| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নতুন নকিব
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
খাওয়ার আগে ও পরের দোয়া: কৃতজ্ঞতা, শিষ্টাচার ও আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি সচেতনতা
ছবি, এআই ব্যবহার করে তৈরিকৃত।
ভূমিকা
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা নামাজ, রোযা, হজ বা যাকাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, আধ্যাত্মিকতা ও অর্থবহতা নিয়ে আসে। খাওয়া-দাওয়া, পান করা, ঘুমানো, এমনকি হাঁটাচলার মতো দৈনন্দিন কাজও সঠিক নিয়ত ও সুন্নাহ অনুসরণের মাধ্যমে ইবাদতে রূপান্তরিত হতে পারে। খাওয়ার আগে ও পরে দোয়া পড়া এবং ইসলামি শিষ্টাচার মেনে চলা এই কাজকে কেবল শারীরিক প্রয়োজন নয়, বরং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আধ্যাত্মিক সংযোগের মাধ্যম করে তোলে। হাদিসে বর্ণিত, নবী ﷺ বলেন: إِنَّ اللَّهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا অর্থাৎ, “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন যখন সে খাদ্য ভক্ষণ করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে অথবা পানীয় পান করে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৪।
মুসলিম পরিবারে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই এই দোয়া ও শিষ্টাচার শেখানো হয়, যাতে এটি তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যায়। এই অভ্যাস শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নই নিশ্চিত করে না, বরং সমাজে কৃতজ্ঞতা ও শৃঙ্খলার একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলে। ইসলামি শিক্ষা অনুসারে, খাদ্য গ্রহণ একটি ইবাদত, যা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি সচেতনতা বাড়ায় এবং জীবনকে আরও অর্থবহ করে। আধুনিক গবেষণাও দেখায় যে, খাওয়ার সময় মননশীলতা (mindfulness) মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে, যা ইসলামি দোয়ার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। জনৈক জ্ঞানীর একটি চমৎকার উক্তি এখানে প্রণিধানযোগ্য,
"Gratitude turns what we have into enough."
অর্থাৎ, "কৃতজ্ঞতা আমাদের যা আছে তাকে যথেষ্ট করে তোলে।"
এছাড়া, আধুনিক মনোবিজ্ঞান দেখায় যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, যা ইসলামি শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
দোয়ার তাৎপর্য
খাওয়ার আগে ও পরে দোয়া পড়া মহানবী হযরত মুহাম্মদ ﷺ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। এই দোয়াগুলোর পেছনে আধ্যাত্মিক ও ব্যবহারিক তাৎপর্য রয়েছে, যা মুসলিমদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম: খাওয়ার আগে ও পরে দোয়া পড়া আল্লাহ তাআলার দেওয়া রিজিকের প্রতি শুকরিয়া আদায়ের একটি মাধ্যম। কুরআন মজিদে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ
অর্থাৎ, হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে সকল পবিত্র বস্তু রিজিকস্বরূপ দিয়েছি, তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। -সুরা বাকারাহ ২:১৭২।
এছাড়া, সুরা ওয়াকিয়া (৫৬:৬৩-৬৫)-এ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন:
أَفَرَأَيْتُمْ مَا تَحْرُثُونَ أَأَنْتُمْ تَزْرَعُونَهُ أَمْ نَحْنُ الزَّارِعُونَ لَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَاهُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَكَّهُونَ –
"তোমরা জমিতে যে বীজ বপন করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কী? তোমরা সেটা উৎপন্ন করো, নাকি আমি উৎপন্নকারী? আমি ইচ্ছা করলে তা খড়কুটোয় পরিণত করে দিতে পারি, ফলে তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে।"
এটি খাদ্যের উৎসের প্রতি কৃতজ্ঞতা জাগ্রত করে।
শয়তান থেকে সুরক্ষা: হাদিসে বর্ণিত আছে যে, খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করলে শয়তান সেই খাবারে অংশ নিতে পারে। হুযাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত:
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا لَمْ نَضَعْ أَيْدِيَنَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَضَعَ يَدَهُ، وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَامًا، فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّهُ يُدْفَعُ، فَأَخَذَ بِيَدِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ، وَإِنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا، فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الْأَعْرَابِيِّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ، فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ يَدَهُ لَفِي يَدِي مَعَ أَيْدِيهِمَا
অর্থাৎ, হুযাইফা (রা.) বলেন, “আমরা যখন নবী কারিম ﷺ -এর সঙ্গে খাবার খেতে বসতাম, তখন তিনি খাওয়া শুরু না করা পর্যন্ত আমরা হাত বাড়াতাম না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে খাবার খেতে বসেছিলাম, এমন সময় এক দাসী দ্রুত এসে খাবারে হাত দিতে চাইল। রাসুলুল্লাহ ﷺ তার হাত ধরে ফেললেন। এরপর এক বেদুইন লোকও এসে হাত বাড়াতে চাইল, তিনিও তার হাত ধরলেন। তখন নবী ﷺ বললেন— ‘নিশ্চয়ই শয়তান সেই খাবারকে নিজের জন্য হালাল মনে করে, যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি। সে এই দাসীকে নিয়ে এসেছে যেন এর মাধ্যমে খাবারকে হালাল করে নিতে পারে, তাই আমি তার হাত ধরেছি। এরপর এই বেদুইনকেও সে একই উদ্দেশ্যে এনেছে, তাই তার হাতও আমি ধরেছি। সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! নিশ্চয়ই শয়তানের হাত আমার হাতের সঙ্গে ছিল তাদের হাতের সঙ্গে।’” -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৮।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত:
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أَنْ لَا يُذْكَرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ
অর্থাৎ, "শয়তান সে খাদ্যকে নিজের জন্য হালাল করে নেয়, যে খাদ্যে বিসমিল্লাহ বলা হয় না"। -সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৭।
আধ্যাত্মিক ও মানসিক উপকারিতা: দোয়া পড়া খাবারকে শুধু শারীরিক পুষ্টির উৎস নয়, বরং আধ্যাত্মিক তৃপ্তির মাধ্যম বানিয়ে দেয়।
আধুনিক মনোবিজ্ঞান বলে যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, যা ইসলামি শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই দোয়াগুলো মুসলিমদের আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা ও কৃতজ্ঞতার মনোভাব জাগ্রত করে। টনি রবিনস বলেছেন,
"When you are grateful, fear disappears, and abundance appears."
