![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
কুরবানী: ইতিহাস, গুরুত্ব ও শিক্ষা - একটি হৃদয়স্পর্শী আলোচনা বাইতুল্লাহিল হারাম, মক্কাতুল মোকাররমাহ, ছবিটি এআই -এর সহায়তায় তৈরি।
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على سيدنا محمد وآله وصحبه أجمعين
প্রিয় মুমিন মুসলিম ভাইয়েরা,
ঈদুল আযহার পবিত্র এই দিনটি আমাদের জন্য শুধু আনন্দের দিন নয়, বরং এটি আমাদের হৃদয়ে গভীর শিক্ষা ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত নিয়ে আসে। কুরবানী ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এবং বিশেষ ইবাদত। এটি হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকে চলে আসছে, তবে বিভিন্ন নবীর শরীয়তে এর পদ্ধতি এক ছিল না। ইসলামী শরীয়তে কুরবানির যে রূপ আমরা দেখি, তার মূল সূত্র রয়েছে ‘মিল্লাতে ইবরাহীমী’তে, এজন্যই একে ‘সুন্নাতে ইবরাহীমী’ বলা হয়। আজ আমরা হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর সেই অমর ঘটনা স্মরণ করব, যা আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় এবং আল্লাহর প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্যের শিক্ষা দেয়।
কুরবানির ইতিহাস: হযরত ইবরাহিম (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর ত্যাগের গল্প
কুরবানির ইতিহাস আমাদেরকে নিয়ে যায় হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবনে। তিনি ছিলেন আল্লাহর খলীল, যিনি জীবনের প্রতিটি ধাপে আল্লাহর আদেশ পালনে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা এলো যখন তিনি বৃদ্ধ বয়সে একটি সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের আকাঙ্ক্ষায় আল্লাহর কাছে কাতর হয়ে প্রার্থনা করছিলেন। কুরআনে তাঁর এই দুআর কথা এসেছে:
رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
অর্থ: “হে আমার রব! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।” -সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০০
যত দিন যাচ্ছিল, তাঁর হৃদয়ে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা ততই তীব্র হচ্ছিল। অবশেষে আল্লাহ তাঁর দুআ কবুল করলেন এবং তাঁকে একজন সহনশীল পুত্র দান করলেন, যার নাম রাখা হলো ইসমাঈল। এই সন্তানের জন্মে ইবরাহিম (আ.)-এর হৃদয় আনন্দে ভরে গেল। তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে বললেন:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَهَبَ لِي عَلَى الْكِبَرِ إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ ۖ إِنَّ رَبِّي لَسَمِيعُ الدُّعَاءِ
অর্থ: “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে ইসমাঈল ও ইসহাক দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব দুআ শ্রবণকারী।” -সূরা ইবরাহীম, আয়াত ৩৯
কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে আরেকটি কঠিন নির্দেশ এলো। তাঁকে তাঁর স্ত্রী হাজারা (আ.) এবং ছোট্ট ইসমাঈল (আ.)-কে সুদূর মক্কায় রেখে আসতে হবে, যেখানে তখন কোনো জনবসতি বা জীবনোপকরণ ছিল না। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালন করলেন এবং তাঁদেরকে মক্কায় রেখে এলেন। ইসমাঈল (আ.) ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করলেন। তিনি যখন বাবার সাথে ছোটাছুটি করার বয়সে পৌঁছলেন, তখন ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য এলো সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা।
তিনি স্বপ্নে দেখলেন, তাঁর একমাত্র কলিজার টুকরো ইসমাঈল (আ.)-কে তিনি যবেহ করছেন। নবীদের স্বপ্ন ওহীর মতো হয়, তাই এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আদেশ। কল্পনা করুন, একজন পিতার হৃদয় কতটা কাঁপতে শুরু করবে! তিনি যে সন্তানের জন্য বছরের পর বছর দুআ করেছেন, যাকে তিনি বৃদ্ধ বয়সে পেয়েছেন, সেই সন্তানকে আল্লাহর জন্য কুরবানি করতে হবে। কিন্তু ইবরাহিম (আ.) ছিলেন আল্লাহর খলীল। তিনি আল্লাহর আদেশের কাছে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকেও সমর্পণ করতে প্রস্তুত ছিলেন।
