![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমারে তুমি অশেষ করেছো, এমনি লীলা তব— ফুরায়ে ফেলে আবার ভরেছ, জীবন নব নব
[ গালীব আজিম, কবি ও কণ্ঠযোদ্ধা। প্রথম ব্যান্ড শহরতলী তারপর থিয়েট্রিকাল, কবিতাকে অনুষঙ্গ করে পথচলা, কবিতার পথে চলা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম ডিসেম্বর, ২০১৫তে। মূলত যারা আর্টের নানা দিক নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের প্রতি আমার সীমাহীন আগ্রহ। আমার প্রায় জানতে ইচ্ছে করে, 'আপনারা কীভাবে অন্য কোন চরিত্র, অন্য কারো অনুভূতি নিয়ে কাজ করেন? এই যে ধারণ করার ব্যাপারটা, এটা কীভাবে হয়?' এ কারণেই জানাশোনা আছে, এমন কোন সৃষ্টিশীল মানুষ পেলেই সাক্ষাৎকার নিতে ইচ্ছে করে। তবুও জানা হয় না। একদিন কি হবে ? জানি না। যা হোক, আপনাদের আমার এ অন্বেষণে আমন্ত্রন। ]
নব্বই দশকে ব্যান্ডের জোয়ার, তারপর নতুন শতাব্দীতে আপনাদের আগমন—যারা কবিতাকে পুরোপুরি গানে নিয়ে এলেন। মেঘদল, শহরতলী, থ্রিয়েটিকাল বিভিন্ন ব্যান্ডগুলো; এখানে ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে প্রস্তুতির ব্যাপারটা কেমন ছিল?
গালীব আজিমঃ প্রস্তুতি বলতে ওই যে বললা—ব্যক্তিগত—ওটাই। দ্যাখো, যদি বলি হ্যাঁ এইভাবে সেইভাবে প্ল্যান করেছিলাম, তাহলে চাটুকারিতা করা হবে, অবশ্য তখন লোকে বেশ খাবে। সত্যি বলতে প্ল্যান-ফ্ল্যান কিছু ছিলো না। কবিতাকে কীভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছিলাম। মানুষ কবিতা পড়তে না চাইলে বা কবিতাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে ভীষণ গা’য়ে লাগতো। এটা অনেকসময় ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেও চলে যেতো।
শহরতলীর ক্ষেত্রে ইচ্ছে ছিল, গতানুগতিক রক ব্যান্ড হবে। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট জেনার ফলো করে এটা হবে, এরকম ভাবিনি। যা-কে আমরা আমার বা আমাদের বলতে পারি—এসব ক্রমশই হয়ে গেছে।
[ কারো যদি মনে হয়, খুব ভাবগম্ভীর একটা প্রশ্ন দিয়ে সাক্ষাৎকারটি শুরু হয়েছে, তাহলে ভুল হবে। প্রথম প্রশ্নটা ছিল, 'ভাই কিছু বলেন।' গালীব ভাই বলল, 'কী বলবো?', আমি বললাম 'কিছু একটা বলেন, কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না?', ওনি বললেন, 'ধুর মিয়া, এসব কী! তুমিই শুরু করো।']
এই ক্ষেত্রে সঞ্জীব চৌধুরী কি কোন প্রভাব ফেলেছে?
গালীব আজিমঃ কী রকম? আই মিন কোন ফরম্যাটের উপর প্রভাব? লিরিক্যাল বা কবিতায়?
লিরিক্যালি? দলছুটের সঙ্গে তিনিও কবিতাকেন্দ্রিক গান করছেন—আমরাও করে দেখি, এরকম প্রভাব?
গালীব আজিমঃ না, এই ধরণের কোন প্রভাব ছিল না।
শহরতলী’র একটা গীতিকবিতায় আপনি লিখেছেন, ‘তুমিও চাইতে পারো আমাদের মতো এ শহর বদলাতে, বদলাতে গেলে বদলাতে হবে’— আপনার কি মনে হয়না এখানে আপনি আমাদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন?
গালীব আজিমঃ আমি নিজেও তো ‘আমাদের’ মধ্যেই, চেঞ্জ তখন আনা সম্ভব যখন সবাই একই সাথে চেঞ্জ করার জন্য উদ্যত হবে এবং সেটার শুরুটা ঘর থেকে, নিজেকে দিয়েই করতে হবে।
আপনি কী করেছিলেন?