অর্থাৎ, “কৃতজ্ঞতা ভয়ভীতি দূর করে এবং সমৃদ্ধি আনয়ন করে।”
এছাড়া, ইমাম গাজালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত "ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন" গ্রন্থে অল্প খাওয়ার ১০টি উপকারিতা উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে: ১। صفاء القلب (কলবের স্বচ্ছতা) - অতিরিক্ত খাদ্য হৃদয়কে ভারী করে ফেলে; অল্প খাওয়া হৃদয়কে আলোকিত করে, ফলে আল্লাহর স্মরণ ও চিন্তায় মন একাগ্র হয়। ২। رقة القلب (হৃদয়ের কোমলতা ও বিনয়) - পেট ভরা থাকলে হৃদয় কঠিন হয়; ক্ষুধা বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি করে। ৩। كسر الشهوة (আত্মসংযম ও কামনা দমন) - অল্প আহার লালসা ও নফসকে দুর্বল করে, ফলে পাপপ্রবণতা কমে যায়। ৪। سهولة العبادة (ইবাদতে আগ্রহ ও সহজতা) - হালকা পেট ইবাদতে সহায়ক হয়, মনোযোগ বৃদ্ধি করে। ৫। قلة النوم (ঘুম কম হয়) - অতিভোজন ঘুম বাড়ায়, অল্প খাওয়া জাগ্রত মন তৈরি করে। ৬। صحة البدن (শারীরিক সুস্থতা) - অতিভোজন বহু রোগের কারণ, অল্প খাওয়া দেহকে রোগমুক্ত রাখে। ৭। قلة النفقة (খরচ কমানো) - অল্প খাবার মানে ব্যয়ও অল্প; অর্থ সাশ্রয় হয়। ৮। سهولة الإطعام (অন্যকে খাওয়ানো সহজ হয়) - নিজে কম খেলে বাকি খাবার অন্যকে দান করা সহজ হয়; সদকা করার সুযোগ বাড়ে। ৯। ذوق لذة العبادة (ইবাদতের মাধুর্য অনুভব) - ক্ষুধার কারণে আত্মা জাগ্রত থাকে, ফলে ইবাদতের আনন্দ পাওয়া যায়। ১০। إحياء ساعة الموت (মৃত্যু স্মরণে সহায়ক) - ক্ষুধা ও আত্মসংযম মানুষকে মৃত্যুচিন্তা ও পরকালমুখী করে তোলে।
খাওয়ার আগে ও পরে দোয়া
খাওয়ার আগের দোয়া
খাওয়ার আগে বলতে হয়:
بِسْمِ اللّٰهِ وَعَلَىٰ بَرَكَةِ اللّٰهِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ
অর্থাৎ: আল্লাহর নামে শুরু করছি এবং আল্লাহর বরকতের উপর।
হাদিসে এসেছে, উমর ইবনে আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত:
يَا غُلَامُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ
অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “হে বালক! আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনের অংশ থেকে খাও।” -সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৭৬।
যদি কেউ খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায়, তবে স্মরণ হলে পড়ার দোয়া:
بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু
অর্থাৎ: আল্লাহর নামে—এর শুরুতেও এবং শেষেও। -আবূ দাউদ, হাদিস: ৩৭৬৭; তিরমিজি, হাদিস: ১৮৫৮।
এছাড়া, মুসনাদে আহমাদ (হাদীস ২৫১০৬) এবং সহীহ ইবনে হিব্বান (হাদীস ৫২১৪)-এ বর্ণিত: নবী কারিম ﷺ চার-পাঁচ সাহাবীর সাথে খাচ্ছিলেন, এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে খাবার সব সাফ করে দিল। নবী ﷺ বললেন, সে যদি বিসমিল্লাহ বলত তাহলে খাবার সকলের জন্য যথেষ্ট হত। তারপর বললেন: فَإِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلْيَذْكُرْ اسْمَ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ।
অর্থাৎ: যদি কেউ খাওয়ার শুরুতে “বিসমিল্লাহ” বলা ভুলে যায়, তবে মাঝখানে বা শেষে মনে পড়লে এই দোয়াটি পড়লে শয়তানের অংশগ্রহণ থেকে রক্ষা পাবে এবং খাবারে বরকত আসবে।
খাওয়ার পরের দোয়া
খাওয়ার পর বলতে হয়:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানি হাজা ওয়া রাঝাকানিহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নি ওয়ালা কুওয়াহ।
অর্থাৎ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এই খাদ্য খাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন এবং আমার কোনো শক্তি বা ক্ষমতা ছাড়াই আমাকে এই রিজিক দান করেছেন। -সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৫।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ اللَّهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا
অর্থাৎ, "আল্লাহ তাঁর সেই বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন, যে এক গ্রাস খাদ্য খেয়ে তার প্রশংসা করে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে"। -সহীহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৪।
আরেকটি দোয়া:
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকান ফিহি, গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দাইন ওয়ালা মুসতাগনিন আনহু রাব্বানা।
অর্থাৎ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, প্রচুর, পবিত্র এবং বরকতপূর্ণ প্রশংসা, যা যথেষ্ট নয়, বিদায়ী নয় এবং ত্যাগ করার মতো নয়, হে আমাদের প্রভু। -সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৪৫৮।
এই দোয়াগুলো খাবারকে আধ্যাত্মিকভাবে পবিত্র করে এবং মুসলিমদের জীবনে বরকত নিয়ে আসে।
দুধ, শরবত এবং অন্যান্য পানীয় পান করার পরে পাঠের বিশেষ দোয়া
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
বাংলায় উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি ও যিদনা মিনহু।
অর্থাৎ, “হে আল্লাহ, এতে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে এর অধিক provision/বরকত দান করুন।” -সুনান আবু দাউদ, ৩৭৩০।
এছাড়া, আরেকটি চমৎকার দোয়া রয়েছে যেটি পানীয় পানের পরে পাঠ করা যেতে পারে:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَقَانَا عَذْبًا فُرَاتًا بِرَحْمَتِهِ، وَلَمْ يَجْعَلْهُ مِلْحًا أُجَاجًا بِذُنُوبِنَا
বাংলায় উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি ছাক্কানা ‘আজবান ফুরাতান বিরাহমাতিহী, ওয়া লাম ইয়াজআলহু মিলহান উজাজান বি জুনূবিনা।
অর্থাৎ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর রহমতের মাধ্যমে আমাদেরকে মিষ্টি ও বিশুদ্ধ পানি পান করিয়েছেন, এবং আমাদের পাপের কারণে তাকে লবণাক্ত ও তিক্ত করেননি। -সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭২৩, সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮৮৫, ওয়েবসাইট: Sunnah.com।
দোয়াটির তাৎপর্য:
এই দোয়াটি পানির মতো অতি সহজ কিন্তু অসাধারণ অর্থবোধক। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অপরিহার্য নেয়ামতের প্রতি বিনীতভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে দেয়। পানি জীবনের মূল ভিত্তি, এবং এই দোয়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআ'লার অপার করুণার কথা স্মরণ করি, যিনি আমাদের জন্য পানিকে সুমিষ্ট, বিশুদ্ধ ও পানযোগ্য করেছেন। এটি আমাদেরকে আমাদের পাপ থেকে দূরে থাকার এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার কথা মনে করিয়ে দেয়। আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে, পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের হাইড্রেশন রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে, যা এই দোয়ার সাথে যুক্ত।