তিনি তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে স্বপ্নের কথা জানালেন এবং তাঁর অভিমত জানতে চাইলেন। কুরআনে এসেছে:
يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرَىٰ فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَحُكَ فَانظُرْ مَاذَا تَرَىٰ ۚ
অর্থ: “হে আমার প্রিয় পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে যবেহ করছি। এখন বল, তোমার মতামত কী?” -সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০২
ইসমাঈল (আ.), যিনি ছিলেন একজন ভাবী নবী এবং ইবরাহিম (আ.)-এর যোগ্য পুত্র, তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন:
يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ ۖ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ
অর্থ: “হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তাই করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।” -সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০২
প্রিয় উপস্থিতি, এই কথাগুলোর গভীরতা কতখানি! একজন শিশু, যিনি সবেমাত্র চলাফেরার বয়সে উপনীত হয়েছেন, যিনি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ে ছিলেন, তিনি তার পিতার হাতে নিজেকে সমর্পণ করলেন—কেন? কারণ তার মনে ছিল আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস। তিনি ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে বিষয়টি আল্লাহর কাছে সমর্পণ করলেন এবং ‘ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’ বলে বিনয়ের চরম দৃষ্টান্ত দিলেন।
যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর আদেশ পালনে রাজি হলেন, তখন এলো পরীক্ষার আসল পর্ব। ইবরাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে যবেহ করার জন্য কাত করে শুইয়ে দিলেন। সাধারণত যবেহের সময় চিত করে শুইয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু ইবরাহিম (আ.) তাঁর পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিলেন, যাতে ছুরি চালানোর সময় পুত্রের মায়াবি মুখ তার দৃষ্টিগোচর না হয়। কারণ, পুত্রের মুখ দেখলে তাঁর পিতৃহৃদয় টলে যেতে পারে। এই কঠিন দৃশ্যটি একটিবার কল্পনা করুন—একজন পিতা তার একমাত্র সন্তানকে আল্লাহর জন্য কুরবানি করতে প্রস্তুত, আর সেই সন্তান আল্লাহর আদেশের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে শান্তভাবে শুয়ে আছে।
কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁদের এই আনুগত্য ও সমর্পণের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করলেন। কুরআনে বলা হয়েছে:
فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ وَنَادَيْنَاهُ أَن يَا إِبْرَاهِيمُ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيَا ۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ
অর্থ: “অতঃপর যখন তারা উভয়ে আত্মসমর্পণ করল এবং ইবরাহিম তার পুত্রকে কাত করে শুইয়ে দিল, তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, ‘হে ইবরাহিম! তুমি স্বপ্নের আদেশ পূর্ণ করেছ। আমরা এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করি। নিশ্চয় এটি ছিল একটি স্পষ্ট পরীক্ষা।’ আর আমরা তাকে একটি মহান কুরবানি দ্বারা ফিদিয়া দিলাম।” -সূরা আস-সাফফাত, আয়াত ১০৩-১০৭
আল্লাহ তাআলা তাঁদের আনুগত্য দেখে একটি দুম্বা পাঠিয়ে দিলেন, এবং ইবরাহিম (আ.) তা যবেহ করলেন। এই ঘটনা কুরবানির মূল সূত্র হয়ে রইল, যা আমরা আজ ঈদুল আযহায় পালন করি।
কুরবানির ধারাবাহিকতা: রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই ঐতিহ্যকে অব্যাহত রেখেছেন। তিনি মদিনায় দশ বছর অবস্থান করেছেন এবং প্রতি বছর ঈদুল আযহার দিনে কুরবানি করেছেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন:
أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلَّ سَنَةٍ
