নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ছাত্র, যিনি শেখার মাঝেই আনন্দ খুঁজে পান

ইনজামাম ঊল হক নাভীন

নিজেকে নিয়ে কিছুই জানি না!

ইনজামাম ঊল হক নাভীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্মদিন

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

সাদমান সেই ভোর থেকে বাসার কাছে একটা বিলের পাশে বসে আছে। দুই একটা বক আর কাক ছাড়া দেখার কিছু নেই এখানে তাও সে বসে আছে। খিদেয় তার নাড়ি ভুড়ি উল্টে আসছে। কিন্তু কিছু করার নেই। সে বাসায় যেতে পারবে না। বাসার কাছাকাছিও যেতে পারবে না। এতক্ষনে সুমন দেলোয়ার সবাই নিশ্চয় ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাসার আশেপাশে গেলেই ধরে ফেলবে। আজ তার জন্মদিন। সবাইকে খাওয়ানোর কথা ছিল দেওয়ান বাবুর রেস্তোরায়। কিন্তু সে টাকা যোগাড় করতে পারে নি। সাদমান পিকআপ চালায়। বাবার পেনশনের টাকা আর মায়ের শিক্ষকতার টাকা ঘর ভাড়াতেই চলে যায়। চাইলেও এরচে খারাপ বাসা ভাড়া নিতে পারে না সাদমানের মা। সাদমানের বোন টা এবার এস এস সি পরীক্ষা দেবে। তার নিরাপত্তার ব্যাপার আছে। সাদমানের পিকআপ চালানোর ব্যাপারটা তার বন্ধুরা জানে না। তার বলতে ইচ্ছা হয়নি কখনো। সে তো আর সাধ করে পিকআপ চালায় না। একটু ভালোভাবে জীবন যাপনের জন্য সে বাধ্য হয়ে এটা করে। মাকেও বলে নি কখনো। মাকে মাসের শেষে টাকা দিয়ে বলে "নাও মা। এই মাসের টিউশোনি করে যা পেয়েছি তার অর্ধেক, বাকী টা আমার খরচ।"

মাকে মিথ্যা বলতে তার খারাপ লাগে তাও বলতে হয়। সে মাকে কষ্ট দিতে পারবে না। টিউশোনি নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে। চাইলেও টিউশোনি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই পেশায় সে। সাদমান আর ভাবতে পারছে না। সে উঠে দাঁড়ালো। ছোট ছোট বাচ্চারা বিলের চরে ক্রিকেট খেলছে। সেও একসময় খেলত। তখন সাদমানরা সিলেটে থাকত। বাবা প্রতিদিন নানারকম স্টিকার আনত স্কুল থেকে ফেরার সময়। বাবার ছাত্র গুলো ৩ টার আগেই পড়তে চলে আসত। ঐ সময়টাতে সাদমান ওদের সাথে ক্রিকেট খেলত। মাঝে মাঝে বাবাও খেলত। একদিন ৩ টা বেজে যাচ্ছে বাবার কোন আসার খবর নাই। ৫ টার দিকে কিছু পুলিশ এসে বাবাকে রেখে গেল।

বাবা ঘুমাচ্ছিল। অনেকক্ষন ডাকলাম বাবাকে

"আব্বু? আব্বু? এই আব্বু! " বাবা উঠলো না।

সাদমান দেখল মা একদিকে পড়ে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে শীতল চোখে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিল না সাদমান। অনেক সাংবাদিক তার মায়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিল।

পরদিন খবরের কাগজে সাদমান দেখল , পুলিশের গুলিতে অমুকদল নেতা নিহত। পাশে বাবার ছবি। মা এই খবর পড়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। তার স্বামীকে তিনি কোনদিন রাজনীতি করতে দেখেন নি। এসব কি লিখল তাহলে? আরো কিছু পত্রিকায় লিখল দু পক্ষের সংঘর্ষে ২ জন পথচারী নিহত তবে এদের নিজেদের কর্মী বলে দাবী করছে উভয় পক্ষ। এইসব খবর দেখে আত্মীয়রা সবাই সটকে পড়ল।

