নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলহামদুলিল্লাহ! যা চেয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি দয়া করেছেন আমার পরম প্রিয় রব। যা পাইনি, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই—কারণ জানি, তিনি দেন শুধু কল্যাণই। সিজদাবনত শুকরিয়া।\n\nপ্রত্যাশার একটি ঘর এখনও কি ফাঁকা পড়ে আছে কি না, জানি না। তবে এটুকু জানি—

নতুন নকিব

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দল-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না- বিদ্রোহী রন-ক্লান্ত। আমি সেই দিন হব শান্ত।

নতুন নকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য; একটি সংক্ষিপ্ত গবেষনা

১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৪

মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য; একটি সংক্ষিপ্ত গবেষনা

ছবি, এআই দিয়ে তৈরিকৃত।

সংক্ষিপ্তসার

ইসলামী শরীয়তে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের পরে সর্বোচ্চ স্থান দেওয়া হয়েছে, যা কুরআন মজীদ, হাদিস শরীফ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সীরাতে প্রতিফলিত। এই গবেষণা প্রবন্ধে মাতা-পিতার অবর্ণনীয় ত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, মাতা-পিতার জীবিতকালীন ও মৃত্যু পরবর্তীকালে সন্তানের দায়িত্ব, শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্যের সীমা, মুশরিক পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, পিতা-মাতার সেবা জিহাদের চেয়ে উত্তম হওয়া, পিতা-মাতার দোয়া বা বদদোয়ার কবুলিয়ত, রেহেমের গুরুত্ব, রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তায় জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের সৎকর্ম কবুল না হওয়া, পিতা-মাতা না থাকলে খালা-ফুফুর সেবা, পিতার বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা এবং পিতা পরিবারের আমীর হিসেবে নেতৃত্বের মতো বিষয়সমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনার চেষ্টা করা হবে ইনশাআল্লাহ। টেক্সটুয়াল অ্যানালাইসিস পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখানোর চেষ্টা করা হবে যে, এই দায়িত্ব পালন আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি, জান্নাত লাভ এবং জীবিকা ও আয়ুতে বরকতের মূল চাবিকাঠি। গবেষণাটি ইসলামী পরিবার ব্যবস্থার সামাজিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব তুলে ধরে এবং আধুনিক সমাজে এর প্রয়োগকে উৎসাহিত করে।

ভূমিকা

মাতা-পিতা মানুষের জীবনের মূল ভিত্তি, যাদের ত্যাগ এবং ভালোবাসা ছাড়া সন্তানের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। স্নেহময়ী মাতা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, জন্ম দেন, লালন-পালন করেন এবং স্বপ্নের পথ দেখান। কুরআন মজীদে সীমাহীন এই ত্যাগকে 'অহনান আলা অহনিন' তথা, 'কষ্টের পর কষ্ট' হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, যা সন্তানকে কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দেয় এবং হৃদয়ে আবেগ জাগ্রত করে। ইসলামে এই সম্পর্ককে পবিত্রতম বলে গণ্য করা হয়, যেখানে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের পরই মাতা-পিতার অধিকারের উল্লেখ রয়েছে। সুরা বনী ইসরাইলের আয়াতসমূহে এটি স্পষ্ট যে, আল্লাহর একত্ববাদের সাথে মাতা-পিতার সদ্ব্যবহারকে যুক্ত করা হয়েছে, যা এর গুরুত্ব প্রমাণ করে এবং সন্তানকে মা-বাবার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তাদের সেবা শুশ্রুষা করা এবং তাদের জন্য দোয়ার নির্দেশ প্রদান করে।

আধুনিক সমাজে দ্রুতগতির জীবনযাত্রা, শহুরে সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং ব্যক্তিগত স্বার্থপরতা মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে দিনকে দিন হাল্কা করে তুলছে। অনেক সন্তান বার্ধক্যে মাতা-পিতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে বা অবহেলা করছে, যা ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক এবং সমাজে বিশৃঙ্খলারও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই গবেষণায় কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যাতে সন্তানের দায়িত্বের ধর্মীয়, সামাজিক এবং মানসিক মাত্রা উন্মোচিত হয়। মাতা-পিতার সেবা জিহাদের চেয়ে উত্তম, পিতা-মাতার দোয়ার কবুলিয়ত এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার মতো বিষয়সমূহ এখানে আলোচিত হয়েছে, যা এই গবেষণার ভিত্তি গঠন করে।

গবেষণার উদ্দেশ্য: (১) কুরআনের আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা এবং সেগুলোর আধুনিক প্রয়োগ; (২) হাদিসসমূহের গভীর বিশ্লেষণ এবং তাদের গুরুত্ব তুলে ধরা; (৩) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র সীরাত থেকে আলোচনা এবং অনুকরণীয় দিক; (৪) মাতা-পিতার জীবিতকালীন ও মৃত্যুর পরবর্তী সন্তানের দায়িত্বসমূহের বিস্তারিত তালিকা এবং ব্যাখ্যা; (৫) বিশেষ পরিস্থিতি, যেমন শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্যের সীমা, মুশরিক পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, পিতা-মাতার সেবা জিহাদের চেয়ে উত্তম হওয়া এবং পিতা-মাতার দোয়া বা বদদোয়ার কবুলিয়তের বিস্তারিত আলোচনা। এই গবেষণা আধুনিক মুসলিম সমাজে ইসলামী পরিবার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করতে সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

সাহিত্য পর্যালোচনা

ইসলামী স্কলারগণ মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে তাওহীদের সাথে তুলনীয় গুরুত্ব দিয়েছেন। ইমাম কুরতুবী রহ. তাঁর তাফসীরে সুরা বনী ইসরাইলের আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় বলেন যে, আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের সাথে মাতা-পিতার সদাচরণকে যুক্ত করা হয়েছে কারণ তাঁরা সন্তানের জীবনপ্রাপ্তির মাধ্যম। এই ব্যাখ্যায় তিনি আরও বলেন যে, 'قَضَى' শব্দটি চূড়ান্ত ফায়সালা নির্দেশ করে, যা অপরিবর্তনীয় এবং সন্তানকে সার্বক্ষণিক সেবায় উদ্বুদ্ধ করে। ইবনে কাসীর রহ. তাঁর তাফসীরে সুরা লুকমানের আয়াতে মায়ের গর্ভধারণের কষ্টকে হাইলাইট করে সন্তানের কৃতজ্ঞতার উপর জোর দিয়েছেন, যা সন্তানকে মাতা-পিতার ত্যাগের প্রতি সচেতন করে।

হাদিসের ক্ষেত্রে, ইমাম বুখারী রহ. এবং মুসলিম রহ. -এর সংকলনে মায়ের অধিকারকে তিনবার উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইমাম নববী রহ. তাঁর শরহে ব্যাখ্যা করেছেন যে, মায়ের ত্যাগের কারণে তাঁর অধিকার পিতার চেয়ে অগ্রাধিকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সীরাতের উদাহরণসমূহ, যেমন দুধ-মা হালিমাতুস সা‘দিয়ার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ইবনে হিশামের সীরাতে বর্ণিত। আধুনিক স্কলার যেমন শাইখ উসাইমীন বলেন যে, মাতা-পিতার সেবা জান্নাতের দ্বার এবং বিপদমুক্তির অসীলা।

এই পর্যালোচনা দেখায় যে, ইসলামী সাহিত্যে এই বিষয়টি ধর্মীয় এবং সামাজিক উভয় দিক থেকে বিশ্লেষিত। প্রাচীন তাফসীর থেকে আধুনিক নিবন্ধ পর্যন্ত সকল সোর্সে মাতা-পিতার সেবাকে আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করা হয়েছে। তবে আধুনিক সমাজে শিরকের সীমা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা, পিতা-মাতার অবাধ্যতার পরিণাম এবং রেহেমের গুরুত্বের মতো বিষয়ে আরও গভীর গবেষণার দাবি রাখে, যা এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

পদ্ধতি

এই গবেষণা কুরআন ও হাদিসের টেক্সটুয়াল অ্যানালাইসিসের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। কুরআনের আয়াতসমূহের আরবি উদ্ধৃতি, বাংলা অনুবাদ এবং যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়েছে। হাদিসসমূহ সহিহ সোর্স যেমন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ থেকে নেওয়া হয়েছে এবং হাদিসে বর্ণিত এই সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনা যোগ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ঘটনাসমূহ নির্ভরযোগ্য সীরাত গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত। বিশ্লেষণে ইসলামী স্কলারদের তাফসীর যেমন কুরতুবী, ইবনে কাসীর এবং ইবনে আব্বাস ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণাটি কোয়ালিটেটিভ, যাতে ধর্মীয় টেক্সটের থিম্যাটিক অ্যানালাইসিস করা হয়েছে।