অর্থ: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় দশ বছর ছিলেন। প্রতি বছরই কুরবানি করেছেন।” -জামে তিরমিজি, হাদিস ১৫০৭
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর দুটি পশু কুরবানি করতেন—একটি নিজের জন্য এবং অপরটি তাঁর উম্মাহর পক্ষ থেকে। তিনি বলতেন:
اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ
অর্থ: “হে আল্লাহ! এটা তোমার পক্ষ থেকেই এবং তোমার জন্যই।” এই কথায় তিনি তাঁর বিনয় ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৭৯৫
হযরত মিখনাফ ইবনে সুলাইম (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফায় দাঁড়িয়ে বলেছেন:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ، عَلَى كُلِّ أَهْلِ بَيْتٍ فِي كُلِّ عَامٍ أُضْحِيَّةٌ
অর্থ: “হে লোকসকল! প্রত্যেক ঘরের উপর প্রতি বছর কুরবানি আবশ্যক।” এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কুরবানি সামর্থ্যবানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। -জামে তিরমিজি, হাদিস ১৫১৮
কুরবানির গুরুত্ব: কুরআন ও হাদিসের আলোকে
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন:
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
অর্থ: “সুতরাং আপনার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কুরবানি করুন।” -সূরা আল-কাউসার, আয়াত ২
এই আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মাহকে নামাজ ও কুরবানির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
একটি হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি নবীজির কাছে দ্বীন সম্পর্কে জানতে এসেছিল। ফিরে যাওয়ার সময় নবীজি তাকে ডেকে বললেন:
أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى، جَعَلَهُ اللَّهُ عِيدًا لِهَذِهِ الْأُمَّةِ
অর্থ: “আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহা’র আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মাহর জন্য ঈদ বানিয়েছেন।” -মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৬৫৭৫
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন:
إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا أَنْ نُصَلِّيَ، ثُمَّ نَرْجِعَ فَنَنْحَرَ، فَمَنْ فَعَلَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমরা আমাদের এই দিনে (ঈদুল আজহার দিন) যা দিয়ে শুরু করি, তা হলো আমরা প্রথমে সালাত (ঈদের নামাজ) আদায় করি, এরপর ফিরে গিয়ে কুরবানি করি। অতএব, যে ব্যক্তি এইভাবে করে, সে আমাদের সুন্নাত অনুযায়ী আমল করেছে।” -সহিহ বুখারী ৫৫৬৫, সহিহ মুসলিম: ১৯৬১
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কুরবানি শরীয়তের বিধান মোতাবেক করতে হবে, অন্যথায় তা কেবল গোশত খাওয়ার আয়োজন হয়ে যাবে।
কুরবানির শিক্ষা: আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আনুগত্য
কুরবানির মধ্যে রয়েছে অসংখ্য শিক্ষা, যা আমাদের জীবনকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা উল্লেখ করা হলো:
১. তাওহীদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা
কুরবানির গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো আল্লাহর প্রতি তাওহীদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করা। কুরবানি আমাদের শেখায় যে, ইবাদতের উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ ছাড়া কেউ বা কিছু ইবাদতের উপযুক্ত নয়। কুরআনে এসেছে:
قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
অর্থ: “আপনি বলে দিন, আমার প্রতিপালক আমাকে সরলপথ প্রদর্শন করেছেন, যা বিশুদ্ধ দ্বীন, ইবরাহীমের মিল্লাত, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। আপনি বলুন, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই।” -সূরা আল-আনআম, আয়াত ১৬১-১৬৩
রাসূলুল্লাহ (সা.) কুরবানির সময় তাওহীদের এই ঘোষণা উচ্চারণ করতেন। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি কুরবানির সময় বলতেন:
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، عَلَى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
অর্থ: “আমি আমার মুখ তাঁর অভিমুখী করলাম, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, ইবরাহীমের মিল্লাতের ওপর, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।” -সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৭৯৫
২. আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ
কুরবানি আমাদের শেখায় আল্লাহর সামনে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তাঁর একমাত্র সন্তানকে যবেহ করতে রাজি হয়েছিলেন। এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহর আদেশ সবার উপরে। আমাদের জীবনে আল্লাহর হুকুম-আহকাম পালনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
৩. একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
কুরবানির আসল উদ্দেশ্য হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ التَّقْوَىٰ مِنكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ ۗ وَبَشِّرِ الْمُحْسِنِينَ
অর্থ: “আল্লাহর কাছে এদের গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলো তোমাদের জন্য দীন করেছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবির ঘোষণা করো এ জন্য যে তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন।” -সূরা আল-হজ্জ, আয়াত ৩৭
এই আয়াত আমাদের বুঝিয়ে দেয়, আল্লাহর কাছে আমাদের কুরবানির গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, তিনি দেখেন আমাদের হৃদয়ে তাকওয়া ও নিয়ত আছে কি না। যদি আমরা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করি, তাহলে তিনি তা কবুল করবেন। কিন্তু যদি নামদাম বা লৌকিকতার জন্য করি, তাহলে তা কোনো কাজে আসবে না।
মানব ইতিহাসের প্রথম কুরবানির ঘটনায়ও এই শিক্ষা পাওয়া যায়। হযরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র যখন কুরবানি পেশ করলেন, তখন একজনের কুরবানি কবুল হলো এবং অপরজনের হলো না। যার কুরবানি কবুল হলো, তিনি বললেন:
إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ
অর্থ: “আল্লাহ তো মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন।” -সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ২৭
৪. বিনয় ও কৃতজ্ঞতা
কুরবানি আমাদের শেখায়, যেকোনো নেক কাজে অহংকার না করা, আত্মমুগ্ধতার শিকার না হওয়া। ইসমাঈল (আ.) তাঁর পিতার কাছে বলেছিলেন, “ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।” এই কথায় তাঁর বিনয় ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। রাসূলুল্লাহ (সা.)ও কুরবানির সময় বলতেন, “হে আল্লাহ! এটা তোমার পক্ষ থেকেই এবং তোমার জন্যই।” এটি আমাদের শিক্ষা দেয় যে, সবকিছু আল্লাহর দান, তিনিই তাওফিক দিয়েছেন।
৫. সন্তানকে আল্লাহর অনুগত করা
কুরবানি আমাদের শিক্ষা দেয় সন্তানকে আল্লাহর অনুগত করার জন্য শিক্ষা দেওয়া। ইবরাহিম (আ.) সবসময় এমন সন্তানের জন্য দুআ করতেন, যে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত হবে। ইসমাঈল (আ.) সেই শিক্ষার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আমাদেরও সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা আল্লাহর জন্য জীবন দিতেও দ্বিধা না করে।
উপসংহার: কুরবানির শিক্ষা আমাদের জীবনে প্রয়োগ
প্রিয় মুসল্লিবৃন্দ, আজকের এই পবিত্র দিনে আমরা যখন কুরবানি করব, তখন আমাদের হৃদয়ে এই শিক্ষাগুলো ধারণ করি। আমরা যেন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করি, আমাদের হৃদয় থেকে দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ সমর্পণ করি। কুরবানির গোশত যখন আমরা দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে বণ্টন করব, তখন তাদের মুখে হাসি দেখে আমাদের চোখ ভিজে উঠবে।