এরপর থেকে তারা চট্টগ্রামে থাকে। সাদমানের নিজের ওপর রাগ হল। এসব কি চিন্তা করছে সে। চিন্তা করে কি লাভ। বিলের তীর ঘেঁষে হাটতে শুরু করল সে। আজ ৪ দিন ধরে পিকআপ চালাতে পারছে না সে। এই হরতালে কোন মালিকই গাড়ি বের করতে দেবে না। কেন যে ক্লাসে সে সবাইকে বলতে গেল জন্মদিনে খাওয়াবে ! তার ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজে ছিড়তে। পিকআপ ড্রাইভারের আবার জন্মদিন। এই কয়েকদিন ভার্সিটি ছুটি ছিল। গাড়ি চালাতে পারলে আজ তার দিনটা কত সুন্দর হত। সবাইকে নিয়ে আনন্দ করে কিছু সময়ের জন্য ভুলে যেত তার জীবনের ক্লান্তি মাখা স্মৃতিগুলো। যোহরের আজান হচ্ছে। বিল ছেড়ে রাস্তায় উঠল সাদমান। ব্যস্ত শহর দেখার মধ্যে আনন্দ আছে। কিন্তু এখন রাস্তায় কোন ব্যস্ততা নেই। পুলিশের গাড়ি আর কয়েকটা রিকশা। মাটি কাটার কোদাল নিয়ে কিছু মানুষ হতাশ ভঙ্গিতে রাস্তায় শুয়ে আছে। কে কাজ দেবে ওদের? কয়েকজন এসে ওদেরকে ককটেল মারার জন্য সওদা করতে লাগল। একজন ছাড়া কেউ রাজি হল না। কি আশ্চর্য! এত্তগুলো সত্‍ মানুষ দিয়ে কি করবে এই দেশ? সবাই অসত্‍ হয়ে যায় না কেন! সাদমান কোন উত্তর খুঁজে পায় না। পকেটে ১৬৮ টাকা আছে। আর খিদে সহ্য করতে পারছে না সে।হোটেলেঢুকে পড়ল সাদমান।





"আন্টি আমার মনে হয় সাদমান প্রেম ট্রেম করে। নইলে প্রতি জন্মদিনে এভাবে গায়েব হবে কেন সারাদিনের জন্য? "

সাদমানের মা হাসে।

"আস বাবারা। সারাদিন তো অপেক্ষা করলে। এবার কিছু মুখে দাও। আচ্ছা সুমন, সাদমান কি ঠিকভাবে পড়াশোনা করছে? ছেলেটা অনেক কষ্টে থাকে। পড়ার সময় পায় না"

"পড়ার সময় পায় না তাতেই আমাদের চেয়ে ১০/২০ নম্বর এগিয়ে থাকে আপনার ছেলে! সময় পেলে কি করবে আন্টি?"

সাদমানের মা প্রশান্তির হাসি দিলেন। দেলোয়ার বলল, "মাইশা কোথায় আন্টি? এখন পর্যন্ত দেখলাম না ঘরে! "

"ও এখনো স্কুল থেকে আসেনি বাবা। একটু পরেই আসবে।"

"ওকে আজ অংক দেখিয়ে দেয়ার কথা ছিল। সাদমান বলে রেখেছিল আমাকে। স্কুল থেকে এসেই কিভাবে অংক করবে ও? আমি বরং কাল আসি আন্টি। এখন আমরা উঠব। গাঁধাটাকে খুঁজে পাই কিনা দেখি"

"খাওয়া মাত্রই উঠে যাবা? হায়রে খাদক! নাম দেলোয়ার, শয়নে স্বপনে খাবার! " সুমন বলল।

মাইশা সদর দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হো হো করে হেসে উঠল।



"ওই যে এসে গেছে তোর ফাঁকিবাজ ছাত্রী"

"সুমন ভাইয়া আমি ফাঁকিবাজ না" মাইশার ফর্সা মুখ লাল হয়ে উঠল।

"সেকি মাইশা! তোর মুখে আপেল কে এঁকে দিল!" মাইশা মুখ ভেঙচিয়ে ভেতরে চলে গেল।

সুমন আর দেলোয়ার সাদমানের বাসা থেকে চলে গেল টাইগারপাসের পাহাড়ের ওপরে। মন খারাপ থাকলে সাদমান এখানে আসে। নাহ্ এখানেও নাই গাঁধাটা। গেল কোথায়? সুমন আর দেলোয়ার পাহাড়ের ওপর বসে ফেসবুকের ভেতরে হারিয়ে গেল।





