![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।
কথা হোক জ্ঞানের আলোয়: আসুন, বিরত থাকি না জেনে বলা থেকে[/sb ইমেজ, এআই দ্বারা তৈরিকৃত। দুঃখিত! এআই "জ্ঞানের" লিখতে গিয়ে প্রতিবারই "জানের" লিখছে।
জীবন একটি অবিরাম যাত্রা, যেখানে কথা আমাদের নিত্য সঙ্গী - কখনো হৃদয়ের গভীর অনুভূতি প্রকাশ করতে, কখনো জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে। কিন্তু যদি সেই কথা হয় অন্ধকারের মতো অন্ধ, না জেনে অনুমানের ভিত্তিতে উচ্চারিত? এমন কথা যা ব্যক্তির হৃদয়ে বিভ্রান্তির বীজ বপন করে, সমাজে ফিতনার আগুন জ্বালায়, এবং আল্লাহ তাআলার সামনে আমাদেরকে কঠিন দায়বদ্ধতায় ফেলে? কুরআন কারীম এবং হাদিস শরিফ এই বিপদ থেকে আমাদেরকে সতর্ক করেছে, একটি মহান মূলনীতি উপহার দিয়ে: নিশ্চিত জ্ঞান ছাড়া কথা বলা নিষেধ। এই নির্দেশনা শুধু ধর্মীয় সীমায় আবদ্ধ নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি আলোকবর্তিকা, যা সত্য, ন্যায় এবং দায়িত্বশীলতার পথ দেখায়। আসুন, এই বার্তাকে হৃদয়ে ধারণ করে, কুরআন-হাদিসের আলোয় এর গভীরতা অনুভব করি, এবং বাস্তব উদাহরণ এবং সঠিক তথ্যের মাধ্যমে এর প্রয়োগ বুঝি।
না জেনে কথা বলা: একটি অন্ধকারের ছায়া যা সমাজকে ধ্বংস করে
কল্পনা করুন, একটি ছোট্ট গ্রামে একজন লোক শুনলেন যে তার প্রতিবেশী কোনো অন্যায় করেছে। যাচাই না করে, নিশ্চিত না হয়ে, তিনি সেই কথা ছড়িয়ে দিলেন সবার মাঝে। ফলস্বরূপ, সেই প্রতিবেশীর পরিবার ভেঙে পড়ল, সম্পর্ক ছিন্ন হলো, এবং গ্রামে অশান্তির ছায়া নেমে এলো। এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে কতই না ঘটে - সোশ্যাল মিডিয়ায় অযাচাইকৃত তথ্য শেয়ার করা থেকে শুরু করে দৈনন্দিন গুজবে! আল্লাহ তাআলা এই অন্ধকার থেকে আমাদেরকে বাঁচাতে কুরআনুল কারীমে বলেছেন:
وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۚ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
"যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত জ্ঞান নেই, তার পেছনে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ এবং অন্তর – এর প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।" -সূরা আল-ইসরা, ১৭:৩৬
এই আয়াতটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের প্রতিটি অঙ্গ - কান যা শোনে, চোখ যা দেখে, অন্তর যা অনুভব করে - সবকিছুর হিসাব দিতে হবে কিয়ামতের দিন। না জেনে কথা বললে, আমরা শুধু নিজেকে নয়, সমাজকেও বিপদে ফেলি। এ থেকে উদ্ভূত হয় ফিতনা, বিভ্রান্তি, এবং সম্পর্কের ছিন্নভিন্নতা। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদা (রহ.) বলেছেন: "যা দেখোনি তা 'দেখেছি' বলো না, যা শোনোনি তা 'শুনেছি' বলো না, এবং যা জানো না তা 'জানি' বলো না।" এই সতর্কতা আমাদেরকে অনুমানের ফাঁদ থেকে বাঁচায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন:
إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبَ الْحَدِيثِ
"তোমরা অনুমান থেকে দূরে থাকো, কারণ অনুমান সবচেয়ে বড় মিথ্যা।" (সহিহ বুখারী: ৬০৬৬; সহিহ মুসলিম: ২৫৬৩)
এই হাদিসটি আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় – অনুমান কতটা ধ্বংসাত্মক! এটি শুধু মিথ্যা নয়, বরং সমাজের মূলে বিষ, যা পরস্পরের মধ্যে অবিশ্বাস এবং বিদ্বেষ সৃষ্টি করে।
দ্বীনী বিষয়ে সতর্কতা: আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ থেকে বাঁচুন, যা কুফরের দ্বার উন্মোচন করে
