নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নাজিয়া লিসা

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই .......

নাজিয়া লিসা › বিস্তারিত পোস্টঃ

... আমি এবং ... ... ...

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৪

(১)

আমি বরাবরই নিশাচর প্রাণী। সূর্যাস্ত থেকে দিন শুরু হয়, সূর্যোদয়ে ঘুমাতে যাই। সেই আমারই মাঝরাতে ঘুম আসবেনা এটাই স্বাভাবিক।

আমি আমার লাগোয়া বারান্দাতে এসে দাঁড়ালাম। শীত আসি আসি করছে। বাতাসে তার মৃদু কুয়াশামাখা আবেশ। আশে-পাশের কোথাও থেকে চমৎকার ফুলের গন্ধ আসছে। ফুলের গন্ধ ছাপিয়ে আরও কড়া, মাদকতাময় একটা গন্ধ পেলাম। বুঝতে পারলাম, একা নই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে কিছু না বলে নির্বিকারভাবে বাতাস এড়িয়ে তামাক শলাকাতে আগুন ধরালাম।

স্বয়ং শয়তান বসে আছে পাশেই। শিং, লেজ সহ নয়। দিব্যি মানুষ আকৃতিতে। ভয় এবং অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার। কিন্তু, আমার কাছে এটা নতুন কিছু না। বরং প্রায়ই যখন শয়তানকে চুপ করে বসে থাকতে দেখি, খুব একটা আশ্চর্য হইনা। সদাসর্বদা চঞ্চল চতুর শয়তানকে যখন এভাবে দেখি, দৃশ্যটার মধ্যে একটা গাঢ় বিষণ্ণতা আমাকে নাড়া দেয়।

কেউ যদি ভাবে শয়তানের দুঃখবোধ নেই, তারা বিশাল ভুল করবে। রাগ, দুঃখ, অপমান, হিংসা, ক্রোধ, জেদ ইত্যাদির শুরু তো আসলে শয়তান থেকেই। তার পূর্ববর্তী ফেরেশতাকুল তো বোধশক্তিহীন যন্ত্র ছাড়া তো আর কিছু ছিল না। তাই শয়তানের এইসব অনুভুতি কে শ্রদ্ধাই করি।
বুদ্ধিমান এবং বাকপটু বলে তার সাথে কথোপকথন বেশ আকর্ষণীয়।

"পারলে না, তাইনা?"- একটু গলা পরিস্কার করে শয়তান বলে উঠে।

প্রশ্নটা শুনে কেনজানি ভারি ক্লান্ত লাগতে থাকলো। শূন্য দৃষ্টিতে বললাম, "নাহ। পারলাম না।... ... আবারও ... ...।”

উত্তর শুনে আনন্দিত না হয়ে বরং আর একটু বিষণ্ণ হয়ে গেলো সে।
জানি, ব্যাপারটা মেকি কিন্তু তারপরও মাঝরাতে নিঃসঙ্গ আমার তাকে বন্ধুভাবাপন্নই মনে হল।

"তুমি সব জানো, তারপরও কেন চেষ্টা কর বারবার?" -- বলে উঠলো শয়তান।

মনে হল, বহু বছর ধরে আমি একাকী একটা দ্বীপের তীরে দাঁড়িয়ে জাহাজের অপেক্ষা করছি।

ফিসফিস করে উঠলো শয়তান, চিরচেনা কামুক স্বরে, "এর চেয়ে যা বলি, তা শুনো। আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি চাইলে কালই অনেক কিছু হয়ে যাবে তোমার। শুধু তুমি একটু চাও।”

না হেসে পারলাম না।
“তুমি আমাকে ভালোবাসো?? ভালবাসতে জানো তুমি আসলে সত্যি?? তুমি ভালোবাসো বলেই হয়তো ঈশ্বর আমাকে ধরা দেন না।”

শয়তান গ্রাহ্য করেনা আমার উপহাস। মুহূর্তে সে অনিন্দ্য সুন্দর এক কিশোরে রূপান্তরিত হয়। পায়ের কাছে এসে আবার সুরেলা কণ্ঠে বলে উঠে, "একবার চাও আমার কাছে। অর্থ, ক্ষমতা, অথবা শরীর। পানশালা গুলো এখনও খোলা। কত মানুষ এখনও তোমাকে কাছে পেতে চায়। এইসব সোজা-সাপটা নীতিবাক্য দিয়ে কিছুই করতে পারবে না।”

উদাস ভাবে ধোঁয়া ছাড়ি। শয়তানের কথা কানে আসেনা। অনিমেষের কথা মনে পরে। নিপাট ভদ্রমানুষ মুখটার পিছনে ঝকঝকে শ্বদন্ত দেখে ফেলেছিলাম, যা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারবেনা। অথবা, অ আ ক খ ...কত শত নাম। কামুক, ক্রোধী, লোভী, মাতাল, রাগী, দুঃখী, হিংসুক, জেদি … হাজার টা মুখ। সবই দেখা শেষ আমার। সঅব সব...