সাদমান বেড়িবাধে চলে এসেছে ঘুরতে ঘুরতে। সমুদ্রের আওয়াজ দিনের বেলা এত খারাপ শোনায় কেন সে ভেবে পায় না। চারিদিকে কেউ নেই। সাদমানের ভালই লাগছে এখানে একা একা। সমুদ্রের তীর থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সামনে তীর থেকে অনেক মাটিই চুরি গেছে। কারো কিছু বলার নেই। কয়টা বাজে জানা দরকার। বিকেলে একবার যাবে পিকআপের গ্যারেজে। কাল গাড়ি বের করতে দেবে কিনা জেনে আসা দরকার।

"কেমন আছ সাদমান?" সাদমান চমকে পেছনে তাকাল। তাদের ক্লাসের সুবর্ণা দাঁড়িয়ে আছে। সাথে একটা ধবধবে সাদা গাড়ি। গাড়ির ভেতর কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তার মানে সেই চালিয়ে এনেছে।

"কি হল কথা বলছ না কেন?" বলে সূবর্ণা হাসল।

ধনী পরিবারের মেয়েরাও এত সুন্দর করে হাসতে পারে এটা সাদমান জানত না।

"হ্যা ভাল আছি। তুমি কেমন আছ? হরতালে গাড়ি নিয়ে বের হলে কেন?"

"বাসায় ভাল লাগছিল না তাই। আর বাবা দেশে নেই। এজন্য সুযোগ বুঝে বের হয়ে গেলাম" বলতে বলতে সুবর্ণা অনায়াসে বেড়িবাধের ঢালু অংশে ঘাসের ওপর বসে গেল। সূবর্ণা সাদমানের সহপাঠী মাত্র। এভাবে পাশে বসাতে সুমন একটু বিব্রত বোধ করল।

"তুমি কি এখানে প্রায়ই আস?" সুবর্ণা জিজ্ঞেস করল।

"মাঝে মধ্যে আসা হয়। তুমি?"

"আমি তো আজ প্রথম আসলাম।"

"ও" কিছুক্ষন চুপ থেকে সূবর্ণা বলল , "তুমি পিকআপ চালাও কেন? এত ভাল ছাত্র , টিউশোনি করালেই পার"

সাদমানের রক্তশূন্য মুখে বলল, "টিউশোনি পেতে হলে এখন দালাল দের টাকা দিতে হয়। টিউটর কোম্পানী ছাড়া টিউশোনি দেয় না কেউ"

সুবর্ণা বলল, "আমি তোমাকে সেদিন হালিশহরে একটা ওষুধের গাড়ি চালাতে দেখেছিলাম। সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম যা বোঝার।"

সাদমান চুপ করে রইল। এই মেয়েকে সাদমানের খুব পছন্দ হয়েছিল প্রথম বর্ষে থাকতেই। মনে মনে ঠিক করে রেখেছিল জীবনে কিছু করতে পারলে ওর বাসায় প্রস্তাবই পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু এত বিত্তবান দেখে সেই স্বপ্ন সে বাদ দিয়েছিল। আজ এই মেয়ে তার পাশে বসে আছে। সৃষ্টিকর্তা কি তার জন্য এটা জন্মদিনের উপহার পাঠালো? নাকি কোন নতুন বিপদ পাঠালো? আবেগের চেয়ে বড় বিপদ আর কি হতে পারে?

সূবর্ণা বলল, "সাদমান চল।"

"কোথায়?"

"আমাকে বাসায় পৌছে দেবে। আমি ফিরে যাওয়ার রাস্তা ভুলে গেছি" সাদমান কি করবে বুঝতে পারছে না। একটা মেয়ে সাহায্য চাইছে। তাকে তো না করা যায় না। সাদমান অনিচ্ছার সাথে গাড়িতে উঠে বসল। সন্ধ্যা নেমে আসছে। তার গ্যারেজে যাওয়া হল না। এসব কি হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না।

"আচ্ছা সাদমান তুমি কি আমার ছোট ভাইকে পড়াতে পারবে? গণিত আর ইংরেজী।"

"আমি কারো দয়া পছন্দ করি না। দুঃখিত। তাছাড়া পিকআপ চালাতে আমার কোন সমস্যা নেই।"

"সমস্যা না থাকলে কাউকে কিছু বল নি কেন? কেন লুকিয়েছ?"