দ্বীনের বিষয়ে না জেনে কথা বলা আরও ভয়াবহ, কারণ এতে বিদআত ছড়ায়, দ্বীন বিকৃত হয়, এবং আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ হয়। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি কুরআনের একটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে বলে যে "এটা হালাল" বা "এটা হারাম", তাহলে সে নিজেকে এবং অন্যদেরকে বিভ্রান্তিতে ডুবায়। আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে বলেন:
وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَٰذَا حَلَالٌ وَهَٰذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
"যা তোমাদের জিহ্বা মিথ্যা রচনা করে, তা বলো না যে, 'এটা হালাল এবং এটা হারাম' – যাতে তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফল হয় না।" (সূরা আন-নাহ্ল, ১৬:১১৬)
এই আয়াতটি আমাদেরকে হালাল-হারামের মতো গুরুতর বিষয়ে সতর্ক করে। না জেনে যদি দ্বীনের কোনো নিয়ম বানিয়ে বলি, তাহলে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করি, যা কবীরা গুনাহ এবং কখনো কুফর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
"যে এই দ্বীনে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করে যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।" (সহিহ বুখারী: ২৬৯৭; সহিহ মুসলিম: ১৭১৮)
যদি না জানি, তাহলে কী করব? আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي إِلَيْهِمْ ۚ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
"যদি তোমরা না জানো, তাহলে জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করো।" (সূরা আন-নাহ্ল, ১৬:৪৩)
এই আয়াতটি আমাদেরকে অহংকার ত্যাগ করে আলেমদের কাছে যেতে অনুপ্রাণিত করে। না জেনে নিজের যুক্তিতে দ্বীন ব্যাখ্যা করলে, আমরা নিজেকে এবং অন্যদেরকে বিভ্রান্তিতে ডুবাই। আরও একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
"যে কুরআন সম্পর্কে জ্ঞান ছাড়া কথা বলে, সে জাহান্নামে তার আসন নিক।" (সুনান আত-তিরমিযী: ২৯৫০) এই কঠিন সতর্কতা আমাদেরকে দ্বীনী বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক করে তোলে।
সামাজিক জীবনে না জেনে বলার বিপদ: যা সম্পর্ক ধ্বংস করে এবং গুনাহ বাড়ায়
সামাজিক ক্ষেত্রে অনুমানের ভিত্তিতে কথা বললে, ভুল বোঝাবুঝি, ঝগড়া এবং গীবত হয় – যা সমাজের ভিত্তি কাঁপিয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরিবারে যদি কেউ না জেনে অন্যের সম্পর্কে খারাপ কথা বলে, তাহলে সেই পরিবারে অশান্তি নেমে আসে। আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا
"হে মুমিনগণ! অনেক অনুমান থেকে দূরে থাকো, কারণ কিছু অনুমান গুনাহ। অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গীবত করো না।" (সূরা আল-হুজুরাত, ৪৯:১২)
এই আয়াতটি আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় – গীবত কতটা ভয়ানক, যেন মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
كَفَى بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
"কারো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটুকু যথেষ্ট যে, সে যা শোনে তা-ই প্রচার করে।" (সহিহ মুসলিম: ৫)
পরামর্শের ক্ষেত্রেও সতর্কতা দরকার। না জেনে পরামর্শ দিলে, অন্যকে বিপদে ফেলি – যেমন চিকিৎসা বিষয়ে অজ্ঞাত হয়ে ওষুধ সাজেস্ট করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