আল্লাহর নেয়ামত: খাদ্য ও ফলমূলের বিচিত্রতা
আল্লাহ তাআলার অপার করুণা ও দয়ার একটি অপূর্ব নিদর্শন হলো আমাদের জন্য তাঁর সৃষ্ট নানান স্বাদের বিপুল খাদ্য সম্ভার ও ফলমূলের অপরিসীম বৈচিত্র্য। সুবহানাল্লাহ! তিনি আমাদের জীবনধারণের জন্য এমন এক সমৃদ্ধ খাদ্য ভাণ্ডার প্রস্তুত করেছেন, যা শুধু আমাদের শরীরের পুষ্টি যোগায় না, বরং আমাদের হৃদয়কে কৃতজ্ঞতায় ভরিয়ে দেয়। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يٰۤاَيُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا ۫ۖ وَّلَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
অর্থাৎ, তোমরা ভূমি থেকে উৎপন্ন হালাল খাদ্য গ্রহণ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। -সূরা বাকারা, আয়াত ১৬৮।
এছাড়া, সুরা আর-রহমান (৫৫:১০-১২)-এ বলা হয়েছে:
وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ
অর্থাৎ, "তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল আর রসযুক্ত খেজুর বৃক্ষ এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধি গুল্ম।" এটি খাদ্যের বৈচিত্র্যকে আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে তুলে ধরে।
প্রাণীজগতের খাবার ও আল্লাহর রিজিক
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে লাখো প্রাণী, যাদের খাদ্যের বৈচিত্র্য মহান স্রষ্টার অপার রহস্য প্রকাশ করে। এক প্রাণীর প্রিয় খাদ্য অন্যের কাছে অরুচিকর—যেমন, কলার ছিলকা ছাগলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবার, কিন্তু কুকুরের কাছে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। এই অসাধারণ সমন্বয়ে লুকিয়ে আছে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার প্রজ্ঞা। তিনিই আর-রাজ্জাকু যূ কুওয়্যাতিল মাতিন, অর্থাৎ, অভাবনীয় শক্তিমান রিযিকদাতা, যিনি পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর রিজিক দেন। কুরআনে বলেন:
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
"পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর নয়। তিনি জানেন তার স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।" -সূরা হুদ, ১১:৬
তিনি আরও বলেন:
وَكَأَيِّن مِّن دَابَّةٍ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا اللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
"আর কত প্রাণী আছে, যারা নিজেদের রিজিক বহন করে না, আল্লাহ তাদের এবং তোমাদের রিজিক দেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" -সূরা আল-আনকাবুত, ২৯:৬০
আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَمْنَحُ بَعْضَ عِبَادِهِ الْكَثِيرَ مِنَ الرِّزْقِ فَيَأْكُلُ وَيَصْدَقُ، وَيَمْنَحُ بَعْضَهُمُ الْقَلِيلَ مِنَ الرِّزْقِ فَيَقْنَعُ بِهِ»
“নবী কারিম ﷺ এর নিকট থেকে আবু হুরাইরা রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহু বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর কিছু বান্দাকে প্রচুর রিজিক দেন, তারা তা খায় এবং বিতরণ করে। আর কিছু বান্দাকে স্বল্প রিজিক দেন, তারা তা দিয়ে জীবনধারণ করে।” -ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ৪১৪৪।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يَمْلَأُ ابْنُ آدَمَ وَعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنِهِ، يَسْتَقِيمُ لِلِابْنِ آدَمَ قَلِيلُ الْأَكْلِ، وَإِنْ كَانَ لَا بُدَّ فَثُلُثٌ لِلطَّعَامِ، وَثُلُثٌ لِلْشَّرَابِ، وَثُلُثٌ لِلنَّفَسِ»
নুমান বিন বশীর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “মানুষ তার পেটের চেয়ে খারাপ কোন পাত্র পূর্ণ করে না। মানুষের জন্য অল্প খাওয়াই যথেষ্ট (স্বাস্থ্যকর)। আর যদি অপরিহার্য হয়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য (খালি রাখবে)।” -সহীহ বুখারী, হাদিস নং: ৫৩৯৪।
এই একই বিষয় সহিহ মুসলিম, হাদিস নং:১১৫৯ এবং সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং:৩৩৪৯ তে বর্ণিত হয়েছে।
হে মানুষ! তুমিও এই সৃষ্টির অংশ। তাঁর দেওয়া নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো।
ফলমূলের বিচিত্র সৌন্দর্য
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদের জন্য ফলমূলের এমন বৈচিত্র্য সৃষ্টি করেছেন, যা দেখে মানুষের মন বিস্ময়ে ভরে যায়। আম, কলা, আপেল, কমলা, আঙ্গুর, ডালিম, খেজুর, আঞ্জির—প্রতিটি ফলের রং, গন্ধ, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ আলাদা। আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে, খেজুরে প্রচুর ফাইবার ও পটাশিয়াম রয়েছে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং হার্ট স্বাস্থ্য রক্ষা করে; জলপাই হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক; ডালিম রক্তচাপ কমায় এবং ইমিউনিটি বাড়ায়; আঞ্জির ইনফ্লেমেশন কমায়। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন,
وَہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَخۡرَجۡنَا بِہٖ نَبَاتَ کُلِّ شَیۡءٍ فَاَخۡرَجۡنَا مِنۡہُ خَضِرًا نُّخۡرِجُ مِنۡہُ حَبًّا مُّتَرَاکِبًا ۚ وَمِنَ النَّخۡلِ مِنۡ طَلۡعِہَا قِنۡوَانٌ دَانِیَۃٌ وَّجَنّٰتٍ مِّنۡ اَعۡنَابٍ وَّالزَّیۡتُوۡنَ وَالرُّمَّانَ مُشۡتَبِہًا وَّغَیۡرَ مُتَشَابِہٍ ؕ اُنۡظُرُوۡۤا اِلٰی ثَمَرِہٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَیَنۡعِہٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکُمۡ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
অর্থাৎ, তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্য। -সূরা আন’আম, আয়াত ৯৯।
এছাড়া, সুরা আর-রহমান -এ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
: وَالْأَرْضَ وَضَعَهَا لِلْأَنَامِ فِيهَا فَاكِهَةٌ وَالنَّخْلُ ذَاتُ الْأَكْمَامِ وَالْحَبُّ ذُو الْعَصْفِ وَالرَّيْحَانُ
– "তিনি পৃথিবীকে স্থাপন করেছেন সৃষ্ট জীবের জন্য। এতে আছে ফলমূল আর রসযুক্ত খেজুর বৃক্ষ এবং খোসাবিশিষ্ট দানা ও সুগন্ধি গুল্ম।" -সূরা আর রহমান, আয়াত ১০-১২।