মূল আলোচনা

১. কুরআন মজীদে মাতা-পিতার অধিকার এবং সন্তানের দায়িত্ব

কুরআন মজীদে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যা এর গুরুত্ব নির্দেশ করে। এই সম্পর্ক ইসলামের মূল ভিত্তি, যা সন্তানকে কৃতজ্ঞতা, সম্মান এবং সেবার শিক্ষা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন-

وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا رَّبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمْ إِن تَكُونُواْ صَالِحِينَ فَإِنَّهُ كَانَ لِلأَوَّابِينَ غَفُورًا

অর্থাৎ, তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারু উপাসনা করো না এবং তোমরা পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়ে যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহ’লে তুমি তাদের প্রতি উহ্ শব্দটিও উচ্চারণ করো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না। তুমি তাদের সাথে নম্রভাবে কথা বল’। ‘আর তাদের প্রতি মমতাবশে নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর এবং বল, হে আমার প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি দয়া কর যেমন তারা আমাকে শৈশবে দয়াপরবশে লালন-পালন করেছিলেন’। ‘তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালভাবেই জানেন। যদি তোমরা সৎকর্ম পরায়ণ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল’। [1]

ইমাম কুরতুবী এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন যে, 'قَضَى' শব্দটি চূড়ান্ত ফায়সালা নির্দেশ করে, যা অপরিবর্তনীয়। এখানে মাতা-পিতার লালন-পালনের স্মরণ করে দোয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা সন্তানের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। এই আয়াতটি সন্তানকে মাতা-পিতার প্রতি শুধু সম্মান নয়, বরং নম্রতা এবং করুণার আচার-আচরণ করতে শেখায়, যা আধুনিক সমাজে প্রায় অবহেলিত এবং অনেক ক্ষেত্রে উপেক্ষিতও বটে।

কুরআনের এই নির্দেশনাগুলো সন্তানকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে শেখায় না, বরং মাতা-পিতার প্রতি হৃদয় থেকে ভালোবাসা প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আধুনিক সমাজে যেখানে পারিবারিক বন্ধন ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এই আয়াতসমূহ অনুপ্রেরণা দেয় যে, মাতা-পিতার সেবা হলো আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির পথ। কুরআন মাতা-পিতার অধিকারকে শুধু বার্ধক্যে নয়, বরং সারা জীবনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা সন্তানকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সন্তান যদি মাতা-পিতার কথায় 'উহ' বলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে কিংবা অসম্মান করে, তাহলে সেটাও কুরআনের শিক্ষার পরিপন্থী। কুরআনুল কারিমে মায়ের গর্ভধারণের কষ্ট 'অহনান আলা অহনিন' (কষ্টের পর কষ্ট) হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ وَإِن جَاهَدَاكَ عَلَى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছরে তার দুধ ছাড়ানো হয়েছে। (আদেশ হলো এই যে) আমার প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। প্রত্যাবর্তন তো আমারই দিকে। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য চাপ দেয়, যার কোনো প্রমাণ তোমার কাছে নেই, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না এবং পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদাচরণ করো এবং যে আমার অভিমুখী হয়েছে, তার পথ অনুসরণ করো। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার দিকেই। তখন আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [2]

এই আয়াতে মায়ের কষ্টের বর্ণনা সন্তানকে কৃতজ্ঞতার শিক্ষা দেয় এবং শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্য না করার নির্দেশ দেয়, কিন্তু সদাচরণ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। এটি সন্তানকে ধর্মীয় সীমার মধ্যে থেকে মাতা-পিতার সেবা করতে শেখায়, যা আধুনিক সমাজে ধর্মীয় সংঘাতের সমাধান দেয়। এই আয়াত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পারিবারিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। কল্পনা করুন, একজন সন্তান যদি মাতা-পিতার শিরকী আদেশ না মানে কিন্তু তাদের সেবা করে, যত্ন নেয়, তাহলে তা ইসলামের সহিষ্ণুতারই প্রমাণ।

শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্য না করার নির্দেশ:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য চাপ দেয়, যার কোনো প্রমাণ তোমার কাছে নেই, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না। তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার দিকেই। তখন আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [3]

ইবনে আব্বাস (রা.) এর ব্যাখ্যায়, এখানে শিরক শুধু ধর্মীয় নয়, শরীয়ত বিরোধী আদেশকেও বোঝায়। এই আয়াতটি সন্তানকে ধর্মীয় সত্যের প্রতি দৃঢ় থেকে মাতা-পিতার সেবা করতে শেখায়, যা আধুনিক সমাজে ধর্মীয় সংঘাতের সমাধান দেয়। এই আয়াত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পারিবারিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে শেখায়। উদাহরণস্বরূপ, যদি মাতা-পিতা সন্তানকে বিদ‘আতী আমলে জড়াতে চান, তাহলে সন্তান আনুগত্য না করে সদাচরণ করবে, যা ইসলামের সৌন্দর্য।

মায়ের কষ্টের বর্ণনা:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَانًا ۖ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهًا وَوَضَعَتْهُ كُرْهًا ۖ وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلَاثُونَ شَهْرًا ۚ

অর্থাৎ, আমরা মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের সাথে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ এবং দুধ ছাড়ানো হয় ত্রিশ মাসে। [4]

এই আয়াতটি মায়ের কষ্টকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে, যা সন্তানকে মায়ের ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন, গর্ভধারণের সর্বনিম্ন মেয়াদ ছয় মাস, যা মায়ের কষ্টের গভীরতা বোঝায়। এখান থেকে মায়ের ভূমিকা অনুভব করা যেতে পারে এবং এ থেকে মাতৃসেবায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।

মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইরশাদ করেন-

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا

অর্থাৎ, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সাথে শরীক করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সঙ্গী, পথচারী এবং তোমাদের দাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আল্লাহ অহংকারী এবং দম্ভকারীকে পছন্দ করেন না। [5]

এই আয়াতটি মাতা-পিতার অধিকারকে আত্মীয়তার সম্পর্কের সাথে যুক্ত করে, যা সামাজিক সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে। এখান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় এটাই যে, মাতা-পিতার সেবা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক দায়িত্বের অংশ। এই নির্দেশনা সন্তানকে সমাজে শান্তি এবং সহযোগিতার শিক্ষা দেয়, যা আধুনিক সমাজে প্রয়োজনীয়।

কুরআনুল কারিমে মানুষের সৃষ্টির বর্ণনা:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ইরশাদ করেন-

هَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنَ الدَّهْرِ لَمْ يَكُنْ شَيْئًا مَذْكُورًا إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ نُطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا

অর্থাৎ, নিশ্চয়ই মানুষের উপর যুগের এমন একটি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, যখন সে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না। আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি (পিতা-মাতার) মিশ্রিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য। অতঃপর আমরা তাকে করেছি শ্রবণশক্তিসম্পন্ন ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। [6]

এই আয়াতটি মাতা-পিতার মাধ্যমে সন্তানের সৃষ্টিকে তুলে ধরে, যা সন্তানকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। এখান থেকে অনুভব করা যায় যে, মাতা-পিতা আল্লাহর সৃষ্টির মাধ্যম, তাই তাদের সেবা আল্লাহর ইবাদতের অংশ।

কুরআনের এই নির্দেশনাগুলো সন্তানকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে শেখায়, বরং হৃদয় থেকে ভালোবাসা প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। আধুনিক সমাজে যেখানে পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, এই আয়াতসমূহ অনুপ্রেরণা দেয় যে, মাতা-পিতার সেবা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করে দেখা যায় যে, কুরআন মাতা-পিতার অধিকারকে শুধু বার্ধক্যে নয়, বরং সারা জীবনের জন্য নির্ধারিত করেছে, যা সন্তানকে সার্বক্ষণিক দায়িত্ববোধে উজ্জীবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সন্তান যদি মাতা-পিতার কথায় 'উহ' বলে অসম্মান করে, তাহলে তা কুরআনের নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী, যা ছোট ছোট আচরণে সতর্ক করে।

কুরআনের এই শিক্ষা সন্তানকে সমাজে শান্তি এবং সহযোগিতার শিক্ষা দেয়, যা আধুনিক সমাজে প্রয়োজনীয় এবং প্রত্যেকের জন্য অনুকরণীয়।