الْمُسْتَشَارُ مُؤْتَمَنٌ
"যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়, সে আমানতদার।" (জামে আত-তিরমিযী: ২৮২২)
এই হাদিসটি আমাদেরকে দায়িত্বশীল করে তোলে – না জেনে পরামর্শ দেওয়া উচিত নয়, বরং যিনি জানেন তার কাছে পাঠানো উচিত। আধুনিক সময়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় অযাচাই তথ্য শেয়ার করা এই নিষেধের একটি বড় উদাহরণ, যা সমাজে বিভ্রান্তি এবং ক্ষতি ডেকে আনে।
কুরআন-হাদিসের আরও কিছু নির্দেশনা যা জ্ঞানের গুরুত্ব তুলে ধরে
কুরআন কারীমে আরও বলা হয়েছে:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
"বলো, আমার রব হারাম করেছেন অশ্লীলতা – প্রকাশ্য ও গোপন – গুনাহ, অন্যায় সীমালঙ্ঘন, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন যার কোনো প্রমাণ নেই, এবং আল্লাহ সম্পর্কে যা তোমরা জানো না তা বলা।" (সূরা আল-আরাফ, ৭:৩৩)
এই আয়াতটি না জেনে বলাকে হারামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে, যা শিরকের মতো গুরুতর গুনাহের সাথে যুক্ত। অতিরিক্ত হাদিস: খলিফা উমর ইবন আব্দুল আজিজ (রহ.) বলেছেন: "যে জ্ঞান ছাড়া ইবাদত করে, সে উপকারের চেয়ে অধিক ক্ষতি করে।" (এবং জ্ঞান ছাড়া কথা বলা অপেক্ষা জ্ঞান ছাড়া আমল আরও ক্ষতিকর।) এই কথা আমাদেরকে জ্ঞানের ভিত্তিতে আমল করতে উৎসাহিত করে।
নীতি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা: আধুনিক জীবনে প্রয়োগ এবং সতর্কতা
এই মূলনীতি শুধু প্রাচীনকালের নয়, বরং আধুনিক সময়ের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আজকের ডিজিটাল যুগে, যেখানে তথ্যের প্রবাহ অবিরাম, না জেনে শেয়ার করা ফেক নিউজ বা মিথ্যা তথ্য সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। উদাহরণস্বরূপ, মহামারীর সময় অযাচাই চিকিৎসা পরামর্শ শেয়ার করলে অনেকের জীবন বিপন্ন হয়। ইসলাম আমাদেরকে শেখায় যে, কথা বলা একটি আমানত – এতে দায়িত্বশীলতা দরকার। নীতিগতভাবে, আমাদেরকে মেনে চলতে হবে:
যাচাই-বাছাইয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা: প্রতিটি কথা বলার আগে সোর্স যাচাই করুন। কুরআন বলে, সন্দেহের ভিত্তিতে কথা বলা নিষেধ।
অহংকার ত্যাগ: না জানলে চুপ থাকুন বা জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা করুন। এতে সমাজের ঐক্য মজবুত হয়।
পরামর্শের নৈতিকতা: শুধু যা জানেন তাই বলুন; অন্যথায়, বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠান। এটা গুনাহ থেকে বাঁচায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কতা: না জেনে লাইক বা শেয়ার করা মিথ্যা প্রচারের সমান। ইসলামী নীতি অনুসারে, এটা ফিতনার কারণ।
এই নীতিগুলো মেনে চললে, আমাদের জীবন হয়ে উঠবে আরও সুন্দর এবং ন্যায়ভিত্তিক।
উপসংহার: সত্যের পথে চলুন, হৃদয়কে আলোকিত করুন
না জেনে বলা শুধু একটি ভুল নয়, বরং একটি জুলুম – নিজের প্রতি, সমাজের প্রতি, এবং আল্লাহর প্রতি। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করুন: প্রতিটি কথা বলার আগে যাচাই করব, না জেনে চুপ থাকব, জ্ঞানীদের কাছে যাব। এতে আমাদের জীবন হয়ে উঠবে শান্তিময়, সম্পর্ক মজবুত, এবং আখিরাত সফল। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই নির্দেশনা মেনে চলার তৌফিক দিন। আমীন।
©somewhere in net ltd.