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তাঁর সৃষ্টির বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের দিকে। প্রতিটি ফল আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টি জোগায় এবং আমাদের মনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি জাগায়। আধুনিক বিজ্ঞানও কুরআনে উল্লিখিত খেজুর, জলপাই ইত্যাদির স্বাস্থ্য উপকারিতা স্বীকার করে। উদাহরণস্বরূপ, জলপাই হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক, যা ইসলামি শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
শস্যের অফুরন্ত ভাণ্ডার
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য শস্যের মাধ্যমে জীবনধারণের অন্যতম উৎস সৃষ্টি করেছেন। ধান, গম, ভুট্টা, যব, আলু, শসা, লেবু, বাদাম, যাইতুনসহ কতই না বিচিত্র শস্য আমাদের খাদ্য হিসেবে কাজ করে। এগুলো থেকে আমরা ভাত, রুটি, নানা রকমের পিঠা ও অন্যান্য খাবার তৈরি করি। আল্লাহর এই নেয়ামতের মাধ্যমে আমরা শুধু ক্ষুধা মেটাই না, বরং আমাদের শরীরে শক্তি ও সতেজতা অর্জন করি। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
ہُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاکِبِہَا وَکُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِہٖ ؕ وَاِلَیۡہِ النُّشُوۡرُ
অর্থাৎ, তিনি তোমাদের জন্য ভূমিকে সুগম করেছেন, তাতে বিচরণ কর এবং তাঁর দেওয়া রিজিক থেকে আহার কর। -সূরা মুলক, আয়াত ১৫।
আরেকটি আয়াতে ইরশাদ হয়েছে:
يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
অর্থাৎ, তিনি তোমাদের জন্য তা দিয়ে শস্য, জলপাই, খেজুর, আঙ্গুর এবং সকল প্রকার ফলমূল উৎপাদন করেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। -সুরা নাহল ১৬:১১।
এই শস্যগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর অশেষ রহমতের প্রতীক। আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে, পর্যাপ্ত শস্য গ্রহণ শরীরের পুষ্টি নিশ্চিত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রাণিজ খাদ্যের বৈচিত্র্য
আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য স্থলজ ও জলজ প্রাণী থেকে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। উট, দুম্বা, গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগি, হাঁস, পাখি—এই প্রাণীগুলো আমাদের জন্য মাংসের উৎস। নদ-নদী, পুকুর, সাগর, হাওর বাওড়ের নানান জাতের বিবিধ স্বাদের মাছ আমাদের খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য যোগ করে। কুরআনে কারিমে বলা হয়েছে,
وَہُوَ الَّذِیۡ سَخَّرَ الۡبَحۡرَ لِتَاۡکُلُوۡا مِنۡہُ لَحۡمًا طَرِیًّا وَّتَسۡتَخۡرِجُوۡا مِنۡہُ حِلۡیَۃً تَلۡبَسُوۡنَہَا ۚ وَتَرَی الۡفُلۡکَ مَوَاخِرَ فِیۡہِ وَلِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِہٖ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
অর্থাৎ, তিনি সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা মাংস আহার করতে পার এবং তা থেকে অলঙ্কার উত্তোলন করতে পার, যা তোমরা পরিধান কর। -সূরা নাহল, আয়াত ১৪।
আরেক স্থানে ইরশাদ হয়েছে:
فَلْيَنْظُرِ الْإِنْسَانُ إِلَىٰ طَعَامِهِ أَنَّا صَبَبْنَا الْمَاءَ صَبًّا ثُمَّ شَقَقْنَا الْأَرْضَ شَقًّا فَأَنْبَتْنَا فِيهَا حَبًّا وَعِنَبًا وَقَضْبًا وَزَيْتُونًا وَنَخْلًا وَحَدَائِقَ غُلْبًا وَفَاكِهَةً وَأَبًّا مَتَاعًا لَكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ
অর্থাৎ, মানুষ যেন তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ্য করে। নিশ্চয় আমি পানি বর্ষণ করেছি প্রচুর পরিমাণে। অতঃপর আমি ভূমি বিদীর্ণ করেছি যথাযথভাবে। অতঃপর আমি তাতে উৎপাদন করেছি শস্য, আঙ্গুর ও শাকসবজি, জলপাই ও খেজুর, ঘন উদ্যান, ফলমূল ও ঘাস। তোমাদের ও তোমাদের চতুষ্পদ জন্তুর ভোগ্য হিসেবে। -সুরা আবাসা ৮০:২৪-৩২।
এই প্রাণীগুলোর মাংস আমাদের শরীরে প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে, যা আমাদের সুস্থ ও শক্তিশালী রাখে। আধুনিক গবেষণায় দেখা যায় যে, মিতাচারী খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস ও অস্থিরতা কমায়, যা সুন্নাহর সাথে মিলে যায়।
দুধ: পুষ্টির অপূর্ব উৎস
আল্লাহ তাআলা গরু, ছাগল, উট ইত্যাদি প্রাণীর মাধ্যমে আমাদের জন্য দুধের ব্যবস্থা করেছেন, যা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর পানীয়। দুধ শুধু আমাদের তৃষ্ণা মেটায় না, বরং আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান সরবরাহ করে। আধুনিক বিজ্ঞান দেখায় যে, দুধ হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বলেন,
وَاِنَّ لَکُمۡ فِی الۡاَنۡعَامِ لَعِبۡرَۃً ؕ نُسۡقِیۡکُمۡ مِّمَّا فِیۡ بُطُوۡنِہٖ مِنۡۢ بَیۡنِ فَرۡثٍ وَّدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَآئِغًا لِّلشّٰرِبِیۡنَ
অর্থাৎ, আর তোমাদের জন্য চতুষ্পদ জন্তুগুলোতে রয়েছে শিক্ষণীয় উপমা। তাদের পেটে যা থাকে, তা থেকে আমরা তোমাদের জন্য দুধ উৎপন্ন করি, যা তোমরা পান কর, এবং এতে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক উপকার। -সূরা নাহল, আয়াত ৬৬।
দুধের এই বিশুদ্ধতা ও পুষ্টিগুণ আমাদের প্রতি আল্লাহর অপার দয়ার একটি প্রকাশ। দুধ পানের পর দোয়া: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيهِ وَزِدْنَا مِنْهُ – "হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে এর চেয়ে আরো বৃদ্ধি করে দিন।" -আবূদাঊদ হা/৩৭৩০।
কৃতজ্ঞতার শিক্ষা
আল্লাহর এই অসংখ্য নেয়ামত আমাদেরকে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতে শেখায়। প্রতিটি ফল, শস্য, মাংস বা দুধের প্রতিটি কণায় আল্লাহর সৃষ্টির অপূর্ব কারুকার্য প্রতিফলিত হয়। আমাদের উচিত এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং এগুলো হালাল ও সঠিক উপায়ে ব্যবহার করা। কুরআনে বারবার ফলমূল ও খাদ্যের বিচিত্রতাকে আল্লাহর অপার করুণার প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই নেয়ামতগুলো শুধু শারীরিক পুষ্টি নয়, বরং আল্লাহর সৃষ্টির মহিমা চিন্তার সুযোগ করে দেয়।
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে:
لِيَأْكُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ وَمَا عَمِلَتْهُ أَيْدِيهِمْ ۖ أَفَلَا يَشْكُرُونَ
অর্থাৎ, যাতে এরা আহার করতে পারে এর ফলমূল হতে, অথচ এদের হস্ত তা সৃষ্টি করে নাই। তবুও কি এরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না? -সুরা ইয়াসিন ৩৬:৩৫।
কুরআনে উল্লিখিত ফলমূল যেমন খেজুর, আঙ্গুর, জলপাই, ডালিম, আঞ্জির ইত্যাদি শুধু স্বাস্থ্যকর নয়, বরং বিচিত্র স্বাদেরও। সুরা আনআমে বলা হয়েছে:
وَهُوَ الَّذِي أَنْشَأَ جَنَّاتٍ مَعْرُوشَاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ وَالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا أُكُلُهُ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۚ كُلُوا مِنْ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ۖ وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
অর্থাৎ, আর আল্লাহ তিনিই, যিনি উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেছেন, (যার মধ্যে) কতক (লতাযুক্ত, যা) মাচা আশ্রিত এবং কতক মাচা আশ্রিত নয়। এবং খেজুর গাছ, বিভিন্ন স্বাদের খাদ্যশস্য, যায়তুন ও আনার (সৃষ্টি করেছেন) যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ এবং সাদৃশ্যবিহীনও। যখন এসব গাছ ফল দেয় তখন তার ফল থেকে খাবে এবং ফল কাটার দিন আল্লাহর হক আদায় করবে এবং অপচয় করবে না। (মনে রেখ,) তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।-সুরা আনআম ৬:১৪১।
হাদিসে খাদ্যের প্রতি কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন:
أَطْعِمُوا جَمَاعَةً وَلَا تَفَرَّقُوا فَإِنَّ الْبَرَكَةَ مَعَ الْجَمَاعَةِ
অর্থাৎ, একসাথে খাও এবং আলাদা হয়ো না, কারণ বরকত জামাআত বা সংঘবদ্ধতায়। -সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭।
ইসলামে খাওয়ার সাথে যুক্ত কিছু শিষ্টাচার রয়েছে, যা সুন্নাহর অংশ এবং জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সম্মানজনক করে। এই শিষ্টাচারগুলো শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে না, বরং আত্মশুদ্ধি ও সমাজিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন ঘটায়।
খাওয়ার শিষ্টাচার
ইসলামে খাওয়ার সাথে যুক্ত কিছু শিষ্টাচার রয়েছে, যা সুন্নাহর অংশ এবং জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সম্মানজনক করে। এই শিষ্টাচারগুলো শুধু শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করে না, বরং আত্মশুদ্ধি ও সমাজিক শৃঙ্খলার প্রতিফলন ঘটায়। নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচারগুলো উল্লেখ করা হলো, যা সহীহ হাদিস থেকে সংগৃহীত:
খাওয়ার আগে হাত ধোয়া
খাওয়ার আগে দুই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া সুন্নাহ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يُحِبُّ أَنْ يَغْسِلَ يَدَيْهِ قَبْلَ الطَّعَامِ وَبَعْدَهُ.
অর্থাৎ, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়া পছন্দ করতেন।” -সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৫৫।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ نَامَ وَفِي يَدِهِ غَمَرٌ أَوْ شُحُومُ لَحْمٍ فَأَصَابَهُ النَّارُ فَلَا يَلُومَنَّ إِلَّا نَفْسَهُ»
অর্থাৎ, "আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি হাতে গোশতের চর্বি বা মাংসের তেলের গন্ধ না ধুয়ে ঘুমায়, অতঃপর আগুন তাকে স্পর্শ করে, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে।" -মুসনাদে আহমাদ হা/৭৫১৫।
ব্যাখ্যা: এটি পরিচ্ছন্নতা ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা আধুনিক স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের হাইজিন নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আধুনিক বিজ্ঞান হাত ধোয়াকে রোগ প্রতিরোধের মূল উপায় হিসেবে স্বীকার করে, যা জীবাণু-সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
ডান হাতে খাওয়া
খাওয়া ও পান করার সময় ডান হাত ব্যবহার করা সুন্নাহ। উমর ইবনে আবু সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: كُنْتُ فِي حِجْرِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: يَا غُلَامُ، سَمِّ اللَّهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ.
অর্থাৎ,“উমর বিন আবী সালমা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন: ‘হে বালক! আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর, ডান হাত দিয়ে খাও এবং তোমার সামনের অংশ থেকে খাও।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০২০।
এছাড়া, হাদিসে এসেছে:
لاَ يَأْكُلَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ بِشِمَالِهِ وَلاَ يَشْرَبَنَّ بِهَا فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَأْكُلُ بِشِمَالِهِ وَيَشْرَبُ بِهَا
অর্থাৎ, "অবশ্যই তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে পানাহার না করে। কারণ শয়তান বাম হাতে পানাহার করে।" -সহীহ মুসলিম, হা/২০২০।
ব্যাখ্যা: ডান হাতে খাওয়া শয়তানের বিপরীত আচরণ হিসেবে বিবেচিত এবং ইসলামে শিষ্টাচারের অংশ।
পরিমিত খাওয়া
অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা সুন্নাহ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِ يَكْرِبَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ يَقُولُ: مَا مَلَأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ ابْنِ آدَمَ أُكُلَاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فَإِنْ كَانَ لَا مَحَالَةَ، فَثُلُثٌ لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرَابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ.
অর্থাৎ, “মিকদাম বিন মাজি ‘ইকরিব’ রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন: মানুষ তার পেটের চেয়ে ক্ষতিকর কোনো পাত্র ভর্তি করে না। মানুষের জন্য কয়েকটি লোকমা যথেষ্ট, যা তার দেহকে সোজা রাখে। তবে যদি অতিরিক্ত খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখা উচিত।” -সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত: "মানুষের অসুস্থতার মূল কারণ খাদ্য ও পানীয়, যা পেটকে রোগের কেন্দ্র করে।" -সুনানে ইবনে মাজাহ।
ব্যাখ্যা: এই হাদিস ওভারইটিং তথা, অতিরিক্ত খাদ্যাহার প্রতিরোধের গুরুত্বকে অত্যন্ত চমকপ্রদভাবে তুলে ধরে, যা আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অতিরিক্ত খাওয়া ডায়াবেটিস, হাইপ্রেশার, হার্ট রোগ ঘটায়, যেমন প্রফেসর রিচার্ডের গবেষণায় দেখা যায়। ইসলাম কম খাওয়া আয়ু বাড়ায় বলে শিক্ষা দেয়।
বলা হয়ে থাকে:
"Moderation is the key to a balanced life, as taught by the Sunnah."
অর্থাৎ, “সুন্নাহর শিক্ষা অনুযায়ী সংযমই হলো সুষম জীবনের মূল চাবিকাঠি।”
দাঁড়িয়ে না খাওয়া
বসে খাওয়া ও পান করা সুন্নাহ। আনাস ইবনে মালিক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى أَنْ يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِمًا.