২. হাদিস শরীফে মাতা-পিতার অধিকার

হাদিসসমূহে মাতা-পিতার অধিকারকে নামাজের পর স্থান দেওয়া হয়েছে, যা এর গুরুত্ব প্রমাণ করে:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ الْعَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا، قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: ثُمَّ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ، قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: ثُمَّ الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي بِهِنَّ وَلَوِ اسْتَزَدْتُهُ لَزَادَنِي

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম: আল্লাহর কাছে কোন আমল সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বললেন: সময়মতো নামায আদায় করা। আমি বললাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: তারপর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। আমি বললাম: তারপর কোনটি? তিনি বললেন: তারপর আল্লাহর পথে জিহাদ করা। ইবনু মাসঊদ বলেন: তিনি আমাকে এই তিনটি আমলের কথা বলেছেন, আর যদি আমি আরও জিজ্ঞাসা করতাম, তিনি আরও বলতেন। [7]

এই হাদিসটি সন্তানকে শেখায় যে, মাতা-পিতার সেবা জিহাদের মতো পুণ্যময় আমলের উপরে। আধুনিক সমাজে যেখানে সন্তানরা কর্মব্যস্ততায় মাতা-পিতাকে অবহেলা করে, এই হাদিসটি অনুপ্রেরণা দেয় যে, সেবা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। ধর্মীয় আমলের সাথে পারিবারিক দায়িত্বের সমন্বয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, একজন সন্তান যদি জিহাদের নামে মাতা-পিতাকে অবহেলা করে, তাহলে তা হাদিসের পরিপন্থী।

মায়ের অধিকারকে তিনবার উল্লেখ করে হাদিসে বলা হয়েছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أُمَّكَ، قُلْتُ: مَنْ أَبَرُّ؟ قَالَ: أَبَاكَ، ثُمَّ الْأَقْرَبَ فَالْأَقْرَبَ.

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কার সাথে সবচেয়ে বেশি সদ্ব্যবহার করব? তিনি বললেন: তোমার মা। আমি বললাম: তারপর কার সাথে? তিনি বললেন: তোমার মা। আমি বললাম: তারপর কার সাথে? তিনি বললেন: তোমার মা। আমি বললাম: তারপর কার সাথে? তিনি বললেন: তোমার বাবা, তারপর যে তোমার সবচেয়ে কাছের আত্মীয়, তারপর তারপরও কাছের আত্মীয়। [8]

ইমাম নববী রহ. বলেন, এটি মায়ের গর্ভধারণ এবং লালন-পালনের কষ্টের স্বীকৃতি। এই হাদিসটি সন্তানকে মায়ের ত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে শেখায়। আধুনিক সমাজে যেখানে মায়ের ভূমিকা অবমূল্যায়িত হয়, এই হাদিসটি মায়ের মর্যাদা পুনরুদ্ধার করে। এখান থেকে শেখা যায় যে, মায়ের সেবা হলো সন্তানের প্রধান দায়িত্ব, যা জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে।

"জান্নাত মায়ের পায়ের নিচে" হাদিসটি মায়ের মর্যাদা তুলে ধরে:

عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمَةَ السَّكُونِيِّ قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: يَا بُنَيَّ، اتَّقِ اللَّهَ وَارْبِطِ الرَّحِمَ، فَإِنَّهَا مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَقُولُ: مَنْ وَصَلَنِي وَصَلَهُ اللَّهُ، وَمَنْ قَطَعَنِي قَطَعَهُ اللَّهُ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجَنَّةُ تَحْتَ أَقْدَامِ الأُمَّهَاتِ

অর্থাৎ, মু‘আবিয়া ইবনু জাহিমাহ আস-সাকুনী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বললেন, হে আমার পুত্র! আল্লাহকে ভয় কর এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর, কারণ এটি আরশের সাথে ঝুলন্ত, যা বলে: যে আমাকে সংযুক্ত রাখে আল্লাহ তাকে সংযুক্ত রাখবেন এবং যে আমাকে ছিন্ন করে আল্লাহ তাকে ছিন্ন করবেন; তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: জান্নাত মায়েদের পায়ের নিচে। [9]

এই হাদিসটি সন্তানকে মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি বোঝায় যে, মায়ের সেবা হলো জান্নাতের চাবি, যা পারিবারিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন সন্তান যদি মায়ের সেবা করে, তাহলে তা জান্নাতের পথ, যা অনুপ্রাণিত করে।

মৃত্যুর পরও দায়িত্ব অব্যাহত রাখতে হবে:

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عَنْ أَبِي أُسَيْدٍ مَالِكِ بْنِ رَبِيعَةَ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: بَيْنَمَا أَنَا جَالِسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَهُ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ بَقِيَ مِنْ بِرِّ أَبَوَيَّ شَيْءٌ أَبَرُّهُمَا بِهِ بَعْدَ مَوْتِهِمَا؟ قَالَ: نَعَمْ الصَّلَاةُ عَلَيْهِمَا وَالِاسْتِغْفَارُ لَهُمَا وَإِنْفَاذُ عَهْدِهِمَا مِنْ بَعْدِهِمَا وَصِلَةُ الرَّحِمِ الَّتِي لَا تُوصَلُ إِلَّا بِهِمَا وَإِكْرَامُ صَدِيقِهِمَا، وَفِي رِوَايَةٍ: إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وَدِّ أَبِيهِ.

অর্থাৎ, আবু উসাইদ মালিক ইবনু রাবী‘আহ আস-সা‘ঈদী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় বনু সালিমাহ গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও কি তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের কোনো কিছু বাকি আছে যা আমি করতে পারি? তিনি বললেন: হ্যাঁ—তাদের জন্য নামায পড়া, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের ওয়াদা পূর্ণ করা, যে আত্মীয়তা শুধু তাদের মাধ্যমেই সম্পর্কিত ছিল তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা এবং তাদের বন্ধুদের সম্মান করা; আর এক বর্ণনায়: সবচেয়ে উত্তম সদ্ব্যবহার হলো সন্তানের তার পিতার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করা। [10]

এই হাদিসটি সন্তানকে মাতা-পিতার মৃত্যুর পরও তাদের স্মৃতি রক্ষা করতে শেখায়। আধুনিক সমাজে যেখানে মৃত্যুর পর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, এই হাদিসটি সম্পর্কের স্থায়িত্ব শেখায়। এখান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় এটাই যে, মাতা-পিতার বন্ধুদের সম্মান করা হলো তাদের স্মৃতি জীবিত রাখা।

পিতা-মাতার সেবা জিহাদের চেয়ে উত্তম:

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِرَجُلٍ: الْزَمْهُمَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ أَرْجُلِهِمَا

অর্থাৎ, আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বললেন: তাদের (পিতা-মাতার) সাথে থাকো, কারণ জান্নাত তাদের পায়ের নিচে। [11]

এই হাদিসটি সন্তানকে জিহাদের মতো পুণ্যময় আমলের চেয়ে মাতা-পিতার সেবাকে অগ্রাধিকার দিতে শেখায়। পারিবারিক দায়িত্ব ধর্মীয় আমলের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, জাহেমাহ আস-সুলামী (রা.)-এর ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদের বদলে মাতা-পিতার সেবার নির্দেশ দেন, যা অনুপ্রাণিত করে।

আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.)-এর ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللَّهِ، قَالَ: فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٌّ؟ قَالَ: نَعَمْ بَلْ كِلَاهُمَا، قَالَ: فَتَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللَّهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا فَفِيهِمَا فَجَاهِدْ

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল ‘আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি আপনার কাছে হিজরত ও জিহাদের উপর বাই‘আত করছি, আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায়। তিনি বললেন: তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কেউ জীবিত আছেন? সে বলল: হ্যাঁ, উভয়েই। তিনি বললেন: তুমি কি আল্লাহর কাছে সওয়াব চাও? সে বলল: হ্যাঁ। তিনি বললেন: তাহলে তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও, তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করো, কারণ তাদের সাথেই তোমার জিহাদ। [12]

এই হাদিসটি বোঝায় যে, মাতা-পিতার সেবা কখনো জিহাদের চেয়ে উত্তম, যা পারিবারিক দায়িত্বের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে। জমহুর বিদ্বানদের মতে, মাতা-পিতার নিষেধে জিহাদ হারাম, যা ফরজে আইন এবং ফরজে কিফায়াহর পার্থক্য তুলে ধরে।

হাদিসে পিতা-মাতার অবাধ্যতার পরিণাম জাহান্নাম:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَغْمَ أَنْفُهُ، ثُمَّ رَغْمَ أَنْفُهُ، ثُمَّ رَغْمَ أَنْفُهُ، قِيلَ: مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ.

