![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি চোখ মেললাম। ঘন অন্ধকার। আবার চোখ বন্ধ করলাম। মনে হল, চোখ খোলা রাখি আর বন্ধ, দুটোই সমান ... ... অন্ধকার। আঁধারটা এতোই নিরেট যেন হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মৃদু শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দও কানে আসছে না। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গাতে আমার বুঝতে অনেকক্ষণ লাগলো যে আমি কোথায় আছি। হাসপাতালের ছোট কেবিনটা এতো বেশি অন্ধকার আর নিসচুপ অর্থাৎ এখন রাত এবং বেশ গভীর রাত। যদিও দিনের বেলা আলো না জ্বাললে ঘর অন্ধকার থাকে, কিন্তু এতোটা বেশি নয়। আর চারপাশের কর্মব্যস্ত মানুষের কিছু না কিছু শব্দ তো কানে আসেই।
আমি আর কিছু ভাবতে পারলাম না। তীব্র মাথাব্যথায় শিউরে উঠলাম। এক গ্লাস পানির জন্য সারা শরীর আকুলিবিকুলি করতে থাকলো। জ্বরটা আবারো বাড়ছে। আগুনের মতো তপ্ত নিঃশ্বাস। কেমন যেন ঘোর ঘোর লাগতে থাকলো আমার, মনে হল যেন আমার চারিদিকে বরফ পড়ছে। ক্রনিকলস অফ নারনিয়ার মতো দিগন্তবিস্তৃত বরফের দেশে আমি। শীত ... শীত ... শীত ... ... আর অন্ধকার। আমি আরও কুঁকড়ে ছোট হয়ে নিজেকে কম্বল দিয়ে ঢেকে ফেললাম। ওহ! পৃথিবীতে কোথাও কি একটু উত্তাপ নেই, একবিন্দু আলো নেই!
এক বছরে এই নিয়ে ২ বার হাসপাতালে থাকা লাগছে আমার। মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরে এসেছিলাম আমি, একা থাকি, কেউ দেখার নেই বলেই হয়তো একটু উনিশ-বিশ হলেই সহকর্মীরা কোন ঝুঁকি না নিয়ে অফিসার্স মেস থেকে সোজা আমাকে নিয়ে আসে সিএমএইচে। এটা কি আমাকে হারানোর ভয়ে তাদের ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ নাকি নিঃসঙ্গ আমার জন্য শুধুই করুণা ... ... বুঝিনা আমি।
কেউ একটু মাথায় হাত রাখতো আমার। একটু ... মাত্র ৫ মিনিটের জন্য হলেও। ঠাণ্ডা কোমল মায়াভরা একটা হাত। একটু স্পর্শের জন্য ... নির্ভরতার জন্য আমার প্রবল তৃষ্ণাভাব হল।
জুইকে মনে পড়লো আমার। আহ ... জুই ... জুই ... জুই ... । নামটা মনে আসলে এখনও যেন ফুলের সুগন্ধ পাই আমি। ওর নিস্পাপ হাসিখুশি মুখটা কতদিন দেখিনা! বহু ... বহুদিন। ছয় মাস হয়ে গেলো প্রায়। এই সিএমএইচের কেবিনেই ওকে শেষ দেখেছিলাম আমি। ... ... ... ... ... আমার তীব্র ইচ্ছা হতে থাকলো ওকে ফোন দিই ... ... শুধু একবার ওর হ্যালো টা শুনি। হঠাৎই শারীরিক কষ্ট ছাপিয়ে আমার বুকের মধ্যে অভিমান, রাগ, ক্রোধ, দুঃখ, ব্যর্থতা সব মিলিয়ে অমানুষিক যন্ত্রণা হতে থাকলো।
জুই শেষ এসেছিল হাসপাতালেই, আমাকে দেখতে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ চলছে তখন। ওকে আগের রাতে ফোনে যখন বললাম, তখনই আমি জানতাম ও আমাকে দেখতে আসবেই, তাই ভর্তি হয়ে খুশিই হলাম মনে মনে। কি স্পষ্ট আর জ্বলজ্বলে এখনও সেই দিনটা। শেষ বলেই কি? হয়তো। ও এসে আমার অন্ধকার বিষণ্ণ অফিসার্স কেবিনটা আলোয় ঝলমলে করে দিয়েছিলো মুহূর্তেই।
বেশ শীত তখন। আমি দুপুরে খেয়ে চোখ বন্ধ করার কিছুক্ষণ পরেই ও আসলো। দরজায় শব্দ শুনেই আমি বুঝে ফেললাম কে এসেছে। উঠলাম না আমি। চোখ না মেলেই অনুভব করার চেষ্টা করলাম সব। ভিরু পায়ে দরজা খুলে ও ঢুকলো, ব্যাগ রাখলো, কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো, তারপর ইতস্তত করে একটু কাছে এসে ফিসফিস করে বলল, “এই যে ... মেজর সাহেব ... শুনছেন ... হ্যালো”। আমি আর হাসি চাপতে পারলাম না। হা হা করে হেসে ফেলে চোখ মেলে বললাম, “মানুষ ফোনে হ্যালো বলে। তুমি সামনে এসে হ্যালো বলছো?”