গালীব আজিমঃ চেষ্টা করেছি, লিখেছি—বলেছি—দেশের জন্য কেঁদেছি, কারণে-অকারণে। যতটুকু পারি, আমাদের রুচি আর দৃষ্টিভঙ্গী বদলানোর কথা বলেছি। আমার সব গানে মানব-মানবীর প্রেম থেকে দেশপ্রেম আগে রাখি।
একটু আগে জেনারের কথা বললেন, থিয়েট্রিকাল রকের ধারণাটা কীভাবে এলো। আমাদের এখানে আপনার হাত ধরেই তো এটা এসেছে—
গালীব আজিমঃ হা হা হা, এখন এসব নিয়ে কথা বলতে ইতস্তত লাগে, ইচ্ছেও করেনা। হ্যাঁ এসেছে, ভালোবাসা থেকে এসেছে। যখন আন্তর্জাতিক মিউজিক সিনারিও মেইনস্ট্রিম র্যাপ মিউজিক টেকওভার করলো, যেখানে আসলে পারফর্ম করার কিছু নেই। লুপ হলেই হয়, অনেককে দেখলাম—পাখির মতো মন্ত্র আওড়াচ্ছে অন্য ভাষায়, তো ভাই নিজেরও তো একটা মাধ্যম আছে। ওটাও করো না—ক্ষতি কী!
আই মিন, নো অফেন্স টু র্যাপ মিউজিক। আমিও র্যাপের ভক্ত, ওখানে লিরিকের গভীরতা অনেক জোরালো থাকে।
মানে, এখানে এটা প্রপারলি হচ্ছে না? যারা করছেন স্রোত দেখে করছেন? ভাবনা চিন্তার খোরাক যোগাতে পারছেন না, এটাই তো?
গালীব আজিমঃ না, এখন হচ্ছে— তখনো হতো। ‘থ্রি-রত্নের খ্যাপা’—ও হয়েছে। ব্যাপারটা হল, আমরা জাস্ট আরেকটা ডাইম্যানশন যোগ করেছি, যেটা আরেকটু কাব্যিক ও নাটকীয়।
থিয়েট্রিকাল রকের সংজ্ঞাটা তাহলে কী দাঁড়ালো?
গালীব আজিমঃ রক মিউজিক হুইচ ইজ রিলেটেড টু থিয়েটার এবং থিয়েটার পারফর্মেন্সেস, সিকুয়েন্সেস, ডায়ালগ, মনোলগ। অল দেস উইল বি পারফর্মড ইন দ্যা কন্টেক্স অব রক মিউজিক। দিজ ইজ এবসুলেট এ পারফরমিং আর্ট। যেখানে তোমার গাইতে হবে, আবার নাটক ও করতে হবে।
আমাদের দেশে এই ধরণের কাজে পৃষ্টপোষকতা কেমন?
গালীব আজিমঃ নাই। আমি যখন শুরু করেছিলাম, কাউকে পাইনি—কয়েকজন কাছের বন্ধু ছাড়া। ওরাই অ্যালবামের টাকা যোগাড় করেছিল।
সবাই কি পপে বিশ্বাসী নাকি?
গালীব আজিমঃ না, সবাই কেন পপে হবে! কী বলো! তাহলে বাউল কে শুনবে? এটা তো আরও বেশী আমাদের।
আমাদের যা, তা তো রিমিক্সে কনভার্ট হয়ে যাচ্ছে। মৌলিকত্ব নিয়ে বারেবার প্রশ্ন উঠছে। লালনের মতো ব্যান্ড যারা লালনের গান করে তাদের নিয়েও প্রশ্ন আছে। ‘সময় গেলে সাধন হবে না’র মতো ভয়ংকর সত্য কথাগুলো নাকি ওয়ান্স মোর ওয়ান্স মোর ও লিডের সাউন্ডে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
গালীব আজিমঃ দ্যাখো ভাই, এখন লালনেরও অনেক ভালো গান আছে। যেগুলো আমার ভালো লাগে। ব্যান্ড বা শিল্পী গোষ্ঠী একেকটা একেক ঘরানার, ভিন্ন দর্শনের হয়ে থাকে। এখন তারা লালন ঘরানার—ভালোবাসার জন্যই। ধরো, এখন তুমি যদি ‘চর্যাপদ’ মানুষকে শোনাতে যাও—কয়জন শুনবে? কিন্তু এটার এখন অনুবাদের প্রয়োজন, তাই না? লালন অত পুরনো না, মাত্র কয়েকশত বছর কিন্তু প্রযুক্তি যেভাবে পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে, এখন এই ৫-১০ বছর সবকিছু নতুন অনুবাদের দরকার পড়ছে।ডিজেলের ইঞ্জিন থেকে পৃথিবী যাচ্ছে আইয়ন ইঞ্জিনে— আমি সাধুবাদ জানাই তাদের।
আপনার সৃষ্টিতে কবি’রা ঘুরে-ফিরে আসে। নাজিম হিকমত, জয় গোস্বামী বা সুধীন্দ্রনাথ—ওনাদের নিয়ে আসার যে প্রবণতাটা দেখা যায়, এটার উৎস কোথায়?