অর্থাৎ, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তারপর তার নাক ধুলায় মলিন হোক, তারপর তার নাক ধুলায় মলিন হোক।» জিজ্ঞাসা করা হলো, কে হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: «যে তার পিতা-মাতা উভয়কে বা তাদের একজনকে বার্ধক্যে পেল, অথচ তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাল না। [13]

এই হাদিসটি মাতা-পিতার অবাধ্যতার ভয়াবহ পরিণাম তুলে ধরে।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) হ’তে বর্ণিত মিম্বরের ঘটনা

জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.)-এর হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে তিনবার আমীন বলেন, যার মধ্যে পিতা-মাতার অবাধ্যতা জাহান্নামের কারণ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: صَعِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمِنْبَرَ فَلَمَّا رَقِيَ عَتَبَةً قَالَ: آمِينَ، ثُمَّ رَقِيَ أُخْرَى فَقَالَ: آمِينَ، ثُمَّ رَقِيَ الثَّالِثَةَ فَقَالَ: آمِينَ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، سَمِعْنَاكَ تَقُولُ آمِينَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَ: لَمَّا رَقِيتُ الْأُولَى جَاءَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ رَمَضَانَ فَلَمْ يُغْفَرْ لَهُ، قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّانِيَةَ قَالَ: بَعُدَ مَنْ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ، قُلْتُ: آمِينَ، فَلَمَّا رَقِيتُ الثَّالِثَةَ قَالَ: بَعُدَ مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا فَلَمْ يُدْخِلَاهُ الْجَنَّةَ، قُلْتُ: آمِينَ. أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْحَكَمِ، أَخْبَرَنَا أَبُو زَيْدٍ سَعِيدُ بْنُ الرَّبِيعِ الْهَرَوِيُّ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. (رواه البخاري في الأدب المفرد، كتاب الدعاء، باب من قال آمين، رقم: ٦٤٤؛ وصححه الألباني في صحيح الأدب المفرد، رقم: ٤٩٦).

অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিম্বরে আরোহণ করলেন। অতঃপর ১ম সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। ২য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। এরপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিয়ে বললেন, আমীন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনাকে তিন সিঁড়িতে তিন বার আমীন বলতে শুনলাম। তিনি বললেন, আমি যখন ১ম সিঁড়িতে উঠলাম, তখন জিব্রীল আমাকে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! যে ব্যক্তি রামাযান মাস পেল। অতঃপর মাস শেষ হয়ে গেল। কিন্তু তাকে ক্ষমা করা হ’ল না। পরে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’। ২য় সিঁড়িতে উঠলে জিব্রীল বললেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে পেল। অতঃপর সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করলো না। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’। অতঃপর ৩য় সিঁড়িতে পা দিলে তিনি বললেন, যার নিকটে তোমার কথা বর্ণনা করা হ’ল, অথচ সে তোমার উপরে দরূদ পাঠ করলো না। অতঃপর মারা গেল ও জাহান্নামে প্রবেশ করলো। আল্লাহ তাকে স্বীয় রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দিলেন। তুমি বল, আমীন। তখন আমি বললাম, আমীন’। [14]

পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رِضَى الرَّبِّ فِي رِضَى الْوَالِدِ وَسَخَطُ الرَّبِّ فِي سَخَطِ الْوَالِدِ

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। [15]

এই হাদিসটি সন্তানকে পিতা-মাতার সন্তুষ্টিকে আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে যুক্ত করে। আধুনিক সমাজে যেখানে সন্তানরা পিতা-মাতার সাথে বিরোধ করে, এই হাদিসটি সমাধানের পথ দেখায়। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.)-এর ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন পিতার নির্দেশে, যা আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরে।

পিতা-মাতার দোয়া কবুল হয়:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتٌ لَا شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ الْوَالِدِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْمَظْلُومِ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন প্রকার দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই—পিতা-মাতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং মযলুমের (অত্যাচারিতের) দোয়া। [16]

এই হাদিসটি পিতা-মাতার দোয়ার কবুলীয়ত তুলে ধরে, যা পিতা-মাতার সন্তুষ্টি লাভে উদ্বুদ্ধ করে। বদদোয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক করে, যা পারিবারিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে। পিতা-মাতার বদদোয়া সন্তানের জীবনকে কষ্টময় করে, যা সতর্ক করে।

সন্তান হলো পিতা-মাতার পবিত্রতম উপার্জন:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَنْتَ وَمَالُكَ لِوَالِدِكَ، إِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ أَطْيَبِ كَسْبِكُمْ، فَكُلُوا مِنْ كَسْبِ أَوْلَادِكُمْ

অর্থাৎ, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার জন্য; তোমাদের সন্তানরা তোমাদের উপার্জনের সবচেয়ে পবিত্র অংশ, সুতরাং তোমরা তোমাদের সন্তানদের উপার্জন থেকে খাও। [17]

এই হাদিসটি সন্তানকে পিতা-মাতার উপার্জনের অংশ বলে বর্ণনা করে, যা কৃতজ্ঞতা শেখায়।
পিতা-মাতার সেবা বিপদমুক্তির অসীলা:

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত গুহার ঘটনা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوْا الْمَبِيتَ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوهُ، فَانْحَطَّتْ عَلَيْهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ، فَقَالُوا: إِنَّهُ لَا يُنْجِيكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللَّهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ، فَقَالَ أَحَدُهُمْ: اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، وَكُنْتُ أَرْعَى عَلَيْهِمَا وَأَسْقِي لَهُمَا كُلَّ لَيْلَةٍ قَدَحًا مِنْ لَبَنٍ، فَأَعْنَتَنِي بِهِمَا طَلَبَةٌ فَلَمْ أَرْجِعْ إِلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا، فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُمَا وَأَنْ أَسْقِيَ أَهْلِي قَبْلَهُمَا، فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى رَأْسِي حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ عَنَّا مِنْهَا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ، فَفَرَجَ اللَّهُ عَنْهُمْ فُرْجَةً، ثُمَّ قَالَ الثَّانِي وَالثَّالِثُ بِقِصَّتَيْهِمَا حَتَّى انْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ وَخَرَجُوا يَمْشُونَ. أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ سِنَانٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. (رواه البخاري في الصحيح، كتاب البيوع، باب كسب الرجل وعمله بيده، رقم: ٢٢٧٢؛ ومسلم في الصحيح، كتاب الذكر والدعاء والتوبة والاستغفار، باب فضل الدعاء بصالح الأعمال، رقم: ٢٧٤٣).

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের তিন ব্যক্তি একদা রাত্রিযাপনের জন্য এক গুহায় আশ্রয় নিল, তারা গুহায় প্রবেশ করার পর পাহাড় থেকে একটি বিরাট পাথর খসে পড়ে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল, তারা বলল, এই পাথর থেকে তোমাদের মুক্তি দেবে কেবল আল্লাহর দরবারে তোমাদের সৎকর্মসমূহের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা; তখন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার দুজন বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিলেন, আমি প্রতি রাতে তাদের জন্য এক পিয়ালা দুধ নিয়ে আসতাম এবং তাদের পান করাতাম, একদিন কোনো কাজে তাদের কাছে ফিরতে দেরি হয়ে গেল, ফিরে এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন, আমি তাদের জাগাতে অপছন্দ করলাম এবং পরিবারের অন্যদের আগে তাদের পান করাতে চাইলাম না, তাই পিয়ালা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম সারা রাত, যতক্ষণ না ফজর উদিত হলো; হে আল্লাহ! যদি তুমি জানো যে, আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্যই করেছি, তবে এ পাথর থেকে আমাদের জন্য এমন একটি ফাঁক সৃষ্টি করে দাও যাতে আমরা আকাশ দেখতে পাই—তখন আল্লাহ তাদের জন্য একটি ফাঁক সৃষ্টি করলেন, তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ সৎকর্মের কথা বলে দোয়া করলেন, অবশেষে পাথরটি পুরোপুরি সরে গেল এবং তারা বেরিয়ে হাঁটতে লাগলেন। [18]

এই হাদিসটি সন্তানের জন্য মাতা-পিতার সেবাকে বিপদমুক্তির অসীলা হিসেবে বর্ণনা করে।

পিতা-মাতার অবাধ্যতা শিরকের পর মহাপাপ:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِsays: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَوْلُ الزُّورِ.