অর্থাৎ, “আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন।” -সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০২৪।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ أَنْ يَأْكُلَ الرّجُلُ، وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى وَجْهِهِ
অর্থাৎ, "নবী ﷺ উপুড় হয়ে খেতে নিষেধ করেছেন, এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়।" -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩৩৭০; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩৭৭৪।
ব্যাখ্যা: বসে খাওয়া শিষ্টাচার ও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
খাবারের সমালোচনা না করা
খাবারের দোষ ধরা বা অপচয় করা ইসলামে নিষিদ্ধ। আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: مَا عَابَ النَّبِيُّ ﷺ طَعَامًا قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ، وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.
অর্থাৎ, “আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ কখনো কোনো খাবারের দোষ ধরেননি। তিনি যদি তা পছন্দ করতেন, তবে খেতেন; আর যদি পছন্দ না করতেন, তবে তা ছেড়ে দিতেন।” -সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৬৩।
ব্যাখ্যা: এটি খাবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার শিক্ষা দেয়।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
إِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِي وَسَطِ الطَّعَامِ، فَكُلُوا مِنْ حَافَاتِهِ، وَلَا تَأْكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ
অর্থাৎ, "বরকত খাবারের মাঝখানে অবতীর্ণ হয়, তাই পাত্রের চারপাশ থেকে খাও এবং মাঝখান থেকে খেয়ো না।" -সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫।
খাওয়ার পরে হাত ধোয়া
খাওয়ার পর হাত ধুয়ে নেওয়া এবং দোয়া পড়া সুন্নাহ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা থেকে বর্ণিত:
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ يُحِبُّ أَنْ يَغْسِلَ يَدَيْهِ قَبْلَ الطَّعَامِ وَبَعْدَهُ.
অর্থাৎ, “আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহা বলেন: ‘রাসূলুল্লাহ ﷺ খাবারের আগে এবং পরে তার হাত ধুতে পছন্দ করতেন।’’ -সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৫৫।
ব্যাখ্যা: এটি পরিচ্ছন্নতার অংশ এবং খাওয়ার পর দোয়া পড়া আধ্যাত্মিক সংযোগ বাড়ায়।
এছাড়া, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ أَصَابِعَهُ الثَّلاَثَ . قَالَ وَقَالَ " إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الأَذَى وَلْيَأْكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ " . وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الْقَصْعَةَ قَالَ " فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ فِي أَىِّ طَعَامِكُمُ الْبَرَكَةُ
অর্থাৎ, "আনাস রাদিয়াল্লাহু তাআ'লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খাদ্য খেতেন তখন তাঁর তিনটি আঙ্গুল চেটে নিতেন। তিনি বলেছেন: “তোমাদের কারো লোকমা (খাদ্যের টুকরো) যদি পড়ে যায়, তাহলে সে যেন তা থেকে আবর্জনা দূর করে এবং তা খেয়ে ফেলে, শাইতানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়।” আর তিনি আমাদের বাসন মুছে খেতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন: “কারণ তোমরা জান না, তোমাদের খাবারের কোন অংশে বরকত রয়েছে।" -সহীহ মুসলিম, হাদিস ২০৩৪।
আধুনিক প্রেক্ষাপটে ইসলামি শিষ্টাচার
আধুনিক বিশ্বে, যেখানে দ্রুত জীবনযাত্রা ও ফাস্টফুড সংস্কৃতি প্রাধান্য পাচ্ছে, তখনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে খাওয়ার শিষ্টাচার ও দোয়ার প্রতি গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অনেক মুসলিম পরিবার তাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই এই শিক্ষা দেয়। প্রযুক্তির যুগে সামাজিক মাধ্যমে এই দোয়া ও শিষ্টাচার শেয়ার করা হচ্ছে, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইসলামি মূল্যবোধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, মিতাচারী খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস ও অস্থিরতা কমায়, যা সুন্নাহর সাথে মিলে যায়।
এই প্রসঙ্গে জনৈক ইসলামী মনীষীর বক্তব্য প্রাসঙ্গিক যেখানে তিনি বলেছেন,
"In a world of haste, the Sunnah teaches us to pause, reflect, and be grateful."
“তাড়াহুড়োপূর্ণ বর্তমান জগতে, সুন্নাহ আমাদের শেখায় থামতে, চিন্তাভাবনা করতে এবং কৃতজ্ঞ হতে।”
উপসংহারঃ
প্রিয় ভাই-বোনেরা, খাওয়ার প্রতিটি কণায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অসীম রহমত লুকিয়ে আছে—আর সেই রহমতের দরজা খুলে দেয় আমাদের হৃদয়স্পর্শী দোয়া ও ইসলামী শিষ্টাচার। এই সরল অভ্যাসগুলো কেবল পেট ভরায় না, বরং আমাদের আত্মাকে আল্লাহর নৈকট্যে মিলিয়ে দেয়, কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে ভিজিয়ে দেয়। কল্পনা করুন, প্রতিটি হাঁড়ি তুলে যখন ‘বিসমিল্লাহ’ বলি, খাবারের লোকমা গ্রহণ করে যখন 'আলহামদুলিল্লাহ' বলি, তখন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমাদের প্রতি খুশি হয়ে যান। পানাহারের শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে শুকরিয়ায় মস্তক অবনত করলে, অন্তরে বয়ে ওঠে কৃতজ্ঞতার গভীর স্রোত—যা শুধু ব্যক্তিকেই পবিত্র করে না, সমাজকে শৃঙ্খলা ও ভালোবাসার বন্ধনেও আবদ্ধ করে।
আধুনিক জগতের ঝড়ো বাতাসে, যখন জীবন ভুলে যাওয়ার মতো ছুটে যায়, এই সুন্নাহগুলো আমাদের হৃদয়ের আলো জ্বালিয়ে রাখে—আত্মার সঙ্গীত বাজায়, রিজিকের বরকত বাড়ায়, জীবনকে কৃতজ্ঞতার মধুর আলোয় আলোকিত করে। হে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা! আমাদের দুর্বল অন্তরে আপনার নেআমতের পানাহারের সুন্নাহগুলোর প্রতি অশ্রুসজল শৌক ও জজবা জাগিয়ে দিন, যেন প্রতিটি দোয়া চোখের জল হয়ে নামে, আর আমরা আপনার রহমতের পথে কাঁদতে কাঁদতে এগিয়ে যাই। আমীন!