গালীব আজিমঃ ওই যে বললাম, অনুবাদের পরিভাষা। এখন তুমি যদি এটার কপিরাইট ইস্যু ধরো—তাহলে আমি চোর। কিন্তু মোরালের জায়গা থেকে চিন্তা করো—যে বাঙলা সাহিত্যের একটা দিক যেটা মেইনস্ট্রিমে যেতে পারে! আসলে আমি নিজেও কবি। চুরি-চামারির অভ্যাস থাকলে অন্যের কবিতার ভাব ঠিক রেখে, অন্যভাবে লিখে নিজের নামে সহজেই চালিয়ে দেয়া যেতো। কিন্তু আমি তা করিনি কারণ এটা আমার নীতির বাইরে। বরং আমি আমার লেখা বাদ দিয়ে তাঁদের লেখা দিয়েছি, এটা দায়িত্ববোধ থেকে। যাতে করে দেরী হলেও তাঁদের কাজ নতুন সময়ের সামনে আসে।
বাঙ্গালীদের ভেতর পরচর্চার অভ্যাস আছে, মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে এই প্রভাব লক্ষ্যনীয়। আপনি কখনো পরচর্চার স্বীকার হয়েছেন?
গালীব আজিমঃ হা হা, বহুবার, বহুভাবে। আমি গাঁজা-তাজা বা অন্য কোন মাদক খাই না, কিন্তু অনেকেই ভাবতো আমি পুরো পিনিক নিয়ে স্টেজে উঠতাম। আসলে কবিতা আমাকে মাতাল করে দেয়।
আপনার তখন লম্বা চুল ছিল, এটা হয়তো এই অপবাদ দেবার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে।
গালীব আজিমঃ হ্যা, এরকম একটা সংস্কৃতি আমাদের সমাজে চালু আছে।
সত্যিকার অর্থে সঙ্গীতের জন্য মাদক কতোখানি জরুরী?
গালীব আজিমঃ আমি জানিনা, সত্যি বলতে আমি জীবনে দু’বার গাঁজা গ্রহণ করেছিলাম—কলেজে থাকতে। আমার মনে হয়েছিল—আমি মরে যাচ্ছি। এতো বাজে অনুভূতি! কী আর বলবো! আর নিজেস্ততা আমার ভালো লাগে না, আমি চিন্তার গভীরে যেতে পারিনা।
এখন যারা কাজ করছে, তাদের কাজ দেখে কি কখনো মনে হয়না জানার গভীরতা আরেকটু থাকা উচিত বা আরও একটু লেখাপড়া থাকা উচিত ? কথা বা সুরের ক্ষেত্রে ?
গালীব আজিমঃ আসলে ঢালাও ভাবে বলা যায় না। অনেকের কাজ শুনে বা দেখে মনে হয়—ইশ! এই লাইনটা যদি আমি লিখতে পারতাম! আবার এমনও হয়, ধুরো এইডা কিছু হইল! তবে এখন অনেকেই আছেন, যারা জানেন, ভালো কিছু করতে হলে জানতে হবে, পড়তে হবে। বিকল্প নাই।
‘প্রাপ্তিস্বীকার অনিবার্য’—থিয়েট্রিকাল ব্যান্ডের শেষ অ্যালবাম হবে। এরকম ঘোষণা দেবার কারণ কী?
গালীব আজিমঃ অনেক হল, এবার বিরতি চাই। ভবিষ্যতে আরেকটা ডাইম্যানশন এক্সপ্লোর করবো।
[ আমার খোঁচাখুঁচি শেষে গালীব ভাই রুপকের কথা বললেন। রুপক ভাই এখন বেঁচে নেই। আর্টসেলের প্রথমদিকের বেশ কিছু গান রুপক ভাইয়ের লেখা। যেমন, ওদের বিখ্যাত 'পথচলা' গানটি, তিনি পুরো লিখে যেতে পারেন নি, বাকিটা রুম্মান ভাই লিখেছিল। গালীব ভাই বলেছিল, 'তুমি যদি পারো রুপককে নিয়ে কাজ করবে', কথা দিয়েছিলাম ওনাকে নিয়ে একটা লেখা অবশ্যই লিখবো। এখনো লেখা হয় নি। একদিন হয়তো লিখে ফেলবো। ]
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩০
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ মাহবুবুল ভাই।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৫
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
চমৎকার আয়োজন। আশা করি নিয়মিত এমন আয়োজন থাকবে।
গালীব আজিমের কথাগুলো ভাল লাগছে। কবিতা আসলেই নেশার জিনিস।
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৮
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। আশা করছি, আমার নেয়া কিছু সাক্ষাৎকার আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারবো।
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
হুইসক্সির বাজার শেষ?
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৮
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: বলতে পারবো না, আমি এর গ্রাহক নই ;-)
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫২
বিজন রয় বলেছেন: গুড।
++
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। যদিও আপনার কাছ থেকে খোলামেলা একটা মন্তব্য আশা করেছিলাম।
শুভেচ্ছা নেবেন।
৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩৫
তার আর পর নেই… বলেছেন: কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর খুব ভাল লেগেছে।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯
নাজমুস সাকিব রহমান বলেছেন: ভালো লাগাটাই ব্যাপার। ভালো না লাগলে পৃথিবীর সকল কাজ অর্থহিন। শুভেচ্ছা নেবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৮
মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: শুভ কামনা রইল।