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল ‘আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: সবচেয়ে বড় কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া। [19]

এই হাদিসটি অবাধ্যতার ভয়াবহ পরিণাম হিসেবে জাহান্নামের শাস্তি তুলে ধরে, যা সতর্ক করে। আধুনিক সমাজে এই হাদিসটি সন্তানদের দায়িত্ববোধ ফিরিয়ে আনে।

রেহেম রহমান থেকে নিঃসৃত:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا اللَّهُ وَأَنَا الرَّحْمَنُ خَلَقْتُ الرَّحِمَ وَشَقَقْتُ لَهَا مِنِ اسْمِي فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا بَتَتُّهُ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আল্লাহ এবং আমি রহমান, আমি রহম (আত্মীয়তার বন্ধন) সৃষ্টি করেছি এবং আমার নাম থেকে তার জন্য নাম রেখেছি, যে তা বজায় রাখবে আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব এবং যে তা ছিন্ন করবে আমি তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব। [20]

এই হাদিসটি রেহেমের গুরুত্ব তুলে ধরে, যা পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কের মূল। এখান থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব বুঝা যায়।

রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারীর সাথে সদ্ব্যবহারকারী আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ لِي قَرَابَةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُونِي وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إِلَيَّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنْ كُنْتَ كَمَا تَقُولُ فَكَأَنَّمَا تُسَفُّهُمُ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللَّهِ مُعِينٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করি কিন্তু তারা আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, আমি তাদের প্রতি সদয় আচরণ করি কিন্তু তারা আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করে, আমি তাদের প্রতি সহনশীলতা দেখাই কিন্তু তারা আমার প্রতি অজ্ঞতা প্রকাশ করে; তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যদি তুমি যেমন বলছ তেমনই হও, তবে যেন তুমি তাদের মুখে গরম ছাই ঢেলে দিচ্ছ, এবং যতক্ষণ তুমি এ অবস্থার উপর থাকবে ততক্ষণ আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার সাহায্যকারী তাদের বিরুদ্ধে তোমার সাথে থাকবে। [21]

এই হাদিসটি সন্তানকে ছিন্ন সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা আল্লাহর সাহায্য লাভের পথ।

আত্মীয়তায় জীবিকা ও আয়ু বৃদ্ধি পায়:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ وَأَنْ يُنْسَأَ لَهُ فِي أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ

অর্থাৎ, আবু আইয়্যুব আল-আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত করা হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি করা হোক, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে। [22]

এই হাদিসটি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষাকে জীবিকা এবং আয়ুতে বরকতের সাথে যুক্ত করে, যা পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী করতে উদ্বুদ্ধ করে। মিরকাতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এটি আয়ুতে বরকত বৃদ্ধি, যা সৎকাজের তাওফিক দেয়।

পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের সৎকর্ম কবুল হয় না:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ثَلَاثَةٌ لَا يُقْبَلُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ: عَاقٌّ وَمَنَّانٌ وَمُكَذِّبٌ بِقَدَرٍ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তিন ব্যক্তির থেকে কিয়ামতের দিন কোনো ফরয বা নফল ইবাদত কবুল হবে না—পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, উপকার করে মানুষের উপর অহংকারকারী এবং তাকদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। [23]

এই হাদিসটি অবাধ্যতার পরিণাম তুলে ধরে, যা সতর্ক করে।

পিতা-মাতার মৃত্যুর পর সন্তানের কর্তব্য:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ، وَفِي رِوَايَةٍ: بِاسْتِغْفَارِ وَلَدِكَ لَكَ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন মানুষ মারা যায়, তার আমল বন্ধ হয়ে যায় তিনটি বিষয় ব্যতীত—চলমান সদকা, এমন ইলম যা থেকে উপকার পাওয়া যায়, অথবা সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে; এবং এক বর্ণনায়: তোমার সন্তানের তোমার জন্য ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)। [24]

এই হাদিসটি মৃত্যুর পর দোয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে, যা সওয়াব রেসানি, ঋণ পরিশোধ এবং অসিয়ত পূর্ণের সাথে যুক্ত। মাতা-পিতার স্মৃতি জীবিত রাখা হলো সন্তানের দায়িত্ব। ছাদাকায়ে জারিয়াহ যেমন মসজিদ, মাদরাসা নির্মাণ, যা স্থায়ী নেকী দেয়। সাইয়িদ রশীদ রিযা বলেন, দোয়া, ছাদাকা এবং হজ্জের নেকী মৃত পিতা-মাতা পান।

পিতা-মাতা না থাকলে খালা-ফুফুর সেবা:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الْأُمِّ.

অর্থাৎ, বারা ইবনু আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি: খালা মায়ের স্থানে অবস্থিত। [25]

এই হাদিসটি খালা-ফুফুর মর্যাদা তুলে ধরে, যা পিতা-মাতা না থাকলে সন্তানের দায়িত্ব। আত্মীয়তার বিস্তৃতি বুঝা যায়।

পিতার বন্ধুদের সাথে সুসম্পর্ক:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ دِينَارٍ قَالَ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ أَبَرِّ الْبِرِّ صِلَةَ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِّيَ

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু দীনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমর (রা.)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সর্বোত্তম সদ্ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে, কোনো ব্যক্তি তার পিতার মৃত্যুর পর তার পিতার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। [26]

এই হাদিসটি পিতার বন্ধুদের সম্মান করতে শেখায়, যা সমাজে সন্তানের মর্যাদা বাড়ায়।

পিতা পরিবারের আমীর:

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثِ الْخَيْلِ: الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ وَبِمَا أَنْفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া সম্পর্কিত হাদীসে বলেছেন: পুরুষরা নারীদের উপর দায়িত্বশীল, কারণ আল্লাহ একদলকে অন্যদলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং তারা নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে; সুতরাং সৎকর্মশীল নারীরা আনুগত্যকারিণী, গোপনে সংরক্ষণকারিণী—যা আল্লাহ সংরক্ষণ করেছেন। [27]

এই আয়াতটি পিতাকে পরিবারের নেতা বলে বর্ণনা করে, যা আনুগত্যের গুরুত্ব তুলে ধরে। পরিবারে নেতৃত্বের শিক্ষা নেওয়া যায়।

৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনের বাস্তব উদাহরণ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্মের আগে পিতা এবং ছয় বছর বয়সে মাতা হারিয়ে ইয়াতীম হয়েছিলেন, যা তাঁকে ইয়াতীমদের সর্দার করেছে। দুধ-মা হালিমাতুস সা‘দিয়া (রা.)-এর আগমনে তিনি চাদর বিছিয়ে সম্মান করেছেন, যা সাহাবীদের অবাক করেছে। এই ঘটনাটি সন্তানকে মাতা-পিতার সম্মান করতে শেখায়। নবুয়ত লাভের পরও তিনি দুধ-মায়ের প্রতি এই সম্মান দেখিয়েছেন, যা ইসলামের সহিষ্ণুতা প্রমাণ করে। মায়ের কবর জিয়ারতে তিনি কেঁদেছেন, যা সাহাবীরা বলেন: "আমরা এত কান্না করতে এর আগে কখনো দেখিনি"। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: زَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ فَقَالَ: اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِي وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهa تُذَكِّرُ الْمَوْتَ

অর্থাৎ, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার নিজের মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তাঁর আশেপাশের লোকদেরকেও কাঁদালেন। তিনি বললেন, “আমি আমার প্রভুর কাছে আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু অনুমতি দেওয়া হল না। আমি তার কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলাম, অনুমতি দেওয়া হল। তোমরা কবর জিয়ারত করো, কারণ এতে মৃত্যুর স্মরণ হয়। [28]

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধ-ভাই আবু তুফাইল (রা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ ও সম্মান প্রদর্শনের ঘটনা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ عَامِرِ بْنِ وَاثِلَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: شَهِدْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ حُنَيْنٍ وَكَانَ أَبُو هِنْدٍ يَحْجُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي هِنْدٍ: يَا أَبَا هِنْدٍ أَتَزَوَّجُ بِنْتَكَ فَقَالَ أَبُو هِنْدٍ: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَتَزَوَّجَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَتْ أُمِّي تَقُولُ: أَنَا أُمُّكَ مِنَ الرَّضَاعَةِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتَزَوَّجُ أُخْتِي مِنَ الرَّضَاعَةِ؟ فَقَالَ: لَا، إِلَّا أَنْ تَكُونَ قَدْ أَرْضَعَتْكَ أُمُّهَا، فَقُلْتُ: إِنَّ أُمَّهَا قَدْ أَرْضَعَتْنِي، فَقَالَ: فَهِيَ أُخْتُكَ مِنَ الرَّضَاعَةِ، فَلَا تَقْرَبْهَا، وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أَنْتَ أَخِي مِنَ الرَّضَاعَةِ.

