুক্তি দেখায়।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:১৪
জটিল ভাই বলেছেন:
আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্তি দিয়ে পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার তৌফিক দিন। আমিন।
৪| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১২:০৮
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: উপকারী পোষ্ট।