ওর দিকে তাকালাম আমি। খুব সাধারণ কিন্তু কি চমৎকারই না লাগছিল ওকে দেখতে! সাদা সালওয়ার-কামিজ আর টুকটুকে লাল সোয়েটার পড়া। জুই একটুও না হেসে গম্ভীর হয়ে কাছে এসে কপালে হাত রাখলো আমার। নিমিষেই আমার সব ক্লান্তি চলে গেলো। সিগারেটের কড়া গন্ধের পরিবর্তে আমি যেন ওর উপস্থিতির মৃদু এক সুগন্ধ পেতে থাকলাম। ও আরও দ্বিগুণ গম্ভীর হয়ে বলল, “এখনও গা গরম। উঠো। কিছু খাও।”
টুকিটাকি বহুকিছু ব্যাগ থেকে বের করতে থাকলো। ছোট একটা ফ্লাস্কে চা, কয়েক প্যাকেট বিস্কুট, বাদাম, আরও চেনা-অচেনা বহুকিছু। ডিসপোসেবল কাপে চা দুজনে চা খেতে খেতে হঠাৎ যেন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। আমি মুখচোরা স্বভাবের কিন্তু আজকে জুইও যেন খেই হারিয়ে ফেলেছে। আমার মনে হল, থাকুক চুপ করে। একটু পরেই চলে যাবে ও, যতক্ষণ থাকবে প্রতিটা সেকেন্ডই ভালোলাগার।
আস্তে আস্তে জড়তা ভাঙলো ওর। “কিযে কষ্টে সিএনজি পেলাম যদি বুঝতা ... ... তোমার শরীর এতো খারাপ হল কবে থেকে, কিভাবে? ... ... ব্যাটম্যান পেয়েছ শেষ পর্যন্ত? ... ... তোমার বাবা-মা কেমন আছেন? ... ... এইযে কয়দিন পরপর সিক হও, সিও পিটাবে না? ... ... বড় বড় কৌতুহলি চোখ মেলে হাজারো প্রশ্ন। আমি হাসিমুখে উত্তর দিতে থাকলাম। আমার বড় ভালো লাগতে থাকলো। বড় ভালো।
আমার এখনও মাঝেমাঝে মনে হয়, ওই দিনটা আসলে কোনদিন আসেনি আমার জীবনে। স্পর্শহীন, কামনাহীন নির্ভেজাল এক পবিত্র স্বপ্নদৃশ্য। শীতের সেই অলস দুপুরে ভালবাসার মানুষটা যেন কখনও পাশে বসে চা খেতে খেতে গল্প করেনি আমার সাথে। হয়তো আসলেই স্বপ্নদৃশ্য ছিল ওটা, হয়তো পুরোটাই কল্পনা।
ফজরের আযান ভেসে আসে অনেক দূর থেকে। আমার তন্দ্রাছন্নভাব কেটে উঠে। জ্বর কমছে, বুঝতে পারি আমি। খুব ধীরগতিতে উঠে লাগোয়া বারান্দায় দাঁড়াই। সিগারেট খাওয়া নিষেধ, তারপরও কাঁপাকাঁপা হাতে সিগারেট ধরাই। বড় বেশি জুইকে মনে পড়ে। ছেলেদের নাকি কাঁদতে মানা, ক্যাডেট/সেনা বাহিনীর জন্য তো কাঁদা আরও অন্যায়। শেষ কবে কেঁদেছি মনেও পড়লো না। হঠাৎই জ্বলন্ত সিগারেট হাত থেকে খসে পড়লো, হু হু করে কান্নায় ভেঙে পড়লাম আমি। এতোটা কষ্ট জমেছিল আমার ভিতরে!
(ক্রমশ ... )
২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৬
নাজিয়া লিসা বলেছেন: অপু তানভীর : অনেক ধন্যবাদ। :-)
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২০
অতঃপর জাহিদ বলেছেন: শিরোনামহীন গল্প ভালোই লাগলো।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪১
নাজিয়া লিসা বলেছেন: অতঃপর জাহিদ : ধন্যবাদ। আশা করি পুরোটা শেষ করার পরে আরও ভালো লাগবে।
৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৩
দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: খুব ভাল লাগল।
২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৪২
নাজিয়া লিসা বলেছেন: দ্য ইলিউশনিস্ট : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। :-)
৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৩
বাবা শাহরিয়ার বলেছেন: চালিয়ে যান……
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
নাজিয়া লিসা বলেছেন: বাবা শাহরিয়ার ঃ জি। দোয়া করবেন। :-)
৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০১
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: চমৎকার লেখা হচ্ছে লিসা! পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম!
২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২
নাজিয়া লিসা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ৎঁৎঁৎঁ ভাই। দোয়া করবেন। :-)
৬| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১৬
সাকিলা আক্তার বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে
১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩০
নাজিয়া লিসা বলেছেন: সাকিলা আক্তারঃ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। :-)
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫১
অপু তানভীর বলেছেন: হুম !
চমৎকার !