"গাড়ি থামাও"

"থামাব না"

"তুমি এমন কেন করছ আমার সাথে? কি চাও তুমি? প্লিজ গাড়ি থামাও"

"আমি তোমাকে ভালবাসি সাদমান। আমি তোমার সব খবর নিয়েই এসেছি। শুভ জন্মদিন সাদমান"

সাদমান শীতল চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকাল পৃথিবীর কোন কিছুই তাকে বিচলিত বা বিস্মিত করে না।





"তোর ভাইকে একটা ফোন করে দ্যাখ মরে গেছে নাকি এখনো আছে।"

"ভাইয়া তো মোবাইল নেয় নি আম্মু" সাদমানের মা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ভাইয়ের মরার কথা বলার পরেও সে কোন প্রতিবাদ করল না কেন!

"মাইশা তোমাকে একটা কথা বলা প্রয়োজন। তুমি তো জান আমাদের ঘরের কি অবস্হা। এই অবস্হার পরেও তোমার জন্য এত কম বয়সেই অনেক ভাল প্রস্তাব আসছে। ঘরের এই অবস্হায় যদি আমি তোমার বিয়ের চিন্তা করি তাহলে কি খারাপ হবে?"

"না মা। আমি রাজি আছি। এস এস সি পরীক্ষাটা দিয়ে নেই?"

সাদমানের মা কিছু না বলে অন্য রুমে চলে গেল। তার স্বামীর ছবির দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে রইল। নিজের অজান্তেই তিনি বলেলেন, "এত লক্ষী ছেলে মেয়েগুলোকে ফেলে আপনি কোথায় গেলেন? আমার কোন স্বপ্ন কি পূরণ হবে না? কেন চলে গেলেন আপনি? কি দোষ ছিল আমাদের?"

মাইশা সব দেখল অন্য রুম থেকে। কাঁদতে কাঁদতেই সে ভাবতে লাগল তার মা কি কোনদিন হাসবে না?





"সুমন , রাত তো হয়ে যাচ্ছে। চল বাসায় চলে যায়। সাদমানের সময় হলেই ও ফিরে আসবে। আমাদের এত ঘুরে ফিরে লাভ নেই। "

"হু। ওকে বার্থডে উইশটাও করা হল না। ও যে কোথায় চলে যায় বুঝলাম না মাঝে মাঝে। জিজ্ঞেস করলেও বলে না কিছু"

"বাদ দে। রাগ লাগছে আমার। আমি চললাম"

দেলোয়ার হনহন করে নিচে নেমে গেল। সুমন সিগারেট ধরাল। সাদমানের সামনে সিগারেট খাওয়া অসম্ভব। এখন ইচ্ছেমত খাওয়া যাবে। সিগারেট খেতে খেতেই পাহাড় থেকে নিচে নামছিল সে। সাদমানকে দূর থেকেই চেনা যায়। এখনও চেনা গেল। সিগারেট ফেলে দিল। মনে মনে দুঃখও পেল সিগারেট টার জন্য। পুরোটা শেষ করা গেল না।

"শুভ জন্মদিন সাদমান ভাইয়া।"

"থ্যাংক্যু দোস্ত। এত রাতে এখানে কি?"

"জানি না।"

"রাগ করছিস নাকি"

"রাগ করব কেন? তোর প্রেমিকা আমি?" সাদমান হাসল। সুমন তার ছোটবেলার বন্ধু। সবচে কাছের একজন মানুষ যে সাদমানকে বুঝতে চায়। কিন্তু সাদমান চায় না কেউ তাকে বুঝুক। যার যার কষ্ট তার কাছে। সুখ বাটতে ভাল লাগে। কষ্ট না। সুখের একটা ঘটনা আজ ঘটেছে বটে। এটা ওকে বললে ক্যামন হয়? না থাক। এটা ঠিক সুখ কিনা সাদমান এখনো বুঝতে পারছে না। গাড়ি থেকে নামার সময় সুবর্ণা ক্যামন করে যেন তাকিয়ে ছিল। অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল। সুমন কোন জবাব না দিয়েই চলে এসেছে। আপাতত সে এই চোখ দুটোর স্মৃতি নিয়ে বাঁচতে চায়।





"সাদমান"

"জ্বি মা"

"পড়াশোনা ক্যামন চলছে তোর?"