তথ্যসূত্র
১। সুরা বাকারাহ ২:১৭২।
২। সুরা নাহল ১৬:১১।
৩। সুরা ইয়াসিন ৩৬:৩৫।
৪। সুরা আনআম ৬:১৪১।
৫। সুরা আবাসা ৮০:২৪–৩২।
৬। সুরা নাহল ১৬:৬৬।
৭। সুরা নাহল ১৬:১৪।
৮। সুরা মুলক ৬৭:১৫।
৯। সুরা আনআম ৬:৯৯।
১০। সুরা বাকারাহ ২:১৬৮।
১১। সুরা হুদ ১১:৬।
১২। সুরা আল-আনকাবুত ২৯:৬০।
১৩। সুরা ওয়াকিয়া ৫৬:৬৩-৬৫।
১৪। সুরা আর-রহমান ৫৫:১০-১২।
১৫। সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৩৭৬।
১৬। সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৫৬৩।
১৭। সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৪৫৮।
১৮। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০১৭।
১৯। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০২০।
২০। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০২৪।
২১। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৭৩৪।
২২। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৩৩।
২৩। সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৩৪।
২৪। সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৫৫।
২৫। সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৬৭।
২৬। সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭২৯।
২৭। সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৩০।
২৮। সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৫।
২৯। সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩২৮৭।
৩০। সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৪৪।
৩১। সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮০৫।
৩২। সুনান তিরমিজি, হাদিস: ২৩৮০।
৩৩। সুনান তিরমিজি, হাদিস: ১৮৫৮।
৩৪। সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৩৭০।
৩৫। সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩৭৭৪।
৩৬। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫১০৬।
৩৭। সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫২১৪।
৩৮। মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭৫১৫।
৩৯। Quran.com
৪০। Sunnah.com
৪১। MyIslam.org
৪২। Healthymuslimfamilies.ca
৪৩। Click This Link
৪৪। https://www.alkawsar.com/bn/article/2122/
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নটি নতুন নয়। যুগে যুগে মানুষ এই প্রশ্ন আগেও তুলেছে, যখন তারা দেখেছে কোনো শিশু ক্ষুধায় কাঁদছে, কোনো মা বুকের দুধ শুকিয়ে ফেলেছে, আর কোনো জাতি দুর্ভিক্ষে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তাদেরও প্রশ্ন ছিল, “আল্লাহ তো রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন”, তাহলে এতো ক্ষুধা, অপুষ্টি, মৃত্যু কেন?
চলুন যুক্তির আলোয় বিষয়টি দেখা যাক।
প্রথমত: “রিজিকের দায়িত্ব” মানে অবশ্যই সবাই পেয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। আল্লাহ তাআ'লা বলেন-
"আমি পৃথিবীতে সবার রিজিক নির্ধারণ করেছি।" (সূরা হুদ, ১১:৬)
এই আয়াতের মানে এই নয় যে, রিজিক আপনার মুখে এসে পড়বেই। বরং অর্থ হচ্ছে- আল্লাহ সবার জন্য রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন, কিন্তু সেই রিজিক প্রাপ্তির কারণ, উপায় ও ব্যবস্থাও তিনি মানুষের দায়িত্বে অর্পন করেছেন। যেমন:
মাঠে ফসল ফলানোর ক্ষমতা আল্লাহ তাআ'লা দিয়েছেন, কিন্তু চাষ করতে হবে মানুষকে।
বৃষ্টি বর্ষন করে আল্লাহ তাআ'লা, কিন্তু পানি সংরক্ষণ করতে হবে মানুষকে।
খাবার তৈরি হয় প্রকৃতিতে, কিন্তু তার সুষ্ঠু বণ্টন মানুষকেই করতে হবে।
সুতরাং, রিজিক সৃষ্টি আল্লাহর কাজ, আর তার সঠিক বণ্টন ও ব্যবস্থাপনা মানুষের দায়িত্ব।
দ্বিতীয়ত: মানবতার ব্যর্থতা ও অন্যায়ের কারণেই অনেকে বঞ্চিত
আজ পৃথিবীতে খাদ্যের ঘাটতি নেই, কিন্তু ন্যায়বিচার ও বণ্টনের ঘাটতি আছে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে এক বছরে যত খাবার উৎপাদিত হয়, তা দিয়ে দু'বার পুরো মানবজাতিকে খাওয়ানো সম্ভব। কিন্তু ধনীদের ভোগ-বিলাস, যুদ্ধ, দুর্নীতি ও খাদ্যের অপচয়ের কারণে সেই রিজিক ক্ষুধার্তের হাতে পৌঁছায় না।
অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন, কিন্তু মানুষ নিজের দায়িত্বে ব্যর্থ হয়েছে।
তৃতীয়ত: শিশু বা অসহায়রা পরীক্ষা নয়, আমরা যারা দেখছি, আমরা পরীক্ষায় আছি
যে শিশু ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে- সে অন্যায়ের শিকার, কিন্তু আল্লাহর কাছে সে নির্দোষ আত্মা। তার কষ্ট পৃথিবীর অন্যায়ের ফল, আল্লাহর অন্যায়ের নয়। বরং আল্লাহ সেই শিশুকে তাঁর রহমতের অধীনে নিয়ে নেন।
কিন্তু আমরা যারা এই দৃশ্য দেখি- আমাদের প্রশ্ন করা উচিত:
“আমি কী করেছি যাতে আরেকজন মানুষ ক্ষুধার্ত না থাকে?”
আল্লাহ তাআ'লা কুরআনে বলেন,
“তুমি কি দেখো না সেই ব্যক্তিকে, যে ইয়াতিমকে দূরে ঠেলে দেয়, আর গরীবকে খাওয়াতে উৎসাহিত করে না?” (সূরা আল-মাউন, ১০৭:২-৩)
অর্থাৎ, ক্ষুধা কোনো শিশু বা মায়ের ব্যর্থতা নয় - বরং সমাজ, রাষ্ট্র, ও মানবজাতির ব্যর্থতা।
চতুর্থত: “তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ” - মানে তিনি উদাস নন, বরং জ্ঞানী পরিকল্পক
আল্লাহ যদি সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি কান্নার জবাব দিতেন, তবে পরীক্ষার দুনিয়াটাই অকার্যকর হয়ে যেত। তিনি শুনেন, জানেন, কিন্তু প্রতিটি ঘটনার পেছনে এক গভীর শিক্ষা, এক পরীক্ষা, এক পরিকল্পনা থাকে - যা আমরা সীমিত জ্ঞানে পুরোটা বুঝতে পারি না।
যেমন, যদি আল্লাহ প্রতিটি অপরাধীর হাত তৎক্ষণাৎ থামিয়ে দিতেন, তবে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা (free will) অর্থহীন হয়ে যেত।
রিজিক মানে কী?