আসুন, আমরা আজ একটি প্রতিজ্ঞা করি—আমরা আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করব। আমরা আমাদের অহংকার, ঈর্ষা ও পাপকে কুরবানি করব। আল্লাহ আমাদের কুরবানি কবুল করুন এবং আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে শামিল করুন। আমীন।
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২২
নতুন নকিব বলেছেন:
এসব লিখলে গাজীসাব রাগ করবেন।
-তার রাগ শুধু এটাতেই নয়। আরও অনেক কিছুতেই তার রাগ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লিখলেও তিনি রেগে যান।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথের দিন।
-আমিন। সুন্দর মন্তব্যটি রেখে যাওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাকে।
২| ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৪:২৬
ফেনিক্স বলেছেন:
ইহা আদি মানুষের "বলি প্রথা" যা বেদুইনদের মাঝে ছিলো, সেটাই ইসলাম ধর্মে যোগ করেছে।
আব্রাহাম ইহুদীদের গুরুত্বপুর্ণ নবী; কিন্তু ইহুদীরা "বলি" দেয় না; কারণ, আব্রাহামিক ধর্মের লোকদের মাঝে ইহুদীরা ও খৃষ্টানরা শিক্ষিত, ইসলাম শিক্ষা থেকে অনেক পেছনে।
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:০২
নতুন নকিব বলেছেন:
দুঃখিত! আপনার বক্তব্য সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং তথ্যভিত্তিক নয়। ইসলাম কোরবানিকে "আদি বলিপ্রথা" হিসেবে নয়, বরং আল্লাহর আদেশ মান্যতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে—যা কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত (সূরা আস-সাফফাত 37:102-107)।
ইহুদিরা বলি বন্ধ করেছে উপাসনালয়ের ধ্বংসের পর, আর খ্রিস্টানরা এটি প্রতীকী করেছে।
ইসলাম এসবের মধ্যে একমাত্র পরিপূর্ণভাবে কুরবানির মূল উদ্দেশ্য—আত্মত্যাগ, আল্লাহভীতি ও আনুগত্য—বজায় রেখেছে।
উক্তির পেছনে বিদ্বেষ আছে, সত্য নয়।
৩| ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:০৬
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: গাজীসাব → ফেনিক্স
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, সঠিক।
৪| ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:২২
ফেনিক্স বলেছেন:
মুসলিম এলাকাগুলোকে আপনার মতো ইসলামিক স্কলারেরা বেদুইন সমাজে পরিণত করেছে; এসব এলাকার লোকেরা শিয়া, সুন্নী, ওয়াহাবী ও আহমেদিয়া নামে গোত্রে বিভক্ত হয়ে গৃহযুদ্ধ করে চলছে, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন মাটির সাথে মিশে গেছে। আপনারা, ওজামাত-শিবির ও এনসিপি'র জল্লাদেরা মিলে বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য করে তুলেছেন।
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:২৫
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার বক্তব্য বিদ্বেষপ্রসূত, ইসলামবিরোধী এবং ইতিহাস-বিকৃত। মুসলিম সমাজে মতপার্থক্য থাকলেও ইসলামের মূল শিক্ষা শান্তি, ন্যায় ও মানবিকতা। গৃহযুদ্ধের দায় ইসলাম বা তার আলেমদের নয়—রাজনৈতিক স্বার্থ, সাম্রাজ্যবাদ ও বিভাজননীতিই এসব সংকটের মূল। ইসলাম বিভাজনের নয়, ঐক্যের ধর্ম। বিদ্বেষ ছড়িয়ে আপনি ইতিহাস বা বাস্তবতা বদলাতে পারবেন না।
৫| ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:২৮
জুল ভার্ন বলেছেন: গুড পোস্ট।
যদিও এসব এখন সবাই জানেন তবুও উপলক্ষ সামনে রেখে এসব নিয়ে আরও বেশী বেশী লেখা উচিৎ।
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৩
নতুন নকিব বলেছেন:
জ্বি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। উপলক্ষ সামনে রেখে বিষয়গুলো বেশি বেশি আলোচিত হওয়া উচিত। এসব বিষয় ঈমানদারের ঈমানকে দৃঢ় করে। আর দুষ্টদের পুচ্ছে আগুন ধরায়।
৬| ০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৬
ফেনিক্স বলেছেন:
আপনার মতো ইসলামিক স্কলার মোল্লা শফি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ কয়েক হাজার রাজাকার সাপ্লাই দিয়েছিলো মাদ্রাসা থেকে; আপনি আরবী ভাষায় শান্তির বাণী লিখেন ব্লগে!