"ভালো মা"

"শোন তোকে তো একটা কথা বলা হয়নি। আমার এক কলিগ খুব ভালো একটা প্রস্তাব এনেছে আমাদের মাইশার জন্য। ছেলে চুয়েট থেকে পাশ করা। এ বছরই চাকরি তে ঢুকল। "

সাদমান বিস্ফোরিত চোখে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে রইল। সাদমানের মা এর আগে কখনো তাকে এভাবে তাকাতে দেখে নি।

"তুমি মাইশা কে বিয়ে দিয়ে দিতে চাও মা? তুমি কি সুস্হ মনে ভেবে চিন্তে কথা বলছ?"

"হ্যা সাদমান। মাইশাও রাজি আছে। টাকা যা জমা আছে তোর বাবার পেনশন একাউন্টে, তা দিয়ে বিয়ে টা হয়ে যাবে। আমি ওকে অনিশ্চয়তায় রেখে যেতে পারব না।"

সাদমান অবিশ্বাস্য চোখে তার মায়ের কথা শুনছে। তার নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না।

"তুই ওর বড় ভাই। তোকে জানানো প্রয়োজন তাই জানালাম। বুয়েটে টিকার পরেও যে ছেলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়ে তাকে আমার কিছুই বলার নেই"

"মা তুমি আমাকে বলেছ আমার যা ভালো লাগে তা নিয়ে পড়তে। আমি এখন ফোর্থ ইয়ারে। এতদিন তো এসব কিছু বল নি"

"এতদিন বলি নি আজ বলছি। বিয়েতে মাইশার মত আছে। সুতরাং আমি আর দেরী করতে চায় না। আক্দ টা করিয়ে রাখতে চাই। পরীক্ষার পর বিয়ে। ছেলে পক্ষ পরশু ওকে দেখতে আসবে"

সাদমান চুপ করে রইল। জীবনে প্রথম অপমানিত বোধ করল সে। ঠিক সেই সময়েই বাইরে বৃষ্টি নামল। ছাদে কাপড় আনতে দৌড় দিল সাদমান। বৃষ্টিতে সাদমানের কান্না কেউ দেখতে পেল না।





"নাম কি তোমার মা?"

"মাইশা"

"ভারী মিষ্টি নাম"

মাইশাকে দেখতে যারা এসেছে তারা নানারকম প্রশ্ন করে যাচ্ছিল। এমন সময় সাদমান বাসায় ফিরছিল। বাসার সামনে পুলিশ দেখে সে একটু ভয় পেয়ে গেল। পুলিশকে সে ছোটবেলা থেকেই ভয় পায়। বাসায় ঢোকার পর সে জানতে পারল মাইশার জন্য যে ছেলে ঠিক করা হয়েছে তার বাবা পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ছেলেটার বাবাও এসেছে সাথে এজন্য বাইরে পুলিশ। সাদমানের মা সাদমানকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সাদমান ঝিম ধরে তাদের সামনে বসে রইল বাধ্য শিশুর মত। ছেলেটির বাবা হঠাত্‍ বলল,

"সবই ঠিক আছে। কিন্তু মেয়ের বাপকে নিয়ে তো আমি কনফিউজড। বাপ ছাড়া মেয়েকে মন্ত্রীর ছেলে কিভাবে বিয়ে করবে!" বলেই হাসতে লাগলো লোকটা। সাদমানের মায়ের কলিগ টা পরিস্হিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করল।

"দেখেন দুলাভাই। আমাদের হানিফের জন্য সুন্দরী মেয়ে চায়। আর কিছু তো না। তাই না? আমরা বরং মেয়েটাকে দেখি? এমন মেয়ে কি বাংলাদেশে আছে আরেকটা?" ব্যঙ্গাত্বক ভাবে ছেলের বাবা বলল, "তাআআ ঠিক। দেখ ছেলে কি বলে। ও রাজি থাকলে আজই কথা পাকা হবে" সাদমানের মা বিনয়ের সাথে ছেলেকে জিজ্ঞেস করল "বাবা হানিফ? তোমার কি আপত্তি আছে?" সে লজ্জিত হাসিতে ডানে বামে মাথা ঝাকালো। সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠল। সাদমান পুরোটা সময় জুড়েই মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছিল শান্ত চোখে। হঠাত্‍ সে বলল

"ওই শালা ফারুইক্কা। ওঠ চেয়ার থেকে" মন্ত্রীর নাম ওমর ফারুক। সবাই বড়সর ধাক্কা খেল সাদমানের এমন কথা শুনে।