অর্থাৎ, আবু তুফাইল আমির ইবনু ওয়াসিলাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুনাইনের যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে উপস্থিত ছিলাম, আর আবু হিন্দ (যিনি হিজামা করতেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হিজামা করতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু হিন্দকে বললেন, হে আবু হিন্দ! তোমার মেয়েকে আমি বিয়ে করব? আবু হিন্দ বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিয়ে করলেন, আর আমার মা বলতেন, আমি তোমার দুধ-মা, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার দুধ-বোনকে বিয়ে করব? তিনি বললেন, না—যদি না তার মা তোমাকে দুধ পান করিয়েছে হয়, আমি বললাম, তার মা আমাকে দুধ পান করিয়েছে, তিনি বললেন, তাহলে সে তোমার দুধ-বোন, তাকে কাছে যেও না, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলতেন, তুমি আমার দুধ-ভাই। [29]

এই ঘটনা সন্তানকে মাতা-পিতার স্মৃতি রক্ষা করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা আধুনিক সমাজে অনুপ্রেরণাদায়ক। দুধ-ভাইকে ভাইয়ের মতো সম্মান করেছেন, যা আত্মীয়তার সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই উদাহরণসমূহ সন্তানকে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করতে শেখায়, বরং হৃদয় থেকে ভালোবাসা প্রকাশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। ইয়াতীম হয়েও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাতা-পিতার স্মৃতি রক্ষা করেছেন, যা অনুকরণীয়। কল্পনা করুন, যদি একজন সন্তান রাসূলের মতো মাতা-পিতার স্মৃতি রক্ষা করে, তাহলে তার জীবন কত সার্থক হবে।

তায়েফের দুর্ভিক্ষের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আত্মীয়তা রক্ষার জন্য কুরাইশদের শস্য সরবরাহ ও দোয়া করার ঘটনা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: أَصَابَتْ قُرَيْشًا سَنَةٌ شَدِيدَةٌ فَأَتَى عَمُّ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبُو سُفْيَانَ بْنُ حَرْبٍ وَالْحَارِثُ بْنُ هِشَامٍ وَغَيْرُهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ قَوْمَكَ قَدْ أَصَابَهُمْ جَهْدٌ شَدِيدٌ فَادْعُ اللَّهَ أَنْ يَفْرُجَ عَنْهُمْ فَدَعَا لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمْطَرَتِ السَّمَاءُ وَأَخْصَبَتِ الْأَرْضُ وَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَهُمْ مِنَ الطَّعَامِ مَا يَكْفِيهِمْ حَتَّى يَبْلُغُوا مَكَّةَ وَقَالَ: هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَلَيْسَ مِنْ عِنْدِي

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশদের উপর একটি কঠিন দুর্ভিক্ষ এসেছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবু সুফিয়ান ইবনু হারব, হারিস ইবনু হিশাম এবং কুরাইশের অন্যান্য লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার কওমের উপর কঠিন দুর্ভোগ এসেছে, আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন তিনি তাদের থেকে এ দুর্ভোগ দূর করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য দোয়া করলেন, ফলে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হলো, যমীন উর্বর হলো এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে এমন পরিমাণ খাদ্য পাঠালেন যা তাদের মক্কা পৌঁছানো পর্যন্ত যথেষ্ট হবে এবং বললেন, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, আমার পক্ষ থেকে নয়। [30]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার উদাহরণও রয়েছে। মক্কায় দুর্ভিক্ষের সময় শত্রু কুরায়েশদের জন্য দোয়া করেছেন এবং শস্য রফতানী শুরু করেছেন, যা আত্মীয়তার গুরুত্ব বোঝায়।

এই ঘটনাটি শেখায় যে, শত্রুতা থাকলেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে, যা আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিক।

৪. সন্তানের দায়িত্বসমূহ

জীবিতকালীন দায়িত্বসমূহে সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রথম। সন্তানকে মাতা-পিতার সাথে মধুর ভাষায় কথা বলতে হবে, ধমক না দিয়ে। এটি না শুধু ধর্মীয়, বরং মানসিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, একজন সন্তান যদি মাতা-পিতার কথায় নম্রতা দেখায়, তাহলে তা পারিবারিক শান্তি বজায় রাখে। যত্ন ও সেবা হলো বার্ধক্যে তাদের শারীরিক-মানসিক যত্ন নেওয়া। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, আর্থিক সহায়তা এবং ধর্মীয় নির্দেশ পালনও অন্তর্ভুক্ত।

মৃত্যুর পর দায়িত্বসমূহে দোয়া প্রথম, যা মাতা-পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা। সওয়াব রেসানি, আত্মীয়দের সম্মান, সাহায্য, ঋণ পরিশোধ, অসিয়ত পূর্ণ এবং কবর জিয়ারতও অন্তর্ভুক্ত। এই দায়িত্বসমূহ পালন করে সন্তান মাতা-পিতার স্মৃতি জীবিত রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ছাদাকায়ে জারিয়াহ যেমন মসজিদ নির্মাণ, যা স্থায়ী নেকী দেয় এবং পিতা-মাতার মর্যাদা বাড়ায়।

এই দায়িত্বসমূহ পালন করে সন্তান না শুধু ধর্মীয় সন্তুষ্টি লাভ করে, বরং সমাজে সম্মানিত হয়। মাতা-পিতার সেবা হলো জীবনের সার্থকতা এবং আখিরাতের পাথেয়। আধুনিক সমাজে যেখানে পারিবারিক দায়িত্ব অবহেলিত, এই তালিকা কার্যকরী পরিকল্পনা দেয়।

৫. শিরক এবং মুশরিক পিতা-মাতার ক্ষেত্রে করণীয়

কুরআন মজীদ এবং হাদিস শরীফে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্বকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু শিরকের ক্ষেত্রে স্পষ্ট সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। শিরক অর্থ আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করা, যা ইসলামের মৌলিক সীমালঙ্ঘন। কুরআন বলছে যে, মাতা-পিতা যদি সন্তানকে শিরকের দিকে ডাকেন, তাহলে তাদের আনুগত্য করা যাবে না, কিন্তু তাদের সাথে পার্থিব জীবনে সদাচরণ অব্যাহত রাখতে হবে। এটি ইসলামের সহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের অটুটতার প্রমাণ।

কুরআনের নির্দেশনা

সুরা লুকমান (৩১:১৫) আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন:

وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۖ وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا ۖ وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য চাপ দেয়, যার কোনো প্রমাণ তোমার কাছে নেই, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না এবং পার্থিব জীবনে তাদের সাথে সদাচরণ করো এবং যে আমার অভিমুখী হয়েছে, তার পথ অনুসরণ করো। অতঃপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার দিকেই। তখন আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [31]

হাদিসে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে:

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: تُلِيَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ﴿وَإِنْ جَاهَدَاكَ عَلَى أَنْ تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَمَرَنِي رَبِّي بِبِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَإِنْ كَانَا مُشْرِكَيْنِ فَلَا أَعُصِيهِمَا فِي غَيْرِ مَعْصِيَةِ اللَّهِ

অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল ‘আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এই আয়াত তিলাওয়াত করা হলো: ﴿যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে বাধ্য করে যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। কিন্তু দুনিয়াতে তাদের সাথে সদয় আচরণ করো। আর যে আমার দিকে ফিরে এসেছে তার পথ অনুসরণ করো। তারপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার কাছেই, তখন আমি তোমাদের জানাবো যা তোমরা করতে﴾—তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমার রব আমাকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন, তারা মুশরিক হলেও তাদের আনুগত্য করব না আল্লাহর অবাধ্যতায়, কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে তাদের অবাধ্য হব না। [32]

এই আয়াতটি স্পষ্ট করে যে, শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্য না করলেও সদাচরণ অব্যাহত রাখতে হবে। ইমাম কুরতুবী এর ব্যাখ্যায় বলেন, শিরক শুধু আল্লাহর সত্তায় শরীক করা নয়, বরং শরীয়ত বিরোধী আদেশও এর অন্তর্ভুক্ত। এটি সন্তানকে ধর্মীয় সত্যের প্রতি দৃঢ় থেকে পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করতে শেখায়।