পাশে তাকাই। শূন্য চেয়ার। শয়তান চলে গিয়েছে। আপনমনেই হেসে বারান্দার রেলিং ধরে ঝুঁকে দাঁড়াই।

"এই যে, এতো বেশি ঝুঁকো না। পরে যাবে।"
-- রুদ্রর কণ্ঠ ... ... … হা ঈশ্বর !!!

চকিতে বুঝলাম সব শয়তানের ছলনা, তাও শরীরের সকল স্নায়ু টানটান হয়ে পাথর হয়ে যাই মুহূর্তেই। বারান্দার আরেক মাথায় রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। সেই চিরচেনা দীর্ঘকায় শরীর, এলোমেলো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ, মৃদু হাসিমুখ।

শ্বাস বন্ধ হয়ে এলো প্রায়। বিড়বিড় করে বললাম, "চলে যাও, শয়তান। আমাকে ভাঙতে চাইছ কেন এভাবে?"
বহুদিন পরে চোখ ভরে গেলো জলে।

(২)

ব্যাপারটার শুরু হয়েছে এই প্রায় বছরখানেক হয়ে গেল।

ভয়ংকর দুঃসময় চলছে তখন আমার। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে একঘরে। পিতা-মাতা, আত্মীয়রা পরিত্যাগ করেছে, বন্ধু আর পরিচিত সকলেই নির্লজ্জের মতো সাবধানে গা বাঁচিয়ে চলছে, পাছে কোন সাহায্য চেয়ে বসি। চরম আর্থিক অনটন। দিশেহারা আমি শুধু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাই নিজের সাথেই।

হঠাৎই একদিন চোখে পড়লো "রুমি"র দুটো লাইন।
I searched for God and found only Myself.
I searched for Myself and found only God.

মুগ্ধ হওয়ার মতোই কথা। জলে ডোবা মানুষ যেমন খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়, উপায়ন্তরহীন আমিও শেষ পর্যন্ত একবিন্দু সাহায্যের প্রত্যাশায় প্রবল ঈশ্বর সাধনায় মত্ত হলাম। নিজেকে অনুসন্ধানের মতো বিলাসী মনোবৃত্তি তখন ছিল না, শুধু ঈশ্বরের করুণাটাই মুখ্য ছিল।

গ্রীষ্মের দুপুর, বর্ষার সন্ধ্যা, শীতের মধ্যরাত অথবা বসন্তের নতুন সকাল, প্রতিটা মুহূর্ত শুধু সেই পরাক্রমশালী অলৌকিক নিরাকার সত্তার গুণগান করে সাহায্যের আশায় দু'হাত পেতে অপেক্ষা করি।
জাগতিক সকল কিছুর সাথে রুমি'র কথাগুলোও ভুলে গিয়েছিলাম।
ঠিক তখনই অবচেতন সংশয়বাদী মনের গভীরের আপন অন্ধকার সত্তাটি উপস্থিত হল আমার সামনে।


(ক্রমশ ... )

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩০

ভূতের কেচ্ছা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন..

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০১

নাজিয়া লিসা বলেছেন: ভূতের কেচ্ছা : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। বেশ ভয়ে ছিলাম এই অদ্ভুত লেখাটি নিয়ে।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৭

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: ভাল লিখেছেন তবে ভাল লাগা অংশটুকু হলো শেষ লাইন (ক্রমশ ... )



ব্লগে আপনার পথচলা হোক মসৃণ।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:০২

নাজিয়া লিসা বলেছেন: ইমতিয়াজ ১৩ : ধন্যবাদ, আপনার মতামতের জন্য। আমি নিয়মিত লেখক না। এই লেখাটিকে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে। :-)

৩| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২০

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: আরো বড় হোক আপনার এই লেখা তবে লেখার মান যেন ঠিক থাকে।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৫

নাজিয়া লিসা বলেছেন: ইমতিয়াজ ১৩: ধন্যবাদ ভাই, আপনার মতামতের জন্য। আমার আপ্রাণ চেষ্টা থাকবে মানসম্মত লেখার ব্যাপারে। সেই জন্যই একটু সময় নিচ্ছি। দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.