"ওই তুই উঠবি নাকি যা যা ভিডিও করলাম সব সাংবাদিকদের দিয়া দিব? আঠারো বছরের কম বয়সী মাইয়া নিজের পোলার জন্য ঠিক করস আবার বাপ কে নিয়া কনফিউশন মারাস? ওঠ"

সাদমান যেখানে ছিল সেখানে বসেই এগুলো বলল। মন্ত্রী বেচারা এমন ধাক্কা খেল যে সেদিন রাতেই তার প্রেসার লো হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। সুমন দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সাদমানের সব কান্ড দেখছিল। আজ প্রথম সে আবিষ্কার করল সে মাইশা কে ভালবেসে ফেলেছে। ছি! এটা কি হল !





৫ বছর পর_

আজ ৬ই মে। সাদমানের জন্মদিন। ভাগ্য ভাল আজ সরকারি ছুটি এবং সাদমান দেশে। সাদমান এখন পররাষ্ট্র সচিব। বি সি এস পরীক্ষায় সে সারাদেশে প্রথম হয়ে এই স্হানে এসেছে। সাদমানের বুয়েটে পড়া বন্ধুরা বেশ দামী গাড়ি নিয়ে ঘোরে , সম্মানও আছে। সাদমান ঘোরে প্লেনে আর হ্যালিকপ্টারে। যখন গাড়ি তে থাকে আগে পিছে থাকে পুলিশ। অথচ সে বাংলা নিয়ে পড়া এক সাধারণ ছাত্র। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওমর ফারুক এবার মন্ত্রী হতে পারেন নি। ভাগ্য ভাল মন্ত্রী হতে পারেন নি। নইলে তো সাদমানের কথায় উঠতে হত আর বসতে হত! মাইশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সুমন বাংলা একাডেমীর নবনির্বাচিত মহাপরিচালক। মাইশার মা সুমনকে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে তার মাইশার জন্য। মাইশা মাকে নিয়ে প্রতিদিন শপিংয়ে যায়। মা এখন প্রাণ খুলে হাসে। মাইশা মন ভরে মায়ের হাসি দেখে। সাদমান ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল।

বিলটার পারে গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু ওটা আর নেই। বেদখল হয়ে গেছে।

পেছন থেকে সুবর্ণা জড়িয়ে ধরল সাদমানকে।

"শুভ জন্মদিন রোবট"

"আমি মোটেও রোবট না"

"তাহলে কি?"

সাদমান হাসল।

সুবর্ণা ওকে ছেড়ে দিল। বারান্দার টবগুলোতে পানি দিতে লাগল



সাদমান ডাকল ,

"সুবর্ণা?"

"কি?"

"আমি তোমাকে ভালবাসি।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৩২

স্বপনচারিণী বলেছেন: খুব ভাল গল্প। মন ভাল করা গল্প। ইস! সব কিছুরই যদি এমন হ্যাপি এন্ডিং হতো!

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৭

ইনজামাম ঊল হক নাভীন বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নচারিণী। সবারই হ্যাপি এন্ডিং আসতে পারে। সব নিজের ওপর ডিপেন্ড করে। চাইলেই পারবেন

২| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:১১

েফরারী এই মনটা আমার বলেছেন: মারহাবা-মারহাবা!
আহ্‌লান-সাহ্‌লান
তব তাশরীফান!!
ইয়া রাসুলুল্লাহ্‌
ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম!!
আসমান-জমীনে সবাই বলে
আজকে সবচেয়ে খুশির(ঈদের) দিন ,
এই ধরাতে তাশরীফ এনেছেন
যিনি রহ্‌মাতুল্লিল আ'লামিন ।।
আজ মহাসন্মানিত ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ ।
এই দিনে কুল মাখলুকাতের যিনি সর্বশ্রেষ্ঠা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র কোল মুবারকে তাশরীফ এনেছেন যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন ,ইমামুল মুরসালীন ,রাহ্‌মাতুল্লিল আ'লামিন ,রউফুর রহীম,নুরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ্ হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
Click This Link

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

ইনজামাম ঊল হক নাভীন বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নচারিণী। সবারই হ্যাপি এন্ডিং আসতে পারে। সব নিজের ওপর ডিপেন্ড করে। চাইলেই পারবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.