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার বক্তব্য মিথ্যা, প্রমাণহীন ও বিদ্বেষপূর্ণ। ইসলাম কিংবা আরবি ভাষা নয়—মানুষের চিন্তা, উদ্দেশ্য ও রাজনীতি যুদ্ধ ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্য দায়ী। ইসলামের শিক্ষা শান্তি, ন্যায় ও মানবিকতা। বিদ্বেষ ছড়িয়ে ইতিহাস বিকৃত করা যায় না।
৭| ০২ রা জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৮
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ঢাকায় প্রতিবেশিদের মাংস বিতরণ করার প্রচুর বিব্রতকর অভিজ্ঞতা আছে৷ বিরাট চাকুরি করে, ব্যবসা করে বা বাড়িওয়ালা কিন্তু কুরবানী দেয় না। তাদের জন্য মাংস পাঠালে আমাদের পাঠানো মাংস অন্য প্যাকেটে ভরে রিটার্ন দিয়ে দেয়। ভাব দেখায় কুরবানী দিয়েছে তারা। । ঢাকায় এসে কত কিছু শিখলাম।
০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০২
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। সত্যিই শহরে অনেক সময় লোক দেখানো আচরণ মুখোশ হয়ে দাঁড়ায়। এতে মন খারাপ হলেও নিজের নিয়ত ঠিক রাখাই সবচেয়ে বড় বিষয়।
৮| ০২ রা জুন, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১১
ফেনিক্স বলেছেন:
আপনি বেলেছেন, " ...ইসলামের শিক্ষা শান্তি, ন্যায় ও মানবিকতা। বিদ্বেষ ছড়িয়ে ইতিহাস বিকৃত করা যায় না।"
-ইসলাম ইয়েমেন, সিরিয়া, পাকিস্তান, লেবানন, সুদানে শান্তির নহর বসায়ে দিয়েছে?
০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০৪
নতুন নকিব বলেছেন:
ফেনিক্স, ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য। ইসলাম শান্তির ধর্ম—এটি মানুষের কর্ম ও রাজনৈতিক স্বার্থে কোথাও অপব্যবহার হলে দায় ধর্মের নয়, মানুষের। সত্য জানার জন্য খোলা মনে অনুসন্ধান করাই শ্রেয়।
৯| ০২ রা জুন, ২০২৫ রাত ১০:০৪
ফেনিক্স বলেছেন:
১৪০০ বছর আগে বেদুইনদের সামাজিক ব্যবস্হা থেকে ইসলামের উদ্ভব ঘটেছিলো; ইহা এশিয়া ও আফ্রিকার বড় এলাকায় সভ্যতার স্বাভাবিক বিবর্তনকে থামিয়ে দিয়ে, মানুষকে নিম্নমানের জীবনধারার মাঝে আটকিয়ে দিয়েছে।
০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০৮
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনার মন্তব্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে, তবে ইতিহাস বলে—ইসলাম উদ্ভবের পর বিজ্ঞান, চিকিৎসা, দর্শন ও ন্যায়বিচারে মুসলিম সভ্যতা বিশ্বকে বহু আলো দিয়েছে। বিভ্রান্তির বদলে নিরপেক্ষ অধ্যয়নই সত্য উপলব্ধির পথ।
বেদুইন বলে মুসলিম জাতিকে উপহাস করতে করতে আপনি নিজেও বেদুইন স্বভাবের হয়ে পড়েছেন কি না, চিন্তা করা দরকার।
১০| ০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: ফেনিক্স ১০০% সত্য কথা বলেছেন।
তার কথায় লজিক আছে।
নতুন নকিব আপনি আমার ওস্তাদের কথা মেনে নিন। অযথা তর্কে করবেন না।
০৩ রা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:১১
নতুন নকিব বলেছেন:
রাজীব নুর, লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে আপনার নিখাদ চামচামি দেখে কিছু প্রবাদ মনে পড়ছে, "চোরের সাক্ষী মাতাল", "চোরে চোরে মাসতুতো ভাই"।
ধন্যবাদ ভালো থাকবেন।
১১| ০৪ ঠা জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি একজন ধার্মিক মানুষ।
অথচ আপনার মুখের ভাষা অশালীন। আফসোস।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা জুন, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৯
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: এসব লিখলে গাজীসাব রাগ করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথের দিন।