‘রিজিক’ (رزق) শব্দটি এসেছে আরবি মূল শব্দ “রাযাকা” (رَزَقَ) থেকে, যার অর্থ - দান করা, জীবিকা দেওয়া, উপার্জনের সুযোগ দেওয়া বা কোনো কিছুর মাধ্যমে জীবনধারণের উপকরণ প্রদান করা।
অর্থাৎ, রিজিক মানে শুধু টাকা-পয়সা নয়, বরং জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ - যেমন: খাদ্য ও পানীয়, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা, ভালোবাসা, সম্পর্ক ও শান্তি, ইত্যাদি সবই রিজিকের অংশ।
উপসংহার
কুরআনের আয়াতগুলো বাস্তবতার সঙ্গে সংঘাত নয় - বরং দায়িত্ববোধের বার্তা দেয়। আল্লাহ রিজিক দিয়েছেন, কিন্তু তার ন্যায্য প্রাপ্তি মানুষের নৈতিকতা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। সুতরাং, শিশুদের ক্ষুধায় মৃত্যু আল্লাহর প্রতিশ্রুতির ব্যর্থতা নয়, বরং মানুষের অমানবিকতার ফলাফল।
শেষ কথা:
আল্লাহ তাআ'লা রিজিক দেন - কিন্তু তিনি চান মানুষ যেন একে অপরের রিজিকের মাধ্যম হয়। তিনি কেবল দান করেননি, দায়িত্বও দিয়েছেন - যেন আমরা কারও ক্ষুধার কান্না শুনে নীরব না থাকি। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
“যে এক ক্ষুধার্তকে খাওয়ায়, আমি তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিই।” -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
আবারও ধন্যবাদ।
২|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫
বাজ ৩ বলেছেন: নতুন আপনি রিজিকের ভুল অর্থ কেন গ্রহন করেছেন,রিজিক মানে তো সুধু খাবার না।যদি কেউ খাবার না পেয়ে মারা যায়,তাহলে এটাই তার রিযিক।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
নতুন নকিব বলেছেন:
চমৎকার অর্থবোধক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা জানবেন।
৩|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: গাজার মানুষ না খেয়ে আছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ক্ষুধায় কষ্ট করছে। ওদের রিজিক কার হাতে?
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১১
নতুন নকিব বলেছেন:
আপনি গাজার শিশুদের জন্য কী কী করেছেন? এক টাকা দান করেছেন কোনো দিন? আরে, দানের কথা না হয় পরেই বলি, এক ফোটা চোখের পানি বিসর্জন দিতে পেরেছেন এই নিরন্নদের জন্য?
ওদের রিজিক কার হাতে, সেই প্রশ্ন তো ঠিকই করছেন!
৪|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৫২
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
আপনি শিক্ষিত মানুষদেরকে ( ব্লগারদের ) আপনার ষ্টাইলের বেকুব বানানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ব্লগার রূপক অনেক রাতে খেতে পাননি কয়েক বছর; এখন চাকুরী থাকায় খাচ্ছেন। চাকুরীর জন্য অনেক সংগ্রাম করেছেন। বেকুব বেদুইনদের রিজিক ইত্যাদি ব্লগে বলিয়েন না।
পরালেখা না করে, উট বিদ্যা রপ্ত করেছেন।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:২৯
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ জেনারেশন একাত্তর,
ধর্ম, যুক্তি আর জ্ঞান একে অপরের পরিপূরক-বিরোধী নয়। আল্লাহ রিজিক দেন, মানুষ তার প্রাপ্তির চেষ্টা করে-এটাই ভারসাম্য।
রূপক চেষ্টা করেছে, তাই রিজিক পেয়েছে; কিন্তু উৎস অবশ্যই আল্লাহ।
আর “বেদুইন”দের ব্যঙ্গ করে আপনি ইতিহাসকেই অপমান করছেন-কারণ সেই জাতি থেকেই মানবতার শিক্ষক মুহাম্মাদ ﷺ এসেছেন।
রিজিক মানে অলসতা নয়, বরং চেষ্টা ও বিশ্বাসের মিলন। অতএব, জ্ঞানী হতে হলে কেবল বিদ্যা নয়, বিনয়ও দরকার।
৫|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৩
সুলাইমান হোসেন বলেছেন: নাস্তিকগুলো পাকনামি করার জন্য ধর্মীয় পোস্টে না আগমন করলে ভালো হয়।একটা হলো জানার জন্য প্রশ্ন করা,আরেকটা হলো ফালতু অহেতুক ক্যাচাল করা।নাস্তিকরা ক্যাচাল করার জন্য আসে,কিছু শেখার জন্য নয়।
প্রত্যেক প্রজন্মই একশত বছরের মধ্যে আল্লাহর প্রমান পেয়ে যায়।হোক সে কাফের অথবা মুমিন।পার্থক্য হলো মুমিনদের জন্য সুসংবাদ আর কাফেরদের জন্য দুঃসংবাদ।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫
নতুন নকিব বলেছেন:
জাজাকুমুল্লাহু খাইরান, আপনি একদম ঠিক বলেছেন - জানার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করা আর বিতর্কের জন্য তর্ক করা এক জিনিস নয়। আল্লাহর প্রমাণ প্রতিটি যুগেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে; যারা সত্যনিষ্ঠ, তারা তা হৃদয়ে অনুভব করে, আর যারা অহংকারে অন্ধ, তারা তা দেখেও অস্বীকার করে।
৬|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:৫৯
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: অনেক কিছু জানা হলো। সময় নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে তা শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৬
নতুন নকিব বলেছেন:
ইফতেখার ভূইয়া ভাই, আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনার আগ্রহ ও ইতিবাচক মনোভাবই লেখার অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহ আপনাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় আরও সমৃদ্ধ করুন।
৭|
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১:৫৩
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ছবি তৈরীর জন্য আপনি কোন এআই ব্যবহার করেন? আর এই ছবিটির জন্য কি প্রম্পট দিয়েছিলেন?
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৮
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রশ্নের জন্য। আমি মূলত OpenAI-এর ইমেজ জেনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করি, যা উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মডেল (যেমন DALL·E) দিয়ে তৈরি। ছবি তৈরির সময় আমি সাধারণত স্পষ্ট, বর্ণনামূলক প্রম্পট ব্যবহার করি।
শুভকামনা জানবেন।
৮|
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৮
নতুন নকিব বলেছেন:
ধন্যবাদ। এই পোস্টে আপনার ১ম কমেন্ট এর উত্তরটা পড়েছেন?
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫২
নতুন বলেছেন: "পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর নয়। তিনি জানেন তার স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থান। সবকিছুই একটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে।" -সূরা হুদ, ১১:৬
"আর কত প্রাণী আছে, যারা নিজেদের রিজিক বহন করে না, আল্লাহ তাদের এবং তোমাদের রিজিক দেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।" -সূরা আল-আনকাবুত, ২৯:৬০
গত ১০০ বছরে পৃথিবিতে প্রায় ৭-১৩ কোটি মানুষ দূভিক্ষে, না খেয়ে মারা গেছে। তার মাঝে ৪৫% ই শিশু ৫ বছরের কম বয়সী।
গাজাতে, আফ্রিকাতে অপুস্টিতে কত শিশু মারা যায় প্রতি বছর?
প্রতিবছর আফ্রীকাতে ২৫-৩০ লক্ষ শিশু অপুস্টিতে ভুগে মারা যায।
উপরের আয়াতে বলে সৃস্টিকর্তা তাদের ঠিকানা জানেন, একটা কিতাবে লেখা আছে, ।
আর কত প্রাণী আছে, যারা নিজেদের রিজিক বহন করে না, == শিশুরা অবশ্যই তাদের খাবার জোগাড় করতে পারেনা।
আল্লাহ তাদের এবং তোমাদের রিজিক দেন। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।"= সর্বশ্রোতা সেই সব মায়েদের কান্না শোনেন কিন্তু রিজিক পাঠান না কেন?
উপরের দুই আয়াতে তো সৃস্টিকর্তা সবার রিজিকের ব্যবস্থা করনে বলে দাবী করেছেন।