সুরা আল-আনকাবুত (২৯:৮) আয়াতে একই নির্দেশ:

وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا ۖ وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا ۚ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের আদেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করার জন্য চাপ দেয়, যার কোনো প্রমাণ তোমার কাছে নেই, তাহলে তাদের আনুগত্য করো না। তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমার দিকেই। তখন আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে। [33]

এই আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, শিরকের ক্ষেত্রে আনুগত্য না করলেও সদাচরণ অব্যাহত রাখতে হবে। এটি ইসলামের সহিষ্ণুতা প্রমাণ করে এবং সন্তানকে ধর্মীয় সত্যের প্রতি দৃঢ় থেকে পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করতে শেখায়। আধুনিক সমাজে যেখানে ধর্মীয় সংঘাত সাধারণ, এই নির্দেশনা সমাধানের পথ দেখায়।

হাদিসের উদাহরণসমূহ

আসমা বিনতে আবু বকর (রা.)-এর ঘটনা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَتْ: قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَأَصِلُهَا؟ قَالَ: نَعَمْ صِلِي أُمَّكِ

অর্থাৎ, আসমা বিনতু আবী বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমার মা (কুরাইবা বিনতুল হারিস) মুশরিক অবস্থায় আমার কাছে এলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাঁর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করব? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করো। [34]

এই হাদিসটি দেখায় যে, মুশরিক মায়ের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে, যা ধর্মীয় সহিষ্ণুতার প্রমাণ। ইবনে হাজার বলেন, এই ঘটনা হুদাইবিয়া সন্ধি থেকে মক্কা বিজয়ের পূর্ববর্তী সময়ের, যা সন্তানকে ধর্মীয় সংঘাতে সদাচরণের শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় পার্থক্য থাকলেও পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করতে হবে।

আবু হুরায়রা (রা.)-এর মায়ের হেদায়াতের ঘটনা

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: كَانَتْ أُمِّي مُشْرِكَةً فَدَعَوْتُهَا إِلَى الْإِسْلَامِ فَأَبَتْ فَأَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمِّي فَدَعَا اللَّهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ فَخَرَجْتُ مُسْرِعًا أَبَشِّرُهَا فَسَمِعْتُ حِسَّ الْمَاءِ فِي الْبَابِ فَقَالَتْ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ تَوَارَ فَتَوَارَيْتُ فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَخِمَارَهَا ثُمَّ فَتَحَتِ الْبَابَ فَقَالَتْ: يَا أَبَا هُرَيْرَةَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فَرَجَعْتُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ خَيْرًا.

অর্থাৎ, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার মা মুশরিক ছিলেন, আমি তাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম কিন্তু তিনি অস্বীকার করেছিলেন, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন আমার মা হিদায়াত পান। তিনি দোয়া করলেন যেন আবু হুরায়রার মা হিদায়াত পান। আমি দ্রুত বেরিয়ে গেলাম তাকে সুসংবাদ দিতে, দরজায় পানির শব্দ শুনলাম, তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! পর্দা করো। আমি পর্দা করলাম। তিনি গোসল করলেন, দির‘আ (শার্ট) ও খিমার (ওড়না) পরলেন, তারপর দরজা খুলে বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে এসে তাঁকে জানালাম, তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং কল্যাণের কথা বললেন। [35]

এই হাদিসটি দেখায় যে, মুশরিক মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার এবং দোয়া সত্ত্বেও দাওয়াত দিতে হবে, কিন্তু জোর করে নয়। রাসূল (সা.)-এর দোয়ায় মায়ের হেদায়াত হয়, যা সন্তানকে ধৈর্যশীল হয়ে দোয়া করতে শেখায়। সদাচরণ এবং দোয়া দ্বারা ধর্মীয় সংঘাতের সমাধান সম্ভব।

এই হাদিসসমূহ থেকে খোলাসা করে বলা যায় যে, শিরকের ক্ষেত্রে মাতা-পিতার আনুগত্য না করলেও তাদের সাথে সদাচরণ, যত্ন এবং দোয়া অব্যাহত রাখতে হবে। মুশরিক পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ইসলামের সহিষ্ণুতার প্রমাণ এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে পারিবারিক ভালোবাসার ভারসাম্য রক্ষার উদাহরণ। আধুনিক সমাজে যেখানে ধর্মীয় পার্থক্য পারিবারিক বিচ্ছেদ ঘটায়, এই নির্দেশনাগুলো সমাধানের পথ দেখায় এবং ধর্মীয় সত্যের প্রতি দৃঢ় থেকে পারিবারিক দায়িত্ব পালন করতে উদ্বুদ্ধ করে।

উপসংহার

কুরআন ও হাদিসের আলোকে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ইসলামের মূল স্তম্ভ। এটি পালন করে সন্তান আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত লাভ এবং জীবিকা ও আয়ুতে বরকত লাভ করতে পারে। আধুনিক সমাজে এই মূল্যবোধের পুনরুজ্জীবন প্রয়োজন, যাতে পারিবারিক বন্ধন শক্তিশালী হয়। ভবিষ্যতে আরও গবেষণা হিসেবে আধুনিক পরিবারে এর প্রয়োগ নিয়ে কেস স্টাডি করা যেতে পারে। পিতা-মাতার সেবা হলো না শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব, বরং জীবনের সার্থকতা। হে আল্লাহ, আমাদেরকে মাতা-পিতার সেবায় সক্ষম করুন। আমীন।

রেফারেন্স

[1] সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত ২৩-২৫।
[2] -সুরা লুকমান, আয়াত ১৪-১৫।
[3] সুরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৮।
[4] সুরা আহকাফ, আয়াত ১৫।
[5] সুরা নিসা, আয়াত ৩৬।
[6] সুরা দাহর, আয়াত ১-২।
[7] সহীহ বুখারী, কিতাবু মাওয়াকীতিস সালাত, অধ্যায়: সময়মতো নামাযের ফযীলত, হাদীস: ৫২৭; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়: সবচেয়ে উত্তম আমলের বর্ণনা, হাদীস: ৮৫
[8] সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, অধ্যায়: কার সাথে সবচেয়ে ভালো আচরণ করা উচিত, হাদীস: ৫৯৭১; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাব, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এবং তারা সদ্ব্যবহারের সবচেয়ে হকদার, হাদীস: ২৫৫২।
[9] সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের সওয়াব, হাদীস: ৩১০৪; সুনানু ইবনি মাজাহ, কিতাবুয যুহদ, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার, হাদীস: ৩৬৬৪; আলবানী সহীহুন নাসাঈতে হাসান বলেছেন, হাদীস: ৩১০৪।
[10] সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল আদাব, অধ্যায়: পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের সাথে সদ্ব্যবহার, হাদীস: ৫১৪২; সুনানু ইবনি মাজাহ, কিতাবুল আদাব, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার, হাদীস: ৩৬৬৪; আলবানী সহীহ আবী দাঊদে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ৫১৪২।
[11] সুনানুন নাসাঈ আল-কুবরা, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের সওয়াব, হাদীস: ৩১০৪; তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হাদীস: ১২৮৩; আলবানী সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাসান বলেছেন, হাদীস: ২৪৮৫।
[12] সহীহ বুখারী, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সিয়ার, অধ্যায়: যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতার সাথে জিহাদ করে, হাদীস: ৩০০৪; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার জিহাদের চেয়ে উত্তম, হাদীস: ২৫৪৯।
[13] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাব, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এবং তারা সদ্ব্যবহারের সবচেয়ে হকদার, হাদীস: ২৫৫১।
[14] رواه البخاري في الأدب المفرد، كتاب الدعاء، باب من قال آمين، رقم: ٦٤٤ সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব: ১৬০৩, মুসনাদে আহমদ: হাদীস নং: ১৫০৭৮।
[15] সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ, অধ্যায়: পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস: ১৮৯৯; তিরমিযী বলেছেন: হাসান সহীহ; আলবানী সহীহ তিরমিযীতে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ১৮৯৯।
[16] সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুস সালাত, অধ্যায়: দোয়া সম্পর্কে, হাদীস: ১৫ৣ৬; সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুদ দা‘ওয়াত, অধ্যায়: মযলুমের দোয়া সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস: ৩৫৯৮; তিরমিযী বলেছেন: হাসান সহীহ; আলবানী সহীহ আবী দাঊদে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ১৫৩৬।
[17] সুনানুন নাসাঈ, কিতাবুন নিকাহ, অধ্যায়: সন্তানের উপর পিতার হক, হাদীস: ৩৬৬৬; সুনানু ইবনি মাজাহ, কিতাবুত তিজারাত, অধ্যায়: পিতার সন্তানের সম্পদ থেকে খাওয়া, হাদীস: ২২৯২; আলবানী সহীহ নাসাঈতে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ৩৬৬৬।
[18] সহীহ বুখারী, কিতাবুল বুয়ূ‘, অধ্যায়: ব্যক্তির উপার্জন ও নিজ হাতের কাজ, হাদীস: ২২৭২; সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যিকরি ওয়াদ দু‘আই ওয়াত তাওবাতি ওয়াল ইসতিগফার, অধ্যায়: সৎকর্মের ওসীলায় দোয়ার ফযীলত, হাদীস: ২৭৪৩।
[19] সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, অধ্যায়: পিতা-মাতার অবাধ্যতা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত, হাদীস: ৫৯৭৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, অধ্যায়: কবীরা গুনাহসমূহের বর্ণনা ও তার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি, হাদীস: ৮৭।
[20] সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুয যাকাত, অধ্যায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা সম্পর্কে, হাদীস: ১৬৯৪; সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ, অধ্যায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস: ১৯০৭; তিরমিযী বলেছেন: হাসান সহীহ; আলবানী সহীহ আবী দাঊদে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ১৬৯৪।
[21] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাব, অধ্যায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও তার ছিন্ন করা হারাম, হাদীস: ২৫৫৮।
[22] সহীহ বুখারী, কিতাবুল আদাব, অধ্যায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে রিযিক প্রশস্ত করা, হাদীস: ৫৯৮৫; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাব, অধ্যায়: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও তার ছিন্ন করা হারাম, হাদীস: ২৫৫৭।
[23] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ১০৫৩৬; তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হাদীস: ১৩৭৪; আলবানী সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীবে হাসান বলেছেন, হাদীস: ২৫৩২।
[24] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ওয়াসিয়্যাত, অধ্যায়: মৃত্যুর পর মানুষের জন্য কী কী সওয়াব পৌঁছায়, হাদীস: ১৬৩১; সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল ওয়াসায়া, অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে সদকা, হাদীস: ২৮৮০।
[25] আল-আদাবুল মুফরাদ, কিতাবুর রাহম, অধ্যায়: খালা মায়ের মতো, হাদীস: ৭৪; সুনানুত তিরমিযী, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাহ, অধ্যায়: খালার হক সম্পর্কে যা এসেছে, হাদীস: ১৯০৪; তিরমিযী বলেছেন: হাসান সহীহ; আলবানী সহীহুল আদাবিল মুফরাদে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ৫৮।
[26] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস সিলাতি ওয়াল আদাব, অধ্যায়: পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা, হাদীস: ২৫৫২।
[27] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, অধ্যায়: ন্যায়পরায়ণ ইমামের ফযীলত ও জালিমের শাস্তি, হাদীস: ১৮২৯; এটি একটি দীর্ঘ হাদীসের অংশ।
[28] সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাঁর মায়ের কবর জিয়ারতের জন্য রবের কাছে অনুমতি চাওয়া, হাদীস: ৯৭৬।
[29] মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ১৬৮৫৫; তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হাদীস: ৪৮৬; আলবানী সিলসিলাতুস সহীহাহতে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ২৭৯৩।
[30] সহীহ বুখারী, কিতাবুর রিকাক, অধ্যায়: অপচয় ছাড়া ধনী হওয়া পছন্দ করা, হাদীস: ৬৪৩৬; সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যুহদ ওয়ার রাকায়িক, অধ্যায়: কাফিরদের জন্য দোয়া করা, হাদীস: ৩০০৯।
[31] সুরা লুকমান, আয়াত ১৫।
[32] তাফসীরে তাবারী, সূরা লুকমান, আয়াত ১৫-এর তাফসীর, হাদীস: ২৫৯৬৯; আলবানী সিলসিলাতুস সহীহাহতে সহীহ বলেছেন, হাদীস: ২৭১৫।
[33] সুরা আল-আনকাবুত, আয়াত ৮।
[34] সহীহ বুখারী, কিতাবুল হিবাহ, অধ্যায়: পুরুষ কি তার মাকে বলবে তোমার সম্পদ থেকে আমাকে দাও, হাদীস: ২৬২০; সহীহ মুসলিম, কিতাবুয যাকাত, অধ্যায়: মুশরিক পিতা-মাতার সাথে সম্পর্ক রক্ষা, হাদীস: ১০০৩।
[35] সহীহ মুসলিম, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবাহ, অধ্যায়: আবু হুরায়রা (রা.)-এর ফযীলতসমূহ, হাদীস: ২৪৯২।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: এই দেশ শান্তির দেশ। এই শান্তির দেশে জামাত শিবিরের কোনো স্থান নেই।

১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১০

নতুন নকিব বলেছেন:



আপনার মাথা ঠিক আছে তো? কমন সেন্সটাও হারিয়ে ফেলেছেন?

এটা জামায়াত শিবির নিয়ে আলোচনার পোস্ট নহে। এখানে কেন অহেতুক প্রসঙ্গ তুলছেন???

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২১

রাজীব নুর বলেছেন: মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য লিখো।

এই টাইপ প্রশ্ন আসে ক্লাশ এইট, নাইনে।
আপনি এসব ব্লগে আনছেন কেন?

১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৫

নতুন নকিব বলেছেন:



মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য কি এইট নাইন পর্যন্তই? এর পরে আর থাকে না? যদি থাকে, তাহলে আপনার প্রশ্নটা একটা আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই না।

আর ব্লগে মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব কর্তব্যের মত মানবিক মূল্যবোধের বিষয় আলোচনা হবে না তো কী হবে? আপনার মতামত দেন। সমাজে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আপনি খুশি হন?

ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৩

আলামিন১০৪ বলেছেন: এরকম রেফারেন্সসহ আরো পোস্ট করুন।

৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: সত্যি কথা বলতে কী, ব্লগের মতো জায়গায়, যেখানে সব ম্যাচিউর মানুষজন আসে, সেখানে মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য জাতীয় রচনা প্রকাশ করা হাস্যকরই লাগে। এক্ষেত্রে আমি রাজীব নূরের দ্বিতীয় মন্তব্যের সাথে একমত না হয়ে পারছি না।

৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০১

আমি নই বলেছেন: @হাসান মাহবুব ভাই, আজব ব্যপার হল ম্যাচিউর মানুষজনই মা-বাবা কে সবচাইতে বেশি অবহেলা করে, কষ্ট দেয়, ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেনা। যেই সময়টা মা-বাবার সন্তানকে সবচাইতে বেশি প্রয়োজন সেই সময়টাতে ম্যাচিউর মানুষরাই সময় দেয় না। সুতরাং আমার মনে হয় এই জাতীয় পোষ্টের দরকার আছে, সো কল্ড ম্যাচিউর মানুষজনকে তাদের দায়িত্ব মনে করে দেয়ার জন্য হলেও এই জাতীয় পোষ্টের দরকার আছে।

৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: এইসব বয়ান শুনে কেউ বদলাবে না। কেউ পুরোটা পড়বেও না। সত্যি করে বলেন তো, আপনি পুরোটা পড়েছেন? নতুন নকিব তার বাবা-মার সম্পর্কে কোনো স্মৃতি লিখতে পারতেন। এমন কিছু লিখতে পারতেন, যেটা ইমোশনকে টাচ করে। এমন কিছু লিখতে পারতেন, যেটা তিনি নিজে করেছেন। সেইটা অনেক শক্তিশালী কন্টেন্ট হতো। @আমি নই

৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮

আমি নই বলেছেন: @হাসান মাহবুব ভাই, আপনি স্পেসিফিক্যালি এই টাইপের লেখা প্রকাশের সাথে একমত নাও হতে পারেন কিন্তু আপনি বলেছেন "যেখানে সব ম্যাচিউর মানুষজন আসে, সেখানে মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য জাতীয় রচনা প্রকাশ করা হাস্যকরই লাগে।" তাই আমি বলেছি প্রয়োজন আছে। হ্যা সেটা হতে পারে স্মৃতি কথাও, কিন্তু দরকার আছে। আমার মনে হয় বাবা-মার প্রতি অবহেলা এখন মারাত্বক পর্যায়ে চলে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.